Wednesday, 10 March 2010

রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় ভারত থেকে প্রতিদিনই হেরোইন, গাঁজা, ফেনসি, যৌন উত্তেজক ট্যাবলেটসহ বিভিন্ন ভারতীয় মাদকদ্রব্য


মাদকের সঙ্গে আসছে অবৈধ অস্ত্র : হাতিবান্ধা নিরাপদ ট্রানজিট পয়েন্ট

আসাদুজ্জামান সাজু, হাতিবান্ধা (লালমনিরহাট)
রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় ভারত থেকে প্রতিদিনই হেরোইন, গাঁজা, ফেনসিডিল, বিয়ার, প্যাথেডিন, ভায়াগ্রা, মনিস ও ভিগোফটের মতো যৌন উত্তেজক ট্যাবলেটসহ বিভিন্ন ভারতীয় মাদকদ্রব্য লালমনিরহাট জেলার হাতিবান্ধা সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করছে। বিডিআরের নিষ্ক্রিয়তা ও বিএসএফের সহযোগিতায় হাতিবান্ধা উপজেলার বাড়াইপাড়া, কানিপাড়া, সিঙ্গিমারী, কালীবাড়ী, গেন্দুকুড়ি, দইখাওয়া, আমাঝোল, বড়খাতা, ভেলাগুড়িসহ গোটা সীমান্ত এলাকা মাদক ব্যবসায়ীদের নিয়ন্ত্রণে। মাদকের নিরাপদ ট্রানজিট পয়েন্ট হিসেবে হাতিবান্ধাকে ব্যবহার করছে মাদক ব্যবসায়ীরা। গুঞ্জন উঠেছে, মাদকের সঙ্গে মাঝে মধ্যে অবৈধ অস্ত্রের চালানও আসছে। এসব মাদকদ্রব্য তিস্তা ব্যারেজ দিয়ে নীলফামারী হয়ে লালমনিরহাট রেল সেতু দিয়ে রংপুর ও ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে চলে যাচ্ছে।
লালমনিরহাট জেলার হাতিবান্ধা উপজেলার সীমান্তবর্তী এলাকার লোকজন জানান, তারা শুনেছে সীমান্তের ওপারে ভারতের শীতলখুচি থানার গাছতলা গ্রামে ফেনসিডিল কারখানা গড়ে উঠেছে, পাশাপাশি সেখানে গাঁজাও চাষ করা হচ্ছে। এসব কারখানায় উত্পাদিত ফেনসিডিল ও গাঁজা ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফের সহযোগিতায় বাংলাদেশে প্রবেশ করছে অথচ বিডিআর তা দেখেও না দেখার ভান করছে। সীমান্ত এলাকার লোকজন ক্রমেই মাদকসহ চোরাচালান ব্যবসায় জড়িয়ে পড়ছে। সীমান্ত এলাকার মহিলাদের মাদকবাহক হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। অনেক মাদক ব্যবসায়ীর সঙ্গে আন্ডারওয়ার্ল্ডের যোগাযোগ রয়েছে। ক্ষমতাসীন দলের নেতাদের ছত্রছায়ায় মাদক ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেট গড়ে উঠেছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন মাদক ব্যবসায়ী এ প্রতিনিধিকে জানান, পুলিশ ও বিডিআরের মাসোহারা আদায়ের জন্য লাইনম্যান নিয়োগ আছে, একজন লাইনম্যানের আওতায় ৪০/৫০ জন ব্যবসা করে। গোটা হাতিবান্ধা উপজেলায় প্রায় ১ ডজন লাইনম্যান নিয়োগ আছে। তবে পুলিশ ও বিডিআর মাসোহারা আদায়ের অভিযোগ অস্বীকার করেন। এসব মাদকদ্রব্য কাজীরবাজার, মিলনবাজার, খানের বাজার, বড়খাতা, দইখাওয়া, অডিটরিয়াম মোড়, করবালার দিঘি, দিঘিরহাট, কালীবাড়ী, গেন্দুকুড়ি, পারুলিয়াসহ বিভিন্ন স্থানে বিক্রি হচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে। দামে সস্তা এসব মাদক সেবন করে স্কুল ও কলেজের ছাত্ররা বিপথগামী হচ্ছে। সমপ্রতি হাতিবান্ধা উপজেলা আওয়ামী লীগের মাসিক সভায় মাদক ও চোরাচালান বন্ধের দাবি ওঠে। সভায় উপস্থিত প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মোতাহার হোসেন মাদক ও চোরাচালান বন্ধ করতে পুলিশকে নির্দেশ দিলেও এখন পর্যন্ত বন্ধ হয়নি মাদক ব্যবসা।
প্রতিদিন সন্ধ্যার পর হাতিবান্ধার কাজীরবাজার, ডাকবাংলা, উপজেলা চত্বর, দিঘিরহাট, হেলিপ্যাড, আলিমুদ্দিন কলেজ মাঠ, বিন্দু হল, মেডিকেল চত্বরসহ কযেকটি স্থানে মাদকসেবীদের আসর জমে ওঠে। সেই সঙ্গে স্থানীয় প্রশাসন ও ক্ষমতাসীন দলের নেতাদের ম্যানেজ করে গোটা হাতিবান্ধা জুড়ে চলছে মাদকের জমজমাট ব্যবসা। মাঝে মাঝে লোক দেখানো দু’একটি অভিযান হলেও মামলা হচ্ছে বজ্র আঁটুনি ফসকা গেরোর মতো। পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে, অভিযান চালিয়ে বিভিন্ন ভারতীয় পণ্য আটক করলেও অনেক সময় মামলা হয় না। মাদকসহ হাতেনাতে ধরা পড়েও কিছুদিন হাজতবাস করে আইনের ফাঁকফোকর দিয়ে বের হয়ে আসছে মাদক ব্যবসায়ীরা। এ ব্যাপারে হাতিবান্ধা থানার ওসি গোলাম মর্তুজা জানান, মাদক ও চোরাচালান প্রতিরোধে প্রতিদিনই আমাদের অভিযান চলছে। তিনি মাদকমুক্ত হাতিবান্ধা গড়তে সবার সহযোগিতা চান।

http://www.amardeshonline.com/pages/details/2010/03/11/22247

No comments:

Post a Comment