Wednesday 31 March 2010

মন্ত্রীদের গাড়িবিলাস : শিক্ষামন্ত্রী নাহিদের সেবায় সরকারি ৬ গাড়ি, ৩৭ মন্ত্রী-উপদেষ্টা ব্যবহার করেন একাধিক



কাদের গনি চৌধুরী
সরকারি গাড়ি ব্যবহারে বিলাসী হয়ে উঠেছেন মহাজোট সরকারের মন্ত্রীরা। মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী, উপমন্ত্রীদের সুযোগ-সুবিধা সংক্রান্ত রেমুনারেশন অ্যান্ড প্রিভিলেজ অ্যাক্ট অনুযায়ী তাদের একটি করে গাড়ি পাওয়ার কথা থাকলেও ক্ষমতার অপব্যবহার করে তারা একাধিক সরকারি গাড়ি ব্যবহার করছেন। কোনো কোনো মন্ত্রী নিজের ও দফতরের নামে ৬টি পর্যন্ত সরকারি গাড়ি দখলে রেখেছেন। মহাজোট সরকারের ৫০ সদস্যের মন্ত্রিপরিষদের মধ্যে ১৩ জন ছাড়া অন্য সবাই দুই বা ততোধিক সরকারি গাড়ি ব্যবহার করছেন। এমনকি নিয়মবহির্ভূতভাবে মন্ত্রীদের পিএস, এপিএস, পিওরাও ব্যবহার করছেন সরকারি গাড়ি ।
সরকারি পরিবহন পুলের একটি সূত্র জানায়, মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী, উপদেষ্টা, সংসদ সদস্য ও তাদের দফতরের নামে ১৫০টি অতিরিক্ত সরকারি গাড়ি ব্যবহার হচ্ছে। এগুলোর মধ্যে মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী, উপদেষ্টারা অতিরিক্ত ব্যবহার করছেন ৩৭টি, পিএসরা ৪৩টি, এপিএস ও পিআরওরা ৬৩টি এবং সংসদ সদস্যরা ৩টি। আর এ ১৫০ গাড়ির পেছনে রাষ্ট্রের অপচয় হচ্ছে বছরে ১৩ কোটি টাকারও বেশি। অনুসন্ধানে দেখা যায়, মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী, উপদেষ্টারা অতিরিক্ত যে গাড়ি নিয়েছেন সেগুলো তাদের পারিবারিক ও দলীয় কাজে ব্যবহার হচ্ছে।
সরকারি গাড়ি ব্যবহারের দিক থেকে এগিয়ে আছেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ। ক্ষমতার প্রভাব খাটিয়ে এই মন্ত্রী ৩টি সরকারি গাড়ি ব্যবহার করছেন। এর মধ্যে তিনি মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা অধিদফতর থেকে নিয়েছেন দুটি এবং একটি নিয়েছেন সরকারি পরিবহন পুল থেকে। পরিবহন পুল থেকে নেয়া গাড়িটির নম্বর হচ্ছে ঢাকা মেটো-গ-২৫৭৭৯০। এ গাড়ির চালকের নাম জহিরুল। মাউশি থেকে নেয়া গাড়ি দুটির নম্বর হচ্ছে ঢাকা মেট্রো ঘ-১৩-৯২১৩ ও ঢাকা মেট্রো ঘ-১৩-১০৪৯। মাউশির দেয়া প্রথম গাড়িটি টিকিউআই প্রজেক্টের। আর দ্বিতীয়টি রংপুর ডিডি অফিস থেকে এনে দেয়া হয়েছে। এটি মন্ত্রীর বাসার কাজে ব্যবহার করা হয়।
শিক্ষামন্ত্রী শুধু নিজের জন্যই তিনটি নেননি, তার দফতরের নামে নেয়া হয়েছে আরও ৩টি গাড়ি। এগুলো তার পিএস, এপিএস, জনসংযোগ কর্মকর্তা ব্যবহার করেন। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রভাবশালী পিআরও সুবোধ চন্দ্র ঢালির ব্যবহারের জন্য নায়েম থেকে বড় একটি মাইক্রোবাস আনা হয়েছে। গাড়িটির নম্বর ঢাকা মেট্রো চ-৫১৯৬৭৩। এটিও টিকিউআই প্রজেক্টের গাড়ি। নায়েমের এ গাড়ি পিআরওর জন্য নিয়ে আসায় সেখানে তাদের কাজে অসুবিধা হচ্ছে বলে নায়েমের একটি সূত্র জানায়। এ গাড়ির ড্রাইভারের বেতন থেকে শুরু করে তেল খরচ সবই বহন করা হচ্ছে টিকিউআই প্রজেক্ট থেকে।
মন্ত্রীর পিএস এএস মাহমুদ ব্যবহার করছেন শিক্ষা প্রকৌশল অধিদফতরের গাড়ি। গাড়িটির নম্বর ঢাকা মেট্রো ঘ-১৩২৫৮৮। এ গাড়ির ড্রাইভারের বেতন, তেলসহ যাবতীয় খরচ বহন করতে হচ্ছে শিক্ষা প্রকৌশল অধিদফতরকে। অবিশ্বাস্য হলেও মন্ত্রীর এপিএস মন্মথ রঞ্জন বাড়ৈর জন্যও গাড়ি দিতে হয়েছে মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা অধিদফতর কর্তৃপক্ষকে। ঢাকায় গাড়ি না থাকায় তার জন্য গাড়ি আনা হয়েছে বরিশাল ডিডি অফিস থেকে। মন্ত্রীর এপিএসের জন্য গাড়ি নিয়ে আসায় বরিশাল ডিডি অফিসের কর্মকর্তাদের পরিবহন সঙ্কটে পড়তে হয়েছে।
এছাড়াও টিকিউআই প্রজেক্টের সবচেয়ে ভালো গাড়িটি দখলে নিয়েছেন শিক্ষা মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি রাশেদ খান মেনন এমপি। এমপিরা সরকারি গাড়ি বরাদ্দ না পেলেও অবৈধ প্রভাব খাটিয়ে মেনন মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা অধিদফতরের টিকিউআই প্রজেক্টের দামি গাড়িটি ব্যবহার করছেন। গাড়ির নম্বর ঢাকা মেট্রো ঘ-১৩-১০৫৩।
প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা ড. আলাউদ্দিন আহমেদ ২টি সরকারি গাড়ি ব্যবহার করেন। তিনি একটি নিয়েছেন শিক্ষা প্রকৌশল অধিদফতর থেকে। অন্যটি নিয়েছেন পরিবহন পুল থেকে। শিক্ষা অধিদফতর থেকে নেয়া গাড়িটির নম্বর হচ্ছে ঢাকা মেট্রো ঘ-১৩-২৫৯৯। আর পরিবহন পুল থেকে নেয়া গাড়িটির নম্বর হচ্ছে গ-২৫-৭৭৯৩। শুধু তাই নয়, প্রধানমন্ত্রীর এ উপদেষ্টা তার পিএসের জন্য নিয়েছেন এলজিইডি থেকে একটি গাড়ি, যার নম্বর ঢাকা মেট্রো গ-১১৬৩৪৯।
শিক্ষা সচিব ও সচিবের পিএসের জন্যও শিক্ষা প্রকৌশল অধিদফতরকে দিতে হয়েছে দুটি গাড়ি। সচিবকে দেয়া গাড়িটির নম্বর ঢাকা মেট্রো ঘ-১৩-২৫৮৭। সচিবের পিএসের গাড়ির নম্বর ঢাকা মেট্রো গ-১৩-৩৬৩৬।
অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতও ২টি সরকারি গাড়ি ব্যবহার করেন। এর একটি নিয়েছেন পরিবহন পুল থেকে, যার নম্বর ঢাকা মেট্রো গ-২৫৭৭৭০। এটির ড্রাইভার কার্তিক চন্দ্র রায়। অপর গাড়িটি অর্থ মন্ত্রণালয়ের। এটির নম্বর ঢাকা মেট্রো ঘ-১৫৭৫২৯। এ গাড়ির ড্রাইভার হাজী নুরুল আমিন।
এছাড়াও মন্ত্রীর পিএস, এপিএস নীতিমালা লঙ্ঘন করে সরকারি গাড়ি বরাদ্দ নিয়েছেন।
বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী আবদুল লতিফ সিদ্দিকী পরিবহন পুল থেকে বরাদ্দ নিয়েছেন দুটি গাড়ি। এগুলোর নম্বর হচ্ছে ঢাকা মেট্রো খ-১২-৫১৫৬ ও ঢাকা মেট্রো গ-১১৫১০৮। প্রথমটি চালান ড্রাইভার আশিক, আর দ্বিতীয়টি রেজাউল।
আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমদও সরকারি দুটি গাড়ি ব্যবহার করেন। গাড়ি দুটির নম্বর ঢাকা মেট্রো গ-২৫-৭৭৭৩ ও ঢাকা মেট্রো খ-১১৪৪৭১। প্রথমটির ড্রাইভার সোহরাব আর দ্বিতীয়টির মোতালেব।
এছাড়াও ক্ষমতার অপব্যবহার করে যারা একাধিক সরকারি গাড়ি দখলে রেখেছেন তারা হলেন ডাক, তার ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী রাজিউদ্দিন আহমদ রাজু ঢাকা মেট্রো গ-২৫-৭৭৭৫ (পরিবহন পুল/ড্রাইভার জাফর) ও ঢাকা মেট্রো ঘ-১২-৭২৬৪, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুন ঢাকা মেট্রো গ-২৫-০৭৭৭৬ (পরিবহন পুল/ড্রাইভার সালাম) ও ঢাকা মেট্রো ঘ-১১-৫৮৭৭, সমাজকল্যাণমন্ত্রী এনামুল হক মোস্তফা শহীদ ঢাকা মেট্রো গ-২৫-৭৭৮১ (পরিবহন পুল) ও ঢাকা মেট্রো গ-১১-৪৮৩১; পানিসম্পদমন্ত্রী রমেশ চন্দ্র সেন ঢাকা মেট্রো গ-২৫-৭৭৮৩ (পরিবহন পুল), ঢাকা মেট্রো ঘ-১১-৪৮৩১ (প্রকল্প); বাণিজ্যমন্ত্রী লে. কর্নেল (অব.) ফারুক খান ঢাকা মেট্রো গ-২৫-৭৭৮৫ (পরিবহন পুল/ড্রাইভার ইব্রাহীম) ও ঢাকা মেট্রো ঘ-১১-৩৮১৭ (এলজিইডি/ ড্রাইভার জগলু); খাদ্যমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক ঢাকা মেট্রো খ-১২-৫১৫৯ (পরিবহন পুল) ও ঢাকা মেট্রো খ-১১-৮২০৩ (খাদ্য মন্ত্রণালয়), প্রাথমিক ও গণশিক্ষামন্ত্রী ডা. আফসারুল আমিন ঢাকা মেট্রো গ-২৫-৭৭৮৭ (পরিবহন পুল) ও ঢাকা মেট্রো খ-১৩০৭৫৮ (প্রকল্প); পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. দীপু মনি ঢাকা মেট্রো গ-২৫-৭৭৮৯ (পরিবহন পুল) ও ঢাকা মেট্রো খ-১২-৮৫৮৩ (পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নিজস্ব); নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান ঢাকা মেট্রো গ-২৫-৭৭৯৫ (পরিবহনপুল/ড্রাইভার সাহেব) ও ঢাকা মেট্রো ঘ-১১-৪৪৩০; ভূমি প্রতিমন্ত্রী অ্যাড. মোস্তাফিজুর রহমান ফিজার ঢাকা মেট্রো গ-২৫-৭৭৮৯ (পরিবহন পুল) ও ঢাকা শ-১৪৮ (গুচ্ছগ্রাম প্রকল্পের জন্য কেনা নতুন জিপ); স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শামসুল হক টুকু ঢাকা মেট্রো গ-২৫-৭৮০৮ (পরিবহন পুল) ও ঢাকা মেট্রো খ-১৩-২৮০৭; পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ ঢাকা মেট্রো গ-২৫-৭৮০১ (পরিবহন পুল) ও ঢাকা মেট্রো ঘ-১১-৭৯৭৬ (প্রকল্প); পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী দীপংকর তালুকদার ঢাকা মেট্রো গ-২৫-৭৮০৩ (পরিবহন পুল) ও অজ-১৭১১৪ (ইউএনডিপি); গৃহায়ন ও গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী আবদুল মান্নান খান ঢাকা মেট্রো গ-২৫-৭৮০৬ (পরিবহন পুল), ঢাকা মেট্রো খ-১১-৫৪৫৫ (রাজউক); স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় প্রতিমন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবির নানক ঢাকা মেট্রো গ-২৫-৭৭৭২ (পরিবহন পুল) ও ঢাকা মেট্রো ঘ-১১-৫৮৮৮০ (এলজিইডি); প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মোঃ মোতাহার হোসেন ঢাকা মেট্রো গ-২৫-৭৮১০ (পরিবহন পুল) ও ঢাকা মেট্রো খ-১৩-০৫৬৩ (প্রকল্প); বিদ্যুত্, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) মোহাম্মদ এনামুল হক ঢাকা মেট্রো গ-২৫-৭৭৯৬ (পরিবহন পুল), ঢাকা মেট্রো খ-১১-৯২৮৮ (প্রকল্প); পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী মাহবুবুর রহমান ঢাকা মেট্রো গ-২৫-৭৭৮৯ (পরিবহন পুল) ও খ-১৩-১৬৯৯ (প্রকল্প)। সরকারি গাড়ি ছাড়াও এসব মন্ত্রীর ব্যক্তিগত একাধিক গাড়ি রয়েছে।
মহাজোট সরকারের ৫০ জনের মন্ত্রিসভায় একটি করে সরকারি গাড়ি ব্যবহার করেন—এ ধরনের মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও উপদেষ্টা রয়েছেন মাত্র ১৩ জন। অন্যরা সবাই একাধিক গাড়ি ব্যবহার করেন।
নিয়মনীতি লঙ্ঘন করে মন্ত্রীরা নিজেরাই শুধু একাধিক গাড়ি ব্যবহার করছেন না, তাদের পিএস, এপিএস ও জনসংযোগ কর্মকর্তার জন্যও গাড়ি বরাদ্দ নিচ্ছেন। সরকারি পরিবহন পুল থেকে মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও উপদেষ্টার ৪৩ জন পিএসের জন্য গাড়ি বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। বিভিন্ন সংস্থা ও প্রকল্প থেকে এপিএস ও জনসংযোগ কর্মকর্তাদের জন্য নেয়া হয়েছে আরও ৬৭টি গাড়ি। এসব গাড়ির তেল, মেরামত খরচ, ড্রাইভারের বেতন—সবই বহন করতে হচ্ছে সরকারকে।
পরিবহন পুল সূত্রে জানা গেছে, এখান থেকে মন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রীদের ৪৪টি, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টাদের ৪টি, সচিব ও সচিব পদমর্যাদার কর্মকর্তাদের ৪৮টি, ভারপ্রাপ্ত সচিবদের ১৬টি, অতিরিক্ত সচিবদের ৮৩টি, যুগ্ম সচিবদের ২২২টি গাড়ি সরবরাহ করা হয়েছে। এছাড়া নিয়মবহির্ভূতভাবে মন্ত্রীরা অবৈধ প্রভাব খাটিয়ে তাদের ৩৮ জন পিএসের জন্য সরকারি গাড়ি বরাদ্দ নিয়েছেন। এভাবে মন্ত্রী ও তাদের পিএসরা গাড়ি দখল করায় ২০৮ জন যুগ্ম সচিবকে গাড়ি দেয়া সম্ভব হয়নি পরিবহন পুলের।
সূত্র জানায়, বর্তমানে সরকারি পরিবহন পুলে ৬২৪টি সচল গাড়ি এবং ২৯৬টি অকেজো গাড়ি রয়েছে।
জানা যায়, বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর পরিবহন পুলের গাড়িতে সন্তুষ্ট না থাকায় সরকার ৯ কোটি ৬৭ লাখ টাকা খরচ করে মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও উপদেষ্টাদের জন্য ৫০টি বিলাসবহুল পারসোনা প্রাইভেটকার ক্রয় করে। ৪৬ জন মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও উপদেষ্টার মাঝে ইতোমধ্যে এ প্রাইভেটকার বণ্টন করা হয়েছে। ৪টি গাড়ি পরিবহন পুল রিজার্ভ রেখেছে নতুন মন্ত্রিপরিষদ গঠন হলে বরাদ্দ দেয়ার জন্য। কিন্তু দেখা যায় ৪৬ জন মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী পারসোনা কার নিলেও মাত্র ১৩ জন এ গাড়ি ব্যবহার করেন। তারা হলেন কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী, বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটনমন্ত্রী গোলাম কাদের, পরিকল্পনামন্ত্রী এয়ার ভাইস মার্শাল একে খন্দকার, স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা. আফম রুহুল হক, ভূমিমন্ত্রী রেজাউল করিম হীরা, তথ্যমন্ত্রী আবুল কালাম আজাদ, ধর্ম প্রতিমন্ত্রী অ্যাড. মোহাম্মদ শাজাহান মিয়া, তথ্য ও যোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী স্থপতি ইয়াফেস ওসমান, শিল্পমন্ত্রী দিলীপ বড়ুয়া, স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী মজিবুর রহমান ফকির, মহিলা ও শিশুবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী বেগম শিরীন শারমিন চৌধুরী ও সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী প্রমোদ মানকিন। অন্যরা ব্যবহার করছেন প্রকল্পের গাড়ি।
১৯৭৩ সালে মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও উপমন্ত্রীদের সুযোগ-সুবিধা সংক্রান্ত রেমুনারেশন অ্যান্ড প্রিভিলেজ অ্যাক্ট প্রণীত হয়। এ অ্যাক্টে স্পষ্ট বলা আছে, মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী অথবা একজন উপমন্ত্রী সার্বক্ষণিক ব্যবহারের জন্য সরকারিভাবে একটি কার (গাড়ি) পাবেন। যার রক্ষণাবেক্ষণ খরচ জোগাবে সরকার। এছাড়া জরুরি অফিসিয়াল কাজের জন্য কিংবা ঢাকার বাইরে নির্ধারিত কোনো অফিসিয়াল সফরে গেলে অতিরিক্ত একটি জিপ গাড়ি তারা ব্যবহার করতে পারবেন। এসব ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের দফতর কিংবা সংস্থা থেকে জিপ গাড়ি সরবরাহ করতে হবে। তবে কোনো কারণে সংশ্লিষ্ট দফতর বা সংস্থা গাড়ি সরবরাহ করতে ব্যর্থ হলে মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী কিংবা উপমন্ত্রীর জরুরি কাজে ব্যবহারের জন্য এ ধরনের জিপ গাড়ি কিনতে অর্থ বরাদ্দ দেবে। অথচ এখন মন্ত্রীরা নিজের জন্য একাধিক গাড়িতো নিচ্ছেনই, উল্টো পিএস, এপিএস, পিআরওর জন্যও সরকারি গাড়ি বরাদ্দ নিচ্ছেন।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ড. আকবর আলি খান অতিরিক্ত সরকারি গাড়ি ব্যবহার প্রসঙ্গে আমার দেশকে বলেন, মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীরা কি সুযোগ-সুবিধা পাবেন, তা রেমুনারেশন অ্যান্ড প্রিভিলেজ অ্যাক্টে বলা আছে। এর বাইরে গাড়ি ব্যবহার আইনসম্মত নয়। কেউ প্রাপ্ত সুযোগের বাইরে গাড়ি ব্যবহার করলে এটি অন্যায় হবে। এ ব্যাপারে যথাযথ কর্তৃপক্ষের ব্যবস্থা নেয়া উচিত। তিনি বলেন, অনেক সময় মন্ত্রীরা নিজেদের নামে না নিয়ে অন্যের নামে গাড়ি নেন। এটাও বন্ধ করা উচিত।

http://www.amardeshonline.com/pages/details/2010/04/01/25331

No comments:

Post a Comment