ভূঁইফোড় এক রিয়েল এস্টেট ব্যবসায়ী ও আওয়ামী লীগ নেতা সড়ক ও জনপথের জমি আর ব্রহ্মপুত্র নদ দখল করে নিয়েছে। শুধু তাই নয়, রাতের অন্ধকারে মসজিদ আর পুরনো মাজার গুঁড়িয়ে দিয়ে অপরাধের মাত্রা আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। নরসিংদী সদর উপজেলার ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের পাশে ভগিরথপুরে প্রায় পনের কোটি টাকা মূল্যের এই জমি দখলকারী রিয়েল এস্টেট ব্যবসায়ীর নাম আওলাদ হোসেন মঞ্জু।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ধর্ম ও সমাজকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে মসজিদ ও মাজার ভাঙার এ নায়কের বিরুদ্ধে জেলা প্রশাসকের কাছে লিখিত অভিযোগ করেছে স্থানীয় জনগণ। এ অপকর্মে লিপ্ত থাকার অভিযোগে তার দাঙ্গাবাহিনী প্রধান নাছিরকে পুলিশ গ্রেফতারও করেছে। কিন্তু পরে তার অপরাধের মাত্রা আরও বেড়ে গেছে।
দিনরাত তার পালিত বাহিনীর সদস্যরা চারদিক ঘিরে রেখেছে গোটা এলাকা। পুলিশও পিছু হটেছে। তবে পুলিশের দাবি, কেউ মামলা না করায় তারা কোনো অ্যাকশনে যেতে পারছে না। এদিকে জনগণ ভয়ে মামলা না করলেও সড়ক ও জনপথ এবং নদী দখলের কারণে স্থানীয় এসি ল্যান্ড অফিস থেকেও কেন মামলা করা হয়নি, এর কোনো সদুত্তর পাওয়া যায়নি সংশ্লিষ্ট দুটি দফতর থেকে। গত ১৭ ফেব্রুয়ারি সদর উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) হাবিবুর রহমান হাবিবের কাছে জানতে চাইলে তিনি প্রথমে মুখ না খুললেও পরে সন্ধ্যায় সাংবাদিকদের সঙ্গে ঘটনাস্থল সরেজমিন পরিদর্শন করেন। ফোনে ডেকে নিয়ে আসেন অভিযুক্ত আওলাদ হোসেনকে। নদী দখল করার কারণে তাকে স্টুপিড বলে গালিও দেন।
পরে এসি ল্যান্ড নদীতে ভরাটকৃত মাটি অন্যত্র সরিয়ে নেয়ার জন্য নির্দেশ দিলেও এক মুঠো মাটিও সরাতে দেখা যায়নি।
এদিকে মসজিদ ও মাজার ভাঙার ব্যাপারে অভিযুক্তের ব্যাপারে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হবে কিনা তা জানতে চাইলে জেলা প্রশাসক অমৃত বাড়ৈ জানান, ধর্ম ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান নিয়ে টানা-হ্যাচরা করা খুব সেনসেটিভ ব্যাপার। এ ব্যাপারে প্রতিকার চেয়ে আদালতে মামলা করার জন্য পরামর্শ দেন জেলা প্রশাসক। তবে জেলা প্রশাসকের কাছে লিখিত আবেদন করে কেন প্রতিকার পাওয়া গেল না, এ ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি পুলিশকে ঘটনাটি দেখার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন বলে জানান।
এ ব্যাপারে অভিযুক্ত আওলাদ হোসেন অন্যায়ভাবে কোনো কিছুই করছেন না দাবি করলেও মসজিদ আর মাজার ভাঙার কথা স্বীকার করেন তিনি। এ এলাকার অনেক মসজিদ-মাদ্রাসা তার টাকায় চলে দম্ভোক্তি করে তিনি আরও বলেন, এই অল্প কিছুদিনের মধ্যে এক কোটি টাকা দান করব কিন্তু লোক পাচ্ছি না। আপনারাই সেই লোক কিনা অন্যের জায়গা দখল করছে।
এদিকে অভিযুক্তের আপন বড় ভাই রতন মিয়া ও স্থানীয় বাসিন্দা শিল্পপতি সাজন ভূঞা জানান, যে মাজারটি রাতের অন্ধকারে গুঁড়িয়ে দেয়া হয়েছে তার নাম কালু শাহর মাজার। মুরব্বীদের কাছে শুনেছেন, এ মাজারের বয়স আনুমানিক তিনশত বছর। এ মাজার ভাঙায় তার বিরুদ্ধে ফুঁসে উঠেছেন এখানকার কয়েক হাজার মানুষ। এ মাজার ভাঙার কারণে যে কোনো সময় আইন শৃঙ্খলার অবনতি হতে পারে বলেও তারা দাবি করেন।
সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নজরুল ইসলামের কাছে জানতে চাইলে তিনি জানান, এ পর্যন্ত বেশ কয়েকবার লোকজন জমায়েত হয়েছে। খবর পাওয়া মাত্রই দ্রুুত ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টা চলছে। তবে পুলিশের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা বলেন, জন বিস্ফোরণ পুলিশের পক্ষে ম্যানেজ করা কোনোভাবেই সম্ভব নয়
No comments:
Post a Comment