Wednesday, 31 March 2010
মন্ত্রীদের গাড়িবিলাস : শিক্ষামন্ত্রী নাহিদের সেবায় সরকারি ৬ গাড়ি, ৩৭ মন্ত্রী-উপদেষ্টা ব্যবহার করেন একাধিক
কাদের গনি চৌধুরী
সরকারি গাড়ি ব্যবহারে বিলাসী হয়ে উঠেছেন মহাজোট সরকারের মন্ত্রীরা। মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী, উপমন্ত্রীদের সুযোগ-সুবিধা সংক্রান্ত রেমুনারেশন অ্যান্ড প্রিভিলেজ অ্যাক্ট অনুযায়ী তাদের একটি করে গাড়ি পাওয়ার কথা থাকলেও ক্ষমতার অপব্যবহার করে তারা একাধিক সরকারি গাড়ি ব্যবহার করছেন। কোনো কোনো মন্ত্রী নিজের ও দফতরের নামে ৬টি পর্যন্ত সরকারি গাড়ি দখলে রেখেছেন। মহাজোট সরকারের ৫০ সদস্যের মন্ত্রিপরিষদের মধ্যে ১৩ জন ছাড়া অন্য সবাই দুই বা ততোধিক সরকারি গাড়ি ব্যবহার করছেন। এমনকি নিয়মবহির্ভূতভাবে মন্ত্রীদের পিএস, এপিএস, পিওরাও ব্যবহার করছেন সরকারি গাড়ি ।
সরকারি পরিবহন পুলের একটি সূত্র জানায়, মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী, উপদেষ্টা, সংসদ সদস্য ও তাদের দফতরের নামে ১৫০টি অতিরিক্ত সরকারি গাড়ি ব্যবহার হচ্ছে। এগুলোর মধ্যে মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী, উপদেষ্টারা অতিরিক্ত ব্যবহার করছেন ৩৭টি, পিএসরা ৪৩টি, এপিএস ও পিআরওরা ৬৩টি এবং সংসদ সদস্যরা ৩টি। আর এ ১৫০ গাড়ির পেছনে রাষ্ট্রের অপচয় হচ্ছে বছরে ১৩ কোটি টাকারও বেশি। অনুসন্ধানে দেখা যায়, মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী, উপদেষ্টারা অতিরিক্ত যে গাড়ি নিয়েছেন সেগুলো তাদের পারিবারিক ও দলীয় কাজে ব্যবহার হচ্ছে।
সরকারি গাড়ি ব্যবহারের দিক থেকে এগিয়ে আছেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ। ক্ষমতার প্রভাব খাটিয়ে এই মন্ত্রী ৩টি সরকারি গাড়ি ব্যবহার করছেন। এর মধ্যে তিনি মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা অধিদফতর থেকে নিয়েছেন দুটি এবং একটি নিয়েছেন সরকারি পরিবহন পুল থেকে। পরিবহন পুল থেকে নেয়া গাড়িটির নম্বর হচ্ছে ঢাকা মেটো-গ-২৫৭৭৯০। এ গাড়ির চালকের নাম জহিরুল। মাউশি থেকে নেয়া গাড়ি দুটির নম্বর হচ্ছে ঢাকা মেট্রো ঘ-১৩-৯২১৩ ও ঢাকা মেট্রো ঘ-১৩-১০৪৯। মাউশির দেয়া প্রথম গাড়িটি টিকিউআই প্রজেক্টের। আর দ্বিতীয়টি রংপুর ডিডি অফিস থেকে এনে দেয়া হয়েছে। এটি মন্ত্রীর বাসার কাজে ব্যবহার করা হয়।
শিক্ষামন্ত্রী শুধু নিজের জন্যই তিনটি নেননি, তার দফতরের নামে নেয়া হয়েছে আরও ৩টি গাড়ি। এগুলো তার পিএস, এপিএস, জনসংযোগ কর্মকর্তা ব্যবহার করেন। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রভাবশালী পিআরও সুবোধ চন্দ্র ঢালির ব্যবহারের জন্য নায়েম থেকে বড় একটি মাইক্রোবাস আনা হয়েছে। গাড়িটির নম্বর ঢাকা মেট্রো চ-৫১৯৬৭৩। এটিও টিকিউআই প্রজেক্টের গাড়ি। নায়েমের এ গাড়ি পিআরওর জন্য নিয়ে আসায় সেখানে তাদের কাজে অসুবিধা হচ্ছে বলে নায়েমের একটি সূত্র জানায়। এ গাড়ির ড্রাইভারের বেতন থেকে শুরু করে তেল খরচ সবই বহন করা হচ্ছে টিকিউআই প্রজেক্ট থেকে।
মন্ত্রীর পিএস এএস মাহমুদ ব্যবহার করছেন শিক্ষা প্রকৌশল অধিদফতরের গাড়ি। গাড়িটির নম্বর ঢাকা মেট্রো ঘ-১৩২৫৮৮। এ গাড়ির ড্রাইভারের বেতন, তেলসহ যাবতীয় খরচ বহন করতে হচ্ছে শিক্ষা প্রকৌশল অধিদফতরকে। অবিশ্বাস্য হলেও মন্ত্রীর এপিএস মন্মথ রঞ্জন বাড়ৈর জন্যও গাড়ি দিতে হয়েছে মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা অধিদফতর কর্তৃপক্ষকে। ঢাকায় গাড়ি না থাকায় তার জন্য গাড়ি আনা হয়েছে বরিশাল ডিডি অফিস থেকে। মন্ত্রীর এপিএসের জন্য গাড়ি নিয়ে আসায় বরিশাল ডিডি অফিসের কর্মকর্তাদের পরিবহন সঙ্কটে পড়তে হয়েছে।
এছাড়াও টিকিউআই প্রজেক্টের সবচেয়ে ভালো গাড়িটি দখলে নিয়েছেন শিক্ষা মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি রাশেদ খান মেনন এমপি। এমপিরা সরকারি গাড়ি বরাদ্দ না পেলেও অবৈধ প্রভাব খাটিয়ে মেনন মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা অধিদফতরের টিকিউআই প্রজেক্টের দামি গাড়িটি ব্যবহার করছেন। গাড়ির নম্বর ঢাকা মেট্রো ঘ-১৩-১০৫৩।
প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা ড. আলাউদ্দিন আহমেদ ২টি সরকারি গাড়ি ব্যবহার করেন। তিনি একটি নিয়েছেন শিক্ষা প্রকৌশল অধিদফতর থেকে। অন্যটি নিয়েছেন পরিবহন পুল থেকে। শিক্ষা অধিদফতর থেকে নেয়া গাড়িটির নম্বর হচ্ছে ঢাকা মেট্রো ঘ-১৩-২৫৯৯। আর পরিবহন পুল থেকে নেয়া গাড়িটির নম্বর হচ্ছে গ-২৫-৭৭৯৩। শুধু তাই নয়, প্রধানমন্ত্রীর এ উপদেষ্টা তার পিএসের জন্য নিয়েছেন এলজিইডি থেকে একটি গাড়ি, যার নম্বর ঢাকা মেট্রো গ-১১৬৩৪৯।
শিক্ষা সচিব ও সচিবের পিএসের জন্যও শিক্ষা প্রকৌশল অধিদফতরকে দিতে হয়েছে দুটি গাড়ি। সচিবকে দেয়া গাড়িটির নম্বর ঢাকা মেট্রো ঘ-১৩-২৫৮৭। সচিবের পিএসের গাড়ির নম্বর ঢাকা মেট্রো গ-১৩-৩৬৩৬।
অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতও ২টি সরকারি গাড়ি ব্যবহার করেন। এর একটি নিয়েছেন পরিবহন পুল থেকে, যার নম্বর ঢাকা মেট্রো গ-২৫৭৭৭০। এটির ড্রাইভার কার্তিক চন্দ্র রায়। অপর গাড়িটি অর্থ মন্ত্রণালয়ের। এটির নম্বর ঢাকা মেট্রো ঘ-১৫৭৫২৯। এ গাড়ির ড্রাইভার হাজী নুরুল আমিন।
এছাড়াও মন্ত্রীর পিএস, এপিএস নীতিমালা লঙ্ঘন করে সরকারি গাড়ি বরাদ্দ নিয়েছেন।
বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী আবদুল লতিফ সিদ্দিকী পরিবহন পুল থেকে বরাদ্দ নিয়েছেন দুটি গাড়ি। এগুলোর নম্বর হচ্ছে ঢাকা মেট্রো খ-১২-৫১৫৬ ও ঢাকা মেট্রো গ-১১৫১০৮। প্রথমটি চালান ড্রাইভার আশিক, আর দ্বিতীয়টি রেজাউল।
আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমদও সরকারি দুটি গাড়ি ব্যবহার করেন। গাড়ি দুটির নম্বর ঢাকা মেট্রো গ-২৫-৭৭৭৩ ও ঢাকা মেট্রো খ-১১৪৪৭১। প্রথমটির ড্রাইভার সোহরাব আর দ্বিতীয়টির মোতালেব।
এছাড়াও ক্ষমতার অপব্যবহার করে যারা একাধিক সরকারি গাড়ি দখলে রেখেছেন তারা হলেন ডাক, তার ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী রাজিউদ্দিন আহমদ রাজু ঢাকা মেট্রো গ-২৫-৭৭৭৫ (পরিবহন পুল/ড্রাইভার জাফর) ও ঢাকা মেট্রো ঘ-১২-৭২৬৪, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুন ঢাকা মেট্রো গ-২৫-০৭৭৭৬ (পরিবহন পুল/ড্রাইভার সালাম) ও ঢাকা মেট্রো ঘ-১১-৫৮৭৭, সমাজকল্যাণমন্ত্রী এনামুল হক মোস্তফা শহীদ ঢাকা মেট্রো গ-২৫-৭৭৮১ (পরিবহন পুল) ও ঢাকা মেট্রো গ-১১-৪৮৩১; পানিসম্পদমন্ত্রী রমেশ চন্দ্র সেন ঢাকা মেট্রো গ-২৫-৭৭৮৩ (পরিবহন পুল), ঢাকা মেট্রো ঘ-১১-৪৮৩১ (প্রকল্প); বাণিজ্যমন্ত্রী লে. কর্নেল (অব.) ফারুক খান ঢাকা মেট্রো গ-২৫-৭৭৮৫ (পরিবহন পুল/ড্রাইভার ইব্রাহীম) ও ঢাকা মেট্রো ঘ-১১-৩৮১৭ (এলজিইডি/ ড্রাইভার জগলু); খাদ্যমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক ঢাকা মেট্রো খ-১২-৫১৫৯ (পরিবহন পুল) ও ঢাকা মেট্রো খ-১১-৮২০৩ (খাদ্য মন্ত্রণালয়), প্রাথমিক ও গণশিক্ষামন্ত্রী ডা. আফসারুল আমিন ঢাকা মেট্রো গ-২৫-৭৭৮৭ (পরিবহন পুল) ও ঢাকা মেট্রো খ-১৩০৭৫৮ (প্রকল্প); পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. দীপু মনি ঢাকা মেট্রো গ-২৫-৭৭৮৯ (পরিবহন পুল) ও ঢাকা মেট্রো খ-১২-৮৫৮৩ (পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নিজস্ব); নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান ঢাকা মেট্রো গ-২৫-৭৭৯৫ (পরিবহনপুল/ড্রাইভার সাহেব) ও ঢাকা মেট্রো ঘ-১১-৪৪৩০; ভূমি প্রতিমন্ত্রী অ্যাড. মোস্তাফিজুর রহমান ফিজার ঢাকা মেট্রো গ-২৫-৭৭৮৯ (পরিবহন পুল) ও ঢাকা শ-১৪৮ (গুচ্ছগ্রাম প্রকল্পের জন্য কেনা নতুন জিপ); স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শামসুল হক টুকু ঢাকা মেট্রো গ-২৫-৭৮০৮ (পরিবহন পুল) ও ঢাকা মেট্রো খ-১৩-২৮০৭; পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ ঢাকা মেট্রো গ-২৫-৭৮০১ (পরিবহন পুল) ও ঢাকা মেট্রো ঘ-১১-৭৯৭৬ (প্রকল্প); পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী দীপংকর তালুকদার ঢাকা মেট্রো গ-২৫-৭৮০৩ (পরিবহন পুল) ও অজ-১৭১১৪ (ইউএনডিপি); গৃহায়ন ও গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী আবদুল মান্নান খান ঢাকা মেট্রো গ-২৫-৭৮০৬ (পরিবহন পুল), ঢাকা মেট্রো খ-১১-৫৪৫৫ (রাজউক); স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় প্রতিমন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবির নানক ঢাকা মেট্রো গ-২৫-৭৭৭২ (পরিবহন পুল) ও ঢাকা মেট্রো ঘ-১১-৫৮৮৮০ (এলজিইডি); প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মোঃ মোতাহার হোসেন ঢাকা মেট্রো গ-২৫-৭৮১০ (পরিবহন পুল) ও ঢাকা মেট্রো খ-১৩-০৫৬৩ (প্রকল্প); বিদ্যুত্, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) মোহাম্মদ এনামুল হক ঢাকা মেট্রো গ-২৫-৭৭৯৬ (পরিবহন পুল), ঢাকা মেট্রো খ-১১-৯২৮৮ (প্রকল্প); পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী মাহবুবুর রহমান ঢাকা মেট্রো গ-২৫-৭৭৮৯ (পরিবহন পুল) ও খ-১৩-১৬৯৯ (প্রকল্প)। সরকারি গাড়ি ছাড়াও এসব মন্ত্রীর ব্যক্তিগত একাধিক গাড়ি রয়েছে।
মহাজোট সরকারের ৫০ জনের মন্ত্রিসভায় একটি করে সরকারি গাড়ি ব্যবহার করেন—এ ধরনের মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও উপদেষ্টা রয়েছেন মাত্র ১৩ জন। অন্যরা সবাই একাধিক গাড়ি ব্যবহার করেন।
নিয়মনীতি লঙ্ঘন করে মন্ত্রীরা নিজেরাই শুধু একাধিক গাড়ি ব্যবহার করছেন না, তাদের পিএস, এপিএস ও জনসংযোগ কর্মকর্তার জন্যও গাড়ি বরাদ্দ নিচ্ছেন। সরকারি পরিবহন পুল থেকে মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও উপদেষ্টার ৪৩ জন পিএসের জন্য গাড়ি বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। বিভিন্ন সংস্থা ও প্রকল্প থেকে এপিএস ও জনসংযোগ কর্মকর্তাদের জন্য নেয়া হয়েছে আরও ৬৭টি গাড়ি। এসব গাড়ির তেল, মেরামত খরচ, ড্রাইভারের বেতন—সবই বহন করতে হচ্ছে সরকারকে।
পরিবহন পুল সূত্রে জানা গেছে, এখান থেকে মন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রীদের ৪৪টি, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টাদের ৪টি, সচিব ও সচিব পদমর্যাদার কর্মকর্তাদের ৪৮টি, ভারপ্রাপ্ত সচিবদের ১৬টি, অতিরিক্ত সচিবদের ৮৩টি, যুগ্ম সচিবদের ২২২টি গাড়ি সরবরাহ করা হয়েছে। এছাড়া নিয়মবহির্ভূতভাবে মন্ত্রীরা অবৈধ প্রভাব খাটিয়ে তাদের ৩৮ জন পিএসের জন্য সরকারি গাড়ি বরাদ্দ নিয়েছেন। এভাবে মন্ত্রী ও তাদের পিএসরা গাড়ি দখল করায় ২০৮ জন যুগ্ম সচিবকে গাড়ি দেয়া সম্ভব হয়নি পরিবহন পুলের।
সূত্র জানায়, বর্তমানে সরকারি পরিবহন পুলে ৬২৪টি সচল গাড়ি এবং ২৯৬টি অকেজো গাড়ি রয়েছে।
জানা যায়, বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর পরিবহন পুলের গাড়িতে সন্তুষ্ট না থাকায় সরকার ৯ কোটি ৬৭ লাখ টাকা খরচ করে মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও উপদেষ্টাদের জন্য ৫০টি বিলাসবহুল পারসোনা প্রাইভেটকার ক্রয় করে। ৪৬ জন মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও উপদেষ্টার মাঝে ইতোমধ্যে এ প্রাইভেটকার বণ্টন করা হয়েছে। ৪টি গাড়ি পরিবহন পুল রিজার্ভ রেখেছে নতুন মন্ত্রিপরিষদ গঠন হলে বরাদ্দ দেয়ার জন্য। কিন্তু দেখা যায় ৪৬ জন মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী পারসোনা কার নিলেও মাত্র ১৩ জন এ গাড়ি ব্যবহার করেন। তারা হলেন কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী, বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটনমন্ত্রী গোলাম কাদের, পরিকল্পনামন্ত্রী এয়ার ভাইস মার্শাল একে খন্দকার, স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা. আফম রুহুল হক, ভূমিমন্ত্রী রেজাউল করিম হীরা, তথ্যমন্ত্রী আবুল কালাম আজাদ, ধর্ম প্রতিমন্ত্রী অ্যাড. মোহাম্মদ শাজাহান মিয়া, তথ্য ও যোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী স্থপতি ইয়াফেস ওসমান, শিল্পমন্ত্রী দিলীপ বড়ুয়া, স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী মজিবুর রহমান ফকির, মহিলা ও শিশুবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী বেগম শিরীন শারমিন চৌধুরী ও সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী প্রমোদ মানকিন। অন্যরা ব্যবহার করছেন প্রকল্পের গাড়ি।
১৯৭৩ সালে মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও উপমন্ত্রীদের সুযোগ-সুবিধা সংক্রান্ত রেমুনারেশন অ্যান্ড প্রিভিলেজ অ্যাক্ট প্রণীত হয়। এ অ্যাক্টে স্পষ্ট বলা আছে, মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী অথবা একজন উপমন্ত্রী সার্বক্ষণিক ব্যবহারের জন্য সরকারিভাবে একটি কার (গাড়ি) পাবেন। যার রক্ষণাবেক্ষণ খরচ জোগাবে সরকার। এছাড়া জরুরি অফিসিয়াল কাজের জন্য কিংবা ঢাকার বাইরে নির্ধারিত কোনো অফিসিয়াল সফরে গেলে অতিরিক্ত একটি জিপ গাড়ি তারা ব্যবহার করতে পারবেন। এসব ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের দফতর কিংবা সংস্থা থেকে জিপ গাড়ি সরবরাহ করতে হবে। তবে কোনো কারণে সংশ্লিষ্ট দফতর বা সংস্থা গাড়ি সরবরাহ করতে ব্যর্থ হলে মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী কিংবা উপমন্ত্রীর জরুরি কাজে ব্যবহারের জন্য এ ধরনের জিপ গাড়ি কিনতে অর্থ বরাদ্দ দেবে। অথচ এখন মন্ত্রীরা নিজের জন্য একাধিক গাড়িতো নিচ্ছেনই, উল্টো পিএস, এপিএস, পিআরওর জন্যও সরকারি গাড়ি বরাদ্দ নিচ্ছেন।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ড. আকবর আলি খান অতিরিক্ত সরকারি গাড়ি ব্যবহার প্রসঙ্গে আমার দেশকে বলেন, মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীরা কি সুযোগ-সুবিধা পাবেন, তা রেমুনারেশন অ্যান্ড প্রিভিলেজ অ্যাক্টে বলা আছে। এর বাইরে গাড়ি ব্যবহার আইনসম্মত নয়। কেউ প্রাপ্ত সুযোগের বাইরে গাড়ি ব্যবহার করলে এটি অন্যায় হবে। এ ব্যাপারে যথাযথ কর্তৃপক্ষের ব্যবস্থা নেয়া উচিত। তিনি বলেন, অনেক সময় মন্ত্রীরা নিজেদের নামে না নিয়ে অন্যের নামে গাড়ি নেন। এটাও বন্ধ করা উচিত।
http://www.amardeshonline.com/pages/details/2010/04/01/25331
Sunday, 28 March 2010
দক্ষিণ চট্টগ্রামের ১৯ রুটে পরিবহন ধর্মঘট : জনদুর্ভোগ : আ’লীগ নেতার চাঁদাবাজির প্রতিবাদ
শহীদুল ইসলাম বাবর, দক্ষিণ চট্টগ্রাম
দক্ষিণ চট্টগ্রামের ১৯টি রুটে গতকাল সকাল থেকে শুরু হয়েছে পরিবহন ধর্মঘট। চট্টগ্রাম-কক্সবাজার-টেকনাফ মালিক শ্রমিক সমন্বয় পরিষদ এই পরিবহন ধর্মঘট ডাক দেয়ায় যাত্রীদের দুর্ভোগ চরমে উঠেছে।
জানা গেছে, পরিবহন মালিকের কাছে আওয়ামী লীগের এক নেতা ৫ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে। এই দাবিকৃত চাঁদার টাকা না দিলে পরিবহন চলাচল বন্ধ করে দেয়ারও হুমকি দেয়া হয়। এতে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার-টেকনাফ মালিক শ্রমিক সমন্বয় পরিষদ এ পরিবহন ধর্মঘটের ডাক দেয়।
শাহ আমিন চেয়ারকোচের মালিকের কাছ থেকে কক্সবাজার জেলার ঝিলংজা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আওয়াম লীগ নেতা মুজিবুর রহমানের পাঁচ লাখ টাকা চাঁদা দাবির পরিপ্রেক্ষিতে ডাকা এ ধর্মঘট চলাকালে দক্ষিণ চট্টগ্রামের সাতকানিয়ার কেরানীহাট, লোহাগাড়ার আমিরাবাদ মোটরস্টেশন, তেওয়ারীহাট, চন্দনাইশের দোহাজারী, বাগিচারহাট, খান হাট, পটিয়ার বিভিন্ন মোটরস্টেশনে শত শত শ্রমিক পরিবহন বন্ধ রেখে রাস্তায় নেমে আসে এবং চাঁদাবাজ আওয়ামী লীগ নেতা মুজিবুর রহমানের শাস্তি দাবি করেন। ধর্মঘট চলাকালে সাতকানিয়ার কেরানীহাটে শত শত শ্রমিক জড়ো হয়ে রাস্তার উপর টায়ার পুড়িয়ে যানচলাচল বন্ধ করে দেয় এবং বিভিন্ন স্থান থেকে আসা গাড়ি থেকে যাত্রীদের নামিয়ে দেয়া হয়। ফলে যাত্রীদের পোহাতে হচ্ছে অবর্ণনীয় দুর্ভোগ। এ ব্যাপারে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার-টেকনাফ পরিবহন মালিক শ্রমিক সমন্বয় পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক মোহাম্মদ মুছা জানান, চাঁদাবাজ আওয়ামী লীগ নেতা মুজিবুর রহমানের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি, দুই দিন ধরে শাহ আমিন চেয়ারকোচ চলতে না পারার ক্ষতিপূরণ, পরিবহন ও শ্রমিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত ধর্মঘট অব্যাহত থাকবে। এদিকে সাতকানিয়ার কেরানীহাটে যখন শ্রমিকরা টায়ার পুড়িয়ে বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা যাত্রীবাহী গাড়ির পথরোধ করে যাত্রীদের নামিয়ে দিয়ে উল্লাস প্রকাশ করছিল তখনই সাতকানিয়া ভ্যানে অবস্থানরত থানা পুলিশ সদস্যরা ছিল মূলত নীরব দর্শকের ভূমিকায়। পুলিশের এহেন ভূমিকা দেখে অনেক যাত্রীই ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। পরিবহন ধর্মঘটের বিষয়ে জানতে চাইলে দোহাজারী হাইওয়ে পুলিশের অফিসার ইনচার্জ রফিকুল ইসলাম জানান, কক্সবাজারে সংঘটিত ঘটনাকে কেন্দ্র করে এ ধর্মঘট যতদ্রুত সম্ভব মীমাংসা করা উচিত।
http://www.amardeshonline.com/pages/details/2010/03/29/24794
চাঁদপুরে মানবসম্পদ উন্নয়নের নামে কোটি কোটি টাকা লুটপাট
গিয়াসউদ্দিন মিলন, চাঁদপুর
সাক্ষরজ্ঞান আছে এমন লোকদের সৃজনীমূলক কাজে দক্ষতা বাড়িয়ে মানবসম্পদে পরিণত করার প্রকল্প বাস্তবায়ন না করে সরকারের বিদেশ থেকে আনা ঋণের কোটি কোটি টাকা লুটপাটের খবর পাওয়া গেছে। বেসরকারি সংস্থা ‘ডরপ’ জেলার ৫টি উপজেলায় গত নভেম্বর মাস থেকে এ ধরনের লুটপাট চালাচ্ছে। সরকারের পক্ষে যারা এসব প্রকল্প বাস্তবায়নের তদারকি করার কথা তারাও অজানা কারণে নীরবতা পালন করছে।
গত প্রায় ১ মাস চাঁদপুর সদর উপজেলার বিভিন্ন কেন্দ্র ঘুরে দেখা গেছে, ওই প্রকল্পের জন্যে বাড়ির ছাদে, ঘরের বারান্দায়, সরকারের পরিত্যক্ত গোডাউনে, কোথাও কারও বসতঘরের একাংশে এবং অনেকের অর্ধনির্মিত পরিত্যক্ত ঘরকে কেন্দ্র দেখানো হয়েছে। সরকার যে লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যে কোটি কোটি টাকা দিচ্ছে, সেই প্রশিক্ষণ কাজ একেবারেই না করে টাকা-পয়সা লুট করছে তারা। অনেক কেন্দ্র মাস কিংবা সপ্তাহ ধরে বন্ধ রয়েছে। কোনো কোনো কেন্দ্রে দিন ও রাতে দু’শিফটের মধ্যে এক শিফটে ৫/৬ জন শিক্ষার্থী পাওয়া গেছে। অন্য শিফট কখনোই চলে না। অধিকাংশ কেন্দ্র সহায়ক/সহায়িকা জানে না তাদের মূল কাজ কী। গৃহনির্মাণে কত টাকা বরাদ্দ দেয়া আছে, বিবিধ সুযোগ-সুবিধা কী তাও তাদের জানা নেই। অনেক স্থানেই ঘরের মালিক হচ্ছেন পরিচালনা কমিটির সভাপতি, স্ত্রী শিক্ষিকা এবং তার সন্তান কিংবা নিকটাত্মীয়কে সহায়ক রাখা হয়েছে। ইউনিয়ন ও উপজেলা সুপারভাইজার সপ্তাহে একবারও তাদের কেন্দ্র পরিদর্শন করেননি বলে জানা গেছে। জেলা সহকারি পরিচালক (উপ-আনুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যুরো) মীর হোসেন এসব তথ্য জেনে রীতিমত হতবাক! তিনি ঘোষণা দিয়েছেন এখন থেকে প্রকল্পের কাজ ঠিকমত না হলে তাদের বিল ও বেতন ভাউচারে স্বাক্ষর করবেন না। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শাহীনুর শাহীন খান বলেছেন, এখন থেকে তিনি বিষয়টি ভালোভাবে দেখবেন।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, চাঁদপুর জেলার ৮টি উপজেলায়ই প্রকল্পের কাজ গত নভেম্বর ’০৯ মাস থেকে চালু হয়েছে। এর মধ্যে চাঁদপুর সদর, হাইমচর, মতলব উত্তর, ফরিদগঞ্জ এবং হাজীগঞ্জ উপজেলায় কাজ করছে ‘ডরপ’। কচুয়ায় নারী মৈত্রী, শাহরাস্তিতে পিআরডিএস এবং মতলব দক্ষিণে সিএইচডি কাজ করছে। সেসব উপজেলার চিত্রও একই রকম। প্রতিটি উপজেলায় ৩৪টি করে কেন্দ্র রয়েছে। প্রতি কেন্দ্রে ১৫ থেকে ২৪ বছর বয়সী মহিলা ও পুরুষের দুটি পৃথক দল গঠন করা হয়েছে। প্রতি দলে ৩০ জন করে লোক নেয়া হয়েছে। মহিলা দলের ক্লাস বিকাল ৩টা থেকে ৫টা পর্যন্ত। পুরুষদের সন্ধ্যা ৭টা থেকে ৯টা পর্যন্ত। প্রতি কেন্দ্রে ১টি করে পরিচালনা কমিটি, ১ জন পুরুষ ও ১ জন মহিলা সহায়িকা রয়েছে। ১৭টি কেন্দ্রের জন্য ১ জন সুপারভাইজার, প্রতি উপজেলায় ১ জন সমন্বয়কারী এবং ১ জন জেলা সমন্বয়কারী রয়েছে। কেন্দ্র পরিচালনা কমিটি ছাড়া সমন্বয়কারী ও কেন্দ্র সহায়ক/সহায়িকারা বেতনভুক্ত। প্রতিটি কেন্দ্র নির্মাণ ও প্রয়োজনীয় আসবাবপত্র, বই ইত্যাদির জন্য বরাদ্দ রয়েছে ৬২ হাজার ৫৫০ টাকা। সে হিসেবে চাঁদপুরের ৮টি উপজেলায় শুধু কেন্দ্র প্রস্তুতের জন্য বরাদ্দ দেয়া হয়েছে ৩৪ কেন্দ্র। ৮ উপজেলা=২৭২টি কেন্দ্র। এ হিসেবে ২৭২টি কেন্দ্রে মোট অর্থ ব্যয় হচ্ছে ২৭২–৬২৫৫০=১ কোটি ৭০ লাখ ১৩ হাজার ৬০০ টাকা। এরই মধ্যে উল্লিখিত টাকার প্রায় সিংহভাগ তারা ব্যয় দেখিয়েছে। অথচ ২০ ফুট সাইজের একটি ঘরও তারা নির্মাণ করেনি। প্রতিটি ঘরের জন্য বরাদ্দ ছিল ২৫ হাজার টাকা। ৮ হাজার টাকা মূল্যের ১টি করে টিভি দেয়ার কথা থাকলেও গত ৫ মাসে তা সরবরাহ করা হয়নি। ২ হাজার ৫০০ টাকায় ২০ সেট বই দেয়ার কথা থাকলেও মাত্র ৩০০ টাকায় ২ সেট বই দেয়া হয়েছে। আসবাবপত্র কেনায়ও অনিয়ম করা হয়েছে। যেভাবে চেয়ার-টেবিল দেয়ার কথা তা দেয়া হয়নি। স্টিলের আলমিরা এবং রেডিও দেয়া হয়নি অনেক কেন্দ্রে। ট্রেড বিষয়ক কোর্সে ২০টি বিষয়ের ওপর প্রশিক্ষণ দেয়ার কথা থাকলেও দু’একটি কেন্দ্রে শুধু টেইলারিং ও হাউস ওয়্যারিং ছাড়া আর কিছুই তারা শেখাচ্ছে না।
সরেজমিন অনেক কেন্দ্রই বন্ধ পাওয়া গেছে। কোথাও দু’একজনকে পাওয়া গেলেও তারা কেউই উপরোল্লিখিত কাজ সম্পর্কে কিছুই জানেন না বলে জানিয়েছেন। তারা জানান, কখনও কখনও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা পরিদর্শনে আসার আগে তাদের মোবাইল ফোনে আগাম বার্তা দেয়া হয়। শুধু ওই দিনের জন্য তারা কেন্দ্রের হাজিরা খাতা অনুযায়ী শিক্ষার্থীদের হাজির রাখেন। সাধারণত তারা পাঠ্যবই চেতনায় ১, ২ ও ৩ পড়িয়ে থাকেন। এদের কোনো কেন্দ্রেই ইস্যুভিত্তিক ১২৫টি অনুসারক গ্রন্থ নেই। এগুলো পড়ানোর মতো অনেক সহায়ক/সহায়িকার দক্ষতাও নেই। মানব উন্নয়নের জন্য সাক্ষরতা-উত্তর ও অব্যবহৃত শিক্ষা প্রকল্প-২-এর বেহাল অবস্থা সম্পর্কে জেলা সমন্বয়কারী আবদুল মালেক জানান, ২৫ হাজার টাকায় একটি কেন্দ্র নির্মাণ অত্যন্ত কঠিন। তাছাড়া ওই টাকায় ২০% স্থানীয় কমিটির দেয়ার কথা, বাকি ৮০ ভাগ টাকা একত্রে সংস্থা দিচ্ছে না। যার কারণেই বাড়ি বাড়ি থেকে মানুষের ঘর, কাচারি মাসিক হারে ভাড়া নিয়ে কেন্দ্র করা হয়েছে। তিনি বলেন, কেন্দ্রের টিভি দেয়ার প্রক্রিয়া চলছে। এরই মধ্যে প্রত্যেক কেন্দ্রে রেডিও দেয়া হয়েছে। নিম্নমানের ফার্নিচার দেয়ার বিষয়টি এড়িয়ে গেছেন। কেন্দ্র নিয়মিত পরিদর্শন না হওয়ার ব্যাপারে তিনি বলেন, প্রত্যেক উপজেলায় মাত্র ২ জন সুপারভাইজার। ১ জনকে ১৭টি কেন্দ্র দেখতে হয়। ২ হাজার টাকা বেতন পেয়ে প্রতি মাসে সব কেন্দ্র দেখা খুবই কষ্টকর।
http://www.amardeshonline.com/pages/details/2010/03/29/24796
এলজিইডির ১০১ গাড়ি ক্ষমতাধরদের সেবায়
কাদের গনি চৌধুরী | ঢাকা, সোমবার ২৯ মার্চ ২০১০, ১৫ চৈত্র ১৪১৬, ১২ রবিউসসানি ১৪৩১
সরকার ও সরকারি দলের ক্ষমতাধর ব্যক্তিদের গাড়ি সেবা দিচ্ছে সরকারি সংস্থা এলজিইডি। স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতর অর্থাত্ এলজিইডি নামের এ প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন প্রকল্পের ১০১টি গাড়ি বর্তমানে মন্ত্রী, এমপি ও প্রভাবশালীরা ব্যবহার করছেন। ফলে স্থানীয় পর্যায়ে রাস্তাঘাট, ব্রিজ, কালভার্ট নির্মাণসহ বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ ঠিক মতো পরিচালনা করা যাচ্ছে না। শুধু তাই নয় এসব গাড়ির তেল খরচ, রক্ষণাবেক্ষণ ব্যয়, ড্রাইভারের বেতন সবই দিতে হচ্ছে এলজিইডির প্রজেক্ট থেকে। এ খাতে বছরে সরকারের অতিরিক্ত খরচ হচ্ছে প্রায় ৯ কোটি টাকা।
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতরের গাড়ি ব্যবহারকারীদের তালিকায় মন্ত্রী, এমপি, অ্যাটর্নি জেনারেল, প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের কর্মকর্তা, আমলা এমনকি সরকার সমর্থক কলামিস্টের নামও রয়েছে। একইভাবে মন্ত্রণালয়ের পিও ব্যবহার করছেন এলজিইডির গাড়ি। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় চিঠি দিয়ে ওইসব ব্যক্তিকে ব্যবহারের জন্য এলজিইডিকে গাড়ি সরবরাহ করতে বাধ্য করেছে। ওইসব গাড়ি সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের আত্মীয়-স্বজনের ব্যবহারের কাজেও ব্যবহৃত হচ্ছে। স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতর সূত্রে জানা যায়, এই ১০১টি গাড়ির অধিকাংশই টয়োটা, টয়োটা ভিএক্স এবং টয়োটা প্রাডো।
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতর সূত্র জানায়, এলজিআরডি মন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম ব্যবহারের জন্য নিয়েছেন দুটি টয়োটা ভিএক্স। গাড়ি দুটির নম্বর হচ্ছে ঢাকা মেট্রো ঘ-১১-৩৭৭৯ ও ঢাকা মেট্রো ঘ-১১-৬০৯৯। প্রথম গাড়িটি চালান এলজিইডির ড্রাইভার খালেদ এবং দ্বিতীয়টি চালান ড্রাইভার মজনু। মন্ত্রী হিসেবে তাকে বরাদ্দ দেয়া পরিবহন পুলের গাড়িটি তিনি ফেরত দিয়েছেন বলে ড্রাইভার খালেদ জানান।
সরকারের প্রধান আইন কর্মকর্তা (অ্যাটর্নি জেনারেল) মাহবুবে আলম গাড়ি নিলেও এলজিইডির কাছ থেকে ড্রাইভার নেননি। গাড়িটির নম্বর ঢাকা মেট্রো গ-১১-৫১৬৩। আইন মন্ত্রণালয় অফিশিয়াল চিঠি দিয়ে এলজিইডির কাছ থেকে অ্যাটর্নি জেনারেলের জন্য গাড়িটি নিয়েছেন বলে তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী (প্রশাসন) জানান।
মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী অবসরপ্রাপ্ত ক্যাপ্টেন এবি তাজুল ইসলাম নিয়েছেন ৩টি গাড়ি। একটি ব্যবহার করেন প্রতিমন্ত্রী নিজে। ওই গাড়ির নম্বর ঢাকা মেট্রো গ-১১-৩৭৭৮। এ গাড়ির ড্রাইভার খালেদ জানান, সংস্থাপন মন্ত্রণালয় থেকে প্রতিমন্ত্রীকে দেয়া গাড়িটি তিনি ফেরত দিয়েছেন। বাকি দুটির একটি ব্যবহার করেন প্রতিমন্ত্রীর পিএস সাইফুল ইসলাম বাদল (গাড়ির নম্বর ঢাকা মেট্রো গ-১১-৬৪৭০)। আরেকটি ব্যবহার করেন প্রতিমন্ত্রীর এপিএস (গাড়ির নম্বর ঢাকা মেট্রো গ-১১-১২৬১)।
স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় প্রতিমন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবির নানক নিয়েছেন ৩টি। একটি ব্যবহার করেন প্রতিমন্ত্রী নিজে। ওই গাড়ির নম্বর ঢাকা মেট্রো গ-১১-১৮৯৪। এ গাড়ির ড্রাইভার কামরুজ্জামান জানান, সংস্থাপন মন্ত্রণালয় থেকে প্রতিমন্ত্রীকে দেয়া গাড়িটি তিনি ফেরত দিয়েছেন। বাকি দুটির একটি ব্যবহার করেন প্রতিমন্ত্রীর পিএস মিজানুর রহমান (গাড়ির নম্বর ঢাকা মেট্রো ঘ-১১-২২৮৬)। আরেকটি ব্যবহার করেন প্রতিমন্ত্রীর এপিএস (গাড়ির নম্বর ঢাকা মেট্রো গ-১৯-১৩৫০)।
প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ে রাজনৈতিকভাবে নিয়োগপ্রাপ্ত ৪ বিশেষ কর্মকর্তাকেও দেয়া হয়েছে এলজিইডির গাড়ি। তারা হলেন প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী মাহবুবুল আলম হানিফ (গাড়ির নম্বর ঢাকা মেট্রো গ-১১-৮০৪৫), প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী আবদুস সোবহান গোলাপ (গাড়ির নম্বর ঢাকা মেট্রো গ-১১-৮০৪৬), প্রধানমন্ত্রীর ডেপুটি প্রেস সেক্রেটারি মাহবুবুল আলম শাকিল (গাড়ির নম্বর ঢাকা মেট্রো গ-২১-৯১৬৫), প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা ড. আলাউদ্দিন আহমেদের পিএস মান্নান (গাড়ির নম্বর ঢাকা মেট্রো গ-১১-৬৩৪৯)। প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের জন্য দেয়া হয়েছে আরও তিনটি গাড়ি।
শ্রম ও কর্মসংস্থান এবং প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেন এবং একই মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী মন্নুজান সুফিয়ানও নিয়েছেন এলজিইডির প্রজেক্টের গাড়ি। বাণিজ্যমন্ত্রী অবসরপ্রাপ্ত লে. কর্নেল ফারুক খানকে দেয়া হয়েছে একটি নতুন গাড়ি। দুজন সংসদ সদস্যকেও প্রজেক্টের গাড়ি দিতে হয়েছে। তারা হলেন দেওয়ান ফরিদ গাজী এমপি ও রহমত উল্লাহ এমপি।
সরকারের প্রধান আইন কর্মকর্তা (অ্যাটর্নি জেনারেল) মাহবুবে আলম গাড়ি নিলেও এলজিইডির কাছ থেকে ড্রাইভার নেননি। গাড়িটির নম্বর ঢাকা মেট্রো গ-১১-৫১৬৩। আইন মন্ত্রণালয় অফিশিয়াল চিঠি দিয়ে এলজিইডির কাছ থেকে অ্যাটর্নি জেনারেলের জন্য গাড়িটি নিয়েছেন বলে তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী (প্রশাসন) জানান।
এলজিইডির প্রজেক্টের আরেকটি গাড়ি দেয়া হয়েছে আওয়ামীপন্থী সাংবাদিক আবদুল গাফ্ফার চৌধুরীকে। গাড়িটির নম্বর ঢাকা মেট্রো গ-১১-৭০৯৮। এ গাড়ির ড্রাইভার আমিরুল জানান, গাফ্ফার চৌধুরী দেশের বাইরে থাকলে চিফ ইঞ্জিনিয়ারের নির্দেশ মতো অন্যদের ডিউটি করেন তিনি। বর্তমানে গাফ্ফার চৌধুরী দেশের বাইরে থাকায় নজির চৌধুরী নামের প্রবাসী এক বাংলাদেশীকে গাড়িটি ব্যবহারের জন্য দেয়া হয়েছে। নজির চৌধুরীকে এ গাড়িটি গাফ্ফার চৌধুরীর কথামতো দেয়া হয়েছে বলে জানা যায়।
স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের পিও আবদুল খালেকও সরকারি গাড়ি পেয়েছেন।। মন্ত্রীর দফতরে কাজ করেন তাই তারও একটি সরকারি গাড়ি চাই। মন্ত্রীর দফতরের চাপে পিও খালেককেও দিতে হয়েছে প্রজেক্টের একটি গাড়ি। যে গাড়িটির জন্য সরকারের অহেতুক ব্যয় হচ্ছে বছরে সাড়ে ৭ লাখ টাকা। এ টাকা ব্যয় হচ্ছে তেল, রক্ষণাবেক্ষণ ও ড্রাইভারের বেতন বাবদ। গাড়ির ক্ষয়ক্ষতির হিসাব যোগ করলে এ ব্যয় দ্বিগুণ হবে। এ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী, তাদের পিএস-এপিএস ছাড়াও যুগ্মসচিব থেকে সিনিয়র সহকারী সচিব পর্যন্ত ২৯ কর্মকর্তা বিভিন্ন প্রজেক্টের গাড়ি ব্যবহার করছেন।
এছাড়াও বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের ৪৯ কর্মকর্তাকে এলজিইডির বিভিন্ন প্রজেক্টের গাড়ি দেয়া হয়েছে। সরকারের প্রভাবশালী কর্মকর্তাদের সার্ভিস দেয়ার জন্য ব্যবহৃত হচ্ছে আরও ২৮টি গাড়ি। এলজিইডির চিফ ইঞ্জিনিয়ার একাই ব্যবহার করেন ৫টি গাড়ি। গাড়িগুলো চালান ড্রাইভার কুদ্দুস, আলীম ও মনসুরুল। তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, চিফ ইঞ্জিনিয়ার ব্যবহার করেন দুটি, বাকি তিনটি ব্যবহার করেন চিফ ইঞ্জিনিয়ারের পরিবারের সদস্যরা।
এলজিইডি সূত্র জানায়, প্রতিটি গাড়ির জন্য দৈনিক ২০ লিটার অকটেন দিতে হয় স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতরকে। মাসে ৬০০ লিটার অকটেন বাবদ দিতে হয় ৪৪ হাজার টাকা। এছাড়াও ড্রাইভারের বেতন বাবদ ১০ হাজার টাকা, রক্ষণাবেক্ষণ বাবদ আরও ১০ হাজার টাকা খরচ হয়। গাড়ির ক্ষয়ক্ষতি ধরা হয় মাসে ৬০ হাজার টাকা। এ হিসাবে গাড়িগুলোর পেছনে বছরে ৯ কোটি টাকারও বেশি ব্যয় হয়। আর এ টাকা অঘোষিতভাবে আদায় করা হয় প্রজেক্টগুলো থেকে। ফলে তাদের অনিয়ম ও দুর্নীতির আশ্রয় নিতে হয়। বর্তমানে এলজিইডিতে অর্ধশতাধিক প্রকল্পের কাজ চলছে।
সূত্র জানায়, প্রকল্পের পিপি অনুযায়ী জেলা পর্যায়ে প্রকল্পের কাজে গাড়িগুলো বরাদ্দের কথা থাকলেও সরকারের বিভিন্ন লেভেলের লোকজনকে খুশি রাখতে চিফ ইঞ্জিনিয়ার গণহারে গাড়ি বরাদ্দ দিচ্ছে। অথচ গাড়ির অভাবে অনেক স্থানে প্রকল্পের কাজ ঠিকমতো পরিদর্শন করতে পারছেন না কর্মকর্তারা। কোথাও কোথাও মোটরসাইকেলে চড়ে কর্মকর্তাদের প্রকল্প পরিদর্শনে যেতে হয়। সূত্র জানায়, গাড়ি ব্যবহারের প্রথম শর্ত হলো, প্রকল্পের উন্নয়ন কাজে ব্যবহৃত হবে। প্রজেক্ট শেষ হলে গাড়ি পরিবহনপুলে ফেরত দিতে হবে। পরবর্তী সময়ে সরকার সিদ্ধান্ত নেবে কাকে কোন গাড়ি দেবে। কিন্তু এলজিইডি এর কিছুই করছে না। যিনি গাড়ি বরাদ্দ পেতে পারেন তাকে যেমন দেয়া হচ্ছে, তেমনি সরকারি গাড়ি পাওয়ার অধিকার যাদের নেই তাদেরও বরাদ্দ দেয়া হচ্ছে।
এলজিইডির তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী (প্রশাসন) জাহাঙ্গীর আলম আমার দেশকে জানান, সরকার চাইলে আমরা তো গাড়ি বরাদ্দ না দিয়ে পারি না। এলজিআরডি মন্ত্রণালয় ছাড়াও বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী ও সরকারি কর্মকর্তাদের প্রজেক্টের গাড়ি বরাদ্দ দেয়া যৌক্তিক কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, অফিশিয়াল চিঠি দিয়ে মন্ত্রণালয়গুলো আমাদের কাছ থেকে গাড়ি নিয়েছে। অ্যাটর্নি জেনারেলের জন্য এলজিইডির গাড়ি বরাদ্দ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আইন মন্ত্রণালয় অফিশিয়াল চিঠি দিয়ে গাড়িটি বরাদ্দ নিয়েছে। সাংবাদিক আবদুল গাফ্ফার চৌধুরীকে কোন যুক্তিতে গাড়ি বরাদ্দ দেয়া হয়েছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, সরকার চাইলে আমরা দিতে বাধ্য।
খোঁজ-খবর নিয়ে জানা যায়, আগেও এলজিইডির বিভিন্ন প্রজেক্টের গাড়ি মন্ত্রী ও সচিবরা ব্যবহার করতেন। কিন্তু এবারের মতো গণহারে প্রজেক্টের গাড়ি বাইরে কখনও বরাদ্দ দেয়া হয়নি।
http://www.amardeshonline.com/pages/details/2010/03/29/24889
Saturday, 27 March 2010
সড়ক রক্ষণাবেক্ষণ খাতের ২০০ কোটি টাকার ভাগ-বাটোয়ারা চূড়ান্ত
Manobzamin | Sunday, 28 March 2010
দীন ইসলাম:
দেশের বিভিন্ন জায়গায় তৈরি করা রাস্তা রক্ষণাবেক্ষণ করা হবে। ফেটে যাওয়া জায়গায় প্রলেপ দেয়া হবে। এজন্য বর্তমান অর্থবছরের শেষ দিকে সড়ক রক্ষণাবেক্ষণ খাতের প্রায় ২০০ কোটি টাকা ভাগ-বাটোয়ারার প্রক্রিয়া চূড়ান্ত করেছে যোগাযোগ মন্ত্রণালয়। এজন্য তড়িঘড়ি করে দরপত্র প্রক্রিয়া শেষ করা হচ্ছে। আগামী কয়েক দিনের মধ্যে দরপত্রের সব কাজ শেষে কার্যাদেশ দেয়া হবে। যোগাযোগ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, পিরিয়ডিক মেইনটেন্যান্স প্রোগ্রামের আওতায় সড়ক রক্ষণাবেক্ষণ খাতে এ বছর জিওবি বাবদ ১৯০ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে।
দরপত্র প্রক্রিয়া, মূল্যায়ন কমিটির প্রতিবেদন শেষে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলীর সুপারিশ ও মন্ত্রণালয়ের আনুষঙ্গিক কাজ শেষ হয়েছে। এখন সরকারি ক্রয় সংক্রানত্ম মন্ত্রিসভা কমিটির অনুমোদন বাকি রয়েছে। গত ১৫ই মার্চ মন্ত্রিসভা কমিটির অনুমোদন চেয়ে একটি প্রসত্মাব মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে পাঠিয়েছে যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের সড়ক ও রেলপথ বিভাগ। ওই কমিটির অনুমোদন মিললেই ঠিকাদারদের কার্যাদেশ দেবে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর। অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, রাসত্মা রড়্গণাবেড়্গণে অতীত অভিজ্ঞতা নেই এমন কোম্পানিগুলোর বিপরীতে কার্যাদেশ দেয়ার সুপারিশ করেছে যোগাযোগ মন্ত্রণালয়। এজন্য নানা কাহিনী চালু হয়েছে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরে। ওদিকে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের মূল্যায়ন কমিটি দু’টি কোম্পানির দরপত্র দলিল বাতিল করলেও (নন-রেসপনসিভ) নানা অজুহাতে বাতিল দুই কোম্পানিকেই কাজ দেয়ার সুপারিশ করেছে মন্ত্রণালয়। এজন্য বাদ পড়েছে যোগ্য বিবেচিত কোম্পানিগুলো। অভিযোগ রয়েছে, যোগাযোগমন্ত্রীর এক আত্মীয়, এক হুইপের ভাই ও কয়েকজন প্রভাবশালী ঠিকাদার সড়ক রড়্গণাবেড়্গণ কাজের দরপত্রের দফারফা করছেন। এ সিন্ডিকেটের চাপাচাপিতেই রড়্গণাবেড়্গণ খাতের অর্থ খরচের জন্য তড়িঘড়ি করে দরপত্র আহবান করা হয়। দরপত্র জমা দেয়ার পরই ভাগবাটোয়ার চূড়ানত্ম প্রক্রিয়া শুরম্ন হয়। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে পাঠানো সারসংড়্গেপ সূত্রে দেখা গেছে, ১১টি কোম্পানিকে প্রায় দু’শ’ কোটি টাকার কাজ দেয়ার সুপারিশ করা হয়েছে। এর মধ্যে মেসার্স ইসমাইল হোসেন (তিনটি প্যাকেজ), ইন্ট্রাকো (বিডি) এসোসিয়েটস লিমিটেড, ডবিস্নউজিএমইসি-আরসি জেভি, পূবালী কস্ট্রাকশন কোম্পানি লিমিটেড, সিপিসি- ডিয়ানকো জেভি, আইসিসি লিমিটেড (দুটি), টিএসএল-আরআইবি জেভি, এসইএল- এমএসএ জেভি, এমএম বিল্ডার্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ার্স লিমিটেড, মেসার্স পপুলার আজাজ আনোয়ার জেভি ও মেসার্স মো. মাহফুজ খানকে (দু’টি প্যাকেজ) কার্যাদেশ দেয়ার সুপারিশ করা হয়েছে। সব মিলিয়ে ১৫টি প্যাকেজের বিপরীতে ১৮৭ কোটি ৯৪ লাখ ৬৯ হাজার ২৮৪ দশমিক ৫৮ কোটি টাকার কার্যাদেশ দেয়ার সুপারিশ করেছে যোগাযোগ মন্ত্রণালয়। এর আগে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের দরপত্র মূল্যায়ন কমিটি ১৫টি প্যাকেজের বিপরীতে ১৯১ কোটি ৯৬ লাখ ৩৩ হাজার ৩২৪ টাকার কার্যাদেশ দেয়ার সুপারিশ করে। মূল্যায়ন কমিটির সুপারিশ করা ওরিয়েন্ট ট্রেডিং অ্যান্ড বিল্ডার্স লিমিটেডের দু’টি প্যাকেজের কাজ ও সিপিসি-ডিয়ানকো জেভির দরপ্রসত্মাব বাতিল করে দিয়েছে মন্ত্রণালয়। এর বদলে মেসার্স পপুলার আজাজ আনোয়ার জেভিকে একটি ও মেসার্স মো. মাহফুজ খানকে দু’টি প্যাকেজের কাজ দেয়ার সুপারিশ করা হয়েছে। তিন প্যাকেজের জন্য সাড়ে ২৪ কোটি টাকার সবচেয়ে বড় কাজ দেয়া হচ্ছে এ দুই কোম্পানিকে। বাতিল করা কোম্পানিগুলোর ড়্গেত্রে বলা হয়েছে, সাধারণ মেরামত কাজের জন্য ওইসব কোম্পানির নির্ধারিত অভিজ্ঞতা নেই। এজন্য তাদের দরপত্র বাতিল করা হয়েছে। এর আগে গত বছরের ৬ই অক্টোবর উন্মুক্ত দরপত্র পদ্ধতিতে সড়ক রড়্গণাবেড়্গণ কাজের দরপত্র আহ্বান করা হয়। ১০ই ডিসেম্বর ওই দরপত্র জমা দেয়ার শেষ দিন ধার্য করা হয়। শেষ দিনে ১৫টি প্যাকেজের বিপরীতে ১০২টি দরপত্র পাওয়া যায়। এরপর ১৩ই ডিসেম্বর দরপত্র মূল্যায়ন শুরম্ন করে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের মূল্যায়ন কমিটি। এরপর অতি দ্রম্নততায় যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ে ১৭ই ডিসেম্বর মূল্যায়ন প্রতিবেদন জমা দেয় কমিটি। মূল্যায়ন কমিটি দরপত্রদাতাদের দাখিল করা ১০২টি দরপত্রের মধ্যে ৯২টি দরপত্র গ্রহণযোগ্য বলে বিবেচনা করা হয়। এছাড়া নয়টি দরপত্র অগ্রহণযোগ্য ও একটি দরপত্র ডিসকোয়ালিফাই করা হয়। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে পাঠানো সারসংড়্গেপে বলা হয়েছে, বিভিন্ন অঞ্চলের সড়কে পিরিয়ডিক মেইনটেন্যান্স প্রোগ্রামের আওতায় নিয়মিতভাবে রড়্গণাবেড়্গণ কাজ করা হয়। দেশের যোগাযোগ ব্যবস্থা সুষ্ঠু ও গতিশীল রাখার জন্য সড়কের পিরিয়ডিক মেইনটেন্যান্স কাজ করা একানত্ম প্রয়োজন। ২০০৯- ২০১০ অর্থবছরে পিরিয়ডিক মেইনটেন্যান্সের আওতায় দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের সড়কগুলোর রড়্গণাবেড়্গণের জন্য ১৫টি প্যাকেজের মাধ্যমে ৪৯৯ দশমিক ২৫ কিলোমিটার সড়ক মেরামত করা হবে। এ কাজ বাংলাদেশ সরকার এবং জেডিসিএফের অর্থায়নে শেষ করা হবে। চলতি অর্থবছর পিরিয়ডিক মেইনটেন্যান্স খাতে জিওবি বাবদ ১৯০ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। জেডিসিএফ উৎস থেকে ১৫০ কোটি টাকা সংশোধিত বাজেটে পাওয়া যাবে বলে অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে জানানো হয়েছে। তাই এ ক্রয় প্রসত্মাবে কোন বিদেশী অর্থ নেই।
http://www.mzamin.com/index.php?option=com_content&task=view&id=9500&Itemid=83
দীন ইসলাম:
দেশের বিভিন্ন জায়গায় তৈরি করা রাস্তা রক্ষণাবেক্ষণ করা হবে। ফেটে যাওয়া জায়গায় প্রলেপ দেয়া হবে। এজন্য বর্তমান অর্থবছরের শেষ দিকে সড়ক রক্ষণাবেক্ষণ খাতের প্রায় ২০০ কোটি টাকা ভাগ-বাটোয়ারার প্রক্রিয়া চূড়ান্ত করেছে যোগাযোগ মন্ত্রণালয়। এজন্য তড়িঘড়ি করে দরপত্র প্রক্রিয়া শেষ করা হচ্ছে। আগামী কয়েক দিনের মধ্যে দরপত্রের সব কাজ শেষে কার্যাদেশ দেয়া হবে। যোগাযোগ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, পিরিয়ডিক মেইনটেন্যান্স প্রোগ্রামের আওতায় সড়ক রক্ষণাবেক্ষণ খাতে এ বছর জিওবি বাবদ ১৯০ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে।
দরপত্র প্রক্রিয়া, মূল্যায়ন কমিটির প্রতিবেদন শেষে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলীর সুপারিশ ও মন্ত্রণালয়ের আনুষঙ্গিক কাজ শেষ হয়েছে। এখন সরকারি ক্রয় সংক্রানত্ম মন্ত্রিসভা কমিটির অনুমোদন বাকি রয়েছে। গত ১৫ই মার্চ মন্ত্রিসভা কমিটির অনুমোদন চেয়ে একটি প্রসত্মাব মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে পাঠিয়েছে যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের সড়ক ও রেলপথ বিভাগ। ওই কমিটির অনুমোদন মিললেই ঠিকাদারদের কার্যাদেশ দেবে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর। অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, রাসত্মা রড়্গণাবেড়্গণে অতীত অভিজ্ঞতা নেই এমন কোম্পানিগুলোর বিপরীতে কার্যাদেশ দেয়ার সুপারিশ করেছে যোগাযোগ মন্ত্রণালয়। এজন্য নানা কাহিনী চালু হয়েছে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরে। ওদিকে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের মূল্যায়ন কমিটি দু’টি কোম্পানির দরপত্র দলিল বাতিল করলেও (নন-রেসপনসিভ) নানা অজুহাতে বাতিল দুই কোম্পানিকেই কাজ দেয়ার সুপারিশ করেছে মন্ত্রণালয়। এজন্য বাদ পড়েছে যোগ্য বিবেচিত কোম্পানিগুলো। অভিযোগ রয়েছে, যোগাযোগমন্ত্রীর এক আত্মীয়, এক হুইপের ভাই ও কয়েকজন প্রভাবশালী ঠিকাদার সড়ক রড়্গণাবেড়্গণ কাজের দরপত্রের দফারফা করছেন। এ সিন্ডিকেটের চাপাচাপিতেই রড়্গণাবেড়্গণ খাতের অর্থ খরচের জন্য তড়িঘড়ি করে দরপত্র আহবান করা হয়। দরপত্র জমা দেয়ার পরই ভাগবাটোয়ার চূড়ানত্ম প্রক্রিয়া শুরম্ন হয়। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে পাঠানো সারসংড়্গেপ সূত্রে দেখা গেছে, ১১টি কোম্পানিকে প্রায় দু’শ’ কোটি টাকার কাজ দেয়ার সুপারিশ করা হয়েছে। এর মধ্যে মেসার্স ইসমাইল হোসেন (তিনটি প্যাকেজ), ইন্ট্রাকো (বিডি) এসোসিয়েটস লিমিটেড, ডবিস্নউজিএমইসি-আরসি জেভি, পূবালী কস্ট্রাকশন কোম্পানি লিমিটেড, সিপিসি- ডিয়ানকো জেভি, আইসিসি লিমিটেড (দুটি), টিএসএল-আরআইবি জেভি, এসইএল- এমএসএ জেভি, এমএম বিল্ডার্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ার্স লিমিটেড, মেসার্স পপুলার আজাজ আনোয়ার জেভি ও মেসার্স মো. মাহফুজ খানকে (দু’টি প্যাকেজ) কার্যাদেশ দেয়ার সুপারিশ করা হয়েছে। সব মিলিয়ে ১৫টি প্যাকেজের বিপরীতে ১৮৭ কোটি ৯৪ লাখ ৬৯ হাজার ২৮৪ দশমিক ৫৮ কোটি টাকার কার্যাদেশ দেয়ার সুপারিশ করেছে যোগাযোগ মন্ত্রণালয়। এর আগে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের দরপত্র মূল্যায়ন কমিটি ১৫টি প্যাকেজের বিপরীতে ১৯১ কোটি ৯৬ লাখ ৩৩ হাজার ৩২৪ টাকার কার্যাদেশ দেয়ার সুপারিশ করে। মূল্যায়ন কমিটির সুপারিশ করা ওরিয়েন্ট ট্রেডিং অ্যান্ড বিল্ডার্স লিমিটেডের দু’টি প্যাকেজের কাজ ও সিপিসি-ডিয়ানকো জেভির দরপ্রসত্মাব বাতিল করে দিয়েছে মন্ত্রণালয়। এর বদলে মেসার্স পপুলার আজাজ আনোয়ার জেভিকে একটি ও মেসার্স মো. মাহফুজ খানকে দু’টি প্যাকেজের কাজ দেয়ার সুপারিশ করা হয়েছে। তিন প্যাকেজের জন্য সাড়ে ২৪ কোটি টাকার সবচেয়ে বড় কাজ দেয়া হচ্ছে এ দুই কোম্পানিকে। বাতিল করা কোম্পানিগুলোর ড়্গেত্রে বলা হয়েছে, সাধারণ মেরামত কাজের জন্য ওইসব কোম্পানির নির্ধারিত অভিজ্ঞতা নেই। এজন্য তাদের দরপত্র বাতিল করা হয়েছে। এর আগে গত বছরের ৬ই অক্টোবর উন্মুক্ত দরপত্র পদ্ধতিতে সড়ক রড়্গণাবেড়্গণ কাজের দরপত্র আহ্বান করা হয়। ১০ই ডিসেম্বর ওই দরপত্র জমা দেয়ার শেষ দিন ধার্য করা হয়। শেষ দিনে ১৫টি প্যাকেজের বিপরীতে ১০২টি দরপত্র পাওয়া যায়। এরপর ১৩ই ডিসেম্বর দরপত্র মূল্যায়ন শুরম্ন করে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের মূল্যায়ন কমিটি। এরপর অতি দ্রম্নততায় যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ে ১৭ই ডিসেম্বর মূল্যায়ন প্রতিবেদন জমা দেয় কমিটি। মূল্যায়ন কমিটি দরপত্রদাতাদের দাখিল করা ১০২টি দরপত্রের মধ্যে ৯২টি দরপত্র গ্রহণযোগ্য বলে বিবেচনা করা হয়। এছাড়া নয়টি দরপত্র অগ্রহণযোগ্য ও একটি দরপত্র ডিসকোয়ালিফাই করা হয়। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে পাঠানো সারসংড়্গেপে বলা হয়েছে, বিভিন্ন অঞ্চলের সড়কে পিরিয়ডিক মেইনটেন্যান্স প্রোগ্রামের আওতায় নিয়মিতভাবে রড়্গণাবেড়্গণ কাজ করা হয়। দেশের যোগাযোগ ব্যবস্থা সুষ্ঠু ও গতিশীল রাখার জন্য সড়কের পিরিয়ডিক মেইনটেন্যান্স কাজ করা একানত্ম প্রয়োজন। ২০০৯- ২০১০ অর্থবছরে পিরিয়ডিক মেইনটেন্যান্সের আওতায় দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের সড়কগুলোর রড়্গণাবেড়্গণের জন্য ১৫টি প্যাকেজের মাধ্যমে ৪৯৯ দশমিক ২৫ কিলোমিটার সড়ক মেরামত করা হবে। এ কাজ বাংলাদেশ সরকার এবং জেডিসিএফের অর্থায়নে শেষ করা হবে। চলতি অর্থবছর পিরিয়ডিক মেইনটেন্যান্স খাতে জিওবি বাবদ ১৯০ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। জেডিসিএফ উৎস থেকে ১৫০ কোটি টাকা সংশোধিত বাজেটে পাওয়া যাবে বলে অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে জানানো হয়েছে। তাই এ ক্রয় প্রসত্মাবে কোন বিদেশী অর্থ নেই।
http://www.mzamin.com/index.php?option=com_content&task=view&id=9500&Itemid=83
তেজগাঁওয়ে রেলওয়ের জমি দখল করে মার্কেট : দোকান ভাগ করে নিল ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মী
শামসুস সালেহীন
রাজধানীর তেজগাঁওয়ে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী, সন্ত্রাসী ও ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীদের যোগসাজশে রেলওয়ের তিন বিঘা জমি দখল করে বিশাল মার্কেট করা হয়েছে। ওয়ার্ড কাউন্সিলর, শীর্ষ সন্ত্রাসী, পুলিশ, ছাত্রলীগ ও যুবলীগ নেতা, শ্রমিক নেতা এবং রেলওয়ের কর্মকর্তারা ভাগবাটোয়ারা করে নিয়েছেন মার্কেটের ১৬০টি দোকান। ওই মার্কেট এখন উদ্বোধনের অপেক্ষায় রয়েছে।
রেলওয়ে ঢাকা জোনের সূত্র জানিয়েছে, তেজগাঁও কভার্ডভ্যান মালিক সমিতির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক আবুল কাশেম ওরফে হাতকাটা কাশেম, শ্রমিক লীগের সাবেক নেতা শামসু ওরফে বাঘ শামসু এবং মকবুল রেলওয়েকে খাজনা দিয়ে ৬৫/১৫০ বর্গফুট জমির বরাদ্দ নিয়ে প্রায় তিন বিঘা জমিতে ১৬০টি আধাপাকা দোকানঘর তুলেছেন। দোকানগুলো ভাগবাটোয়ারা করা হয়েছে ওয়ার্ড কাউন্সিলর শীর্ষ সন্ত্রাসী ও তার সহযোগী পুলিশ, এলাকার ছাত্রলীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, শ্রমিক নেতা এবং রেলওয়ের কর্মকর্তাদের মধ্যে।
ঢাকার বিভাগীয় রেলওয়ের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে আমার দেশকে জানিয়েছেন, রেলওয়ের জমিতে অবৈধভাবে গড়ে ওঠা মার্কেটের ১৬০টি দোকানের মধ্যে যারা দোকানঘর পেয়েছেন তাদের মধ্যে অন্যতম ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের ৩৯ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর শামীম হাসান ৩টি, তার পিএস আলমগীর ২টি, শীর্ষ সন্ত্রাসী আশিক ৪টি, তার সহযোগী পিচ্চি বাবুল ১টি, মোজাম্মেল ১টি, তালুকদার মনির ১টি, আবুল কালাম ২টি, স্টেশনের কামরুল ১টি, করিম ১টি, অপু ১টি, ছাত্রলীগের ওয়ার্ড সভাপতি জিল্লুর রহমান ওরফে জিল্লু ২টি, কভার্ডভ্যান মালিক সমিতির সাবেক সহ-সভাপতি মকবুল ৬টি, কভার্ডভ্যান মালিক সমিতির নেতা ফজলুর রহমান ১৫টি, কভার্ডভ্যান মালিক সমিতির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক হাতকাটা কাশেম ৬টি, ঢাকা মহানগর উত্তর যুবলীগ সহ-সভাপতি বশির আহম্মেদ ওরফে বশির ২টি, স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি আনোয়ার এবং সাধারণ সম্পাদক মোট ২টি, শ্রমিক লীগের সাবেক নেতা বাঘ শামসু ২টি, সফিউল্লাহ শফি ৩টি, বাস স্টেশনের সলু ২টি, রেলওয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নামে ১৫টি, শিল্পাঞ্চল থানার ওসি ওমর ফারুক ২টি এবং কিনে নিয়েছেন আরও ১টি, রেলওয়ে পুলিশের এসআই নজরুল নিজে এবং বিভিন্ন অফিসারকে দেয়ার নামে ১৫টি, আন্ডারগ্রাউন্ড একটি সাপ্তাহিক পত্রিকার সম্পাদক হাবিবুর রহমান হাবিবসহ তথাকথিত সাংবাদিক নামে তিনজন ৩টি এবং ঢাকা মহানগর (উত্তর) স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক ইরান পেয়েছেন ১টি দোকান। এছাড়াও মহাখালী বাস টার্মিনালের নেতা, স্থানীয় সন্ত্রাসী, তেজগাঁও ট্রাক স্ট্যান্ডের নেতা, ট্রাক স্ট্যান্ডের মালিক সমিতির নেতা ও কয়েকটি ট্রান্সপোর্টের মালিক-নেতাও দোকান বরাদ্দ পেয়েছেন বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়। তারা আরও জানিয়েছে, এই তালিকা রেলওয়ের সংশ্লিষ্ট বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কাছে রয়েছে।
রেলওয়ে ঢাকা জোনের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, তেজগাঁও এক নম্বর রেলগেটের পাশে রেলওয়ে মার্কেট ব্যবসায়ী সমিতি জমির খাজনা দিয়ে বরাদ্দ নেয়। তারা ওই জমিতে কাঁচা দোকানঘর নির্মাণ করে ব্যবসা করেন। রেলওয়ের প্রয়োজনে রেলওয়ের জমি থেকে দোকান উচ্ছেদ করার নির্দেশ দেয়া হয়। এরই নির্দেশের প্রেক্ষিতে ওই জমিতে অবস্থানকারী তেজগাঁও এক নম্বর রেলগেট সংলগ্ন রেলওয়ে মার্কেট ব্যবসায়ী সমিতির সব দোকান ১৯৯৯ সালে গুঁড়িয়ে দেয়া হয়। এরপর থেকে রেলওয়ের ওই জমি অব্যবহৃত অবস্থায় পড়ে থাকে।
সুত্র আরও জানায়, উচ্ছেদের পর যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের সচিবের কাছে তেজগাঁও এক নম্বর রেলগেট সংলগ্ন রেলওয়ে মার্কেট ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মাহমুদুল আলম মন্টু তাদের পুনর্বহালের আবেদন করেন। আবেদনে বলা হয়, তারা পাকিস্তান আমল থেকে তেজগাঁও ট্রাক স্ট্যান্ড ও সিএডি সাইডিং সংলগ্ন এলাকায় আইনানুযায়ী খাজনা দিয়ে ব্যবসা করছিলেন। রেলওয়ের প্রয়োজন দেখিয়ে ১৯৯৯ সালে ওই জমি থেকে সব দোকানপাট উচ্ছেদ করা হয়। ফলে ব্যবসায়ীরা পথে বসেন। উচ্ছেদকৃত জমি রেলওয়ের ব্যবহারে না লাগলে তা রেলওয়ে মার্কেট ব্যবসায়ী সমিতিকে আইনানুযায়ী আবার বরাদ্দ দেয়ার অনুরোধ জানানো হয়। কিন্তু রেলওয়ের ল্যান্ড ইউজ প্ল্যান চূড়ান্ত না হওয়ায় রেলওয়ে মার্কেট ব্যবসায়ী সমিতির আবেদন রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের উচ্চপর্যায়ে বিবেচনার জন্য রাখা হয়।
তেজগাঁও এক নম্বর রেলগেটের রেলওয়ে মার্কেট ব্যবসায়ী সমিতির আবেদনের প্রেক্ষিতে রেলওয়ের উপসচিব (রেল উন্নয়ন) শাহ মোঃ ইমদাদুল হক লিখিত নির্দেশ দিয়ে বলেছেন, তেজগাঁও ট্রাকস্ট্যান্ড ও সিএডি সাইডিং সংলগ্ন এলাকায় সম্প্রতি রেলওয়ে নিরাপত্তা দেয়ালের অভ্যন্তরে উচ্ছেদকৃত খালি ভূমি ক্ষতিপূরণ খাজনা দেয়ার ব্যবস্থা চলছে। রেলওয়ের সব নিয়ম-কানুন উপেক্ষা করে বিভাগীয় ভূসম্পত্তি কর্মকর্তা (ডিও) মোহাম্মদ আমিন বদলি হওয়ার পর আগের তারিখে (ব্যাক ডেটে) স্বাক্ষর করে কিছু ব্যক্তির কাছে ক্ষতিপূরণ খাজনা আদায় করে তাদের বরাদ্দ কাগজপত্র দিয়েছেন। ২০০৯ সালের ৮ নভেম্বর সিইও (পূর্ব) ক্ষতিপুরণ ফি আদায় বন্ধ ও সেখানে অবৈধভাবে গড়ে ওঠা অবকাঠামো অপসারণ ও উচ্ছেদের জন্য ঢাকার বিভাগীয় ভূসম্পত্তি কর্মকর্তাকে নির্দেশ দেন। ওই কর্মকর্তা রেলওয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার নির্দেশ পালন না করে উেকাচ নিয়ে ক্ষতিপূরণ ফি আদায় করে লাইসেন্স দিয়েছেন বলে রেলওয়ের উপসচিব (রেল উন্নয়ন) শাহ মোঃ ইমদাদুল হকের চিঠিতে উল্লেখ করা হয়। তিনি চিঠিতে বিষয়টি তদন্ত করে প্রকৃত দোষীদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ ও সরকারি সম্পত্তির দখল রক্ষার্থে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়ার নির্দেশ দেন।
এ ব্যাপারে ঢাকা সিটি করপোরেশনের ৩৯ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর শামীম হাসান দোকান বরাদ্দ পাওয়ার কথা স্বীকার করে আমার দেশকে জানান, তার কাছ থেকে এলাকার বিএনপি নেতারাও এখন দোকান চাইছেন। তার পিএস দোকান পেয়েছেন কিনা তা তিনি জানেন না বলে জানান। ফতুল্লা শিল্পাঞ্চল থানার ওসি ওমর ফারুক তার নামে দোকান বরাদ্দের কথা অস্বীকার করে আমার দেশকে বলেন, তিনি ব্যবসা করতে নয়, এখানে আছেন চাকরি করতে। কে ওই মার্কেট করছে, কারা এর সঙ্গে জড়িত—তা তিনি জানেন না বলে জানান। কমলাপুর রেল পুলিশের এসআই নজরুলকে গতকাল বারবার চেষ্টা করেও ফোনে পাওয়া যায়নি।
http://www.amardeshonline.com/pages/details/2010/03/28/24777
আবাসিক হলের কক্ষে ছাত্রলীগের কার্যালয়!
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় আসাদুর রহমান, Kalerkantho ঢাকা, রবিবার, ১৪ চৈত্র ১৪১৬, ১১ রবিউস সানি ১৪৩১, ২৮ মার্চ ২০১০
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়কক্ষে ঢুকে দক্ষিণ দিকের দেয়ালে তাকালে চোখে পড়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছবি। এর নিচে লম্বা এক টেবিল। চারপাশে অনেক চেয়ার। টেবিলের ওপর কাগজপত্র। পশ্চিম দিকের দেয়াল ঘেঁষে বেঞ্চ। এটি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের মাদার বখ্শ হলের ১০১ নম্বর কক্ষ, হল শাখা ছাত্রলীগের কার্যালয়। এখানেই চলছে সাংগঠনিক কার্যক্রম।
একই অবস্থা শহীদ সোহরাওয়ার্দী হলেও। এ হলে ছাত্রলীগের কার্যালয় ১৬২ নম্বর কক্ষে। মাদার বখ্শ হলের মতো এখানেও সাঁটানো হয়েছে বঙ্গবন্ধু ও প্রধানমন্ত্রীর ছবি। সভা করার জন্য এখানে রয়েছে কনফারেন্স টেবিল। আছে বসার সুব্যবস্থা। হলের ছাত্ররা জানান, ১০-১২ দিন আগে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা ওই কক্ষটিকে সংগঠনটির কার্যালয় বানায়।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ছাত্রলীগের এক কর্মী কালের কণ্ঠকে বলেন, 'আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের সব হলেই আমাদের অফিস বানাতে চেয়েছি। কিন্তু মিডিয়াতে এলে হয়তো তা আর সম্ভব হবে না।'
নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষার্থী বলেন, ছাত্রলীগ এখন শিবিরের পথেই হাঁটতে শুরু করেছে। দলাদলি, মারামারি, চাঁদাবাজির পর এবার তারা শিক্ষার্থীদের আবাসিক হলে রাজনৈতিক কার্যালয় বানাতে শুরু করেছে। অথচ বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০ হাজারেরও বেশি শিক্ষার্থী আবাসন সংকটে ভুগছে।
সাকের আল-মাহমুদ নামে এক শিক্ষার্থী কালের কণ্ঠকে বলেন, 'আমরা শিবিরমুক্ত ক্যাম্পাস চাই। কিন্তু ছাত্রলীগকে শিবিরের ভূমিকায় দেখতে চাই না।'
শহীদ সোহরাওয়ার্দী হলের আবাসিক ছাত্র ও বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সহসভাপতি রেদোয়ান আহমেদ শুভ্র বলেন, 'আমি বিষয়টি জানতাম না। যদি ঘটনা সত্যি হয়, তবে এ ব্যাপারে অবশ্যই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।'
মাদার বখ্শ হলের ছাত্রলীগ কর্মী কাজী শাহনেওয়াজ টোকন আবাসিক কক্ষে সংগঠনের কার্যালয় বানানোর বিষয়টি অস্বীকার করেন। তিনি বলেন, 'এটা আসলে দৃষ্টিভঙ্গির ব্যাপার। বঙ্গবন্ধু বা প্রধানমন্ত্রীর ছবি যে কেউ লাগাতে পারে।'
রাবি শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মাজেদুল ইসলাম অপু বলেন, 'এগুলোকে ছাত্রলীগের কার্যালয় বলা যাবে না। এর পরও আমি এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেব।'
মাদার বখ্শ হলের প্রাধ্যক্ষ বলেন, 'আমার হলে ছাত্রলীগ কর্মীরা একটি কুইজ প্রতিযোগিতা করার জন্য ওই রুমটা সাজিয়েছে। তারা সেখানে কোনো রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড চালাচ্ছে না।'
Wednesday, 24 March 2010
Minister for takeover of all Jamaat businesses
Sat, Mar 20th, 2010 11:08 pm BdST
Dhaka, March 20 (bdnews24.com) — As the government prepares for war crimes trials, state minister for law Quamrul Islam has proposed the takeover of all money making entities linked with opposition party Jamaat-e-Islami, whose leaders have been accused of 1971 war crimes.
"We should remain vigilant so that no one can influence war crimes trial," Quamrul said at a meeting in the capital on Saturday.
Justifying the need to seize Jamaat's businesses, Quamrul said: "These murderers will try everything including using their money to save them. Jamaat has banks, insurance companies, hospitals and many other entities, which earn crores of money.
"Earlier they used to spend the money to fund the militants. Now they will spend the money to stop the trial," the state minister added.
The meeting was arranged by the Metropolitan Awami League in response to the recent comment by a leader of the pro-Jamaat student body Islami Chhatra Shibir, that Jamaat chief Nizami was facing "the same kind of lies and conspiracy that the prophet Hazrat Muhammad (PBUH) had faced".
AL presidium member and agriculture minister Matia Chowdhury, who also spoke at the meeting, was scathing about Jamaat. "They don't believe in Islam. They divert people and do irreligious works in the name of Islam," she said.
Local government state minister Jahangir Kabir Nanok demanded that Jamaat should be "banned", adding that "the institutions that created militancy by providing funds, must also be banned."
Referring to the main opposition BNP, of which Jamaat is a coalition partner, Nanok said, "Don't create any obstacles on the way to the current development in the country. Such obstruction won't result in any good."
General secretary of metropolitan AL Mofazzal Hossain Chowdhury Maya also asked the leaders and activists to be united on the streets "to ban Jamaat-Shibir politics".
'WAR CRIMES TRIALS THIS MONTH'
Meanwhile, State minister for home affairs Samsul Haque Tuku, speaking in Pabna district, warned that "the top war criminal suspects", indirectly referring to Jamaat leaders, would be the first to be tried.
Tuku speaking at a programme in Pabna district, said war crime trials would start "this month".
He also said Jamaat leaders, including chief Matiur Rahman Nizami, secretary general Ali Ahsan Mohammad Mujahid, Jamaat executive committee members Delwar Hossain Saidee, Abdus Sobhan, former Jamaat chief Golam Azam, and assistant secretary general Kamaruzzaman were "branded as the top war criminals".
"Even though the previous governments pardoned them, they will not be let off the hook this time," the state minister said.
http://www.bdnews24.com/details.php?cid=2&id=156323&hb=top
Dhaka, March 20 (bdnews24.com) — As the government prepares for war crimes trials, state minister for law Quamrul Islam has proposed the takeover of all money making entities linked with opposition party Jamaat-e-Islami, whose leaders have been accused of 1971 war crimes.
"We should remain vigilant so that no one can influence war crimes trial," Quamrul said at a meeting in the capital on Saturday.
Justifying the need to seize Jamaat's businesses, Quamrul said: "These murderers will try everything including using their money to save them. Jamaat has banks, insurance companies, hospitals and many other entities, which earn crores of money.
"Earlier they used to spend the money to fund the militants. Now they will spend the money to stop the trial," the state minister added.
The meeting was arranged by the Metropolitan Awami League in response to the recent comment by a leader of the pro-Jamaat student body Islami Chhatra Shibir, that Jamaat chief Nizami was facing "the same kind of lies and conspiracy that the prophet Hazrat Muhammad (PBUH) had faced".
AL presidium member and agriculture minister Matia Chowdhury, who also spoke at the meeting, was scathing about Jamaat. "They don't believe in Islam. They divert people and do irreligious works in the name of Islam," she said.
Local government state minister Jahangir Kabir Nanok demanded that Jamaat should be "banned", adding that "the institutions that created militancy by providing funds, must also be banned."
Referring to the main opposition BNP, of which Jamaat is a coalition partner, Nanok said, "Don't create any obstacles on the way to the current development in the country. Such obstruction won't result in any good."
General secretary of metropolitan AL Mofazzal Hossain Chowdhury Maya also asked the leaders and activists to be united on the streets "to ban Jamaat-Shibir politics".
'WAR CRIMES TRIALS THIS MONTH'
Meanwhile, State minister for home affairs Samsul Haque Tuku, speaking in Pabna district, warned that "the top war criminal suspects", indirectly referring to Jamaat leaders, would be the first to be tried.
Tuku speaking at a programme in Pabna district, said war crime trials would start "this month".
He also said Jamaat leaders, including chief Matiur Rahman Nizami, secretary general Ali Ahsan Mohammad Mujahid, Jamaat executive committee members Delwar Hossain Saidee, Abdus Sobhan, former Jamaat chief Golam Azam, and assistant secretary general Kamaruzzaman were "branded as the top war criminals".
"Even though the previous governments pardoned them, they will not be let off the hook this time," the state minister said.
http://www.bdnews24.com/details.php?cid=2&id=156323&hb=top
Tuesday, 23 March 2010
পুকুর দখল আ’লীগ ক্যাডারদের : তিন লাখ টাকার মাছ লুট
রাজশাহীতে ৫ বিঘার পুকুর দখল আ’লীগ ক্যাডারদের : তিন লাখ টাকার মাছ লুট, মেয়রকে জানিয়েও কাজ হয়নি
সরদার এম. আনিছুর রহমান, রাজশাহী
রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের মাত্র ৫০ গজ দূরে অবস্থিত সাড়ে ৫ বিঘা জমির বহু পুরনো এক বিশাল পুকুর। পাশের গৌরহাঙ্গা মসজিদের মুসল্লিরা এক সময় এটি অজুর কাজে ব্যবহার করতেন। চারপাশের এলাকাবাসীও এর পানি ব্যবহার করত। ঐতিহ্যবাহী এ পুকুরের অনেক সুনাম ছিল। অতীতে এক সময় নগরবাসী এ পুকুরের পানি পান করত এবং পানি দিয়ে ডাল পাক করে খেত বলে জানা গেছে। কিন্তু স্থানীয় একটি ভূমিগ্রাসীর কারণে ওই পুকুরটি আজ নানা সমস্যায় জর্জরিত। পুকুরটি দখলে নিতে চতুর্দিক থেকে প্রস্রাব-পায়খানার লাইন দিয়েছে। পুকুর পাড়েই গড়ে তুলেছে গরুর খামার। ফেলা হচ্ছে নানা আবর্জনা। এতে পুকুরের পানি পানে অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। পৈতৃক উত্তরাধিকার সূত্রে এর মালিক ছিলেন নগরীর ঘোড়ামারা সাহেবাবাজার এলাকার ব্যবসায়ী রওশন বাচ্চু। কিন্তু এলাকার একটি ভূমিগ্রাসী চক্রের কারণে তিনি বাপ-দাদার এ ঐতিহ্যবাহী পুকুরটি আর ধরে রাখতে পারলেন না। আজ থেকে ৬ বছর আগে তিনি পুকুরটি ৬০ লাখ টাকার বিনিময়ে নগরীর স্বনামধন্য ব্যবসায়ী রাজশাহী চেম্বারের সাবেক সভাপতি হাসেনঃ আলী ও ব্যবসায়ী ইমরুল কায়েসের কাছে বিক্রি করে দেন। এরপরও এলাকার ওই চক্রটি থামেনি। গত কয়েক বছর কিছুটা নীরব থাকলেও মহাজোট সরকার গঠনের পর তারা এ পুকুরটি দখলে আবারও তত্পর হয়ে ওঠে।
সম্প্রতি ওই এলাকার আওয়ামী লীগ নেতা আলাউদ্দিন, ওসমান খান ও রহমান খান পুকুরটি রাতারাতি দখল করে নেন। তারা রাজশাহীর মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন ও মহানগর আওয়ামী লীগের ছত্রছায়ায় পুকুরটি জোরপূর্বক দখল করে নেন বলে অভিযোগ উঠেছে। দখল করেই তারা ক্ষ্যান্ত হননি, পুকুর থেকে ৩ লাখ টাকার মাছ লুট করে নিয়ে গেছেন। এ ব্যাপারে মেয়র লিটন ও আওয়ামী লীগ নেতাদের জানিয়েও কোনো কাজ হয়নি বলে জানা গেছে।
এর আগেও পুকুরের মালিক ঘোড়ামারা এলাকার রওশন বাচ্চু বলেন, এটা আমার পৈতৃক সম্পত্তি ছিল। কিন্তু ওই এলাকার কিছু লোকের অত্যাচারে ৬ বছর আগে তিনি ব্যবসায়িক ইমরুল কায়েস ও হাসেন আলীর কাছে বিক্রি করে দিয়েছেন। তিনি আরও বলেন, এ জমির কোনো সমস্যা ছিল না। কিন্তু ভূমিগ্রাসী চক্রটি আমাকে পুকুরটি আবাদ করতে দেয়নি।
ইমরুল কায়েস ও হাসেন আলী পুকুরটি কেনার পর ৭৫ হাজার টাকা বার্ষিক হারে একই এলাকার আবদুস সামাদের কাছে লিজ দেন। সামাদ যথারীতি পুকুরে মাছ চাষ করে ব্যবসা করে আসছিলেন। আবদুস সামাদ জানান, আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতাসীন হওয়ার পর থেকে স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও যুবলীগ নেতাকর্মীরা অত্যাচার শুরু করে। প্রথমে তারা পুকুর থেকে মাছ ধরার সময় বড় বড় মাছ জোরপূর্বক নিয়ে যেত। কিন্তু কয়েক মাস আগে থেকে তারা ৩ হাজার টাকা হারে চাঁদা দাবি করে। চাঁদা দিতে রাজি না হওয়ায় তারা পুকুরে মাছ ধরতে বাধা দেয়। একপর্যায়ে গত ডিসেম্বরে আমি পুকুরে মাছ ধরতে গেলে তারা জেলেদের জালসহ বোয়ালিয়া থানায় নিয়ে যায়। পরে দেড় ঘণ্টা পর জেলেদের ছেড়ে দিয়ে ওসি জানান, বিষয়টি মেয়র লিটনের দফতরে সমাধা হবে। কিন্তু বিষয়টি সমাধানের আশ্বাস দিয়ে মেয়র লিটন সেই থেকে গড়িমসি করছেন। মেয়র বিষয়টি সমাধানের জন্য মহানগর কোষাধ্যক্ষ শামসুজ্জামান আউয়ালকে দায়িত্ব দিয়েছেন। সূত্রমতে, আউয়াল পুকুরটি এখন স্থানীয় আওয়ামী লীগ ক্যাডারদের মধ্যে ভাগ-বাটোয়ারা করে দিয়েছেন। এতে মালিকানা হারানোর শঙ্কায় রয়েছেন পুকুরের মূল মালিকরা। এদিকে লিজ গ্রহীতা আবদুস সামাদও পুকুরের লাখ লাখ টাকার মাছ হারিয়ে হতবাক হয়ে পড়েছেন। তিনি নেতাদের দ্বারে দ্বারে ঘুরেও এর কোনো সুবিচার পাচ্ছেন না। তিনি বলেন, এ ব্যাপারে থানায় অভিযোগ করেও কোনো বিচার পাননি। এদিকে কাউকে কোনো কিছু না জানিয়ে ওই চক্রটি ক’দিন আগে প্রায় আড়াই লাখ টাকার মাছ ধরে বিক্রি করেছে।
গতকাল দুপুরেও তারা প্রায় এক লাখ টাকার মাছ ধরেছে বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়। মহানগর আওয়ামী লীগের ১৩ নম্বর ওয়ার্ড সেক্রেটারি তৌহিদুজ্জামান তৌহিদ আলাউদ্দিনকে আওয়ামী লীগের কর্মী বলে স্বীকার করেন। এ ব্যাপারে আওয়ামী কর্মী আলাউদ্দিন বলেন, এটা নিজকর সম্পত্তি-প্রান্তশালা স্টেট, কেউ ইচ্ছা করলেই ব্যক্তিমালিকানায় নিতে কিংবা ক্রয়-বিক্রয় করতে পারে না। এটা জনগণের সম্পত্তি। পুকুর দখল এবং মাছ লুট করার বিষয়ে তিনি বলেন, আমার বিরুদ্ধে এ অভিযোগ মিথ্যা, বানোয়াট ও ভিত্তিহীন। কে বা কারা মাছ ধরেছে তা আমি জানি না। এ বিষয়ে রাজশাহীর ভূমি অফিসে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পুকুরটি ব্যক্তিমালিকানা সম্পত্তি। এছাড়া পুকুরটি ইমরুল কায়েস ও হাসেন আলীর নামেই দলিল এবং রেকর্ড খারিজ হয়েছে।
এ ব্যাপারে পুকুরের এক মালিক রাজশাহী চেম্বারের হাসেন আলী পুকুরের মালিকানা দাবি করে বলেন, এলাকার কিছু লোক ঝামেলা করছে। এ ব্যাপারে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। তিনি আরও বিস্তারিত জানতে তার ভাই পুকুরের অংশীদার ব্যবসায়ী ইমরুল কায়েসের সঙ্গে যোগাযোগ করার পরামর্শ দেন। ব্যবসায়ী ইমরুল কায়েস বলেন, টাকা দিয়ে পুকুর কেনার পরও অযথা জামেলা পোহাতে হচ্ছে। আলাউদ্দিন অযথা হয়রানি করছেন। তিনি মেয়রের কাছে বিষয়টি জানানোর কথা স্বীকার করে বলেন, মেয়র সাহেব আউয়ালকে দায়িত্ব দিয়েছেন এর সমাধা করার জন্য। কিন্তু দীর্ঘদিনেও এর সমাধা হচ্ছে না।
বিষয়টি মীমাংসা করে দেয়ার জন্য মেয়র তাকে দায়িত্ব দেয়ার কথা স্বীকার করে মহানগর আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ শামসুজ্জামান আউয়াল বলেন, আমি তাদের সঙ্গে কথা বলেছি। আমি তাদের বলেছি, এ নিয়ে কোনো ঝুটঝামেলা না করে তোমরা সবাই মিলে করে খাও। এ ব্যাপারে গতকাল দুপুরে মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটনের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি। তার মোবাইল ফোনে কল করা হলে এপিএস জানান, স্যার মিটিংয়ে আছেন।
http://www.amardeshonline.com/pages/details/2010/03/24/24176
Thursday, 18 March 2010
একটি সইয়ের দাম ৩৫ হাজার টাকা!
Shamokal | শুত্রুবার | ১৯ মার্চ ২০১০ | ৫ চৈত্র ১৪১৬ | ২ রবিউস সানি ১৪৩১
মোহন আখন্দ, বগুড়া ব্যুরো
'স্লিপের এই স্বাক্ষরটি কার তা জানি না। শুধু জানি, বিশেষ স্বাক্ষরযুক্ত স্লিপটি বিআরটিএ অফিসে জমা না দিলে অটোরিকশার রেজিস্ট্রেশন পাওয়া যাবে না। অনেক ঘুরে ছাত্রলীগের এক নেতার কাছ থেকে ৩৫ হাজার টাকায় স্লিপটি কিনতে হয়েছে'_ বললেন, জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের বগুড়ার এক নেতা।
রেজিস্ট্রেশন হাতছাড়া হওয়ার আশঙ্কায় নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ছাত্রদলের ওই নেতা জানান, ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীরা পাঁচ থেকে ১০ হাজার টাকা ছাড় পেলেও সাধারণ মানুষ এবং ভিন্ন দলের নেতাকর্মীদের জন্য স্লিপের রেট নির্দিষ্ট। গত ২৯ ডিসেম্বর জেলা আঞ্চলিক সড়ক পরিবহন কমিটির (আরটিসি)
সভায় বগুড়ায় নতুন করে ৩০০ সিএনজিচালিত অটোরিকশার রেজিস্ট্রেশন দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এর মধ্যে ২২০টিই বগুড়ায় আওয়ামী লীগের এক শীর্ষ নেতা নিজের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নিয়েছেন। এ বাণিজ্য নির্বিঘ্ন করতে তিনি আরটিসিতে রেজিস্ট্রেশন প্রদান সংক্রান্ত উপ-কমিটিতে অনুগত চারজনকে সদস্য হিসেবে অন্তর্ভুর্ক্ত করেন। তাদের তিনজনই আওয়ামী লীগের জেলা পর্যায়ের নেতা। রেজিস্ট্রেশন বাণিজ্য নিয়ন্ত্রণের জন্য প্রভাবশালী ওই নেতা স্লিপ পদ্ধতি চালু করেন। নিজের এক আত্মীয়ের সই এবং তার দেওয়া ক্রমিক নম্বরযুক্ত ছোট্ট সাদা কাগজের ওই স্লিপ ছাড়া কাউকে রেজিস্ট্রেশন না দেওয়ার জন্য তার পক্ষ থেকে বিআরটিএ কর্মকর্তাদের জানিয়ে দেওয়া হয়েছে।
বিআরটিএ সূত্র জানায়, বিশেষ সই ও ক্রমিক নম্বরযুক্ত ওই স্লিপটি কেউ যাতে নকল করে রেজিস্ট্রেশন করে নিতে না পারে সেজন্য একটি কপি সংশিল্গষ্ট কর্মকর্তার কার্যালয়ে রাখা হয়েছে। অনুগত দলীয় নেতাকর্মীদের মাধ্যমে বিক্রি করা স্লিপ কেউ নিয়ে গেলে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা আগে সেটি মূল স্লিপের সঙ্গে মিলিয়ে তারপরই অনুমোদনের জন্য ছাড় করেন।
বিআরটিএ কর্মকর্তারা জানান, গত জানুয়ারি থেকে ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি পর্যন্ত ১৩০টি রেজিস্ট্রেশন বাবদ অর্ধ কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়া হয়েছে। তবে গত ১৭ ফেব্রুয়ারি রেজিস্ট্রেশন প্রদানকারী কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগে মামলার পর থেকে রেজিস্ট্রেশন প্রদান বন্ধ রয়েছে।
নির্ধারিত সময়ে আবেদনকারীদের বাদ রেখে দিনকয়েক আগে আবেদন জমা নিয়ে রেজিস্ট্রেশন প্রদানের অভিযোগে জেলার শাজাহানপুর উপজেলার জাহাঙ্গীর আলম লিটন ও সদর উপজেলার পালশা এলাকার আবু সাঈদ জেলার প্রথম যুগ্ম জজ আদালতে আটজনের বিরুদ্ধে মামলা করেন। মামলায় অভিযোগ করা হয়, নির্ধারিত সময়ে আবেদন করে সরকারি খাতে নির্ধারিত টাকা জমা দেওয়ার পরও তাদের রেজিস্ট্রেশন দেওয়া হচ্ছে না। মামলায় আরটিসির সভাপতি হিসেবে ডিসিসহ আট বিবাদির মধ্যে আছেন কমিটির সদস্য আওয়ামী লীগ নেতা আকতারুজ্জামান ডিউক, একই দলের নেতা প্রদীপ কুমার রায়, রুহুল আমিন ও বগুড়া মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ কবির আহম্মেদ মিঠু।
গত বছরের অক্টোবর পর্যন্ত ছয় মাসে রেজিস্ট্রেশনের জন্য চার হাজার ২০০ আবেদন জমা হয়। পুরনো ওইসব আবেদনের মধ্য থেকে রেজিস্ট্রেশন প্রদানের দাবি উঠলেও ২০০৯ সালের ২৯ অক্টোবর পুনর্গঠিত আরটিসির সভায় আকস্মিকভাবে আগের সব আবেদন বাতিল করে মাত্র সাত দিনের নোটিশে আবার আবেদন গ্রহণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। গত ২ থেকে ৮ নভেম্বর নির্ধারিত সময়ের মধ্যে দুই হাজার ১৬০টি আবেদন জমা পড়ে। যাচাই-বাছাই শেষে রেজিস্ট্রেশনের জন্য মনোনীত আবেদনকারীদের নামের তালিকা প্রকাশের নিয়ম থাকলেও তা মানা হয়নি। রেজিস্ট্রেশন নেওয়ার ক্ষেত্রে স্লিপ বাণিজ্য সম্পর্কে বিআরটিএ বগুড়ার সহকারী পরিচালক গিয়াস উদ্দিন সমকালকে বলেন, 'আপনাদের মতো স্লিপের বিষয়টি আমিও শুনেছি, তবে দেখিনি।' তার কার্যালয়ে সংরক্ষিত একটি স্লিপ দেখে রেজিস্ট্রেশন দেওয়া হচ্ছে এমন অভিযোগ এড়িয়ে গিয়ে তিনি বলেন, স্লিপ নিয়ে তিনি কাউকে কোনো রেজিস্ট্রেশন দেননি।
Wednesday, 17 March 2010
সরিয়ে দেওয়া হচ্ছে ৬ ভিসিকে
সাবি্বর নেওয়াজ |Shamokal বৃহস্পতিবার | ১৮ মার্চ ২০১০ | ৪ চৈত্র ১৪১৬ | ১ রবিউস সানি ১৪৩১
দেশের সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শীর্ষ প্রশাসনে শিগগিরই বড় ধরনের পরিবর্তন আসছে। উপাচার্য, উপ-উপাচার্য ও কোষাধ্যক্ষ পদে রদবদল ও নতুন নিয়োগ দেওয়ার বিষয়টি গভীরভাবে চিন্তা করছে সরকার। ইতিমধ্যে ছয়টি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য পদে পরিবর্তন আনার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সঙ্গে পরামর্শ করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। পাশাপাশি কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য ও কোষাধ্যক্ষের শূন্য পদে নতুন মুখ আসতে পারে। মন্ত্রণালয় সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ও একাডেমিক কার্যক্রমে গতিশীলতা আনতে সরকার নতুন এ রদবদলের চিন্তা করছে। দেশে বর্তমানে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ৩৩টি। এর মধ্যে ৩১টি পূর্ণাঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়। বাকি দুটি এখনও নির্মাণ প্রকল্পাধীন। এ দুটি হলো_ বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় এবং গোপালগঞ্জের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়। ৩১টি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে বর্তমানে ৮টিতে কোনো ট্রেজারার নেই। আর ২০টি বিশ্ববিদ্যালয়
চলছে কোনো প্রোভিসি ছাড়াই। যে ৬টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য পদে পরিবর্তন আনার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে তারা হলেন_ বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) উপাচার্য প্রফেসর ড. এএমএম শফিউল্লাহ, ঢাকা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (ডুয়েট) উপাচার্য প্রফেসর ড. এম সবদার আলী, পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (পবিপ্রবি) উপাচার্য প্রফেসর সাখাওয়াত হোসেন, রাজধানীতে অবস্থিত শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শেকৃবি) উপাচার্য প্রফেসর ড. শাহ-ই-আলম, দিনাজপুরের হাজী দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (হাবিপ্রবি) উপাচার্য প্রফেসর ড. আফজাল হোসেন এবং চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি অ্যান্ড অ্যানিমাল সায়েন্সেস বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. নীতিশ চন্দ্র দেবনাথ। জানা গেছে, এ ছয়জনকেই বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে নিয়োগ করা হয়েছিল। ডুয়েটের ভিসি সবদার আলী বিশ্ববিদ্যালয়ে সরকার সমর্থিত শিক্ষক-কর্মচারী ও ছাত্রলীগের সমর্থন হারিয়েছেন।
শেকৃবিতে অভ্যন্তরীণ নানা সংকট সামাল দিয়ে উঠতে পারছেন না বর্তমান ভিসি। এছাড়া সম্প্রতি এ বিশ্ববিদ্যালয়ে সেকশন অফিসার নিয়োগ নিয়ে লাখ লাখ টাকা হাতবদলের অভিযোগ উঠেছে। এ নিয়োগ নিয়ে নয়ছয়ের পেছনে স্বেচ্ছাসেবক লীগের এক শীর্ষনেতার নাম ব্যাপকভাবে ছড়িয়েছে। সবচেয়ে জটিল পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি অ্যান্ড অ্যানিমাল সায়েন্সেস বিশ্ববিদ্যালয়ে। চট্টগ্রামের মেয়র এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর সঙ্গে তীব্র দ্বন্দ্বে জড়িয়েছেন উপাচার্য ড. নীতিশ চন্দ্র দেবনাথ। এ দ্বন্দ্বের জের ধরে সাড়ে তিন মাস ধরে বন্ধ রয়েছে সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়টি। স্থানীয় ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা সেখানে কোনো ক্লাস-পরীক্ষা হতে দিচ্ছেন না। চলতি শিক্ষাবর্ষে দেশের সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম বর্ষ অনার্সে ভর্তি পরীক্ষা শেষ হয়ে ইতিমধ্যে ক্লাস শুরু হয়ে গেছে। সেখানে এ বিশ্ববিদ্যালয়টি বন্ধ থাকায় এখনও সেখানে ভর্তি পরীক্ষাই অনুষ্ঠিত হতে পারেনি। বিগত চারদলীয় জোট সরকারের আমলে নিয়োগ পাওয়া এ ভিসি ওই বিশ্ববিদ্যালয়ে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমানের নামে একটি ছাত্রাবাসের নামকরণ করেছেন। মেয়র মহিউদ্দিন উপাচার্যকে সরানোর দাবি জানিয়ে রাষ্ট্রপতিকে চিঠি দিয়েছেন। পাশাপাশি বর্তমান সরকারের একজন কৃষিবিদ মন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের একজন সাংগঠনিক সম্পাদক ভিসিকে বহাল রাখার জন্য শক্ত অবস্থান নিয়েছেন। এ পরিস্থিতিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন বিব্রতকর অবস্থায় পড়ে সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছে।
প্রোভিসি নেই ২০ বিশ্ববিদ্যালয়ে : বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ নীতিনির্ধারণী পদ উপ-উপাচার্য ছাড়াই চলছে দেশের ২০টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়। এগুলো হলো সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, গাজীপুরের বঙ্গবন্ধু কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, দিনাজপুরের হাজী দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, টাঙ্গাইলের মওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, ময়মনসিংহের ত্রিশালে অবস্থিত জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়, নোয়াখালী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি অ্যান্ড অ্যানিমাল সায়েন্সেস বিশ্ববিদ্যালয়, সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, সেনাবাহিনী পরিচালিত বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালস (বিইউপি), রংপুরের বেগম রোকেয়া প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, পাবনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় এবং উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়। জানা গেছে, উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান ভিসি প্রফেসর আমিনুর রশীদ নিজেই প্রোভিসি নিয়োগ দেওয়ার ব্যাপারে বিরোধিতা করে আসছেন। আর প্রতিষ্ঠার পর থেকে এ পর্যন্ত শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনো প্রোভিসি নিয়োগ দেওয়া হয়নি।
ট্রেজারার ছাড়াই চলছে ৮ বিশ্ববিদ্যালয় : বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ পদ হলেও বর্তমানে ট্রেজারার নেই আটটি বিশ্ববিদ্যালয়ে। সেগুলো হলো_ হাজী দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, বেগম রোকেয়া প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় এবং পাবনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়। জানা গেছে, দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় এবং রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (রুয়েট) কোনো ট্রেজারার পদই নেই।
দেশের সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শীর্ষ প্রশাসনে শিগগিরই বড় ধরনের পরিবর্তন আসছে। উপাচার্য, উপ-উপাচার্য ও কোষাধ্যক্ষ পদে রদবদল ও নতুন নিয়োগ দেওয়ার বিষয়টি গভীরভাবে চিন্তা করছে সরকার। ইতিমধ্যে ছয়টি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য পদে পরিবর্তন আনার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সঙ্গে পরামর্শ করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। পাশাপাশি কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য ও কোষাধ্যক্ষের শূন্য পদে নতুন মুখ আসতে পারে। মন্ত্রণালয় সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ও একাডেমিক কার্যক্রমে গতিশীলতা আনতে সরকার নতুন এ রদবদলের চিন্তা করছে। দেশে বর্তমানে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ৩৩টি। এর মধ্যে ৩১টি পূর্ণাঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়। বাকি দুটি এখনও নির্মাণ প্রকল্পাধীন। এ দুটি হলো_ বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় এবং গোপালগঞ্জের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়। ৩১টি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে বর্তমানে ৮টিতে কোনো ট্রেজারার নেই। আর ২০টি বিশ্ববিদ্যালয়
চলছে কোনো প্রোভিসি ছাড়াই। যে ৬টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য পদে পরিবর্তন আনার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে তারা হলেন_ বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) উপাচার্য প্রফেসর ড. এএমএম শফিউল্লাহ, ঢাকা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (ডুয়েট) উপাচার্য প্রফেসর ড. এম সবদার আলী, পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (পবিপ্রবি) উপাচার্য প্রফেসর সাখাওয়াত হোসেন, রাজধানীতে অবস্থিত শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শেকৃবি) উপাচার্য প্রফেসর ড. শাহ-ই-আলম, দিনাজপুরের হাজী দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (হাবিপ্রবি) উপাচার্য প্রফেসর ড. আফজাল হোসেন এবং চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি অ্যান্ড অ্যানিমাল সায়েন্সেস বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. নীতিশ চন্দ্র দেবনাথ। জানা গেছে, এ ছয়জনকেই বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে নিয়োগ করা হয়েছিল। ডুয়েটের ভিসি সবদার আলী বিশ্ববিদ্যালয়ে সরকার সমর্থিত শিক্ষক-কর্মচারী ও ছাত্রলীগের সমর্থন হারিয়েছেন।
শেকৃবিতে অভ্যন্তরীণ নানা সংকট সামাল দিয়ে উঠতে পারছেন না বর্তমান ভিসি। এছাড়া সম্প্রতি এ বিশ্ববিদ্যালয়ে সেকশন অফিসার নিয়োগ নিয়ে লাখ লাখ টাকা হাতবদলের অভিযোগ উঠেছে। এ নিয়োগ নিয়ে নয়ছয়ের পেছনে স্বেচ্ছাসেবক লীগের এক শীর্ষনেতার নাম ব্যাপকভাবে ছড়িয়েছে। সবচেয়ে জটিল পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি অ্যান্ড অ্যানিমাল সায়েন্সেস বিশ্ববিদ্যালয়ে। চট্টগ্রামের মেয়র এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর সঙ্গে তীব্র দ্বন্দ্বে জড়িয়েছেন উপাচার্য ড. নীতিশ চন্দ্র দেবনাথ। এ দ্বন্দ্বের জের ধরে সাড়ে তিন মাস ধরে বন্ধ রয়েছে সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়টি। স্থানীয় ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা সেখানে কোনো ক্লাস-পরীক্ষা হতে দিচ্ছেন না। চলতি শিক্ষাবর্ষে দেশের সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম বর্ষ অনার্সে ভর্তি পরীক্ষা শেষ হয়ে ইতিমধ্যে ক্লাস শুরু হয়ে গেছে। সেখানে এ বিশ্ববিদ্যালয়টি বন্ধ থাকায় এখনও সেখানে ভর্তি পরীক্ষাই অনুষ্ঠিত হতে পারেনি। বিগত চারদলীয় জোট সরকারের আমলে নিয়োগ পাওয়া এ ভিসি ওই বিশ্ববিদ্যালয়ে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমানের নামে একটি ছাত্রাবাসের নামকরণ করেছেন। মেয়র মহিউদ্দিন উপাচার্যকে সরানোর দাবি জানিয়ে রাষ্ট্রপতিকে চিঠি দিয়েছেন। পাশাপাশি বর্তমান সরকারের একজন কৃষিবিদ মন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের একজন সাংগঠনিক সম্পাদক ভিসিকে বহাল রাখার জন্য শক্ত অবস্থান নিয়েছেন। এ পরিস্থিতিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন বিব্রতকর অবস্থায় পড়ে সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছে।
প্রোভিসি নেই ২০ বিশ্ববিদ্যালয়ে : বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ নীতিনির্ধারণী পদ উপ-উপাচার্য ছাড়াই চলছে দেশের ২০টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়। এগুলো হলো সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, গাজীপুরের বঙ্গবন্ধু কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, দিনাজপুরের হাজী দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, টাঙ্গাইলের মওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, ময়মনসিংহের ত্রিশালে অবস্থিত জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়, নোয়াখালী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি অ্যান্ড অ্যানিমাল সায়েন্সেস বিশ্ববিদ্যালয়, সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, সেনাবাহিনী পরিচালিত বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালস (বিইউপি), রংপুরের বেগম রোকেয়া প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, পাবনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় এবং উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়। জানা গেছে, উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান ভিসি প্রফেসর আমিনুর রশীদ নিজেই প্রোভিসি নিয়োগ দেওয়ার ব্যাপারে বিরোধিতা করে আসছেন। আর প্রতিষ্ঠার পর থেকে এ পর্যন্ত শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনো প্রোভিসি নিয়োগ দেওয়া হয়নি।
ট্রেজারার ছাড়াই চলছে ৮ বিশ্ববিদ্যালয় : বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ পদ হলেও বর্তমানে ট্রেজারার নেই আটটি বিশ্ববিদ্যালয়ে। সেগুলো হলো_ হাজী দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, বেগম রোকেয়া প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় এবং পাবনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়। জানা গেছে, দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় এবং রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (রুয়েট) কোনো ট্রেজারার পদই নেই।
Tuesday, 16 March 2010
উপজেলা চেয়ারম্যানের বাল্যবন্ধুর দাপট
সোনাইমুড়ী (নোয়াখালী) প্রতিনিধি
তিনি উপজেলা চেয়ারম্যানের বাল্যবন্ধু। একই স্কুলে পড়েছেন। এখনও তার সঙ্গে চেয়ারম্যানের সুসম্পর্ক। এ প্রভাবকে কাজে লাগিয়ে অহরহ করে বেড়াচ্ছেন নানা অবৈধ কর্মকাণ্ড। সানাইমুড়ী উপজেলা আ’লীগের সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা চেয়ারম্যান অ ফ ম বাবুর এ বাল্যবন্ধুটি হচ্ছেন বাংলাবাজারের জননী লাইব্রেরির মালিক নির্মল কান্তি সেন। তিনি আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে প্রভাবশালী চক্রের ছত্রছায়ায় সোনাইমুড়ী উপজেলা সদরসহ বিভিন্ন হাট-বাজারের লাইব্রেরিগুলোতে সরকারি নিয়মনীতি ভঙ্গ করে প্রকাশ্যে অবৈধ নোট ও গাইড বই সরবরাহ করে তা বিক্রি করছেন। জননী লাইব্রেরির মালিক নির্মলের বিরুদ্ধে এ ব্যাপারে স্থানীয় সচেতন নাগরিকরা বাজার কমিটির কাছে লিখিত অভিযোগ করলেও কোনো লাভ হয়নি। উপজেলা চেয়ারম্যানের হস্তক্ষেপে তা ধামাচাপা পড়ে যায়। এ বিষয়ে জানার জন্য সাংবাদিকরা বাংলাবাজারে গেলে জননী লাইব্রেরির মালিক নির্মল তাদের অকথ্যভাষায় গালাগাল করে এবং উপজেলা চেয়ারম্যান তার স্কুল জীবনের বন্ধু আখ্যা দিয়ে সাংবাদিকদের দেখে নেয়ার হুমকি দেন
http://www.amardeshonline.com/pages/details/2010/03/15/22737
তিনি উপজেলা চেয়ারম্যানের বাল্যবন্ধু। একই স্কুলে পড়েছেন। এখনও তার সঙ্গে চেয়ারম্যানের সুসম্পর্ক। এ প্রভাবকে কাজে লাগিয়ে অহরহ করে বেড়াচ্ছেন নানা অবৈধ কর্মকাণ্ড। সানাইমুড়ী উপজেলা আ’লীগের সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা চেয়ারম্যান অ ফ ম বাবুর এ বাল্যবন্ধুটি হচ্ছেন বাংলাবাজারের জননী লাইব্রেরির মালিক নির্মল কান্তি সেন। তিনি আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে প্রভাবশালী চক্রের ছত্রছায়ায় সোনাইমুড়ী উপজেলা সদরসহ বিভিন্ন হাট-বাজারের লাইব্রেরিগুলোতে সরকারি নিয়মনীতি ভঙ্গ করে প্রকাশ্যে অবৈধ নোট ও গাইড বই সরবরাহ করে তা বিক্রি করছেন। জননী লাইব্রেরির মালিক নির্মলের বিরুদ্ধে এ ব্যাপারে স্থানীয় সচেতন নাগরিকরা বাজার কমিটির কাছে লিখিত অভিযোগ করলেও কোনো লাভ হয়নি। উপজেলা চেয়ারম্যানের হস্তক্ষেপে তা ধামাচাপা পড়ে যায়। এ বিষয়ে জানার জন্য সাংবাদিকরা বাংলাবাজারে গেলে জননী লাইব্রেরির মালিক নির্মল তাদের অকথ্যভাষায় গালাগাল করে এবং উপজেলা চেয়ারম্যান তার স্কুল জীবনের বন্ধু আখ্যা দিয়ে সাংবাদিকদের দেখে নেয়ার হুমকি দেন
http://www.amardeshonline.com/pages/details/2010/03/15/22737
নদী দখল করে মাছ চাষ : ক্ষমতাসীনদের দাপটে সাধারণ জেলেরা বিপাকে
জহুরুল ইসলাম পাবনা
এবার পদ্মা নদী দখল করে রীতিমতো মাছ চাষ শুরু করেছে ঈশ্বরদী ও লালপুরের যুবলীগ নামধারী কতিপয় অবৈধ দখলদার।
জানা গেছে, ৩/৪ মাস ধরে পদ্মা নদীতে বাঁধ দিয়ে বে-আইনিভাবে এই দখল চললেও বিষয়টি স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ কিংবা প্রশাসনের কারো কোনো নজরে পড়েনি। কেউ বিষয়টি আমলেও নেয়নি। খবর পেয়ে গত বৃহস্পতিবার সরেজমিন মাঝ নদীতে গিয়ে দেখা গেছে, পদ্মা নদীর ঈশ্বরদী ও লালপুর সীমানার সাঁড়া ও লক্ষ্মীপুর এলাকার প্রায় ৫শ’ একর এলাকাজুড়ে নদীবক্ষে চলছে এই মাছ চাষের মহোত্সব। এলাকাবাসী জানান, পুরাতন ঈশ্বরদী ইউনিয়নের লালপুর ও ঈশ্বরদীর ১৫/২০ জন আওয়ামী লীগের নেতা পদ্মার মাঝখানে খুঁটি গেঁড়ে লাল পতাকা টাঙিয়ে এলাকা ঘিরে দখল করে নিয়েছেন নদীর বিশাল অংশ। পদ্মার নিয়মিত জেলে, মহলদার ও ফড়িয়া মাছ ব্যবসায়ীরা জানান, ট্রলারে চেপে যখন দলীয় দখলদাররা নদীতে আসে তখন সাধারণ জেলেরাও ভয়ে আতঙ্কে থাকেন। আড়মবাড়িয়া গ্রামের ষাটোর্ধ্ব জেলে মহব্বত আলী জানান, তিনি প্রায় ৪০ বছর ধরে এই নদীতে মাছ ধরা ও বেচাকেনার সঙ্গে জড়িত থাকলেও এভাবে নদীদখল করে মাছ চাষের ঘটনা তিনি এই প্রথম দেখলেন। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, পুরাতন ঈশ্বরদী ইউনিয়নের স্বেচ্ছাসেবক লীগ সভাপতি মোঃ স্বপনের নেতৃত্বে জিয়া, আলম, শামীম, রশিদ, মুকুলসহ ১৫/২০ জনের একটি সিন্ডিকেট পদ্মা নদীতে এই দখল কার্যক্রম পরিচালনা করছে। দখলকারীদের ভয়ে নাম প্রকাশ না করার শর্তে পদ্মা নদীর একাধিক জেলে জানান, দিনের বেলায় নদীতে দখল করা নদীর অংশ পাহারায় থাকে। আর রাত হলে ইঞ্জিনচালিত নৌকায় দখলকারীরা এসে পদ্মার মাঝামাঝি লক্ষ্মীপুরচর এলাকায় রাতভর কি কাজে ব্যস্ত থাকে তা জানেন না কেউ। নদীর অংশ দখল করে নিয়ে মাছ চাষ সম্পর্কে সাঁড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সাহাবুল আলম সরদারকে প্রশ্ন করা হলে তিনি জানান, লোকমুখে শুনেছি, তবে বিষয়টি অবশ্যই খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেয়া হবে। পুরাতন ঈশ্বরদী ইউনিয়নের স্বেচ্ছাসেবক লীগ সভাপতি স্বপন এ প্রসঙ্গে বলেন, শুনেছি আমাদের নামে পদ্মা নদীতে মাছের পোনা ছেড়ে চাষ করা হচ্ছে। প্রসঙ্গত, নদীর বিশাল এলাকা দখলের অভিযোগ যার বিরুদ্ধে সেই স্বপন আগামী ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে নির্বাচনে অংশ নিতে প্রচারণা চালাচ্ছেন। এদিকে ঈশ্বরদীর সাঁড়া ইউনিয়নের সাঁড়া এবং লালপুরের পুরাতন ঈশ্বরদী ইউনিয়নের লক্ষ্মীপুর এলাকার মধ্যে প্রবাহিত পদ্মা নদীতে ক্ষমতাসীন দলের অবৈধ দখলদারদের ভয়ে রাতে সাধারণ জেলেদের অনেকেই মাছ ধরতে পর্যন্ত যেতে সাহস পাচ্ছেন না। এই এলাকার শত শত জেলে ও মাছ ব্যবসায়ী আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন বলে জানান তারা। গভীর রাতে মাঝ নদীর দখল করা ওই এলাকায় হাই ভোল্টেজের লাইট জ্বলতে দেখে ভয়ে জেলেরা নদীর একটি অংশে মাছ ধরাও ছেড়ে দিয়েছে বলে তারা জানান। আতঙ্কগ্রস্ত জেলেরা এ বিষয়ে ক্ষমতাসীন দলের নেতা ও প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
http://www.amardeshonline.com/pages/details/2010/03/15/22723
পদোন্নতি আটকে আ’লীগে যোগদানে বাধ্য করা হলো
বরিশাল শিক্ষা বোর্ডে নয়া কেলেঙ্কারি : পদোন্নতি আটকে আ’লীগে যোগদানে বাধ্য করা হলো
জি.এম. বাবর আলী, বরিশাল
বরিশাল শিক্ষা বোর্ডে সরকার দলীয় সমর্থক ছাড়া অন্য কেউ স্বাচ্ছন্দ্যে চাকরি করতে পারছেন না। ক্ষমতাসীন দলের সমর্থক হলে মিলছে পদোন্নতি। বিরোধী মনোভাবাপন্নদের পদোন্নতি আটকে আ’লীগে যোগদানে চাপ দেয়া হচ্ছে। পদোন্নতি পেতে কর্মচারী সংঘের চাপে লিটন নামের এক কর্মচারী লিখিত আবেদন করে আওয়ামী লীগে যোগ দিয়েছেন। কর্মচারী সংঘের নেতাদের এহেন কর্মকাণ্ডে সহায়তা করার অভিযোগ রয়েঝে দ্বৈত নাগরিকত্বধারী অভিযুক্ত বোর্ড চেয়ারম্যান ড. বিমল কৃষ্ণ মজুমদারের বিরুদ্ধে। সাধারণ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মাঝে ক্ষোভ থাকলেও মুখ খুলতে পারছেন না কেউই।
মহাজোট সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর বরিশাল শিক্ষাবোর্ডের এক শ্রেণীর কর্মকর্তা-কর্মচারী রাতারাতি আওয়ামী লীগের নেতা বনে যান। তাদের তাণ্ডবে অসহায় হয়ে পড়েছেন অন্য সবাই। আ’লীগ ক্ষমতায় আসার কয়েক মাস পরই ড. বিমল কৃষ্ণ মজুমদারকে বরিশাল শিক্ষাবোর্ডের চেয়ারম্যান নিয়োগ দেয়া
হয়। তার বিরুদ্ধে দ্বৈত নাগরিকত্বের অভিযোগ ওঠে। এ নিয়ে পত্রপত্রিকায় খবরও প্রকাশ হয়। তার নিয়োগের পরপরই শিক্ষাবোর্ড দলীয় পরিচয়ে পদোন্নতির কার্যক্রম শুরু হয়। সাবেক বোর্ড চেয়ারম্যান ড. অলিউল মুর্তজা কবির চাপের মুখে ক্ষমতাসীন দলের সমর্থক কর্মচারীদের পদোন্নতি দিতে রাজি না হওয়ায় গত আগস্ট মাসে তাকে লাঞ্ছিত হতে হয়। বর্তমান চেয়ারম্যান ড. বিমল কৃষ্ণ মজুমদার ১৫ নভেম্বর তড়িঘড়ি করে এইচএসসি পাস তৃতীয় শ্রেণীর কর্মচারী আজাদ ফারুককে সহকারী পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক পদে পদোন্নতি দেন। একইভাবে অপর তৃতীয় শ্রেণীর কর্মচারী আবুল বাশারকে সহকারী কলেজ পরিদর্শক পদে পদোন্নতি দেন। একাধিক শিক্ষক নেতার অভিযোগ, ভুয়া ডিগ্রি পাস সনদ জমা দিয়ে চাকরি করছেন আবুল বাশার।
চলতি সপ্তাহে এ শিক্ষাবোর্ডে ঘটেছে আরও চমকপ্রদ ঘটনা। বিরোধী মনোভাবাপন্ন এক কর্মচারীকে আ’লীগে যোগদান করিয়ে পদোন্নতি দেয়া হয়েছে। এ নিয়ে চলছে তোলপাড়। ১৯ ফেব্রুয়ারি শিক্ষাবোর্ডের সিলেকশন কমিটির সভায় ১৩ জন চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারীকে অফিস সহকারী হিসেবে পদোন্নতি দেয়া হয়। এরমধ্যে সাখাওয়াত হোসেন লিটন নামের এক কর্মচারী বিরোধী দলের সমর্থক হওয়ায় তার পদোন্নতি আটকে দেয়া হয়। কাগজপত্রে ত্রুটি আছে বলে তার সঙ্গে মনিরুল ইসলাম ও অঞ্জন কুমারের পদোন্নতিও স্থগিত করা হয়। অবশেষে ১৪ মার্চ ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীদের চাপে সাখাওয়াত হোসেন লিটন আ’লীগে যোগ দিলে তাকে পদোন্নতির চিঠি দেয়া হয়। শিক্ষাবোর্ডের চেয়ারম্যান সাংবাদিকদের বলেন, কোনো চাকরিজীবী এভাবে ঘোষণা দিয়ে কোনো দলে যোগদান করতে পারেন না। এ ব্যাপারে সাখাওয়াত হোসেন লিটন বলেন, ২৮ ফেব্রুয়ারি ১০ জনকে পদোন্নতির চিঠি দেয়া হলেও তাকেসহ ৩ জনকে চিঠি দেয়া হয়নি। তাদের কাগজপত্রে ত্রুটি আছে বলে জানানো হয়। কিন্তু পরবর্তীতে কর্মচারী সংঘের এক নেতা তাকে লিখিতভাবে আ’লীগে যোগদান করতে বলেন। পদোন্নতির স্বার্থে বাধ্য হয়ে তিনি কর্মচারী সংঘে লিখিত আবেদন করে আ’লীগে যোগ দিয়েছেন।
http://www.amardeshonline.com/pages/details/2010/03/17/23171
জি.এম. বাবর আলী, বরিশাল
বরিশাল শিক্ষা বোর্ডে সরকার দলীয় সমর্থক ছাড়া অন্য কেউ স্বাচ্ছন্দ্যে চাকরি করতে পারছেন না। ক্ষমতাসীন দলের সমর্থক হলে মিলছে পদোন্নতি। বিরোধী মনোভাবাপন্নদের পদোন্নতি আটকে আ’লীগে যোগদানে চাপ দেয়া হচ্ছে। পদোন্নতি পেতে কর্মচারী সংঘের চাপে লিটন নামের এক কর্মচারী লিখিত আবেদন করে আওয়ামী লীগে যোগ দিয়েছেন। কর্মচারী সংঘের নেতাদের এহেন কর্মকাণ্ডে সহায়তা করার অভিযোগ রয়েঝে দ্বৈত নাগরিকত্বধারী অভিযুক্ত বোর্ড চেয়ারম্যান ড. বিমল কৃষ্ণ মজুমদারের বিরুদ্ধে। সাধারণ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মাঝে ক্ষোভ থাকলেও মুখ খুলতে পারছেন না কেউই।
মহাজোট সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর বরিশাল শিক্ষাবোর্ডের এক শ্রেণীর কর্মকর্তা-কর্মচারী রাতারাতি আওয়ামী লীগের নেতা বনে যান। তাদের তাণ্ডবে অসহায় হয়ে পড়েছেন অন্য সবাই। আ’লীগ ক্ষমতায় আসার কয়েক মাস পরই ড. বিমল কৃষ্ণ মজুমদারকে বরিশাল শিক্ষাবোর্ডের চেয়ারম্যান নিয়োগ দেয়া
হয়। তার বিরুদ্ধে দ্বৈত নাগরিকত্বের অভিযোগ ওঠে। এ নিয়ে পত্রপত্রিকায় খবরও প্রকাশ হয়। তার নিয়োগের পরপরই শিক্ষাবোর্ড দলীয় পরিচয়ে পদোন্নতির কার্যক্রম শুরু হয়। সাবেক বোর্ড চেয়ারম্যান ড. অলিউল মুর্তজা কবির চাপের মুখে ক্ষমতাসীন দলের সমর্থক কর্মচারীদের পদোন্নতি দিতে রাজি না হওয়ায় গত আগস্ট মাসে তাকে লাঞ্ছিত হতে হয়। বর্তমান চেয়ারম্যান ড. বিমল কৃষ্ণ মজুমদার ১৫ নভেম্বর তড়িঘড়ি করে এইচএসসি পাস তৃতীয় শ্রেণীর কর্মচারী আজাদ ফারুককে সহকারী পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক পদে পদোন্নতি দেন। একইভাবে অপর তৃতীয় শ্রেণীর কর্মচারী আবুল বাশারকে সহকারী কলেজ পরিদর্শক পদে পদোন্নতি দেন। একাধিক শিক্ষক নেতার অভিযোগ, ভুয়া ডিগ্রি পাস সনদ জমা দিয়ে চাকরি করছেন আবুল বাশার।
চলতি সপ্তাহে এ শিক্ষাবোর্ডে ঘটেছে আরও চমকপ্রদ ঘটনা। বিরোধী মনোভাবাপন্ন এক কর্মচারীকে আ’লীগে যোগদান করিয়ে পদোন্নতি দেয়া হয়েছে। এ নিয়ে চলছে তোলপাড়। ১৯ ফেব্রুয়ারি শিক্ষাবোর্ডের সিলেকশন কমিটির সভায় ১৩ জন চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারীকে অফিস সহকারী হিসেবে পদোন্নতি দেয়া হয়। এরমধ্যে সাখাওয়াত হোসেন লিটন নামের এক কর্মচারী বিরোধী দলের সমর্থক হওয়ায় তার পদোন্নতি আটকে দেয়া হয়। কাগজপত্রে ত্রুটি আছে বলে তার সঙ্গে মনিরুল ইসলাম ও অঞ্জন কুমারের পদোন্নতিও স্থগিত করা হয়। অবশেষে ১৪ মার্চ ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীদের চাপে সাখাওয়াত হোসেন লিটন আ’লীগে যোগ দিলে তাকে পদোন্নতির চিঠি দেয়া হয়। শিক্ষাবোর্ডের চেয়ারম্যান সাংবাদিকদের বলেন, কোনো চাকরিজীবী এভাবে ঘোষণা দিয়ে কোনো দলে যোগদান করতে পারেন না। এ ব্যাপারে সাখাওয়াত হোসেন লিটন বলেন, ২৮ ফেব্রুয়ারি ১০ জনকে পদোন্নতির চিঠি দেয়া হলেও তাকেসহ ৩ জনকে চিঠি দেয়া হয়নি। তাদের কাগজপত্রে ত্রুটি আছে বলে জানানো হয়। কিন্তু পরবর্তীতে কর্মচারী সংঘের এক নেতা তাকে লিখিতভাবে আ’লীগে যোগদান করতে বলেন। পদোন্নতির স্বার্থে বাধ্য হয়ে তিনি কর্মচারী সংঘে লিখিত আবেদন করে আ’লীগে যোগ দিয়েছেন।
http://www.amardeshonline.com/pages/details/2010/03/17/23171
Thursday, 11 March 2010
পরিবেশ অধিদফতর দুর্নীতির বিষবৃক্ষ
Shamokal শুত্রুবার | ১২ মার্চ ২০১০ | ২৮ ফাল্গুন ১৪১৬ | ২৫ রবিউল আউয়াল ১৪৩১
হকিকত জাহান হকি
দুর্নীতির বিষবৃক্ষে পরিণত হয়েছে পরিবেশ অধিদফতর। এখান থেকে যে কোনো শিল্প প্রতিষ্ঠানের পরিবেশসংক্রান্ত ছাড়পত্র নেওয়া ও ছাড়পত্রের নবায়নে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ঘুষ ছাড়া পথ নেই। এ অধিদফতরে ঘুষ লেনদেনের ঘটনা 'ওপেন সিক্রেট'। বিভিন্ন সময় রাজনৈতিক পটপরিবর্তন ও সরকার বদলের ঘটনা ঘটলেও এ প্রতিষ্ঠানের দুর্নীতি হ্রাস পায়নি। একজন নতুন উদ্যোক্তা হিসেবে পরিবেশের ছাড়পত্র গ্রহণের জন্য প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারী ও দালালদের সঙ্গে কথা বলে ঘুষ লেনদেনের নানা তথ্য জানা গেছে। এখানে ঘুষ ছাড়া শিল্পের পরিবেশসংক্রান্ত ছাড়পত্র পাওয়া যায় না, ছাড়পত্রের নবায়নও হয় না। শিল্প-কারখানার নতুন ছাড়পত্রের জন্য চার-পাঁচ হাজার টাকা এবং প্রাপ্ত ছাড়পত্র নবায়নের জন্য দিতে হয় তিন-চার হাজার টাকা। কখনও কখনও আরও বেশি টাকা গুনতে হয়। রাজধানীর আগারগাঁওয়ে অবস্থিত পরিবেশ অধিদফতরে ঢোকার পর প্রথমেই চোখে পড়বে দালালদের মুখ। স্বল্প সময়ে ছাড়পত্র বের এবং ছাড়পত্রের নবায়নের কাজ করিয়ে দেওয়ার কথা বলে প্রথমে নিজেদের আয়ত্তে নেওয়া হয় গ্রাহকদের। এ ভবন সংলগ্ন চায়ের দোকানগুলোতেও দালালদের তৎপরতা লক্ষ্য করা গেছে। একজন শিল্প মালিক জানান, পরিবেশসংক্রান্ত ছাড়পত্র গ্রহণ ও ছাড়পত্র নবায়নের কাজের জন্য পরিদর্শকদের গাড়িতে চড়িয়ে কারখানায় নিয়ে যেতে হয়। দুপুরে ভালো করে খাওয়াতে হয়। হাত খরচের টাকা দিতে হয়। আবার গাড়িতে করে অফিসে পেঁৗছে দিতে হয়। পুরো কাজটা করার জন্য সেলামি
হিসেবে দিতে হয় চার-পাঁচ হাজার টাকা। এ ব্যাপারে ঢাকা বিভাগের পরিদর্শক মাহবুবুর রহমানের বক্তব্য জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, কেউ এ ধরনের কাজ করছেন কি-না তা তার জানা নেই।
ভোগান্তির শিকার আলমগীর হোসেন নামে এক শিল্প উদ্যোক্তা জানান, তিনি গাজীপুরের কালীগঞ্জ থেকে এসেছেন একটি পোলট্রি খামারের পরিবেশসংক্রান্ত ছাড়পত্রের জন্য। অধিদফতরের কাছেই একটি চায়ের দোকানে কথা হয় দালাল মোস্তফার সঙ্গে। তিনি দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের ইকুরিয়া এলাকার সংগ্রাম মেটাল লিমিটেডের ছাড়পত্র বের করে এনেছেন। তিনি দেখালেন এক কর্মকর্তার স্বাক্ষর করা পরিবেশসংক্রান্ত ছাড়পত্রের কপিটি। এ ছাড়পত্র বের করে দেওয়ার জন্য সংগ্রাম মেটালের মালিক আতাউর রহমানের কাছ থেকে তিনি ২০ হাজার টাকা নিয়েছেন বলে জানালেন। ছাড়পত্র বের করতে অধিদফতরের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের ঘুষ দিতে হয়েছে পাঁচ হাজার টাকা। বাকি টাকা রেখেছেন নিজের পকেটে।
স্বাস্থ্য ভালো শ্যাম বর্ণের এক লোক সদর্পে অধিদফতরের ভেতরে-বাইরে ঘোরাঘুরি করছিলেন। তার সঙ্গে ছিলেন আরও একজন লোক। তারা কোনো শিল্প প্রতিষ্ঠানের পরিবেশসংক্রান্ত ছাড়পত্র নেওয়ার জন্য এসেছেন কি-না জানতে চাওয়া হলে অকপটে বললেন, 'না, আমরা একটি পার্টির কাজ করিয়ে দেওয়ার জন্য এসেছি। কোন পার্টি, কী কাজ_ জানতে চাইলে বলেন, নারায়ণগঞ্জের বিছমিল্লাহ কোল্ড স্টোরেজের পরিবেশসংক্রান্ত ছাড়পত্র বের করতে হবে। এ জন্য পার্টির কাছ থেকে ৪০ হাজার টাকা নেওয়া হয়েছে। এর মধ্য থেকে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের খুশি করা, যাতায়াত বাবদ খরচ হবে ৮-১০ হাজার টাকা। বাকি টাকা থাকবে তার পকেটে।
ভারপ্রাপ্ত পরিচালক সুকুমার বিশ্বাসের পিয়ন জিন্নাত মোল্লাকে পোলট্রি খামারের একটা ছাড়পত্র দরকার বলতেই তিনি বললেন, মুরগি কতগুলো। বললাম এক হাজারের বেশি। তিনি বললেন, আবেদনপত্রে এক হাজারের কম উল্লেখ করবেন, তাতে তাড়াতাড়ি ছাড়পত্র পাবেন। তখন আরেকজন দালাল আবদুর রহমান মানিকগঞ্জ জেলার শিবালয় থানার ভাই ভাই রাইস মিলের পরিবেশসংক্রান্ত ছাড়পত্রের আবেদন নিয়ে কথা বলছিলেন এ পিয়নের সঙ্গে। কথা শোনার পর পিয়ন তাকে ও আমাকে নিয়ে গেলেন ঢাকা বিভাগের এক অ্যাকাউন্ট্যান্টের কাছে। তিনি দু'জনকেই বুঝিয়ে বললেন, কাজ হবে। আসবেন। পরে জানা গেল পিয়নরা একেক সময় একেক কর্মকর্তার মাধ্যমে কাজ করিয়ে নেন। কাজটা হলে ঘুষের টাকাও ভাগাভাগি হয়।
ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই সভাপতি আনিসুল হক সমকালকে বলেন, 'অনৈতিক আর্থিক সুবিধা ছাড়া পরিবেশ অধিদফতরের কেউ কোনো কাজ করেন না বলে বিভিন্ন খাতের উদ্যোক্তারা প্রতিনিয়ত অভিযোগ করছেন।' পরিবেশসংক্রান্ত ছাড়পত্র না পাওয়ায় অনেক উদ্যোক্তা শিল্প স্থাপনের কাজ যথাসময়ে শেষ করতে পারছেন না। অনেকের উৎপাদন শুরু করতে বিঘ্ন ঘটছে।
পরিবেশ অধিদফতরে ঘুষ, দুর্নীতি চলছে কি-না এ প্রশ্নের জবাবে অধিদফতরের মহাপরিচালক ড. জাফর আহমেদ খান জানান, এ অধিদফতরে ঘুষ, দুর্নীতি, নানা অনিয়ম চলছে_ এ খবর তিনি নানাজনের কাছ থেকে শুনেছেন। ঘুষ, দুর্নীতি বন্ধে এরই মধ্যে তিনি কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন। কাজে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে আরও সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে তিনি জানান।
পরিবেশ অধিদফতরের ঢাকা বিভাগের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক সুকুমার বিশ্বাস বলেন, অনেক সময় উদ্যোক্তারা পরিবেশের সব ধরনের শর্ত পূরণে ব্যর্থ হয়ে অযৌক্তিকভাবে পরিবেশসংক্রান্ত ছাড়পত্রের দাবি করেন। পরিবেশের স্বার্থে কোনোভাবেই সেসব শিল্পে ছাড়পত্র দেওয়া হয় না। তিনি আরও বলেন, পরিবেশ দূষণের দায়ে ঢাকা বিভাগে এ পর্যন্ত বিভিন্ন শিল্প প্রতিষ্ঠানসহ অন্যান্য ক্ষেত্রে ১৮৭টি মামলা হয়েছে। এর মধ্যে আদালতে বিচারাধীন আছে ১০৩টি; তদন্তাধীন ৩৭ ও নিষ্পত্তি হয়েছে ৪৭ মামলা।
শিক্ষকদের দলীয় কর্মকাণ্ডের প্রতিবাদ : দৌলতপুরে স্কুলে তালা ঝুলিয়ে দিল শিক্ষার্থীরা
দৌলতপুর (মানিকগঞ্জ) প্রতিনিধি
মানিকগঞ্জের দৌলতপুরের চরকাটারী সবুজ সেনা উচ্চবিদ্যালয়ে সরকারদলীয় শিক্ষকদের গ্রুপিং ও কোন্দলের প্রতিবাদে ছাত্রছাত্রীরা স্কুলের অফিস কক্ষ ও শ্রেণীকক্ষে ৩ দিন ধরে তালা ঝুলিয়ে দিয়েছে। ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক শরিফ উদ্দিন তালুকদারের বিরুদ্ধে স্কুল তহবিলের ২০ হাজার টাকা, টেস্ট রিলিফের চাল আত্মসাতসহ ১৩টি অভিযোগ উঠেছে।
দৌলতপুর উপজেলা সদর থেকে প্রায় ১৫-২০ কি.মি. দূরে যমুনা নদীর তীর ঘেঁষে চরকাটারী সবুজ সেনা উচ্চবিদ্যালয়টি ১৯৬৬ সালে স্থাপিত হয়। চারদিকে জেগে উঠেছে বালুচর। বর্তমানে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সংখ্যা প্রায় ৮ শতাধিক । অতীতে এই বিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীরা এসএসসি পরীক্ষায় ভালো ফল করে। কিন্তু বর্তমানে সরকারদলীয় শিক্ষকদের গ্রুপিং ও কোন্দলের ফলে গত এক বছর ধরে বিদ্যালয়ে সঠিকভাবে লেখাপড়া না হওয়ায় শিক্ষার মান দিন দিন কমে যাচ্ছে। এদিকে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক শরিফ উদ্দিন তালুকদারের বিরুদ্ধে ওই বিদ্যালয়েরই ৮ সহকারী শিক্ষক গত ১১ জানুয়ারি তহবিলের ২০ হাজার টাকা, টেস্ট রিলিফের চাল, আত্মসাতসহ ১৩টি অভিযোগ ম্যানেজিং কমিটি বরাবর দাখিল করেছেন।
এই বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক শরিফ উদ্দিন তালুকদার উপজেলা শাখা আওয়ামী লীগের শিক্ষাবিষয়ক সম্পাদক, সহকারী শিক্ষক আঃ রাজ্জাক ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক, সহকারী শিক্ষক আজিজুর রহমান ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি, সহকারী শিক্ষক আলী হাসান ও সহকারী শিক্ষক আনোয়ার হোসেন আওয়ামী লীগের সদস্য, সহকারী শিক্ষক খোরশেদ আলম ও সহকারী শিক্ষক তোফায়েল আহম্মেদ ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক, সহকারী শিক্ষক আবদুল বাতেন ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের ধর্ম সম্পাদক, সহকারী শিক্ষক রফিকুল ইসলাম ইউনিয়ন যুবলীগের সহসভাপতি, সহকারী শিক্ষক আইয়ুব আলী ইউনিয়ন যুবলীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বে রয়েছেন। এই সুবাদে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক হওয়ার জন্য উচ্চমহলের সঙ্গে তাদের রয়েছে মধুর সম্পর্ক। ফলে শিক্ষকরা ক্লাসে পাঠদানে মনোযোগী না হয়ে বিভিন্ন চায়ের দোকান ও অফিসে বসে আড্ডায় ব্যস্ত থাকেন। চরকাটারী সবুজ সেনা উচ্চবিদ্যালয়ের নবম শ্রেণীর ছাত্রী শাহানাজ পারভীনের বাবা আলহাজ আঃ সালাম এই প্রতিনিধিকে জানান, গত জানুয়ারি থেকে এই বিদ্যালয়ে সঠিকভাবে লেখাপড়া ও পাঠদান হচ্ছে না। সব শিক্ষক আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা হওয়ায় কেউ কেউ ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক হবে এই আশায় বিভোর হয়ে দলীয় কর্মকাণ্ডে ব্যস্ত থাকেন। এর প্রতিবাদেই ছাত্রীছাত্রীরা ক্ষুব্ধ হয়ে বিদ্যালয়ে তালা দিয়েছে। চরকাটারী গ্রামের আঃ গফুর জানান, শিক্ষার্থীরা প্রতিদিন বিদ্যালয় থেকে বাড়ি ফিরে শিক্ষকদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে বলে আমাদের কোনো দিনই ক্লাস হয় না। পরে বিদ্যালয়ে এসে শিক্ষকদের কাছে সে কথা জানতে চাইলে তার কোনো উত্তর না দিয়ে তারা বলেন, ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষককে বলেন। ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক শরিফ উদ্দিন তালুকদার বিদ্যালয়েই আসেন না। তাহলে কার কাছে আমরা এই দুঃখের কথা বলব। তাই ক্ষুব্ধ ছাত্রছাত্রীরা বাধ্য হয়ে বিদ্যালয়ে তালা ঝুলিয়ে দিয়েছে। এদিকে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মোঃ শরিফ উদ্দিন তালুকদার তার বিরুদ্ধে আনা সব অভিযোগ মিথ্যা বলে দাবি করেন।
http://www.amardeshonline.com/pages/details/2010/03/12/22389
মানিকগঞ্জের দৌলতপুরের চরকাটারী সবুজ সেনা উচ্চবিদ্যালয়ে সরকারদলীয় শিক্ষকদের গ্রুপিং ও কোন্দলের প্রতিবাদে ছাত্রছাত্রীরা স্কুলের অফিস কক্ষ ও শ্রেণীকক্ষে ৩ দিন ধরে তালা ঝুলিয়ে দিয়েছে। ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক শরিফ উদ্দিন তালুকদারের বিরুদ্ধে স্কুল তহবিলের ২০ হাজার টাকা, টেস্ট রিলিফের চাল আত্মসাতসহ ১৩টি অভিযোগ উঠেছে।
দৌলতপুর উপজেলা সদর থেকে প্রায় ১৫-২০ কি.মি. দূরে যমুনা নদীর তীর ঘেঁষে চরকাটারী সবুজ সেনা উচ্চবিদ্যালয়টি ১৯৬৬ সালে স্থাপিত হয়। চারদিকে জেগে উঠেছে বালুচর। বর্তমানে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সংখ্যা প্রায় ৮ শতাধিক । অতীতে এই বিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীরা এসএসসি পরীক্ষায় ভালো ফল করে। কিন্তু বর্তমানে সরকারদলীয় শিক্ষকদের গ্রুপিং ও কোন্দলের ফলে গত এক বছর ধরে বিদ্যালয়ে সঠিকভাবে লেখাপড়া না হওয়ায় শিক্ষার মান দিন দিন কমে যাচ্ছে। এদিকে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক শরিফ উদ্দিন তালুকদারের বিরুদ্ধে ওই বিদ্যালয়েরই ৮ সহকারী শিক্ষক গত ১১ জানুয়ারি তহবিলের ২০ হাজার টাকা, টেস্ট রিলিফের চাল, আত্মসাতসহ ১৩টি অভিযোগ ম্যানেজিং কমিটি বরাবর দাখিল করেছেন।
এই বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক শরিফ উদ্দিন তালুকদার উপজেলা শাখা আওয়ামী লীগের শিক্ষাবিষয়ক সম্পাদক, সহকারী শিক্ষক আঃ রাজ্জাক ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক, সহকারী শিক্ষক আজিজুর রহমান ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি, সহকারী শিক্ষক আলী হাসান ও সহকারী শিক্ষক আনোয়ার হোসেন আওয়ামী লীগের সদস্য, সহকারী শিক্ষক খোরশেদ আলম ও সহকারী শিক্ষক তোফায়েল আহম্মেদ ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক, সহকারী শিক্ষক আবদুল বাতেন ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের ধর্ম সম্পাদক, সহকারী শিক্ষক রফিকুল ইসলাম ইউনিয়ন যুবলীগের সহসভাপতি, সহকারী শিক্ষক আইয়ুব আলী ইউনিয়ন যুবলীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বে রয়েছেন। এই সুবাদে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক হওয়ার জন্য উচ্চমহলের সঙ্গে তাদের রয়েছে মধুর সম্পর্ক। ফলে শিক্ষকরা ক্লাসে পাঠদানে মনোযোগী না হয়ে বিভিন্ন চায়ের দোকান ও অফিসে বসে আড্ডায় ব্যস্ত থাকেন। চরকাটারী সবুজ সেনা উচ্চবিদ্যালয়ের নবম শ্রেণীর ছাত্রী শাহানাজ পারভীনের বাবা আলহাজ আঃ সালাম এই প্রতিনিধিকে জানান, গত জানুয়ারি থেকে এই বিদ্যালয়ে সঠিকভাবে লেখাপড়া ও পাঠদান হচ্ছে না। সব শিক্ষক আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা হওয়ায় কেউ কেউ ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক হবে এই আশায় বিভোর হয়ে দলীয় কর্মকাণ্ডে ব্যস্ত থাকেন। এর প্রতিবাদেই ছাত্রীছাত্রীরা ক্ষুব্ধ হয়ে বিদ্যালয়ে তালা দিয়েছে। চরকাটারী গ্রামের আঃ গফুর জানান, শিক্ষার্থীরা প্রতিদিন বিদ্যালয় থেকে বাড়ি ফিরে শিক্ষকদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে বলে আমাদের কোনো দিনই ক্লাস হয় না। পরে বিদ্যালয়ে এসে শিক্ষকদের কাছে সে কথা জানতে চাইলে তার কোনো উত্তর না দিয়ে তারা বলেন, ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষককে বলেন। ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক শরিফ উদ্দিন তালুকদার বিদ্যালয়েই আসেন না। তাহলে কার কাছে আমরা এই দুঃখের কথা বলব। তাই ক্ষুব্ধ ছাত্রছাত্রীরা বাধ্য হয়ে বিদ্যালয়ে তালা ঝুলিয়ে দিয়েছে। এদিকে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মোঃ শরিফ উদ্দিন তালুকদার তার বিরুদ্ধে আনা সব অভিযোগ মিথ্যা বলে দাবি করেন।
http://www.amardeshonline.com/pages/details/2010/03/12/22389
ইউনিয়ন পরিষদের জমিতে ঘর করছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি
শেরপুরের মির্জাপুর ইউনিয়ন পরিষদ চত্বরের জায়গা দখল করে ঘর তুলছেন চেয়ারম্যান। ছবি : কালের কণ্ঠ
Kalerkantho ঢাকা, শুক্রবার, ২৮ ফাল্গুন ১৪১৬, ২৫ রবিউল আউয়াল ১৪৩১, ১২ মার্চ ২০১০
ইউনিয়ন পরিষদের জমিতে ঘর করছেন চেয়ারম্যান জে এম রউফ, বগুড়াবগুড়ার শেরপুর উপজেলার মির্জাপুর বাজার এলাকায় ৫০ শতাংশ জায়গার ওপর তৈরি হচ্ছে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ কমপ্লেক্স। নির্মাণশৈলীর অংশ ভবনের পাশে দুই শতাংশের কিছু বেশি জায়গা ফাঁকা রাখা হয়েছে। গত সোমবার (৮ মার্চ) থেকে ওই জায়গায় ঘর তুলতে শুরু করেছেন ওই ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আলী মুন্টু। তিনি একই সঙ্গে উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি।
ইউনিয়ন পরিষদের ওই জমিতে ঘর তোলার কথা চেয়ারম্যান স্বীকার করেছেন। তিনি বলেছেন, 'অন্যরা যাতে দখল করতে না পারে, সে জন্য আমি ঘর তুলে জায়গাটি রক্ষা করেছি।' গতকাল বৃহস্পতিবার সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, কয়েকজন শ্রমিক ইট-সিমেন্ট দিয়ে একটি ঘর তৈরি করছেন। ইতিমধ্যে তাঁরা চার ফুটের মতো দেয়াল গেঁথেছেন। শ্রমিকরা জানালেন, চেয়ারম্যান তাঁদের ওই কাজে নিয়োগ করেছেন।
উপজেলা স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর সূত্র জানায়, গত বছরের ৫ জুলাই মির্জাপুর ইউনিয়ন কমপ্লেক্সের নির্মাণ কাজ শুরু হয়। পঞ্চাশ শতক জায়গার ওপর নির্মাণাধীন আধুনিক ডিজাইনের এ কমপ্লেক্সটির নির্মাণ ব্যয় ধরা হয় ৪৮ লাখ ৬৪ হাজার টাকা। চলতি বছরের ৩১ এপ্রিল নাগাদ এর নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ার কথা।
ইউনিয়ন পরিষদের কয়েকজন সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, 'চেয়ারম্যান নিজেই রক্ষক হয়ে ভক্ষক সেজেছেন। ক্ষমতাসীন দলের নেতা হওয়ায় তা বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগও করা সম্ভব হচ্ছে না।' তাঁরা জানান, ইউনিয়ন পরিষদ চত্বরে ঘর নির্মাণের জন্য চেয়ারম্যান পরিষদের কোনো মতামত নেননি।
শেরপুর উপজেলা প্রকৌশলী শামছুজ্জামান কালের কণ্ঠকে বলেন, 'এমন খবর আমার জানা ছিল না। সেখানে এ রকম ঘর নির্মাণের কোনো সুযোগ নেই। কারণ, নকশাবহির্ভূত কোনো কাজ ইউপি কমপ্লেক্সে হওয়ার কথা নয়।' তিনি বলেন, 'ঘর নির্মাণ করা হলে তা ভেঙে ফেলতে সব ধরনের আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।'
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মনজুর আলম প্রধান বলেন, 'কেউ ইউনিয়ন পরিষদের জায়গা দখল করে ঘর নির্মাণ করলে তাঁর বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কারণ ইউনিয়ন পরিষদের জায়গা সরকারি সম্পত্তি। সেখানে কেউ কোনো স্থাপনা নির্মাণ করতে পারেন না।'
মির্জাপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আলী মুন্টু কালের কণ্ঠকে বলেন, 'জায়গাটি অন্যরা দখলের চেষ্টা করছিল। তাই জায়গাটি দখলমুক্ত রাখতে ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে আমি ঘরটি নির্মাণের ব্যবস্থা করেছি। এতে আমার কোনো স্বার্থ জড়িত নেই।' তিনি দাবি করেন, বিষয়টি ইউনিয়ন পরিষদের সভায় আলোচনা করেই তিনি করেছেন।
জয় বাংলা স্লোগান দিয়ে মন্ত্রীর নামে চাঁদাবাজি!
KalerKantho ঢাকা, শুক্রবার, ২৮ ফাল্গুন ১৪১৬, ২৫ রবিউল আউয়াল ১৪৩১, ১২ মার্চ ২০১০
পার্থ সারথি দাস ও হায়দার আলী
পরিবহন খাতে শৃঙ্খলা আনার স্বার্থে চাঁদার বদলে মালিক ও শ্রমিকদের বিভিন্ন সমিতির 'পরিচালনা ব্যয়' নির্বাহের জন্য বাসপ্রতি টাকা তোলার হার বেঁধে দেওয়া হয়। নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খানের কাছ থেকে সম্মতি পেয়ে ঢাকার পুলিশ কমিশনার এ কে এম শহীদুল হক এ উদ্যোগ নেন। এর পর থেকেই মন্ত্রী বলে দিয়েছেন_ এই অজুহাত তুলে জয় বাংলা স্লোগান দিয়ে, মন্ত্রীর নাম ব্যবহার করে রাজধানীর সড়ক পরিবহনে চাঁদাবাজির 'উৎসব' শুরু হয়ে যায়।
জানা গেছে, টার্মিনাল বা সড়ক থেকে চাঁদা তোলা আইন অনুযায়ী অবৈধ। ১৯৬৯-এর শিল্প সম্পর্ক অধ্যাদেশ এবং 'শ্রম
আইন ২০০৬' উভয় স্থানেই ইউনিয়নগুলোকে শুধু তাদের সদস্যদের কাছ থেকে চাঁদা নেওয়ার ব্যাপারে বলা হয়েছে। তার পরও শ্রমিক কল্যাণসহ বিভিন্ন কারণ দেখিয়ে পরিবহনে বেপরোয়াভাবে চাঁদাবাজি হচ্ছে। নৌমন্ত্রী শাজাহান খান কালের কণ্ঠকে বলেছেন, আগে চাঁদাবাজি ছিল বেপরোয়া। তা বন্ধের জন্যই হার নির্ধারণ করা হয়েছে। এ অর্থ সবাই দিচ্ছে।
মহানগর পুলিশ কমিশনার এ কে এম শহীদুল হক কালের কণ্ঠকে বলেন, 'আমরা চাঁদাবাজি নিয়ন্ত্রণের জন্য সচেষ্ট রয়েছি। কোনো অভিযোগ আসছে না। এলে তো ব্যবস্থা নেবই।' তাঁর দাবি, পরিবহন সেক্টরে শৃঙ্খলা আনতে এ অর্থ তোলা হচ্ছে। এর কোনো আইন আছে কি না জানতে চাইলে তিনি আর কথা বলেননি।
জানা গেছে, গত বছরের ৪ আগস্ট মহানগর পুলিশ কমিশনার এ কে এম শহীদুল হকের সভাপতিত্বে এক সভায় পরিবহন মালিক সমিতি ও শ্রমিক ইউনিয়নের জন্য বাসপ্রতি চাঁদার হার নির্ধারণ করে দেওয়া হয়। সভায় সিদ্ধান্ত হয়, ঢাকার প্রতিটি বাস মালিক সমিতিকে ৩০ টাকা ও শ্রমিক ইউনিয়নকে ৪০ টাকা করে চাঁদা দেবে।
এ সভার সিদ্ধান্তের বিষয় ও চাঁদাবাজির হার উল্লেখ করে মালিক ও শ্রমিক সমিতি এবং ইউনিয়নগুলোতে চিঠি পাঠানো হয়। জানা গেছে, চিঠিতে যুগ্ম পুলিশ কমিশনার মঞ্জুরুল কাদের খান, উপ-কমিশনার মফিজ উদ্দিন খান (ট্রাফিক পশ্চিম), উপ-কমিশনার (ট্রাফিক পূর্ব), তেজগাঁও অঞ্চলের উপ-কমিশনার চৌধুরী মঞ্জুরুল কবীরের স্বাক্ষর ছিল। এসব চিঠি পাঠানো হয় ঢাকা সড়ক পরিবহন সমিতির মিরপুর চিড়িয়াখানা, পল্লবী, গাবতলী, সায়েদাবাদ, যাত্রাবাড়ী, মহাখালী, ফুলবাড়িয়া ও মোহাম্মদপুর আঞ্চলিক কার্যালয়ে।
এর পর থেকে রাজধানীর বিভিন্ন টার্মিনাল ও বাস কাউন্টার থেকে নৌমন্ত্রী ও পুলিশ কমিশনারের দোহাই দিয়ে তোলা হচ্ছে চাঁদা। এই চাঁদা তোলা হচ্ছে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের নিয়ন্ত্রণে বিভিন্ন সংগঠনের নামে। এই ফেডারেশনের কার্যকরী কমিটির সভাপতি নৌপরিবহনমন্ত্রী নিজেই। জানা গেছে, এর সহযোগী সংগঠন 'ঢাকা সড়ক পরিবহন সমিতি'র নামে চাঁদাবাজি হচ্ছে বেপরোয়াভাবে। এ সমিতির দপ্তর সম্পাদক সামদানি খন্দকার বলেন, অফিস পরিচালনা, মালিক সমিতির নেতাদের যাতায়াত, সড়কে সৃষ্ট বিশৃঙ্খলা ও মামলা পরিচালনায় এ অর্থ ব্যবহার করা হচ্ছে। তিনি বলেন, 'নৌমন্ত্রী শাজাহান খান ও পুলিশ কমিশনার শহীদুল হকের সঙ্গে আলোচনার পরই এ অর্থ তোলার সিদ্ধান্ত হয়। আমাদের উদ্যোগে এ অর্থ তোলা হয় মাত্র।'
রাজধানীতে ৫০টি বাস কম্পানির প্রায় আড়াই হাজার বাস চলাচল করে। এর মধ্যে অ্যাসোসিয়েশন অব বাস কম্পানিজের অধীনেই রয়েছে ৩৬টি কম্পানি। ঢাকা সড়ক পরিবহন সমিতি থেকে বারবার দাবি করা হলেও এসব কম্পানির মালিকরা এ চাঁদা দেওয়ার বিষয়ে নীরব থাকেন। এক মাস আগে থেকে ফোনে বারবার সড়ক পরিবহন সমিতির বিভিন্ন নেতা কম্পানির মালিকদের চাঁদা দেওয়ার জন্য হুমকিও দেন। কিন্তু মালিকরা তাতে কর্ণপাত করেননি।
অবশেষে গত সোমবার মিরপুর-২ সনি সিনেমা হলের সামনে সন্ত্রাসীরা চাঁদা দিতে অস্বীকারকারীদের ওপর 'জয়বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু' স্লোগান দিয়ে হামলা চালায়। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ঢাকা সড়ক পরিবহন সমিতি মিরপুর আঞ্চলিক কমিটির নেতা আবুল কাশেম ও দেলোয়ার হোসেনের নেতৃত্বে সন্ত্রাসীরা লাঠিসোঁটা নিয়ে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলে, 'রাজধানীতে বাস চালাতে হলে আমাদের নেতা নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান ও এনায়েত উল্লাহকে চাঁদা দিতেই হবে।'
সমিতির চিড়িয়াখানা-মিরপুর কমিটির সভাপতি আবুল কাশেম কালের কণ্ঠকে বলেন, পুলিশ কমিশনার সভা করে অর্থ তোলার কথা বলেছেন। এটা সবাইকেই দিতে হবে।
অ্যাসোসিয়েশন অব বাস কম্পানিজের সভাপতি রফিকুল ইসলাম কাজল বলেন, 'মন্ত্রী ও পুলিশই চাঁদা আদায়ের সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন। কিন্তু সরকার নিজে এ ধরনের কোনো সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করলে আমরা তা মানতে রাজি আছি। শ্রমিকদের কল্যাণের জন্য এই চাঁদা তোলার কথা বলা হচ্ছে। কিন্তু আমরা আমাদের কম্পানি গঠন করেছি কর্মকর্তা, কর্মচারী-শ্রমিকদের কল্যাণের জন্যই। অন্যরা এদের কল্যাণের জন্য অর্থ তুলবে কেন?'
ঢাকার বিভিন্ন পরিবহনের কর্মকর্তা-কর্মচারী ও শ্রমিকদের অভিযোগ, রাজধানীর পরিবহন সেক্টরে চাঁদাবাজির প্রত্যক্ষ মদদ দিচ্ছে নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান ও পুলিশ কমিশনারের টাকা তোলার ওই সিদ্ধান্ত।
তাঁর দাপটে চাঁদাবাজির অভিযোগের ব্যাপারে মন্ত্রী বলেন, 'আমি গণতন্ত্রে বিশ্বাস করি। দাপটে বিশ্বাস করি না।'
পার্থ সারথি দাস ও হায়দার আলী
পরিবহন খাতে শৃঙ্খলা আনার স্বার্থে চাঁদার বদলে মালিক ও শ্রমিকদের বিভিন্ন সমিতির 'পরিচালনা ব্যয়' নির্বাহের জন্য বাসপ্রতি টাকা তোলার হার বেঁধে দেওয়া হয়। নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খানের কাছ থেকে সম্মতি পেয়ে ঢাকার পুলিশ কমিশনার এ কে এম শহীদুল হক এ উদ্যোগ নেন। এর পর থেকেই মন্ত্রী বলে দিয়েছেন_ এই অজুহাত তুলে জয় বাংলা স্লোগান দিয়ে, মন্ত্রীর নাম ব্যবহার করে রাজধানীর সড়ক পরিবহনে চাঁদাবাজির 'উৎসব' শুরু হয়ে যায়।
জানা গেছে, টার্মিনাল বা সড়ক থেকে চাঁদা তোলা আইন অনুযায়ী অবৈধ। ১৯৬৯-এর শিল্প সম্পর্ক অধ্যাদেশ এবং 'শ্রম
আইন ২০০৬' উভয় স্থানেই ইউনিয়নগুলোকে শুধু তাদের সদস্যদের কাছ থেকে চাঁদা নেওয়ার ব্যাপারে বলা হয়েছে। তার পরও শ্রমিক কল্যাণসহ বিভিন্ন কারণ দেখিয়ে পরিবহনে বেপরোয়াভাবে চাঁদাবাজি হচ্ছে। নৌমন্ত্রী শাজাহান খান কালের কণ্ঠকে বলেছেন, আগে চাঁদাবাজি ছিল বেপরোয়া। তা বন্ধের জন্যই হার নির্ধারণ করা হয়েছে। এ অর্থ সবাই দিচ্ছে।
মহানগর পুলিশ কমিশনার এ কে এম শহীদুল হক কালের কণ্ঠকে বলেন, 'আমরা চাঁদাবাজি নিয়ন্ত্রণের জন্য সচেষ্ট রয়েছি। কোনো অভিযোগ আসছে না। এলে তো ব্যবস্থা নেবই।' তাঁর দাবি, পরিবহন সেক্টরে শৃঙ্খলা আনতে এ অর্থ তোলা হচ্ছে। এর কোনো আইন আছে কি না জানতে চাইলে তিনি আর কথা বলেননি।
জানা গেছে, গত বছরের ৪ আগস্ট মহানগর পুলিশ কমিশনার এ কে এম শহীদুল হকের সভাপতিত্বে এক সভায় পরিবহন মালিক সমিতি ও শ্রমিক ইউনিয়নের জন্য বাসপ্রতি চাঁদার হার নির্ধারণ করে দেওয়া হয়। সভায় সিদ্ধান্ত হয়, ঢাকার প্রতিটি বাস মালিক সমিতিকে ৩০ টাকা ও শ্রমিক ইউনিয়নকে ৪০ টাকা করে চাঁদা দেবে।
এ সভার সিদ্ধান্তের বিষয় ও চাঁদাবাজির হার উল্লেখ করে মালিক ও শ্রমিক সমিতি এবং ইউনিয়নগুলোতে চিঠি পাঠানো হয়। জানা গেছে, চিঠিতে যুগ্ম পুলিশ কমিশনার মঞ্জুরুল কাদের খান, উপ-কমিশনার মফিজ উদ্দিন খান (ট্রাফিক পশ্চিম), উপ-কমিশনার (ট্রাফিক পূর্ব), তেজগাঁও অঞ্চলের উপ-কমিশনার চৌধুরী মঞ্জুরুল কবীরের স্বাক্ষর ছিল। এসব চিঠি পাঠানো হয় ঢাকা সড়ক পরিবহন সমিতির মিরপুর চিড়িয়াখানা, পল্লবী, গাবতলী, সায়েদাবাদ, যাত্রাবাড়ী, মহাখালী, ফুলবাড়িয়া ও মোহাম্মদপুর আঞ্চলিক কার্যালয়ে।
এর পর থেকে রাজধানীর বিভিন্ন টার্মিনাল ও বাস কাউন্টার থেকে নৌমন্ত্রী ও পুলিশ কমিশনারের দোহাই দিয়ে তোলা হচ্ছে চাঁদা। এই চাঁদা তোলা হচ্ছে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের নিয়ন্ত্রণে বিভিন্ন সংগঠনের নামে। এই ফেডারেশনের কার্যকরী কমিটির সভাপতি নৌপরিবহনমন্ত্রী নিজেই। জানা গেছে, এর সহযোগী সংগঠন 'ঢাকা সড়ক পরিবহন সমিতি'র নামে চাঁদাবাজি হচ্ছে বেপরোয়াভাবে। এ সমিতির দপ্তর সম্পাদক সামদানি খন্দকার বলেন, অফিস পরিচালনা, মালিক সমিতির নেতাদের যাতায়াত, সড়কে সৃষ্ট বিশৃঙ্খলা ও মামলা পরিচালনায় এ অর্থ ব্যবহার করা হচ্ছে। তিনি বলেন, 'নৌমন্ত্রী শাজাহান খান ও পুলিশ কমিশনার শহীদুল হকের সঙ্গে আলোচনার পরই এ অর্থ তোলার সিদ্ধান্ত হয়। আমাদের উদ্যোগে এ অর্থ তোলা হয় মাত্র।'
রাজধানীতে ৫০টি বাস কম্পানির প্রায় আড়াই হাজার বাস চলাচল করে। এর মধ্যে অ্যাসোসিয়েশন অব বাস কম্পানিজের অধীনেই রয়েছে ৩৬টি কম্পানি। ঢাকা সড়ক পরিবহন সমিতি থেকে বারবার দাবি করা হলেও এসব কম্পানির মালিকরা এ চাঁদা দেওয়ার বিষয়ে নীরব থাকেন। এক মাস আগে থেকে ফোনে বারবার সড়ক পরিবহন সমিতির বিভিন্ন নেতা কম্পানির মালিকদের চাঁদা দেওয়ার জন্য হুমকিও দেন। কিন্তু মালিকরা তাতে কর্ণপাত করেননি।
অবশেষে গত সোমবার মিরপুর-২ সনি সিনেমা হলের সামনে সন্ত্রাসীরা চাঁদা দিতে অস্বীকারকারীদের ওপর 'জয়বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু' স্লোগান দিয়ে হামলা চালায়। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ঢাকা সড়ক পরিবহন সমিতি মিরপুর আঞ্চলিক কমিটির নেতা আবুল কাশেম ও দেলোয়ার হোসেনের নেতৃত্বে সন্ত্রাসীরা লাঠিসোঁটা নিয়ে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলে, 'রাজধানীতে বাস চালাতে হলে আমাদের নেতা নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান ও এনায়েত উল্লাহকে চাঁদা দিতেই হবে।'
সমিতির চিড়িয়াখানা-মিরপুর কমিটির সভাপতি আবুল কাশেম কালের কণ্ঠকে বলেন, পুলিশ কমিশনার সভা করে অর্থ তোলার কথা বলেছেন। এটা সবাইকেই দিতে হবে।
অ্যাসোসিয়েশন অব বাস কম্পানিজের সভাপতি রফিকুল ইসলাম কাজল বলেন, 'মন্ত্রী ও পুলিশই চাঁদা আদায়ের সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন। কিন্তু সরকার নিজে এ ধরনের কোনো সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করলে আমরা তা মানতে রাজি আছি। শ্রমিকদের কল্যাণের জন্য এই চাঁদা তোলার কথা বলা হচ্ছে। কিন্তু আমরা আমাদের কম্পানি গঠন করেছি কর্মকর্তা, কর্মচারী-শ্রমিকদের কল্যাণের জন্যই। অন্যরা এদের কল্যাণের জন্য অর্থ তুলবে কেন?'
ঢাকার বিভিন্ন পরিবহনের কর্মকর্তা-কর্মচারী ও শ্রমিকদের অভিযোগ, রাজধানীর পরিবহন সেক্টরে চাঁদাবাজির প্রত্যক্ষ মদদ দিচ্ছে নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান ও পুলিশ কমিশনারের টাকা তোলার ওই সিদ্ধান্ত।
তাঁর দাপটে চাঁদাবাজির অভিযোগের ব্যাপারে মন্ত্রী বলেন, 'আমি গণতন্ত্রে বিশ্বাস করি। দাপটে বিশ্বাস করি না।'
পরিবহনে চাঁদাবাজির 'উৎসব'
শফিকুল ইসলাম জুয়েল
Kalerkantho ঢাকা, শুক্রবার, ২৮ ফাল্গুন ১৪১৬, ২৫ রবিউল আউয়াল ১৪৩১, ১২ মার্চ ২০১০
মন্ত্রী বলছেন, চাঁদাবাজি চলছে। পুলিশ বলছে, চাঁদাবাজি চলছে। মালিক, শ্রমিক, যাত্রী, চালক_সবাই চাঁদাবাজির কথা একবাক্যে স্বীকার করছেন এবং বলছেন, এটা বন্ধ হওয়া দরকার। কিন্তু বন্ধ হচ্ছে না। বরং দিন দিন বেড়েই চলেছে। দেশের পরিবহন খাতে চাঁদাবাজি এখন 'অসহনীয়' পর্যায়ে পেঁৗছেছে। কেউ কিছু করতে পারছে না। শুধু একজন আরেকজনের ঘাড়ে দোষ চাপাচ্ছেন। মাঝখান থেকে যাত্রীদের গুণতে হচ্ছে বেশি টাকা। আর সেই টাকা চলে যাচ্ছে অসাধু মহলের পকেটে।
নৌ পরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান মাত্রাতিরিক্ত চাঁদাবাজির অভিযোগ মেনে নিয়ে নিজেও বললেন, 'সারা দেশে ভয়াবহভাবে বেড়েছে পরিবহনে চাঁদাবাজি। এটা বন্ধে পদক্ষেপ নিয়েও তেমন সফল হতে পারিনি।'
তিনি বলেন, 'চাঁদাবাজি বন্ধ করে পরিবহন সেক্টরে শৃঙ্খলা আনার জন্য আমরা উদ্যোগ নিয়েছিলাম। পরিবহন সেক্টর চলছে সেই ১৯৩৯ সালের নীতিমালার আলোকে তৈরি ১৯৮৩ সালের মোটরযান অধ্যাদেশ অনুযায়ী। সময়ের প্রয়োজনে যার সংশোধন ও সংযোজন জরুরি। আমরা চারটি কমিটি করে নতুন নীতিমালা প্রণয়ন এবং মালিক ও শ্রমিক সমিতিগুলোর পরিচালন ব্যয় মেটানোর জন্য সংগৃহীত টাকার পরিমাণ নির্দিষ্ট করে দেওয়ার চেষ্টা চালিয়েছিলাম। পরে যোগাযোগ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির কারণে তা স্থগিত করে দিতে হয়।' মন্ত্রী মনে করেন, মালিক-শ্রমিকদের সব সংগঠন একসঙ্গে করে নীতিমালার আলোকে এই পরিচালন ব্যয় নির্ধারণ করে নির্দেশনা এবং ব্যত্যয় ঘটলে জেল জরিমানার ব্যবস্থা চালু করলে সব ধরনের ক্ষমতার অপব্যবহার এবং চাঁদাবাজি বন্ধ করা সম্ভব।
মন্ত্রীর অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে যোগাযোগ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি শেখ মুজিবুর রহমান কালের কণ্ঠকে বলেন, 'পরিবহনে চাঁদাবাজির অভিযোগ আমরাও জানি। এটা দীর্ঘদিন ধরে চলে আসছে। অবশ্যই আমরা চাঁদাবাজির বিপক্ষে।' মন্ত্রীর উদ্যোগে কমিটি গঠন ও বাতিল প্রসঙ্গে তিনি বলেন, 'আগামী রবিবার আমরা বৈঠকে বসব। ওই দিন সব বিষয়ে আলোচনা করে সময়োপযোগী সব ধরনের পদক্ষেপ নেব।'
হাইওয়ে পুলিশ সুপার (দক্ষিণ) আনোয়ার কামাল কালের কণ্ঠকে বলেন, চাঁদাবাজির অভিযোগ আগের চেয়ে এখন কমেছে। পুলিশের যারা চাঁদাবাজির সঙ্গে জড়িত ছিল, তাদের অনেকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
বাসমালিক ও শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, উত্তরাঞ্চলের চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে একটি বাসকে ঢাকায় পেঁৗছাতে রাজশাহী, নাটোর, বনপাড়া ও গাবতলী_এই চার পয়েন্টে ৪০০ টাকা চাঁদা দিতে হয়। এসব চাঁদা তোলা হয় পরিবহন মালিক ও শ্রমিকদের বিভিন্ন সমিতির নামে। চাঁদার ভাগ পুলিশেরও থাকে। ঢাকা থেকে চাঁপাইনবাবগঞ্জ যেতে একটি বাসকে দিতে হয় ১৫০ টাকা। পঞ্চগড় থেকে ঢাকায় আসার বাসকে সৈয়দপুর, রংপুর, গোবিন্দগঞ্জ, পলাশবাড়ী, বগুড়া, মহাখালী ও গাবতলী এই ছয় পয়েন্টে ৬০০ টাকা চাঁদা দিতে হয়। আর ঢাকা থেকে পঞ্চগড় যেতে দিতে হয় ১৭০ টাকা। দক্ষিণাঞ্চলের খুলনা থেকে বাস ঢাকায় পেঁৗছাতে খুলনা, নওপাড়া, যশোর, কালিগঞ্জ, ঝিনাইদহ, মাগুরা পয়েন্টে চাঁদা দেয় ২৪৫ টাকা। আর ঢাকা থেকে খুলনা যেতে দিতে হয় ১০০ টাকা। চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় আসতে একটি বাসকে অন্তত পাঁচটি স্থানে গুনতে হয় সাড়ে ৩০০ থেকে ৫০০ টাকা। আর ঢাকা থেকে চট্টগ্রামে যেতে দিতে হয় ১৫০ টাকা চাঁদা।
পরিবহন মালিকদের বেশ কয়েকজন নাম প্রকাশ না করার শর্তে কালের কণ্ঠকে জানান, চাঁদার এই বাড়তি টাকা পুষিয়ে নিতে বাসের ভাড়া বাড়ানো হয়। আসলে টাকাটা যায় যাত্রীসাধারণের পকেট থেকে। এখন যে হারে চাঁদা নেওয়া হচ্ছে, তা না থাকলে অন্তত ২৫ ভাগ কম ভাড়ায় যাত্রী পরিবহন করা যেত।
পরিবহন মালিকদের ভাষ্য: বাংলাদেশ বাস ট্রাক ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি এবং এস আর ট্রাভেলসের চেয়ারম্যান জি এম সিরাজ কালের কণ্ঠকে জানান, ১৫ বছরের ব্যবধানে পরিবহন সেক্টরের চাঁদাবাজি তিন গুণেরও বেশি বেড়েছে। কেন্দ্রীয় ও জেলা পর্যায়ের মালিক সমিতি এবং শ্রমিক ইউনিয়ন সরকারের ছত্রছায়ায় বেশিরভাগ সময় রসিদ ছাড়াই চাঁদাবাজি করে যাচ্ছে। বিশেষ করে বগুড়ায় সর্বোচ্চ চাঁদাবাজি চলছে। মালিকদের আয়ের সিংহভাগই চাঁদার পেছনে খরচ হওয়ায় বারবার মালিকরা প্রতিবাদ করছেন। কিন্তু কোনো প্রতিকার পাচ্ছেন না। তিনি মনে করেন, চাঁদা কমলে ভাড়া কমানোসহ যাত্রীদের সুযোগ-সুবিধা আরো বাড়ানো সম্ভব হতো।
সোহাগ পরিবহনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফারুক তালুকদার সোহেল ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, 'চাঁদার পরিমাণ যে হারে বাড়ছে তাতে মনে হয় পরিবহন ব্যবসা করাই আমাদের অপরাধ। সরকারকে সব ধরনের ট্যাক্স-ভ্যাট দিয়ে ব্যবসা করি, অথচ পথে পথে গুনতে হয় টাকা।' তিনি মনে করেন, সরকারের ভাবমূর্তি রক্ষার জন্য প্রত্যক্ষ নজরদারির মাধ্যমে নীতিমালা করে ঘোষণা দিয়ে দৈনিক চাঁদা প্রথা বন্ধ করে মাসিক কিংবা বার্ষিকভাবে নিদিষ্ট টাকা তোলার উদ্যোগ নেওয়া দরকার।
শ্যমলী পরিবহনের স্বত্বাধিকারী শ্যামল চন্দ্র ঘোষ বলেন, আওয়ামী লীগের ১৯৯৬ সালের শাসনামলে শেষের এক বছর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী নাসিমের সময় চাঁদাবাজদের দাপট কম ছিল। বিএনপি সরকার এলে চাঁদাবাজরা বেপরোয়া হয়ে উঠে। পরে তত্ত্বাধায়ক সরকারের আমলে কমে যায়। বর্তমান সরকার ক্ষমতার আসার দুই-তিন মাস ভালোই ছিল। কিন্তু এখন এতটাই বেপরোয়া যে, বাসমালিকরা অতিষ্ট হয়ে উঠেছেন। তিনি বলেন, 'এভাবে চলতে থাকলে আমাদের গাড়ি চালানো বন্ধ করা ছাড়া উপায় থাকবে না।'
ট্রাকে চাঁদা আরো বেশি : ট্রাক মালিক ও শ্রমিকরা জানান, রাজধানীসহ সারা দেশের মহাসড়কে চলাচলকারী ট্রাকে আরো বেশি চাঁদাবাজি চলছে। দিনের চেয়ে রাতের বেলায় এ চাঁদাবাজির হার বেশি। ঢাকা থেকে দেশের বিভিন্ন রুটে একটি ট্রাককে আসা-যাওয়ায় প্রতিদিন কমপক্ষে ৫০০ থেকে ৭৫০ টাকা পর্যন্ত চাঁদা গুনতে হচ্ছে। ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটে কমপক্ষে এক হাজার গাড়ি প্রতিদিন চলাচল করে। এ রুটের চালক মো: আব্দুর রশিদ জানান, দাউদকান্দি থেকে চট্টগ্রাম শহরে ঢুকতে দাউদকান্দি, চান্দিনা, চৌদ্দগ্রাম, ফেনী, বারইহাট_এ পাঁচটি পয়েন্টে ৫০ টাকা থেকে ১০০ টাকা পর্যন্ত চাঁদা দিতেই হয়। এ ছাড়া ছোটখাটো আরো ৭-৮টি পয়েন্টে ২০ থেকে ৩০ টাকা চাঁদা দিতে হয়, যা বিভিন্ন ব্যক্তির নামে তোলা হয়। ঢাকা-সিলেট রুটে প্রতিদিন কমপক্ষে ২০০ ট্রাক চলাচল করে। ঢাকা খুলনা রুটে চলে ১০০ থেকে ১৫০টি ট্রাক। উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন স্থানে প্রতিদিন আসা-যাওয়া করে পাঁচ শতাধিক ট্রাক। এসব রুটে মাল বহনকারী প্রতিটি ট্রাকের চালককেই প্রতিদিন ৪০০ থেকে ৬০০ টাকা পর্যন্ত চাঁদা দিতে হয়। এ ছাড়া পুলিশ, বখাটে মাস্তানসহ অনেকের হয়রানিও সহ্য করতে হয়।
বাংলাদেশ আন্তজেলা ট্রাকচালক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল হক কালের কণ্ঠকে বলেন, এ সরকার আসার কিছুদিন পর থেকে চাঁদাবাজি বেড়ে গেছে। রাতের বেলা যানজটহীন রাস্তায়ও ট্রাক থামিয়ে চাঁদাবাজি করা হচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ে দফায় দফায় বৈঠক করেও কোনো লাভ হয়নি। তিনি বলেন, 'এ ব্যাপারে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের কার্যকরী কমিটির সভাপতি নৌমন্ত্রী শাজাহান খানকেও আমরা বলেছি। কিন্তু কোনো কাজ হচ্ছে না।'
নৌপরিবহনেও রেহাই নেই: লঞ্চমালিক ও শ্রমিকরা জানান, ঢাকা থেকে শরীয়তপুরের ডামুড্যা পেঁৗছাতে একেকটি লঞ্চকে পথে চাঁদপুর, ইশানবালা, জালালপুর, চরমাইজারা, কোদালপুর ও পট্টিতে থামতে হয়। প্রতিটি স্থানে একেকটি লঞ্চকে প্রতি ট্রিপে গড়ে ৫০ থেকে ১০০ টাকা করে প্রায় ৩০০ থেকে ৫০০ টাকা চাঁদা দিতে হয়। এ রুটে চলাচলকারী এমভি ঝাণ্ডা ও এমভি আওলাদ লঞ্চের সুপার ভাইজার রুহুল আমিন এ টাকাকে চাঁদা হিসেবে নয়, বকশিস হিসেবে দেওয়া হয় বলে স্বীকার করেন। এভাবে ঢাকায় আসার পথেও সমপরিমাণ টাকা গুনতে হয়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক লঞ্চমালিক জানিয়েছেন, ঢাকাসহ অন্য বড় নৌবন্দরগুলোতে লঞ্চ প্রতি ট্রিপে ২০০ থেকে ৩০০ টাকা চাঁদা দিতে হয় মালিক সমিতির নামে। তবে, এই টাকার কোনো ধরনের সুফল পাওয়া যায় না।
ঢাকা থেকে সারা দেশের দেড়শ রুটে ডবল ডেকার (বড় লঞ্চ) দুই শতাধিক লঞ্চ যাতায়াত করে।
Kalerkantho ঢাকা, শুক্রবার, ২৮ ফাল্গুন ১৪১৬, ২৫ রবিউল আউয়াল ১৪৩১, ১২ মার্চ ২০১০
মন্ত্রী বলছেন, চাঁদাবাজি চলছে। পুলিশ বলছে, চাঁদাবাজি চলছে। মালিক, শ্রমিক, যাত্রী, চালক_সবাই চাঁদাবাজির কথা একবাক্যে স্বীকার করছেন এবং বলছেন, এটা বন্ধ হওয়া দরকার। কিন্তু বন্ধ হচ্ছে না। বরং দিন দিন বেড়েই চলেছে। দেশের পরিবহন খাতে চাঁদাবাজি এখন 'অসহনীয়' পর্যায়ে পেঁৗছেছে। কেউ কিছু করতে পারছে না। শুধু একজন আরেকজনের ঘাড়ে দোষ চাপাচ্ছেন। মাঝখান থেকে যাত্রীদের গুণতে হচ্ছে বেশি টাকা। আর সেই টাকা চলে যাচ্ছে অসাধু মহলের পকেটে।
নৌ পরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান মাত্রাতিরিক্ত চাঁদাবাজির অভিযোগ মেনে নিয়ে নিজেও বললেন, 'সারা দেশে ভয়াবহভাবে বেড়েছে পরিবহনে চাঁদাবাজি। এটা বন্ধে পদক্ষেপ নিয়েও তেমন সফল হতে পারিনি।'
তিনি বলেন, 'চাঁদাবাজি বন্ধ করে পরিবহন সেক্টরে শৃঙ্খলা আনার জন্য আমরা উদ্যোগ নিয়েছিলাম। পরিবহন সেক্টর চলছে সেই ১৯৩৯ সালের নীতিমালার আলোকে তৈরি ১৯৮৩ সালের মোটরযান অধ্যাদেশ অনুযায়ী। সময়ের প্রয়োজনে যার সংশোধন ও সংযোজন জরুরি। আমরা চারটি কমিটি করে নতুন নীতিমালা প্রণয়ন এবং মালিক ও শ্রমিক সমিতিগুলোর পরিচালন ব্যয় মেটানোর জন্য সংগৃহীত টাকার পরিমাণ নির্দিষ্ট করে দেওয়ার চেষ্টা চালিয়েছিলাম। পরে যোগাযোগ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির কারণে তা স্থগিত করে দিতে হয়।' মন্ত্রী মনে করেন, মালিক-শ্রমিকদের সব সংগঠন একসঙ্গে করে নীতিমালার আলোকে এই পরিচালন ব্যয় নির্ধারণ করে নির্দেশনা এবং ব্যত্যয় ঘটলে জেল জরিমানার ব্যবস্থা চালু করলে সব ধরনের ক্ষমতার অপব্যবহার এবং চাঁদাবাজি বন্ধ করা সম্ভব।
মন্ত্রীর অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে যোগাযোগ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি শেখ মুজিবুর রহমান কালের কণ্ঠকে বলেন, 'পরিবহনে চাঁদাবাজির অভিযোগ আমরাও জানি। এটা দীর্ঘদিন ধরে চলে আসছে। অবশ্যই আমরা চাঁদাবাজির বিপক্ষে।' মন্ত্রীর উদ্যোগে কমিটি গঠন ও বাতিল প্রসঙ্গে তিনি বলেন, 'আগামী রবিবার আমরা বৈঠকে বসব। ওই দিন সব বিষয়ে আলোচনা করে সময়োপযোগী সব ধরনের পদক্ষেপ নেব।'
হাইওয়ে পুলিশ সুপার (দক্ষিণ) আনোয়ার কামাল কালের কণ্ঠকে বলেন, চাঁদাবাজির অভিযোগ আগের চেয়ে এখন কমেছে। পুলিশের যারা চাঁদাবাজির সঙ্গে জড়িত ছিল, তাদের অনেকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
বাসমালিক ও শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, উত্তরাঞ্চলের চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে একটি বাসকে ঢাকায় পেঁৗছাতে রাজশাহী, নাটোর, বনপাড়া ও গাবতলী_এই চার পয়েন্টে ৪০০ টাকা চাঁদা দিতে হয়। এসব চাঁদা তোলা হয় পরিবহন মালিক ও শ্রমিকদের বিভিন্ন সমিতির নামে। চাঁদার ভাগ পুলিশেরও থাকে। ঢাকা থেকে চাঁপাইনবাবগঞ্জ যেতে একটি বাসকে দিতে হয় ১৫০ টাকা। পঞ্চগড় থেকে ঢাকায় আসার বাসকে সৈয়দপুর, রংপুর, গোবিন্দগঞ্জ, পলাশবাড়ী, বগুড়া, মহাখালী ও গাবতলী এই ছয় পয়েন্টে ৬০০ টাকা চাঁদা দিতে হয়। আর ঢাকা থেকে পঞ্চগড় যেতে দিতে হয় ১৭০ টাকা। দক্ষিণাঞ্চলের খুলনা থেকে বাস ঢাকায় পেঁৗছাতে খুলনা, নওপাড়া, যশোর, কালিগঞ্জ, ঝিনাইদহ, মাগুরা পয়েন্টে চাঁদা দেয় ২৪৫ টাকা। আর ঢাকা থেকে খুলনা যেতে দিতে হয় ১০০ টাকা। চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় আসতে একটি বাসকে অন্তত পাঁচটি স্থানে গুনতে হয় সাড়ে ৩০০ থেকে ৫০০ টাকা। আর ঢাকা থেকে চট্টগ্রামে যেতে দিতে হয় ১৫০ টাকা চাঁদা।
পরিবহন মালিকদের বেশ কয়েকজন নাম প্রকাশ না করার শর্তে কালের কণ্ঠকে জানান, চাঁদার এই বাড়তি টাকা পুষিয়ে নিতে বাসের ভাড়া বাড়ানো হয়। আসলে টাকাটা যায় যাত্রীসাধারণের পকেট থেকে। এখন যে হারে চাঁদা নেওয়া হচ্ছে, তা না থাকলে অন্তত ২৫ ভাগ কম ভাড়ায় যাত্রী পরিবহন করা যেত।
পরিবহন মালিকদের ভাষ্য: বাংলাদেশ বাস ট্রাক ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি এবং এস আর ট্রাভেলসের চেয়ারম্যান জি এম সিরাজ কালের কণ্ঠকে জানান, ১৫ বছরের ব্যবধানে পরিবহন সেক্টরের চাঁদাবাজি তিন গুণেরও বেশি বেড়েছে। কেন্দ্রীয় ও জেলা পর্যায়ের মালিক সমিতি এবং শ্রমিক ইউনিয়ন সরকারের ছত্রছায়ায় বেশিরভাগ সময় রসিদ ছাড়াই চাঁদাবাজি করে যাচ্ছে। বিশেষ করে বগুড়ায় সর্বোচ্চ চাঁদাবাজি চলছে। মালিকদের আয়ের সিংহভাগই চাঁদার পেছনে খরচ হওয়ায় বারবার মালিকরা প্রতিবাদ করছেন। কিন্তু কোনো প্রতিকার পাচ্ছেন না। তিনি মনে করেন, চাঁদা কমলে ভাড়া কমানোসহ যাত্রীদের সুযোগ-সুবিধা আরো বাড়ানো সম্ভব হতো।
সোহাগ পরিবহনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফারুক তালুকদার সোহেল ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, 'চাঁদার পরিমাণ যে হারে বাড়ছে তাতে মনে হয় পরিবহন ব্যবসা করাই আমাদের অপরাধ। সরকারকে সব ধরনের ট্যাক্স-ভ্যাট দিয়ে ব্যবসা করি, অথচ পথে পথে গুনতে হয় টাকা।' তিনি মনে করেন, সরকারের ভাবমূর্তি রক্ষার জন্য প্রত্যক্ষ নজরদারির মাধ্যমে নীতিমালা করে ঘোষণা দিয়ে দৈনিক চাঁদা প্রথা বন্ধ করে মাসিক কিংবা বার্ষিকভাবে নিদিষ্ট টাকা তোলার উদ্যোগ নেওয়া দরকার।
শ্যমলী পরিবহনের স্বত্বাধিকারী শ্যামল চন্দ্র ঘোষ বলেন, আওয়ামী লীগের ১৯৯৬ সালের শাসনামলে শেষের এক বছর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী নাসিমের সময় চাঁদাবাজদের দাপট কম ছিল। বিএনপি সরকার এলে চাঁদাবাজরা বেপরোয়া হয়ে উঠে। পরে তত্ত্বাধায়ক সরকারের আমলে কমে যায়। বর্তমান সরকার ক্ষমতার আসার দুই-তিন মাস ভালোই ছিল। কিন্তু এখন এতটাই বেপরোয়া যে, বাসমালিকরা অতিষ্ট হয়ে উঠেছেন। তিনি বলেন, 'এভাবে চলতে থাকলে আমাদের গাড়ি চালানো বন্ধ করা ছাড়া উপায় থাকবে না।'
ট্রাকে চাঁদা আরো বেশি : ট্রাক মালিক ও শ্রমিকরা জানান, রাজধানীসহ সারা দেশের মহাসড়কে চলাচলকারী ট্রাকে আরো বেশি চাঁদাবাজি চলছে। দিনের চেয়ে রাতের বেলায় এ চাঁদাবাজির হার বেশি। ঢাকা থেকে দেশের বিভিন্ন রুটে একটি ট্রাককে আসা-যাওয়ায় প্রতিদিন কমপক্ষে ৫০০ থেকে ৭৫০ টাকা পর্যন্ত চাঁদা গুনতে হচ্ছে। ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটে কমপক্ষে এক হাজার গাড়ি প্রতিদিন চলাচল করে। এ রুটের চালক মো: আব্দুর রশিদ জানান, দাউদকান্দি থেকে চট্টগ্রাম শহরে ঢুকতে দাউদকান্দি, চান্দিনা, চৌদ্দগ্রাম, ফেনী, বারইহাট_এ পাঁচটি পয়েন্টে ৫০ টাকা থেকে ১০০ টাকা পর্যন্ত চাঁদা দিতেই হয়। এ ছাড়া ছোটখাটো আরো ৭-৮টি পয়েন্টে ২০ থেকে ৩০ টাকা চাঁদা দিতে হয়, যা বিভিন্ন ব্যক্তির নামে তোলা হয়। ঢাকা-সিলেট রুটে প্রতিদিন কমপক্ষে ২০০ ট্রাক চলাচল করে। ঢাকা খুলনা রুটে চলে ১০০ থেকে ১৫০টি ট্রাক। উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন স্থানে প্রতিদিন আসা-যাওয়া করে পাঁচ শতাধিক ট্রাক। এসব রুটে মাল বহনকারী প্রতিটি ট্রাকের চালককেই প্রতিদিন ৪০০ থেকে ৬০০ টাকা পর্যন্ত চাঁদা দিতে হয়। এ ছাড়া পুলিশ, বখাটে মাস্তানসহ অনেকের হয়রানিও সহ্য করতে হয়।
বাংলাদেশ আন্তজেলা ট্রাকচালক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল হক কালের কণ্ঠকে বলেন, এ সরকার আসার কিছুদিন পর থেকে চাঁদাবাজি বেড়ে গেছে। রাতের বেলা যানজটহীন রাস্তায়ও ট্রাক থামিয়ে চাঁদাবাজি করা হচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ে দফায় দফায় বৈঠক করেও কোনো লাভ হয়নি। তিনি বলেন, 'এ ব্যাপারে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের কার্যকরী কমিটির সভাপতি নৌমন্ত্রী শাজাহান খানকেও আমরা বলেছি। কিন্তু কোনো কাজ হচ্ছে না।'
নৌপরিবহনেও রেহাই নেই: লঞ্চমালিক ও শ্রমিকরা জানান, ঢাকা থেকে শরীয়তপুরের ডামুড্যা পেঁৗছাতে একেকটি লঞ্চকে পথে চাঁদপুর, ইশানবালা, জালালপুর, চরমাইজারা, কোদালপুর ও পট্টিতে থামতে হয়। প্রতিটি স্থানে একেকটি লঞ্চকে প্রতি ট্রিপে গড়ে ৫০ থেকে ১০০ টাকা করে প্রায় ৩০০ থেকে ৫০০ টাকা চাঁদা দিতে হয়। এ রুটে চলাচলকারী এমভি ঝাণ্ডা ও এমভি আওলাদ লঞ্চের সুপার ভাইজার রুহুল আমিন এ টাকাকে চাঁদা হিসেবে নয়, বকশিস হিসেবে দেওয়া হয় বলে স্বীকার করেন। এভাবে ঢাকায় আসার পথেও সমপরিমাণ টাকা গুনতে হয়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক লঞ্চমালিক জানিয়েছেন, ঢাকাসহ অন্য বড় নৌবন্দরগুলোতে লঞ্চ প্রতি ট্রিপে ২০০ থেকে ৩০০ টাকা চাঁদা দিতে হয় মালিক সমিতির নামে। তবে, এই টাকার কোনো ধরনের সুফল পাওয়া যায় না।
ঢাকা থেকে সারা দেশের দেড়শ রুটে ডবল ডেকার (বড় লঞ্চ) দুই শতাধিক লঞ্চ যাতায়াত করে।
Wednesday, 10 March 2010
কার্যাদেশের আগেই ঠিকাদার নির্বাচন, ১০ ভাগ অগ্রিমও!
কার্যাদেশের আগেই ঠিকাদার নির্বাচন, ১০ ভাগ অগ্রিমও!
Mzamin Thursday, 11 March 2010
দীন ইসলাম: দরপত্র খোলা হয়নি। সর্বনিম্ন দরদাতা নির্ণয় করে কার্যাদেশও দেয়া হয়নি। এর আগেই কাজের বিপরীতে শতকরা ১০ ভাগ অগ্রিম দেয়ার তোড়জোড় শুরু করেছে যোগাযোগ মন্ত্রণালয়। এজন্য গত ৮ই মার্চ ব্যাংক গ্যারান্টির বিপরীতে অগ্রিম চেয়ে অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির কাছে একটি সারসংক্ষেপ পাঠিয়েছে যোগাযোগ মন্ত্রণালয়।
তাই প্রকল্প অনুমোদনের পর থেকে বাংলাদেশ রেলওয়ে ও মন্ত্রণালয়ের এমন অতিউৎসাহ নানা প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। কারণ জিওবি অর্থায়নে বাসত্মবায়ন হচ্ছে এমন কোন প্রকল্পের বিপরীতে অগ্রিম দেয়ার নিয়ম নেই। সংশিস্নষ্ট সূত্রে জানা গেছে, জিওবি অর্থায়নে বাংলাদেশ রেলওয়ের সৈয়দপুর-চিলাহাটি সেকশনের পুনর্বাসন প্রকল্পটি বর্তমান সরকারের আমলে গত ৭ই জানুয়ারি একনেক অনুমোদন করে। প্রায় ২০০ কোটি টাকা ব্যয়ের এ প্রকল্পটি এ বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে শেষ করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। এই প্রকল্পের অধীনে রেলওয়ের বিভিন্ন সামগ্রী সরবরাহের জন্য গত ২৪শে জানুয়ারি দরপত্র আহবান করা হয়েছে। আগামী ১৫ই মার্চ দরপত্র খোলার কথা। এরপরই সর্বনিম্ন দরদাতা ঠিকাদার নির্বাচন করা হবে। যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের সংশিস্নষ্ট সূত্রে জানা গেছে, আনঅফিসিয়ালি ঠিকাদার নির্বাচন করে ফেলেছে মন্ত্রণালয়। তাদের সঙ্গে মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদেরও রয়েছে বেশ সুসম্পর্ক। এজন্য বিশেষ দু’টি কোম্পানি কাজ পেতে যাচ্ছে এমন ভাবনায় নানা যুক্তি দাঁড় করিয়ে অগ্রিম চাওয়া হয়েছে। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, এ বিভাগ থেকে ২০০৪ সালে জারি করা এক আদেশে বলা হয়েছে প্রকল্প সুষ্ঠুভাবে বাসত্মবায়নের স্বার্থে শুধুমাত্র বিদেশী সাহায্যপুষ্ট প্রকল্পে যথাযথ ব্যাংক গ্যারান্টি থাকলে শতকরা ১০ ভাগ ব্যাংক গ্যারান্টি দেয়া যাবে। তবে দেশীয় অর্থায়নে পরিচালিত/বাসত্মবায়নাধীন কোন প্রকল্পে ঠিকাদার/ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান/পরামর্শক প্রতিষ্ঠানকে অগ্রিম না দেয়ার সিদ্ধানত্ম বহাল থাকবে। তাই কোনও মতেই বাংলাদেশ রেলওয়ের সৈয়দপুর-চিলাহাটি সেকশনের পুনর্বাসন প্রকল্পের বিপরীতে অগ্রিম অর্থ বরাদ্দ দেয়া যায় না। তবে সরকারি ক্রয় সংক্রানত্ম মন্ত্রিসভা কমিটির জন্য তৈরি করা সারসংড়্গেপে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সিদ্ধানেত্মর সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করে বলেছে, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের ওই সিদ্ধানত্ম অনুযায়ী জিওবি অর্থায়নে প্রকল্প বাসত্মবায়নকালে ঠিকাদারের ব্যাংক গ্যারান্টির বিপরীতে অগ্রিম দেয়ার সুযোগ না থাকায় প্রকল্পের দরপত্রের উদ্ধৃত দরের উচ্চ হার এবং প্রকল্প কাজের মন্থর গতি দেখা যায়। ফলে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি বাসত্মবায়ন করা যায় না। অগ্রিম দিতে অতিউৎসাহী হয়ে যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের সারসংড়্গেপের দ্বিতীয় প্যারায় বলা হয়েছে, পাবলিক প্রকিউরমেন্ট বিধিমালা, ২০০৮-এ ঠিকাদারকে অগ্রিম দেয়ার ড়্গেত্রে কোন নিষেধাজ্ঞা নেই। তবে সিপিটিইউ প্রকাশিত স্ট্যার্ন্ডাড ডকুমেন্ট ফর প্রকিউরমেন্ট অব ওয়ার্ক্স, পিডবিস্নউ-৩-এর জিসিসি-৭০.১ অনুযায়ী অগ্রিম দেয়ার বিধান নেই। তবে শতভাগ সরকারি অর্থায়নে বাসত্মবায়নাধীন প্রকল্পে সরকারের সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা না থাকলে অগ্রিম দেয়া যায় না।
ওদিকে সারসংড়্গেপের তৃতীয় প্যারায় রেলওয়ে যন্ত্রপাতির বিষয়ে নানা তথ্য দিয়ে বলা হয়েছে, রেল, রেলপথ নির্মাণ ও পুনর্বাসন কাজের জন্য প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি বেশির ভাগই আমদানিযোগ্য পণ্য। প্রতিটি পুনর্বাসন কাজের শতকরা ৩০ থেকে ৫০ ভাগ মূল্য রেল কেনায় ব্যয় করা হয়। এছাড়া সিস্নপার, পয়েন্টস অ্যান্ড ক্রসিং, ইলাস্টিক রেল ক্লিপ, ফিস পেস্নট, ফিস বোল্ট আদেশ দিলে তৈরি করে দেয়া হয়। এসব কাজ করতে গিয়ে ঠিকাদারদের বড় অঙ্কের অর্থ বিনিয়োগ করতে হয়। তাই দরপত্রে অগ্রিম দেয়ার সংস্থান না থাকায় দরদাতা উচ্চ দর দেয়। ফলে প্রকল্প বাসত্মবায়নে ধীরগতি দেখা যায়। ক্রয় সংক্রানত্ম মন্ত্রিসভা কমিটির জন্য তৈরি করা সারসংড়্গেপ সূত্রে জানা গেছে, রেলওয়ে নিরাপদ ও ব্যয় সাশ্রয়ী স্থল পরিবহন বিধায় বাংলাদেশ রেলওয়ের সৈয়দপুর-চিলাহাটি সেকশন পুনর্বাসন শীর্ষক প্রকল্পটি একটি জনগুরম্নত্বসম্পন্ন প্রকল্প। এই প্রকল্পের প্রাক্কলিত মূল্য বিদেশী সাহায্যপুষ্ট প্রকল্পে ব্যাংক গ্যারান্টির বিপরীতে শতকরা ১০ ভাগ অগ্রিম দেয়া যায়। রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে, ব্যাংক গ্যারান্টির বিপরীতে অগ্রিম দেয়া ও এ সংক্রানত্ম শর্ত দরপত্র দলিলে যোগ করার অনুমোদন চেয়ে চিঠি দিয়েছে বাংলাদেশ রেলওয়ে। তাদের চিঠি পেয়েই বিদেশী সাহায্যপুষ্ট প্রকল্পের মতো জিওবি অর্থায়নে বাংলাদেশ রেলওয়ের সৈয়দপুর-চিলাহাটি প্রকল্পের অধীনে প্যাকেজ নং ডবিস্নউডিআই কাজের সুষ্ঠু বাসত্মবায়নের জন্য ব্যাংক গ্যারান্টির বিপরীতে শতকরা ১০ ভাগ অগ্রিম দেয়ার অনুমতি চেয়ে প্রসত্মাব পাঠানো হয়েছে।
http://www.mzamin.com/index.php?option=com_content&task=view&id=7792&Itemid=83
Mzamin Thursday, 11 March 2010
দীন ইসলাম: দরপত্র খোলা হয়নি। সর্বনিম্ন দরদাতা নির্ণয় করে কার্যাদেশও দেয়া হয়নি। এর আগেই কাজের বিপরীতে শতকরা ১০ ভাগ অগ্রিম দেয়ার তোড়জোড় শুরু করেছে যোগাযোগ মন্ত্রণালয়। এজন্য গত ৮ই মার্চ ব্যাংক গ্যারান্টির বিপরীতে অগ্রিম চেয়ে অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির কাছে একটি সারসংক্ষেপ পাঠিয়েছে যোগাযোগ মন্ত্রণালয়।
তাই প্রকল্প অনুমোদনের পর থেকে বাংলাদেশ রেলওয়ে ও মন্ত্রণালয়ের এমন অতিউৎসাহ নানা প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। কারণ জিওবি অর্থায়নে বাসত্মবায়ন হচ্ছে এমন কোন প্রকল্পের বিপরীতে অগ্রিম দেয়ার নিয়ম নেই। সংশিস্নষ্ট সূত্রে জানা গেছে, জিওবি অর্থায়নে বাংলাদেশ রেলওয়ের সৈয়দপুর-চিলাহাটি সেকশনের পুনর্বাসন প্রকল্পটি বর্তমান সরকারের আমলে গত ৭ই জানুয়ারি একনেক অনুমোদন করে। প্রায় ২০০ কোটি টাকা ব্যয়ের এ প্রকল্পটি এ বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে শেষ করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। এই প্রকল্পের অধীনে রেলওয়ের বিভিন্ন সামগ্রী সরবরাহের জন্য গত ২৪শে জানুয়ারি দরপত্র আহবান করা হয়েছে। আগামী ১৫ই মার্চ দরপত্র খোলার কথা। এরপরই সর্বনিম্ন দরদাতা ঠিকাদার নির্বাচন করা হবে। যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের সংশিস্নষ্ট সূত্রে জানা গেছে, আনঅফিসিয়ালি ঠিকাদার নির্বাচন করে ফেলেছে মন্ত্রণালয়। তাদের সঙ্গে মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদেরও রয়েছে বেশ সুসম্পর্ক। এজন্য বিশেষ দু’টি কোম্পানি কাজ পেতে যাচ্ছে এমন ভাবনায় নানা যুক্তি দাঁড় করিয়ে অগ্রিম চাওয়া হয়েছে। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, এ বিভাগ থেকে ২০০৪ সালে জারি করা এক আদেশে বলা হয়েছে প্রকল্প সুষ্ঠুভাবে বাসত্মবায়নের স্বার্থে শুধুমাত্র বিদেশী সাহায্যপুষ্ট প্রকল্পে যথাযথ ব্যাংক গ্যারান্টি থাকলে শতকরা ১০ ভাগ ব্যাংক গ্যারান্টি দেয়া যাবে। তবে দেশীয় অর্থায়নে পরিচালিত/বাসত্মবায়নাধীন কোন প্রকল্পে ঠিকাদার/ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান/পরামর্শক প্রতিষ্ঠানকে অগ্রিম না দেয়ার সিদ্ধানত্ম বহাল থাকবে। তাই কোনও মতেই বাংলাদেশ রেলওয়ের সৈয়দপুর-চিলাহাটি সেকশনের পুনর্বাসন প্রকল্পের বিপরীতে অগ্রিম অর্থ বরাদ্দ দেয়া যায় না। তবে সরকারি ক্রয় সংক্রানত্ম মন্ত্রিসভা কমিটির জন্য তৈরি করা সারসংড়্গেপে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সিদ্ধানেত্মর সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করে বলেছে, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের ওই সিদ্ধানত্ম অনুযায়ী জিওবি অর্থায়নে প্রকল্প বাসত্মবায়নকালে ঠিকাদারের ব্যাংক গ্যারান্টির বিপরীতে অগ্রিম দেয়ার সুযোগ না থাকায় প্রকল্পের দরপত্রের উদ্ধৃত দরের উচ্চ হার এবং প্রকল্প কাজের মন্থর গতি দেখা যায়। ফলে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি বাসত্মবায়ন করা যায় না। অগ্রিম দিতে অতিউৎসাহী হয়ে যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের সারসংড়্গেপের দ্বিতীয় প্যারায় বলা হয়েছে, পাবলিক প্রকিউরমেন্ট বিধিমালা, ২০০৮-এ ঠিকাদারকে অগ্রিম দেয়ার ড়্গেত্রে কোন নিষেধাজ্ঞা নেই। তবে সিপিটিইউ প্রকাশিত স্ট্যার্ন্ডাড ডকুমেন্ট ফর প্রকিউরমেন্ট অব ওয়ার্ক্স, পিডবিস্নউ-৩-এর জিসিসি-৭০.১ অনুযায়ী অগ্রিম দেয়ার বিধান নেই। তবে শতভাগ সরকারি অর্থায়নে বাসত্মবায়নাধীন প্রকল্পে সরকারের সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা না থাকলে অগ্রিম দেয়া যায় না।
ওদিকে সারসংড়্গেপের তৃতীয় প্যারায় রেলওয়ে যন্ত্রপাতির বিষয়ে নানা তথ্য দিয়ে বলা হয়েছে, রেল, রেলপথ নির্মাণ ও পুনর্বাসন কাজের জন্য প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি বেশির ভাগই আমদানিযোগ্য পণ্য। প্রতিটি পুনর্বাসন কাজের শতকরা ৩০ থেকে ৫০ ভাগ মূল্য রেল কেনায় ব্যয় করা হয়। এছাড়া সিস্নপার, পয়েন্টস অ্যান্ড ক্রসিং, ইলাস্টিক রেল ক্লিপ, ফিস পেস্নট, ফিস বোল্ট আদেশ দিলে তৈরি করে দেয়া হয়। এসব কাজ করতে গিয়ে ঠিকাদারদের বড় অঙ্কের অর্থ বিনিয়োগ করতে হয়। তাই দরপত্রে অগ্রিম দেয়ার সংস্থান না থাকায় দরদাতা উচ্চ দর দেয়। ফলে প্রকল্প বাসত্মবায়নে ধীরগতি দেখা যায়। ক্রয় সংক্রানত্ম মন্ত্রিসভা কমিটির জন্য তৈরি করা সারসংড়্গেপ সূত্রে জানা গেছে, রেলওয়ে নিরাপদ ও ব্যয় সাশ্রয়ী স্থল পরিবহন বিধায় বাংলাদেশ রেলওয়ের সৈয়দপুর-চিলাহাটি সেকশন পুনর্বাসন শীর্ষক প্রকল্পটি একটি জনগুরম্নত্বসম্পন্ন প্রকল্প। এই প্রকল্পের প্রাক্কলিত মূল্য বিদেশী সাহায্যপুষ্ট প্রকল্পে ব্যাংক গ্যারান্টির বিপরীতে শতকরা ১০ ভাগ অগ্রিম দেয়া যায়। রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে, ব্যাংক গ্যারান্টির বিপরীতে অগ্রিম দেয়া ও এ সংক্রানত্ম শর্ত দরপত্র দলিলে যোগ করার অনুমোদন চেয়ে চিঠি দিয়েছে বাংলাদেশ রেলওয়ে। তাদের চিঠি পেয়েই বিদেশী সাহায্যপুষ্ট প্রকল্পের মতো জিওবি অর্থায়নে বাংলাদেশ রেলওয়ের সৈয়দপুর-চিলাহাটি প্রকল্পের অধীনে প্যাকেজ নং ডবিস্নউডিআই কাজের সুষ্ঠু বাসত্মবায়নের জন্য ব্যাংক গ্যারান্টির বিপরীতে শতকরা ১০ ভাগ অগ্রিম দেয়ার অনুমতি চেয়ে প্রসত্মাব পাঠানো হয়েছে।
http://www.mzamin.com/index.php?option=com_content&task=view&id=7792&Itemid=83
টিআর কাবিখায় দুর্নীতি: জড়িত সরকারি দলের এক শ্রেণীর নেতা-কর্মী
Kalerkantho ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৭ ফাল্গুন ১৪১৬, ২৪ রবিউল আউয়াল ১৪৩১, ১১ মার্চ ২০১০
টিআর কাবিখায় দুর্নীতি আহমেদ দীপু ও আশরাফুল হক রাজীবগ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়নের নামে টেস্ট রিলিফ (টিআর) ও দুস্থদের সহায়তায় নেওয়া কাজের বিনিময়ে খাদ্য (কাবিখা) কর্মসূচি নিয়ে দেশব্যাপী ব্যাপক দুর্নীতি চলার অভিযোগ উঠেছে। খোদ খাদ্যমন্ত্রীর কাছে এ নিয়ে বিস্তর অভিযোগ তোলা হলেও এখনো কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। তবে এরই মধ্যে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় চলতি মৌসুম থেকে কাবিখার কাজ বন্ধ করে দিয়েছে।
নীতি-নির্ধারণী সূত্রে জানা গেছে, সরকারি নির্দেশনায় দুর্বলতার সুযোগ নিচ্ছেন মাঠ পর্যায়ে সরকারি দলের এক শ্রেণীর নেতা-কর্মী। খাদ্য মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, মন্ত্রীর কাছে টিআর ও কাবিখা খাতে বরাদ্দ চেয়ে সংসদ সদস্যরা একের পর এক সরবরাহপত্র (ডিও) দিয়ে যাচ্ছেন। বর্তমানে মন্ত্রীর দপ্তরে এ ধরনের ডিওর স্তূপ হয়ে গেছে। কিন্তু চারদিক থেকে দুর্নীতির খবর আসায় মন্ত্রী বরাদ্দ দেওয়ার ক্ষেত্রে ধীরে চলার নীতি অনুসরণ করছেন।
এ প্রসঙ্গে খাদ্য ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনামন্ত্রী ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক কালের কণ্ঠকে বলেন, 'আমার কাছেও অনিয়মের অভিযোগ এসেছে। যারা এসব অনিয়মের সঙ্গে জড়িত, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।' এখনো কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি কেন_এ প্রশ্ন করা হলে মন্ত্রী প্রশ্নটি এড়িয়ে যান। শতভাগ চাল বিক্রির ছাড়ের সুযোগ নিচ্ছেন কেউ কেউ_এ প্রসঙ্গে মন্ত্রী বলেন, শতভাগ নয়, কিছু ক্ষেত্রে ৩০ শতাংশ বিক্রির ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।
যোগাযোগ করা হলে পানিসম্পদমন্ত্রী রমেশ চন্দ্র সেন গতকাল বুধবার কালের কণ্ঠকে বলেন, 'আমরা কাজের বিনিময়ে খাদ্য (কাবিখা) কর্মসূচি বন্ধ করে দিয়েছি। এ কর্মসূচির আওতায় যে কাজগুলো হতো, তা দরপত্রের মাধ্যমে নগদ টাকায় করা হবে।' দুর্নীতির কারণে কাবিখা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে কি না, এ-সংক্রান্ত প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, কাজের স্বচ্ছতার জন্য কাবিখা বন্ধ করে দরপত্রের মাধ্যমে প্রকল্প বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ফলে সব দলের লোকজন কাজ করার সুযোগ পাবে।
সূত্র জানায়, টিআরের আওতায় গৃহীত প্রকল্পগুলোর জন্য এক মেট্রিক টন থেকে সর্বোচ্চ পাঁচ মেট্রিক টন পর্যন্ত বরাদ্দ দেওয়া হয়ে থাকে। এমপিদের জন্য এবার মোট এক লাখ ১১ হাজার ৭৫০ মেট্রিক টনের বিশেষ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এর ৫০ শতাংশ বরাদ্দ ব্যবহারের বিষয়টি সুনির্দিষ্ট করে না দেওয়ায় ৫৫ হাজার ৮০০ মেট্রিক টনের বেশি চাল নিয়ে অনিয়মের সুযোগ তৈরি হয়েছে। এর বড় একটি অংশ ভুয়া প্রকল্প দিয়ে লোপাট করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
খাদ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, চলতি অর্থবছরে টেস্ট রিলিফ খাতে চার লাখ মেট্রিক টন এবং কাবিখা খাতে তিন লাখ ৭৫ হাজার মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে জানুয়ারি পর্যন্ত টিআর খাতে শুধু এমপিদের নামে বিশেষ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। ৩০০ সংসদ সদস্যের প্রত্যেককে ৩৫০ মেট্রিক টন চাল এবং সংরক্ষিত আসনে মহিলা সংসদ সদস্যদের ১৫০ মেট্রিক টন করে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া জেলা প্রশাসকদের মাধ্যমে কাবিখার দুই লাখ ৯ হাজার মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
নির্দেশনাতেই গলদ : খাদ্য ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয় থেকে টেস্ট রিলিফ ও কাবিখা কর্মসূচির প্রকল্প প্রণয়ন এবং বাস্তবায়নের বিষয়ে ২০০৯ সালের আগস্ট পর্যন্ত সংশোধিত পরিপত্র (সার্কুলার) জারি করা হয়। এতে সংসদ সদস্যদের জন্য টিআরের বিশেষ বরাদ্দের ৫০ শতাংশ জনকল্যাণমূলক প্রতিষ্ঠানের উন্নয়ন কাজে ব্যবহারের ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। বাকি ৫০ শতাংশ দিয়ে কী করা হবে, এর কোনো সুস্পষ্ট নির্দেশনা নেই। কাবিখার প্রকল্প শেষ হওয়ার পর জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তাদের নূ্যনপক্ষে ১০ থেকে ১৫ শতাংশ (কমপক্ষে পাঁচটি) এবং ত্রাণ ও পুনর্বাসন অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের নূ্যনপক্ষে পাঁচ থেকে ১০ শতাংশ (কমপক্ষে তিনটি) প্রকল্পের জরিপ করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। শত শত প্রকল্পের মধ্যে হাতেগোনা কয়েকটি প্রকল্পের জরিপ হবে, তা-ও কাজ শেষে। আর এ দুর্বলতার সুযোগ নিচ্ছেন ইউনিয়ন পরিষদের অসাধু অনেক চেয়ারম্যান, সদস্য ও ক্ষমতাসীন দলের নেতা-কর্মীরা। তাঁরা পিআইওর (প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা) সহায়তায় কাগজপত্রে প্রকল্প দেখিয়ে ভুয়া বরাদ্দ নিচ্ছেন। বরাদ্দের চাল বিক্রি করে পরে চলছে টাকা ভাগ-বাটোয়ারা।
রাজনৈতিক দুর্বৃত্তায়ন : স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ ও বিলুপ্ত স্থানীয় সরকার কমিশনের সদস্য অধ্যাপক তোফায়েল আহমেদ বলেন, ১০০ শতাংশ তদারকি করেও প্রকল্পের দুর্নীতি বন্ধ করা যায় না। আর এখানে তো গড়ে ২৫ শতাংশের কথা বলা হয়েছে। এখানে সরকার একটা যুক্তি দেখায়, প্রকল্পের পিআইওতো রয়েছেনই। কিন্তু বাস্তবতা হলো, একজন পিআইওর হাতে তিন থেকে ৫০০ প্রকল্প থাকে। এ অবস্থায় পিআইওর পক্ষে কি মনিটর করা সম্ভব? এসব অব্যবস্থাপনার সুযোগে ভয়াবহ দুর্নীতি হচ্ছে। টিআর ও কাবিখার মাধ্যমে রাজনৈতিক দুর্বৃত্তের জন্ম হচ্ছে।
ভাগ দিতে হবে : নাম প্রকাশ না করার শর্তে দেশের উপকূলীয় অঞ্চলের সরকারি দলের একজন সংসদ সদস্য কালের কণ্ঠকে বলেন, 'টিআর ও কাবিখার চাল বিক্রির টাকা নিজেরা পকেটে নিতে না পারলে এমপিদের সঙ্গে দলের নেতা-কর্মীরা থাকবে কেন। তারা গত সাত বছর কিছুই পায়নি। বর্তমানে ইউনিয়ন পরিষদে যাঁরা চেয়ারম্যান রয়েছেন, তাঁদের অধিকাংশ বিএনপির লোক। চেয়ারম্যানরা শেষবারের মতো লুটপাট করবে আর আমাদের নেতা-কর্মীরা বসে থাকবে, তা হবে না। দলের নেতা-কর্মীদের ভাগ দিতে হবে। তিনি বলেন, কর্মীদের আর্থিক সুবিধার কথা বিবেচনা করেই এ ধরনের ছোটখাটো প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়। অনেক সময় একই স্থানে প্রায় প্রতিবছরই প্রকল্প নেওয়া হয়।
পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, গ্রামীণ অবকাঠামো কর্মসূচির আওতায় বাঁধ সংস্কার, নদী পুনর্খননসহ নানা ধরনের কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা হয় কাবিখার মাধ্যমে। কিন্তু আইলার পর বাঁধ নির্মাণ, পুনর্নির্মাণসহ বিভিন্ন ধরনের কাজে কাবিখার আওতায় যেসব বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে, তাতে খুব বেশি কাজ হয়নি। যেসব স্থানে কাজ হয়েছে, সেগুলো খুবই নিম্নমানের। বরাদ্দের অধিকাংশই দুর্নীতির মাধ্যমে লুটপাট করা হয়েছে। চলতি মৌসুমেও সংসদ সদস্যরা পুরনো নিয়মে কাবিখার আওতায় নানা ধরনের কাজের লক্ষ্যে বরাদ্দ চেয়ে পানিসম্পদমন্ত্রীর কাছে সরবরাহপত্র পাঠান।
টিআর কাবিখায় দুর্নীতি আহমেদ দীপু ও আশরাফুল হক রাজীবগ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়নের নামে টেস্ট রিলিফ (টিআর) ও দুস্থদের সহায়তায় নেওয়া কাজের বিনিময়ে খাদ্য (কাবিখা) কর্মসূচি নিয়ে দেশব্যাপী ব্যাপক দুর্নীতি চলার অভিযোগ উঠেছে। খোদ খাদ্যমন্ত্রীর কাছে এ নিয়ে বিস্তর অভিযোগ তোলা হলেও এখনো কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। তবে এরই মধ্যে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় চলতি মৌসুম থেকে কাবিখার কাজ বন্ধ করে দিয়েছে।
নীতি-নির্ধারণী সূত্রে জানা গেছে, সরকারি নির্দেশনায় দুর্বলতার সুযোগ নিচ্ছেন মাঠ পর্যায়ে সরকারি দলের এক শ্রেণীর নেতা-কর্মী। খাদ্য মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, মন্ত্রীর কাছে টিআর ও কাবিখা খাতে বরাদ্দ চেয়ে সংসদ সদস্যরা একের পর এক সরবরাহপত্র (ডিও) দিয়ে যাচ্ছেন। বর্তমানে মন্ত্রীর দপ্তরে এ ধরনের ডিওর স্তূপ হয়ে গেছে। কিন্তু চারদিক থেকে দুর্নীতির খবর আসায় মন্ত্রী বরাদ্দ দেওয়ার ক্ষেত্রে ধীরে চলার নীতি অনুসরণ করছেন।
এ প্রসঙ্গে খাদ্য ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনামন্ত্রী ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক কালের কণ্ঠকে বলেন, 'আমার কাছেও অনিয়মের অভিযোগ এসেছে। যারা এসব অনিয়মের সঙ্গে জড়িত, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।' এখনো কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি কেন_এ প্রশ্ন করা হলে মন্ত্রী প্রশ্নটি এড়িয়ে যান। শতভাগ চাল বিক্রির ছাড়ের সুযোগ নিচ্ছেন কেউ কেউ_এ প্রসঙ্গে মন্ত্রী বলেন, শতভাগ নয়, কিছু ক্ষেত্রে ৩০ শতাংশ বিক্রির ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।
যোগাযোগ করা হলে পানিসম্পদমন্ত্রী রমেশ চন্দ্র সেন গতকাল বুধবার কালের কণ্ঠকে বলেন, 'আমরা কাজের বিনিময়ে খাদ্য (কাবিখা) কর্মসূচি বন্ধ করে দিয়েছি। এ কর্মসূচির আওতায় যে কাজগুলো হতো, তা দরপত্রের মাধ্যমে নগদ টাকায় করা হবে।' দুর্নীতির কারণে কাবিখা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে কি না, এ-সংক্রান্ত প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, কাজের স্বচ্ছতার জন্য কাবিখা বন্ধ করে দরপত্রের মাধ্যমে প্রকল্প বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ফলে সব দলের লোকজন কাজ করার সুযোগ পাবে।
সূত্র জানায়, টিআরের আওতায় গৃহীত প্রকল্পগুলোর জন্য এক মেট্রিক টন থেকে সর্বোচ্চ পাঁচ মেট্রিক টন পর্যন্ত বরাদ্দ দেওয়া হয়ে থাকে। এমপিদের জন্য এবার মোট এক লাখ ১১ হাজার ৭৫০ মেট্রিক টনের বিশেষ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এর ৫০ শতাংশ বরাদ্দ ব্যবহারের বিষয়টি সুনির্দিষ্ট করে না দেওয়ায় ৫৫ হাজার ৮০০ মেট্রিক টনের বেশি চাল নিয়ে অনিয়মের সুযোগ তৈরি হয়েছে। এর বড় একটি অংশ ভুয়া প্রকল্প দিয়ে লোপাট করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
খাদ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, চলতি অর্থবছরে টেস্ট রিলিফ খাতে চার লাখ মেট্রিক টন এবং কাবিখা খাতে তিন লাখ ৭৫ হাজার মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে জানুয়ারি পর্যন্ত টিআর খাতে শুধু এমপিদের নামে বিশেষ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। ৩০০ সংসদ সদস্যের প্রত্যেককে ৩৫০ মেট্রিক টন চাল এবং সংরক্ষিত আসনে মহিলা সংসদ সদস্যদের ১৫০ মেট্রিক টন করে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া জেলা প্রশাসকদের মাধ্যমে কাবিখার দুই লাখ ৯ হাজার মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
নির্দেশনাতেই গলদ : খাদ্য ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয় থেকে টেস্ট রিলিফ ও কাবিখা কর্মসূচির প্রকল্প প্রণয়ন এবং বাস্তবায়নের বিষয়ে ২০০৯ সালের আগস্ট পর্যন্ত সংশোধিত পরিপত্র (সার্কুলার) জারি করা হয়। এতে সংসদ সদস্যদের জন্য টিআরের বিশেষ বরাদ্দের ৫০ শতাংশ জনকল্যাণমূলক প্রতিষ্ঠানের উন্নয়ন কাজে ব্যবহারের ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। বাকি ৫০ শতাংশ দিয়ে কী করা হবে, এর কোনো সুস্পষ্ট নির্দেশনা নেই। কাবিখার প্রকল্প শেষ হওয়ার পর জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তাদের নূ্যনপক্ষে ১০ থেকে ১৫ শতাংশ (কমপক্ষে পাঁচটি) এবং ত্রাণ ও পুনর্বাসন অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের নূ্যনপক্ষে পাঁচ থেকে ১০ শতাংশ (কমপক্ষে তিনটি) প্রকল্পের জরিপ করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। শত শত প্রকল্পের মধ্যে হাতেগোনা কয়েকটি প্রকল্পের জরিপ হবে, তা-ও কাজ শেষে। আর এ দুর্বলতার সুযোগ নিচ্ছেন ইউনিয়ন পরিষদের অসাধু অনেক চেয়ারম্যান, সদস্য ও ক্ষমতাসীন দলের নেতা-কর্মীরা। তাঁরা পিআইওর (প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা) সহায়তায় কাগজপত্রে প্রকল্প দেখিয়ে ভুয়া বরাদ্দ নিচ্ছেন। বরাদ্দের চাল বিক্রি করে পরে চলছে টাকা ভাগ-বাটোয়ারা।
রাজনৈতিক দুর্বৃত্তায়ন : স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ ও বিলুপ্ত স্থানীয় সরকার কমিশনের সদস্য অধ্যাপক তোফায়েল আহমেদ বলেন, ১০০ শতাংশ তদারকি করেও প্রকল্পের দুর্নীতি বন্ধ করা যায় না। আর এখানে তো গড়ে ২৫ শতাংশের কথা বলা হয়েছে। এখানে সরকার একটা যুক্তি দেখায়, প্রকল্পের পিআইওতো রয়েছেনই। কিন্তু বাস্তবতা হলো, একজন পিআইওর হাতে তিন থেকে ৫০০ প্রকল্প থাকে। এ অবস্থায় পিআইওর পক্ষে কি মনিটর করা সম্ভব? এসব অব্যবস্থাপনার সুযোগে ভয়াবহ দুর্নীতি হচ্ছে। টিআর ও কাবিখার মাধ্যমে রাজনৈতিক দুর্বৃত্তের জন্ম হচ্ছে।
ভাগ দিতে হবে : নাম প্রকাশ না করার শর্তে দেশের উপকূলীয় অঞ্চলের সরকারি দলের একজন সংসদ সদস্য কালের কণ্ঠকে বলেন, 'টিআর ও কাবিখার চাল বিক্রির টাকা নিজেরা পকেটে নিতে না পারলে এমপিদের সঙ্গে দলের নেতা-কর্মীরা থাকবে কেন। তারা গত সাত বছর কিছুই পায়নি। বর্তমানে ইউনিয়ন পরিষদে যাঁরা চেয়ারম্যান রয়েছেন, তাঁদের অধিকাংশ বিএনপির লোক। চেয়ারম্যানরা শেষবারের মতো লুটপাট করবে আর আমাদের নেতা-কর্মীরা বসে থাকবে, তা হবে না। দলের নেতা-কর্মীদের ভাগ দিতে হবে। তিনি বলেন, কর্মীদের আর্থিক সুবিধার কথা বিবেচনা করেই এ ধরনের ছোটখাটো প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়। অনেক সময় একই স্থানে প্রায় প্রতিবছরই প্রকল্প নেওয়া হয়।
পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, গ্রামীণ অবকাঠামো কর্মসূচির আওতায় বাঁধ সংস্কার, নদী পুনর্খননসহ নানা ধরনের কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা হয় কাবিখার মাধ্যমে। কিন্তু আইলার পর বাঁধ নির্মাণ, পুনর্নির্মাণসহ বিভিন্ন ধরনের কাজে কাবিখার আওতায় যেসব বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে, তাতে খুব বেশি কাজ হয়নি। যেসব স্থানে কাজ হয়েছে, সেগুলো খুবই নিম্নমানের। বরাদ্দের অধিকাংশই দুর্নীতির মাধ্যমে লুটপাট করা হয়েছে। চলতি মৌসুমেও সংসদ সদস্যরা পুরনো নিয়মে কাবিখার আওতায় নানা ধরনের কাজের লক্ষ্যে বরাদ্দ চেয়ে পানিসম্পদমন্ত্রীর কাছে সরবরাহপত্র পাঠান।
রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় ভারত থেকে প্রতিদিনই হেরোইন, গাঁজা, ফেনসি, যৌন উত্তেজক ট্যাবলেটসহ বিভিন্ন ভারতীয় মাদকদ্রব্য
মাদকের সঙ্গে আসছে অবৈধ অস্ত্র : হাতিবান্ধা নিরাপদ ট্রানজিট পয়েন্ট
আসাদুজ্জামান সাজু, হাতিবান্ধা (লালমনিরহাট)
রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় ভারত থেকে প্রতিদিনই হেরোইন, গাঁজা, ফেনসিডিল, বিয়ার, প্যাথেডিন, ভায়াগ্রা, মনিস ও ভিগোফটের মতো যৌন উত্তেজক ট্যাবলেটসহ বিভিন্ন ভারতীয় মাদকদ্রব্য লালমনিরহাট জেলার হাতিবান্ধা সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করছে। বিডিআরের নিষ্ক্রিয়তা ও বিএসএফের সহযোগিতায় হাতিবান্ধা উপজেলার বাড়াইপাড়া, কানিপাড়া, সিঙ্গিমারী, কালীবাড়ী, গেন্দুকুড়ি, দইখাওয়া, আমাঝোল, বড়খাতা, ভেলাগুড়িসহ গোটা সীমান্ত এলাকা মাদক ব্যবসায়ীদের নিয়ন্ত্রণে। মাদকের নিরাপদ ট্রানজিট পয়েন্ট হিসেবে হাতিবান্ধাকে ব্যবহার করছে মাদক ব্যবসায়ীরা। গুঞ্জন উঠেছে, মাদকের সঙ্গে মাঝে মধ্যে অবৈধ অস্ত্রের চালানও আসছে। এসব মাদকদ্রব্য তিস্তা ব্যারেজ দিয়ে নীলফামারী হয়ে লালমনিরহাট রেল সেতু দিয়ে রংপুর ও ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে চলে যাচ্ছে।
লালমনিরহাট জেলার হাতিবান্ধা উপজেলার সীমান্তবর্তী এলাকার লোকজন জানান, তারা শুনেছে সীমান্তের ওপারে ভারতের শীতলখুচি থানার গাছতলা গ্রামে ফেনসিডিল কারখানা গড়ে উঠেছে, পাশাপাশি সেখানে গাঁজাও চাষ করা হচ্ছে। এসব কারখানায় উত্পাদিত ফেনসিডিল ও গাঁজা ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফের সহযোগিতায় বাংলাদেশে প্রবেশ করছে অথচ বিডিআর তা দেখেও না দেখার ভান করছে। সীমান্ত এলাকার লোকজন ক্রমেই মাদকসহ চোরাচালান ব্যবসায় জড়িয়ে পড়ছে। সীমান্ত এলাকার মহিলাদের মাদকবাহক হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। অনেক মাদক ব্যবসায়ীর সঙ্গে আন্ডারওয়ার্ল্ডের যোগাযোগ রয়েছে। ক্ষমতাসীন দলের নেতাদের ছত্রছায়ায় মাদক ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেট গড়ে উঠেছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন মাদক ব্যবসায়ী এ প্রতিনিধিকে জানান, পুলিশ ও বিডিআরের মাসোহারা আদায়ের জন্য লাইনম্যান নিয়োগ আছে, একজন লাইনম্যানের আওতায় ৪০/৫০ জন ব্যবসা করে। গোটা হাতিবান্ধা উপজেলায় প্রায় ১ ডজন লাইনম্যান নিয়োগ আছে। তবে পুলিশ ও বিডিআর মাসোহারা আদায়ের অভিযোগ অস্বীকার করেন। এসব মাদকদ্রব্য কাজীরবাজার, মিলনবাজার, খানের বাজার, বড়খাতা, দইখাওয়া, অডিটরিয়াম মোড়, করবালার দিঘি, দিঘিরহাট, কালীবাড়ী, গেন্দুকুড়ি, পারুলিয়াসহ বিভিন্ন স্থানে বিক্রি হচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে। দামে সস্তা এসব মাদক সেবন করে স্কুল ও কলেজের ছাত্ররা বিপথগামী হচ্ছে। সমপ্রতি হাতিবান্ধা উপজেলা আওয়ামী লীগের মাসিক সভায় মাদক ও চোরাচালান বন্ধের দাবি ওঠে। সভায় উপস্থিত প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মোতাহার হোসেন মাদক ও চোরাচালান বন্ধ করতে পুলিশকে নির্দেশ দিলেও এখন পর্যন্ত বন্ধ হয়নি মাদক ব্যবসা।
প্রতিদিন সন্ধ্যার পর হাতিবান্ধার কাজীরবাজার, ডাকবাংলা, উপজেলা চত্বর, দিঘিরহাট, হেলিপ্যাড, আলিমুদ্দিন কলেজ মাঠ, বিন্দু হল, মেডিকেল চত্বরসহ কযেকটি স্থানে মাদকসেবীদের আসর জমে ওঠে। সেই সঙ্গে স্থানীয় প্রশাসন ও ক্ষমতাসীন দলের নেতাদের ম্যানেজ করে গোটা হাতিবান্ধা জুড়ে চলছে মাদকের জমজমাট ব্যবসা। মাঝে মাঝে লোক দেখানো দু’একটি অভিযান হলেও মামলা হচ্ছে বজ্র আঁটুনি ফসকা গেরোর মতো। পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে, অভিযান চালিয়ে বিভিন্ন ভারতীয় পণ্য আটক করলেও অনেক সময় মামলা হয় না। মাদকসহ হাতেনাতে ধরা পড়েও কিছুদিন হাজতবাস করে আইনের ফাঁকফোকর দিয়ে বের হয়ে আসছে মাদক ব্যবসায়ীরা। এ ব্যাপারে হাতিবান্ধা থানার ওসি গোলাম মর্তুজা জানান, মাদক ও চোরাচালান প্রতিরোধে প্রতিদিনই আমাদের অভিযান চলছে। তিনি মাদকমুক্ত হাতিবান্ধা গড়তে সবার সহযোগিতা চান।
http://www.amardeshonline.com/pages/details/2010/03/11/22247
তিস্তা চুক্তি হচ্ছে গঙ্গার আদলে
ইলিয়াস খান
বাংলাদেশের স্বার্থ জলাঞ্জলি দিয়ে শেষ পর্যন্ত অন্তর্বর্তীকালীন তিস্তা চুক্তি স্বাক্ষর হচ্ছে। ১৯৫২ সাল থেকে ঝুলে থাকা এ চুক্তি স্বাক্ষর হচ্ছে শুধু রাজনৈতিক কারণে। চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নয়াদিল্লি সফরের সময় না হওয়ায় প্রচণ্ড সমালোচনার মুখে পড়ে এখন চুক্তি স্বাক্ষর করা হচ্ছে। পানি বিশেষজ্ঞ ও সাবেক সচিব প্রকৌশলী আ.ন.হ. আখতার হোসেন আমার দেশকে বলেছেন, প্রস্তাবিত চুক্তি দিয়ে বাংলাদেশের কোনো লাভ হবে না। কারণ, এরই মধ্যে তিস্তার উজানে গজলডোবায় বাঁধ দেয়া হয়েছে। আরও তিনটি বাঁধ দেয়া হচ্ছে বিভিন্ন পয়েন্টে। এসব বাঁধ দিয়ে বিপুল পরিমাণ পানি প্রত্যাহার করা হবে। যেমনটি হচ্ছে গঙ্গাচুক্তির ক্ষেত্রে। সর্বোপরি গঙ্গা চুক্তির মতোই এ চুক্তিতেও কোনো গ্যারান্টি ক্লোজ থাকছে না।
চলতি মাসের ১৭ থেকে ২০ তারিখ পর্যন্ত ভারতের নয়াদিল্লিতে যৌথ নদী কমিশনের (জেআরসি) পানিসম্পদমন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। ওই বৈঠকেই চুক্তি স্বাক্ষর হবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে। কমপক্ষে ২০ বছর মেয়াদি এই পানি বণ্টন চুক্তিতে পানি ভাগাভাগিসহ অন্যান্য বিষয়েও গঙ্গা চুক্তির মডেল অনুসরণ করা হবে।
পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় ও জেআরসি সূত্র জানিয়েছে, ভারত ২০ বছর মেয়াদি চুক্তির বিষয়ে মৌখিক সম্মতি দিয়েছে। তবে বাংলাদেশের লক্ষ্য চুক্তির মেয়াদ আরও বাড়িয়ে নেয়া। চুক্তির ধরন নিয়ে পানিসম্পদমন্ত্রী রমেশ চন্দ্র সেন বলেছেন, একটি অন্তর্বর্তীকালীন চুক্তি হবে। পরবর্তীতে এ বিষয়ে স্থায়ী চুক্তির উদ্যোগ নেয়া হবে।
১৯৯৬ সালে দুই দেশের মধ্যে ৩০ বছর মেয়াদি গঙ্গার পানিবণ্টন চুক্তি স্বাাক্ষর হয়। তাতে শুষ্ক মৌসুমে প্রাপ্যতা অনুযায়ী দুই দেশের মধ্যে পানির ভাগাভাগি করা হয়। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাই তত্কালীন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে বাংলাদেশের পক্ষে চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন। কিন্তু চুক্তির পর আজ পর্যন্তও বাংলাদেশ হিস্যা অনুযায়ী পানি পায়নি। এই চুক্তি এখন শুধু কাগজে আছে, বাস্তবে নেই। শুষ্ক মৌসুমের শুরুতেই চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে উজানের ভারত ভাটির বাংলাদেশকে প্রায় ৬০ হাজার কিউসেক পানি কম দিয়েছে। এই চুক্তি অনুযায়ী এ সময় বাংলাদেশের এক লাখ ৭৫ হাজার ৩৪৩ কিউসেক পানি পাওয়ার কথা। কিন্তু পেয়েছে এক লাখ ১৮ হাজার ৯৭২ কিউসেক। অর্থাত্ চুক্তির ইন্ডিকেটিভ সিডিউল অনুযায়ী জানুয়ারি মাসে তিন কিস্তিতে বাংলাদেশ ৫৬ হাজার ৩৭১ কিউসেক পানি কম পেয়েছে। যৌথ নদী কমিশন (জেআরসি) সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। আসন্ন জেআরসি বৈঠকে কম পানি প্রাপ্তির বিষয়ে প্রতিবাদ জানানো হবে। ১৯৯৬ সালে সম্পাদিত গঙ্গা পানিচুক্তি অনুযায়ী জানুয়ারির প্রথম ১০ দিন বাংলাদেশের পানির হিস্যা হচ্ছে ৬৭ হাজার ৫১৬ কিউসেক, দ্বিতীয় ১০ দিন ৫৭ হাজার ৬৭৩ কিউসেক এবং শেষ ১০ দিন ৫০ হাজার ১৫৪ কিউসেক। কিন্তু এই সময়ে বাংলাদেশ পেয়েছে যথাক্রমে ৪৬ হাজার ৭২০ কিউসেক, ৩৭ হাজার ২০৪ এবং ৩৫ হাজার ৪৮ ্কিউসেক।
সূত্র জানায়, ভারত চুক্তির সংলগ্নি-১ মেনে চললেও ইন্ডিকেটিভ সিডিউল বা সংলগ্নি-২ মেনে না চলার কারণে বাংলাদেশ পানি কম পাচ্ছে। চুক্তিতে সংলগ্নি-২ অনুযায়ী জানুয়ারির প্রথম ১০ দিনে ফারাক্কা পয়েন্টে এক লাখ সাত হাজার ৫১৬ কিউসেক, দ্বিতীয় ১০ দিনে ৯৭ হাজার ৬৭৩ কিউসেক এবং তৃতীয় ১০ দিনে ৯০ হাজার ১৫৪ কিউসেক পানির প্রবাহ নিশ্চিত করতে ভারতকে সব ধরনের প্রচেষ্টা নিতে হবে। ফারাক্কা পয়েন্টে ১৯৪৯ থেকে ১৯৮৮ সালের গড় প্রবাহের ওপর ভিত্তি করে এটা নির্ধারণ করা হয় এবং বলা হয়, ভারত এ পরিমাণ প্রবাহ রক্ষা করার জন্য সব ধরনের প্রচেষ্টা নেবে। কিন্তু জানুয়ারিতে ফারাক্কায় প্রবাহ নিশ্চিত করা হয়নি।
মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, প্রথমে ১৭ মার্চ দুই দেশের পানিসম্পদ সচিব পর্যায়ে বৈঠক হবে। ১৮, ১৯ ও ২০ মার্চ অনুষ্ঠিত হবে মন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠক। বৈঠকে অংশগ্রহণের বিষয়টি এর মধ্যে সরকার অনুমোদন করেছে। বৈঠকে তিস্তা চুক্তি ছাড়াও অন্যান্য অভিন্ন নদীর পানিবণ্টন, সীমান্ত নদীর ভাঙনরোধসহ নদীর পানি ব্যবস্থাপনা সম্পর্কিত বিষয়ে আলোচনা হবে। উভয় দেশের মধ্যে ৫৪টি অভিন্ন নদী আছে। এর মধ্যে এ পর্যন্ত শুধু গঙ্গার পানিবণ্টন চুক্তি হয়েছে। সর্বশেষ জেআরসির মন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয় ২০০৫ সালে। ২০০৬ সালেই পরবর্তী বৈঠক অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা থাকলেও আর কোনো বৈঠক হয়নি। সূত্র জানায়, বাংলাদেশ তিস্তার পানির সমান ভাগাভাগির পক্ষে অবস্থান নিয়েছে। এর আগে গত ডিসেম্বরে জেআরসির কারিগরি ও সচিব কমিটির বৈঠকে বাংলাদেশ চুক্তির একটি খসড়া ভারতকে হস্তান্তর করে। এতে নদীর জন্য ২০ ভাগ পানি রেখে বাকি পানির সমান ভাগাভাগির প্রস্তাব দেয়া হয়। কিন্তু এর আগের জেআরসির বৈঠকে ১০ ভাগ পানি নদীর নাব্যতার জন্য রেখে অবশিষ্ট পানি দুই দেশ ভাগ করে নেয়ার প্রস্তাব বাংলাদেশ দিলেও ভারত তাতেও রাজি হয়নি। এ বিষয়ে আ.ন.হ. আখতার হোসেন বলেন, আসলে ভারত যেভাবে বলবে সেভাবেই চুক্তি করতে হবে। ভারতের কথার বাইরে কিছুই করা যাবে না। সরকার এখন সস্তা জনপ্রিয়তার জন্য এই চুক্তি করতে যাচ্ছে।
১৯৭২ সালের ১১ থেকে ১৩ ডিসেম্বর দিল্লিতে অনুষ্ঠিত যৌথ নদী কমিশনের (জেআরসি) তৃতীয় সভায় তিস্তা নদীর পানি বণ্টন নিয়ে প্রথম আলোচনা হয়। ভারতের অসহযোগিতার কারণে এ বিষয়ে কোনো সুনির্দিষ্ট সিদ্ধান্তে আসা যায়নি। ১৯৮৩ সালের জুলাই মাসে দু’দেশের মন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকে পাঁচ বছর মেয়াদি সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। কিন্তু এর পরও হিস্যা অনুযায়ী পানি পায়নি বাংলাদেশ। এরপর ২৭ বছর অপেক্ষা। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে ভারতের কাছে বহুবার আবেদন, নিবেদন, অনুরোধ করা হয়। কিন্তু নয়াদিল্লির মন গলেনি। সর্বশেষ গত ডিসেম্বর মাসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরকালেও বহুল প্রতীক্ষিত এই চুক্তি স্বাক্ষর হয়নি। এই বাস্তবতায় আগামী ১৭ মার্চ দিল্লিতে অনুষ্ঠিত হবে জেআরসি বৈঠক। চুক্তি না থাকায় ভারত আন্তর্জাতিক রীতি-নীতি ও বিধি-বিধান লঙ্ঘন করে বাঁধ নির্মাণ করে একতরফাভাবে তিস্তার পানি প্রত্যাহার করে নিচ্ছে। ফলে বাংলাদেশের রংপুর, দিনাজপুর, কুড়িগ্রাম, পঞ্চগড় ও বগুড়ার জীববৈচিত্র্য ধ্বংসের মুখে পড়ছে। ওইসব এলাকার সেচ কার্যক্রমের জন্য বহু অর্থ ও শ্রমের বিনিময়ে গড়ে তোলা তিস্তা সেচ প্রকল্প এখন মারাত্মক হুমকির মুখে পড়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে এই চিত্র ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে।
ভারতের রাজনৈতিক সদিচ্ছার অভাব এবং বাংলাদেশের প্রতি অবজ্ঞা আর অনীহার কারণেই তিস্তা নদীর পানি বণ্টন চুক্তি হচ্ছে না বলে মনে করেন আন্তর্জাতিক পরিবেশবিদ ও পানি বিশেষজ্ঞরা। গত ২৭ বছর ধরে এ চুক্তি ঝুলে রয়েছে বলে উল্লেখ করে তারা বলেন, আন্তর্জাতিক নদী তিস্তার পানি বণ্টন নিয়ে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক চুক্তির জন্য সবার আগে দুই দেশের রাজনৈতিক সদিচ্ছা প্রয়োজন। বাংলাদেশ বহুবার আবেদন, নিবেদন ও অনুরোধ করেও ভারতের কাছ থেকে কোনো সময়ই সাড়া পায়নি। গত বছরের শেষ দিকে ঢাকায় অনুষ্ঠিত যৌথ নদী কমিশনের সচিব পর্যায়ের বৈঠকও ফলশূন্য অবস্থায় শেষ হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরে তিস্তা চুক্তির বিষয়টি শীর্ষ বৈঠকের এজেন্ডার বাইরে রাখতে হয়। ১৯৯৬ সালে সম্পাদিত গঙ্গাচুক্তির সময়ও একই ঘটনা ঘটেছিল। ওই চুক্তিতেও ভারতের একতরফা পানি প্রত্যাহারের ব্যাপারে বাংলাদেশের আপত্তির সুযোগ রাখা হয়নি। অর্থাত্ কোনো গ্যারান্টি ক্লোজ রাখা হয়নি। ফলে ফারাক্কা ব্যারেজ দিয়ে গঙ্গা নদীর সব পানি প্রত্যাহার করে নিলেও বাংলাদেশ কোনো প্রতিবাদ করার সুযোগ পাচ্ছে না।
পানি বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তিস্তা চুক্তি হচ্ছে একটি গুরুত্বপূর্ণ এবং রাষ্ট্রীয় সিদ্ধান্তের বিষয়। শীর্ষ পর্যায়ের সিদ্ধান্ত ছাড়া টেকনিক্যাল পার্সনদের দ্বারা এর সমাধান সম্ভব নয়। সচিব কিংবা টেকনিক্যাল পার্সন সবাই সরকারের চাকরি করেন। তাদের সবারই হাত-পা বাঁধা। তাদের পক্ষে কোনো সিদ্ধান্ত নেয়া আদৌ সম্ভব নয়। এটা সবাই বোঝে। তিস্তা নদীর ব্যাপারে একটি চুক্তি বাংলাদেশের জন্য অত্যন্ত জরুরি। এই নদীর ওপরে ভারতের গজলডোবা নামক স্থানে বাঁধ দিয়ে তারা একতরফা পানি প্রত্যাহার করে নিচ্ছে। ফলে বর্তমানে তিস্তাতে তিন থেকে চারশ’ কিউসেকের বেশি পানি নেই। এটার অর্থ হচ্ছে, পুরো পানিই ভারত তুলে নিচ্ছে। ভারতের ভেতরে এ নদীর ডান দিকে যে ক্যানেল রয়েছে তার ধারণক্ষমতা হচ্ছে ১৬ হাজার কিউসেক। তিস্তা নদীর পানির ওপর ভিত্তি করেই বাংলাদেশ তিস্তা ব্যারেজ প্রকল্প গড়ে তুলেছে। শুকনো মৌসুমে যখন বৃষ্টিপাত থাকে না, তখন ওই প্রকল্পের পানি দিয়ে গোটা উত্তরাঞ্চলে ধান উত্পাদন হয়। ভারত একতরফা তিস্তা নদীর পানি প্রত্যাহার করায় ওই প্রকল্প এখন মারাত্মক হুমকির মুখে পড়েছে। এ কারণেই পানি বণ্টন চুক্তির মাধ্যমে ন্যায্য হিস্যা অনুযায়ী পানি পাওয়া দরকার। আর এটা বাংলাদেশের জন্য এখন একটা জীবন-মরণ সমস্যা। বিশ্বের সর্বত্র এমনকি ভারতের বিভিন্ন প্রদেশেও বলা হচ্ছে যে, অববাহিকাভিত্তিক পানি ব্যবস্থাপনা গড়ে তোলা প্রয়োজন। তিস্তা নদীর পানি প্রাপ্তির ব্যাপারে ভারতের কাছ থেকে একটি নিশ্চয়তা প্রয়োজন। যার ওপর ভিত্তি করে একটি কর্মপরিকল্পনা করা যায়। আর এ জন্যই দরকার একটি চুক্তির।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক পানি বিশেষজ্ঞ বলেন, ১৯৫২ সাল থেকে তিস্তার পানি বণ্টনের ব্যাপারে আলোচনা হচ্ছে। এখনও এই আলোচনা চলছে। ১৯৫২ সালে যে ধারায় আলোচনা হয়েছে, সাম্প্রতিক বৈঠকেও সেই ধারায় আলোচনা হয়েছে। এতে কোনো পরিবর্তন আমার কাছে মনে হয়নি। একটি চুক্তি করার জন্য যদি ৫০/৬০ বছর ধরে আলোচনাই হয়, তাহলে এর সফলতা নিয়ে প্রশ্ন আসাটাই স্বাভাবিক। দু’পক্ষের মধ্যে চুক্তির জন্য উভয়পক্ষকেই সম্মত হতে হবে। একপক্ষ সম্মত হলে তো আর হচ্ছে না। অপর পক্ষকেও সম্মত হতে হবে। ১৯৫২ সাল থেকে আলোচনার পর যেহেতু এখনও চুক্তিটি হয়নি, তাই স্বাভাবিকভাবেই বলা যায়, এতে ভারতের রাজনৈতিক সদিচ্ছার অভাব রয়েছে। সম্প্রতি যৌথ নদী কমিশনের যে বৈঠক হলো, সেটা যদি দুই দেশের প্রধানমন্ত্রীর বৈঠকের পরে হতো তাহলেও কিছুটা আশাবাদী হওয়া যেত।
আরেক পানি প্রকৌশলী বলেন, তিস্তা প্রকল্পই হচ্ছে বাংলাদেশের একমাত্র ও গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প, যার মাধ্যমে রংপুর, দিনাজপুর, কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা, বগুড়ায় তিন লাখ হেক্টর জমি সেচের আওতায় আনার পরিকল্পনা নেয়া হয়। এ প্রকল্পের জন্য শুষ্ক মৌসুমে ৮ হাজার কিউসেক পানির প্রয়োজন হয়। তিস্তা ব্যারেজ দিয়ে এ পানি আসত। বাংলাদেশের জন্য দুর্ভাগ্যের বিষয় হচ্ছে, ভারত তিস্তা ব্যারাজের একশ’ কিলোমিটার উত্তরে গজলডোবায় বাঁধ দিয়ে সব পানি প্রত্যাহার করে নিচ্ছে। ফলে বর্তমানে ওই প্রকল্প এলাকায় তীব্র পানি সঙ্কট দেখা দিয়েছে এবং গোটা প্রকল্পই হুমকির মুখে পড়েছে। বাংলাদেশ এ বিষয়ে বহু বছর ধরে চেষ্টা করেও ভারতকে পানি বণ্টন চুক্তিতে রাজি করাতে ব্যর্থ হচ্ছে। গত ৮ বছরে জেআরসির কোনো বৈঠকেই তিস্তার পানিবণ্টন ইস্যুটি এজেন্ডাভুক্ত করতে ভারত রাজি হয়নি। আমি মনে করি, ভারতের অনীহার কারণেই চুক্তি হচ্ছে না। আর যদি চুক্তি হয়, তাহলেও বাংলাদেশের স্বার্থে হবে না। তিনি বলেন, আমরা লক্ষ্য করে আসছি, ভারত আন্তঃনদী সংযোগ প্রকল্পের মাধ্যমে অভিন্ন ৫৪টি নদীর পানি একতরফা প্রত্যাহার করে তাদের দক্ষিণাঞ্চলে নেয়ার যে পরিকল্পনা করছে বাংলাদেশের জন্য এটিও মারাত্মক বিপর্যয় ডেকে আনবে।
http://www.amardeshonline.com/pages/details/2010/03/11/22218
বাংলাদেশের স্বার্থ জলাঞ্জলি দিয়ে শেষ পর্যন্ত অন্তর্বর্তীকালীন তিস্তা চুক্তি স্বাক্ষর হচ্ছে। ১৯৫২ সাল থেকে ঝুলে থাকা এ চুক্তি স্বাক্ষর হচ্ছে শুধু রাজনৈতিক কারণে। চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নয়াদিল্লি সফরের সময় না হওয়ায় প্রচণ্ড সমালোচনার মুখে পড়ে এখন চুক্তি স্বাক্ষর করা হচ্ছে। পানি বিশেষজ্ঞ ও সাবেক সচিব প্রকৌশলী আ.ন.হ. আখতার হোসেন আমার দেশকে বলেছেন, প্রস্তাবিত চুক্তি দিয়ে বাংলাদেশের কোনো লাভ হবে না। কারণ, এরই মধ্যে তিস্তার উজানে গজলডোবায় বাঁধ দেয়া হয়েছে। আরও তিনটি বাঁধ দেয়া হচ্ছে বিভিন্ন পয়েন্টে। এসব বাঁধ দিয়ে বিপুল পরিমাণ পানি প্রত্যাহার করা হবে। যেমনটি হচ্ছে গঙ্গাচুক্তির ক্ষেত্রে। সর্বোপরি গঙ্গা চুক্তির মতোই এ চুক্তিতেও কোনো গ্যারান্টি ক্লোজ থাকছে না।
চলতি মাসের ১৭ থেকে ২০ তারিখ পর্যন্ত ভারতের নয়াদিল্লিতে যৌথ নদী কমিশনের (জেআরসি) পানিসম্পদমন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। ওই বৈঠকেই চুক্তি স্বাক্ষর হবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে। কমপক্ষে ২০ বছর মেয়াদি এই পানি বণ্টন চুক্তিতে পানি ভাগাভাগিসহ অন্যান্য বিষয়েও গঙ্গা চুক্তির মডেল অনুসরণ করা হবে।
পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় ও জেআরসি সূত্র জানিয়েছে, ভারত ২০ বছর মেয়াদি চুক্তির বিষয়ে মৌখিক সম্মতি দিয়েছে। তবে বাংলাদেশের লক্ষ্য চুক্তির মেয়াদ আরও বাড়িয়ে নেয়া। চুক্তির ধরন নিয়ে পানিসম্পদমন্ত্রী রমেশ চন্দ্র সেন বলেছেন, একটি অন্তর্বর্তীকালীন চুক্তি হবে। পরবর্তীতে এ বিষয়ে স্থায়ী চুক্তির উদ্যোগ নেয়া হবে।
১৯৯৬ সালে দুই দেশের মধ্যে ৩০ বছর মেয়াদি গঙ্গার পানিবণ্টন চুক্তি স্বাাক্ষর হয়। তাতে শুষ্ক মৌসুমে প্রাপ্যতা অনুযায়ী দুই দেশের মধ্যে পানির ভাগাভাগি করা হয়। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাই তত্কালীন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে বাংলাদেশের পক্ষে চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন। কিন্তু চুক্তির পর আজ পর্যন্তও বাংলাদেশ হিস্যা অনুযায়ী পানি পায়নি। এই চুক্তি এখন শুধু কাগজে আছে, বাস্তবে নেই। শুষ্ক মৌসুমের শুরুতেই চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে উজানের ভারত ভাটির বাংলাদেশকে প্রায় ৬০ হাজার কিউসেক পানি কম দিয়েছে। এই চুক্তি অনুযায়ী এ সময় বাংলাদেশের এক লাখ ৭৫ হাজার ৩৪৩ কিউসেক পানি পাওয়ার কথা। কিন্তু পেয়েছে এক লাখ ১৮ হাজার ৯৭২ কিউসেক। অর্থাত্ চুক্তির ইন্ডিকেটিভ সিডিউল অনুযায়ী জানুয়ারি মাসে তিন কিস্তিতে বাংলাদেশ ৫৬ হাজার ৩৭১ কিউসেক পানি কম পেয়েছে। যৌথ নদী কমিশন (জেআরসি) সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। আসন্ন জেআরসি বৈঠকে কম পানি প্রাপ্তির বিষয়ে প্রতিবাদ জানানো হবে। ১৯৯৬ সালে সম্পাদিত গঙ্গা পানিচুক্তি অনুযায়ী জানুয়ারির প্রথম ১০ দিন বাংলাদেশের পানির হিস্যা হচ্ছে ৬৭ হাজার ৫১৬ কিউসেক, দ্বিতীয় ১০ দিন ৫৭ হাজার ৬৭৩ কিউসেক এবং শেষ ১০ দিন ৫০ হাজার ১৫৪ কিউসেক। কিন্তু এই সময়ে বাংলাদেশ পেয়েছে যথাক্রমে ৪৬ হাজার ৭২০ কিউসেক, ৩৭ হাজার ২০৪ এবং ৩৫ হাজার ৪৮ ্কিউসেক।
সূত্র জানায়, ভারত চুক্তির সংলগ্নি-১ মেনে চললেও ইন্ডিকেটিভ সিডিউল বা সংলগ্নি-২ মেনে না চলার কারণে বাংলাদেশ পানি কম পাচ্ছে। চুক্তিতে সংলগ্নি-২ অনুযায়ী জানুয়ারির প্রথম ১০ দিনে ফারাক্কা পয়েন্টে এক লাখ সাত হাজার ৫১৬ কিউসেক, দ্বিতীয় ১০ দিনে ৯৭ হাজার ৬৭৩ কিউসেক এবং তৃতীয় ১০ দিনে ৯০ হাজার ১৫৪ কিউসেক পানির প্রবাহ নিশ্চিত করতে ভারতকে সব ধরনের প্রচেষ্টা নিতে হবে। ফারাক্কা পয়েন্টে ১৯৪৯ থেকে ১৯৮৮ সালের গড় প্রবাহের ওপর ভিত্তি করে এটা নির্ধারণ করা হয় এবং বলা হয়, ভারত এ পরিমাণ প্রবাহ রক্ষা করার জন্য সব ধরনের প্রচেষ্টা নেবে। কিন্তু জানুয়ারিতে ফারাক্কায় প্রবাহ নিশ্চিত করা হয়নি।
মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, প্রথমে ১৭ মার্চ দুই দেশের পানিসম্পদ সচিব পর্যায়ে বৈঠক হবে। ১৮, ১৯ ও ২০ মার্চ অনুষ্ঠিত হবে মন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠক। বৈঠকে অংশগ্রহণের বিষয়টি এর মধ্যে সরকার অনুমোদন করেছে। বৈঠকে তিস্তা চুক্তি ছাড়াও অন্যান্য অভিন্ন নদীর পানিবণ্টন, সীমান্ত নদীর ভাঙনরোধসহ নদীর পানি ব্যবস্থাপনা সম্পর্কিত বিষয়ে আলোচনা হবে। উভয় দেশের মধ্যে ৫৪টি অভিন্ন নদী আছে। এর মধ্যে এ পর্যন্ত শুধু গঙ্গার পানিবণ্টন চুক্তি হয়েছে। সর্বশেষ জেআরসির মন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয় ২০০৫ সালে। ২০০৬ সালেই পরবর্তী বৈঠক অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা থাকলেও আর কোনো বৈঠক হয়নি। সূত্র জানায়, বাংলাদেশ তিস্তার পানির সমান ভাগাভাগির পক্ষে অবস্থান নিয়েছে। এর আগে গত ডিসেম্বরে জেআরসির কারিগরি ও সচিব কমিটির বৈঠকে বাংলাদেশ চুক্তির একটি খসড়া ভারতকে হস্তান্তর করে। এতে নদীর জন্য ২০ ভাগ পানি রেখে বাকি পানির সমান ভাগাভাগির প্রস্তাব দেয়া হয়। কিন্তু এর আগের জেআরসির বৈঠকে ১০ ভাগ পানি নদীর নাব্যতার জন্য রেখে অবশিষ্ট পানি দুই দেশ ভাগ করে নেয়ার প্রস্তাব বাংলাদেশ দিলেও ভারত তাতেও রাজি হয়নি। এ বিষয়ে আ.ন.হ. আখতার হোসেন বলেন, আসলে ভারত যেভাবে বলবে সেভাবেই চুক্তি করতে হবে। ভারতের কথার বাইরে কিছুই করা যাবে না। সরকার এখন সস্তা জনপ্রিয়তার জন্য এই চুক্তি করতে যাচ্ছে।
১৯৭২ সালের ১১ থেকে ১৩ ডিসেম্বর দিল্লিতে অনুষ্ঠিত যৌথ নদী কমিশনের (জেআরসি) তৃতীয় সভায় তিস্তা নদীর পানি বণ্টন নিয়ে প্রথম আলোচনা হয়। ভারতের অসহযোগিতার কারণে এ বিষয়ে কোনো সুনির্দিষ্ট সিদ্ধান্তে আসা যায়নি। ১৯৮৩ সালের জুলাই মাসে দু’দেশের মন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকে পাঁচ বছর মেয়াদি সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। কিন্তু এর পরও হিস্যা অনুযায়ী পানি পায়নি বাংলাদেশ। এরপর ২৭ বছর অপেক্ষা। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে ভারতের কাছে বহুবার আবেদন, নিবেদন, অনুরোধ করা হয়। কিন্তু নয়াদিল্লির মন গলেনি। সর্বশেষ গত ডিসেম্বর মাসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরকালেও বহুল প্রতীক্ষিত এই চুক্তি স্বাক্ষর হয়নি। এই বাস্তবতায় আগামী ১৭ মার্চ দিল্লিতে অনুষ্ঠিত হবে জেআরসি বৈঠক। চুক্তি না থাকায় ভারত আন্তর্জাতিক রীতি-নীতি ও বিধি-বিধান লঙ্ঘন করে বাঁধ নির্মাণ করে একতরফাভাবে তিস্তার পানি প্রত্যাহার করে নিচ্ছে। ফলে বাংলাদেশের রংপুর, দিনাজপুর, কুড়িগ্রাম, পঞ্চগড় ও বগুড়ার জীববৈচিত্র্য ধ্বংসের মুখে পড়ছে। ওইসব এলাকার সেচ কার্যক্রমের জন্য বহু অর্থ ও শ্রমের বিনিময়ে গড়ে তোলা তিস্তা সেচ প্রকল্প এখন মারাত্মক হুমকির মুখে পড়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে এই চিত্র ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে।
ভারতের রাজনৈতিক সদিচ্ছার অভাব এবং বাংলাদেশের প্রতি অবজ্ঞা আর অনীহার কারণেই তিস্তা নদীর পানি বণ্টন চুক্তি হচ্ছে না বলে মনে করেন আন্তর্জাতিক পরিবেশবিদ ও পানি বিশেষজ্ঞরা। গত ২৭ বছর ধরে এ চুক্তি ঝুলে রয়েছে বলে উল্লেখ করে তারা বলেন, আন্তর্জাতিক নদী তিস্তার পানি বণ্টন নিয়ে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক চুক্তির জন্য সবার আগে দুই দেশের রাজনৈতিক সদিচ্ছা প্রয়োজন। বাংলাদেশ বহুবার আবেদন, নিবেদন ও অনুরোধ করেও ভারতের কাছ থেকে কোনো সময়ই সাড়া পায়নি। গত বছরের শেষ দিকে ঢাকায় অনুষ্ঠিত যৌথ নদী কমিশনের সচিব পর্যায়ের বৈঠকও ফলশূন্য অবস্থায় শেষ হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরে তিস্তা চুক্তির বিষয়টি শীর্ষ বৈঠকের এজেন্ডার বাইরে রাখতে হয়। ১৯৯৬ সালে সম্পাদিত গঙ্গাচুক্তির সময়ও একই ঘটনা ঘটেছিল। ওই চুক্তিতেও ভারতের একতরফা পানি প্রত্যাহারের ব্যাপারে বাংলাদেশের আপত্তির সুযোগ রাখা হয়নি। অর্থাত্ কোনো গ্যারান্টি ক্লোজ রাখা হয়নি। ফলে ফারাক্কা ব্যারেজ দিয়ে গঙ্গা নদীর সব পানি প্রত্যাহার করে নিলেও বাংলাদেশ কোনো প্রতিবাদ করার সুযোগ পাচ্ছে না।
পানি বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তিস্তা চুক্তি হচ্ছে একটি গুরুত্বপূর্ণ এবং রাষ্ট্রীয় সিদ্ধান্তের বিষয়। শীর্ষ পর্যায়ের সিদ্ধান্ত ছাড়া টেকনিক্যাল পার্সনদের দ্বারা এর সমাধান সম্ভব নয়। সচিব কিংবা টেকনিক্যাল পার্সন সবাই সরকারের চাকরি করেন। তাদের সবারই হাত-পা বাঁধা। তাদের পক্ষে কোনো সিদ্ধান্ত নেয়া আদৌ সম্ভব নয়। এটা সবাই বোঝে। তিস্তা নদীর ব্যাপারে একটি চুক্তি বাংলাদেশের জন্য অত্যন্ত জরুরি। এই নদীর ওপরে ভারতের গজলডোবা নামক স্থানে বাঁধ দিয়ে তারা একতরফা পানি প্রত্যাহার করে নিচ্ছে। ফলে বর্তমানে তিস্তাতে তিন থেকে চারশ’ কিউসেকের বেশি পানি নেই। এটার অর্থ হচ্ছে, পুরো পানিই ভারত তুলে নিচ্ছে। ভারতের ভেতরে এ নদীর ডান দিকে যে ক্যানেল রয়েছে তার ধারণক্ষমতা হচ্ছে ১৬ হাজার কিউসেক। তিস্তা নদীর পানির ওপর ভিত্তি করেই বাংলাদেশ তিস্তা ব্যারেজ প্রকল্প গড়ে তুলেছে। শুকনো মৌসুমে যখন বৃষ্টিপাত থাকে না, তখন ওই প্রকল্পের পানি দিয়ে গোটা উত্তরাঞ্চলে ধান উত্পাদন হয়। ভারত একতরফা তিস্তা নদীর পানি প্রত্যাহার করায় ওই প্রকল্প এখন মারাত্মক হুমকির মুখে পড়েছে। এ কারণেই পানি বণ্টন চুক্তির মাধ্যমে ন্যায্য হিস্যা অনুযায়ী পানি পাওয়া দরকার। আর এটা বাংলাদেশের জন্য এখন একটা জীবন-মরণ সমস্যা। বিশ্বের সর্বত্র এমনকি ভারতের বিভিন্ন প্রদেশেও বলা হচ্ছে যে, অববাহিকাভিত্তিক পানি ব্যবস্থাপনা গড়ে তোলা প্রয়োজন। তিস্তা নদীর পানি প্রাপ্তির ব্যাপারে ভারতের কাছ থেকে একটি নিশ্চয়তা প্রয়োজন। যার ওপর ভিত্তি করে একটি কর্মপরিকল্পনা করা যায়। আর এ জন্যই দরকার একটি চুক্তির।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক পানি বিশেষজ্ঞ বলেন, ১৯৫২ সাল থেকে তিস্তার পানি বণ্টনের ব্যাপারে আলোচনা হচ্ছে। এখনও এই আলোচনা চলছে। ১৯৫২ সালে যে ধারায় আলোচনা হয়েছে, সাম্প্রতিক বৈঠকেও সেই ধারায় আলোচনা হয়েছে। এতে কোনো পরিবর্তন আমার কাছে মনে হয়নি। একটি চুক্তি করার জন্য যদি ৫০/৬০ বছর ধরে আলোচনাই হয়, তাহলে এর সফলতা নিয়ে প্রশ্ন আসাটাই স্বাভাবিক। দু’পক্ষের মধ্যে চুক্তির জন্য উভয়পক্ষকেই সম্মত হতে হবে। একপক্ষ সম্মত হলে তো আর হচ্ছে না। অপর পক্ষকেও সম্মত হতে হবে। ১৯৫২ সাল থেকে আলোচনার পর যেহেতু এখনও চুক্তিটি হয়নি, তাই স্বাভাবিকভাবেই বলা যায়, এতে ভারতের রাজনৈতিক সদিচ্ছার অভাব রয়েছে। সম্প্রতি যৌথ নদী কমিশনের যে বৈঠক হলো, সেটা যদি দুই দেশের প্রধানমন্ত্রীর বৈঠকের পরে হতো তাহলেও কিছুটা আশাবাদী হওয়া যেত।
আরেক পানি প্রকৌশলী বলেন, তিস্তা প্রকল্পই হচ্ছে বাংলাদেশের একমাত্র ও গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প, যার মাধ্যমে রংপুর, দিনাজপুর, কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা, বগুড়ায় তিন লাখ হেক্টর জমি সেচের আওতায় আনার পরিকল্পনা নেয়া হয়। এ প্রকল্পের জন্য শুষ্ক মৌসুমে ৮ হাজার কিউসেক পানির প্রয়োজন হয়। তিস্তা ব্যারেজ দিয়ে এ পানি আসত। বাংলাদেশের জন্য দুর্ভাগ্যের বিষয় হচ্ছে, ভারত তিস্তা ব্যারাজের একশ’ কিলোমিটার উত্তরে গজলডোবায় বাঁধ দিয়ে সব পানি প্রত্যাহার করে নিচ্ছে। ফলে বর্তমানে ওই প্রকল্প এলাকায় তীব্র পানি সঙ্কট দেখা দিয়েছে এবং গোটা প্রকল্পই হুমকির মুখে পড়েছে। বাংলাদেশ এ বিষয়ে বহু বছর ধরে চেষ্টা করেও ভারতকে পানি বণ্টন চুক্তিতে রাজি করাতে ব্যর্থ হচ্ছে। গত ৮ বছরে জেআরসির কোনো বৈঠকেই তিস্তার পানিবণ্টন ইস্যুটি এজেন্ডাভুক্ত করতে ভারত রাজি হয়নি। আমি মনে করি, ভারতের অনীহার কারণেই চুক্তি হচ্ছে না। আর যদি চুক্তি হয়, তাহলেও বাংলাদেশের স্বার্থে হবে না। তিনি বলেন, আমরা লক্ষ্য করে আসছি, ভারত আন্তঃনদী সংযোগ প্রকল্পের মাধ্যমে অভিন্ন ৫৪টি নদীর পানি একতরফা প্রত্যাহার করে তাদের দক্ষিণাঞ্চলে নেয়ার যে পরিকল্পনা করছে বাংলাদেশের জন্য এটিও মারাত্মক বিপর্যয় ডেকে আনবে।
http://www.amardeshonline.com/pages/details/2010/03/11/22218
Subscribe to:
Posts (Atom)