Sunday 1 January 2012

বছরের আলোচিত উক্তি










এমরান হোসাইন

সদ্য বিদায় নেয়া বছরে প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রী এবং সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ের নীতিনির্ধারকদের কয়েকটি উক্তি বছরজুড়েই ছিল আলোচিত। এসব উক্তি ছিল মানুষের মুখে মুখে, টক অব দ্য কান্ট্রি। গণমাধ্যম এসব আলোচিত উক্তি নিয়ে আকর্ষণীয় কার্টুনও প্রকাশ করেছে।
টাকা থাকলে ঢাকাকে চার ভাগ করতাম : প্রধানমন্ত্রী
সরকার সম্প্রতি চারশ’ বছরের ঐতিহ্যবাহী শহর ঢাকাকে দুটি সিটি করপোরেশনে বিভক্ত করেছে। গত ৩০ নভেম্বর মাত্র চার মিনিটে এ সংক্রান্ত বিল বিরোধী দলের অনুপস্থিতিতে জাতীয় সংসদে পাস হয়। ঢাকা সিটিকে দুই ভাগ করার বিল পাসের আগে-পরে সংসদের বাইরে বিরোধী দলসহ অন্যান্য রাজনৈতিক দল, বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন ও সুশীল সমাজের পক্ষ থেকে তীব্র প্রতিবাদ ও সমালোচনার ঝড় ওঠে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিল পাসের পরদিন ৩০ নভেম্বর সংসদের সমাপনী ভাষণে এসব সমালোচনার জবাব দেন। ওইদিন তিনি বলেন, সরকার নগরবাসীর দোরগোড়ায় সেবা পৌঁছে দিতে ঢাকা সিটিকে দুই ভাগ করেছে। ডিসিসি ভাগের পক্ষে বিভিন্ন যুক্তি দেয়ার পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রী আরেক ধাপ এগিয়ে বলেন, ঢাকা সিটিকে দু’ভাগ করেছি। আমাদের যথেষ্ট টাকা থাকলে চার ভাগ করতাম।
বাঘে ধরলে বাঘে ছাড়ে, শেখ হাসিনা ধরলে ছাড়ে না : সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত
গত বছরের বহুল আলোচিত উক্তি ছিল আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য ও বর্তমানে রেলমন্ত্রী সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের। বাঘে ধরে কাউকে ছাড়লেও শেখ হাসিনা কাউকে ধরলে ছাড়েন না বলে তিনি মন্তব্য করেন। সরকার নোবেল শান্তি বিজয়ী ড. ইউনূসকে গ্রামীণ ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের পদ থেকে অপসারণের পর সুরঞ্জিত এ ধরনের উক্তি করেন। গত ২৪ মে জাতীয় প্রেস ক্লাবে প্রজন্ম একাত্তরের এক আলোচনা সভায় বিরোধী দল বিএনপিকে উদ্দেশ করে তিনি বলেন, ‘একটা কথা মনে রাখবেন—বাঘে ধরলে বাঘে ছাড়ে কিন্তু শেখ হাসিনা ধরলে কাউকে ছাড়ে না। ছাড়ছে? ছাড়ছে? ছাড়ছে ইউনূস মিয়াকে?’
আমি হিন্দু নই মুসলমানও নই : আশরাফ
গত ১৩ জুলাই রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় বিভিন্ন পত্রিকার সম্পাদক ও মিডিয়া ব্যক্তিত্বের সম্মানে আয়োজিত মধ্যাহ্নভোজে অংশ নেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও স্থানীয় সরকারমন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম। ওই অনুষ্ঠানে সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীসহ সাম্প্রতিক ইস্যু নিয়ে আলোচনা হয়। অনুষ্ঠান থেকে বেরিয়ে উপস্থিত সাংবাদিকদের কাছে প্রতিক্রিয়া জানান সৈয়দ আশরাফ। এ সময় তিনি স্বীকার করেন, সংশোধিত সংবিধানে বিসমিল্লাহ ও রাষ্ট্রধর্ম নিয়ে কিছু অসঙ্গতি রয়েছে। এ সময় জাতীয় চার নেতার অন্যতম সৈয়দ নজরুল ইসলামের ছেলে সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম নিজের ধর্মবিশ্বাসের কথা তুলে ধরে বলেন, ‘আমি মুসলমানও নই, হিন্দুও নই।’ মুসলিম পরিবারের ছেলে ও আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের এই বক্তব্য দলের ভেতরে ও বাইরে ব্যাপক ঝড় তোলে।
কম খান : ফারুক খান
সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী ও বর্তমানে বেসরকারি বিমান চলাচলমন্ত্রী কর্নেল ফারুক খানের কম খাওয়ার পরামর্শ বিষয়ের উক্তিটিও কম উপভোগ্য ছিল না। গত ৪ আগস্ট ব্যবসায়ীদের সঙ্গে মতবিনিময়ের পর উপস্থিত সাংবাদিকদের কাছে প্রতিক্রিয়া ব্যক্তকালে মন্ত্রী বলেন, আমি বললে তো আপনারা রাগ করবেন। কম খান। একবেলা কম খেলে স্বাস্থ্য ভালো থাকবে আর ব্যবসায়ীদের মুনাফা কমে যাবে। ফলে তারা নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বাড়াবে না। মন্ত্রী নিজেও কম খান বলে সাংবাদিকদের অবহিত করেন।
সিপিডির বক্তব্য টোটালি রাবিশ : অর্থমন্ত্রী
গত ৫ জুন সচিবালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার নিয়ে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বক্তব্যকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে মন্তব্য করে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত উত্তেজিত কণ্ঠে বলেন, সিপিডির বক্তব্য অত্যন্ত অন্যায়, দুষ্ট এবং ‘টোটালি রাবিশ, বোগাস’।
এর আগেরদিন ৫ জুন এক অনুষ্ঠানে সরকারের ২০১০-১১ অর্থবছরের প্রবৃদ্ধির হারের প্রাক্কলন ৬ দশমিক ৬৬ শতাংশকে সিপিডি প্রশ্নসাপেক্ষ উল্লেখ করেন। অর্থমন্ত্রী অপর এক অনুষ্ঠানে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি রোধ করতে সপ্তাহে একদিন বাজারে কম যাওয়ার পরামর্শ দেন।
ভারতকে ট্রানজিট দিয়ে ফি চাওয়া হবে অসভ্যতা : ড. মসিউর রহমান
ভারতকে ট্রানজিট দেয়ার মাধ্যমে ফি আদায়ের প্রসঙ্গ এলে প্রধানমন্ত্রীর অর্থ উপদেষ্টা ড. মসিউর রহমান বিনা ফি’তে ট্রানজিট দেয়ার কথা জানান। ট্রানজিটের বিনিময়ে ফি আদায় নাকি অসভ্যতা (!) বলে মন্তব্য করেন এই উপদেষ্টা। তিনি বলেন, ‘আমরা ট্রানজিট দেয়ার বিনিময়ে ভারতের কাছ থেকে কোনো ফি দাবি করতে পারি না। ট্রানজিট চুক্তি বিষয়ে আমার বক্তব্য সবসময় একটাই। আমরা এখন সিভিলাইজড (সভ্য) কান্ট্রিগুলোর অন্তর্ভুক্ত। সেই হিসেবে ভারতকে ট্রানজিট দেয়ার বিনিময়ে আমরা কোনো ফি দাবি করতে পারি না। এটা করলে আমরা আনসিভিলাইজড (অসভ্য) কান্ট্রিগুলোর অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাব। বাংলাদেশ যদি অসভ্য ও অশিক্ষিত দেশ হতো, বাংলাদেশের নীতিনির্ধারকরা যদি অসভ্য ও অশিক্ষিত হতেন, তাহলে ট্রানজিটের জন্য ফি চাওয়া যেত।’ পরে ১২ অক্টোবর এক অনুষ্ঠানে এই উপদেষ্টা বলেন, আমাদের লোকজন অভিজ্ঞ না হওয়া পর্যন্ত ভারত থেকে ফি নেয়া হবে না। এর আগে গত বছরের প্রথমদিকে প্রধানমন্ত্রীর এই প্রভাবশালী উপদেষ্টা শেয়ারবাজার বিপর্যয় নিয়ে মন্তব্য করেন। গত বছর ২০ জানুয়ারি খুলনার এক অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, শেয়ারবাজারে ধসের জন্য সরকারের মাথা ঘামানোর কোনো কারণ নেই; কারণ কতকগুলো লোক (শেয়ারবাজারে বিনিয়োগকারী) যদি অর্থনীতিতে অবদান না রেখে লাভবান হতে চায়, তাদের কষ্টে আমার হৃদয় কাঁদে না।
টিপাইমুখ বাঁধে আমাদের বরং ভালোই হবে : গওহর রিজভী
টিপাইমুখে ভারত বাঁধ ও জলবিদ্যুত্ প্রকল্প নির্মাণে চুক্তি করার খবরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার উপদেষ্টা ড. মসিউর রহমান ও ড. গওহর রিজভীকে দিল্লি পাঠান বাস্তব পরিস্থিতি জানতে। দিল্লি সফর শেষে গত ৩ ডিসেম্বর দেশে ফেরেন এই দুই উপদেষ্টা। দেশে ফিরে বিমানবন্দরে উপস্থিত সাংবাদিকদের কাছে সফরের বিষয়ে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন। প্রতিক্রিয়াকালে ড. গওহর রিজভী সাংবাদিকদের বলেন, ‘টিপাইমুখ বাঁধে আমাদের কোনো ক্ষতি হচ্ছে না; বরং ভালোই হবে। আমরা একেবারেই সেটিসফাইড হয়ে এসেছি। এ নিয়ে ভারত যে ব্যাখ্যা দিয়েছে তাতে আমরা সন্তুষ্ট। এ নিয়ে উদ্বেগের কোনো কারণ নেই।’
গরু-ছাগল চিনলেই লাইসেন্স দেয়া যায় : নৌপরিহনমন্ত্রী
গত বছর একের পর এক সড়ক দুর্ঘটনা নিয়ে দেশবাসী যখন সোচ্চার, পরীক্ষা ছাড়া (অশিক্ষিত ব্যক্তিদের) ড্রাইভিং লাইসেন্স দেয়ার বিরুদ্ধে যখন সামাজিক সংগঠনগুলোর আন্দোলন তুঙ্গে, তখনই নৌপরিবহনমন্ত্রী ও পরিবহন শ্রমিক নেতা শাজাহান খান পরীক্ষা ছাড়া ড্রাইভিং লাইসেন্স দেয়ার পক্ষে জোরালো যুক্তি তুলে ধরেন। গত ২৮ আগস্ট সচিবালয়ে তার মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে উপস্থিত সাংবাদিকদের উদ্দেশ করে তিনি বলেন, ‘বাস্তবতা হলো, দেশে চালকের সঙ্কট আছে। এজন্য অশিক্ষিত চালকদেরও লাইসেন্স দেয়া দরকার। আর চালকরা সিগন্যাল চেনে, গরু-ছাগল চেনে, ভেড়া-মহিষ-মানুষ চেনে। সুতরাং তাদের লাইসেন্স দেয়া যায়।’ এরপর ১৬ সেপ্টেম্বর নিজ নির্বাচনী এলাকায় একটি অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে অশিক্ষিত ও অপ্রশিক্ষিত চালকদের পক্ষ নিয়ে নৌমন্ত্রী বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর (বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা) ড্রাইভারও ফাইভ পাস। সে-ও ভালো গাড়ি চালায়।’
আমি গণক নই যে বলব, কবে তিস্তা চুক্তি হবে : দীপু মনি
সরকারের দৃঢ়বিশ্বাস থাকলেও ভারতের প্রধানমন্ত্রী ড. মনমোহন সিংয়ের বাংলাদেশ সফরকালে বাংলাদেশের প্রত্যাশিত তিস্তা পানিবণ্টন চুক্তি স্বাক্ষর হয়নি। এ নিয়ে ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়ে ক্ষমতাসীন সরকার। গণমাধ্যম কর্মীসহ বিভিন্ন স্তরের প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হয় সরকারের শীর্ষ ব্যক্তিদের। গত ৪ অক্টোবর এ ধরনের একটি পরিস্থিতির মুখোমুখি হন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. দীপু মনি। ওইদিন তার মন্ত্রণালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে ‘কবে তিস্তা চুক্তি হবে’ সাংবাদিকরা জানতে চাইলে বেশ ক্ষুব্ধ হন দীপু মনি। তিনি বলেন, ‘আপনারা কেন হতাশ হচ্ছেন, আমি বুঝতে পারছি না। আমি গণক নই যে বলতে পারব, তিস্তা চুক্তি কবে হবে।’ এ ব্যাপারে উভয় দেশের সম্মতি আছে। বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক সমুন্নত রেখেই চুক্তিটি হবে। ভবিষ্যতে কবে তিস্তা চুক্তি হবে, এমন সুনির্দিষ্ট কোনো দিনক্ষণ বলতে পারছি না। গত ৪০ বছর এটা নিয়ে কেউ কিছু করেনি। আমরা এখন করছি। আওয়ামী লীগ সরকার এ চুক্তি করবে।
সন্তু লারমার শান্তিতে নোবেল পাওয়া উচিত ছিল : অ্যাটর্নি জেনারেল
নোবেল শান্তি বিজয়ী ড. ইউনূসের রিট আবেদনের ওপর উচ্চ আদালতে শুনানিকালে গত ৮ মার্চ নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেন, ‘আপনারা নোবেল প্রাইজটাকে এত বড় করে দেখছেন কেন? বাংলাদেশে যদি শান্তির জন্য নোবেল প্রাইজ পেতে হয় তাহলে আমি বলব, দু’জনের পাওয়া উচিত ছিল— শেখ হাসিনা আর সন্তু লারমার। কারণ একটি বিরাট এলাকা সশস্ত্র সংগ্রামে লিপ্ত ছিল। যেখানে সেনাবাহিনী ছাড়া আমাদের যাওয়ার অবস্থা ছিল না। সেখানে আজ আমরা স্বাধীনভাবে বিচরণ করছি। শান্তি ফিরে এসেছে। এই শান্তি ফিরিয়ে আনার জন্য দু’জন কাজ করেছেন, শেখ হাসিনা আর সন্তু লারমা। তারা নোবেল প্রাইজ পাননি বলে কি শান্তি প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে তাদের যে কাজ, তা কম হয়ে যাবে?’
এদিকে সরকার ও দলের বিভিন্ন ব্যক্তি বিভিন্ন সময়ে এ ধরনের আলোচিত-সমালোচিত মন্তব্য করেন। জাতীয় সংসদের স্পিকার আবদুল হামিদও সংসদকে মাছের বাজার বলে মন্তব্য করেছিলেন। সরকারদলীয় সংসদ সদস্য শওকত মোমেন গত ১৭ নভেম্বর এক অনুষ্ঠানে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে বিখ্যাত কাদেরিয়া বাহিনীর প্রধান খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা বর্তমানে কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকীকে (বীর উত্তম) যুদ্ধাপরাধী উল্লেখ করে তার বিচার হওয়া উচিত বলে মন্তব্য করেন। গত বছর ফেব্রুয়ারি মাসে ঢাকেশ্বরী মন্দিরে ভয়াবহ চুরির পর ৬ ফেব্রুয়ারি এক অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগ নেতা মোহাম্মদ নাসিম বলেন, যুদ্ধাপরাধের বিচার বাধাগ্রস্ত করতে মন্দিরে চুরি হয়েছে।

অলীক স্বপ্ন মিথ্যাচারে হতাশ জনগণ










মাহাবুবুর রহমান

তিন বছরের শাসনে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার অলীক স্বপ্ন দেখিয়ে ও মিথ্যাচার করে জনগণকে হতাশ করেছে বলে মনে করেন দেশের বিশিষ্ট নাগরিকরা। তাদের মতে, পরিবর্তনের স্লোগান নিয়ে ক্ষমতায় এলেও সরকার কোনো ক্ষেত্রেই উল্লেখযোগ্য সাফল্য দেখাতে পারেনি। রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক ও নাগরিক সমস্যা চরম আকার ধারণ করেছে। তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করে সরকার দেশকে অনিশ্চিত গন্তব্যে ঠেলে দিয়েছে। জিনিসপত্রের দাম কমানোর অঙ্গীকার থাকলেও লাগামহীনভাবে বেড়েছে দ্রব্যমূল্য। দুর্নীতিতে আন্তর্জাতিকভাবে এ সরকার নতুন সার্টিফিকেট এনেছে। বাগাড়ম্বর কূটনীতিতে আন্তর্জাতিক বন্ধু কমেছে। আন্তঃরাষ্ট্রীয় সম্পর্কে বিশেষ কোনো সাফল্য নেই। জনশক্তি রফতানিতে ধস নেমেছে আশঙ্কাজনক হারে। পদ্মা সেতু নির্মাণ, ঘরে ঘরে চাকরি, বিনামূল্যে সার এবং সুশাসন ও মানবাধিকারের আশার আলো দেখা যায়নি। রাস্তাঘাটসহ নতুন কোনো যোগাযোগ অবকাঠামো যোগ হয়নি এ সরকারের আমলে। উপরন্ু্ত আইনশৃঙ্খলার অবনতিতে গুপ্তহত্যা চলছে, জনমনে চরম নিরাপত্তাহীনতা দেখা দিয়েছে। অর্থনীতিতে চলমান অস্থিরতা নিরসন এ সরকারের দ্বারা সম্ভব নয়। রাজনৈতিক অস্থিরতা ও অনিশ্চয়তা কাটাতে না পারলে রাষ্ট্রব্যবস্থা চরম হুমকির মুখে পড়বে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন তারা।
সরকারের তিন বছরের শাসনের মূল্যায়নে আমার দেশ-এর সঙ্গে কথা বলেছেন বিশিষ্ট চিন্তক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। এরা হলেন—বদরুদ্দীন উমর, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা অর্থনীতিবিদ ড. আকবর আলী খান, রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি অধ্যাপক ড. এমাজউদ্দীন আহমদ, রাষ্ট্রবিজ্ঞানী অধ্যাপক ড. তালুকদার মনিরুজ্জামান, বিবিসি খ্যাত সাংবাদিক আতাউস সামাদ, অর্থনীতিবিদ ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক অধ্যাপক ড. মাহবুবউল্লাহ, সাংবাদিক মাহফুজউল্লাহ, মানবজমিন সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী ও দৈনিক আমাদের অর্থনীতির সম্পাদক নাঈমুল ইসলাম খান।
বিশিষ্ট চিন্তক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক বদরুদ্দীন উমর বলেন, ঢেঁকিকে জিজ্ঞেস করলে বলে—আমরা স্বর্গে যাচ্ছি। সরকারও কেবল বলছে—দেশকে উন্নতির দিকে নিয়ে যাচ্ছি। বস্তুতপক্ষে তিন বছরে সবক্ষেত্রেই ভয়াবহ নেতিবাচক পরিস্থিতির সৃষ্টি করা হয়েছে। জনগণেরও কিছু করার নেই। কোন দিকে যাবে। বিকল্পও কিছু খুঁজে পাচ্ছে না। আশাপ্রদ কিছু পেলে এভাবে দেশ শাসন করে তিন বছর ক্ষমতায় থাকার সুযোগ পেত না এ সরকার। তিনি বলেন, দেশে একটি অসহনীয় পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। অপরাধের কোনো শাস্তি হচ্ছে না। সবাই পার পেয়ে যাচ্ছে। এভাবে চললে অরাজকতা ও নৈরাজ্য হবেই। এটাই এখন সবচেয়ে বড় সঙ্কট। তিনি বলেন, অর্থনৈতিক দিকটিই সবচেয়ে বেশি খারাপ। একদিন বলছে ৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হবে। আরেক দিন বলছে—হবে না। এভাবে রাষ্ট্র পরিচালনা করা যায় না।
তিনি বলেন, জাতীয় সংসদ পুরোপুরি অকার্যকর। আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে সরকার পড়ে আছে অন্য দেশের ওপর। সরকার ও বিরোধীদলের নির্ভরতায় ভারত, আমেরিকা ও সৌদি আরব বাংলাদেশকে ব্যবহার করে। বিরোধীদলের যে দায়িত্ব পালন করা দরকার, তাও তারা করে না। সরকারের মতোই জনগণের প্রতি সামান্যতম দায়িত্ববোধ তাদের নেই।
রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি অধ্যাপক ড. এমাজউদ্দীন আহমদ বলেন, তিন বছরে সরকার অঙ্গীকার বাস্তবায়নের কাছাকাছিও যেতে পারেনি। বরং বেশিরভাগ ক্ষেত্রে বিপরীতমুখী কাজ করেছে। ১০ টাকা কেজি চাল দিতে চেয়েছে, বিনা টাকায় সার দিতে চেয়েছে। দ্রব্যমূল্য পাগলা ঘোড়ার মতো বিপরীতমুখী হয়েছে। আইনশৃঙ্খলার পরিস্থিতি এমন একটি অবস্থায় গেছে অপহরণ গুম-খুন এখন অস্বাভাবিক হারে বেড়েছে। অর্থনৈতিক ব্যর্থতা আকাশ ছুঁয়েছে। পদ্মা সেতু নির্মাণের কাজ শুরু করতে পারেনি। বিদেশে ভাবমূর্তি ভয়ঙ্কর ক্ষুণ্ন হয়েছে। দুর্নীতি বেড়েছে। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে দুর্নীতির নতুন সার্টিফিকেট পেয়েছে। নিরপেক্ষ নির্বাচনের সুযোগটাও তারা নষ্ট করেছে। তত্ত্বগতভাবে না থাকলেও বাস্তবে তারা একদলীয় শাসনব্যবস্থা কায়েম করেছে। তবে একদিকে তারা সফল—সেটা হলো ভারতবান্ধব হয়ে ভারত যা চেয়েছে, তার চেয়েও বেশি তারা দিয়েছে। টিপাইমুখ বাঁধ নিয়ে তাদের কোনো শক্ত বক্তব্য নেই। ভারতের আচরণে মনে হয়, বাংলাদেশ যেন একটি করদরাজ্য।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা অর্থনীতিবিদ ড. আকবর আলী খান বলেন, সরকারের তিন বছরের মূল্যায়ন করাটা কঠিন। এটা অনেক পরিসংখ্যানের বিষয়। মূল্যায়নে সফলতা-ব্যর্থতার খতিয়ানই তুলে ধরা হয়। এ সরকারের নির্বাচনী অঙ্গীকারের অনেক কিছুই বাস্তবায়ন করতে পারেনি। আবার কিছু বাস্তবায়ন হয়েছে। আরও হচ্ছে। সবচেয়ে বড় বিষয় হলো—কোনো সরকারই সব প্রতিশ্রুতি পূরণ করতে পারে না। এ সরকারও পারেনি। বিশেষ করে দ্রব্যমূল্য কমানো তাদের নির্বাচনী প্রতিশ্রুতির সর্বপ্রধান অঙ্গীকার ছিল। সেটা সম্ভব হয়নি। দ্রব্যমূল্য আরও বেড়ে গেছে। এটা উদ্বেগের। তিনি বলেন, সরকারের শাসনামল মূল্যায়নে এককেন্দ্রিক পর্যালোচনা বা তালিকা তুলে ধরা আমার দ্বারা সম্ভব নয়। তবে তিন বছরে জনগণের আকাঙ্ক্ষা পূরণে সরকার কাছাকাছিও পৌঁছতে পারেনি। এটা সরকারের জন্য অত্যন্ত নেতিবাচক।
রাষ্ট্রবিজ্ঞানী অধ্যাপক ড. তালুকদার মনিরুজ্জামান বলেন, উন্নয়নশীল দেশে ৫ বছর মেয়াদি সরকারের রাষ্ট্র পরিচালনায় প্রথম তিন বছরই গুরুত্বপূর্ণ। এটিই অর্থনৈতিক ও অবকাঠামো উন্নয়নের মূল সময়। সার্বিক বিবেচনা করলে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার এ সময়ে সফলতা দেখাতে পারেনি। নির্বাচনী ইশতেহার বিবেচনায়ও তারা অসফল। পদ্মা সেতু, ঢাকা-চট্টগ্রাম চার লেন, চালসহ নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্য ও সারের দাম কমানো, বেকারত্ব নিরসন, গুপ্তহত্যা না হওয়া, সংসদ কার্যকর ও আগামীতে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের আস্থাজনক পরিস্থিতির সুযোগ রাখলেও সরকারের প্রতি জনগণের অবিশ্বাস এবং অনাস্থা কম থাকত। সাধারণ মানুষ দূরে থাক, মহাজোটের অন্তর্ভুক্ত রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরাও সরকারকে বিশ্বাস করছে না। পরিবর্তনের স্লোগান কেবল সরকারি দলের নেতাকর্মীদের অর্থ, চাকরি ও বিত্তবৈভবে ঘটেছে। নাগরিকদের জীবনে নেতিবাচক পরিবর্তন ঘটেছে।
বিবিসি খ্যাত সাংবাদিক আতাউস সামাদ বলেন, ১৯৪৮ থেকে মুক্তিযুদ্ধ পর্যন্ত যে গণতান্ত্রিক দেশের স্বপ্ন দেখে এসেছি এবং ’৯০-এর এরশাদ বিরোধী গণঅভ্যুত্থানে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করার জন্য যে তীব্র আকাঙ্ক্ষা ছিল তার প্রতিফলন হয়নি। কেবল সংসদীয় সরকার ছাড়া দেশের মানুষ কিছুই পায়নি। তিনি বলেন, ২০০১ সালের নির্বাচনের পর শেখ হাসিনা বলেছিলেন, সংসদে গেলেই বা কি, না গেলেই বা কি? কিন্তু বিএনপি প্রথম থেকেই সংসদে যাচ্ছে। সেই বিরোধীদলকে সরকার সংসদে থাকতে দেয়নি। জনগণের মতামত ছাড়াই তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করে দিয়েছে। মানুষ তো সরকারকে বিশ্বাস করছে না। কোনো কিছুই গুরুত্বের সঙ্গে নেয় না। দুর্নীতিতে দেশ ছেয়ে গেছে। দুর্নীতির জন্য প্রায়ই আমরা সারাবিশ্বে আলোচিত। প্রত্যেক দিনই নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম বাড়ছে। জীবনযাত্রার ব্যয় বাড়ছে। অন্যদিকে, উত্পাদিত পণ্যের ন্যায্যমূল্য পাচ্ছে না কৃষক। অর্থনীতি নিয়ে কথা বলারও সুযোগ নেই। সমস্যাগুলো এত স্পষ্ট যে, সেগুলো নিয়ে বিতর্কের সুযোগ নেই। অর্থনৈতিক ও সামাজিক দুর্দশার জন্য নৈতিক অবক্ষয় হচ্ছে। এ সরকারের দ্বারা বিরাজমান পরিস্থিতি থেকে বের হওয়া সম্ভব নয়। তিন বছরে সরকার চলেছে অলীক স্বপ্ন ও মিথ্যা কথার ওপর। কূটনীতিও চলছে বাগাড়ম্বের ওপর। সামগ্রিকভাবে সরকারি কর্মকাণ্ডই দেশকে সঙ্কটে ফেলেছে।
অর্থনীতিবিদ ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক অধ্যাপক ড. মাহবুব উল্লাহ বলেন, অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে অব্যবস্থাপনা চরম পর্যায়ে পৌঁছেছে। মূল্যস্ফীতি ও বাজেট অর্থায়নে সঙ্কট, ব্যাংকে তারল্য সঙ্কট, ব্যাংক থেকে ব্যাপক ঋণ গ্রহণ, ডলারের মূল্য বৃদ্ধির ফলে আমদানি ও বৈদেশিক মুদ্রা রিজার্ভে সঙ্কট, বিশ্বব্যাংকের মতো প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে দুর্নীতির অভিযোগ, আইনশৃঙ্খলার অবনতি, গুপ্তহত্যা-গুম-খুন, নির্যাতন, মামলা, সংসদ কার্যকর রাখতে ব্যর্থতা, রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানে দলীয়করণ, সংবিধান সংশোধন করে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিধান বাতিল এবং এর ফলে চরম রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা সৃষ্টি, গণতান্ত্রিক মূল্যাবোধের অবক্ষয়, ভারত সরকারের কাছে বিভিন্ন ক্ষেত্রে জাতীয় স্বার্থের বিসর্জনসহ প্রায় সবক্ষেত্রেই সরকার ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে। বৈদেশিক সাহায্য না থাকায় পদ্মা সেতু করতে পারবে বলে জনগণ মনে করছে না। তিনি বলেন, খাদ্যশস্য উত্পাদনে সফলতা ছিল। তাও এ বছর ভুল শস্যনীতির কারণে কৃষকরা দাম পাচ্ছেন না। রাজনৈতিক ক্ষেত্রে সরকারের একটি সফলতা আছে। সেটি হলো—অসংখ্য ব্যর্থতার মাঝেও ক্ষমতায় থেকে যে কোনো উপায়ে বিরোধীদলকে ঠেকিয়ে রাখতে পেরেছে সরকার।
সাংবাদিক মাহফুজউল্লাহ বলেন, বর্তমান সরকার প্রতিশ্রুতির এক বিশাল বহর নিয়ে ক্ষমতায় এসেছিল। নির্বাচনে জয়লাভের বিষয়টি সম্পূর্ণভাবে প্রশ্নাতীত না হলেও তারা এ বিজয়কে জনগণের রায় হিসেবে দাবি করে। সে বিতর্কে গিয়ে লাভ নেই। জরুরি হলো—তিন বছরের মূল্যায়ন। বিভিন্ন ক্ষেত্রে যতটুকু সাফল্য তা উল্লেখযোগ্য নয়। যেহেতু সরকার ভালো কিছু করতেই ক্ষমতায় আসে। কিন্তু তিন বছরে বিরোধীদল ও মতের দমন, দুষ্টের লালন, গণতান্ত্রিক অধিকারের প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুলি, নিজের দুষ্কর্ম ঢাকতে গুম-খুন, দলীয় কর্মীদের দ্বারা শিক্ষকদের নির্যাতন ও টেন্ডারবাজি, বিচার বিভাগ ও দুর্নীতি দমন কমিশনে দলীয়করণ, গণমাধ্যমকে নিয়ন্ত্রণ ও ক্ষেত্র বিশেষে বন্ধ, বিনা কারণে আমার দেশ সম্পাদককে ৬ মাস কারাদণ্ড, রাজনৈতিক বিতর্ককে আদালতের ঘাড়ে বন্দুক রেখে রায় নেয়া, জনমতের প্রতি শ্রদ্ধা না জানিয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল, আন্তর্জাতিক দুর্নীতির অভিযোগে অভিযুক্ত হওয়া এবং মন্ত্রিসভার দক্ষতা নিয়ে যে প্রশ্ন উঠেছে, সে প্রশ্ন গত তিন বছরে ব্যাপক প্রভাব ফেলেছে। এছাড়া রাজধানী ও বাইরে যানজট, দ্রব্যমূল্যের অসহনীয় অত্যাচার মানুষকে বিব্রত এবং ব্যথিত করেছে। দু’টি, তিনটি বা চারটি ক্ষেত্রে ভালো কাজ করে থাকলেও তা খারাপ কাজের অন্ধকারের কাছে নিষ্প্রভ হয়ে গেছে।
মানবজমিন সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী বলেন, তিন বছরে সরকার নানা চ্যালেঞ্জে ছিল। গত দু’বছর রাজনৈতিক অস্থিরতা ছিল। অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ সমানে আছে, চলছে। অনেক প্রকল্প হাতে নেয়া হলেও তা বাস্তবায়ন হয়নি। আর্থিক সঙ্কট চরমে। কূটনৈতিক সম্পর্ক বিশেষ করে ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কে সফলতা দেখাতে পারেনি। উপরন্তু বেশ কিছু বিষয়ে আমাদের স্বার্থ নষ্ট হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক শীতল হয়েছে। ড. ইউনূস প্রসঙ্গে ঢাকা-ওয়াশিংটন সম্পর্কে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। আন্তঃরাষ্ট্রীয় সম্পর্কে বিশেষ কোনো সাফল্য নেই। জনশক্তি রফতানিতে চরমভাবে ব্যর্থতা দেখা দিয়েছে। রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে ঘায়েলের চেষ্টা রাজনীতিকে অস্থির করেছে। যে কারণে অন্য ক্ষেত্রেও সমস্যা হয়েছে। পদ্মা সেতু নির্মাণ, ঘরে ঘরে চাকরি, মানবাধিকার রক্ষা ও সুশাসন প্রতিষ্ঠায় সরকার কার্যকর কোনো ভূমিকা রাখতে পারেনি। মানবাধিকার কমিশন গঠন হলেও ঠিকমতো কাজ করতে পারছে না। প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করতে যা যা কিছু করা যায় সবই তারা করেছে। খুন-খারাবি গুপ্তহত্যা উদ্বেগজনক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। রাস্তাঘাটের উন্নয়ন হয়নি। দুর্নীতি বেড়েছে অস্বাভাবিক হারে। তিনি বলেন, শিক্ষা ক্ষেত্রে সরকারের সফলতা আছে। খাদ্যে স্থিতিশীল অবস্থা। জঙ্গিবাদ দমনে মোটামুটি সফলতার দিকে রয়েছে।
দৈনিক আমাদের অর্থনীতির সম্পাদক নাঈমুল ইসলাম খান বলেন, প্রথম কথা হলো সবচেয়ে বড় প্রতিশ্রুতি যেটা ছিল ‘পরিবর্তন’। রাজনীতিতে একটি গুণগত পরিবর্তন করবে। পরিবর্তনের প্রতিশ্রুতিতে প্রচুর মানুষ আপ্লুত হয়েছিল। আমরা এক-এগারোর তিক্ত অভিজ্ঞতার কারণে পরিবর্তন জরুরি মনে করেছিলাম। এক-এগারোর কারণে রাষ্ট্র কাঠামো, অর্থনীতি ও রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান ঝুঁকিপূর্ণ ছিল। এ জায়গাতেই মূলত হতাশা। অর্থনৈতিক পরিস্থিতি মারাত্মক ঝুঁকিতে পড়েছে। বিদ্যুতের ঘাটতি, ঢাকায় পানি সরবরাহ, ট্রেনের সিস্টেম, যোগাযোগের ঘাটতি, বড় ও ছোট রাস্তার স্বল্পতা, জাতীয় অর্থনীতির লাইফ লাইন ঢাকা-চট্টগ্রাম চার লেন করার ঘাটতি এবং পদ্মা সেতু করা দূরে থাক এ সরকারের সময়ে কাজ শুরু হওয়া নিয়েও অনিশ্চয়তা জনগণের জন্য ভালো খবর নয়। তিনি বলেন, ক্ষমতার শুরুতে বিদ্যুত্ উত্পাদনে উদ্যোগ না নিয়ে সময়ক্ষেপণের পর তড়িঘড়ি করে কুইক পাওয়ার প্লান্ট স্থাপন, আবার তাতে ইনডেমনিটি আইন করা হলো। শুরু থেকে করলে সবকিছু করা সম্ভব ছিল। অনেকেই এটা ভালো চোখে দেখছেন না। অনেকেই বলছেন, এতে দুর্নীতির উত্সাহ ছিল কি না, তাদের এ বলার পেছনে যুক্তি আছে।
নাঈমুল ইসলাম খান বলেন, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা সবচেয়ে বড় বিষয়। গণতান্ত্রিক সরকার ব্যবস্থার পরিবর্তনের অনিশ্চয়তা তৈরি করা হয়েছে। এটা করতে জনগণের মতামত তো নেয়া হয়-ই-নি, বরং মহাজোটও এতে একমত হয়নি। আওয়ামী লীগের সবাইও একমত ছিল না, আওয়ামী লীগের একক সিদ্ধান্তে তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাতিল করা হলো। সবকিছু মিলে সরকারের তিন বছরে যা কিছু পরিবর্তন হওয়ার কথা ছিল তার কিছুই দেখছি না। তিনি বলেন, বিচার বিভাগ, পিএসসি, পুলিশ, চিকিত্সক, সিভিল অ্যান্ড মিলিটারি প্রশাসনে পরিবর্তনের প্রত্যাশা ছিল। এটা হয়নি। তিন বছরে ব্যর্থতার জায়গাটায় এগুলোই বেশি।
সরকারের সফলতা সম্পর্কে তিনি বলেন, বিডিআর বিদ্রোহের মতো মারাত্মক ঘটনার পরও গণতান্ত্রিক সরকার ব্যবস্থাকে স্থিতিশীল রাখাটা বিশাল সফলতা। তাছাড়া তিস্তার পানি না দিলে ট্রানজিটের আনুষ্ঠানিক চুক্তি না করার বিষয়টিও গুরুত্বপূর্ণ। নতুন করে চুক্তি কিন্তু সরকার এভয়েড করেছে। মানুষের সম্মিলিত চাপে বা তাদের সদিচ্ছায় তারা কিছু পজেটিভ ধারণা সৃষ্টি করেছে। নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠনে রাষ্ট্রপতির সংলাপ নিয়ে প্রশ্ন থাকলেও গণতান্ত্রিক সমাজে আলোচনার উদ্যোগ তারা নিয়েছে। মৌলিক না হলেও কিছু ইতিবাচক উদ্যোগ আছে। যেমন—সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে বিরোধী দলকেও পদ দেয়া হয়েছে। তথ্য অধিকার আইন কার্যকর না হলেও তারা পাশ করেছে। সাংবাদিকদের গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি না করে সমন করতে হবে। এসব অগ্রগতি হিসেবে দেখতে হবে। প্রধানমন্ত্রী অনির্বাচিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানের কথা বললেও নির্বাচিতদের দিয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার ফাঁক রেখেছেন। অসংখ্য হতাশার মধ্যেও এসবকে আশা হিসেবে দেখা যেতে পারে।

Friday 9 December 2011

প্রকল্পের মেয়াদ বাড়িয়ে দশ হাজার কোটি টাকা লুটপাট

জাহিদুল ইসলাম

গত অর্থবছরে (২০১০-১১) বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির আওতায় সমাপ্ত প্রকল্পগুলোতে প্রাথমিক বরাদ্দের চেয়ে প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা অতিরিক্ত ব্যয় করা হয়েছে। সময়মত কাজ শেষ না করে দফায় দফায় প্রকল্পের মেয়াদ ও বরাদ্দ বাড়িয়ে এ অতিরিক্ত অর্থ ব্যয় করা হয়েছে। এ সময়ে শেষ হওয়া ২৩৯টি প্রকল্পের মধ্যে ১৫৭টিরই মেয়াদ বাড়ানো হয়েছিল। পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের ২০১০-১১ অর্থবছরের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) বাস্তবায়নের অগ্রগতি পর্যালোচনা প্রতিবেদনে এ তথ্য পাওয়া গেছে।
পরিকল্পনা কমিশন সূত্র জানায়, পরিকল্পিতভাবে এসব প্রকল্পের কাজ ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে। পরে নির্মাণ সামগ্রীর দাম বৃদ্ধি, ভূমি অধিগ্রহণে অতিরিক্ত ব্যয় দেখিয়ে প্রকল্পের জন্য বাড়তি অর্থ নেয়া হয়েছে। আর প্রকল্প বাস্তবায়নে নিয়োজিত সরকারি কর্মকর্তা, ঠিকাদার ও প্রকল্প অনুমোদনে সংশ্লিষ্টদের মধ্যে লুটপাটের অর্থ ব্যয় হয়েছে। প্রকল্পের প্রতিটিতে নির্ধারিত সীমার চেয়ে গড়ে ৮৩ শতাংশ সময় বাড়ানো হয়েছে। এর মধ্যে কোনো কোনো প্রকল্প বাস্তবায়নে অতিরিক্ত লেগেছে ১৩ থেকে ১৪ বছর। এসব প্রকল্পে ব্যয় বেড়েছে ১২ হতে ১৩ গুণ পর্যন্ত।
বাছবিচার না করে লাগামহীনভাবে প্রকল্প অনুমোদন দেয়ায় এসব প্রকল্প সময়মত
বাস্তবায়ন হয়নি বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন। তাদের মতে এর ফলে সরকারি প্রকল্প থেকে সেবা পেতে বিলম্ব হওয়ার পাশাপাশি অন্যান্য প্রকল্পও বাধাগ্রস্ত হয়। এ অবস্থার নিরসনে রাজনৈতিক বিবেচনায় অপ্রয়োজনীয় প্রকল্প না নেয়ার পরামর্শ দেন তারা।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, উন্নয়ন কর্মসূচি ব্যবস্থাপনায় দুর্বলতা, সঠিক সময়ে অর্থ ছাড় না হওয়া, বরাদ্দের অতিরিক্ত খরচ, নির্দিষ্ট সময়ে কাজ শেষ না হওয়া, বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) দুর্বলতা, কারিগরি দক্ষতার অভাব, রাজনৈতিক কারণে প্রকল্প হাতে নেয়ার কারণে দেশে সরকারি বিনিয়োগের সুফল আসছে না।
প্রতিবেদনের তথ্য অনুসারে, ২০১০-১১ অর্থবছরে মূল এডিপিতে ৯১৬টি প্রকল্পের জন্য মোট বরাদ্দ ছিল ৩৮ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। কিন্তু সংশোধিত এডিপিতে অন্তর্ভুক্ত ছিল ১ হাজার ১৯৩টি প্রকল্প। এর বিপরীতে বরাদ্দ ছিল ৩৫ হাজার ৮৮০ কোটি টাকা। এ প্রকল্পগুলোর মধ্যে ২৬৮টি প্রকল্প সমাপ্ত ঘোষণার জন্য নির্ধারিত ছিল। এর মধ্যে ৩০টি প্রকল্পের কাজ শেষ না হওয়ায় আবার মেয়াদকাল বাড়ানো হয়েছে। তবে এর বাইরে অন্য একটি প্রকল্প সমাপ্ত ঘোষণা করায় গতবছর মোট ২৩৯টি প্রকল্প সমাপ্ত হয়েছে।
সমাপ্ত প্রকল্পের মধ্যে বাস্তবায়নকাল বেড়েছে ১৫৭টির এবং ব্যয় বেড়েছে ৭৫টি প্রকল্পের। শুধু প্রকল্প ব্যয় বেড়েছে এমন প্রকল্পের সংখ্যা ১২। আর ব্যয় না বাড়িয়ে শুধু বাস্তবায়নকাল বেড়েছে ৯৪টি প্রকল্পের, যা মোট সমাপ্ত প্রকল্পের ৩৯ শতাংশ। ব্যয় ও বাস্তবায়নকাল উভয়ই বেড়েছে এমন প্রকল্প ২৬ শতাংশ। অন্যদিকে নির্ধারিত সময়ে শেষ হয়েছে মাত্র ২৯ শতাংশ প্রকল্পের।
তথ্য অনুযায়ী, গত অর্থবছরে শেষ হওয়া ২৩৯ প্রকল্পের মেয়াদকাল ছিল গড়ে ৩ দশমিক ৫২ বছর। কিন্তু প্রকল্পগুলো শেষ হতে সময় লেগেছে গড়ে ৬ দশমিক ৪৪ বছর। এ হিসেবে প্রতিটি প্রকল্পে অতিরিক্ত সময় লেগেছে ২ দশমিক ৯২ বছর যা, মোট বরাদ্দ সময়ের চেয়ে ৮৩ শতাংশ বেশি।
অন্যদিকে প্রতিটি প্রকল্পের গড় প্রাক্কলিত ব্যয় ছিল ১২৫ কোটি ২৭ লাখ টাকা। কিন্ত প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন করতে লেগেছে গড়ে ১৬৫ কোটি ৯০ লাখ টাকা। প্রতিটি প্রকল্পে গড়ে অতিরিক্ত ব্যয় ৪০ কোটি ৬৪ লাখ টাকা। এ হিসেবে ২৩৯টি প্রকল্পে অতিরিক্ত ব্যয় দাঁড়ায় ৯ হাজার ৭১৩ কোটি টাকা।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, স্থানীয় সরকার বিভাগের পল্লী সড়কে হালকা যানবাহন চলাচলযোগ্য সেতু নির্মাণ প্রকল্পের জন্য বরাদ্দ ছিল ৩০ কোটি টাকা। এ প্রকল্পটি সংশোধন করে কয়েক দফায় মেয়াদ ও বরাদ্দ বাড়ানো হয়। ৯ বছর পর প্রকল্পটির কাজ শেষ হয়েছে গত জুলাইয়ে। তবে এ প্রকল্পটিতে এরই মধ্যে ব্যয় হয়ে গেছে ৩৮৯ কোটি ৫৫ লাখ টাকা। এ হিসেবে প্রকল্পটিতে ব্যয় বেড়েছে প্রায় ১৩ গুণ।
একই বিভাগের অধীনে ইউনিয়ন পরিষদ কমপ্লেক্স ভবন নির্মাণ প্রকল্পটি ১৯৯৮ সালে শুরু হয়। দুই দফায় সংশোধন করে ১৪ বছর পর এটি শেষ হয় গত জুনে। এ প্রকল্পের জন্য বরাদ্দ ছিল ৪৮৩ কোটি ৯৫ লাখ টাকা। পরে সংশোধন করে বরাদ্দ দেয়া হয় ৭৫৫ কোটি ৬৮ লাখ টাকা। এ ছাড়া ৫০০ কোটি টাকার অগ্রাধিকার ভিত্তিতে পল্লী অঞ্চলে সড়ক, সেতু ও কালভার্ট নির্মাণ বা পুনর্নির্মাণ প্রকল্পে বরাদ্দ বাড়িয়ে করা হয়েছে ৬১৫ কোটি ৭০ লাখ টাকা, ৪০০ কোটি টাকার গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প করা হয়েছে ৪৪৬ কোটি ৫০ লাখ টাকা, ৮২৭ কোটি টাকার বাংলাদেশের পূর্বাঞ্চলীয় পল্লী অবকাঠামো উন্নয়ন বৃহত্তর চট্টগ্রাম, নোয়াখালী ও সিলেট জেলা প্রকল্পে বরাদ্দ বাড়িয়ে ধরা হয়েছে ৯৯৪ কোটি ৯৭ লাখ টাকা।
জানা যায়, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়ের প্রকল্পগুলোতে সবচেয়ে বেশি দীর্ঘসূত্রতা অবলম্বন করা হয়েছে। ২০০২ সালে নেয়া ঘোড়াশাল তাপবিদ্যেকন্দ্রের ১ ও ২ নম্বর ইউনিট পুনর্বাসন ও আধুনিকীকরণ প্রকল্পটি শেষ হওয়ার কথা ছিল ২০০৭ সালে। কিন্তু প্রকল্পটির ব্যয় ও সময় বাড়িয়ে সংশোধন করা হয়। দীর্ঘদিন ঝুলে থাকার পর প্রকল্পটি সমাপ্ত ঘোষণা করা হয় গত অর্থবছরে। ফলে ১১৭ কোটি ৮৮ লাখ টাকার প্রকল্পে ব্যয় হয় ২৫২ কোটি ৬৯ লাখ টাকা।
একই মন্ত্রণালয় ও বিভাগের অধীনে আশুগঞ্জ বিদ্যুত্ কেন্দ্র কমপ্লেক্সের ৩, ৪ ও ৫ নম্বর ইউনিটের পুনর্বাসন ও আধুনিকায়ন প্রকল্পের জন্য ২০০০ সালে বরাদ্দ ছিল ৮৪৮ কোটি টাকা। কাজ শেষ না হওয়ায় সংশোধন করে এ প্রকল্পে বরাদ্দ রাখা হয় ১ হাজার ২৪ কোটি ৬৪ লাখ টাকা। একইভাবে ১৯৯৮ সালে শুরু করা সিলেট ৯০ মেগাওয়াট কম্বাইন্ড বিদ্যেকন্দ্র দুই দফায় সংশোধন করে ৫০৫ কোটি ৯২ লাখ টাকার প্রকল্প বরাদ্দ বাড়িয়ে করা হয় ৭১৭ কোটি ২৩ লাখ টাকা।
এ ব্যাপারে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক অর্থ বিষয়ক উপদেষ্টা ড. এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেছেন, সম্পদের সীমাবদ্ধতার বিষয়টি মাথায় না রেখে লাগামহীনভাবে প্রকল্প অনুমোদন দেয়ায় এসব প্রকল্পে অর্থ বরাদ্দ দেয়া হয়নি। ফলে দীর্ঘদিন ধরে ঝুলেছিল এসব প্রকল্প। আর এ সময়ে বড় অঙ্কের মূল্যস্ফীতির কারণে প্রকল্পের ব্যয় বেড়ে গেছে। এ অবস্থা নিরসনে রাজনৈতিক বিবেচনায় অপ্রয়োজনীয় প্রকল্প না নিয়ে চলমান প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নের পরামর্শ দেন তিনি।
এ বিষয়ে পরিকল্পনা কমিশনের বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) সচিব মোজাম্মেল হক খান বৃহস্পতিবার আমার দেশ- কে বলেন, কোনো কারণে সময়মত কাজ শেষ না হলে প্রকল্পের মেয়াদকাল বাড়াতে হয়। নতুন করে প্রকল্প প্রস্তাবনা তৈরির সময় নির্মাণ সামগ্রীর মূল্য, শ্রমিকদের বেতন, জমি অধিগ্রহণের ব্যয় বৃদ্ধিসহ বিভিন্ন বিষয় বিবেচনা করা হয়। এ অবস্থায় প্রকল্পের ব্যয় বেড়ে যায়। গত বছরে সমাপ্ত ঘোষিত কোনো প্রকল্পে অসঙ্গতি থাকলে তা দূর করার পাশাপাশি দোষীদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থার সুপারিশ করা হবে বলে জানান আইএমইডি সচিব।
উল্লেখ্য, চরম অর্থ সঙ্কটেও একটার পর একটা উন্নয়ন প্রকল্প অনুমোদন দিচ্ছে সরকার। চলতি অর্থবছরের প্রথম চার মাসে ১ লাখ ৫০ হাজার কোটি টাকায় ৬৪টি উন্নয়ন প্রকল্প অনুমোদ দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে ১ লাখ ২৫ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে রাজনৈতিক বিবেচনায় নেয়া বিতর্কিত প্রকল্পগুলোতে। অর্থবছরের শুরুতেই সারা বছরের বরাদ্দের তিনগুণের বেশি প্রকল্প অনুমোদন দেয়ায় অন্যান্য প্রকল্পের অর্থায়ন অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। ফলে চলতি বছরের উন্নয়ন বাজেটের বাস্তবায়ন আশঙ্কায় পড়েছে। এ অবস্থায় অসময়ে এডিপি সংশোধনের উদ্যোগ নিয়েছে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদ (এনইসি)

Wednesday 23 November 2011

একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্পে জনবল নিয়োগে জালিয়াতি : লুটপাটের আখড়ায় পরিণত হয়েছে ১৪শ’ কোটি টাকার এ প্রকল্প

এম এ নোমান

স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগের অধীন ‘একটি বাড়ি একটি খামার’ প্রকল্পে জনবল নিয়োগে বড় ধরনের জালিয়াতির ঘটনা ঘটেছে। দলীয় বিবেচনায় লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষা ছাড়া, এমনকি কোনো ধরনের যোগ্যতা ও অযোগ্যতার বাছবিচার না করে পাইকারি হারে শত শত লোক নিয়োগের ঘটনায় তোলপাড় শুরু হয়েছে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিভাগে। গ্রামের হতদরিদ্র জনগোষ্ঠীর উন্নয়নের লক্ষ্যে গৃহীত ১৪শ’ কোটি টাকার এ প্রকল্পটি এখন লুটপাটের আখড়ায় পরিণত হয়েছে। মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, এ প্রকল্পে লোক নিয়োগের ক্ষেত্রে প্রচলিত নিয়োগবিধি অনুসরণ করা হয়নি। নিয়োগের জন্য আবেদন করেননি এমন ব্যক্তিকেও প্রকল্পের কর্মকর্তা হিসেবে শুধু দলীয় যোগ্যতার ভিত্তিতে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। এ ধরনের জালিয়াতির ঘটনা দেশের ইতিহাসে আগে কখনও হয়নি বলে জানান মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট বিভাগের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা। নিয়োগ জালিয়াতির ঘটনা অনুসন্ধানে এরই মধ্যে কমিটিও গঠন করা হয়েছে।
স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, দেশের সামগ্রিক উন্নয়নের লক্ষ্যে প্রতিটি বাড়িকে অর্থনৈতিক কার্যাবলির কেন্দ্রবিন্দু এবং প্রতিটি গ্রামকে একটি স্বতন্ত্র অর্থনৈতিক ইউনিট হিসেবে গড়ে তোলার কথা বলে ২০০১ সালের ২ জানুয়ারি ২৪৯ কোটি ৬৬ লাখ টাকা ব্যয়ে একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। প্রকল্পের কার্যক্রম শুরুর আগেই মাঠপর্যায়ে দলীয়করণ, দুর্নীতি ও লুটপাটের মাধ্যমে ব্যাপক অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ ওঠে। ফলে বিগত বিএনপি জোট সরকার ক্ষমতায় এসে দুর্নীতির অভিযোগে প্রকল্পটি বন্ধ করে দেয়। ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ সরকার আবার ক্ষমতায় এসে বন্ধ হওয়া এ প্রকল্পটি আবার চালু করে। চার বছর মেয়াদের এ প্রকল্পে মোট ব্যয় ধরা হয় ১ হাজার ১৯৭ কোটি টাকা। সম্পূর্ণ সরকারি অর্থে ৬৪ জেলার ৪৮২ উপজেলায় প্রকল্পটি বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত হয়। পরে প্রকল্পের জন্য ৫ হাজার ৯২৫ কোটি টাকা বরাদ্দ প্রস্তাব করে অনুমোদন চাওয়া হয়েছে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় থেকে। একইসঙ্গে এই প্রকল্পের জন্য ৭ হাজার ৩৫৫ জনের জনবল নিয়োগেরও প্রস্তাব করা হয়। অর্থ মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনের আগেই সারা দেশে গণহারে লোক নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু করে দেয়া হয়েছে।
জনবল নিয়োগে জালিয়াতি : প্রকল্প বাস্তবায়নের লক্ষ্যে সারা দেশে উপজেলা সমন্বয়কারী, মাঠসংগঠক ও কম্পিউটার অপারেটর কাম হিসাব সহকারী পদসহ অন্য পদগুলোতে কোনো ধরনের পরীক্ষা-নিরীক্ষা ছাড়াই লোকবল নিয়োগ সম্পন্ন করা হয়। নিয়োগ পাওয়ার জন্য আবেদন করেননি, আবেদন করলেও লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষায় অংশ নেননি এমন ব্যক্তিরাও শুধু দলীয় বিবেচনায় নিয়োগ পান। জেলা পর্যায় থেকে এ ধরনের অসংখ্য অভিযোগ আসে মন্ত্রণালয় ও বিভাগে। এসব নিয়োগের সঙ্গে সরকারের আর্থিক সংশ্লিষ্টতা থাকায় নিয়োগ অনুমোদনকারী পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। শেষ পর্যন্ত পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগের কর্মকর্তারা নিজ উদ্যোগে একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্পের নিয়োগ প্রক্রিয়া বিষয়ে তদন্ত করার জন্য একটি কমিটি গঠন করেন। গত ৩ অক্টোবর এ কমিটি প্রকল্পের নিয়োগ প্রক্রিয়া নিয়ে একটি প্রতিবেদন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ে পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য পাঠায়।
তদন্তে জালিয়াতি প্রমাণিত : তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, পূর্বনির্দেশনা অনুযায়ী একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্পের অধীনে নিয়োগপ্রাপ্ত উপজেলা সমন্বয়কারী, মাঠসংগঠক ও কম্পিউটার অপারেটর কাম হিসাব সহকারী পদে নিয়োগপ্রাপ্ত প্রার্থীদের সংরক্ষিত জীবনবৃত্তান্ত, নিয়োগের জন্য লিখিত পরীক্ষার খাতাপত্র, মৌখিক পরীক্ষার ফলাফলের সঙ্গে চূড়ান্ত নিয়োগ তালিকার তুলনা ইত্যাদি কাজ সম্পন্ন করা হয়েছে। এসব কাজ করতে গিয়ে নিয়োগের ক্ষেত্রে বড় ধরনের জালিয়াতির প্রমাণ পাওয়া গেছে। তদন্ত প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, নিয়োগপ্রাপ্ত কয়েকজনের বিষয়ে খতিয়ে দেখা গেছে যে, তাদের আবেদনপত্র সংশ্লিষ্ট জেলা থেকে ডকেট হয়ে আসেনি। প্রকল্পের প্রধান কার্যালয়ের রেকর্ডেও তাদের তালিকাভুক্তির কোনো তথ্য নেই। কারও কারও আবেদনের সঙ্গে ফর্ম ক্রয়ের রসিদ সংযুক্ত নেই। লিখিত পরীক্ষার হাজিরায় তাদের স্বাক্ষর নেই। নিয়োগপ্রাপ্তদের কয়েকজনের নাম লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের তালিকায় নেই। মৌখিক পরীক্ষার হাজিরায়ও তাদের নাম নেই। মৌখিক পরীক্ষার মূল রেজাল্ট শিটে তাদের নাম নেই। তদন্ত প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্পটি যেহেতু স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগের নিয়ন্ত্রণাধীন, সেহেতু প্রকল্পের জনবল নিয়োগের ক্ষেত্রে এত বড় জালিয়াতির বিষয়টি মন্ত্রণালয় থেকে ঊর্ধ্বতন কোনো কর্মকর্তা দ্বারা তদন্ত করার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগের সচিব মহোদয়কে অনুরোধ করা হলো।
স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা আমার দেশকে বলেন, শুরু থেকেই এ প্রকল্পটি নিয়ে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে। প্রকল্পের পুরো টাকায় সরকারের নিজস্ব ফান্ড থেকে বরাদ্দ করা হয়েছে। ফলে এতে দাতা গোষ্ঠী বা সংস্থাগুলোরও কোনো হস্তক্ষেপ বা তদারকি নেই। এ সুযোগেই পুরো প্রকল্পটি ঘিরে দুর্নীতির আখড়া তৈরি হয়েছে।

ডাক্তারদের পদোন্নতিতে নগ্ন দলীয়করণ : শত শত মেধাবী চিকিত্সক পদোন্নতিবঞ্চিত হওয়ায় ক্ষোভ

স্টাফ রিপোর্টার

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে ডাক্তারদের পদোন্নতির ক্ষেত্রে এবার নগ্ন দলীয়করণ হয়েছে। সোমবার রাত দুইটায় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় প্রায় দু’হাজার ডাক্তারের পদোন্নতির তালিকা ওয়েবসাইটে প্রকাশ করে। পদোন্নতির সঙ্গে সঙ্গে তাদের একদিনের সময় দিয়ে গতকালের মধ্যেই মন্ত্রণালয়ে যোগদানের কথা বলা হয়। সে মোতাবেক পদোন্নতিপ্রাপ্ত দলীয় ক্যাডার চিকিত্সকরা গতকালই মন্ত্রণালয়ে যোগদান করেন। বঞ্চিত চিকিত্সকের কেউ যাতে আদালতে যাওয়ার সুযোগ না পান সেজন্য তড়িঘড়ি যোগদানের কথা বলা হয়।
এ পদোন্নতি নিয়ে চিকিত্সকদের মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। সংশ্লিষ্টরা জানান, আগে পিএসসি’র মাধ্যমে সরকারি ডাক্তারদের পদোন্নতি হতো। কিন্তু বর্তমানে আওয়ামী লীগ সমর্থক ডাক্তারদের সংগঠন স্বাচিপের সভাপতি মন্ত্রী হওয়ার পর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়, পিএসসি নয়, ডিপার্টমেন্টাল প্রমোশন কমিটির (ডিপিসি) মাধ্যমে পদোন্নতি হবে। সে অনুযায়ী এ পদোন্নতি হয়েছে। চিকিত্সকদের মধ্যে যারা শিক্ষকতার জন্য উপযুক্ত তাদের আলাদা পরীক্ষা নেয়া হতো। এছাড়া পাবলিকেশন, জ্যেষ্ঠতা, অভিজ্ঞতা দেখে পদোন্নতি দেয়া হতো। এবার এগুলো লঙ্ঘন করে শুধু দলীয় এবং রাজনৈতিক বিবেচনায় পদোন্নতি দেয়া হয়েছে। ফলে শত শত মেধাবী চিকিত্সক পদোন্নতি থেকে বাদ পড়েছেন। রাজনৈতিক বিবেচনায় পদোন্নতির এ নগ্ন দলীয়করণের তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে ড্যাব। ড্যাব বলেছে, ডিপিসি’র মাধ্যমে যে প্রহসনের পদোন্নতি হয়েছে তা বাতিল করতে হবে।
স্বাস্থ্য বিভাগকে দলীয়করণের উদ্দেশে স্বাচিপ নেতা বা সমর্থকদের প্রাধান্য রয়েছে পদোন্নতির তালিকায়। দেড় বছরের শিক্ষকতার অভিজ্ঞতাসম্পন্ন স্বাচিপ নেতারা পদোন্নতি পেলেও ১৫ বছরের অভিজ্ঞতাসম্পন্ন চিকিত্সক পদোন্নতি পাননি। নিয়মবহির্ভূত এ পদোন্নতিতে দেশজুড়ে বিভিন্ন মেডিকেল কলেজ ও স্বাস্থ্য বিভাগের নিয়মশৃঙ্খলায় অবনতি দেখা দিতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন অনেকে। পাবলিক সার্ভিস কমিশনের কাছ থেকে ক্ষমতা নিয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সিলেকশন কমিটির এ পদোন্নতি সংক্রান্ত আদেশের বিরুদ্ধে আইনের আশ্রয় নেয়ার কথাও উল্লেখ করেন কেউ কেউ। একই সঙ্গে পদোন্নতি সংক্রান্ত আদেশে চাকরি ছেড়ে দেয়া বরিশালের এক গাইনি চিকিত্সকের নাম থাকায় তোলপাড় শুরু হয়েছে।
ওয়েবসাইটে প্রদত্ত স্বাস্থ্য বিভাগের এ আদেশ এবং বিভিন্ন সূত্র থেকে জানা যায়, সোমবার দেশজুড়ে স্বাস্থ্য বিভাগের প্রায় দু’হাজার পদোন্নতিপ্রাপ্ত চিকিত্সকের মধ্যে বরিশাল বিভাগের ৫ জন রয়েছেন। এর মধ্যে নাজিরপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. যোগেশ চন্দ্র রায়কে বরিশাল বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদফতরের সহকারী পরিচালক পদে, ভোলার চলতি দায়িত্বপ্রাপ্ত সিভিল সার্জন ডা. আতোয়ার রহমান এবং বরগুনার চলতি দায়িত্বপ্রাপ্ত সিভিল সার্জন এএইচএম জহিরুল ইসলামকে একই পদে নিয়মিত করা হয়েছে। ভান্ডারিয়া থানা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. আবদুল করিম শেখকে ঢাকার স্বাস্থ্য অধিদফতরে সহকারী পরিচালক (অর্থ) এবং বরিশাল স্বাস্থ্য বিভাগে সহকারী পরিচালক চলতি দায়িত্বে থাকা ডা. খান মোস্তাক আল মেহেদীকে সহকারী পরিচালক পদে নিয়মিত করে পদোন্নতি দেয়া হয়েছে। গতকাল স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব মো. হুমায়ুন কবির স্বাক্ষরিত এ আদেশে পদোন্নতিপ্রাপ্ত ৫ চিকিত্সকই স্বাচিপ নেতা ও সমর্থক। অভিযোগ উঠেছে, বিভাগজুড়ে পদোন্নতিপ্রাপ্ত হতে অনেক যোগ্য এবং সিনিয়র চিকিত্সককে বঞ্চিত করা হয়েছে।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অপর এক আদেশে দেশজুড়ে বিভিন্ন মেডিকেল কলেজে ৪৮৩ জন শিক্ষককে পদোন্নতি দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজের ১৫ জন চিকিত্সক রয়েছেন, যার ১১ জনই স্বাচিপ নেতা ও সমর্থক। বরিশালে গাইনি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক (চলতি দায়িত্ব) চিকিত্সক ডা. সেলিনা পারভিনকে সহযোগী অধ্যাপক হিসেবে পদোন্নতি দেয়া হয়েছে। এছাড়া বাকি ১৪ জনকে সহকারী অধ্যাপক চলতি দায়িত্ব থেকে পূর্ণাঙ্গ সহকারী অধ্যাপক পদে পদোন্নতি দেয়া হয়েছে।
সহকারী অধ্যাপক চলতি দায়িত্ব থেকে সহকারী অধ্যাপক পদে পদোন্নতিপ্রাপ্ত চিকিত্সকরা হলেন কার্ডিওলজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. হুমায়ুন কবির, ডা. রনজিত্ খান, মেডিসিন বিভাগের ডা. ভাস্কর সাহা, ডা. আনোয়ার হোসেন, ফার্মাকোলজির ডা. অধীর কুমার সাহা, অ্যানেসথেশিয়া বিভাগের ডা. কামরুজ্জামান খান, ফরেনসিক বিভাগের ডা. আখতারুজ্জামান তালুকদার, গ্যাস্ট্রোলজির ডা. স্বপন কুমার সরকার, শিশু বিভাগের অসীম কুমার সাহা, এনাটমির ডা. গোলাম রহমান, প্যাথলজির ডা. ফায়জুল বাসার, নিউনেটোলজির ডা. তাহাসুনুল আমিন, হেপাটোলজির ডা. মো. জমসেদ আলম এবং মাইক্রো বায়লোজি বিভাগের ডা. শহিদুল ইসলাম।
এ আদেশে সহকারী অধ্যাপকের চলতি দায়িত্ব থেকে পূর্ণ সহকারী অধ্যাপক হিসেবে পদোন্নতি পেয়েছেন নগরীর প্রতিষ্ঠিত গাইনি বিশেষজ্ঞ ডা. জি কে চক্রবর্তী। অথচ অনেক আগেই তিনি সরকারি চাকরি ছেড়ে দিয়েছেন। এ অবস্থায় তার পদোন্নতি নিয়ে হাস্যরসসহ নানা আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়েছে নগরজুড়ে। আর আদেশের তালিকায় তার নাম থাকায় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও সিলেকশন কমিটির দায়িত্ব পালনের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে বিভিন্ন মহলে।
এদিকে পদোন্নতির তালিকা প্রকাশের পর পর সারাদেশে চিকিত্সক অঙ্গনে শুরু হয়েছে ক্ষোভ ও বিরূপ প্রতিক্রিয়া। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক চিকিত্সক ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, এ পদোন্নতির ক্ষেত্রে যথেষ্ট অনিয়ম করা হয়েছে। অনেক যোগ্য ও সিনিয়র চিকিত্সককে বঞ্চিত করে অযোগ্য ও জুনিয়র চিকিত্সককে পদোন্নতি দেয়া হয়েছে। পদোন্নতির ক্ষেত্রে স্বাচিপ নেতাদের লম্বা তালিকা দলীয়করণের প্রমাণ দেয়। এমনকি মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের শক্তি দাবি করা সরকারের অধীনে পদোন্নতির তালিকায় মুক্তিযুদ্ধের কোটাও রাখা হয়নি বলে দাবি করেন অনেকেই। উদাহরণ হিসেবে দেখা যায়, পদোন্নতির তালিকায় শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজ থেকে দেড় বছরের শিক্ষকতার অভিজ্ঞতাসম্পন্ন ৬ চিকিত্সক পদোন্নতি পেয়েছেন। অথচ ৫ বছর, ৮ বছর, ৯ বছর, ১০ বছর, ১২ বছর এবং সর্বোচ্চ ১৪-১৫ বছর পর্যন্ত শিক্ষকতার অভিজ্ঞতা থাকার পরও পদোন্নতি হয়নি প্রায় ৩০ শিক্ষকের। অভিযোগকারীদের মতে, যোগ্যতা এবং সিনিয়র-জুনিয়রের বিষয়টি না মেনে নিয়মবহির্ভূত এ পদোন্নতির ফলে স্বাস্থ্য বিভাগে নিয়মশৃঙ্খলায় অস্থিরতা দেখা দেবে। পদোন্নতির এ আদেশের বিরুদ্ধে অনেকেই আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়ার চিন্তা করছেন বলেও জানান। শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজের এক সাবেক অধ্যক্ষ পদোন্নতির ক্ষেত্রে একই অভিযোগ করে বলেন, এর আগে পাবলিক সার্ভিস কমিশনে পরীক্ষার মাধ্যমে এবং অন্যান্য বিষয় বিবেচনা করে পদোন্নতি দেয়া হতো। কিন্তু এ সরকারের আমলে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনে একটি সিলেকশন কমিটির মাধ্যমে এ পদোন্নতি দেয়া হয়েছে। তিনি অভিযোগ করে বলেন, পদোন্নতির ক্ষেত্রে এ কমিটি প্রণীত নীতিমালাও মানা হয়নি।
পদোন্নতিতে নগ্ন দলীয়করণে ড্যাবের তীব্র প্রতিবাদ : ডিপিসির মাধ্যমে পদোন্নতির প্রকাশিত ফলাফলে ড্যাব কেন্দ্রীয় কার্যকরী পরিষদের সভাপতি অধ্যাপক ডা. একেএম আজিজুল হক ও মহাসচিব অধ্যাপক ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন এক যুক্ত বিবৃতিতে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ ও নগ্ন দলীয়করণের তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছেন।
বিবৃতিতে তারা বলেন, বর্তমান সরকার ক্ষমতাসীন হওয়ার পর থেকে স্বাচিপের সভাপতি মন্ত্রী হওয়ার সুবাদে স্বাস্থ্য খাতে দলীয়করণের মহোত্সব শুরু হয়। স্বাচিপ প্রভাবিত প্রশাসন শুধু বিরোধীদের শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন, বদলি এবং নানাভাবে হয়রানি করেই ক্ষান্ত হয়নি; সর্বশেষ ডিপিসি’র মাধ্যমে শুধু দলীয় আনুগত্যকেই বিবেচনায় নিয়ে যে পদোন্নতির ফল প্রকাশিত হয়েছে তাতে ভবিষ্যতে মেডিকেল শিক্ষা ও চিকিত্সা ব্যবস্থায় ধ্বংসের আলামত দেখা যাচ্ছে। এই ডিপিসি’তে শুধু জ্যেষ্ঠতাই লঙ্ঘন করা হয়নি, পদোন্নতির জন্য যে যোগ্যতা, অভিজ্ঞতা, প্রকাশনার প্রয়োজন তা বিবেচনায় আনা হয়নি। যেভাবে যোগ্য, অভিজ্ঞ ও দলনিরপেক্ষ শিক্ষকদের বঞ্চিত করে অযোগ্য-অনভিজ্ঞদের এ ডিপিসি’র মাধ্যমে দলীয় আনুগত্যের পুরস্কারে পুরস্কৃত করা হলো তার নিন্দা জানানোর ভাষা আমাদের নেই।
ড্যাব নেতারা এই অবৈধ ডিপিসি’র মাধ্যমে পদোন্নতির নামে যে প্রহসনের ফলাফল প্রকাশ করা হয়েছে, তা অবিলম্বে বাতিল এবং তদন্ত কমিটি গঠন করে দায়ীদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানান। পাশাপাশি মেডিকেল শিক্ষা ও চিকিত্সা ব্যবস্থার উন্নয়নের লক্ষ্যে দলনিরপেক্ষ প্রশাসনের মাধ্যমে জ্যেষ্ঠতা, মেধা ও যোগ্যতার নিরিখে পদোন্নতির ব্যবস্থা নেয়ারও দাবি জানাচ্ছি।

Monday 31 October 2011

শেয়ারবাজারে পতন অব্যাহত অর্থমন্ত্রীর পদত্যাগ দাবি



অর্থনৈতিক রিপোর্টার
কোনো উদ্যোগেই যখন পতন ঠেকানো যাচ্ছে না, তখন অর্থমন্ত্রীর ‘শেয়ারবাজার কীভাবে ঠিক হবে জানি না’—এমন মন্তব্যে আগুনে ঘি ঢালার মতো পরিস্থিতি এখন শেয়ারবাজারে। অর্থমন্ত্রীর এ বক্তব্যের জের ধরে গতকাল লেনদেনের শুরুতেই বাজারে বড় ধরনের ধস নামে। প্রথম এক ঘণ্টায় ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) সাধারণ সূচকের পতন ঘটে প্রায় ১৯০ পয়েন্টের মতো। এ সময় ডিএসই সাধারণ সূচক ৫ হাজার ১১৮ পয়েন্টে নেমে আসে। মাত্র ৩টি ছাড়া সব কোম্পানির শেয়ারের দর কমে যায়। বিক্ষুব্ধ বিনিয়োগকারীরা দরপতনের জন্য অর্থমন্ত্রীকে দায়ী করে অবিলম্বে তার পদত্যাগ দাবিতে সোচ্চার হয়ে ওঠেন।
বেলা সাড়ে ১২টার দিকে কয়েকশ’ বিনিয়োগকারী ডিএসই চত্বরে বিক্ষোভ সামবেশ করে। এরপর সোয়া দুইটার দিকে মানববন্ধন কর্মসূচিতে এক হাজারের বেশি বিনিয়োগকারী অংশ নেন। এর পর সূচক ‘রহস্যজনক’ভাবে বাড়তে শুরু করে। কিন্তু তা কিছু সময়ের জন্য। এরপর সূচকের পতন ঠেকানো যায়নি। আগের দিনের তুলনায় ৪৮ পয়েন্ট কমে দিনশেষে ডিএসই সাধারণ সূচক ৫ হাজার ২৫৮ পয়েন্টে এসে দাঁড়ায়। মঙ্গলবার ‘শেয়ারবাবাজার কীভাবে ঠিক হবে জানি না’ বলে যে বক্তব্য দিয়েছেন তার পর পদে থাকার সব যোগ্যতা অর্থমন্ত্রী হারিয়ে ফেলেছেন বলে বিনিয়োগকারীরা মন্তব্য করেছেন। তারা বলেন, যে দেশের অর্থমন্ত্রী শেয়ারবাজারের স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনার বিষয়ে কোনো কিছু করতে পারেন না, তাকে আর ওই পদে রাখার কোনো যুক্তি থাকতে পারে না। এছাড়া বিনিয়োগকারীদের আন্দোলনকে ‘রাজনীতিকীকরণ’ করা হয়েছে বলে অর্থমন্ত্রী যে বক্তব্য দিয়েছেন তারও তীব্র সমালোচনা করেন ভুক্তভোগীরা। ক্ষুব্ধ কণ্ঠে তারা বলেন, আমরা পুঁজি হারিয়ে গত ১০ মাস আন্দোলন করছি। বাজারের স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনার জন্য দাবি জানিয়ে আসছি।
বাংলাদেশ পুঁজিবাজার বিনিয়োগকারী ঐক্য পরিষদের সহ-সভাপতি সেলিম চৌধুরী বলেন, অর্থমন্ত্রী শেয়ারবাজার নিয়ে বক্তব্যে তার অযোগ্যতার পরিচয় দিয়েছেন। এ ধরনের বক্তব্য দেয়ার পর তার পদত্যাগ করা উচিত ছিল। বিনিয়োগকারীদের আন্দোলনকে রাজনীতিকীকরণ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমরা কাউকে ডেকে আনিনি। তারা নিজেরাই এসেছিলেন। যে কেউ আমাদের আন্দোলনে সংহতি প্রকাশ করলে আমরা তাদের স্বাগত জানাতেই পারি। অর্থমন্ত্রী নিজেও যদি আসতেন আমরা স্বাগত জানাতাম।
প্রসঙ্গত, গত রোববার থেকে বিনিয়োগকারীরা ডিএসই চত্বরে অবস্থান নিয়ে আমরণ অনশন কর্মসূচি পালন শুরু করে। কর্মসূচির প্রথম দিনেই জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এরশাদ, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান, জেএসডির চেয়ারম্যান আ স ম আবদুর রবসহ কয়েকটি রাজনৈতিক দলের নেতা সংহতি প্রকাশ করেন। এ কারণে এরপর থেকে বিনিয়োগকারীদের ওপর চড়াও হয় পুলিশ। পুলিশের হয়রানিতে কোথাও বসতে না পেরে মঙ্গলবার কর্মসূচি স্থগিত করে বিনিয়োগকারীরা।
ইবিএল সিকিউরিটিজ হাউসে লেনদেনকারী ইকবাল খান রিপন নামে এক বিনিয়োগকারী বলেন, আমাদের এখানে কোনো রাজনীতি নেই। আমরা বাধ্য হয়ে আন্দোলন করছি। গত ৯ থেকে ১০ মাস পর্যন্ত বিনিয়োগকারীরা আন্দোলন করে আসছে। তখন কোনো রাজনৈতিক নেতা আসেননি। কিন্তু এ সময় আপনি (অর্থমন্ত্রী) শেয়ারবাজারের স্থিতিশীলতার জন্য কী করেছেন। এখন বলছেন, শেয়ারবাজার কীভাবে ঠিক হবে জানি না। শেয়ারবাজার থেকে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের অর্থ লুট হয়ে যাওয়ার পর এ বক্তব্যে বোঝা যাচ্ছে, কারসাজির সঙ্গে অর্থমন্ত্রী জড়িত।
আরপি সিকিউরিটিজ হাউসে লেনদেন করে থাকেন আসলাম ওয়াহিদ নামের এক বিনিয়োগকারী বলেন, বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে যারা সংহতি প্রকাশ করেছিলেন তারা তো ব্যবসায়ী নয়, রাজনৈতিক নেতা। আর রাজনৈতিক দলের নেতাদের বিনিয়োগকারীদের পাশে দাঁড়ানো তো দায়িত্বের মধ্যে পড়ে। এর মধ্যে আন্দোলনকে রাজনীতিকীকরণ মন্তব্যের অর্থই হচ্ছে, তিনি রাজনৈতিক কালচার সম্পর্কে জানেন না।
ফারইস্ট সিকিউরিটিজে লেনদেনকারী আবুল কালাম আজাদ বলেন, শেয়ারবাজারের জন্য আগামীতে ৩ কোটি ভোটার আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে যাবে। আমরা আওয়ামী লীগ করতাম। কিন্তু এখন আমরা আর এ দলকে সমর্থন জানাতে পারছি না। তিনি আরও বলেন, শেয়ারবাজারের স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে ব্যর্থ হলে বিনিয়োগকারীরা মহাসমাবেশের ডাক দিতে বাধ্য হবেন। তিনি আরও বলেন, আমরা রাজনীতি করতে আসিনি, নেতা হতে আসিনি। বিভিন্ন উত্স থেকে আমরা অর্থ শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করেছি। মিডিয়ার মাধ্যমে আমাদের শেয়ারবাজারে বিনিয়োগের জন্য আহ্বান জানানো হয়েছিল। এখন আমাদের ইক্যুয়িটি নেগেটিভ হয়ে গেছে। মার্কেট ঠিক হলে আমরা আন্দোলন করব না, আমরা চলে যাব।
ডিএসইতে আগুন আতঙ্ক : দুপুর ১২টার দিকে ডিএসইর এনেক্স ভবনের ৭ তলায় আনোয়ার সিকিউরিটিজ হাউসের সামনে ঝোলানো ইন্টারনেটের তারে আগুন দেখতে পায় বিনিয়োগকারীরা। এতে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়লে বিভিন্ন হাউস থেকে বিনিয়োগকারীরা রাস্তায় নেমে আসে। অবশ্য আগুন ছড়িয়ে পড়ার আগে চন্দন নামে ডিএসইর একজন কর্মী অগ্নিনির্বাপণ গ্যাস সিলিন্ডার দিয়ে আগুন নিভিয়ে ফেলে। এর ফলে কোনো ধরনের ক্ষতি হয়নি। ওই জায়গায় একটি দিয়াশলাইয়ের বাক্স পাওয়া গেছে বলে তিনি জানান।
বিক্ষোভ ও মানববন্ধন : শেয়াবাজারে সূচকের বড় ধরনের পতনে ক্ষোভে ফেটে পড়ে সাধারণ বিনিয়োগকারীরা। এতে হাজারখানেক বিনিয়োগকারী অংশ নেয়। বিক্ষোভকারীদের সব ক্ষোভের লক্ষ্যবস্তুতে ছিলেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। বিনিয়োগকারীরা অবিলম্বে তার পদত্যাগ বা অপসারণের দাবি জানিয়েছেন। একই সঙ্গে বিনিয়োগকারীদের বিরুদ্ধে অশালীন মন্তব্যের জন্য প্রধানমন্ত্রীর অর্থ বিষয়ক উপদেষ্টা ড. মসিউর রহমানের বিরুদ্ধেও স্লোগান দেন। এছাড়া বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরেরও পদত্যাগ দাবি করেন তারা। বেলা সোয়া দুইটার দিকে বিনিয়োগকারীরা শেয়ারবজারের স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনার দাবিতে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেন। ইত্তেফাক মোড় থেকে মতিঝিলের শাপলা চত্বর পর্যন্ত এ মানববন্ধন বিস্তৃত হয়। কর্মসূচি চলাকালে ওই এলাকায় যান চলাচল বন্ধ ছিল।
পুঁজি হারিয়ে অসুস্থ এক বিনিয়োগকারী : শেয়ারবাজারে প্রায় ১ কোটি ৩০ লাখ টাকা বিনিয়োগ করলেও এখন তা মাত্র ৫৩ লাখ টাকায় নেমে এসেছে। অর্থাত্ পুঁজিবাজারে লাভের আশায় বিনিয়োগ করলেও তার বিনিয়োগের ৭৭ লাখ টাকাই হাওয়া হয়ে গেছে। লোকশানের এ ধকল সইতে না পেরে গতকাল আনোয়ার হোসেন নামে এ বিনিয়োগকারী কান্নায় ভেঙে পড়েন। তিনি এ সময় কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, আমি শেষ হয়ে গেছি। আমাকে গুলি করুন। এক সময় তিনি অসুস্থ হয়ে যান। জানা গেছে, শেয়ারবাজারে পুঁজি হারানোর কারণে তিনমাস ধরে বাসায় কারও সঙ্গে যোগাযোগ করছেন না। স্ত্রী-সন্তানদেরও খবর নিতে পারছেন না। বিভিন্ন আত্মীয়স্বজনদের কাছ থেকে টাকা ধার করে শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করেছিলেন তিনি।
বাজার পরিস্থিতি : গতকাল দিনের শুরুতে সূচকের বড় ধরনের দরপতন হলেও দিনশেষে ৪৮ দশমিক ৯৭ পয়েন্ট বেড়ে ডিএসই সাধারণ সূচক ৫ হাজার ২৫৮ পয়েন্টে এসে দাঁড়িয়েছে। লেনদেনে অংশ নেয়া ২৫৫টি কোম্পানির মধ্যে ১০০টির দর বাড়লেও কমেছে ১৪২টির। অপরিবর্তিত ছিল ১৩টির দর। দিন শেষে সূচকের পতন হলেও লেনদেনের পরিমাণ বেড়েছে। আগের দিনের তুলনায় ৬৭ কোটি ২০ লাখ টাকা বেড়ে দিন শেষে ২৭৭ কোটি ৭১ লাখ টাকার লেনদেন হয়েছে।
মার্জিন ঋণের শর্ত শিথিলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পদক্ষেপ : পুঁজিবাজারে ব্যাংকগুলোর বিনিয়োগের পথ সুগম করতে পদক্ষেপ নিচ্ছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। মার্জিন ঋণ পুনঃতফসিলের ক্ষেত্রে ডাউন পেমেন্টের শর্ত শিথিল করার ইঙ্গিত দেয়ার পাশাপাশি বাংলাদেশ ব্যাংক জানিয়েছে, কোনো ব্যাংক মার্জিন ঋণের সুদ মওকুফ করলে তাতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কোনো আপত্তি নেই। গতকাল বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংক জানিয়েছে, ডাউন পেমেন্টের শর্ত শিথিলের বিষয়ে সংশ্লিষ্ট ব্যাংক আবেদন করলে বাংলাদেশ ব্যাংক ইতিবাচকভাবে তা বিবেচনা করবে। তাছাড়া ব্যাংক বা তাদের সাবসিডিয়ারি প্রতিষ্ঠানগুলো মার্জিন ঋণের সুদ মওকুফ করলেও এতে আপত্তি নেই বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
বাংলাদেশ ব্যাংক বলেছে, ব্যাংকগুলো বা তাদের সহযোগী আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো (সাবসিডিয়ারি) যে মার্জিন ঋণ দেয়, এর সুদ মওকুফের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংকের কোনো বিধিনিষেধ নেই। ব্যাংকগুলো নিজস্ব বিবেচনায় ব্যাংকার-গ্রাহক সম্পর্কের ভিত্তিতে ঋণের সুদ মওকুফ করতে পারে। পুঁজিবাজারে ব্যাংকগুলোর বিনিয়োগকৃত অতিরিক্ত অর্থ নির্ধারিত সীমায় নামিয়ে আনার সময়সীমা ২০১২ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। তাছাড়া ব্যাংক কোম্পানি আইনে বর্ণিত নির্দিষ্ট সীমার মধ্যে ব্যাংকগুলো পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করতে পারে।
অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশ (এবিবি) নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে জানা গেছে। আজ বৃহস্পতিবার ব্যাংকাররা বৈঠক করে এসব বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিবে বলে জানা গেছে।
নিয়ম অনুযায়ী কোনো ব্যাংক তার মোট দায়ের ১০ শতাংশ পর্যন্ত পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করতে পারে। তবে গত বছর ব্যাংকগুলো নিয়ম ভেঙে দুই/তিন গুণ বেশি বিনিয়োগ করে। বর্তমানে পুঁজিবাজারে ব্যাংকগুলোর গড় বিনিয়োগ তাদের দায়ের ৪ শতাংশের মতো।

Sunday 2 October 2011

এমপি অধ্যক্ষ মতিউরের সপরিবারে দখলবাজিযাঁরা ভোট দিয়ে অধ্যক্ষ মতিউর রহমানকে সংসদে পাঠিয়েছেন অভিযোগ তুলছেন তাঁরাও। এলাকাবাসী বলছে, এমপি ও তাঁর পরিবারের দুই সদস্যের অঢেল সম্পদের মালিক হওয়ার রহস্য হচ্ছে অনিয়ম-দু















শফিকুল ইসলাম জুয়েল, ময়মনসিংহ থেকে ফিরে
নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে একটি জাতীয় দৈনিককে দেওয়া সাক্ষাৎকারে অধ্যক্ষ মতিউর রহমান বলেছিলেন, তাঁর একটি গরুর খামার আছে। এটিই তাঁর আয়ের একমাত্র উৎস, পরিবারের সদস্যদের জীবিকা নির্বাহের মাধ্যম। ওই সাক্ষাৎকারে নিজেকে সৎ দাবি করে মতিউর রহমান বলেন, তিনি রিকশা-ভ্যানে চলাফেরায় অভ্যস্ত_এমপি নির্বাচিত হতে পারলে জনগণের জন্য নিজেকে উৎসর্গ করবেন। আর আওয়ামী লীগের এমপি হওয়ার পর আড়াই বছরে তিনি এখন বিপুল বিত্ত-বৈভবের মালিক। এক কোটি ২২ লাখ টাকায় কিনেছেন একটি প্রাডো, ৩০ লাখ টাকায় একটি ভঙ্ িওয়াগন গাড়ি। বাড়ির প্রতিটি ঘরে লাগিয়েছেন এসি। ঘরে তুলেছেন এলসিডি টিভিসহ প্রায় ১০ লাখ টাকা মূল্যের অত্যাধুনিক আসবাবপত্র।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) থেকে মতিউর রহমানের ভাই ও আফাজ উদ্দিনের সম্পদের বিবরণ জানতে চাওয়া হয়। আফাজ তাঁর আইনজীবী অ্যাডভোকেট নুরুজ্জামান খোকনের মাধ্যমে দেওয়া হিসাবে বলেন, তাঁর দোচালা টিনের ছোট একটি বাড়ি, ১২টি মুরগি, আটটি হাঁস, ছয়টি ছাগল আছে। নগদ অর্থ নেই। ভাই এমপি হওয়ার পর আফাজ নামে-বেনামে কিনছেন লাখ লাখ টাকার জমি। ঢাকার উত্তরায় প্রায় ৮০ লাখ টাকায় কিনেছেন অত্যাধুনিক বিলাসবহুল ফ্ল্যাট। তিনি প্রাইভেট গাড়ি ব্যবহার না করলেও প্রায় সময় অন্তত ১৫ থেকে ২০টি মোটরসাইকেলে মহড়া দিয়ে চলাচল করেন।
একইভাবে এমপির ক্ষমতার অপব্যবহার করে তাঁর ছেলে মুহিতউর রহমান শান্ত এবং পিএস সাঈদের বিরুদ্ধে কোটি কোটি টাকার মালিক হওয়ার অভিযোগ উঠেছে। যাঁরা ভোট দিয়ে মতিউর রহমানকে সংসদে পাঠিয়েছেন, অভিযোগ তুলছেন তাঁরাও। এলাকাবাসী বলছেন এমপি ও তাঁর পরিবারের দুই সদস্যের এই অঢেল সম্পদের মালিক হওয়ার রহস্য হচ্ছে অনিয়ম-দুর্নীতি, দখল-চাঁদাবাজি এবং টেস্ট রিলিফ (টিআর), কাজের বিনিময়ে খাদ্য (কাবিখা) ও কাজের বিনিময়ে টাকা (কাবিটা) কর্মসূচির অর্থ লুট।
কাজ না করেই অর্থ পকেটে : গত সপ্তাহে টানা চার দিন ময়মনসিংহ সদর এলাকায় অনুসন্ধান করে ক্ষমতাসীন দলের এমপির বিরুদ্ধে এসব অভিযোগ পাওয়া যায়। এলাকাবাসী বলছে, এমপি, তাঁর ছেলে শান্ত ও ভাই আকুয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আফাজ উদ্দিন ক্ষমতার ত্রিমুখী অপব্যবহার করছেন। তাঁদের অত্যাচারে অতিষ্ঠ হলেও কেউ প্রতিবাদ করার সাহস পায় না। রাস্তা ও ভবন নির্মাণের অধিকাংশ কাজই বাজার দরের দ্বিগুণেরও বেশি মূল্যে হাতিয়েছেন এবং কাজ না করেই অর্থ তুলে আত্মসাৎ করেছেন এমপির ভাই আফাজ উদ্দিন।
'দাপুনিয়া-বাড়েরারপাড় কাঁচা-পাকা রাস্তাটিতে গত আড়াই বছরে এক কোদাল মাটিও পড়েনি। মেরামত হয়নি ভেঙে পড়া ব্রিজগুলো। ফলে রাস্তায় এখন উঁচু-নিচু গর্ত, কোথাও কোথাও হাঁটুপানি আর পিচ্ছিল কাদার ছড়াছড়ি। ফলে গাড়ি দূরের কথা, রিকশা-ভ্যানে চলাচল করা দায়। রাস্তাটির কারণে বাড়েরারপাড় গ্রামের প্রায় সাড়ে তিন হাজার মানুষ হাসপাতাল, কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়সহ সদরে যেতে অবর্ণনীয় দুর্ভোগের শিকার হয়।' কালের কণ্ঠকে বলছিলেন দাপুনিয়া-বাড়েরারপাড় গ্রামের বাসিন্দা ও প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরের সাবেক ডেপুটি প্রধান হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা কবীর আহমেদ।
পরে খোঁজ নিয়ে ও এলজিইডির মূল্যায়ন প্রতিবেদনে দেখা গেছে, দাপুনিয়ার এ রাস্তাটি সংস্কারের লক্ষ্যে ২০০৯-১০ অর্থবছরে এলজিইডি ২৮ লাখ ৭৮ হাজার ১৫ টাকা বরাদ্দ দেয় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এমইঅ্যান্ডএমইকে। নির্দেশনা ছিল, ২০০৯ সালে ৯ ডিসেম্বর কাজ শুরু করে ২০১০ সালে ১০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে রাস্তাটি সংস্কারের। কিন্তু ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মাত্র ১৫ শতাংশ কাজ করেই পুরো বিল তুলে নিয়েছে। জানা যায়, ঠিকাদারি ওই প্রতিষ্ঠানের মালিক পৌরসভার ২ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবদুল মতিন। তবে মতিনের ওই প্রতিষ্ঠানের নামে কাজটি নিয়েছিলেন এমপির ভাই আফাজ উদ্দিন।
ময়মনসিংহের প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী ও পরপর তিন বছর জেলার সর্বোচ্চ করদাতার পুরস্কার পাওয়া ফখরুদ্দিন আহমেদ বাচ্চু ক্ষোভের সঙ্গে বলেন, 'সরকার ক্ষমতা নেওয়ার প্রথম দিকে কিছু দরপত্রে অংশ নিয়ে সর্বনিম্ন দরদাতা হওয়া সত্ত্বেও কাজ পায়নি আমার প্রতিষ্ঠান। প্রতিবাদ করায় এমপির ভাই ও ছেলের সন্ত্রাসীদের দ্বারা লাঞ্ছিত হতে হয়েছে। বিচারের দাবিতে প্রশাসনের দ্বারে দ্বারে ঘুরেও মামলা করতে পারিনি, এমনকি জিডিও নেয়নি পুলিশ। সর্বশেষ নিরুপায় হয়ে ময়মনসিংহের কাজে অংশ নেওয়া ছেড়ে এখন কিশোরগঞ্জ-জামালপুরে প্রতিযোগিতায় সর্বনিম্ন দরদাতা হিসেবে কাজ করছি।'
গত ২৩ আগস্টের এলজিইডির কাজের মূল্যায়ন প্রতিবেদনে দেখা যায়, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এমএস প্রাইম ডিজাইন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট এইড আজামতপুর পূর্বপাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয় ভবন সংস্কারের কাজ পায়। কাজটি ২০১০ সালের ১৪ জানুয়ারি থেকে চলতি বছরের ১৪ জানুয়ারির মধ্যে শেষ করার নির্দেশনা থাকলেও মাত্র ২৫ শতাংশ কাজ করেই ১৯ লাখ ৬৩ হাজার টাকা তুলে নেওয়া হয়। একই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান বারিরা উজানপাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয় ভবন সংস্কারের কাজ সমপরিমাণ অর্থে ও একই সময়ের মধ্যে শেষ করার নির্দেশনা ছিল, কাজ না করেই পুরো টাকা তোলা হয়। একই প্রতিষ্ঠান আকুয়া ফিরোজ লাইব্রেরি মোড় থেকে মাসকান্দা পাড়াইল রাস্তা উন্নয়নের জন্য ১৮ লাখ ১৯ হাজার ৮৩৮ টাকা তুলে নিলেও কাজ করেছে মাত্র ৩৫ শতাংশ। এ কাজটি ২০০৯ সালের ৮ ডিসেম্বর শুরু করে গত বছরের ৮ সেপ্টেম্বর শেষ করার নির্দেশনা ছিল। প্রতিষ্ঠানটি আকুয়া নাজির ব্যাপারীর রাস্তার কাজ পেলেও মাত্র ৩৫ শতাংশ শেষ করেই ৩১ লাখ ৯২ হাজার ২৩৩ টাকা তুলে নিয়েছে। এ কাজটি ২০০৯ সালের ৮ ডিসেম্বর শুরু করে গত বছরের ৮ আগস্ট শেষ করার নির্দেশনা ছিল। এসব কাজ এমপির ভাগ্নে বুলবুলের প্রতিষ্ঠানের নামে হলেও তা নিয়ন্ত্রণ করেছেন এমপির ভাই আফাজ উদ্দিন।
পৌরসভার ২ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবদুল মতিনের মালিকানাধীন এমইঅ্যান্ডএমই প্রতিষ্ঠান সদর উপজেলাধীন দাপুনিয়া বাড়েরারপাড় রাস্তা উন্নয়নের জন্য ২৮ লাখ ৭৮ হাজার ১৫ টাকা তুলে নিলেও কাজ করেছে মাত্র ১৫ শতাংশ। এ কাজটি ২০০৯ সালের ৯ ডিসেম্বর শুরু করে গত বছরের ১০ সেপ্টেম্বর শেষ করার নির্দেশনা ছিল। একই প্রতিষ্ঠান চোরখাই ভাবখালী পুরাতন বাজার হয়ে ভাবখালী ইউপি সড়ক মেরামতের কাজ নিয়ে মাত্র ৬০ শতাংশ শেষ করেই পুরো বিলের ৩৬ লাখ ৩৯ হাজার ৭০০ টাকা উঠিয়ে নিয়েছে। এই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটিও নিয়ন্ত্রণ করেন আফাজ উদ্দিন।
আফাজ উদ্দিনের মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান সব্যসাচী এন্টারপ্রাইজ এলজিইডির আওতাধীন আইআরআইডিপি প্রজেক্টে ফুলবাড়িয়া রোড থেকে খলপা (আর্মি বাইপাস) পর্যন্ত কার্পেটিংয়ের জন্য কাজ পেয়ে মাত্র ৪০ শতাংশ শেষ করেই ৩৫ লাখ ১৭ হাজার ২১৭ টাকা তুলে নিয়েছে। ২০১০ সালের ২১ অক্টোবর দেওয়া কাজটি চলতি বছরের ২০ জুলাই শেষ করার নির্দেশনা ছিল। একই প্রতিষ্ঠান একই সময়ে কাজ শেষ করার নির্দেশনা নিয়ে মোড়লপাড়া থেকে চারপাড়া সড়ক সংস্কারের কাজ পায়। কিন্তু মাত্র ৪৫ শতাংশ কাজ শেষ করেই পুরো বিলের ২৪ লাখ ২৫৭ টাকা তুলে নেয় প্রতিষ্ঠানটি। এলজিইডির মূল্যায়ন প্রতিবেদনে এসব প্রকল্পের কাজ বাকি না থাকার কথা উল্লেখ রয়েছে।
সরকারি জমি দখল : ১ দশমিক ১৫ একর খাসজমির দখল নিয়ে বীর মুক্তিযোদ্ধা অধ্যক্ষ মতিউর রহমান একাডেমী (স্কুল অ্যান্ড কলেজ) এই নামে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। এমপি নিজের নামেই প্রতিষ্ঠানটি করেছেন। পরিবেশ সংরক্ষণ (সংশোধিত) আইন, ২০১০ লঙ্ঘন করে জলাশয় ভরাটের পর ভবন নির্মাণ করা হয়। এরই মধ্যে জমি বরাদ্দ নেওয়ার প্রায় সাড়ে তিন মাস পার হলেও মূল্য বাবদ ১২ কোটি ৫২ লাখ ৬৬ হাজার চার টাকা সরকারি কোষাগারে জমা দেননি এমপি। অথচ এরই মধ্যে চালু করা হয়েছে স্কুল-কলেজ। ২০০৬ সালে এই জমি শহীদ জিয়াউর রহমান টেকনিক্যাল অ্যান্ড বিজনেস ম্যানেজমেন্ট কলেজের নামে তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মো. তৌফিকুল আজিম ১৩ লাখ ৩৪ হাজার টাকায় বরাদ্দ নেন। সেই জমি এখন বর্তমান এমপি ভূমি মন্ত্রণালয়ের সুপারিশসহ বিশেষ তদবিরের মাধ্যমে নিজের নামের প্রতিষ্ঠানের জন্য বরাদ্দ নেন।
আলমগীর মনসুর (মিন্টু) মেমোরিয়াল কলেজ অধ্যক্ষের জন্য বরাদ্দকৃত প্রায় তিন কোটি টাকা মূল্যের ১৫ শতাংশ জমির ওপর স্থাপিত বাড়িটিতে ১৯৬৯ সাল থেকেই বসবাস করে আসছেন কলেজটির প্রতিষ্ঠাকালীন অধ্যক্ষ মতিউর রহমান। অথচ ২০০২ সালের ৩০ জুন তিনি কলেজ থেকে অবসর নেন এবং শহরে এমপির নিজস্ব বাড়িও আছে। এদিকে কলেজ ক্যাম্পাসের বাড়ি বরাদ্দ না পেয়ে বর্তমান অধ্যক্ষ এ কে এম আজহারুল ইসলাম এখন থাকেন অন্য স্থানে।
এমপি মতিউর রহমান ও স্ত্রী নুরুন্নাহার শেফালীর নামে আকুয়া মৌজায় ৬৫ শতাংশ অর্পিত সম্পত্তি অবৈধ দখলদারের কাছ থেকে পানির দরে কিনে টিনের বাউন্ডারি দেওয়া হয়েছে। এখন খারিজের চেষ্টা চলছে। কিন্তু অর্পিত সম্পত্তি ব্যক্তি নামে খারিজ করতে রাজি হননি সংশ্লিষ্ট ভূমি কর্মকর্তা। ফলে বিষয়টি ঝুলে আছে।
দাপুনিয়া জেলা পরিষদের মালিকানাধীন প্রায় তিন কোটি টাকা মূল্যের তিন একর খাসজমি (দাপুনিয়া বাজারসংলগ্ন ফুলবাড়িয়া সড়কঘেঁষা) দখল করে সাইনবোর্ড টাঙিয়ে প্রায় দেড় বছর ধরে দখলে রেখেছেন এমপির ছোট ভাই আফাজ উদ্দিন।
এমপিপুত্র শান্ত নির্বাচনের আগে জেলা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন। এখন চলেন রাজকীয় ভঙ্গিতে। জানা যায়, ডেঙ্গু ব্যাপারী রোডের প্রায় দুই কোটি টাকা মূল্যের ৭ শতাংশ অর্পিত সম্পতি দখলে নিয়ে নিজের নামে দলিল করে নিয়েছেন এমপিপুত্র শান্ত। রামকৃষ্ণ মিশন রোডে জাতীয় পার্টির নেতা এম এ হান্নানের মালিকানাধীন প্রায় দুই কোটি টাকা মূল্যের ৮ শতাংশ জমি বিজ্ঞান কলেজের সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে দখল করে নিয়েছেন শান্ত।
ময়মনসিংহ পৌরসভার কয়লাওয়ালাপাড়ার মোড়ে বাদল ভৌমিকের মালিকানাধীন প্রায় ছয় কোটি টাকা মূল্যের ২০ শতাংশ জমি দখলে নিয়েছেন এমপিপুত্র। ময়মনসিংহ সদরের ছোট বাজারের ৬৩ শতাংশ অর্পিত সম্পত্তিও দখল করেছেন শান্ত। ব্যক্তিমালিকানাধীন হিসেবে শান্তর নামে রেজিস্ট্রি করা এ জমির দলিলে দুই কোটি টাকার সম্পত্তির দাম ধরা হয়েছে মাত্র ১৫ লাখ টাকা। এটি জেলা প্রশাসন এক বছর ধরে তদন্ত করে যাচ্ছে। গত বছরে বাসাবাড়ি এলাকায় হকার্স মার্কেটের ১৫ শতাংশ জমি দখল করে ১২টি ঘর নির্মাণের পর দোকান হিসেবে প্রতিটি পাঁচ থেকে সাত লাখ টাকায় বিক্রি করেন এমপিপুত্র শান্ত। পরে জেলা প্রশাসনের অভিযানে অবৈধ স্থাপনা হিসেবে সেসব দোকান ভেঙে দেওয়া হয়; যদিও দোকানের মালিকদের কেউই এখনো টাকা ফেরত পাননি, যাঁদের অনেকেই এখন নিঃস্ব।
অভিযোগ উঠেছে, শান্ত বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নামেও জমির দখল নিয়েছেন। এমপির আকুয়া এলাকার বাড়ি যাওয়ার পথে জেলা প্রশাসনের মালিকানাধীন প্রায় এক কোটি টাকা মূল্যের ৫ শতাংশ জমি দখল করে তিনটি বড় ঘর নির্মাণসহ 'প্রতিশ্রুতি ক্রীড়াচক্র' ক্লাবের সাইনবোর্ড ঝুলিয়েছেন তিনি। এর প্রায় ১০০ গজ দূরে দুই কোটি টাকা মূল্যের প্রায় ১০ শতাংশ জমি দখল করে ঝোলানো হয়েছে মুক্তিযোদ্ধা একাডেমীর সাইনবোর্ড। মুক্তিযোদ্ধা একাডেমীর ওই অফিসে পর পর তিন দিন ঘুরেও তালাবদ্ধ পাওয়া যায়।
এ ছাড়া সরকারি জমি দখলের চেষ্টায় দলীয় ব্যক্তিদের দিয়ে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নামে জেলা প্রশাসনের কাছে আবেদন করা হয়েছে। এর মধ্যে বাসাবাড়ি এলাকার ২৫ শতাংশ খাসজমি উত্তরণ বহুমুখী সমিতির নামে এবং আরো ২৫ শতাংশ খাসজমি ডিজিটাল বহুমুখী সমবায় সমিতির নামে বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে।
শান্তর প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় সারিন্দা রেস্টুরেন্টের মালিক সুরুজ্জামানের ছেলে মাকসুদ তাঁদের মালিকানাধীন ব্রিকফিল্ডের পাশের জেলা প্রশাসনের (আকুয়া মৌজা) প্রায় পাঁচ কোটি টাকা মূল্যের ৬৬ শতাংশ খাসজমি দখল করে টিনের বাউন্ডারি দিয়ে এখন নিজ নামে রেজিস্ট্রির চেষ্টা করছেন।
দুস্থদের অর্থ লুট : ময়মনসিংহ সদর আসনের নামে গত আড়াই বছরে টিআর, কাবিখা, কাবিটার জন্য বরাদ্দ করা অর্থের বেশির ভাগই আত্মসাৎ করা হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। সম্প্রতি কাবিটার ৯০ লাখ টাকা বিতরণে ব্যাপক অনিয়ম-দুর্নীতি করা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে 'ভুয়া প্রতিষ্ঠান' ও 'ম্যানেজড' ব্যক্তির নাম ব্যবহৃত হয়। শোনা যায়, বেশির ভাগ কাজে ৫০ হাজার টাকার চেক দিয়ে ৪০ হাজার টাকা ফেরত নিয়েছেন এমপিপুত্র।
জানা যায়, এমপির নিজের নামে করা কলেজের মাটি ভরাট, স্থাপনা নির্মাণ ও আসবাবপত্র_সবই করা হয়েছে সরকারি টাকায়। এ ক্ষেত্রে অর্থায়ন করা হয়েছে এডিপির বরাদ্দের ৪০ লাখ টাকা এবং এমপির নামে বরাদ্দের টিআরের ২৫ টন চাল ও কাবিখার ৩০ লাখ টাকা।
দাপুনিয়া ইউনিয়নের ডিকে উচ্চ বিদ্যালয়কে কাবিটার বরাদ্দ থেকে দুই দফায় সাড়ে তিন লাখ টাকা দিলেও তা আত্মসাৎ করা হয়। টেলিফোনে জানতে চাইলে স্কুলের প্রধান শিক্ষক মোখলেছুর রহমান বলেন, 'প্রথম দফায় ৫০ হাজার টাকা পেয়ে কিছু কাজ করেছি। পরের তিন লাখ টাকার খবর আমার জানা নেই।'
কাওয়ালতী নামাপাড়া ফকিরবাড়ী হাফেজিয়া মাদ্রাসার নামে কাবিটার ৫০ হাজার টাকা বরাদ্দ পান আওয়ামী লীগ নেতা হারুনূর রশিদ। এর ৪০ হাজার টাকা ফেরত দিতে হয় এমপিপুত্রের কাছে। বরাদ্দ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে কাওয়ালতী নামাপাড়া ফকিরবাড়ী ফোরকানিয়া মাদ্রাসার প্রধান শিক্ষক শিবলী টেলিফোনে বলেন, 'শুনেছি টাকা বরাদ্দ হয়েছে, তবে আমার মাদ্রাসা তা পায়নি। আর বাস্তবে এ গ্রামে কোনো হাফেজিয়া নয়, রয়েছে ফোরকানিয়া মাদ্রাসা।'
এমপিপুত্র শান্তর ঘনিষ্ঠজন হিসেবে পরিচিত ঘাগরা ইউনিয়ন ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি ও পাড়াইল উচ্চ বিদ্যালয়ের অফিস সহকারী মামুনের নামে আড়াই লাখ টাকার পাঁচটি প্রকল্প দিয়ে টাকা আত্মসাৎ করা হয়। তবে কোনো প্রকল্প ও টাকা পাননি বলে দাবি করেন মামুন। একই ইউনিয়নের সুহিলা গ্রামের বেলালও পেয়েছেন ছয়টি প্রকল্প। এসব প্রকল্পের নামে বরাদ্দ হওয়া তিন লাখ টাকার মধ্যে আড়াই লাখ টাকাই শান্তকে দিতে হয়েছে। বেলালের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তিনি একটি প্রকল্প পেয়েছেন এবং এর মাস্টাররোল সম্প্রতি জমা দিয়েছেন। শান্তকে টাকা দেওয়ার প্রসঙ্গে তিনি নিরুত্তর থাকেন।
টিআর, কাবিটা, কাবিখা বাস্তবায়ন নীতিমালায় বলা আছে, অর্থ বরাদ্দের ক্ষেত্রে প্রজেক্ট কমিটির সভাপতিকে ওই প্রতিষ্ঠানের সভাপতি/চেয়ারম্যান, প্রতিষ্ঠানপ্রধান কিংবা নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি হতে হবে, যার কোনো কিছুই মানা হয়নি।
ক্ষমতার অপব্যবহার : স্কুল-কলেজ থেকে শুরু করে সব ধরনের প্রতিষ্ঠানে নিযোগপ্রক্রিয়ায় এমপির স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ উঠেছে। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বোর্ডের সদস্য নন, এমনকি আমন্ত্রণও জানানো হয়নি। অথচ নিয়োগ বোর্ডে হারহামেশাই হাজির হন এমপি। পরে নিজস্ব প্রার্থীদের নিয়োগ করতে চাপ দেন। অভিযোগ আছে, বিভিন্ন পদে নিয়োগে এক লাখ থেকে পাঁচ লাখ টাকা উৎকোচ নিয়ে থাকেন এমপি ও তাঁর পুত্র। এ ছাড়া ফ্যাসিলিটিজ ডিপার্টমেন্ট, সিএমএমইউ, পানি উন্নয়ন বোর্ড, সড়ক ও জনপথ, এলজিইডি, গৃহায়ণ ও গণপূর্তসহ সব প্রতিষ্ঠানের টেন্ডারে এমপিপুত্র শান্তকে ১০ থেকে ২৫ শতাংশ পর্যন্ত চাঁদা না দিয়ে কোনো ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কাজ করতে পারে না।
২১ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর পদপ্রার্থী ঠিকাদার সেলিম অভিযোগ করেন, 'পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের সুনামগঞ্জ ভবন তৈরির এক কোটি ৬২ লাখ টাকার দরপত্রে অংশগ্রহণের জন্য গত ৬ সেপ্টেম্বর দরপত্র ফেলতে ময়মনসিংহ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়েছিলাম। কিন্তু এমপিপুত্র শান্তর নির্দেশে কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগ নেতা শাহজাদ ও তাঁর ক্যাডার বাহিনী হুমকি দিয়ে আমাকে তাড়িয়ে দেয়। গত সপ্তাহে বাংলাদেশ পারমাণবিক কেন্দ্রের ভবন নির্মাণের দরপত্রে পাঁচ কোটি টাকার কাজের প্রায় দুই কোটি টাকার কাজই নিজস্ব ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে নিয়ে দিয়েছেন শান্ত।'
হাইকোর্টের নির্দেশনার কারণে ২০০১ সাল থেকে ব্রহ্মপুত্র নদের কাচারিঘাট বালুমহালের ইজারা বন্ধ থাকলেও আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর ইজারা ছাড়াই ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। এখান থেকে প্রতিদিন অন্তত ৩০ হাজার টাকা আয় করছে এমপির পরিবারের লোকজন। এ বালুমহাল দখল নিয়ে খুনের ঘটনা পর্যন্ত ঘটেছে।
আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর এমপির ভাই মমতাজ মোটর মালিক সমিতির নেতৃত্ব নিয়ে নেন। অথচ ২০১০ সালের নভেম্বর পর্যন্ত মোটর মালিক সমিতির সাবেক সভাপতি সৈয়দ ফারুকীর নির্বাচিত কমিটির মেয়াদ ছিল। এমপির ভাগ্নে বুলবুল খাগদহর ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে পরাজিত হওয়ার পর সন্ত্রাসী বাহিনী নিয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কার্যালয় ভাঙচুর করেছেন।
একইভাবে এমপির পিএস সাঈদ ক্ষমতার অপব্যবহার করে ময়মনসিংহের শহরতলি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের সামনে ও সানকিপাড়ায় জমি কিনে দুটি বাড়ি নির্মাণ করেছেন বলে জানা যায়।
অভিযোগ অস্বীকার : সার্বিক অভিযোগ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে মতিউর রহমান এমপি টেলিফোনে কালের কণ্ঠকে বলেন, 'আমার প্রতিপক্ষরা অসত্য অভিযোগ করে আসছে। আমরা দলকে ভালোবাসি। কোনো ক্ষমতার অপব্যবহার করি না।' কলেজের নামে জেলা প্রশাসনের বরাদ্দ করা জমির টাকা পরিশোধ প্রসঙ্গে বলেন, দ্রুতই এর সমাধান হবে। নিজের কলেজে সরকারি অর্থ বরাদ্দ নেওয়া প্রসঙ্গে সংসদ সদস্য মতিউর রহমান বলেন, 'আমি শিক্ষক মানুষ। শিক্ষা সম্প্রসারণে সব সময়ই কাজ করেছি। সাম্প্রতিক বরাদ্দও এরই অংশ।'
এমপিপুত্র মুহিতউর রহমান শান্তও অভিযোগ অস্বীকার করে টেলিফোনে বলেন, 'আমি সরকারি জমি দখল করিনি। আর ভুয়া প্রতিষ্ঠানের নামে টিআর, কাবিখা, কাবিটার অর্থ বরাদ্দ হলে তা খতিয়ে দেখা হবে।' বিজ্ঞান কলেজের নামে সাইনবোর্ড টাঙিয়ে দখল প্রসঙ্গে বলেন, 'জমিটি কলেজের নামে ভাড়া নেওয়া হয়েছে।' টেন্ডারবাজি প্রসঙ্গে বলেন, 'আমার অগোচরে ছাত্রলীগের ছেলেরা কিছু করলেও তা আমার জানা নেই।'
এমপির ভাই ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান আফাজ উদ্দিন সরকার বলেন, 'আমি উপজেলা পরিষদের জমি এক বছরের জন্য লিজ নিয়েছি।' লিজ নেওয়া জমিতে সাইনবোর্ড টাঙানো প্রসঙ্গে কোনো উত্তর দেননি। আর পুরো কাজ না করেই বিল তুলে নেওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, 'আমি ঢাকা থেকে কাজের সময় বাড়িয়ে নিয়ে রানিং বিল তুলেছি।' এত অর্থ আয় প্রসঙ্গে বলেন, 'আমি ব্যবসা করে টাকা কামাই।' অভিযোগ প্রসঙ্গে এমপির পিএস সাঈদ বলেন, 'আমার কোনো বাড়ি-সম্পদ নেই। আমি আগেও জিরো ছিলাম, এখনো জিরো।'
প্রশাসনের বক্তব্য : সরকারি জমিতে আফাজ উদ্দিনের মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানের সাইনবোর্ড প্রসঙ্গে দাপুনিয়া জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা হাসানুল ইসলাম বলেন, 'বিষয়টি সঠিকভাবে আমার জানা নেই। তবে ওই এলাকায় পৌরসভার বেশ কিছু জমি আছে, যার অধিকাংশই লিজ দেওয়া রয়েছে।'
ময়মনসিংহ সদর উপজেলার টিআর, কাবিটা, কাবিখার প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) নুরুল হুদার মোবাইলে বারবার রিং করলেও তিনি ধরেননি। তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই অফিসের অন্য এক কর্মকর্তার দাবি, 'সরকারি অনুদানের ২০ ভাগ কাজও মাঠপর্যায়ে হয়নি। বরাদ্দ করা অর্থ শুধু লুটই হয়েছে।'
এলজিইডির ময়মনসিংহ জেলার নির্বাহী প্রকৌশলী শহীদুল হক কালের কণ্ঠকে বলেন, কাজগুলোর বিল উপজেলা পরিষদ থেকে ইউএনওর তত্ত্বাবধানে হয়। তবে কাজ না করে টাকা তোলা হলে সেটা অবশ্যই অনিয়ম।
ময়মনসিংহের জেলা প্রশাসক লোকমান হোসেন মিয়া টেলিফোনে বলেন, কলেজের জমির টাকা লিখিতভাবে চাওয়া হয়েছে। আর জেলা প্রশাসনের কিছু জমি অবৈধ দখলে থাকতে পারে। তবে তা দখলমুক্ত করে পুনরুদ্ধার করা হবে।