নোয়াখালীতে ক্ষমতাসীন দলের সাইনবোর্ড টাঙিয়ে সরকারি জাগয়া দখলের হিড়িক পড়েছে। প্রকাশ্যে সরকারি কোটি কোটি টাকার সম্পত্তি দখল হলেও স্থানীয় প্রশাসন রয়েছে একেবারে নীরব। প্রতিবাদ করলে চাকরি হারানোর ভয় থাকে। ফলে সরকারি অনেক কর্মকর্তা-কর্মচারী দখলদারদের সঙ্গে ফায়দা লুটে নিচ্ছে। আর সরকার হারাচ্ছে কোটি কোটি টাকার সম্পদ।জানা গেছে, বর্তমান আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহজোট সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকেই দলের নাম ভাঙিয়ে একটি দখলদার চক্র নোয়াখালীর বিভিন্ন উপজেলায় দলীয় সাইনবোর্ড টাঙিয়ে সরকারি জায়গা দখল করছে। তারা আ’লীগ, শ্রকিম লীগ, সেচ্ছাসেবক লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ, বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোট, বঙ্গবন্ধু পরিষদ, শেখ রাসেল স্মৃতি সংসদসহ দলের নাম ভাঙিয়ে বিভিন্ন ভূইফোঁড় সংগঠনের সাইনবোর্ড ব্যবহার করে সরকারি জায়গা দখল করছে। তাদের দখল তালিকায় রয়েছে সরকারি খাস জমি, সড়ক ও জনপথ, পানি উন্নয়ন বোর্ড, জেলা পরিষদের ও সম্পত্তি। এসব সরকারি জায়গায় প্রথমে খুঁটি দিয়ে দলের বা সংগঠনের জেলা, উপজেলা, শহর নগর ও কলেজ শাখার অফিসের সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে দেয়া হয়। পরে তা দখল করে ঘর নির্মাণ করে অন্যের কাছে পজিশন বিক্রি করা হয়।দলীয় সাইনবোর্ড ব্যবহার করে সরকারি জায়গা সবচেয়ে বেশি দখল হচ্ছে জেলার সোনাইমুড়ী, বেগমগঞ্জ ও সেনবাগে। এরপরই রয়েছে নোয়াখালী সদর, সুবর্ণচর, কোম্পানীগঞ্জ, হাতিয়া, চাটখিল ও কবিরহাট উপজেলা।সোনাইমুড়ী উপজেলার জয়াগ ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি আবদুল লতিফ দলীয় সাইনবোর্ড ব্যবহার করে জয়াগ বাজারে সরকারি জায়গা দখল করে ভবন নির্মাণ করে। বিষয়টি এলাকাবাসী সোনাইমুড়ী উপজেলা নির্বাহী অফিসার হাসিনা বেগম ও এসিল্যান্ডকে জানালেও রহস্যজনক কারণে ব্যবস্থা নেননি। চৌমুহনীর চৌরাস্তায় বেগমগঞ্জ উপজেলা আ’লীগের সাধারণ সম্পাদক ও পৌর মেয়র মামুনুর রশিদ কিরণের নাম ভাঙিয়ে সড়ক ও জনপথ বিভাগের কয়েক কোটি টাকার জায়গা দখল করে রাতারাতি মার্কেট নির্মাণ করছে দখলদার চক্র। বেগমগঞ্জ থানার মাত্র কয়েকশ গজ দূরে প্রকাশ্যে সরকারি জায়গা দখলের ঘটনা ঘটলেও দখল ঠেকানোর কোনো উদ্যোগ নেয়া হয়নি। এ নিয়ে এলাকায় ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। এক সময়ের জেএসডি নেতা আবুল খায়ের চৌমুহনীর দক্ষিণ বাজারে সরকারি খাল দখল করে বহুতল ভবন নির্মাণ করছেন। সাধারণ ব্যবসায়ীরা পানি উন্নয়ন বোর্ডকে জানালেও আজ পর্যন্ত কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। বেগমগঞ্জের কাজিরহাটে ছাত্রলীগ ও যুবলীগের কয়েক নেতাকর্মী বঙ্গবন্ধু পরিষদ কাজিরহাট আঞ্চলিক অফিস সাইনবোর্ড টাঙিয়ে ব্যবসায়ী মফিজের বন্দোবস্তের জায়গাটি দখল করে নিয়ে অন্যের কাছে বিক্রি করে দিয়েছে। চৌমুহনী রেলওয়ে কোয়ার্টারসংলগ্ন সরকারি জলাশয়ের পাড়ে বেগমগঞ্জ থানা শ্রমিক লীগ প্রধান কার্যালয় ও বেগমগঞ্জ থানা, চৌমুহনী পৌর এবং কলেজ শাখা ছাত্রলীগের নাম ভাঙিয়ে সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে জমি দখলের চেষ্টা করা হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। সেনবাগের শ্রমিরমুন্সি বাজারে জেলা আ’লীগের শিল্প ও বাণিজ্যবিষয়ক সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম মানিক দলীয় সাইনবোর্ডে সংখ্যালঘুদের জায়গা দখল করে নেয়। এ সময় সেনবাগ থানা পুলিশ টহলে থাকলেও তারা সংখ্যালঘুদের সাহায্যে এগিয়ে আসেনি। এর আগে বেগমগঞ্জ উপজেলা আ’লীগের সাধারণ সম্পাদক মামুনুর রশিদ কিরণ দলীয় প্রভাব খাটিয়ে জেলা জাপা সভাপতি সালাহ উদ্দিন আহম্মদের চৌমুহনী-মাইজদী সড়কের পাশের বিপুল পরিমাণ জায়গা দখল করে নেয়। এ নিয়ে বর্তমানে আদালতে মামলা চলছে। নোয়াখালীতে একের পর সরকারি খাল, ডোবা, নালা দখল হওয়ায় সামান্য বৃষ্টিতে জেলাব্যাপী দেখা দেয় কৃত্রিম বন্যা। নোয়াখালী সওজ’র প্রধান নির্বাহী প্রকৌশলী শ্যামল বাবু জানান, অভিযোগ পেলে আমরা অবিশ্যই ব্যবস্থা নেব। তাছাড়া তাত্ক্ষণিক দখল ঠেকাতে আমাদের যে লোকবল দরকার, তা নেই। নোয়াখালী পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রধান নির্বাহী হাবিবুর রহমান জানান, খাল আমাদের হলেও খালের পাশের জায়গা জেলা পরিষদের। কেউ পানি প্রবাহের প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করলে আমরা তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারি।এ ব্যাপারে নোয়াখালী জেলা প্রশাসক মো. সিরাজুল ইসলামের সঙ্গে আলাপ করলে তিনি সরকারি সম্পত্তি দখলের কথা স্বীকার করে বলেন, বিষয়টি আমাদের নজরে এসেছে। সহসা দখল উচ্ছেদে ব্যবস্থা নেয়া হবে
।