Tuesday 23 March 2010
পুকুর দখল আ’লীগ ক্যাডারদের : তিন লাখ টাকার মাছ লুট
রাজশাহীতে ৫ বিঘার পুকুর দখল আ’লীগ ক্যাডারদের : তিন লাখ টাকার মাছ লুট, মেয়রকে জানিয়েও কাজ হয়নি
সরদার এম. আনিছুর রহমান, রাজশাহী
রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের মাত্র ৫০ গজ দূরে অবস্থিত সাড়ে ৫ বিঘা জমির বহু পুরনো এক বিশাল পুকুর। পাশের গৌরহাঙ্গা মসজিদের মুসল্লিরা এক সময় এটি অজুর কাজে ব্যবহার করতেন। চারপাশের এলাকাবাসীও এর পানি ব্যবহার করত। ঐতিহ্যবাহী এ পুকুরের অনেক সুনাম ছিল। অতীতে এক সময় নগরবাসী এ পুকুরের পানি পান করত এবং পানি দিয়ে ডাল পাক করে খেত বলে জানা গেছে। কিন্তু স্থানীয় একটি ভূমিগ্রাসীর কারণে ওই পুকুরটি আজ নানা সমস্যায় জর্জরিত। পুকুরটি দখলে নিতে চতুর্দিক থেকে প্রস্রাব-পায়খানার লাইন দিয়েছে। পুকুর পাড়েই গড়ে তুলেছে গরুর খামার। ফেলা হচ্ছে নানা আবর্জনা। এতে পুকুরের পানি পানে অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। পৈতৃক উত্তরাধিকার সূত্রে এর মালিক ছিলেন নগরীর ঘোড়ামারা সাহেবাবাজার এলাকার ব্যবসায়ী রওশন বাচ্চু। কিন্তু এলাকার একটি ভূমিগ্রাসী চক্রের কারণে তিনি বাপ-দাদার এ ঐতিহ্যবাহী পুকুরটি আর ধরে রাখতে পারলেন না। আজ থেকে ৬ বছর আগে তিনি পুকুরটি ৬০ লাখ টাকার বিনিময়ে নগরীর স্বনামধন্য ব্যবসায়ী রাজশাহী চেম্বারের সাবেক সভাপতি হাসেনঃ আলী ও ব্যবসায়ী ইমরুল কায়েসের কাছে বিক্রি করে দেন। এরপরও এলাকার ওই চক্রটি থামেনি। গত কয়েক বছর কিছুটা নীরব থাকলেও মহাজোট সরকার গঠনের পর তারা এ পুকুরটি দখলে আবারও তত্পর হয়ে ওঠে।
সম্প্রতি ওই এলাকার আওয়ামী লীগ নেতা আলাউদ্দিন, ওসমান খান ও রহমান খান পুকুরটি রাতারাতি দখল করে নেন। তারা রাজশাহীর মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন ও মহানগর আওয়ামী লীগের ছত্রছায়ায় পুকুরটি জোরপূর্বক দখল করে নেন বলে অভিযোগ উঠেছে। দখল করেই তারা ক্ষ্যান্ত হননি, পুকুর থেকে ৩ লাখ টাকার মাছ লুট করে নিয়ে গেছেন। এ ব্যাপারে মেয়র লিটন ও আওয়ামী লীগ নেতাদের জানিয়েও কোনো কাজ হয়নি বলে জানা গেছে।
এর আগেও পুকুরের মালিক ঘোড়ামারা এলাকার রওশন বাচ্চু বলেন, এটা আমার পৈতৃক সম্পত্তি ছিল। কিন্তু ওই এলাকার কিছু লোকের অত্যাচারে ৬ বছর আগে তিনি ব্যবসায়িক ইমরুল কায়েস ও হাসেন আলীর কাছে বিক্রি করে দিয়েছেন। তিনি আরও বলেন, এ জমির কোনো সমস্যা ছিল না। কিন্তু ভূমিগ্রাসী চক্রটি আমাকে পুকুরটি আবাদ করতে দেয়নি।
ইমরুল কায়েস ও হাসেন আলী পুকুরটি কেনার পর ৭৫ হাজার টাকা বার্ষিক হারে একই এলাকার আবদুস সামাদের কাছে লিজ দেন। সামাদ যথারীতি পুকুরে মাছ চাষ করে ব্যবসা করে আসছিলেন। আবদুস সামাদ জানান, আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতাসীন হওয়ার পর থেকে স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও যুবলীগ নেতাকর্মীরা অত্যাচার শুরু করে। প্রথমে তারা পুকুর থেকে মাছ ধরার সময় বড় বড় মাছ জোরপূর্বক নিয়ে যেত। কিন্তু কয়েক মাস আগে থেকে তারা ৩ হাজার টাকা হারে চাঁদা দাবি করে। চাঁদা দিতে রাজি না হওয়ায় তারা পুকুরে মাছ ধরতে বাধা দেয়। একপর্যায়ে গত ডিসেম্বরে আমি পুকুরে মাছ ধরতে গেলে তারা জেলেদের জালসহ বোয়ালিয়া থানায় নিয়ে যায়। পরে দেড় ঘণ্টা পর জেলেদের ছেড়ে দিয়ে ওসি জানান, বিষয়টি মেয়র লিটনের দফতরে সমাধা হবে। কিন্তু বিষয়টি সমাধানের আশ্বাস দিয়ে মেয়র লিটন সেই থেকে গড়িমসি করছেন। মেয়র বিষয়টি সমাধানের জন্য মহানগর কোষাধ্যক্ষ শামসুজ্জামান আউয়ালকে দায়িত্ব দিয়েছেন। সূত্রমতে, আউয়াল পুকুরটি এখন স্থানীয় আওয়ামী লীগ ক্যাডারদের মধ্যে ভাগ-বাটোয়ারা করে দিয়েছেন। এতে মালিকানা হারানোর শঙ্কায় রয়েছেন পুকুরের মূল মালিকরা। এদিকে লিজ গ্রহীতা আবদুস সামাদও পুকুরের লাখ লাখ টাকার মাছ হারিয়ে হতবাক হয়ে পড়েছেন। তিনি নেতাদের দ্বারে দ্বারে ঘুরেও এর কোনো সুবিচার পাচ্ছেন না। তিনি বলেন, এ ব্যাপারে থানায় অভিযোগ করেও কোনো বিচার পাননি। এদিকে কাউকে কোনো কিছু না জানিয়ে ওই চক্রটি ক’দিন আগে প্রায় আড়াই লাখ টাকার মাছ ধরে বিক্রি করেছে।
গতকাল দুপুরেও তারা প্রায় এক লাখ টাকার মাছ ধরেছে বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়। মহানগর আওয়ামী লীগের ১৩ নম্বর ওয়ার্ড সেক্রেটারি তৌহিদুজ্জামান তৌহিদ আলাউদ্দিনকে আওয়ামী লীগের কর্মী বলে স্বীকার করেন। এ ব্যাপারে আওয়ামী কর্মী আলাউদ্দিন বলেন, এটা নিজকর সম্পত্তি-প্রান্তশালা স্টেট, কেউ ইচ্ছা করলেই ব্যক্তিমালিকানায় নিতে কিংবা ক্রয়-বিক্রয় করতে পারে না। এটা জনগণের সম্পত্তি। পুকুর দখল এবং মাছ লুট করার বিষয়ে তিনি বলেন, আমার বিরুদ্ধে এ অভিযোগ মিথ্যা, বানোয়াট ও ভিত্তিহীন। কে বা কারা মাছ ধরেছে তা আমি জানি না। এ বিষয়ে রাজশাহীর ভূমি অফিসে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পুকুরটি ব্যক্তিমালিকানা সম্পত্তি। এছাড়া পুকুরটি ইমরুল কায়েস ও হাসেন আলীর নামেই দলিল এবং রেকর্ড খারিজ হয়েছে।
এ ব্যাপারে পুকুরের এক মালিক রাজশাহী চেম্বারের হাসেন আলী পুকুরের মালিকানা দাবি করে বলেন, এলাকার কিছু লোক ঝামেলা করছে। এ ব্যাপারে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। তিনি আরও বিস্তারিত জানতে তার ভাই পুকুরের অংশীদার ব্যবসায়ী ইমরুল কায়েসের সঙ্গে যোগাযোগ করার পরামর্শ দেন। ব্যবসায়ী ইমরুল কায়েস বলেন, টাকা দিয়ে পুকুর কেনার পরও অযথা জামেলা পোহাতে হচ্ছে। আলাউদ্দিন অযথা হয়রানি করছেন। তিনি মেয়রের কাছে বিষয়টি জানানোর কথা স্বীকার করে বলেন, মেয়র সাহেব আউয়ালকে দায়িত্ব দিয়েছেন এর সমাধা করার জন্য। কিন্তু দীর্ঘদিনেও এর সমাধা হচ্ছে না।
বিষয়টি মীমাংসা করে দেয়ার জন্য মেয়র তাকে দায়িত্ব দেয়ার কথা স্বীকার করে মহানগর আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ শামসুজ্জামান আউয়াল বলেন, আমি তাদের সঙ্গে কথা বলেছি। আমি তাদের বলেছি, এ নিয়ে কোনো ঝুটঝামেলা না করে তোমরা সবাই মিলে করে খাও। এ ব্যাপারে গতকাল দুপুরে মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটনের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি। তার মোবাইল ফোনে কল করা হলে এপিএস জানান, স্যার মিটিংয়ে আছেন।
http://www.amardeshonline.com/pages/details/2010/03/24/24176
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
No comments:
Post a Comment