Wednesday 25 August 2010

সিলেটে জমি দখল করলেন আওয়ামী লীগ নেতা

সিলেট অফিস | Kaler Kantho | ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১১ ভাদ্র ১৪১৭, ১৫ রমজান ১৪৩১, ২৬ আগস্ট ২০১০

রাস্তা না দেওয়ায় পুলিশের উপস্থিতিতেই সিলেটে এক আওয়ামী লীগ নেতা একটি পরিবারের অর্ধ কোটি টাকার জমি দখল করে নিয়েছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগ, দখলকারীকে নিবৃত্ত না করে তারা উল্টো সহযোগিতা করছে। এ ঘটনায় পুলিশ উভয় পক্ষকে থানায় ডেকে নিলেও দখলকারীর সামনে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের সদস্যদের গালাগাল করে এবং এ নিয়ে 'বেশি বাড়াবাড়ি' না করতে শাসিয়ে দেয়।
গতকাল বুধবার বিকেলে সিলেটের দক্ষিণ সুরমা উপজেলার সিলাম ইউনিয়নের চরমোহাম্মদপুর গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। ঘটনার পর থেকে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের লোকজনকে বাড়ি থেকে বের হতে দিচ্ছেন না দখলদাররা।
গ্রামের মরহুম এম এ গফ্ফার চৌধুরীর মেয়ে সুজিকা আক্তার চৌধুরী ও নুসরাত চৌধুরী অভিযোগে বলেন, তাঁদের বাবা ছিলেন একজন প্রথম শ্রেণীর ঠিকাদার। সাতটি ইটখোলাসহ প্রায় কয়েক কোটি টাকার সম্পত্তি ছিল তাঁদের। ১৯৯৬ সালে বাবা মারা যাওয়ার পর এক সৎবোনের সঙ্গে তাঁদের সম্পত্তি নিয়ে বিরোধ দেখা দেয়। এ নিয়ে আদালতে মামলা রয়েছে।
সুজিকা ও নুসরাত কালের কণ্ঠের কাছে অভিযোগ করে বলেন, সৎবোনের সঙ্গে বিরোধের জের ধরে গ্রামের আওয়ামী লীগ নেতা কফিল আহমদ চৌধুরী হঠাৎ করেই তাদের সম্পত্তি দখলের পাঁয়তারা করতে থাকেন। তিনি তাঁদের নানাভাবে হয়রানি করতে থাকেন, হত্যার হুমকি দেন। ২০০৭ সালের ২১ আগস্ট তিনি তাঁর লোকজনকে দিয়ে তাদের পরিবারের সদস্যদের মারধর ও বাড়িতে লুটপাট করেন। দুই বোন বলেন, এ নিয়ে থানায় তাঁরা সাধারণ ডায়েরিও করেছেন।
বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, দুই বছর আগে কফিল চৌধুরী সুজিকাদের বাড়ির পাশের জমির ওপর দিয়ে জোরপূর্বক পাঁচ হাত রাস্তা করেন। গতকাল সুজিকাদের জমিতে বর্গাচাষি সুহেল ও তাঁর বাবা আবুল কালাম যখন কাজ করছিলেন। তখন কফিল আহমদ এবং তাঁর সহযোগী সাবি্বর আহমদ, জমসেদ, জুনাব আলী, তুহিন, কামাল, মিটু, শাহীন, কয়েস, সেলিম, সাদেক, জনি, জাহাঙ্গীরসহ অন্যরা বর্গাচাষিকে মারধর করে জমি থেকে তুলে দেয়। খবর পেয়ে দক্ষিণ সুরমা থানার এসআই হারুন মজুমদারের নেতৃত্বে একদল পুলিশ ঘটনাস্থলে গেলে তাদের সামনেই সুজিকাদের জমিতে বেড়া দেন কফিল। পুলিশ এ সময় তাঁকে অন্যায়ভাবে এই কাজ না করতে এবং উভয় পক্ষকে কাগজপত্র নিয়ে থানায় যেতে বলে।
খবর পেয়ে দক্ষিণ সুরমা উপজেলার চেয়ারম্যান লোকমান আহমদও ঘটনাস্থলে যান। তাঁর সামনেই কফিল আহমদ জমিতে বেড়া দেন বলে জানা যায়। এ প্রসঙ্গে লোকমান আহমদ বলেন, 'যতটুকু জেনেছি জমিটি সুজিকাদের। কফিল আহমদের এখানে কোনো জমি নেই।'
বিকেলে উভয়পক্ষ থানায় যান। কিন্তু দেরিতে যাওয়ায় কফিল আহমদের সামনে ওসি আবু শামা মো. ইকবাল হায়াত সুজিকা ও তাঁর বোনের সঙ্গে রূঢ় আচরণ করেন। তিনি তাঁদের গালাগাল করেন। এ নিয়ে বেশি বাড়াবাড়ি না করার জন্য শাসান।
ওসি এ অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, 'দেরিতে আসার কারণ জানতে চাইলে তাঁরা (সুজিকা ও নুসরাত) বলে প্রতিপক্ষ তাঁদের আসতে বাধা দিচ্ছিল। আমি বলেছি বাধা দিলে আমাকে বলতেন আমি আপনাদের নিয়ে আসতাম। এরপর তাঁরা আর বসেননি। আমি তাঁদের গালাগাল করিনি।' ওসি বলেন, 'বিরোধ রয়েছে তাঁদের বোনদের মধ্যে। এখানে কফিল আহমদ কিভাবে ঢুকলেন সেটাতো আমিও বুঝতে পারছি না। এ জন্য তাঁদের ডেকেছিলাম। তাঁরা বসলে এর একটা সমাধান বের হয়ে যেত।'
অভিযুক্ত কফিল আহমদ চৌধুরী অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, 'তাঁদের সঙ্গে তো আমাদের জমি-সংক্রান্ত কোনো ঝামেলা নেই। তাঁদের বাবা মারা যাওয়ার আগে তাঁদের বোন-জামাইয়ের কাছে জমি বিক্রি করে গেছেন। আমরা এমপি সাহেবের মাধ্যমে প্রাইমারি স্কুলের জন্য একটি রাস্তা নিতে চাচ্ছি। রাস্তাটা পাকা করতে হলে বড় জায়গার দরকার। অন্যরা জমি দিয়েছেন। সুজিকারা দিচ্ছেন না। তাই আজ এ নিয়ে একটু কথা হয়েছে।'

Monday 2 August 2010

যশোরে শাসকদলের সন্ত্রাসীদের তাণ্ডব ভাংচুর লুটপাট : কোটি টাকার সম্পত্তি দখল



যশোর অফিস ও অভয়নগর প্রতিনিধি
শাসক দলের এক প্রভাবশালী জনপ্রতিনিধির আশ্রিত সন্ত্রাসী বাহিনী গতকাল শিল্পশহর নওয়াপাড়ায় তিন ঘণ্টা ব্যাপক তাণ্ডব চালিয়েছে। এ সময় তারা বাড়িঘর, স্কুল, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে লুটপাট ও ভাংচুর করে। দখল করে নেয় প্রায় কোটি টাকা দামের বাণিজ্যিক সম্পত্তি। সন্ত্রাসীদের এ তাণ্ডবে সাধারণ মানুষের পাশাপাশি আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরাও ক্ষুব্ধ, বিরক্ত। তারা এ সন্ত্রাসের বিচার চেয়েছেন।
এলাকাবাসী ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, গতকাল ভোর ৫টার দিকে অভয়নগর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ডাক্তার আবদুল গফ্ফার ও ছাত্রলীগ উপজেলা কমিটির সহ-সভাপতি ফারাজী নাসিরের নেতৃত্বে ২০-২৫ জনের একদল সন্ত্রাসী নওয়াপাড়া শহরে অবস্থিত উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সামনে কোটা গ্রামের মমিনউদ্দিন সরদার ও সোহরাব হোসেন সরদারের মালিকানাধীন সাড়ে ১৫ শতক জমির ওপর থাকা আবদুল্লাহ আল মামুনের পলি ফার্মেসি, নাদিম হোসেনের নূর ইলেকট্রিক অ্যান্ড রেফ্রিজারেশন, প্রশান্ত কুমার কুণ্ডুর প্রণয় স্টোর, জামাল হোসেনের জামাল হোটেল, সানফ্লাওয়ার কিন্ডারগার্টেন এবং মমিন সরদার ও সোহরাব সরদারের বসতবাড়িতে হামলা চালিয়ে ব্যাপক ভাংচুর ও লুটপাট করে।
পলি ফার্মেসির মালিক আল মামুন বলেন, ভোর সাড়ে ৫টায় খবর পেয়ে আমার ওষুধের দোকানে গিয়ে দেখি সন্ত্রাসীরা ভাংচুর ও লুটপাট করছে। তারা আমার দোকানের ফ্রিজ, ওষুধসহ প্রায় সাড়ে ৪ লাখ টাকার মালামাল আমার সামনে দিয়ে নিয়ে গেলেও চেয়ে চেয়ে দেখা ছাড়া করার কিছু ছিল না।
প্রণয় স্টোরের মালিক প্রশান্ত কুমার কুণ্ডু বলেন, আওয়ামী লীগের লোকদের দ্বারা পুলিশের সামনে আমার এতবড় ক্ষতি হবে তা জীবনেও ভাবিনি। আমি এখন পথের ফকির হয়ে গেলাম।
মমিন সরদারের পুত্রবধূ স্কুলশিক্ষিকা জেসমিন আক্তার মিনি বলেন, আমি ভাত রান্না করছিলাম। হঠাত্ সন্ত্রাসীরা আমাকে মারধর শুরু করে টেনেহিঁচড়ে বের করে নিয়ে যায়। তারা ভাতের হাঁড়ি লাথি মেরে ফেলে দেয়।
সানফ্লাওয়ার কিন্ডারগার্টেনের প্রধান শিক্ষিকা রোজিয়াত সুলতানা জানান, তিনি স্কুলে এসে দেখতে পান সন্ত্রাসীরা স্কুলের কম্পিউটার, চেয়ার, বেঞ্চ ও পরীক্ষার খাতাপত্র সবকিছু নিয়ে গেছে। স্কুলটি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় সন্তানদের ভবিষ্যত্ নিয়ে শঙ্কিত হয়ে পড়েছেন বলে জানান অভিভাবকরা।
জমির মালিক মমিন সরদার বলেন, ক্রয়সূত্রে আমরা ওই জমির মালিক। দীর্ঘ ৩০ বছর ওই জমি ভোগদখল করে আসছি। কুচক্রী মহলের ষড়যন্ত্রের শিকার হওয়ার পর আদালতে মামলা করি। বিরোধীয় জমি নিয়ে আদালতে মামলা চলছে। আদালতের নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। তারপরও ডা. গফ্ফার ও নাসিরের নেতৃত্বে যেভাবে হামলা চালিয়ে উচ্ছেদ করা হলো তা অবিশ্বাস্য। হামলার সময় পুলিশ ছিল নির্বিকার।
অভয়নগর থানার ওসি আহসান হাবিব জানান, বিষয়টি আমি শুনেছি। শান্তি রক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিয়েছি।
অভয়নগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. জাহিদ হোসেন বলেন, আমি ঘটনাস্থলে গিয়ে চারটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, দুটি বাড়ি ও একটি স্কুলের কোনো মালামাল দেখতে পাইনি।
ক্ষতিগ্রস্ত ও হামলার শিকার ব্যক্তিরা বলছেন, সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা সবাই শাসক দল আশ্রিত। হামলা-ভাংচুরের সময় সন্ত্রাসীরা ওই নেতার নির্দেশেই তাণ্ডব চালানো হচ্ছে বলে দম্ভভরে জানায়। পুলিশের সামনে সন্ত্রাসীদের এই তাণ্ডবে হতবাক হয়ে গেছেন সাধারণ মানুষ। খবর পেয়ে দুপুরে যশোর থেকে একদল সাংবাদিক ঘটনাস্থলে পৌঁছলে নারী-পুরুষ নির্বিশেষে তাদের ওপর সন্ত্রাসীদের অত্যাচারের কাহিনী বর্ণনা করেন।
সন্ত্রাসী তাণ্ডবের প্রত্যক্ষদর্শী অভয়নগর উপজেলা আওয়ামী যুবলীগের সভাপতি আবদুর রউফ সাংবাদিকদের জানান, স্থানীয় এমপি ও জাতীয় সংসদের হুইপের প্রশ্রয়ে সন্ত্রাসীদের এই বেপরোয়া অবস্থা। শুধু এই সম্পত্তি নয়, মহাজোট ক্ষমতায় আসার পর অভয়নগরের বিভিন্ন স্থানে হুইপের নাম ভাঙিয়ে দলীয় সন্ত্রাসীরা মানুষের ভূসম্পত্তি দখল করে নিয়েছে।
উপজেলা আওয়ামী লীগের স্বাস্থ্য ও জনসংখ্যা বিষয়ক সম্পাদক কাউসার আলী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, মুক্তিযুদ্ধকালে রাজাকাররাও এভাবে লুটপাট করেনি। আজ (সোমবার) আওয়ামী লীগ আশ্রিত সন্ত্রাসীরা যেভাবে সাধারণ মানুষের সম্পত্তির ওপর চড়াও হলো তা এক কথায় ভয়াবহ। স্থানীয় নেতাদের জানিয়ে লাভ নেই, আমি প্রধানমন্ত্রীর কাছে এ ঘটনার বিচার চাই।

http://www.amardeshonline.com/pages/details/2010/08/03/37224