শামসুস সালেহীন
দলীয় বিবেচনায় পুলিশে প্রায় ১ হাজার সার্জেন্ট ও এসআই নিয়োগ চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। মন্ত্রী, এমপি ও দলীয় নেতাদের তদবিরেই এসব পদে নিয়োগ দেয়া হচ্ছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সূত্র জানিয়েছে, এই প্রক্রিয়ায় এরই মধ্যে প্রায় ৯০০ জন এসআই নিয়োগ দেয়া হয়েছে। আগামী সপ্তাহেই ১৩৩ জন সার্জেন্টকে নিয়োগ দেয়ার কথা রয়েছে। এসব নিয়োগ প্রার্থীর তালিকা মন্ত্রণালয়ের কম্পিউটারে সংরক্ষণ করা হয়েছে। প্রত্যেক নিয়োগ প্রার্থীর নামের পাশে তদবিরকারীর নাম উল্লেখ করা হয়েছে বলে মন্ত্রণালয়ের সূত্র জানায়।
জানা গেছে, সম্প্রতি পুলিশে ১৬৬ জন সার্জেন্ট নিয়োগ চূড়ান্ত করা হয়। পুলিশি তদন্তে বিভিন্ন ত্রুটির কারণে ৩৩ জনের নাম বাদ পড়ে। ফলে ১৩৩ জনকে সার্জেন্ট পদে নিয়োগ দেয়ার প্রক্রিয়া চূড়ান্ত করা হয়। অভিযোগ রয়েছে, সার্জেন্ট নিয়োগ প্রক্রিয়ায় জেলা কোটা মানা হয়নি। এ কারণে চট্টগ্রামের একজনকেও নেয়া হয়নি ১৩৩ জনের মধ্যে। এতে করে চট্টগ্রামে বিষয়টি নিয়ে বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে। সূত্রমতে, ১৩৩ জন পুলিশ সার্জেন্টের বেশিরভাগই চূড়ান্ত করা হয়েছে মন্ত্রী ও এমপিদের সুপারিশে। আগামী সপ্তাহেই এদের নিয়োগ দেয়ার কথা রয়েছে বলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়।
এছাড়া পুলিশে আরও ২০০ এসআই (সাব-ইন্সপেক্টর) নিয়োগের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এর আগে ৪৩৪ জন এসআই নিয়োগের বিষয়টি চূড়ান্ত হওয়ার পর তা বাড়িয়ে ৬৩৪ জন করা হয়। অভিযোগ রয়েছে, রাজনৈতিক চাপ ও তদবির রক্ষার জন্যই নিয়োগ সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে। এর আগে ৪৩৪ জন এসআই নিয়োগের জন্য বিজ্ঞপ্তি দেয়া হয়। লিখিত পরীক্ষা শেষে প্রায় ১ হাজার ৬০০ জনকে নির্বাচন করে মৌখিক পরীক্ষা নেয়া হয়। এ সময় আরও ২০০ জনকে এসআই পদে নিয়োগ দেয়ার উদ্যোগ নেয় সরকার।
মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, এসআই পদে নিয়োগের জন্য প্রতিমন্ত্রী, সংসদ সদস্য থেকে শুরু করে ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও আওয়ামী লীগ নেতাদের তদবির সামাল দিতে হচ্ছে প্রতিদিনই। এ জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রীকেও কিছুটা সময় ব্যয় করতে হচ্ছে। তবে যারা তদবির নিয়ে আসেন, তাদের নাম মন্ত্রণালয়ের কম্পিউটারে সংরক্ষণ করা হচ্ছে।
সূত্র জানায়, প্রথম দফায় যে ৪৩৪ এসআই নিয়োগের সিদ্ধান্ত হয়েছিল তার মধ্যে জেলা কোটা অনুযায়ী ঢাকার ৩০ জন, গাজীপুরে ৭ জন, মানিকগঞ্জে ৬ জন, মুন্সীগঞ্জে ৬ জন, নারায়ণগঞ্জে ৮ জন, নরসিংদীতে ৭ জন, ফরিদপুরে ৬ জন, গোপালগঞ্জে ৪ জন, মাদারীপুরে ৪ জন, রাজবাড়ীতে ৩ জন, শরিয়তপুরে ৪ জন, জামালপুরে ৭ জন, শেরপুরে ৪, কিশোরগঞ্জে ৯ জন, নেত্রকোনায় ৭ জন, ময়মনসিংহে ১৬ জন, টাঙ্গাইলে ১১ জন, চট্টগ্রামে ২৩ জন, কক্সবাজারে ৬ জন, খাগড়াছড়িতে ২ জন, বান্দরবানে ১ জন, রাঙামাটিতে ২ জন, কুমিল্লায় ১৬ জন, ব্রাক্ষণবাড়ীয়ায় ৮ জন, চাঁদপুরে ৮ জন, নোয়াখালীতে ৯ জন, ফেনীতে ৪ জন, লক্ষ্মীপুরে ৫ জন, বগুড়ায় ১১ জন, জয়পুরহাটে ৩ জন, দিনাজপুরে ৯ জন, পঞ্চগড়ে ৩ জন, ঠাকুরগাঁওয়ে ৪ জন, পাবনায় ৬ জন, সিরাজগঞ্জে ৯ জন, রাজশাহীতে ৮ জন, নওগাঁয় ৮ জন, নাটোরে ৫ জন, চাঁপাইনবাবগঞ্জে ৫ জন, রংপুরে ৯ জন, গাইবান্ধায় ৭ জন, লালমনিরহাটে ৪ জন, কুড়িগ্রামে ৬ জন, নীলফামারীতে ৫ জন, খুলনায় ৮ জন, বাগেরহাটে ৫ জন, সাতক্ষীরায় ৬ জন, যশোরে ৯ জন, ঝিনাইদহে ৬ জন, মাগুরায় ৩ জন, নড়াইলে ২ জন, কুষ্টিয়ায় ৬ জন, চুয়াডাঙ্গায় ৪ জন, মেহেরপুরে ২ জন, বরিশালে ৮ জন, ভোলায় ৬ জন, ঝালকাঠিতে ২ জন, পিরোজপুরে ৪ জন, বরগুনায় ৩ জন, পটুয়াখালীতে ৫ জন, সিলেটে ৯ জন, হবিগঞ্জে ৬ জন, মৌলভীবাজারে ৬ জন ও সুনামগঞ্জে ৭ জন সাব-ইন্সপেক্টর নিয়োগের সিদ্ধান্ত হয়েছিল বলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়। পরে রাজনৈতিক দলীয় চাপ ও তদবির রক্ষার জন্যই আরও ২০০ জন বাড়ানো হচ্ছে। এতে মনগড়াভাবে জেলাভিত্তিক সংখ্যায় পরিবর্তন আনা হবে।
সূত্র জানায়, এসআই নিয়োগের জন্য যে জেলা কোটা নির্ধারিত রয়েছে, তাকে অপ্রতুল আখ্যা দিয়ে কোটা বাড়ানোর দাবি করছেন মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও সংসদ সদস্যরা। পাশাপাশি নিজেদের পছন্দের প্রার্থীরা যাতে নিয়োগ পান সে ব্যাপারেও রয়েছে জোর তদবির। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র আরও জানায়, তদবিরের কোটা পূরণের জন্যই নিয়োগের সংখ্যা বাড়ানো হচ্ছে। তবে সূত্রমতে, সরকারের যুক্তি হলো তারা যা করছেন সরকারি কর্ম-কমিশনের (পিএসসি) নীতিমালা অনুযায়ী করছেন।
http://www.amardeshonline.com/pages/details/2010/07/29/36495
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
No comments:
Post a Comment