Sunday, 27 March 2011

জমি দখলের মহোত্সব











ডেস্ক রিপোর্ট

বিভিন্ন স্থানে জমি দখলে মরিয়া হয়ে উঠেছে ভূমিদস্যু সিন্ডিকেট। জমি হারিয়ে বিভিন্ন জায়গায় দেনদরবার করেও কোনো কাজ হচ্ছে না। বরং ভূমিদস্যুদের খপ্পরে পড়ে হয়রানির শিকার হচ্ছেন জমির প্রকৃত মালিকরা। বিস্তারিত খবর পাঠিয়েছেন প্রতিনিধিরা :
রূপগঞ্জ (নারায়ণগঞ্জ)
রূপগঞ্জের ভুলতা ইউনিয়নের কৈরাবো গোরস্থানসংলগ্ন ৩ বিঘা জমি আওয়ামী লীগের শেল্টারে ভূমিদস্যুরা জোরপূর্বক দখলের অভিযোগ পাওয়া গেছে। ভূমিদস্যু বাহিনীর অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে রূপগঞ্জের সাধারণ মানুষ। উপজেলার সর্বত্রই জোরপূর্বক জমিদখল অব্যাহত রয়েছে। জমিদখলকে কেন্দ্র করে এলাকায় চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে।
এলাকাবাসী জানায়, উপজেলার মর্তুজাবাদ গ্রামের মতিউর রহমানের ছেলে শামসুর রহমান, মাহাবুব, মোখলেছুর রহমানের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের শেল্টারে একদল সন্ত্রাসী গতকাল সকালে অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হয়ে জোরপূর্বক ৯০ শতাংশ জমি দখল করে। এ ঘটনায় এলাকায় চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে। এ বাহিনী দীর্ঘদিন ধরে এলাকায় জোরপূূর্বক নিরীহদের জমিদখল অব্যাহত রেখেছে।
এ ব্যাপারে জমির মালিক আড়াইহাজার উপজেলার জালালউদ্দিন, আবুল কাশেম, ইদ্রিস আলী, মর্তুজাবাদ গ্রামের মধু ভূঁইয়া জানান, দীর্ঘদিন ধরে কৈরাবো গোরস্তান এলাকায় ৯০ শতাংশ জমি ভোগদখল করে আসছে। জমির মালিকানা ছেড়ে দেয়ার জন্য ভূমিদস্যু বাহিনী একের পর এক হুমকি দিয়ে আসছিল। গতকাল দলবল নিয়ে জমির বাউন্ডারি দেয়াল ভেঙে তারা দখল করে। ভূমিদস্যুদের বিরুদ্ধে রূপগঞ্জ থানায় অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে।
এদিকে শামসুর রহমান ও মাহাবুবের নেতৃত্বে ফেব্রুয়ারি মাসে গোলাকান্দাইল ৫নং ক্যানেল এলাকায় মাধবদী পৌর এলাকার জাকির হোসেনের ১২ শতাংশ জমি একই কায়দায় জোরপূর্বক দখলে নেয়। পুলিশের সহযোগিতা চেয়েও জাকির হোসেন তা পাননি। এ বাহিনীকে রূপগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের এক শীর্ষ নেতার বদৌলতে একের পর এক জমি দখল অব্যাহত রেখেছে বলে ভুক্তভোগীরা জানান। জমি দখলকে কেন্দ্র করে এলাকায় চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে। যে কোনো সময় রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের আশঙ্কা করছে এলাকাবাসী।
ভুলতার গার্মেন্ট এলাকায় এক নিরীহ ব্যক্তিকে প্রাণনাশের হুমকি দিয়ে দেড় লাখ টাকা চাঁদা আদায়েরও অভিযোগ রয়েছে। জমি দখলকে কেন্দ্র করে রূপগঞ্জে গত ২ বছরে বেশ কয়েকটি খুনের ঘটনা ঘটে। ভুক্তভোগীরা প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও স্থানীয় সংসদ সদস্যের সুদৃষ্টি কামনা করেছেন।
কাপ্তাই (রাঙামাটি)
চন্দ্রঘোনা লিচুবাগান স্টেশনসংলগ্ন নবগ্রাম এলাকায় দুজন অসহায় মহিলার প্রায় ১৫ লাখ টাকা মূল্যের ৬ শতক জমি দখল করে নিয়েছে স্থানীয় কিছু ভূমিদস্যু সিন্ডিকেট। আদালতে মামলা বিচারাধীন এবং বিরোধীয় জমিতে স্থিতাবস্থার আদেশ থাকা সত্ত্বেও ভূমিদস্যুদের তাণ্ডবে অসহায় ভূমির মালিক ন্যায় বিচার পেতে প্রশাসনের কাছে ধরনা দিয়ে যাচ্ছেন।
আদালতে দায়েরকৃত মামালার বিবরণ এবং অসহায় মহিলার অভিযোগ থেকে জানা যায়, লিচুবাগান সংলগ্ন নবগ্রাম এলাকায় শাহনাজ বেগম ও ফরিদা বেগম প্রায় ১৩ বছর আগে ১২ শতক জায়গা কিনে সেখানে বাড়ি ও আধাপাকা দোকানঘর নির্মাণ করে বসবাস করে আসছিলেন। এছাড়া মহিলার ১২ শতক জায়গায় নির্দিষ্ট সীমানা প্রাচীরও নির্মিত আছে। এ অবস্থায় গত ১৯ ফেব্রুয়ারি ভোরে স্থানীয় কিছু ভূমিদস্যু সিন্ডিকেটের সদস্য অসহায় মহিলাদের ১২ শতক জায়গার মধ্যে ৬ শতক জায়গা দখল করে নিতে সীমানা প্রাচীরের ভেতরে ইট-বালু-সিমেন্ট জড়ো করে নতুন সীমানা প্রাচীর নির্মাণের চেষ্টা করে। পরে গত ৪ মার্চ ভূমিদস্যু সিন্ডিকেট জোরপূর্বক শাহনাজ বেগমের সীমানা প্রাচীরের ভেতর প্রবেশ করে ৬ শতক জায়গার ওপর নতুন সীমানা প্রাচীর নির্মাণ করে জোরপূর্বক দখল করে নেয়। তার আবাসস্থল ভূমি রক্ষায় প্রশাসনের সহায়তা কামনা করেছেন।
আলীকদম (বান্দরবান)
বান্দরবানের আলীকদমে শতাধিক মুরুং গ্রামবাসী ভূমিদস্যুতা ও নির্যাতনের প্রতিকার চেয়ে প্রশাসনের কাছে লিখিত আবেদন করেছেন। স্থানীয় শামসুল আলমের বিরুদ্ধে মুরুংরা বাগানের গাছ কর্তন, চাঁদা আদায় ও মামলায় জড়িয়ে হয়রানির অভিযোগে মুরুংপাড়া কার্বারী পাক্কাই মুরুংসহ শতাধিক গ্রামবাসী এ অভিযোগ করেন।
প্রাপ্ত অভিযোগে প্রকাশ, আলীকদমের চৈক্ষ্যং ইউনিয়নের দুপ্রু ঝিরি এলাকায় ২০টি পরিবারে শতাধিক মুরুং বাস করেন। তাদের ভোগদখলীয় জমিতে কারিতাস ফলদ ও বনজ বাগান সৃষ্টিতে সহযোগিতা করা হয়। বর্তমানে বাগানের গাছপালা বড় হয়েছে। এসব বাগানের গাছের প্রতি লোলুপদৃষ্টি পড়ে রেপারপাড়ি এলাকার মৃত নুর আহামদের ছেলে শামসুল আলমের। অভিযোগে কার্বারী পাক্কাই মুরুং জানান, সন্ত্রাসী কায়দায় শামশুগং কর্তৃক মুরুংদের দখলীয় ও রোপিত বাগানের সেগুন, গামারি ও আমগাছগুলো কেটে নেয়া হচ্ছে। এতে বাধা দেয়ায় এর আগে ১২ নিরীহ মুরুংকে মিথ্যা মামলায় জড়িয়ে হয়রানি করা হয়। মামলার ভয় দেখিয়ে শামসুুল আলম গং মুরুংদের রোপিত ৩৩টি আম, ৩৯টি কাঁঠাল, ৫১টি সেগুন, ১০০টি গামারি গাছ ও ৩ হাজার উরাবাঁশ কেটে নিয়েছে বলে স্থানীয় পুংপ্রে মুরুং জানান।
এব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে দুপ্রু ঝিরি এলাকায় স্থানীয় আবুল হোসেন সর্দার, আরাফাত, নুরুল কবির, সালাহ্উদ্দিন, রুকনউদ্দিন ও মোহাম্মদ আলীসহ একাধিক ব্যক্তি জানান, মুরুংরা নানাভাবে শামশুগং কর্তৃক নির্যাতনের শিকার। তারা মুরুংদের রক্ষায় প্রশাসনকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন।
চৈক্ষ্যং ইউনিয়ন পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান প্রুথোয়াই অং মার্মা জানান, ভূমিসংক্রান্ত বিষয়ে শামসুর বিরুদ্ধে মুরুংদের নানা অভিযোগ রয়েছে। যোগাযোগ করা হলে অভিযুক্ত শামসুল আলম মঙ্গলবার মুঠোফোনে জানান, মুরুংদের অভিযোগ সঠিক নয়।
দুপ্রু ঝিরি এলাকায় তার ক্রয় করা জমি থেকেই গাছ কর্তন করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে আনীত সব অভিযোগ তিনি অস্বীকার করেন

নরসিংদীতে মসজিদ ও মাজার ভেঙে জমি দখল করেছে আ’লীগ নেতা

মো. মাজহারুল পারভেজ মন্টি নরসিংদী
ভূঁইফোড় এক রিয়েল এস্টেট ব্যবসায়ী ও আওয়ামী লীগ নেতা সড়ক ও জনপথের জমি আর ব্রহ্মপুত্র নদ দখল করে নিয়েছে। শুধু তাই নয়, রাতের অন্ধকারে মসজিদ আর পুরনো মাজার গুঁড়িয়ে দিয়ে অপরাধের মাত্রা আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। নরসিংদী সদর উপজেলার ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের পাশে ভগিরথপুরে প্রায় পনের কোটি টাকা মূল্যের এই জমি দখলকারী রিয়েল এস্টেট ব্যবসায়ীর নাম আওলাদ হোসেন মঞ্জু।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ধর্ম ও সমাজকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে মসজিদ ও মাজার ভাঙার এ নায়কের বিরুদ্ধে জেলা প্রশাসকের কাছে লিখিত অভিযোগ করেছে স্থানীয় জনগণ। এ অপকর্মে লিপ্ত থাকার অভিযোগে তার দাঙ্গাবাহিনী প্রধান নাছিরকে পুলিশ গ্রেফতারও করেছে। কিন্তু পরে তার অপরাধের মাত্রা আরও বেড়ে গেছে।
দিনরাত তার পালিত বাহিনীর সদস্যরা চারদিক ঘিরে রেখেছে গোটা এলাকা। পুলিশও পিছু হটেছে। তবে পুলিশের দাবি, কেউ মামলা না করায় তারা কোনো অ্যাকশনে যেতে পারছে না। এদিকে জনগণ ভয়ে মামলা না করলেও সড়ক ও জনপথ এবং নদী দখলের কারণে স্থানীয় এসি ল্যান্ড অফিস থেকেও কেন মামলা করা হয়নি, এর কোনো সদুত্তর পাওয়া যায়নি সংশ্লিষ্ট দুটি দফতর থেকে। গত ১৭ ফেব্রুয়ারি সদর উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) হাবিবুর রহমান হাবিবের কাছে জানতে চাইলে তিনি প্রথমে মুখ না খুললেও পরে সন্ধ্যায় সাংবাদিকদের সঙ্গে ঘটনাস্থল সরেজমিন পরিদর্শন করেন। ফোনে ডেকে নিয়ে আসেন অভিযুক্ত আওলাদ হোসেনকে। নদী দখল করার কারণে তাকে স্টুপিড বলে গালিও দেন।
পরে এসি ল্যান্ড নদীতে ভরাটকৃত মাটি অন্যত্র সরিয়ে নেয়ার জন্য নির্দেশ দিলেও এক মুঠো মাটিও সরাতে দেখা যায়নি।
এদিকে মসজিদ ও মাজার ভাঙার ব্যাপারে অভিযুক্তের ব্যাপারে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হবে কিনা তা জানতে চাইলে জেলা প্রশাসক অমৃত বাড়ৈ জানান, ধর্ম ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান নিয়ে টানা-হ্যাচরা করা খুব সেনসেটিভ ব্যাপার। এ ব্যাপারে প্রতিকার চেয়ে আদালতে মামলা করার জন্য পরামর্শ দেন জেলা প্রশাসক। তবে জেলা প্রশাসকের কাছে লিখিত আবেদন করে কেন প্রতিকার পাওয়া গেল না, এ ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি পুলিশকে ঘটনাটি দেখার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন বলে জানান।
এ ব্যাপারে অভিযুক্ত আওলাদ হোসেন অন্যায়ভাবে কোনো কিছুই করছেন না দাবি করলেও মসজিদ আর মাজার ভাঙার কথা স্বীকার করেন তিনি। এ এলাকার অনেক মসজিদ-মাদ্রাসা তার টাকায় চলে দম্ভোক্তি করে তিনি আরও বলেন, এই অল্প কিছুদিনের মধ্যে এক কোটি টাকা দান করব কিন্তু লোক পাচ্ছি না। আপনারাই সেই লোক কিনা অন্যের জায়গা দখল করছে।
এদিকে অভিযুক্তের আপন বড় ভাই রতন মিয়া ও স্থানীয় বাসিন্দা শিল্পপতি সাজন ভূঞা জানান, যে মাজারটি রাতের অন্ধকারে গুঁড়িয়ে দেয়া হয়েছে তার নাম কালু শাহর মাজার। মুরব্বীদের কাছে শুনেছেন, এ মাজারের বয়স আনুমানিক তিনশত বছর। এ মাজার ভাঙায় তার বিরুদ্ধে ফুঁসে উঠেছেন এখানকার কয়েক হাজার মানুষ। এ মাজার ভাঙার কারণে যে কোনো সময় আইন শৃঙ্খলার অবনতি হতে পারে বলেও তারা দাবি করেন।
সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নজরুল ইসলামের কাছে জানতে চাইলে তিনি জানান, এ পর্যন্ত বেশ কয়েকবার লোকজন জমায়েত হয়েছে। খবর পাওয়া মাত্রই দ্রুুত ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টা চলছে। তবে পুলিশের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা বলেন, জন বিস্ফোরণ পুলিশের পক্ষে ম্যানেজ করা কোনোভাবেই সম্ভব নয়