সালেহ আহমেদ, ধরমপাশা (সুনামগঞ্জ) | তারিখ: ২৪-০৭-২০১০
সুনামগঞ্জের ধরমপাশায় গ্রামীণ অবকাঠামো রক্ষণাবেক্ষণের (টিআর) বিশেষ বরাদ্দের প্রকল্প কাজে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতি হয়েছে। স্থানীয় সাংসদ মোয়াজ্জেম হোসেন তাঁর পছন্দের নেতা-কর্মীদের নামে গম বরাদ্দ দিয়েছেন। কিন্তু কোনো কাজ না করে এই গম আত্মসাৎ করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার (পিআইও) কার্যালয় ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, খাদ্য ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয় থেকে ২০০৯-১০ অর্থবছরে টিআর কর্মসূচির আওতায় ধরমপাশার ১০ ইউনিয়নে ৭৬টি প্রকল্পের বিপরীতে ১৩২ টন বিশেষ গম বরাদ্দের অনুমোদন দেওয়া হয়।
নীতিমালা অনুযায়ী জনকল্যাণমূলক কাজে এ বরাদ্দ ব্যবহারের কথা। কিন্তু গত জুন মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে প্রথম দফায় আওয়ামী লীগের ২৪ জন নেতা-কর্মীর বাড়িতে শৌচাগার নির্মাণের জন্য স্থানীয় সাংসদ মোয়াজ্জেম হোসেন ৩২ টন গম বরাদ্দ দেওয়াসহ ৭৬টি প্রকল্পের তালিকা পিআইও কার্যালয়ে পাঠান। মসজিদ, মন্দির ও গোরস্তানের উন্নয়ন, রাস্তা সংস্কার, মেরামত ও সাঁকো নির্মাণ প্রকল্পগুলোর মধ্যে ছিল। তবে পরবর্তী সময়ে শৌচাগার নির্মাণ প্রকল্পের নাম পরিবর্তন করে গ্রামভিত্তিক পাড়ায়-পাড়ায় শৌচাগার নির্মাণের প্রকল্প করা হয়। বরাদ্দের অধিকাংশ গম ইতিমধ্যে তুলে নেন নেতা-কর্মীরা। গত ৩০ জুনের মধ্যে প্রকল্প বাস্তবায়নের নির্দেশ থাকলেও নেতা-কর্মীদের দেওয়া প্রকল্পের কাজ এখনো শুরুই হয়নি।
ধরমপাশা সদর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. আবদুস ছাত্তারের বাড়িতে শৌচাগার নির্মাণের জন্য বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিল দুই টন গম। মো. আবদুস ছাত্তারকে করা হয় প্রকল্পের বাস্তবায়ন কমিটির সভাপতি। কাজের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘ব্যস্ত থাকায় এখনো কাজ শুরু করতে পারিনি, তবে খুব তাড়াতাড়ি তা করে নেব।’ সুখাইড় রাজাপুর দক্ষিণ ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রাসেল মিয়ার বাড়িতে শৌচাগার নির্মাণের জন্য বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিল এক টন গম। তিনি ওই গ্রামের বাসিন্দা এবং প্রকল্প কমিটির চেয়ারম্যান। কাজ করেছেন কি না, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘কী আর কাজ করব? ডানে-বাঁয়ে দিতে গিয়ে বেশকিছু টাকা খরচ হয়ে গেছে। তাই ভাবছি, আগামী শুষ্ক মৌসুমে কাজ করব।’
একইভাবে শৌচাগার নির্মাণের কোনো প্রকল্পের কাজ সংশ্লিষ্ট চেয়ারম্যান তথা আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা করেননি। এমনকি অনেকের নামে বরাদ্দ হলেও তিনি নন, গম তুলে নিয়েছেন অন্য কেউ। চামরদানী ইউনিয়নের আমজুড়া গ্রামের বাসিন্দা ছাত্রলীগ নেতা মান্নার বাড়িতে শৌচাগার নির্মাণের জন্য দুই টন গম বরাদ্দ দেখানো হলেও তিনি দাবি করেন, ‘প্রকল্প তালিকায় আমার নামে গম বরাদ্দ দেখে আমি অবাক হয়ে গেছি। আমি সাংসদের কাছে এ বাবদ বরাদ্দ চাইনি। আমি এ বরাদ্দের মাল উত্তোলন করিনি। কে বা কারা তা নিয়েছে, তা আমি জানি না।’
পাইকুরাটি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি গোলাম মোস্তফা জামালপুর গ্রামের রাস্তা মেরামতের জন্য বরাদ্দ পেয়েছেন পাঁচ টন গম। কিন্তু ওই সড়কে কোনো কাজই হয়নি। এর সত্যতা স্বীকার করে তিনি বলেন, ‘গত শুষ্ক মৌসুমে সড়কে সামান্য মাটি ভরাট করিয়েছিলাম। দলীয় কার্যালয়েও কিছু মাটির কাজ করিয়েছি। এ ছাড়া সংগঠন চালাতে আপ্যায়ন খরচও আমাকেই মেটাতে হয়। আমার ব্যয়ের আসল টাকাই এখনো উঠে আসেনি।’
উপজেলার পিআইও নূর আহমেদ বলেন, ‘আমাকে এ উপজেলার পাশাপাশি তাহিরপুরের অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করতে হচ্ছে। তাই সব প্রকল্পের কাজ দেখভাল করা সম্ভব হয়নি।’ উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা মো. বাবুল মিঞা বলেন, টিআর প্রকল্পের বিষয়ে এখনো কোনো অভিযোগ পাওয়া যায়নি। অভিযোগ এলে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বরাদ্দ, প্রকল্প অনুমোদন নিয়ম মোতাবেক হয়েছে দাবি করে সাংসদ মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, তদারকির দায়িত্ব প্রশাসনের। কাজ শুরু না করা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, নেতা-কর্মীরা অর্ধেক কাজ করে, অর্ধেক করে না—এটাই স্বাভাবিক।
http://www.prothom-alo.com/detail/date/2010-07-24/news/81173
Friday, 30 July 2010
Wednesday, 28 July 2010
দলীয় বিবেচনায় পুলিশে ১ হাজার সার্জেন্ট ও এসআই নিয়োগ চূড়ান্ত
শামসুস সালেহীন
দলীয় বিবেচনায় পুলিশে প্রায় ১ হাজার সার্জেন্ট ও এসআই নিয়োগ চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। মন্ত্রী, এমপি ও দলীয় নেতাদের তদবিরেই এসব পদে নিয়োগ দেয়া হচ্ছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সূত্র জানিয়েছে, এই প্রক্রিয়ায় এরই মধ্যে প্রায় ৯০০ জন এসআই নিয়োগ দেয়া হয়েছে। আগামী সপ্তাহেই ১৩৩ জন সার্জেন্টকে নিয়োগ দেয়ার কথা রয়েছে। এসব নিয়োগ প্রার্থীর তালিকা মন্ত্রণালয়ের কম্পিউটারে সংরক্ষণ করা হয়েছে। প্রত্যেক নিয়োগ প্রার্থীর নামের পাশে তদবিরকারীর নাম উল্লেখ করা হয়েছে বলে মন্ত্রণালয়ের সূত্র জানায়।
জানা গেছে, সম্প্রতি পুলিশে ১৬৬ জন সার্জেন্ট নিয়োগ চূড়ান্ত করা হয়। পুলিশি তদন্তে বিভিন্ন ত্রুটির কারণে ৩৩ জনের নাম বাদ পড়ে। ফলে ১৩৩ জনকে সার্জেন্ট পদে নিয়োগ দেয়ার প্রক্রিয়া চূড়ান্ত করা হয়। অভিযোগ রয়েছে, সার্জেন্ট নিয়োগ প্রক্রিয়ায় জেলা কোটা মানা হয়নি। এ কারণে চট্টগ্রামের একজনকেও নেয়া হয়নি ১৩৩ জনের মধ্যে। এতে করে চট্টগ্রামে বিষয়টি নিয়ে বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে। সূত্রমতে, ১৩৩ জন পুলিশ সার্জেন্টের বেশিরভাগই চূড়ান্ত করা হয়েছে মন্ত্রী ও এমপিদের সুপারিশে। আগামী সপ্তাহেই এদের নিয়োগ দেয়ার কথা রয়েছে বলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়।
এছাড়া পুলিশে আরও ২০০ এসআই (সাব-ইন্সপেক্টর) নিয়োগের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এর আগে ৪৩৪ জন এসআই নিয়োগের বিষয়টি চূড়ান্ত হওয়ার পর তা বাড়িয়ে ৬৩৪ জন করা হয়। অভিযোগ রয়েছে, রাজনৈতিক চাপ ও তদবির রক্ষার জন্যই নিয়োগ সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে। এর আগে ৪৩৪ জন এসআই নিয়োগের জন্য বিজ্ঞপ্তি দেয়া হয়। লিখিত পরীক্ষা শেষে প্রায় ১ হাজার ৬০০ জনকে নির্বাচন করে মৌখিক পরীক্ষা নেয়া হয়। এ সময় আরও ২০০ জনকে এসআই পদে নিয়োগ দেয়ার উদ্যোগ নেয় সরকার।
মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, এসআই পদে নিয়োগের জন্য প্রতিমন্ত্রী, সংসদ সদস্য থেকে শুরু করে ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও আওয়ামী লীগ নেতাদের তদবির সামাল দিতে হচ্ছে প্রতিদিনই। এ জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রীকেও কিছুটা সময় ব্যয় করতে হচ্ছে। তবে যারা তদবির নিয়ে আসেন, তাদের নাম মন্ত্রণালয়ের কম্পিউটারে সংরক্ষণ করা হচ্ছে।
সূত্র জানায়, প্রথম দফায় যে ৪৩৪ এসআই নিয়োগের সিদ্ধান্ত হয়েছিল তার মধ্যে জেলা কোটা অনুযায়ী ঢাকার ৩০ জন, গাজীপুরে ৭ জন, মানিকগঞ্জে ৬ জন, মুন্সীগঞ্জে ৬ জন, নারায়ণগঞ্জে ৮ জন, নরসিংদীতে ৭ জন, ফরিদপুরে ৬ জন, গোপালগঞ্জে ৪ জন, মাদারীপুরে ৪ জন, রাজবাড়ীতে ৩ জন, শরিয়তপুরে ৪ জন, জামালপুরে ৭ জন, শেরপুরে ৪, কিশোরগঞ্জে ৯ জন, নেত্রকোনায় ৭ জন, ময়মনসিংহে ১৬ জন, টাঙ্গাইলে ১১ জন, চট্টগ্রামে ২৩ জন, কক্সবাজারে ৬ জন, খাগড়াছড়িতে ২ জন, বান্দরবানে ১ জন, রাঙামাটিতে ২ জন, কুমিল্লায় ১৬ জন, ব্রাক্ষণবাড়ীয়ায় ৮ জন, চাঁদপুরে ৮ জন, নোয়াখালীতে ৯ জন, ফেনীতে ৪ জন, লক্ষ্মীপুরে ৫ জন, বগুড়ায় ১১ জন, জয়পুরহাটে ৩ জন, দিনাজপুরে ৯ জন, পঞ্চগড়ে ৩ জন, ঠাকুরগাঁওয়ে ৪ জন, পাবনায় ৬ জন, সিরাজগঞ্জে ৯ জন, রাজশাহীতে ৮ জন, নওগাঁয় ৮ জন, নাটোরে ৫ জন, চাঁপাইনবাবগঞ্জে ৫ জন, রংপুরে ৯ জন, গাইবান্ধায় ৭ জন, লালমনিরহাটে ৪ জন, কুড়িগ্রামে ৬ জন, নীলফামারীতে ৫ জন, খুলনায় ৮ জন, বাগেরহাটে ৫ জন, সাতক্ষীরায় ৬ জন, যশোরে ৯ জন, ঝিনাইদহে ৬ জন, মাগুরায় ৩ জন, নড়াইলে ২ জন, কুষ্টিয়ায় ৬ জন, চুয়াডাঙ্গায় ৪ জন, মেহেরপুরে ২ জন, বরিশালে ৮ জন, ভোলায় ৬ জন, ঝালকাঠিতে ২ জন, পিরোজপুরে ৪ জন, বরগুনায় ৩ জন, পটুয়াখালীতে ৫ জন, সিলেটে ৯ জন, হবিগঞ্জে ৬ জন, মৌলভীবাজারে ৬ জন ও সুনামগঞ্জে ৭ জন সাব-ইন্সপেক্টর নিয়োগের সিদ্ধান্ত হয়েছিল বলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়। পরে রাজনৈতিক দলীয় চাপ ও তদবির রক্ষার জন্যই আরও ২০০ জন বাড়ানো হচ্ছে। এতে মনগড়াভাবে জেলাভিত্তিক সংখ্যায় পরিবর্তন আনা হবে।
সূত্র জানায়, এসআই নিয়োগের জন্য যে জেলা কোটা নির্ধারিত রয়েছে, তাকে অপ্রতুল আখ্যা দিয়ে কোটা বাড়ানোর দাবি করছেন মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও সংসদ সদস্যরা। পাশাপাশি নিজেদের পছন্দের প্রার্থীরা যাতে নিয়োগ পান সে ব্যাপারেও রয়েছে জোর তদবির। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র আরও জানায়, তদবিরের কোটা পূরণের জন্যই নিয়োগের সংখ্যা বাড়ানো হচ্ছে। তবে সূত্রমতে, সরকারের যুক্তি হলো তারা যা করছেন সরকারি কর্ম-কমিশনের (পিএসসি) নীতিমালা অনুযায়ী করছেন।
http://www.amardeshonline.com/pages/details/2010/07/29/36495
দলীয় বিবেচনায় পুলিশে প্রায় ১ হাজার সার্জেন্ট ও এসআই নিয়োগ চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। মন্ত্রী, এমপি ও দলীয় নেতাদের তদবিরেই এসব পদে নিয়োগ দেয়া হচ্ছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সূত্র জানিয়েছে, এই প্রক্রিয়ায় এরই মধ্যে প্রায় ৯০০ জন এসআই নিয়োগ দেয়া হয়েছে। আগামী সপ্তাহেই ১৩৩ জন সার্জেন্টকে নিয়োগ দেয়ার কথা রয়েছে। এসব নিয়োগ প্রার্থীর তালিকা মন্ত্রণালয়ের কম্পিউটারে সংরক্ষণ করা হয়েছে। প্রত্যেক নিয়োগ প্রার্থীর নামের পাশে তদবিরকারীর নাম উল্লেখ করা হয়েছে বলে মন্ত্রণালয়ের সূত্র জানায়।
জানা গেছে, সম্প্রতি পুলিশে ১৬৬ জন সার্জেন্ট নিয়োগ চূড়ান্ত করা হয়। পুলিশি তদন্তে বিভিন্ন ত্রুটির কারণে ৩৩ জনের নাম বাদ পড়ে। ফলে ১৩৩ জনকে সার্জেন্ট পদে নিয়োগ দেয়ার প্রক্রিয়া চূড়ান্ত করা হয়। অভিযোগ রয়েছে, সার্জেন্ট নিয়োগ প্রক্রিয়ায় জেলা কোটা মানা হয়নি। এ কারণে চট্টগ্রামের একজনকেও নেয়া হয়নি ১৩৩ জনের মধ্যে। এতে করে চট্টগ্রামে বিষয়টি নিয়ে বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে। সূত্রমতে, ১৩৩ জন পুলিশ সার্জেন্টের বেশিরভাগই চূড়ান্ত করা হয়েছে মন্ত্রী ও এমপিদের সুপারিশে। আগামী সপ্তাহেই এদের নিয়োগ দেয়ার কথা রয়েছে বলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়।
এছাড়া পুলিশে আরও ২০০ এসআই (সাব-ইন্সপেক্টর) নিয়োগের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এর আগে ৪৩৪ জন এসআই নিয়োগের বিষয়টি চূড়ান্ত হওয়ার পর তা বাড়িয়ে ৬৩৪ জন করা হয়। অভিযোগ রয়েছে, রাজনৈতিক চাপ ও তদবির রক্ষার জন্যই নিয়োগ সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে। এর আগে ৪৩৪ জন এসআই নিয়োগের জন্য বিজ্ঞপ্তি দেয়া হয়। লিখিত পরীক্ষা শেষে প্রায় ১ হাজার ৬০০ জনকে নির্বাচন করে মৌখিক পরীক্ষা নেয়া হয়। এ সময় আরও ২০০ জনকে এসআই পদে নিয়োগ দেয়ার উদ্যোগ নেয় সরকার।
মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, এসআই পদে নিয়োগের জন্য প্রতিমন্ত্রী, সংসদ সদস্য থেকে শুরু করে ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও আওয়ামী লীগ নেতাদের তদবির সামাল দিতে হচ্ছে প্রতিদিনই। এ জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রীকেও কিছুটা সময় ব্যয় করতে হচ্ছে। তবে যারা তদবির নিয়ে আসেন, তাদের নাম মন্ত্রণালয়ের কম্পিউটারে সংরক্ষণ করা হচ্ছে।
সূত্র জানায়, প্রথম দফায় যে ৪৩৪ এসআই নিয়োগের সিদ্ধান্ত হয়েছিল তার মধ্যে জেলা কোটা অনুযায়ী ঢাকার ৩০ জন, গাজীপুরে ৭ জন, মানিকগঞ্জে ৬ জন, মুন্সীগঞ্জে ৬ জন, নারায়ণগঞ্জে ৮ জন, নরসিংদীতে ৭ জন, ফরিদপুরে ৬ জন, গোপালগঞ্জে ৪ জন, মাদারীপুরে ৪ জন, রাজবাড়ীতে ৩ জন, শরিয়তপুরে ৪ জন, জামালপুরে ৭ জন, শেরপুরে ৪, কিশোরগঞ্জে ৯ জন, নেত্রকোনায় ৭ জন, ময়মনসিংহে ১৬ জন, টাঙ্গাইলে ১১ জন, চট্টগ্রামে ২৩ জন, কক্সবাজারে ৬ জন, খাগড়াছড়িতে ২ জন, বান্দরবানে ১ জন, রাঙামাটিতে ২ জন, কুমিল্লায় ১৬ জন, ব্রাক্ষণবাড়ীয়ায় ৮ জন, চাঁদপুরে ৮ জন, নোয়াখালীতে ৯ জন, ফেনীতে ৪ জন, লক্ষ্মীপুরে ৫ জন, বগুড়ায় ১১ জন, জয়পুরহাটে ৩ জন, দিনাজপুরে ৯ জন, পঞ্চগড়ে ৩ জন, ঠাকুরগাঁওয়ে ৪ জন, পাবনায় ৬ জন, সিরাজগঞ্জে ৯ জন, রাজশাহীতে ৮ জন, নওগাঁয় ৮ জন, নাটোরে ৫ জন, চাঁপাইনবাবগঞ্জে ৫ জন, রংপুরে ৯ জন, গাইবান্ধায় ৭ জন, লালমনিরহাটে ৪ জন, কুড়িগ্রামে ৬ জন, নীলফামারীতে ৫ জন, খুলনায় ৮ জন, বাগেরহাটে ৫ জন, সাতক্ষীরায় ৬ জন, যশোরে ৯ জন, ঝিনাইদহে ৬ জন, মাগুরায় ৩ জন, নড়াইলে ২ জন, কুষ্টিয়ায় ৬ জন, চুয়াডাঙ্গায় ৪ জন, মেহেরপুরে ২ জন, বরিশালে ৮ জন, ভোলায় ৬ জন, ঝালকাঠিতে ২ জন, পিরোজপুরে ৪ জন, বরগুনায় ৩ জন, পটুয়াখালীতে ৫ জন, সিলেটে ৯ জন, হবিগঞ্জে ৬ জন, মৌলভীবাজারে ৬ জন ও সুনামগঞ্জে ৭ জন সাব-ইন্সপেক্টর নিয়োগের সিদ্ধান্ত হয়েছিল বলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়। পরে রাজনৈতিক দলীয় চাপ ও তদবির রক্ষার জন্যই আরও ২০০ জন বাড়ানো হচ্ছে। এতে মনগড়াভাবে জেলাভিত্তিক সংখ্যায় পরিবর্তন আনা হবে।
সূত্র জানায়, এসআই নিয়োগের জন্য যে জেলা কোটা নির্ধারিত রয়েছে, তাকে অপ্রতুল আখ্যা দিয়ে কোটা বাড়ানোর দাবি করছেন মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও সংসদ সদস্যরা। পাশাপাশি নিজেদের পছন্দের প্রার্থীরা যাতে নিয়োগ পান সে ব্যাপারেও রয়েছে জোর তদবির। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র আরও জানায়, তদবিরের কোটা পূরণের জন্যই নিয়োগের সংখ্যা বাড়ানো হচ্ছে। তবে সূত্রমতে, সরকারের যুক্তি হলো তারা যা করছেন সরকারি কর্ম-কমিশনের (পিএসসি) নীতিমালা অনুযায়ী করছেন।
http://www.amardeshonline.com/pages/details/2010/07/29/36495
Monday, 26 July 2010
ভারত থেকে ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুত্ আনতে ৩৫ বছরের সঞ্চালন চুক্তি : ভারতের অংশের সঞ্চালন লাইন নির্মাণের খরচও বহন করতে হবে বাংলাদেশকে
ভারত থেকে ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুত্ আনতে ৩৫ বছরের সঞ্চালন চুক্তি : ভারতের অংশের সঞ্চালন লাইন নির্মাণের খরচও বহন করতে হবে বাংলাদেশকে
বিশেষ প্রতিনিধি
ভারত থেকে বিদ্যুত্ আমদানি করতে গতকাল সঞ্চালন চুক্তি স্বাক্ষর করা হয়েছে। ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুত্ আমদানির লক্ষ্যে ৩৫ বছর মেয়াদি এ চুক্তি স্বাক্ষরিত হয় পাওয়ার গ্রিড কর্পোরেশন অব ইন্ডিয়া লি. (পিজিসিআইএল) ও বাংলাদেশ পাওয়ার ডেভেলপমেন্ট বোর্ডের (বিপিডিবি) মধ্যে। গতরাতে অনুষ্ঠিত চুক্তিস্বাক্ষর অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেন, এ চুক্তি দু’দেশের পারস্পরিক সহযোগিতার ক্ষেত্রে মাইলফলক। চুক্তি অনুযায়ী ভারতের অংশে বাহারামপুর পর্যন্ত প্রায় ৮০ কিলোমিটার এবং বাংলাদেশ অংশে ভেড়ামারা পর্যন্ত প্রায় ৪০ কিলোমিটার নতুন সঞ্চালন লাইন এবং বিশেষ ধরনের সাবস্টেশন ও সুইচিং স্টেশন নির্মাণ করা হবে। ভারতের অংশের সঞ্চালন লাইন, সুইচিং স্টেশন স্থাপনসহ পুরো খরচ বহন করবে বাংলাদেশ। দু’দেশে অবকাঠামো নির্মাণ খাতে বাংলাদেশের ১১শ’ কোটি টাকার বেশি খরচ হবে বলে অনুষ্ঠানে উপস্থিত পিডিবি’র এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন। ভারতের অংশে ৮০ কিলোমিটার বিদ্যুত্ সঞ্চালনের খরচ বা হুইলিং চার্জ নির্ধারণ করবে ভারতের কেন্দ্রীয় ইলিক্ট্রিসিটি রেগুলেটরি কমিশন। ২০১২ সাল নাগাদ ভারত থেকে বিদ্যুত্ পাওয়া যাবে বলে অনুষ্ঠানে জানান প্রধানমন্ত্রীর জ্বালানি উপদেষ্টা ড. তৌফিক-ই-এলাহী চৌধুরী।
চলতি বছরের জানুয়ারি মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে ভারত সফরকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারত থেকে বিদ্যুত্ আমদানির ব্যাপারে সেদেশের প্রধানমন্ত্রী ড. মনমোহন সিংয়ের সঙ্গে এমওইউ স্বাক্ষর করেন। তার ধারাবাহিকতায় গতকাল চূড়ান্ত সঞ্চালন চুক্তি স্বাক্ষরিত হলো। বাংলাদেশের পক্ষে চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন পিডিবি’র সচিব আজিজুল ইসলাম। ভারতের পক্ষে স্বাক্ষর করেন পিজিসিআইএলের নির্বাহী পরিচালক (বাণিজ্য) অরুণ কুমার। বিদ্যুত্ সচিব আবুল কালাম আজাদের সভাপতিত্বে চুক্তিস্বাক্ষর অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন জ্বালানি সচিব মেজবাহ উদ্দিন, ঢাকাস্থ ভারতীয় হাইকমিশনের ডেপুটি হাইকমিশনার। পিডিবি চেয়ারম্যান এসএম আলগীর কবির অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন।
চুক্তি অনুযায়ী ট্রান্সমিশন লাইন নির্মাণ সম্পন্ন হলে প্রথমে ২৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুত্ আমদানি করা হবে। পর্যায়ক্রমে তা ৫০০ মেগাওয়াটে উন্নীত হবে। তবে কখনও বাংলাদেশে বিদ্যুত্ উদ্বৃত্ত হলে এবং ভারতে চাহিদা থাকলে একই সঞ্চালন লাইনে বাংলাদেশ বিদ্যুত্ রফতানিও করতে পারবে। ভারতের অংশে নির্মিত সঞ্চালন লাইনের খরচ কে বহন করবে তা নিয়ে মতবিরোধ চলছিল। শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশ ওই খরচ বহনে সম্মত হওয়ায় চুক্তি স্বাক্ষরিত হলো। ভারতের অংশে ৮০ কিলোমিটার সঞ্চালন লাইন নির্মাণে ঠিক কত টাকা ব্যয় হবে তা পিডিবি কর্মকর্তারা জানাতে পারেননি। তবে তারা বলেন, সরকারের উচ্চপর্যায়ে এ বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। বাংলাদেশ অংশে ৪০০ কেভি ক্ষমতার সঞ্চালন লাইন, সাবস্টেশনসহ আনুষঙ্গিক অবকাঠামো নির্মাণ কাজে কমপক্ষে ১ হাজার ৫০ কোটি টাকা লাগবে বলে জানা গেছে।
চুক্তি অনুযায়ী ভারত থেকে বিদ্যুত্ আমদানি শুরু হলে পিডিবি মাসিক ভিত্তিতে বিল পরিশোধ করবে। বিল করার ৬০ দিনের মধ্যে পরিশোধ করতে ব্যর্থ হলে বিলম্বজনিত সুদসহ পরিশোধ করতে হবে।
http://www.amardeshonline.com/pages/details/2010/07/27/36383
বিশেষ প্রতিনিধি
ভারত থেকে বিদ্যুত্ আমদানি করতে গতকাল সঞ্চালন চুক্তি স্বাক্ষর করা হয়েছে। ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুত্ আমদানির লক্ষ্যে ৩৫ বছর মেয়াদি এ চুক্তি স্বাক্ষরিত হয় পাওয়ার গ্রিড কর্পোরেশন অব ইন্ডিয়া লি. (পিজিসিআইএল) ও বাংলাদেশ পাওয়ার ডেভেলপমেন্ট বোর্ডের (বিপিডিবি) মধ্যে। গতরাতে অনুষ্ঠিত চুক্তিস্বাক্ষর অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেন, এ চুক্তি দু’দেশের পারস্পরিক সহযোগিতার ক্ষেত্রে মাইলফলক। চুক্তি অনুযায়ী ভারতের অংশে বাহারামপুর পর্যন্ত প্রায় ৮০ কিলোমিটার এবং বাংলাদেশ অংশে ভেড়ামারা পর্যন্ত প্রায় ৪০ কিলোমিটার নতুন সঞ্চালন লাইন এবং বিশেষ ধরনের সাবস্টেশন ও সুইচিং স্টেশন নির্মাণ করা হবে। ভারতের অংশের সঞ্চালন লাইন, সুইচিং স্টেশন স্থাপনসহ পুরো খরচ বহন করবে বাংলাদেশ। দু’দেশে অবকাঠামো নির্মাণ খাতে বাংলাদেশের ১১শ’ কোটি টাকার বেশি খরচ হবে বলে অনুষ্ঠানে উপস্থিত পিডিবি’র এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন। ভারতের অংশে ৮০ কিলোমিটার বিদ্যুত্ সঞ্চালনের খরচ বা হুইলিং চার্জ নির্ধারণ করবে ভারতের কেন্দ্রীয় ইলিক্ট্রিসিটি রেগুলেটরি কমিশন। ২০১২ সাল নাগাদ ভারত থেকে বিদ্যুত্ পাওয়া যাবে বলে অনুষ্ঠানে জানান প্রধানমন্ত্রীর জ্বালানি উপদেষ্টা ড. তৌফিক-ই-এলাহী চৌধুরী।
চলতি বছরের জানুয়ারি মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে ভারত সফরকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারত থেকে বিদ্যুত্ আমদানির ব্যাপারে সেদেশের প্রধানমন্ত্রী ড. মনমোহন সিংয়ের সঙ্গে এমওইউ স্বাক্ষর করেন। তার ধারাবাহিকতায় গতকাল চূড়ান্ত সঞ্চালন চুক্তি স্বাক্ষরিত হলো। বাংলাদেশের পক্ষে চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন পিডিবি’র সচিব আজিজুল ইসলাম। ভারতের পক্ষে স্বাক্ষর করেন পিজিসিআইএলের নির্বাহী পরিচালক (বাণিজ্য) অরুণ কুমার। বিদ্যুত্ সচিব আবুল কালাম আজাদের সভাপতিত্বে চুক্তিস্বাক্ষর অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন জ্বালানি সচিব মেজবাহ উদ্দিন, ঢাকাস্থ ভারতীয় হাইকমিশনের ডেপুটি হাইকমিশনার। পিডিবি চেয়ারম্যান এসএম আলগীর কবির অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন।
চুক্তি অনুযায়ী ট্রান্সমিশন লাইন নির্মাণ সম্পন্ন হলে প্রথমে ২৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুত্ আমদানি করা হবে। পর্যায়ক্রমে তা ৫০০ মেগাওয়াটে উন্নীত হবে। তবে কখনও বাংলাদেশে বিদ্যুত্ উদ্বৃত্ত হলে এবং ভারতে চাহিদা থাকলে একই সঞ্চালন লাইনে বাংলাদেশ বিদ্যুত্ রফতানিও করতে পারবে। ভারতের অংশে নির্মিত সঞ্চালন লাইনের খরচ কে বহন করবে তা নিয়ে মতবিরোধ চলছিল। শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশ ওই খরচ বহনে সম্মত হওয়ায় চুক্তি স্বাক্ষরিত হলো। ভারতের অংশে ৮০ কিলোমিটার সঞ্চালন লাইন নির্মাণে ঠিক কত টাকা ব্যয় হবে তা পিডিবি কর্মকর্তারা জানাতে পারেননি। তবে তারা বলেন, সরকারের উচ্চপর্যায়ে এ বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। বাংলাদেশ অংশে ৪০০ কেভি ক্ষমতার সঞ্চালন লাইন, সাবস্টেশনসহ আনুষঙ্গিক অবকাঠামো নির্মাণ কাজে কমপক্ষে ১ হাজার ৫০ কোটি টাকা লাগবে বলে জানা গেছে।
চুক্তি অনুযায়ী ভারত থেকে বিদ্যুত্ আমদানি শুরু হলে পিডিবি মাসিক ভিত্তিতে বিল পরিশোধ করবে। বিল করার ৬০ দিনের মধ্যে পরিশোধ করতে ব্যর্থ হলে বিলম্বজনিত সুদসহ পরিশোধ করতে হবে।
http://www.amardeshonline.com/pages/details/2010/07/27/36383
Saturday, 24 July 2010
উপজেলা চেয়ারম্যান থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলে কথা
নড়াইল প্রতিনিধি | কালের কণ্ঠ | ঢাকা, শনিবার, ৯ শ্রাবণ ১৪১৭, ১১ শাবান ১৪৩১, ২৪ জুলাই ২০১০
নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলার বড়দিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভবন ও জমি 'ইজারা' নিয়ে মার্কেট নির্মাণ করছেন কালিয়া উপজেলা চেয়ারম্যান ও নড়াগাতি থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক খান শামিমুর রহমান। স্কুল কর্তৃপক্ষ বলছে, 'ঊর্ধ্বতন মহলকে' জানিয়েই ২৫ বছরের জন্য ওই জমি ইজারা দেওয়া হয়েছে। তবে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বলছেন, স্কুল কমিটি কোনোভাবেই ইজারা দিতে পারে না। সরকারি জমিতে ব্যক্তিমালিকানার স্থাপনা নির্মাণও সম্পূর্ণ অবৈধ।
বড়দিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ওপর ও পাশে ভবন নির্মাণ করছেন উপজেলা চেয়ারম্যান শামীমুর রহমান খান। ছবি : কালের কণ্ঠ
বড়দিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, স্কুলভবনের দক্ষিণ পাশের জমিতে দুটি দোকান ঘর উঠেছে। স্কুলের একতলা ভবনের ওপর দ্বিতীয় তলার নির্মাণ কাজ চলছে। স্থানীয়রা জানান, সেখানে মার্কেট নির্মাণ করছেন কালিয়া উপজেলার চেয়ারম্যান খান শামিমুর রহমান। স্কুল কমিটির সভাপতি আবদুল মতিন খাঁ তাঁর আপন বড় ভাই।
স্কুলের জায়গায় মার্কেট নির্মাণ প্রসঙ্গে জানতে শামিমুর রহমান খান কালের কণ্ঠকে বলেন, 'নিয়ম অনুযায়ী স্কুল কমিটির সভাপতির সঙ্গে চুক্তি করেই জায়গাটি লিজ নিয়েছি। তারপরই নির্মাণ কাজ শুরু করেছি।'
আবদুল মতিন খাঁ জানান, স্কুলের পরিচালনা কমিটি ২৫ বছরের চুক্তিতে মাসিক ৫০০ টাকা ভাড়ায় শামিমুর রহমানকে মার্কেট নির্মাণের অনুমতি দিয়েছে।
স্কুলের প্রধান শিক্ষক দীপক কুমার বালা দাবি করেন, স্কুলের ওপর নির্মিতব্য স্থাপনাটি সম্পর্কে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। তারা সরেজমিন পরিদর্শন করে গেছেন।
তবে লোহাগড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অরুণ কুমার মণ্ডল বলছেন, সরকারি জমিতে এভাবে স্থাপনা নির্মাণ সম্পূর্ণ অবৈধ। তিনি কালের কণ্ঠকে বলেন, 'স্কুল কমিটি কোনোভাবেই ইজারা দিতে পারে না। আমরা তাদের নির্মাণ কাজ বন্ধ করার নির্দেশ দিয়েছি। তা না হলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।'
নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলার বড়দিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভবন ও জমি 'ইজারা' নিয়ে মার্কেট নির্মাণ করছেন কালিয়া উপজেলা চেয়ারম্যান ও নড়াগাতি থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক খান শামিমুর রহমান। স্কুল কর্তৃপক্ষ বলছে, 'ঊর্ধ্বতন মহলকে' জানিয়েই ২৫ বছরের জন্য ওই জমি ইজারা দেওয়া হয়েছে। তবে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বলছেন, স্কুল কমিটি কোনোভাবেই ইজারা দিতে পারে না। সরকারি জমিতে ব্যক্তিমালিকানার স্থাপনা নির্মাণও সম্পূর্ণ অবৈধ।
বড়দিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ওপর ও পাশে ভবন নির্মাণ করছেন উপজেলা চেয়ারম্যান শামীমুর রহমান খান। ছবি : কালের কণ্ঠ
বড়দিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, স্কুলভবনের দক্ষিণ পাশের জমিতে দুটি দোকান ঘর উঠেছে। স্কুলের একতলা ভবনের ওপর দ্বিতীয় তলার নির্মাণ কাজ চলছে। স্থানীয়রা জানান, সেখানে মার্কেট নির্মাণ করছেন কালিয়া উপজেলার চেয়ারম্যান খান শামিমুর রহমান। স্কুল কমিটির সভাপতি আবদুল মতিন খাঁ তাঁর আপন বড় ভাই।
স্কুলের জায়গায় মার্কেট নির্মাণ প্রসঙ্গে জানতে শামিমুর রহমান খান কালের কণ্ঠকে বলেন, 'নিয়ম অনুযায়ী স্কুল কমিটির সভাপতির সঙ্গে চুক্তি করেই জায়গাটি লিজ নিয়েছি। তারপরই নির্মাণ কাজ শুরু করেছি।'
আবদুল মতিন খাঁ জানান, স্কুলের পরিচালনা কমিটি ২৫ বছরের চুক্তিতে মাসিক ৫০০ টাকা ভাড়ায় শামিমুর রহমানকে মার্কেট নির্মাণের অনুমতি দিয়েছে।
স্কুলের প্রধান শিক্ষক দীপক কুমার বালা দাবি করেন, স্কুলের ওপর নির্মিতব্য স্থাপনাটি সম্পর্কে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। তারা সরেজমিন পরিদর্শন করে গেছেন।
তবে লোহাগড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অরুণ কুমার মণ্ডল বলছেন, সরকারি জমিতে এভাবে স্থাপনা নির্মাণ সম্পূর্ণ অবৈধ। তিনি কালের কণ্ঠকে বলেন, 'স্কুল কমিটি কোনোভাবেই ইজারা দিতে পারে না। আমরা তাদের নির্মাণ কাজ বন্ধ করার নির্দেশ দিয়েছি। তা না হলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।'
Friday, 23 July 2010
তদবিরে বিলম্বিত শিক্ষক নিয়োগ
সাবি্বর নেওয়াজ | Shamokal শনিবার | ২৪ জুলাই ২০১০ | ৯ শ্রাবণ ১৪১৭ | ১১ শাবান ১৪৩১
সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রায় ৩৪ হাজার সহকারী শিক্ষক-শিক্ষিকা নিয়োগ প্রক্রিয়া দীর্ঘায়িত হতে যাচ্ছে। চলতি মাসেও এ পরীক্ষার ফল চূড়ান্ত হচ্ছে না। সরকারি চাকরিতে এটিই স্মরণকালের মধ্যে সবচেয়ে বড় নিয়োগ। নিয়োগ পরীক্ষায় অংশ নেওয়া সারাদেশের লাখো চাকরিপ্রার্থী এখন এ পরীক্ষার ফলের দিকে চেয়ে রয়েছেন। এ নিয়োগ নিয়ে রাজনৈতিক প্রভাবশালীদের সঙ্গে যোগ হয়েছে আমলাদের চাপ ও তদবির। নানামুখী তদবিরে এ পরীক্ষার ফল প্রকাশে বিলম্ব হচ্ছে। গত ১৫ জুন মৌখিক পরীক্ষা শেষ হয়ে গেলেও প্রায় ১৪টি জেলার পরীক্ষার ফল এখনও প্রাথমিক ও গণশিক্ষা অধিদফতরে এসে পেঁৗছেনি। লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের প্রাপ্ত নম্বর যোগ করে চূড়ান্ত তালিকা প্রণয়ন করতে পারছে না প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতর। সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো দাবি করেছে, মৌখিক পরীক্ষা গ্রহণের চেয়ারম্যান ছিলেন জেলা প্রশাসকরা। প্রচণ্ড তদবিরের কারণেই ১৪টি জেলার প্রশাসকরা এখনও তাদের জেলার প্রার্থীদের মৌখিক পরীক্ষার ফল চূড়ান্ত করে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরে পাঠাতে পারেননি। তবে আগস্টের
মাঝামাঝি উত্তীর্ণ প্রার্থীদের চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ করা হবে বলে জানিয়েছেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মোঃ মোতাহার হোসেন সমকালকে জানান, 'চলতি মাসে প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগের চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ হচ্ছে না। কারণ তিন-চার জেলার প্রার্থীদের মৌখিক পরীক্ষার ফল আমাদের কাছে এখনও আসেনি। প্রার্থীদের লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষার ফল একসঙ্গে যোগ করে আগামী মাসে চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ করা হবে।'
প্রার্থীদের মৌখিক পরীক্ষার নম্বর ঢাকায় পাঠাতে জেলা প্রশাসকদের দেরি হওয়ার কারণ সম্পর্কে প্রতিমন্ত্রী বলেন, 'স্থানীয় পর্যায়ের শিক্ষক নিয়োগের পরীক্ষা গ্রহণ কমিটির কর্মকর্তাদের কেউ কেউ অসুস্থ, কেউবা পারিবারিক এবং অন্যান্য সমস্যা থাকার কারণে চূড়ান্ত করা ফল ঢাকায় পাঠাতে পারছেন না।' প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের উপ-পরিচালক (প্রশাসন) মোঃ ফসিউল্লাহ অবশ্য বলেন, 'বেশিরভাগ জেলার প্রার্থীদের মৌখিক পরীক্ষার ফল আমাদের কাছে এসেছে। তবে কবে নাগাদ উত্তীর্ণ প্রার্থীদের চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ করা হবে তা এখনও বলা যাচ্ছে না।'
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, এখনও ১৪টি জেলার প্রার্থীদের মৌখিক পরীক্ষার ফল ঢাকায় প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরে আসেনি। স্থানীয় প্রভাবশালীরা নিজেদের পছন্দমতো প্রার্থীদের মৌখিক পরীক্ষায় নম্বর বাড়িয়ে দিতে চাপ প্রয়োগ করার কারণেই জেলা প্রশাসকদের ঢাকায় ফল পাঠাতে বিলম্ব হচ্ছে। অনেক জেলায় চাকরি দেওয়ার কথা বলে প্রার্থীদের কাছ থেকে প্রভাবশালীদের বিরুদ্ধে আর্থিক লেনদেনের অভিযোগও উঠেছে। সব মিলিয়ে চলতি মাসে এ নিয়োগ পরীক্ষার ফল প্রকাশ করার কথা থাকলেও শেষতক তা হচ্ছে না।
'প্রাথমিকের শিক্ষক-শিক্ষিকা নিয়োগের ক্ষেত্রে কোনো ঘুষ লেনদেন হচ্ছে না। এমনকি কোনো রাজনৈতিক তদবিরও কাজে আসছে না। লিখিত এবং মৌখিক পরীক্ষায় যারা বেশি নম্বর পাবেন, কেবল তারাই চূড়ান্ত ফলে অন্তর্ভুক্ত হয়ে চাকরি পাবেন।' গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী এ দাবি করলেও প্রকৃত চিত্র যে ভিন্ন তা তিনিও জানেন।
কয়েকজন জেলা প্রশাসকের সঙ্গে কথা বলে প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগে তদবির সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া গেছে। তবে সঙ্গত কারণেই তারা তাদের নাম প্রকাশে অপারগতা প্রকাশ করেন। এক জেলা প্রশাসক সমকালকে জানান, 'আমার ওপর চাপ থাকা সত্ত্বেও মোটামুটিভাবে চেষ্টা করেছি মেধাবী প্রার্থীদের ভালো নম্বর দিতে। নইলে ভালোমানের প্রাথমিক শিক্ষক এ জেলায় থাকবে না। ফল হিসেবে কোমলমতি শিশুরা মানসম্পন্ন শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হবে।' জানা গেছে, চাঁদপুরের এক সংসদ সদস্য তার প্যাডে তার নির্বাচনী উপজেলার সর্বমোট ১১৪ জন প্রার্থীর নাম-ঠিকানা উল্লেখ করে তাদের নিয়োগ দেওয়ার জন্য জেলা প্রশাসককে ডিও লেটার দেন। একইভাবে যশোরের এক সংসদ সদস্য ১৮ জনের নামের তালিকা দিয়ে জেলা প্রশাসকের কাছে পাঠান মৌখিক পরীক্ষার নম্বর বাড়িয়ে দিতে। ওই সংসদ সদস্য তালিকার ব্যক্তিদের বর্তমান সরকারের দলীয় আদর্শের কর্মী এবং তারা অতীতে নির্যাতিত হয়েছেন বলে উল্লেখ করেন। তিনি এ তালিকা প্রাথমিক ও গণশিক্ষামন্ত্রী ডা. আফছারুল আমিনের কাছেও দেন। জানা গেছে, প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগে সবচেয়ে বেশি চাপ রয়েছে ঢাকা, মানিকগঞ্জ, কুমিল্লা, চট্টগ্রাম, লালমনিরহাট, রংপুর, বগুড়া, খুলনা, সাতক্ষীরা, কুষ্টিয়া, যশোর, ফেনী, নোয়াখালী, রাজশাহী, সিলেট, ব্রাহ্মণবাড়িয়া. নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর, চাঁদপুর, মুন্সীগঞ্জ, সিরাজগঞ্জ, কক্সবাজার, বরিশাল, বাগেরহাট, দিনাজপুর, জামালপুর, ময়মনসিংহ এবং টাঙ্গাইলের জেলা প্রশাসকের ওপর।
গত ৮ জানুয়ারি সারাদেশে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক নিয়োগের লিখিত পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। পরীক্ষায় প্রায় সাড়ে ৭ লাখ প্রার্থী অংশগ্রহণ করেন। লিখিত পরীক্ষায় কোন প্রার্থী কত নম্বর পেয়েছেন, তা সম্পূর্ণ গোপন রাখা হয়েছে। লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের মধ্য থেকে প্রায় ১ লাখ ৩৪ হাজার প্রার্থী মৌখিক পরীক্ষায় অংশ নিয়েছেন। গত ১৫ জুন মৌখিক পরীক্ষা গ্রহণ শেষ হয়। এখন সবাই ফলের অপেক্ষায় দিন পার করছেন। মোট ১০০ নম্বরের শিক্ষক নিয়োগের লিখিত পরীক্ষার নম্বর ৮৫ এবং মৌখিক পরীক্ষার নম্বর ১৫।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় জানায়, সহকারী শিক্ষক নিয়োগের বিজ্ঞাপন দেওয়ার সময় সরকারের সিদ্ধান্ত ছিল ২৫ হাজার শিক্ষক-শিক্ষিকা নিয়োগ দেওয়া হবে। তবে পরে গত মে মাসে পদ বাড়িয়ে সর্বমোট ৩৪ হাজার শিক্ষক নিয়োগের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এবার প্রতি উপজেলায় গড়ে ৭০ থেকে ৭৫ জন শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হবে। বেশি শিক্ষক নিয়োগ দেওয়ার কারণ হিসেবে বলা হয়েছে, প্রতি বছর প্রায় দুই হাজার শিক্ষক অবসরে যান। তাদের স্থানে যোগ্য শিক্ষক হিসেবে গড়ে উঠতে অন্যদের বেশি সময় লাগে। তাই একসঙ্গে বেশি শিক্ষক নিয়োগ করা হবে।
সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রায় ৩৪ হাজার সহকারী শিক্ষক-শিক্ষিকা নিয়োগ প্রক্রিয়া দীর্ঘায়িত হতে যাচ্ছে। চলতি মাসেও এ পরীক্ষার ফল চূড়ান্ত হচ্ছে না। সরকারি চাকরিতে এটিই স্মরণকালের মধ্যে সবচেয়ে বড় নিয়োগ। নিয়োগ পরীক্ষায় অংশ নেওয়া সারাদেশের লাখো চাকরিপ্রার্থী এখন এ পরীক্ষার ফলের দিকে চেয়ে রয়েছেন। এ নিয়োগ নিয়ে রাজনৈতিক প্রভাবশালীদের সঙ্গে যোগ হয়েছে আমলাদের চাপ ও তদবির। নানামুখী তদবিরে এ পরীক্ষার ফল প্রকাশে বিলম্ব হচ্ছে। গত ১৫ জুন মৌখিক পরীক্ষা শেষ হয়ে গেলেও প্রায় ১৪টি জেলার পরীক্ষার ফল এখনও প্রাথমিক ও গণশিক্ষা অধিদফতরে এসে পেঁৗছেনি। লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের প্রাপ্ত নম্বর যোগ করে চূড়ান্ত তালিকা প্রণয়ন করতে পারছে না প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতর। সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো দাবি করেছে, মৌখিক পরীক্ষা গ্রহণের চেয়ারম্যান ছিলেন জেলা প্রশাসকরা। প্রচণ্ড তদবিরের কারণেই ১৪টি জেলার প্রশাসকরা এখনও তাদের জেলার প্রার্থীদের মৌখিক পরীক্ষার ফল চূড়ান্ত করে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরে পাঠাতে পারেননি। তবে আগস্টের
মাঝামাঝি উত্তীর্ণ প্রার্থীদের চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ করা হবে বলে জানিয়েছেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মোঃ মোতাহার হোসেন সমকালকে জানান, 'চলতি মাসে প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগের চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ হচ্ছে না। কারণ তিন-চার জেলার প্রার্থীদের মৌখিক পরীক্ষার ফল আমাদের কাছে এখনও আসেনি। প্রার্থীদের লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষার ফল একসঙ্গে যোগ করে আগামী মাসে চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ করা হবে।'
প্রার্থীদের মৌখিক পরীক্ষার নম্বর ঢাকায় পাঠাতে জেলা প্রশাসকদের দেরি হওয়ার কারণ সম্পর্কে প্রতিমন্ত্রী বলেন, 'স্থানীয় পর্যায়ের শিক্ষক নিয়োগের পরীক্ষা গ্রহণ কমিটির কর্মকর্তাদের কেউ কেউ অসুস্থ, কেউবা পারিবারিক এবং অন্যান্য সমস্যা থাকার কারণে চূড়ান্ত করা ফল ঢাকায় পাঠাতে পারছেন না।' প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের উপ-পরিচালক (প্রশাসন) মোঃ ফসিউল্লাহ অবশ্য বলেন, 'বেশিরভাগ জেলার প্রার্থীদের মৌখিক পরীক্ষার ফল আমাদের কাছে এসেছে। তবে কবে নাগাদ উত্তীর্ণ প্রার্থীদের চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ করা হবে তা এখনও বলা যাচ্ছে না।'
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, এখনও ১৪টি জেলার প্রার্থীদের মৌখিক পরীক্ষার ফল ঢাকায় প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরে আসেনি। স্থানীয় প্রভাবশালীরা নিজেদের পছন্দমতো প্রার্থীদের মৌখিক পরীক্ষায় নম্বর বাড়িয়ে দিতে চাপ প্রয়োগ করার কারণেই জেলা প্রশাসকদের ঢাকায় ফল পাঠাতে বিলম্ব হচ্ছে। অনেক জেলায় চাকরি দেওয়ার কথা বলে প্রার্থীদের কাছ থেকে প্রভাবশালীদের বিরুদ্ধে আর্থিক লেনদেনের অভিযোগও উঠেছে। সব মিলিয়ে চলতি মাসে এ নিয়োগ পরীক্ষার ফল প্রকাশ করার কথা থাকলেও শেষতক তা হচ্ছে না।
'প্রাথমিকের শিক্ষক-শিক্ষিকা নিয়োগের ক্ষেত্রে কোনো ঘুষ লেনদেন হচ্ছে না। এমনকি কোনো রাজনৈতিক তদবিরও কাজে আসছে না। লিখিত এবং মৌখিক পরীক্ষায় যারা বেশি নম্বর পাবেন, কেবল তারাই চূড়ান্ত ফলে অন্তর্ভুক্ত হয়ে চাকরি পাবেন।' গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী এ দাবি করলেও প্রকৃত চিত্র যে ভিন্ন তা তিনিও জানেন।
কয়েকজন জেলা প্রশাসকের সঙ্গে কথা বলে প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগে তদবির সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া গেছে। তবে সঙ্গত কারণেই তারা তাদের নাম প্রকাশে অপারগতা প্রকাশ করেন। এক জেলা প্রশাসক সমকালকে জানান, 'আমার ওপর চাপ থাকা সত্ত্বেও মোটামুটিভাবে চেষ্টা করেছি মেধাবী প্রার্থীদের ভালো নম্বর দিতে। নইলে ভালোমানের প্রাথমিক শিক্ষক এ জেলায় থাকবে না। ফল হিসেবে কোমলমতি শিশুরা মানসম্পন্ন শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হবে।' জানা গেছে, চাঁদপুরের এক সংসদ সদস্য তার প্যাডে তার নির্বাচনী উপজেলার সর্বমোট ১১৪ জন প্রার্থীর নাম-ঠিকানা উল্লেখ করে তাদের নিয়োগ দেওয়ার জন্য জেলা প্রশাসককে ডিও লেটার দেন। একইভাবে যশোরের এক সংসদ সদস্য ১৮ জনের নামের তালিকা দিয়ে জেলা প্রশাসকের কাছে পাঠান মৌখিক পরীক্ষার নম্বর বাড়িয়ে দিতে। ওই সংসদ সদস্য তালিকার ব্যক্তিদের বর্তমান সরকারের দলীয় আদর্শের কর্মী এবং তারা অতীতে নির্যাতিত হয়েছেন বলে উল্লেখ করেন। তিনি এ তালিকা প্রাথমিক ও গণশিক্ষামন্ত্রী ডা. আফছারুল আমিনের কাছেও দেন। জানা গেছে, প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগে সবচেয়ে বেশি চাপ রয়েছে ঢাকা, মানিকগঞ্জ, কুমিল্লা, চট্টগ্রাম, লালমনিরহাট, রংপুর, বগুড়া, খুলনা, সাতক্ষীরা, কুষ্টিয়া, যশোর, ফেনী, নোয়াখালী, রাজশাহী, সিলেট, ব্রাহ্মণবাড়িয়া. নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর, চাঁদপুর, মুন্সীগঞ্জ, সিরাজগঞ্জ, কক্সবাজার, বরিশাল, বাগেরহাট, দিনাজপুর, জামালপুর, ময়মনসিংহ এবং টাঙ্গাইলের জেলা প্রশাসকের ওপর।
গত ৮ জানুয়ারি সারাদেশে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক নিয়োগের লিখিত পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। পরীক্ষায় প্রায় সাড়ে ৭ লাখ প্রার্থী অংশগ্রহণ করেন। লিখিত পরীক্ষায় কোন প্রার্থী কত নম্বর পেয়েছেন, তা সম্পূর্ণ গোপন রাখা হয়েছে। লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের মধ্য থেকে প্রায় ১ লাখ ৩৪ হাজার প্রার্থী মৌখিক পরীক্ষায় অংশ নিয়েছেন। গত ১৫ জুন মৌখিক পরীক্ষা গ্রহণ শেষ হয়। এখন সবাই ফলের অপেক্ষায় দিন পার করছেন। মোট ১০০ নম্বরের শিক্ষক নিয়োগের লিখিত পরীক্ষার নম্বর ৮৫ এবং মৌখিক পরীক্ষার নম্বর ১৫।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় জানায়, সহকারী শিক্ষক নিয়োগের বিজ্ঞাপন দেওয়ার সময় সরকারের সিদ্ধান্ত ছিল ২৫ হাজার শিক্ষক-শিক্ষিকা নিয়োগ দেওয়া হবে। তবে পরে গত মে মাসে পদ বাড়িয়ে সর্বমোট ৩৪ হাজার শিক্ষক নিয়োগের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এবার প্রতি উপজেলায় গড়ে ৭০ থেকে ৭৫ জন শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হবে। বেশি শিক্ষক নিয়োগ দেওয়ার কারণ হিসেবে বলা হয়েছে, প্রতি বছর প্রায় দুই হাজার শিক্ষক অবসরে যান। তাদের স্থানে যোগ্য শিক্ষক হিসেবে গড়ে উঠতে অন্যদের বেশি সময় লাগে। তাই একসঙ্গে বেশি শিক্ষক নিয়োগ করা হবে।
Thursday, 22 July 2010
দায়সারা তদন্ত | আওয়ামী লীগনেতা জড়িত
দায়সারা তদন্ত | বিজি প্রেসের প্রতিবেদন অনেকটা 'আইওয়াশ'
সাবি্বর নেওয়াজ | Shamokal শুক্রবার | ২৩ জুলাই ২০১০ | ৮ শ্রাবণ ১৪১৭ | ১০ শাবান ১৪৩১
সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁসের ঘটনায় বিজি প্রেসের গঠিত তদন্ত কমিটি গতকাল দায়সারা গোছের একটি তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। প্রতিবেদনে তারা বলছে_ যারা পুলিশের হাতে আটক আর যারা পলাতক তারা প্রশ্নপত্র ফাঁস করে থাকতে পারেন। প্রশ্ন ফাঁসে জড়িতদের কাউকে সুস্পষ্টভাবে চিহ্নিত করতে পারেনি এ কমিটি। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, 'বিজি প্রেসের গোপনীয় শাখার কম্পোজিটর শহিদুল ইসলাম ফকির আটক হলে সে বলতে পারবে কারা প্রশ্ন ফাঁসের সঙ্গে জড়িত।' প্রশ্ন ফাঁস রোধে এ কমিটি ১৩ দফা সুপারিশ পেশ করেছে। এদিকে পুলিশের রিমান্ডে গ্রেফতারকৃতদের কাছ থেকে বিভিন্ন তথ্য বেরিয়ে আসাসহ বিজি প্রেস এবং বিভিন্ন অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা উদ্ধারের পরও বিজি প্রেসের এ তদন্ত কমিটি কেন সুনির্দিষ্টভাবে কাউকে শনাক্ত করতে পারল না তা
নিয়ে নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। বিজি প্রেসের পাঁচ সদস্যের কমিটির এ তদন্ত 'আইওয়াশ' বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। অন্যদিকে যে মন্ত্রণালয়ের অধীন বিজি প্রেস সেই মন্ত্রণালয় তদন্ত কমিটি গঠনের কোনো উদ্যোগ না নেওয়ায়ও নানা প্রশ্নের সৃষ্টি হয়েছে।
প্রতিবেদনটি প্রণয়নের কাজ গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে শেষ করা হয়। রাত সাড়ে ৯টায় বিজি প্রেসের মহাপরিচালক আ ল ম আবদুর রহমানের কাছে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়া হয়। মহাপরিচালক রোববার এ প্রতিবেদন সংস্থাপন মন্ত্রণালয়ে জমা দিতে পারেন বলে জানা গেছে।
ভবিষ্যতে প্রশ্ন ফাঁসের ঘটনা যেন না ঘটে সেজন্য সরকারের কাছে পেশ করা ১৩ দফা সুপারিশে সাধারণ পুলিশের বদলে এখন থেকে আর্মড পুলিশ অথবা বিডিআর সদস্যদের দিয়ে বিজি প্রেসের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার ওপর গুরুত্ব আরোপ করা হয়। এছাড়া ভবিষ্যতে বিজি প্রেসের নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও সম্প্রসারণ, অ্যানালগ পদ্ধতির বদলে ডিজিটাল পদ্ধতির সিসি টিভি চালু, গোপনীয় শাখার জন্য নতুন ও স্বতন্ত্র প্রেস মেশিন কেনা, এ শাখায় প্রথম শ্রেণীর একজন সার্বক্ষণিক কর্মকর্তা রাখা এবং বহিরাগত মুদ্রণ ও বাঁধাই শ্রমিকদের দিয়ে ভবিষ্যতে কোনো কাজ না করানোর সুপারিশ করা হয়েছে।
প্রশ্ন ফাঁসের ঘটনায় আরও একটি তদন্ত কমিটি কাজ করছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয় এ কমিটি গঠন করেছে। মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (প্রশাসন) এস এম গোলাম ফারুকের নেতৃত্বে গঠিত ছয় সদস্যের এ তদন্ত কমিটি আগামী রোববার দুপুর আড়াইটায় আনুষ্ঠানিকভাবে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদের কাছে তাদের তদন্ত প্রতিবেদন পেশ করবে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এ কমিটির এক সদস্য সমকালকে জানান, তাদের কমিটির প্রতিবেদন প্রায় চূড়ান্ত। তাদের তদন্তে বিজি প্রেস কর্তৃপক্ষের গাফিলতিই অতি প্রকটভাবে ধরা পড়েছে। তাই প্রশ্ন ফাঁসের জন্য বিজি প্রেস কর্তৃপক্ষকেই দায়ী করা হতে পারে।
গত ৮ জুলাই রাতে সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের বিষয়টি রংপুরে ধরা পড়ে। এ ঘটনায় সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে এরই মধ্যে বিজি প্রেসের পাঁচ কর্মকর্তা-কর্মচারীকে বরখাস্ত করা হয়েছে। পরে ঘটনা তদন্তের জন্য পাঁচ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে বিজি প্রেস কর্তৃপক্ষ। এ তদন্ত কমিটির প্রধান বিজি প্রেসের পরিচালক (প্রশাসন) আবুল কাসেম। সদস্যরা হলেন, উপ-পরিচালক (যুগ্ম সচিব) মোঃ মুজিবুর রহমান, উপ-পরিচালক নিতাইপদ দাস, সিকিউরিটি প্রিন্টিং প্রেসের (জিপি প্রেস) উপ-পরিচালক মোঃ আবু ইউনুস এবং সদস্য সচিব বিজি প্রেসের সহকারী পরিচালক আতিকুল ইসলাম। এ কমিটির তদন্ত প্রতিবেদনে দোষীদের সঠিকভাবে চিহ্নিত করার বিষয়টি আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর তদন্তের ওপর নির্ভর করছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। বিজি প্রেসের নিরাপত্তা ব্যবস্থা ঢেলে সাজানোসহ নানা বিষয়ে মোট ১৩টি সুপারিশ করেছে এ কমিটি।
তবে বিজি প্রেস কর্তৃপক্ষ তাদের পাঁচজন কর্মচারীকে বরখাস্ত করা এবং গত ১২ জুলাই দুপুরে খোদ বিজি প্রেস থেকে নগদ ২৮ লাখ টাকাসহ ফর্মা প্রুফ প্রেসম্যান মোঃ আবদুল জলিল (৫০) নামে এক কর্মচারীকে পুলিশ গ্রেফতার করার পরও এ তদন্ত কমিটি সুনির্দিষ্টভাবে দোষীদের চিহ্নিত করতে না পারায় নানা প্রশ্ন উঠেছে। কমিটির সদস্যরা কোনোভাবে 'ম্যানেজ' হয়ে গেছেন কি-না তা নিয়ে বিজি প্রেসের সাধারণ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে শুরু হয়েছে গুঞ্জন।
'কেন প্রকৃত দোষীদের আপনারা চিহ্নিত করতে পারলেন না?' জানতে চাইলে এ কমিটির সদস্য উপ-পরিচালক মোঃ মুজিবুর রহমান গত রাতে সমকালকে বলেন, 'সিসি টিভি কাজ না করায় এবং কোনো প্রত্যক্ষদর্শী না থাকায় সন্দেহাতীতভাবে কাউকে দোষী বলে চিহ্নিত করা যায়নি। তবে এ ঘটনায় রংপুরে মামলা হয়েছে। মামলার পুলিশি তদন্ত চলছে এবং এতে প্রকৃত দায়ী ব্যক্তিরা বের হয়ে আসবে।'
তদন্ত কমিটির সদস্য-সচিব ও বিজি প্রেসের সহকারী পরিচালক আতিকুল ইসলাম গতরাতে সমকালকে বলেন, 'আমরা যে ৪৭ জনের সাক্ষ্য নিয়েছি (৩০ জনের মৌখিক, ১৭ জনের লিখিত) তাদের কেউ-ই বলেননি যে, তাদের জানামতে প্রশ্ন ফাঁসের সঙ্গে কে বা কারা দায়ী। তাই প্রকৃত অপরাধীকে খুঁজে বের করা খুব কঠিন ছিল। তবে আমরা মনে করি কম্পোজিটর শহিদুল ইসলাম ফকির গ্রেফতার হলে সব বেরিয়ে আসবে।'
চূড়ান্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিজি প্রেসের নিরাপত্তা ব্যবস্থা দুর্বল হওয়ার কারণেই প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনাটি ঘটেছে। গোপনীয় শাখায় বসানো ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরাগুলো এ শাখার পুরো চিত্র ধারণ করতে পারে না। আর সিসি টিভির ক্যাসেট সরবরাহ করে থাকে প্রশ্ন ছাপার জন্য দেওয়া পরীক্ষা গ্রহণকারী কর্তৃপক্ষ। সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ছাপার সময় বিজি প্রেসকে কোনো ক্যাসেট সরবরাহ করেনি 'মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদফতর' (মাউশি)। ফলে এ প্রশ্ন ফাঁসের কোনো রেকর্ড নেই কর্তৃপক্ষের কাছে। এছাড়া প্রশ্নপত্রের একাধিক সেট পাণ্ডুলিপি সরবরাহ করা হলে প্রশ্ন ফাঁসের ঝুঁকি তাতে কমে যায়। মাধ্যমিক শিক্ষক নিয়োগের জন্য প্রশ্নপত্রের একটি মাত্র পাণ্ডুলিপিই মাউশি থেকে বিজি প্রেসকে সরবরাহ করা হয়েছিল।
তদন্ত প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, বিজি প্রেসের সাবেক উপ-পরিচালক মাসুম খানের দায়িত্বে গুরুতর অবহেলা রয়েছে। মাধ্যমিক পরীক্ষার প্রশ্নপত্রের সঙ্গে একই দিন জাতীয় সংসদের জন্য চলতি বাজেটের 'অর্থবিল' ছাপানো হয়। অর্থবিলের কপির সঙ্গে প্রশ্নপত্র বাইরে চলে গেছে তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। বিজি প্রেসে ছাপার মেশিন স্বল্পতা রয়েছে। অভাব রয়েছে লোকবলেরও। ফলে কাজের চাপ বেশি হলে বা জরুরি কাজের সময় বাইরের মেশিন আর লোকবল নিয়ে কাজ চালাতে হয়। বাইরের জনবলের মাধ্যমেই গোপনীয় শাখার গোপনীয়তা ফাঁস হয়ে যায়। এছাড়া গোপনীয় শাখায় কর্মরতদের নিয়োগের সময় পুলিশ ভ্যারিফিকেশন সঠিকভাবে করা হয়নি। ফলে তাদের চরিত্র ও নৈতিকতা নিয়েও প্রশ্ন থেকে যায়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক তদন্ত কমিটির এক সদস্য বলেন, তদন্ত কমিটির রিপোর্টের বাইরে অনেক গুরুত্বপূর্ণ কারণ রয়েছে। বিভিন্ন কারণে এ তদন্ত কমিটি রিপোর্টে সেসব বিষয় উল্লেখ করতে পারেনি। বিজি প্রেস রাষ্ট্রের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান হলেও দীর্ঘদিন ধরে এটি চলছিল বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে।
সমকালের অনুসন্ধানে জানা যায়, বিজি প্রেসের কর্মচারী ইউনিয়ন (সিবিএ) অত্যন্ত শক্তিশালী একটি সংগঠন। কর্তৃপক্ষের ওপর তাদের প্রভাব অত্যন্ত বেশি। বিজি প্রেসে কর্মচারী নিয়োগ, গোপনীয় শাখায় পছন্দের ব্যক্তিকে বদলি, প্রেসের কাগজ-কালি কেনাসহ নানা প্রক্রিয়ায় কর্মচারী ইউনিয়নের নেতারা সরাসরি জড়িত। পুলিশের হাতে আটক বিজি প্রেসের কম্পোজিটর মোস্তফা, লাবণী ও ফর্মা প্রুফ প্রেসম্যান জলিল সিবিএর শীর্ষ নেতাদের অত্যন্ত কাছের। তাই তদন্ত প্রতিবেদনে তাদের নাম উল্লেখ করে বিজি প্রেসের কর্মকর্তারা সিবিএর হাতে 'অপমানিত ও লাঞ্ছিত' হতে চাননি। তাই গত দু'দিনে একাধিকবার তদন্ত প্রতিবেদন লেখা ও তা কাটাছেঁড়া করা হয়। শেষতক 'দায়ী কারা' শীর্ষক অনুচ্ছেদটিই বাদ দেওয়া হয়। বিজি প্রেসের একাধিক সূত্র জানায়, তদন্ত কমিটি বিজি প্রেসের মহাপরিচালকের কক্ষে বসে তার পরামর্শ মতেই তদন্ত প্রতিবেদন তৈরি করেছে। এরপর আবার তার কাছেই জমা দেওয়ার প্রস্তুতি নেয়।
সমকালের লালমনিরহাট প্রতিনিধি জানান, প্রশ্ন ফাঁসের ঘটনার সঙ্গে জড়িত সন্দেহে গ্রেফতারকৃত লালমনিরহাট সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মতিয়ার রহমান সাজুকে গতকাল চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। গ্রেফতারের পর বেরিয়ে আসছে অর্থ কেলেঙ্কারির নানা তথ্য।
জানা গেছে, জেলার কালিগঞ্জ উপজেলার গোড়ল ইউনিয়নের মোঃ ধন মামুদ মিয়ার ছোট ছেলে মতিয়ার রহমান সাজু ১০ বছর ধরে শিক্ষকতা করেন। ২০০৬ সালের ২৩ ডিসেম্বর লালমনিরহাট সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক পদে প্রথম চাকরিতে যোগদান করেন। অবৈধ উপায়ে নিজের চাকরি নিশ্চিত করতে বিভিন্ন জনের সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করেন সাজু। এক পর্যায়ে বিজি প্রেসের কয়েকজন কর্মচারীর সঙ্গে পরিচয় হলে তাদের এজেন্ট হিসেবে কাজ শুরু করেন তিনি। শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস চক্রের সঙ্গে জড়িয়ে সাজু পুরো জেলায় তার নিজস্ব এজেন্ট তৈরি করেন। বিগত ৩ বছরে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁস করে প্রচুর টাকা কামিয়ে নেন মতিয়ার। ২০০৯ সালে প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নপত্র একদিন আগেই চলে আসে তার কাছে। সাজু এক সেট প্রশ্ন বিক্রি করেন ১ লাখ টাকা করে। ২০০৯ সালে সাজু তার দুই বোন তানজিলা আক্তার শিউলি, সানজিনা আক্তার শেফালী ও তার বড় ভাই ফজলুল হকের পুত্রবধূ শাহিনা এক পরিবারেই ৩ জনকে সরকারি চাকরি পাইয়ে দেন। বিষয়টি সে সময় এলাকায় চাঞ্চল্য সৃষ্টি করে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গ্রেফতারকৃত শিক্ষক মতিয়ার রহমান সাজু গত বছর রংপুর শহরের হনুমানতলায় ১৬ লাখ টাকায় একটি পাকা বাড়ি কিনেছেন। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে কালিগঞ্জ উপজেলার শিয়াল খোওয়া সিনেমা হল এলাকায় ৮ লাখ টাকায় কিনেছেন আরও একটি বাড়ি। গোড়ল বিলে ১টি মাছের খামার কিনেছেন তিনি।
সমকালের রংপুর অফিস জানায়, সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র ফাঁস সিন্ডিকেটের সদস্য শিক্ষক মতিয়ার রহমান সাজুর অ্যাকাউন্টে ৮ লাখ টাকা ও বিজি প্রেসের কর্মচারী এটিএম মোস্তফার অ্যাকাউন্টে আরও ২৩ লাখ টাকার সন্ধান পেয়েছে পুলিশ। বুধবার গ্রেফতারকৃত সাজুকে দু'দিনের রিমান্ডে নিয়েছে পুলিশ। বিজি প্রেস ও পিএসসির ঊর্ধ্বতন ৬ কর্মকর্তা ছাড়াও রংপুর আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের দু'জন জড়িত থাকার প্রমাণ মিলেছে। তাদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।
রংপুর পুলিশ সুপার সালেহ মোহাম্মদ তানভীর গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে সাংবাদিকদের জানান, বুধবার সকালে লালমনিরহাট থেকে গ্রেফতারকৃত আমজাদ হোসেন ও তার ভাই শিক্ষক আনিছুর রহমানকে গ্রেফতার করে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে তারা জানায়, লালমনিরহাট সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের ইংরেজির সহকারী শিক্ষক মতিয়ার রহমান সাজু প্রশ্নপত্র ফাঁসের সঙ্গে জড়িত। এরই পরিপ্রেক্ষিতে বুধবার বিকেলে ডিবি পুলিশ সাজুকে লালমনিরহাট থেকে গ্রেফতার করে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে সাজু জানান, সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় তার ২১ প্রার্থী ছিল। এই ২১ প্রার্থীর কাছ থেকে তিনি প্রায় অর্ধকোটি টাকা নিয়েছেন। ওই টাকা থেকে তিনি শফিয়ার রহমানকে ২১ লাখ টাকা অগ্রিম দিয়েছেন। পুলিশি জিজ্ঞাসাবাদে তিনি আরও জানান, প্রাইম ব্যাংক রংপুর শাখায় তার অ্যাকাউন্টে ৮ লাখ টাকা রয়েছে। গতকাল আদালত তার দু'দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
পুলিশ সুপার আরও জানান, বিজি প্রেসের কর্মচারী মোস্তফার অ্যাকাউন্টে আরও ২৩ লাখ টাকার সন্ধান মিলেছে।
পুলিশ সুপার জানান, প্রশ্নপত্র ফাঁস সিন্ডিকেটের সঙ্গে বিজি প্রেস ও পিএসসির ৬ কর্মকর্তা এবং রংপুর জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য সাবেক ছাত্রলীগ নেতা তারিক হাসান তুহিন ও ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য মুরাদ হোসেনও জড়িত। তাদের গ্রেফতারে অভিযান চলছে।
সাবি্বর নেওয়াজ | Shamokal শুক্রবার | ২৩ জুলাই ২০১০ | ৮ শ্রাবণ ১৪১৭ | ১০ শাবান ১৪৩১
সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁসের ঘটনায় বিজি প্রেসের গঠিত তদন্ত কমিটি গতকাল দায়সারা গোছের একটি তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। প্রতিবেদনে তারা বলছে_ যারা পুলিশের হাতে আটক আর যারা পলাতক তারা প্রশ্নপত্র ফাঁস করে থাকতে পারেন। প্রশ্ন ফাঁসে জড়িতদের কাউকে সুস্পষ্টভাবে চিহ্নিত করতে পারেনি এ কমিটি। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, 'বিজি প্রেসের গোপনীয় শাখার কম্পোজিটর শহিদুল ইসলাম ফকির আটক হলে সে বলতে পারবে কারা প্রশ্ন ফাঁসের সঙ্গে জড়িত।' প্রশ্ন ফাঁস রোধে এ কমিটি ১৩ দফা সুপারিশ পেশ করেছে। এদিকে পুলিশের রিমান্ডে গ্রেফতারকৃতদের কাছ থেকে বিভিন্ন তথ্য বেরিয়ে আসাসহ বিজি প্রেস এবং বিভিন্ন অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা উদ্ধারের পরও বিজি প্রেসের এ তদন্ত কমিটি কেন সুনির্দিষ্টভাবে কাউকে শনাক্ত করতে পারল না তা
নিয়ে নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। বিজি প্রেসের পাঁচ সদস্যের কমিটির এ তদন্ত 'আইওয়াশ' বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। অন্যদিকে যে মন্ত্রণালয়ের অধীন বিজি প্রেস সেই মন্ত্রণালয় তদন্ত কমিটি গঠনের কোনো উদ্যোগ না নেওয়ায়ও নানা প্রশ্নের সৃষ্টি হয়েছে।
প্রতিবেদনটি প্রণয়নের কাজ গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে শেষ করা হয়। রাত সাড়ে ৯টায় বিজি প্রেসের মহাপরিচালক আ ল ম আবদুর রহমানের কাছে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়া হয়। মহাপরিচালক রোববার এ প্রতিবেদন সংস্থাপন মন্ত্রণালয়ে জমা দিতে পারেন বলে জানা গেছে।
ভবিষ্যতে প্রশ্ন ফাঁসের ঘটনা যেন না ঘটে সেজন্য সরকারের কাছে পেশ করা ১৩ দফা সুপারিশে সাধারণ পুলিশের বদলে এখন থেকে আর্মড পুলিশ অথবা বিডিআর সদস্যদের দিয়ে বিজি প্রেসের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার ওপর গুরুত্ব আরোপ করা হয়। এছাড়া ভবিষ্যতে বিজি প্রেসের নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও সম্প্রসারণ, অ্যানালগ পদ্ধতির বদলে ডিজিটাল পদ্ধতির সিসি টিভি চালু, গোপনীয় শাখার জন্য নতুন ও স্বতন্ত্র প্রেস মেশিন কেনা, এ শাখায় প্রথম শ্রেণীর একজন সার্বক্ষণিক কর্মকর্তা রাখা এবং বহিরাগত মুদ্রণ ও বাঁধাই শ্রমিকদের দিয়ে ভবিষ্যতে কোনো কাজ না করানোর সুপারিশ করা হয়েছে।
প্রশ্ন ফাঁসের ঘটনায় আরও একটি তদন্ত কমিটি কাজ করছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয় এ কমিটি গঠন করেছে। মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (প্রশাসন) এস এম গোলাম ফারুকের নেতৃত্বে গঠিত ছয় সদস্যের এ তদন্ত কমিটি আগামী রোববার দুপুর আড়াইটায় আনুষ্ঠানিকভাবে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদের কাছে তাদের তদন্ত প্রতিবেদন পেশ করবে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এ কমিটির এক সদস্য সমকালকে জানান, তাদের কমিটির প্রতিবেদন প্রায় চূড়ান্ত। তাদের তদন্তে বিজি প্রেস কর্তৃপক্ষের গাফিলতিই অতি প্রকটভাবে ধরা পড়েছে। তাই প্রশ্ন ফাঁসের জন্য বিজি প্রেস কর্তৃপক্ষকেই দায়ী করা হতে পারে।
গত ৮ জুলাই রাতে সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের বিষয়টি রংপুরে ধরা পড়ে। এ ঘটনায় সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে এরই মধ্যে বিজি প্রেসের পাঁচ কর্মকর্তা-কর্মচারীকে বরখাস্ত করা হয়েছে। পরে ঘটনা তদন্তের জন্য পাঁচ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে বিজি প্রেস কর্তৃপক্ষ। এ তদন্ত কমিটির প্রধান বিজি প্রেসের পরিচালক (প্রশাসন) আবুল কাসেম। সদস্যরা হলেন, উপ-পরিচালক (যুগ্ম সচিব) মোঃ মুজিবুর রহমান, উপ-পরিচালক নিতাইপদ দাস, সিকিউরিটি প্রিন্টিং প্রেসের (জিপি প্রেস) উপ-পরিচালক মোঃ আবু ইউনুস এবং সদস্য সচিব বিজি প্রেসের সহকারী পরিচালক আতিকুল ইসলাম। এ কমিটির তদন্ত প্রতিবেদনে দোষীদের সঠিকভাবে চিহ্নিত করার বিষয়টি আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর তদন্তের ওপর নির্ভর করছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। বিজি প্রেসের নিরাপত্তা ব্যবস্থা ঢেলে সাজানোসহ নানা বিষয়ে মোট ১৩টি সুপারিশ করেছে এ কমিটি।
তবে বিজি প্রেস কর্তৃপক্ষ তাদের পাঁচজন কর্মচারীকে বরখাস্ত করা এবং গত ১২ জুলাই দুপুরে খোদ বিজি প্রেস থেকে নগদ ২৮ লাখ টাকাসহ ফর্মা প্রুফ প্রেসম্যান মোঃ আবদুল জলিল (৫০) নামে এক কর্মচারীকে পুলিশ গ্রেফতার করার পরও এ তদন্ত কমিটি সুনির্দিষ্টভাবে দোষীদের চিহ্নিত করতে না পারায় নানা প্রশ্ন উঠেছে। কমিটির সদস্যরা কোনোভাবে 'ম্যানেজ' হয়ে গেছেন কি-না তা নিয়ে বিজি প্রেসের সাধারণ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে শুরু হয়েছে গুঞ্জন।
'কেন প্রকৃত দোষীদের আপনারা চিহ্নিত করতে পারলেন না?' জানতে চাইলে এ কমিটির সদস্য উপ-পরিচালক মোঃ মুজিবুর রহমান গত রাতে সমকালকে বলেন, 'সিসি টিভি কাজ না করায় এবং কোনো প্রত্যক্ষদর্শী না থাকায় সন্দেহাতীতভাবে কাউকে দোষী বলে চিহ্নিত করা যায়নি। তবে এ ঘটনায় রংপুরে মামলা হয়েছে। মামলার পুলিশি তদন্ত চলছে এবং এতে প্রকৃত দায়ী ব্যক্তিরা বের হয়ে আসবে।'
তদন্ত কমিটির সদস্য-সচিব ও বিজি প্রেসের সহকারী পরিচালক আতিকুল ইসলাম গতরাতে সমকালকে বলেন, 'আমরা যে ৪৭ জনের সাক্ষ্য নিয়েছি (৩০ জনের মৌখিক, ১৭ জনের লিখিত) তাদের কেউ-ই বলেননি যে, তাদের জানামতে প্রশ্ন ফাঁসের সঙ্গে কে বা কারা দায়ী। তাই প্রকৃত অপরাধীকে খুঁজে বের করা খুব কঠিন ছিল। তবে আমরা মনে করি কম্পোজিটর শহিদুল ইসলাম ফকির গ্রেফতার হলে সব বেরিয়ে আসবে।'
চূড়ান্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিজি প্রেসের নিরাপত্তা ব্যবস্থা দুর্বল হওয়ার কারণেই প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনাটি ঘটেছে। গোপনীয় শাখায় বসানো ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরাগুলো এ শাখার পুরো চিত্র ধারণ করতে পারে না। আর সিসি টিভির ক্যাসেট সরবরাহ করে থাকে প্রশ্ন ছাপার জন্য দেওয়া পরীক্ষা গ্রহণকারী কর্তৃপক্ষ। সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ছাপার সময় বিজি প্রেসকে কোনো ক্যাসেট সরবরাহ করেনি 'মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদফতর' (মাউশি)। ফলে এ প্রশ্ন ফাঁসের কোনো রেকর্ড নেই কর্তৃপক্ষের কাছে। এছাড়া প্রশ্নপত্রের একাধিক সেট পাণ্ডুলিপি সরবরাহ করা হলে প্রশ্ন ফাঁসের ঝুঁকি তাতে কমে যায়। মাধ্যমিক শিক্ষক নিয়োগের জন্য প্রশ্নপত্রের একটি মাত্র পাণ্ডুলিপিই মাউশি থেকে বিজি প্রেসকে সরবরাহ করা হয়েছিল।
তদন্ত প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, বিজি প্রেসের সাবেক উপ-পরিচালক মাসুম খানের দায়িত্বে গুরুতর অবহেলা রয়েছে। মাধ্যমিক পরীক্ষার প্রশ্নপত্রের সঙ্গে একই দিন জাতীয় সংসদের জন্য চলতি বাজেটের 'অর্থবিল' ছাপানো হয়। অর্থবিলের কপির সঙ্গে প্রশ্নপত্র বাইরে চলে গেছে তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। বিজি প্রেসে ছাপার মেশিন স্বল্পতা রয়েছে। অভাব রয়েছে লোকবলেরও। ফলে কাজের চাপ বেশি হলে বা জরুরি কাজের সময় বাইরের মেশিন আর লোকবল নিয়ে কাজ চালাতে হয়। বাইরের জনবলের মাধ্যমেই গোপনীয় শাখার গোপনীয়তা ফাঁস হয়ে যায়। এছাড়া গোপনীয় শাখায় কর্মরতদের নিয়োগের সময় পুলিশ ভ্যারিফিকেশন সঠিকভাবে করা হয়নি। ফলে তাদের চরিত্র ও নৈতিকতা নিয়েও প্রশ্ন থেকে যায়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক তদন্ত কমিটির এক সদস্য বলেন, তদন্ত কমিটির রিপোর্টের বাইরে অনেক গুরুত্বপূর্ণ কারণ রয়েছে। বিভিন্ন কারণে এ তদন্ত কমিটি রিপোর্টে সেসব বিষয় উল্লেখ করতে পারেনি। বিজি প্রেস রাষ্ট্রের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান হলেও দীর্ঘদিন ধরে এটি চলছিল বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে।
সমকালের অনুসন্ধানে জানা যায়, বিজি প্রেসের কর্মচারী ইউনিয়ন (সিবিএ) অত্যন্ত শক্তিশালী একটি সংগঠন। কর্তৃপক্ষের ওপর তাদের প্রভাব অত্যন্ত বেশি। বিজি প্রেসে কর্মচারী নিয়োগ, গোপনীয় শাখায় পছন্দের ব্যক্তিকে বদলি, প্রেসের কাগজ-কালি কেনাসহ নানা প্রক্রিয়ায় কর্মচারী ইউনিয়নের নেতারা সরাসরি জড়িত। পুলিশের হাতে আটক বিজি প্রেসের কম্পোজিটর মোস্তফা, লাবণী ও ফর্মা প্রুফ প্রেসম্যান জলিল সিবিএর শীর্ষ নেতাদের অত্যন্ত কাছের। তাই তদন্ত প্রতিবেদনে তাদের নাম উল্লেখ করে বিজি প্রেসের কর্মকর্তারা সিবিএর হাতে 'অপমানিত ও লাঞ্ছিত' হতে চাননি। তাই গত দু'দিনে একাধিকবার তদন্ত প্রতিবেদন লেখা ও তা কাটাছেঁড়া করা হয়। শেষতক 'দায়ী কারা' শীর্ষক অনুচ্ছেদটিই বাদ দেওয়া হয়। বিজি প্রেসের একাধিক সূত্র জানায়, তদন্ত কমিটি বিজি প্রেসের মহাপরিচালকের কক্ষে বসে তার পরামর্শ মতেই তদন্ত প্রতিবেদন তৈরি করেছে। এরপর আবার তার কাছেই জমা দেওয়ার প্রস্তুতি নেয়।
সমকালের লালমনিরহাট প্রতিনিধি জানান, প্রশ্ন ফাঁসের ঘটনার সঙ্গে জড়িত সন্দেহে গ্রেফতারকৃত লালমনিরহাট সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মতিয়ার রহমান সাজুকে গতকাল চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। গ্রেফতারের পর বেরিয়ে আসছে অর্থ কেলেঙ্কারির নানা তথ্য।
জানা গেছে, জেলার কালিগঞ্জ উপজেলার গোড়ল ইউনিয়নের মোঃ ধন মামুদ মিয়ার ছোট ছেলে মতিয়ার রহমান সাজু ১০ বছর ধরে শিক্ষকতা করেন। ২০০৬ সালের ২৩ ডিসেম্বর লালমনিরহাট সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক পদে প্রথম চাকরিতে যোগদান করেন। অবৈধ উপায়ে নিজের চাকরি নিশ্চিত করতে বিভিন্ন জনের সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করেন সাজু। এক পর্যায়ে বিজি প্রেসের কয়েকজন কর্মচারীর সঙ্গে পরিচয় হলে তাদের এজেন্ট হিসেবে কাজ শুরু করেন তিনি। শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস চক্রের সঙ্গে জড়িয়ে সাজু পুরো জেলায় তার নিজস্ব এজেন্ট তৈরি করেন। বিগত ৩ বছরে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁস করে প্রচুর টাকা কামিয়ে নেন মতিয়ার। ২০০৯ সালে প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নপত্র একদিন আগেই চলে আসে তার কাছে। সাজু এক সেট প্রশ্ন বিক্রি করেন ১ লাখ টাকা করে। ২০০৯ সালে সাজু তার দুই বোন তানজিলা আক্তার শিউলি, সানজিনা আক্তার শেফালী ও তার বড় ভাই ফজলুল হকের পুত্রবধূ শাহিনা এক পরিবারেই ৩ জনকে সরকারি চাকরি পাইয়ে দেন। বিষয়টি সে সময় এলাকায় চাঞ্চল্য সৃষ্টি করে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গ্রেফতারকৃত শিক্ষক মতিয়ার রহমান সাজু গত বছর রংপুর শহরের হনুমানতলায় ১৬ লাখ টাকায় একটি পাকা বাড়ি কিনেছেন। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে কালিগঞ্জ উপজেলার শিয়াল খোওয়া সিনেমা হল এলাকায় ৮ লাখ টাকায় কিনেছেন আরও একটি বাড়ি। গোড়ল বিলে ১টি মাছের খামার কিনেছেন তিনি।
সমকালের রংপুর অফিস জানায়, সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র ফাঁস সিন্ডিকেটের সদস্য শিক্ষক মতিয়ার রহমান সাজুর অ্যাকাউন্টে ৮ লাখ টাকা ও বিজি প্রেসের কর্মচারী এটিএম মোস্তফার অ্যাকাউন্টে আরও ২৩ লাখ টাকার সন্ধান পেয়েছে পুলিশ। বুধবার গ্রেফতারকৃত সাজুকে দু'দিনের রিমান্ডে নিয়েছে পুলিশ। বিজি প্রেস ও পিএসসির ঊর্ধ্বতন ৬ কর্মকর্তা ছাড়াও রংপুর আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের দু'জন জড়িত থাকার প্রমাণ মিলেছে। তাদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।
রংপুর পুলিশ সুপার সালেহ মোহাম্মদ তানভীর গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে সাংবাদিকদের জানান, বুধবার সকালে লালমনিরহাট থেকে গ্রেফতারকৃত আমজাদ হোসেন ও তার ভাই শিক্ষক আনিছুর রহমানকে গ্রেফতার করে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে তারা জানায়, লালমনিরহাট সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের ইংরেজির সহকারী শিক্ষক মতিয়ার রহমান সাজু প্রশ্নপত্র ফাঁসের সঙ্গে জড়িত। এরই পরিপ্রেক্ষিতে বুধবার বিকেলে ডিবি পুলিশ সাজুকে লালমনিরহাট থেকে গ্রেফতার করে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে সাজু জানান, সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় তার ২১ প্রার্থী ছিল। এই ২১ প্রার্থীর কাছ থেকে তিনি প্রায় অর্ধকোটি টাকা নিয়েছেন। ওই টাকা থেকে তিনি শফিয়ার রহমানকে ২১ লাখ টাকা অগ্রিম দিয়েছেন। পুলিশি জিজ্ঞাসাবাদে তিনি আরও জানান, প্রাইম ব্যাংক রংপুর শাখায় তার অ্যাকাউন্টে ৮ লাখ টাকা রয়েছে। গতকাল আদালত তার দু'দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
পুলিশ সুপার আরও জানান, বিজি প্রেসের কর্মচারী মোস্তফার অ্যাকাউন্টে আরও ২৩ লাখ টাকার সন্ধান মিলেছে।
পুলিশ সুপার জানান, প্রশ্নপত্র ফাঁস সিন্ডিকেটের সঙ্গে বিজি প্রেস ও পিএসসির ৬ কর্মকর্তা এবং রংপুর জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য সাবেক ছাত্রলীগ নেতা তারিক হাসান তুহিন ও ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য মুরাদ হোসেনও জড়িত। তাদের গ্রেফতারে অভিযান চলছে।
Sunday, 18 July 2010
ক্ষমতাসীন দলের নামে চলছে দখল
প্রণব বল, চট্টগ্রাম | তারিখ: ১৯-০৭-২০১০
একদিকে চলছে অবৈধ দখল ও ভরাটের কাজ, অন্যদিকে শিল্প-কারখানার বর্জ্য ও বিষাক্ত কালো পানি এসে মিশছে কর্ণফুলী নদীতে। গতকাল চট্টগ্রামের চাক্তাই এলাকা থেকে
কর্ণফুলী নদীর তীর ও জেগে ওঠা চরে দখল চলছে। সরকারি-বেসরকারি কারখানার পাশাপাশি আওয়ামী লীগের অঙ্গসংগঠনের নাম ভাঙিয়ে চলছে এই দখল। পাশাপাশি কিছু কারখানা নদীর পানি দূষণ করছে বলে অভিযোগ রয়েছে। পরিবেশ অধিদপ্তর গত জানুয়ারিতে কর্ণফুলী দূষণ ও দখলের সঙ্গে জড়িত ৩৯টি সরকারি-বেসরকারি কারখানা ও স্থাপনার তালিকা প্রকাশ করেছিল।
সরেজমিনে দেখা গেছে, কর্ণফুলী নদীর উত্তর তীরে শাহ আমানত ও তৃতীয় কর্ণফুলী সেতুর পশ্চিম ও পূর্ব পাশে নদীর জেগে ওঠা চর ও তীর দখল করে প্রায় এক হাজার ছোট ছোট ঘর ও দোকানপাট গড়ে উঠেছে। এ স্থাপনাগুলো অবৈধ উল্লেখ করে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মো. জাকের হোসাইন প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা সেতুর দুই পাশে গজিয়ে ওঠা ঘরবাড়ি চিহ্নিত করে একটি মানচিত্র করেছি। এগুলো সরকারি জায়গায় অবৈধভাবে তোলা হয়েছে। শিগগিরই এসব অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ শুরু হবে।’
হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশের পক্ষে করা এক রিটের পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্ট গতকাল রোববার কর্ণফুলী দূষণ, দখল ও ভরাট বন্ধ রাখার নির্দেশ দেন।
সেতুর পশ্চিম পাশে নদীর চর ও তীরে বাস্তুহারা লীগ, পাথরঘাটা শাখা ও হকার্স লীগ কোতোয়ালি শাখা নামে দুটি সাইনবোর্ড ঝোলানো হয়। এখানে ইতিমধ্যে ১০টি ঝুপড়ি দোকান চালু করা হয়েছে। দোকানি মো. হেলাল উদ্দিন বলেন, ‘আমরা ভাড়ায় দোকান নিয়েছি। একেকজন ২০০ থেকে ৪০০ টাকা ভাড়া দিই।’
দোকানিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মো. আবদুল কুদ্দুছ ওরফে কুদ্দুছ বেপারী নামে একজন ভাড়া তোলেন। কুদ্দুছ নিজেকে বাস্তুহারা লীগের সদস্য পরিচয় দিয়ে বলেন, ‘ভূমি উন্নয়নসহ বিভিন্ন খরচ মেটানোর জন্য আমরা প্রতিটি দোকান থেকে দিনে ৫-১০ টাকা চাঁদা নিই।’
একই জায়গায় সিটি করপোরেশন ইতিমধ্যে প্রায় ৩০টি পাকা দোকান নির্মাণ করে। আন্দোলনের মুখে সাবেক মেয়র এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরী তা বাতিল করলেও স্থাপনাগুলো ভাঙা হয়নি। এর পাশে চাক্তাই খালের মুখের পূর্ব পাশে নদীর জেগে ওঠা চরে ‘সি বিচ কলোনি’ নামে প্রায় ২০০ দোকান ও ঘর গড়ে উঠেছে। মো. মহিউদ্দিন নামে একজন এগুলো তদারক করেন। কলোনিতে গিয়ে তাঁকে পাওয়া যায়নি। তিনি বাস্তুহারা লীগের নেতা বলে জানা গেছে। কলোনির বাসিন্দা নূর মোহাম্মদ দাবি করেন, জায়গাগুলো ব্যক্তিমালিকানাধীন।
সেতুর পূর্ব পাশে জেগে ওঠা চর বালি দিয়ে ভরাট করে দখল করেছে বাকলিয়া বাস্তুহারা সমিতি। এখানে ১২ একর জায়গায় প্রায় সাড়ে ৫০০ প্লট রয়েছে। এর মধ্যে ঘর নির্মিত হয়েছে প্রায় ৩০০। কিছুদিন আগে বাকলিয়া ভূমি কার্যালয়ের উপসহকারী কর্মকর্তা নুরুল আফসার এসব দখলদারের বিরুদ্ধে বাকলিয়া থানায় একটি মামলা করেন। মামলায় জসিম উদ্দিন, শামসুল আলম তালুকদার, মো. মঈনুদ্দিনসহ বেশ কয়েকজন বাস্তুহারা সমিতির নেতাকে বিবাদী করা হয়। তাঁরা যখন যে সরকার আসে তখন সেই সরকারের ব্যানারে দখল চালান।
কর্ণফুলী দূষণ: পরিবেশ অধিদপ্তরের সাম্প্রতিক জরিপে দেখা যায়, সরকারি-বেসরকারি ৩৯টি কারখানা ও স্থাপনা কর্ণফুলীর গতিপ্রবাহ বিঘ্নিত করার পাশাপাশি প্রতিনিয়ত দূষণ করছে। এ ছাড়া প্রতিদিন আটটি খালের মাধ্যমে নগরের ৩০০ টন তরল ও কঠিন অপরিশোধিত বর্জ্য সরাসরি নদীতে পড়ছে।
পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালক (প্রয়োগ ও তদারকি) মোহাম্মদ মুনীর চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, ‘জরিপে উল্লিখিত প্রতিষ্ঠানের বাইরেও কিছু প্রতিষ্ঠান দখল ও দূষণের সঙ্গে জড়িত বলে আমরা শনাক্ত করেছি। এসব প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অভিযান চালানো হবে।
পরিবেশ অধিদপ্তরের হিসাবে সিটি করপোরেশনের পাশাপাশি দূষণ ও দখলের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের তালিকায় কালুরঘাটে চট্টগ্রাম দক্ষিণ বন বিভাগের একটি ডিপোও রয়েছে। তালিকায় ছয়টি বরফকল, চারটি লবণ কারখানা ও গুদাম, তিনটি সিমেন্ট কারখানা, নদীর তীরঘেঁষা দুটি বালু মহাল, দুটি ডকইয়ার্ড ও তিনটি আবাসিক ভবন রয়েছে।
http://www.prothom-alo.com/detail/date/2010-07-19/news/79905
একদিকে চলছে অবৈধ দখল ও ভরাটের কাজ, অন্যদিকে শিল্প-কারখানার বর্জ্য ও বিষাক্ত কালো পানি এসে মিশছে কর্ণফুলী নদীতে। গতকাল চট্টগ্রামের চাক্তাই এলাকা থেকে
কর্ণফুলী নদীর তীর ও জেগে ওঠা চরে দখল চলছে। সরকারি-বেসরকারি কারখানার পাশাপাশি আওয়ামী লীগের অঙ্গসংগঠনের নাম ভাঙিয়ে চলছে এই দখল। পাশাপাশি কিছু কারখানা নদীর পানি দূষণ করছে বলে অভিযোগ রয়েছে। পরিবেশ অধিদপ্তর গত জানুয়ারিতে কর্ণফুলী দূষণ ও দখলের সঙ্গে জড়িত ৩৯টি সরকারি-বেসরকারি কারখানা ও স্থাপনার তালিকা প্রকাশ করেছিল।
সরেজমিনে দেখা গেছে, কর্ণফুলী নদীর উত্তর তীরে শাহ আমানত ও তৃতীয় কর্ণফুলী সেতুর পশ্চিম ও পূর্ব পাশে নদীর জেগে ওঠা চর ও তীর দখল করে প্রায় এক হাজার ছোট ছোট ঘর ও দোকানপাট গড়ে উঠেছে। এ স্থাপনাগুলো অবৈধ উল্লেখ করে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মো. জাকের হোসাইন প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা সেতুর দুই পাশে গজিয়ে ওঠা ঘরবাড়ি চিহ্নিত করে একটি মানচিত্র করেছি। এগুলো সরকারি জায়গায় অবৈধভাবে তোলা হয়েছে। শিগগিরই এসব অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ শুরু হবে।’
হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশের পক্ষে করা এক রিটের পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্ট গতকাল রোববার কর্ণফুলী দূষণ, দখল ও ভরাট বন্ধ রাখার নির্দেশ দেন।
সেতুর পশ্চিম পাশে নদীর চর ও তীরে বাস্তুহারা লীগ, পাথরঘাটা শাখা ও হকার্স লীগ কোতোয়ালি শাখা নামে দুটি সাইনবোর্ড ঝোলানো হয়। এখানে ইতিমধ্যে ১০টি ঝুপড়ি দোকান চালু করা হয়েছে। দোকানি মো. হেলাল উদ্দিন বলেন, ‘আমরা ভাড়ায় দোকান নিয়েছি। একেকজন ২০০ থেকে ৪০০ টাকা ভাড়া দিই।’
দোকানিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মো. আবদুল কুদ্দুছ ওরফে কুদ্দুছ বেপারী নামে একজন ভাড়া তোলেন। কুদ্দুছ নিজেকে বাস্তুহারা লীগের সদস্য পরিচয় দিয়ে বলেন, ‘ভূমি উন্নয়নসহ বিভিন্ন খরচ মেটানোর জন্য আমরা প্রতিটি দোকান থেকে দিনে ৫-১০ টাকা চাঁদা নিই।’
একই জায়গায় সিটি করপোরেশন ইতিমধ্যে প্রায় ৩০টি পাকা দোকান নির্মাণ করে। আন্দোলনের মুখে সাবেক মেয়র এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরী তা বাতিল করলেও স্থাপনাগুলো ভাঙা হয়নি। এর পাশে চাক্তাই খালের মুখের পূর্ব পাশে নদীর জেগে ওঠা চরে ‘সি বিচ কলোনি’ নামে প্রায় ২০০ দোকান ও ঘর গড়ে উঠেছে। মো. মহিউদ্দিন নামে একজন এগুলো তদারক করেন। কলোনিতে গিয়ে তাঁকে পাওয়া যায়নি। তিনি বাস্তুহারা লীগের নেতা বলে জানা গেছে। কলোনির বাসিন্দা নূর মোহাম্মদ দাবি করেন, জায়গাগুলো ব্যক্তিমালিকানাধীন।
সেতুর পূর্ব পাশে জেগে ওঠা চর বালি দিয়ে ভরাট করে দখল করেছে বাকলিয়া বাস্তুহারা সমিতি। এখানে ১২ একর জায়গায় প্রায় সাড়ে ৫০০ প্লট রয়েছে। এর মধ্যে ঘর নির্মিত হয়েছে প্রায় ৩০০। কিছুদিন আগে বাকলিয়া ভূমি কার্যালয়ের উপসহকারী কর্মকর্তা নুরুল আফসার এসব দখলদারের বিরুদ্ধে বাকলিয়া থানায় একটি মামলা করেন। মামলায় জসিম উদ্দিন, শামসুল আলম তালুকদার, মো. মঈনুদ্দিনসহ বেশ কয়েকজন বাস্তুহারা সমিতির নেতাকে বিবাদী করা হয়। তাঁরা যখন যে সরকার আসে তখন সেই সরকারের ব্যানারে দখল চালান।
কর্ণফুলী দূষণ: পরিবেশ অধিদপ্তরের সাম্প্রতিক জরিপে দেখা যায়, সরকারি-বেসরকারি ৩৯টি কারখানা ও স্থাপনা কর্ণফুলীর গতিপ্রবাহ বিঘ্নিত করার পাশাপাশি প্রতিনিয়ত দূষণ করছে। এ ছাড়া প্রতিদিন আটটি খালের মাধ্যমে নগরের ৩০০ টন তরল ও কঠিন অপরিশোধিত বর্জ্য সরাসরি নদীতে পড়ছে।
পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালক (প্রয়োগ ও তদারকি) মোহাম্মদ মুনীর চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, ‘জরিপে উল্লিখিত প্রতিষ্ঠানের বাইরেও কিছু প্রতিষ্ঠান দখল ও দূষণের সঙ্গে জড়িত বলে আমরা শনাক্ত করেছি। এসব প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অভিযান চালানো হবে।
পরিবেশ অধিদপ্তরের হিসাবে সিটি করপোরেশনের পাশাপাশি দূষণ ও দখলের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের তালিকায় কালুরঘাটে চট্টগ্রাম দক্ষিণ বন বিভাগের একটি ডিপোও রয়েছে। তালিকায় ছয়টি বরফকল, চারটি লবণ কারখানা ও গুদাম, তিনটি সিমেন্ট কারখানা, নদীর তীরঘেঁষা দুটি বালু মহাল, দুটি ডকইয়ার্ড ও তিনটি আবাসিক ভবন রয়েছে।
http://www.prothom-alo.com/detail/date/2010-07-19/news/79905
Friday, 16 July 2010
সরকারি জমিতে ছাত্রলীগের নেতাদের পাকা ঘর
গুরুদাসপুর (নাটোর) প্রতিনিধি | তারিখ: ১৭-০৭-২০১০
নাটোরের গুরুদাসপুর পৌর শহরের বিলচলন শহীদ শামসুজ্জোহা কলেজসংলগ্ন সরকারি জায়গা দখল করে পাকা ঘর নির্মাণ করছেন ছাত্রলীগের নেতারা। সেখানে তাঁরা শেখ রাসেল স্মৃতি সংসদের নামে একটি সাইনবোর্ডও ঝুলিয়ে রেখেছেন।
গত ১৫ জুলাই সরেজমিনে দেখা গেছে, কলেজের সামনের রাস্তার পাশে স্টেডিয়ামের জন্য বরাদ্দ করা জায়গা দখল করে বেশ কয়েকটি আধাপাকা ঘর তোলা হয়েছে। তার পূর্বপাশে ১০ ফুট দীর্ঘ ও সাড়ে আট ফুট প্রস্থের একটি পাকা ঘরের নির্মাণকাজ চলছে। সেখানে শেখ রাসেল স্মৃতি সংসদের সাইনবোর্ড ঝুলতে দেখা গেছে। স্থানীয় দোকানিরা জানান, ঘরটি ছাত্রলীগের বর্তমান ও সাবেক দুই সাধারণ সম্পাদক মিলে নির্মাণ করছেন।
গুরুদাসপুর পৌর ভূমি কার্যালয় সূত্র জানায়, জায়গাটি সরকারি। নিয়মনীতি উপেক্ষা করে ছাত্রলীগের নেতাসহ তাঁদের ছত্রছায়ায় থাকা অন্যরাও সরকারি জমি দখল করে ঘর তুলছেন। বিভিন্ন সময় পদক্ষেপ নিলেও নেতাদের দাপটের কারণে তা কার্যকর হয়নি।
গুরুদাসপুর উপজেলা সদরে গিয়ে কথা হয় ঘর নির্মাণকাজের সঙ্গে জড়িত আশরাফ শেখের সঙ্গে। তিনি নিজেকে ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও বর্তমানে যুবলীগের নেতা দাবি করে প্রথম আলোকে বলেন, ‘শেখ রাসেল স্মৃতি সংসদের জন্য ঘরটি নির্মাণ করা হচ্ছে। এ জন্য নাটোর-৪ আসনের (গুরুদাসপুর-বড়াইগ্রাম) সাংসদ আবদুল কুদ্দুস এক টন চাল বরাদ্দ দিয়েছেন। আর পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. জুমির মণ্ডল তাঁর ভাটা থেকে ইট দিয়ে সহায়তা করছেন।’ আশরাফ শেখ নিজেকে শেখ রাসেল স্মৃতি সংসদের সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা ছাত্রলীগের বর্তমান সাধারণ সম্পাদক রেজাউল করিমকে স্মৃতি সংসদের সভাপতি দাবি করেছেন।
আশরাফ শেখ আরও বলেন, ‘অনেকেই জায়গা দখল করে ঘর তুলে ব্যবসা করছে। সেখানে ছাত্রলীগের ছেলেরা শেখ রাসেলের স্মৃতি ধরে রাখতে (!) ঘর তুলছে। এতে ছাত্রলীগ আরও সংগঠিত হবে। তবে সরকার চাইলে যেকোনো সময় আমরা ঘর ভেঙে নিয়ে যেতে প্রস্তুত আছি।’
গুরুদাসপুর উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক রেজাউল করিম দাবি করেন, ‘এখন ছাত্রলীগের পদ থেকে অবসর নিতে হবে। বসার জায়গা করার জন্য একটি ঘর নির্মাণ করছি। সেখানে খেলাধুলা করে সময় কাটানো যাবে।’ এ ব্যাপারে লেখালেখি না করার জন্য তিনি এ প্রতিনিধিকে অনুরোধ জানান।
যোগাযোগ করা হলে গুরুদাসপুর পৌর ভূমি কার্যালয়ের এক তহশিলদার বলেন, ‘সরকারি জমি দখলের খবর পেয়ে গত ১৫ জুলাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) সহায়তায় সেখানে নির্মাণকাজ বন্ধ করে দিয়েছি।’
http://www.prothom-alo.com/detail/date/2010-07-17/news/79241
নাটোরের গুরুদাসপুর পৌর শহরের বিলচলন শহীদ শামসুজ্জোহা কলেজসংলগ্ন সরকারি জায়গা দখল করে পাকা ঘর নির্মাণ করছেন ছাত্রলীগের নেতারা। সেখানে তাঁরা শেখ রাসেল স্মৃতি সংসদের নামে একটি সাইনবোর্ডও ঝুলিয়ে রেখেছেন।
গত ১৫ জুলাই সরেজমিনে দেখা গেছে, কলেজের সামনের রাস্তার পাশে স্টেডিয়ামের জন্য বরাদ্দ করা জায়গা দখল করে বেশ কয়েকটি আধাপাকা ঘর তোলা হয়েছে। তার পূর্বপাশে ১০ ফুট দীর্ঘ ও সাড়ে আট ফুট প্রস্থের একটি পাকা ঘরের নির্মাণকাজ চলছে। সেখানে শেখ রাসেল স্মৃতি সংসদের সাইনবোর্ড ঝুলতে দেখা গেছে। স্থানীয় দোকানিরা জানান, ঘরটি ছাত্রলীগের বর্তমান ও সাবেক দুই সাধারণ সম্পাদক মিলে নির্মাণ করছেন।
গুরুদাসপুর পৌর ভূমি কার্যালয় সূত্র জানায়, জায়গাটি সরকারি। নিয়মনীতি উপেক্ষা করে ছাত্রলীগের নেতাসহ তাঁদের ছত্রছায়ায় থাকা অন্যরাও সরকারি জমি দখল করে ঘর তুলছেন। বিভিন্ন সময় পদক্ষেপ নিলেও নেতাদের দাপটের কারণে তা কার্যকর হয়নি।
গুরুদাসপুর উপজেলা সদরে গিয়ে কথা হয় ঘর নির্মাণকাজের সঙ্গে জড়িত আশরাফ শেখের সঙ্গে। তিনি নিজেকে ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও বর্তমানে যুবলীগের নেতা দাবি করে প্রথম আলোকে বলেন, ‘শেখ রাসেল স্মৃতি সংসদের জন্য ঘরটি নির্মাণ করা হচ্ছে। এ জন্য নাটোর-৪ আসনের (গুরুদাসপুর-বড়াইগ্রাম) সাংসদ আবদুল কুদ্দুস এক টন চাল বরাদ্দ দিয়েছেন। আর পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. জুমির মণ্ডল তাঁর ভাটা থেকে ইট দিয়ে সহায়তা করছেন।’ আশরাফ শেখ নিজেকে শেখ রাসেল স্মৃতি সংসদের সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা ছাত্রলীগের বর্তমান সাধারণ সম্পাদক রেজাউল করিমকে স্মৃতি সংসদের সভাপতি দাবি করেছেন।
আশরাফ শেখ আরও বলেন, ‘অনেকেই জায়গা দখল করে ঘর তুলে ব্যবসা করছে। সেখানে ছাত্রলীগের ছেলেরা শেখ রাসেলের স্মৃতি ধরে রাখতে (!) ঘর তুলছে। এতে ছাত্রলীগ আরও সংগঠিত হবে। তবে সরকার চাইলে যেকোনো সময় আমরা ঘর ভেঙে নিয়ে যেতে প্রস্তুত আছি।’
গুরুদাসপুর উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক রেজাউল করিম দাবি করেন, ‘এখন ছাত্রলীগের পদ থেকে অবসর নিতে হবে। বসার জায়গা করার জন্য একটি ঘর নির্মাণ করছি। সেখানে খেলাধুলা করে সময় কাটানো যাবে।’ এ ব্যাপারে লেখালেখি না করার জন্য তিনি এ প্রতিনিধিকে অনুরোধ জানান।
যোগাযোগ করা হলে গুরুদাসপুর পৌর ভূমি কার্যালয়ের এক তহশিলদার বলেন, ‘সরকারি জমি দখলের খবর পেয়ে গত ১৫ জুলাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) সহায়তায় সেখানে নির্মাণকাজ বন্ধ করে দিয়েছি।’
http://www.prothom-alo.com/detail/date/2010-07-17/news/79241
Subscribe to:
Posts (Atom)