Friday 31 December 2010

নির্মাণকাজে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ : শরণখোলায় ভারতীয় ত্রাণের ঘর পাচ্ছে বিত্তশালীরা



টিএম মিজানুর রহমান শরণখোলা (বাগেরহাট)

সিডরে ক্ষতিগ্রস্ত শরণখোলায় ভারত সরকারের অনুদানে দেয়া ত্রাণের ঘর পাচ্ছেন বিত্তশালীরা। নির্মাণকাজেও রয়েছে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ। ফলে প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্তরা এখনও থেকে যাচ্ছে গৃহহীন অবস্থায়।
ভুক্তভোগীদের অভিযোগের ভিত্তিতে শরণখোলার কয়েকটি এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, ত্রাণের ঘর নিয়ে অনিয়মের ভয়াবহ চিত্র। উপজেলার রাজৈর গ্রামের একটি দোতালা বিল্ডংয়ের সঙ্গে ভারত সরকারের অনুদানে আরেকটি ত্রাণের ঘর নির্মাণ করা হচ্ছে। ঘরটি ওই বিল্ডিংয়ের মালিক নুরুল আমিন হাওলাদার ত্রাণ হিসেবে পেয়েছেন। তিনি ঢাকার একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন। এটি এখন রান্নাঘর হিসেবে ব্যবহার করা হবে বলে তার ছেলে আসাদুজ্জামান হিরু জানান। ত্রাণের পাওয়া ঘর এবং নিজস্ব বিল্ডিংয়ের কাজ একই সঙ্গে চলতে দেখা গেছে।
একই এলাকার ইউনুস মোল্লার দোতলা টিনের ঘরের সামনেই আরেকটি ত্রাণের ঘর নির্মাণ করা হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট ইউপি চেয়ারম্যানের ভাই মনিরুজ্জামানকে ৫ হাজার টাকা দিয়ে তিনি এ ঘরটি পেয়েছেন বলে সরলভাবে জানালেন গৃহকর্তার স্ত্রী জরিনা বেগম। অথচ পার্শ্ববর্তী কাঠমিস্ত্রি আ. বারেক মল্লিকের ঘর সিডরে সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্তের তালিকায় তার নাম রয়েছে। কিন্তু টাকা দিতে না পারায় তিনি ত্রাণের ঘর পাননি বলে অভিযোগ করেন। এভাবেই সিডর বিধ্বস্ত শরণখোলায় ভারত সরকারের অনুদানে ত্রাণের ঘর বিতরণ করা হচ্ছে।
শুধু এখানেই শেষ নয়, খুলনা-বাগেরহাট রুটের বাস মালিক সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক গোলবুনিয়া গ্রামের আতিয়ার রহমান খুলনায় বসবাস করেন। বিত্তশালী এ ব্যক্তির নাম ভারতীয় ত্রাণ পাওয়া ঘরের তালিকায় রয়েছে। এ ধরনের অর্থ-বিত্তের মালিক একই গ্রামের সেলিম তালুকদার, মাওলানা লতিফুর রহমান তালুকদার, হেমায়েতউদ্দিন আকন, আলো আকন, মোস্তফা তালুকদার, রায়েন্দা (সদর) ইউনিয়নের বাসিন্দা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক রফিকুল ইসলাম কালাম, বন ও পরিবেশ সম্পাদক আনোয়ার হোসেনসহ অনেকের নাম ত্রাণের ঘরের তালিকায় রয়েছে। অথচ স্থানীয় প্রশাসনের হিসাব অনুযায়ী সিডরে গৃহহীন ৩ হাজার ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারকে এখন পর্যন্ত ঘর দেয়া সম্ভব হয়নি। এমনকি ভারত সরকারের অনুদানে সিডরে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারকে কি প্রক্রিয়ায় এ ঘর দেয়া হচ্ছে তা স্থানীয় প্রশাসন জানে না। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা খন্দকার জহিরুল ইসলাম জানান, এসব অনিয়মের ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হলেও কোনো কাজ হচ্ছে না। কারা কীভাবে এগুলো করছে তা তিনি জানেন না বলে উল্লেখ করেন।
উত্তর কদমতলা গ্রামের মো. দেলোয়ার হোসেন শরণখোলা প্রেসক্লাবে গত ২৫ ডিসেম্বর সংবাদ সম্মেলন করে জানান, তাদের গ্রামে সিডরে ক্ষতিগ্রস্ত হিসেবে এরই মধ্যে বিভিন্ন সংস্থার মাধ্যমে যারা ঘরসহ অন্যান্য সহায়তা পেয়েছেন সংশ্লিষ্টদের যোগসাজশে তারাই এখন ভারত সরকারের অনুদানে দেয়া ঘর পাচ্ছেন। তিনি জানান, তার এলাকার আফজাল মোল্লা, রতি কান্ত, খোকন তালুকদার, দেলোয়ার ব্র্যাক থেকে এবং আব্বাস তালুকদার, ফরিদা বেগম কেয়ার বাংলাদেশের অনুদানে ত্রাণের ঘর পেয়েছেন, তারাই আবার ভারতের দেয়া অনুদানের ঘরও পেয়েছেন। অথচ তিনিসহ অনেকেই সিডরে গৃহহীন হয়ে এখনও মানবেতর জীবনযাপন করছেন।
এছাড়া ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধেও রয়েছে নানা দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ। রাজৈর গ্রামের ৬৫ বছরের বৃদ্ধা আনোয়ারা বেগম জানান, তিনি ঘর পেলেও ঠিকাদার কর্তৃপক্ষ অপারগতা প্রকাশ করায় বাধ্য হয়ে নিজেই ভিত করার জন্য মাটি কেটেছেন। আনোয়ারার মতো ওই গ্রামের আলেয়া বেগম, পারুল বেগম, দুলাল হাওলাদার, আবুল ফরাজী, আ. রহিমসহ সবার একই অভিযোগ। এছাড়া নিম্নমানের নির্মাণসামগ্রী দিয়ে ঘরের কাজ করা হচ্ছে। ঠিকাদারের লোকজন ক্ষমতাসীন দলের প্রভাবশলী ব্যক্তি হওয়ায় এসবের বিরুদ্ধে কথা বলারও সাহস করে না সুবিধাভোগীরা।
এব্যাপারে উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান সাইফুল ইসলাম খোকন জানান, এসব অনিয়ম ও দুর্নীতির বিষয়ে সমন্বয় কমিটির মাসিক সভায় একাধিকবার উপস্থাপন করা হলেও কোনো কাজ হয়নি। ২৭ ডিসেম্বর ফের সমন্বয় কমিটির সভায় রেজুলেশন করা হয়েছে বলে তিনি জানান।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ভারতীয় দূতাবাসের নিয়োগকৃত ইন্ডিয়ান ইঞ্জিনিয়ারিং কনসালটিং (প্রা.) লিমিটেডের মাধ্যমে শরণখোলায় ১ হাজার ৪০০ এবং মোরেলগঞ্জ উপজেলায় ১ হাজার ৪০০ ত্রাণের ঘর নির্মাণের জন্য ৪টি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কাজ পায়। এরমধ্যে মিজান কনস্ট্রাকশন ও হোসেন কনস্ট্রাকশনকে শরণখোলায় এবং ভোস্ট কনস্ট্রাকশন ও প্রিয়া কনস্ট্রাকশনকে মোরেলগঞ্জে কার্যাদেশ দেয়া হয়। এসব ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান তাদের কাজ নির্বিঘ্নে করার জন্য স্থানীয় ক্ষমতাসীন দলের কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তিকে সাব-কন্ট্রাক্ট দেয়। ফলে তারা অধিক লাভের আশায় ক্ষমতার প্রভাব খাটিয়ে নিজেদের ইচ্ছেমত কাজ করে যাচ্ছেন। এদিকে ভারতীয় দূতাবাসের নিয়োগকৃত এ প্রকল্পের তদারকি সংস্থা ইন্ডিয়ান ইঞ্জিনিয়ারিং কনসালটিং (প্রা.) লিমিটেডের ব্যবস্থাপক আ. মাজেদ চৌধুরী এবং ইপিসির ইঞ্জিনিয়ার ফয়েজউদ্দিন ও শঙ্কর কুমার গত ২৬ ডিসেম্বর প্রকল্প এলাকা ঘুরে নিম্নমানের নির্মাণসামগ্রী দেখে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন

টেন্ডার কমিটিকে পাশ কাটিয়ে ১৪ কোটি টাকার কাজ দেয়ার অভিযোগ

রাজশাহী অফিস

রাজশাহীতে পদ্মার বামতীর সংরক্ষণ ও পুনর্বাসন প্রকল্পের ১৪ কোটি টাকার কাজ অস্বাভাবিক নিম্ন দরদাতা প্রতিষ্ঠানকে দেয়ার সিদ্ধান্তের অভিযোগ উঠেছে। এ ক্ষেত্রে দরপত্র মূল্যায়ন কমিটির মতামত উপেক্ষা করা হয়েছে বলেও অভিযোগে প্রকাশ। অস্বাভাবিক নিম্ন দর ও অস্বচ্ছ মূল্য ধারণার কারণে কাজের মান খারাপ হবে—এমন মতামত দিয়ে সমন্বিত দ্বিতীয় শহর বন্যা প্রতিরোধ প্রকল্প-২-এর আওতায় রাজশাহীতে পদ্মার বামতীর সংরক্ষণ ও পুনর্বাসন প্রকল্পের এ কাজটির জন্য পুনঃদরপত্র আহ্বানের সুপারিশ করেছিল দরপত্র মূল্যায়ন কমিটি। কিন্তু এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) ঢাকা অফিস থেকে অগ্রহণযোগ্য দরদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোকে কার্যাদেশ দেয়ার নির্দেশ পাঠানো হয়েছে বলে জানা গেছে। এদিকে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর একটির বিরুদ্ধে ২০০৪ সালে রাজশাহী পানি উন্নয়ন বোর্ডে ব্যাপক সন্ত্রাস সৃষ্টির অভিযোগও রয়েছে। এ কারণে একাধিক প্রতিষ্ঠানের পক্ষে অভিযোগও দেয়া হয়েছে প্রকল্প পরিচালকের কাছে।
এ প্রসঙ্গে প্রকল্প পরিচালক সাইদুর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, প্রকল্পের আওতায় রাজশাহী শহর রক্ষাবাঁধের পুনর্বাসনে গৃহীত তিনটি প্যাকেজের দরপত্র মূল্যায়নে গঠিত বিশেষজ্ঞ কমিটি সর্বনিম্ন দরদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর উদ্ধৃত দরকে অস্বাভাবিক ও অস্বচ্ছ উল্লেখ করে এডিবি কর্তৃপক্ষের কাছে পুনঃদরপত্র আহ্বানের অনুমতি চেয়ে সুপারিশ করেছিল। মূল্যায়ন কমিটির সুপারিশ প্রতিবেদনটি উপেক্ষা করে সম্প্রতি এডিবির ঢাকা অফিস থেকে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোকে কার্যাদেশ দেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। তিনি আরও বলেন, যেহেতু এ প্রকল্পের টাকা এডিবি দিচ্ছে তাই তাদের নির্দেশ আমাদের মানতে হচ্ছে। প্রকল্প পরিচালক স্বীকার করেন, অস্বাভাবিক নিম্ন দরে প্রতিষ্ঠানগুলো কীভাবে কাজ সম্পন্ন করবে—এ প্রশ্ন আমাদেরও। তবে প্রতিষ্ঠানগুলোর দরপত্রে উদ্ধৃত কাজের মূল্যের শতকরা ৪০ ভাগ টাকা পানি উন্নয়ন বোর্ডের কাছে অগ্রিম জমা দিতে রাজি হয়েছে। কাজের মান খারাপ হলে তাদের জামানত বাজেয়াপ্ত হবে। তিনি এও মনে করেন, এ কৌশলই কাজের মান নিশ্চিতের একমাত্র শর্ত নয়।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, গত সেপ্টেম্বরে মূল প্রকল্পের আওতায় রাজশাহী শহর রক্ষাবাঁধের তিনটি গ্রোয়েন টি-বাঁধ সংস্কার ও পদ্মার বামতীর সংরক্ষণে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের অর্থ সহায়তায় গৃহীত তিনটি প্যাকেজের দরপত্র আহ্বান করা হয়। ১৯ সেপ্টেম্বর তিনটি প্যাকেজের দরপত্র দাখিলের শেষদিনে ৫০টি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান দরপত্র জমা দেয়। রাজশাহী পানি উন্নয়ন বোর্ডের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মাহাতাব উদ্দিনকে প্রধান করে দরপত্রগুলো মূল্যায়নে ৬ সদস্যবিশিষ্ট একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি করা হয়। কমিটি দরপত্রগুলোতে উদ্ধৃত দর ও শর্ত বিশ্লেষণ করে ২৫ নভেম্বর একটি মূল্যায়ন প্রতিবেদন প্রকল্প পরিচালকের দফতরে পাঠান।
টেন্ডার মূল্যায়ন কমিটির মূল্যায়ন প্রতিবেদনের শেষে তাদের সুপারিশ বা অভিমত স্পষ্টভাবে তুলে ধরেন। এতে বলা হয়, উদ্ধৃত এবং দেয় দরের মধ্যে বিস্তর পার্থক্য থাকায় প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নের সময় কাজের মান খারাপ হতে পারে এবং এতে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে বিরোধ সৃষ্টি হতে পারে। সে ক্ষেত্রে এ ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা এড়াতে প্যাকেজগুলোর পুনঃদরপত্র আহ্বানই যুক্তিযুক্ত। তারা এ অভিমত দেন সরকারি সংশোধিত সংগ্রহ নীতিমালা-২০১০-এর আলোকে।
দরপত্র মূল্যায়ন কমিটির সভাপতি পাউবোর তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মাহাতাব উদ্দিন বলেন, আমরা দরপত্রগুলো মূল্যায়ন করে একটি প্রতিবেদনে কাজগুলোর জন্য পুনঃদরপত্র আহ্বানের সুপারিশ দিয়েছিলাম। এডিবির উপদেষ্টারাও আমাদের মতামতের সঙ্গে একমত ছিলেন। আমরা মনে করি, উদ্ধৃত ও দেয় দরের মধ্যে যথেষ্ট পার্থক্য হয়েছে। এত বেশি নিম্ন দরে এসব কাজের গুণগতমান সংরক্ষণ সম্ভব নয়। বিদেশি অনুদানের কাজে দরের চেয়ে মাননিয়ন্ত্রণকে বেশি গুরুত্ব দিয়ে দেখা হয়। কাজের গুণগত মান এখানে অধিক বিবেচ্য। তাই পুনঃদরপত্র আহ্বান করা উচিত ছিল।
খোঁজ নিয়ে আরও জানা যায়, প্রকল্পের আওতায় প্যাকেজ নং-১৫-এর দরপত্র মূল্য ৬ কোটি ৩৭ লাখ ১ হাজার ৪২৬ টাকা। এ দরের বিপরীতে মেসার্স র্যাব-এমই-এবি নামে একটি প্রতিষ্ঠান ৪ কোটি ৭৩ লাখ ৬৮ হাজার টাকা দর উদ্ধৃত করেছে। প্রতিষ্ঠানটি শতকরা ২৫ দশমিক ৬৪ ভাগ নিম্ন দর দিয়ে তালিকায় সর্বনিম্ন দরদাতা হয়েছে। প্যাকেজ নং-১৬-এর মূল্য ৩ কোটি ১৮ লাখ ২৮ হাজার ৭৬৯ টাকা। এ প্যাকেজের সর্বনিম্ন দরদাতা মেসার্স নিমিতি-কেএসএ শতকরা ২৬ ভাগ নিম্ন দর দিয়ে ২ কোটি ৩৩ লাখ ৭৭ হাজার টাকা দর উদ্ধৃত করেছে। প্যাকেজ নং-১৭-এর মূল্য ৩ কোটি ৫৩ লাখ ৬৪ হাজার ৩৮২ টাকা। এ প্যাকেজের সর্বনিম্ন দরদাতা মেসার্স আলম শতকরা ২৮ দশমিক ২৫ ভাগ নিম্ন দর দিয়ে ২ কোটি ৫৩ লাখ ৭২ হাজার ৬৯৬ টাকা দর উল্লেখ করেছে।
এ তিনটি প্যাকেজে অংশগ্রহণকারী নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি অভিযোগ করে বলেন, প্যাকেজ নং-১৫-এর নিম্ন দরদাতা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে ২০০৪ সালের ২২ এপ্রিল রাজশাহী পাউবোতে ব্যাপক ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগের পর বিপুল পরিমাণ কাগজপত্র পুকুরে নিক্ষেপ করে বিনষ্টের অভিযোগ রয়েছে। বিগত দিনে এরাই পাউবোতে সন্ত্রাস করে টেন্ডার বাগিয়ে নিত। এরাই প্রকল্প পরিচালককে ফোনে হুমকি দিয়ে কাজ তাদেরই দেয়ার জন্য চাপ দিচ্ছে বলে অভিযোগে জানা গেছে।
এ ব্যাপারে পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী ও টেন্ডার মূল্যায়ন কমিটির সদস্য সচিব নিজামুল হক ভূঁইয়া বলেন, আলোচিত প্যাকেজগুলোর পুনঃদরপত্র আহ্বানের সিদ্ধান্ত ছিল কমিটির। প্রথমদিকে এডিবি কমিটির মতামতের সঙ্গে একমত ছিল। কিন্তু পরে সর্বনিম্ন দরদাতাদের কার্যাদেশ দেয়ার কথা বলেছেন তারা। তবে তিনি জানান, এখনও এডিবির লিখিত নির্দেশ রাজশাহীতে আমাদের কাছে পৌঁছেনি।
এ ব্যাপারে রাজশাহী-২ সদর আসনের সংসদ সদস্য ফজলে হোসেন বাদশা সাংবাদিকদের বলেন, এর আগেও সন্ত্রাস করে কিছু লোক ঠিকাদারি কাজ নিয়ে যেনতেন করে কাজ শেষ করেছেন। এতে সরকারের কোটি কোটি টাকা অপচয় ও ক্ষতি হয়েছে। অস্বাভাবিক নিম্ন দরে কাজ দিলে কাজের মান খারাপ হবে, অতীতে এমন নজির অনেক আছে। ভালো প্রতিষ্ঠান নিয়োগ করে এসব কাজ সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করার জন্য তিনি সংশ্লিষ্টদের প্রতি আহ্বান জানান।

Wednesday 29 December 2010

টিআইবির রিপোর্ট তথ্যভিত্তিক ও বাস্তবসম্মত : দুদক চেয়ারম্যান

স্টাফ রিপোর্টার

বিচার বিভাগের দুর্নীতি নিয়ে প্রকাশিত রিপোর্টকে তথ্যভিত্তিক ও বাস্তবসম্মত বলে অভিহিত করে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চেয়ারম্যান গোলাম রহমান বলেছেন, এ প্রতিবেদনে অতিরঞ্জিত কিছু করা হয়নি। দেশের সব বিচারক দুর্নীতিবাজ নন। তবে কিছু কিছু বিচারক আদালতের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের সঙ্গে মিলে দুর্নীতিতে লিপ্ত এটা ঠিক। বিচারক ও বিচার বিভাগের এসব দুর্নীতি নিয়ে এর আগেও প্রধান বিচারপতিসহ অনেক বিশিষ্ট নাগরিক বলেছেন। গোলাম রহমান গতকাল স্যাটেলাইট টেলিভিশন এটিএন বাংলাকে দেয়া এক একান্ত সাক্ষাত্কারে এসব কথা বলেন।
উল্লেখ্য, ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) গত ২৩ ডিসেম্বর তাদের খানা জরিপ রিপোর্ট প্রকাশ করে। এতে সেবাখাতগুলোর মধ্যে দেশের বিচার বিভাগকে সর্বাধিক দুর্নীতিগ্রস্ত হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। টিআইবির এ রিপোর্টের ব্যাপারে কয়েকটি দৈনিক পত্রিকা জনমত জরিপ চালায়। তাতে ৯৫ ভাগ মানুষ টিআইবির এ রিপোর্ট সঠিক ও বাস্তবসম্মত বলে তাদের অভিমত ব্যক্ত করেছেন।
টিআইবির এ রিপোর্ট সম্পর্কে দুদক চেয়ারম্যান গোলাম রহমান আরও বলেন, রিপোর্টে আমার কাছে অতিরঞ্জিত কিছু হয়েছে বলে মনে হয়নি। দুর্নীতি ও বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগে বিচারকসহ বিচার কাজের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অনেকেই শাস্তিমূলক ব্যবস্থার মুখোমুখি হচ্ছেন। অনেকে চাকরিচ্যুত হচ্ছেন। কোনো কোনো বিচারক পেশকারের কাছ থেকে তোলা নিয়ে থাকেন—এটা প্রধান বিচারপতিই আক্ষেপ করে বলেছেন। কাজেই বিচার বিভাগের দুর্নীতি নিয়ে কথা বলা যাবে না, এটা ঠিক নয়, যা সঠিক ও বাস্তবসম্মত সেটাই করেছে টিআইবি।

৫২ শতাংশ এমপি ব্যবসায়ী বলে দুর্নীতি বাড়ছে : টিআইবি

স্টাফ রিপোর্টার

বর্তমান জাতীয় সংসদের ৫২ শতাংশ সংসদ সদস্য ব্যবসার সঙ্গে জড়িত থাকায় বেসরকারি খাতে দিন দিন দুর্নীতি বাড়ছে। রাজনীতিকরা প্রভাব খাটিয়ে বেসরকারি খাতকে দুর্নীতিগ্রস্ত করে ফেলছেন। ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান এসব তথ্য জানান।
তিনি বলেন, ২০০৬ সাল থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত দুর্নীতির পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, মোট দুর্নীতির ১৯ শতাংশ হয় বেসরকারি খাতে। দুর্নীতির হারের দিক থেকে এটি দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। এরপর রয়েছে রাজনীতি। তবে ব্যবসা খাতের দুর্নীতির সঙ্গে রাজনীতির একটি যোগসূত্র রয়েছে।গতকাল দুপুরে বাংলাদেশ এন্টারপ্রাইজ ইনস্টিটিউট (বিইআই) মিলনায়তনে ‘ইউনাইটেড নেশন গ্লোবাল কম্পেক্ট প্রিন্সিপাল অন এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড এন্টিকরাপশন’ শীর্ষক গোলটেবিল আলোচনায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন তিনি। টিআইবি নির্বাহী পরিচালক বলেন,
বেসরকারি খাতকে দুর্নীতিমুক্ত করতে হলে কোম্পানিগুলোর স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা ও নিরীক্ষা অবশ্যই প্রয়োজন। দুর্নীতি দমন কমিশন, কর কর্তৃপক্ষ ও অর্থ নিয়ন্ত্রণকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে দক্ষতার সঙ্গে বেসরকারি খাতকে পর্যবেক্ষণ করতে হবে।
বিইআই সভাপতি ফারুক সোবহানের সভাপতিত্বে গোলটেবিল আলোচনায় অংশ নেন ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির উপাচার্য বিশিষ্ট পানিবিশেষজ্ঞ আইনুন নিশাত, মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক শাহীন আনাম, কম্পট্রোলার অ্যান্ড অডিটর জেনারেল আহমেদ আতাউল হাকিম, প্রধান তথ্য কমিশনার মোহাম্মদ জমির ও বাংলাদেশে নিযুক্ত ড্যানিশ রাষ্ট্রদূত সেন্ট ওলিং।

১৯ কোটি ৪৭ লাখ টাকা আত্মসাতের প্রমাণ মিলেছে : বিআইডব্লিউটিএ’র কর্মচারীদের আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণা

কাজী জেবেল

বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দলীয় বীমা ট্রাস্ট (সিপিএফ) ও প্রভিডেন্ট ফান্ডের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থেকে জালিয়াতির মাধ্যমে ১৯ কোটি ৪৭ লাখ টাকা আত্মসাতের প্রমাণ পেয়েছে তদন্ত কমিটি। টাকা আত্মসাতের দায়ে প্রধান অভিযুক্ত আবদুস সালাম খান এখনও ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়েছেন। এ ঘটনায় ৫ কর্মকর্তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হলে তাদের মধ্যে চারজন আদালতের রায় নিয়ে কর্মস্থলে পুনর্বহাল হয়েছেন। এ অবস্থায় টাকা উদ্ধার ও দোষীদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়ার দাবিতে আন্দোলনে নেমেছেন কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। এ ব্যাপারে তারা ৭ দিনের আলটিমেটাম দিয়েছেন। পাশাপাশি কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণাও দিয়েছেন। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ খবর পাওয়া গেছে।
সূত্র জানায়, টাকা আত্মসাতের ঘটনা গত ২৯ নভেম্বর ফাঁস হয়। এরপর আত্মসাত্কৃত টাকা উদ্ধার ও দোষীদের গ্রেফতার না করায় কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। তারা একাধিকবার সংস্থার চেয়ারম্যান আবদুল মালেক মিয়ার সঙ্গে বৈঠক করে ত্বরিত পদক্ষেপ নেয়ার দাবি জানিয়ে আসছেন। ঘটনা ফাঁস হওয়ার প্রায় এক মাস হতে চললেও যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না—এমন অভিযোগ করছেন সংস্থাটির একাধিক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা। এরই মধ্যে বিআইডব্লিউটিএ অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশন, বিআইডব্লিউটিএ এমপ্লয়িজ ইউনিয়ন, ফ্লোটিং ওয়ার্কার্স ইউনিয়ন, মাস্টার পাইলট ও স্টাফ ইউনিয়ন নেতারা বৈঠক করে দাবি আদায়ের লক্ষ্যে সংগ্রাম পরিষদ গঠন করেছেন। এ কমিটি গতকাল প্রতিবাদ সমাবেশ ও নৌমন্ত্রী শাজাহান খানের কাছে স্মারকলিপি পেশ করেছে। একইসঙ্গে ৭ দিনের আলটিমেটাম দিয়েছে। পাশাপাশি কালো ব্যাজ ধারণ, অবস্থান ধর্মঘট, মানববন্ধন কর্মসূচি পালন এবং সংবাদ সম্মেলনের মতো কর্মসূচি পালনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
সংগ্রাম পরিষদ আহ্বায়ক ও বিআইডব্লিউটিএ অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশন সভাপতি মো. মাহবুবুল আলম আমার দেশকে বলেন, কোটি কোটি টাকা আত্মসাতের ঘটনায় ঊর্ধ্বতন প্রশাসন যথাযথ পদক্ষেপ না নেয়ায় কর্মকর্তা-কর্মচারীরা আন্দোলনে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তছরুপকৃত টাকা উদ্ধার, তহবিল পুনর্ভরণ ও দায়ী ব্যক্তিদের চিহ্নিত করে শাস্তি না দেয়া পর্যন্ত কর্মসূচি চলবে। বিআইডব্লিউটিএ এমপ্লয়িজ ইউনিয়ন সভাপতি ও সংগ্রাম পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক আবদুর রাজ্জাক বলেন, টাকা আত্মসাতের ঘটনায় আমাদেরকে অন্ধকারে রাখা হয়েছে। কর্তৃপক্ষ আমাদের কিছুই জানাচ্ছে না। সংস্থার চেয়ারম্যানের কাছে বীমা ট্রাস্টি বোর্ডে জমাকৃত কর্মচারীদের টাকা যে কোনো ফান্ড থেকে জমা দেয়ার কথা জানিয়েছি। তিনি দাবি না মানা পর্যন্ত আন্দোলন চলবে।
সূত্র আরও জানায়, এ ঘটনায় কর্মকর্তা-কর্মচারীদের তোপের মুখে রয়েছেন চেয়ারম্যান আবদুল মালেক মিয়া। ঘটনার সুষ্ঠু বিচার ও টাকা ফেরত চেয়ে ১৩ ডিসেম্বর দুপুরে বিআইডব্লিউটিএ এমপ্লয়িজ ইউনিয়ন বিক্ষোভ করেছে। এসময় কয়েকশ’ কর্মচারী চতুর্থ তলায় অবস্থিত চেয়ারম্যানের দফতরে হামলা চালায় এবং চেয়ারম্যানকে কিছু সময় অবরুদ্ধ করে রাখা হয়। অবস্থা বেগতিক দেখে চেয়ারম্যান আবদুল মালেক মিয়া পুলিশ ডাকেন। ওইদিন বিকালে তিনি কর্মচারীদের সঙ্গে বৈঠকে বসলে আবারও তোপের মুখে পড়েন তিনি। বৈঠকে কর্মচারীরা যে কোনো উপায়ে তাদের বীমা তহবিলের টাকা ফান্ডে গচ্ছিত করার দাবি জানান।
বিআইডব্লিউটিএ’র কর্মকর্তা-কর্মচারীরা জানান, অন্যান্য মন্ত্রণালয় ও অধিদফতরের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মতো চাকরি শেষ হওয়ার পর তারা অবসর ভাতা পান না। চাকরি থাকাকালে তাদের বেতন থেকে ১০ ভাগ এবং বেতনের বাইরে বিআইডব্লিউটিএ থেকে ১০ ভাগসহ মোট ২০ ভাগ সিপিএফে জমা হবে। কর্মকর্তা-কর্মচারী অবসরে যাওয়ার সময় গ্রুপ বীমা ট্রাস্টি ফান্ড থেকে যত বছর চাকরি করেছেন, তত বছরের প্রতি মাসের বেসিকের দ্বিগুণ হিসেবে টাকা পেয়ে থাকেন। এছাড়া অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা-কর্মচারীরা গ্র্যাচুইটি পান। প্রভিডেন্ট ফান্ডের টাকা কর্মকর্তা-কর্মচারীদের শেষ জীবনে বেঁচে থাকার একমাত্র সম্বল। কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ফান্ডের টাকা আত্মসাত্ করা হলেও কর্তৃপক্ষ যথাযথ পদক্ষেপ নিচ্ছে না।
এদিকে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দলীয় বীমা ট্রাস্ট (সিপিএফ) ও প্রভিডেন্ট ফান্ডের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থেকে জালিয়াতির মাধ্যমে ১৯ কোটি ৪৭ লাখ টাকা আত্মসাতের প্রমাণ পেয়েছে তদন্ত কমিটি। বিআইডব্লিউটিএ পরিচালক (নিরীক্ষা) মো. ছিদ্দিকুর রহমানকে আহ্বায়ক করে ৪ সদস্যের তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে এ টাকা আত্মসাত্ করা হয় বলে উল্লেখ করা হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চেক জালিয়াতির মাধ্যমে বিভিন্ন সময়ে বীমা ট্রাস্টি বোর্ডের টাকা আত্মসাত্ করা হয়েছে। বেশিরভাগ অর্থ উত্তোলন এবং স্থানান্তর হয় গত ২ সেপ্টেম্বর থেকে ২৮ নভেম্বরের মধ্যে। এসময় প্রায় ৯ কোটি টাকা তোলা হয় ব্যাংক থেকে। ট্রাস্টি বোর্ড সভাপতি গোপাল চন্দ্র সাহা এবং কোষাধ্যক্ষ মমিনুল হায়দার খানের স্বাক্ষর জাল করে এসব টাকা তোলা হয়। টাকা আত্মসাতের জন্য তদন্তে সহকারী হিসাব কর্মকর্তা আবদুস সালাম খান ও ব্যাংক ম্যানেজার জাহাঙ্গীর হোসেনসহ কয়েকজনকে দায়ী করা হয়েছে।
এ বিষয়ে কথা বলতে সংস্থার চেয়ারম্যান আবদুল মালেক মিয়ার মোবাইল ফোনে গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত কয়েকবার চেষ্টা করা হলে তিনি কল রিসিভ করেননি।

মহাজোট সরকারের দু’বছর : রাবিতে অর্ধশত সংঘর্ষ, নিহত ৩ : হামলার শিকার ১০ শিক্ষক ৩০ সাংবাদিক : বেপরোয়া চাঁদাবাজি, নিয়োগবাণিজ্য ভিন্নমতাবলম্বী দমন, ছাত্রী লাঞ্ছনা

এরশাদুল বারী কর্ণেল রাবি

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় তার ইতিহাসে সবচেয়ে খারাপ সময় পার করেছে মহাজোট সরকার সমর্থিত বর্তমান প্রশাসনের গত দু’বছরে। বেপরোয়া চাঁদাবাজি, সংঘর্ষ, হত্যা, গণগ্রেফতার, নিয়োগবাণিজ্য, দলীয়করণ, বিশ্ববিদ্যালয় অ্যাক্ট লঙ্ঘন, আদালতের নিষেধাজ্ঞা অমান্যকরণ, ভিন্নমতালম্বী দমন, ছাত্রী ও শিক্ষক লাঞ্ছনা, সাংবাদিক নির্যাতন, প্রেসক্লাবে হামলা এমন কোনো ঘটনা পাওয়া যাবে না যা গত দু’বছরে ঘটেনি। ২০০৯ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি মহাজোট সরকার সমর্থিত ভিসি প্রফেসর এম আবদুস সোবহান ও প্রোভিসি প্রফেসর মুহম্মদ নুরুল্লাহর নেতৃত্বে বর্তমান প্রশাসনের দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে গত দু’বছরে অর্ধশতাধিক ছাত্র সংঘর্ষের ঘটনায় প্রাণ দিতে হয়েছে ৩ মেধাবী ছাত্রকে। গ্রেফতার হয়েছে পাঁচ শতাধিক ছাত্র। এসব ঘটনায় ক্যাম্পাস বন্ধ থেকেছে শতাধিক দিন। নিয়োগ দেয়া হয়েছে ১৮৫ দলীয় শিক্ষককে। ছাত্রলীগের আক্রমণের শিকার হয়েছে অসংখ্য ছাত্রছাত্রী, ১০
শিক্ষক ও কমপক্ষে ৩০ সাংবাদিক। বন্ধ করে দেয়া হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রেসক্লাব। কোনো কোনো ঘটনায় ছাত্রলীগের পাশাপাশি প্রশাসন ও প্রক্টরিয়াল বডির জড়িত থাকারও প্রমাণ পাওয়া গেছে। এসব অপরাধমূলক ঘটনার অধিকাংশেই অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা না নেয়ায় ঘটনাগুলোর পুনরাবৃত্তি ঘটে চলেছে।
সূত্রমতে, ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বরের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার ক্ষমতায় আসার পর ২৪ ফেব্রুয়ারি সাময়িকভাবে দায়িত্বপ্রাপ্ত ভিসি প্রফেসর ড. মামনুনুল কেরামতকে অব্যাহতি দিয়ে বঙ্গবন্ধু পরিষদের সাধারণ সম্পাদক প্রফেসর এম আবদুস সোবহানকে ভিসির দায়িত্ব দেয়া হয়। একইদিন মনোবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক ও প্রগতিশীল শিক্ষক গ্রুপের সক্রিয় সদস্য প্রফেসর মুহম্মদ নুরুল্লাহকে প্রোভিসি হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়। ২৬ ফেব্রুয়ারি ভিসি-প্রোভিসির দায়িত্ব গ্রহণের পর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসে শুরু হয় দলীয়করণের নজিরবিহীন দৃষ্টান্ত। প্রশাসনিক সবগুলো পদে নিজেদের পছন্দের লোককে বসিয়ে পুরো প্রশাসন ঢেলে সাজানো হয়। এ প্রক্রিয়ায় দুই শতাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারীকে বদলি এবং অধিকাংশ হল প্রাধ্যক্ষদের ডেকে পদত্যাগের চাপ সৃষ্টি করা হয়। অব্যাহতি দেয়া হয় জোরপূর্বক।
সংঘর্ষে নিহত, গ্রেফতার, ক্যাম্পাস বন্ধ : গত দু’বছরে ছাত্রলীগের সঙ্গে ছাত্রশিবির ও ছাত্রদলের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে ৮ থেকে ১০ বার। অন্যদিকে শুধু ছাত্রলীগের নিজেদের মধ্যেই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে ৩৫ থেকে ৪০ বার। ২০০৯ সালের ১৩ মার্চ ছাত্রলীগ-শিবিরের মধ্যকার সংঘর্ষে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা শিবিরের রাবি শাখার সাধারণ সম্পাদক শরীফুজ্জামান নোমানীকে প্রকাশ্যে পুলিশের সামনে কুপিয়ে হত্যা করে। ওই ঘটনায় উভয় সংগঠনের কমপক্ষে অর্ধশতাধিক নেতাকর্মী আহত হয়। ঘটনার দিনই পরিস্থিতি শান্ত করতে অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ করে দেয়া হয় ক্যাম্পাস। তারই সূত্র ধরে বন্ধ হয়ে যায় রাজশাহী মহানগরীর প্রায় সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। এর আগে ১১ মার্চ রাতে আবাসিক হলগুলো থেকে শতাধিক শিবির নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করে পুলিশ। চলতি বছর ৮ ফেব্রুয়ারি গভীর রাতে ছাত্রলীগ-শিবির ও পুলিশের ত্রিমুখী সংঘর্ষে নিহত হয় ছাত্রলীগ কর্মী ফারুক হোসেন। ফারুক হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় জাতীয় রাজনীতিতে ব্যাপক প্রভাব পড়ে। সরকারের নির্দেশে চিরুনি অভিযান শুরু হলে সারাদেশে কমপক্ষে দেড় হাজারের বেশি জামায়াত-শিবির নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করা হয়। ঘটনার পর শিবির নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে ১৪টি মামলা দায়ের হলে তার আত্মগোপন করে। ওই ঘটনায় রাবিতেই কমপক্ষে চার শতাধিক শিবির নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করা হয়।
১৫ আগস্ট শোক দিবসের টোকেন ভাগাভাগিকে কেন্দ্র করে শাহ মখদুম হলের দোতলা ছাদ থেকে ছাত্রলীগ কর্মী নাসিমকে ফেলে দেয় দলটির সভাপতি গ্রুপের কর্মীরা। ৯ দিন মুমূর্ষু অবস্থায় ঢামেকে চিকিত্সাধীন থাকার পর ২৩ আগস্ট নাসিমের মৃত্যু হয়।
হলে সিট দখল, লুটপাট ও চাঁদাবাজি : ৮ ফেব্রুয়ারির রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের ঘটনার পর থেকে আবাসিক হলগুলোতে সিট দখল, লুটপাট ও সাধারণ শিক্ষার্থীদের কাছে ব্যাপক চাঁদাবাজি শুরু করে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। আধিপত্য বিস্তার, চাঁদাবাজি ও মারধরের কারণে পাঁচ শতাধিক সাধারণ শিক্ষার্থী আতঙ্কে হলের আবাসিকতা বাতিল করে ক্যাম্পাসের বাইরে মেসগুলোতে অবস্থান নেয়। ছাত্রলীগের চাঁদাবাজির শিকার হয়েছেন এমন তালিকার মধ্যে রয়েছেন শিক্ষক, সাংবাদিক, সাধারণ শিক্ষার্থী, ক্যাম্পাসের ব্যবসায়ী ছাড়াও খোদ ছাত্রলীগের কর্মীরাও।
আক্রমণের শিকার শিক্ষার্থী, ১০ শিক্ষক, ৩০ সাংবাদিক ও প্রেসক্লাব : চাঁদাবাজি, অবৈধ সিট দখল ও পরীক্ষার হলে বিশৃঙ্খলার ঘটনায় ছাত্রলীগের হাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর, হল প্রাধ্যক্ষসহ লাঞ্ছিত হয়েছেন অসংখ্য শিক্ষার্থী, ১০ শিক্ষক এবং অন্তত ৩০ সাংবাদিক। গত বছরের ৩০ ডিসেম্বর চাঁদাবাজির সময় বাধাদানের ঘটনায় রাবি ছাত্রলীগের উপগণশিক্ষা সম্পাদক এমদাদুল হক কর্তৃক ফোকলোর বিভাগের আওয়ামীপন্থী শিক্ষক ড. অনুপম হিরা মণ্ডল প্রহৃত হন। ৭ এপ্রিল ছাত্রলীগের অবৈধ সিট দখলে বাধা দিতে গিয়ে ছাত্রলীগ সভাপতিসহ নেতাকর্মীদের হাতে প্রহৃত হন শহীদ শামসুজ্জোহা হল প্রাধ্যক্ষ ড. মর্তুজা খালেদ। একাধিকবার ছাত্রলীগের হাতে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত হন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর প্রফেসর চৌধুরী মো. জাকারিয়া। ১০ জানুয়ারি ছাত্রলীগ ক্যাডাররা অনলাইন সংবাদ সংস্থা রেডটাইমস বিডি ডটকমের সাংবাদিক মুনছুর আলী সৈকতকে পিটিয়ে আহত করে। ১১ ফেব্রুয়ারি পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে গেলে ছাত্রলীগের হামলার শিকার হন চ্যানেল আইযের বিশেষ প্রতিনিধি মোস্তফা মল্লিক, ক্যামেরাম্যান মইন, আমার দেশ-এর রাজশাহী ফটোসাংবাদিক আসাদুজ্জামান আসাদ, প্রথম আলোর আজহার উদ্দিন, নিউ এজের সৌমিত্র মজুমদার, কালের কণ্ঠের নজরুল ইসলাম জুলু, সানশাইনের রুনি, জনকণ্ঠের রাবি প্রতিনিধি শহিদুল ইসলাম, যুগান্তরের সায়েম সাবু ও দি এডিটরের আতিকুর রহমান তমাল। এ ছাড়া ছাত্রলীগ কর্মীরা দৈনিক ইনকিলাব প্রতিনিধি সামসুল আরেফিন হিমেল, বাংলাবাজার পত্রিকার শাহজাহান বিশ্বাস, শীর্ষনিউজের লুত্ফর রহমান, যুগান্তরের সায়েম সাবু, ডেসটিনির আবদুর রাজ্জাক সুমন, বাংলাদেশ টুডের আওরঙ্গজেব সোহেল, আরটিএনএনের এসএম সাগরকে মারধর ও লাঞ্ছিত করে।
সাংবাদিক নির্যাতন ও নিপীড়নের সবচেয়ে বড় নিদর্শন সৃষ্টি হয় গত বছরের ২৪ এপ্রিল। ওইদিন প্রক্টর তাদের দলীয় ক্যাডারদের সঙ্গে নিয়ে সাংবাদিকদের প্রেসক্লাব সিলগালা করে দেন। এ ঘটনায় এখনও প্রেসক্লাব বন্ধ রয়েছে।
১৮৫ জন দলীয় শিক্ষক নিয়োগ : গত দু’বছরে আওয়ামীপন্থী শিক্ষকদের সাংগঠনিক অবস্থান মজবুত করতে বিশ্ববিদ্যালয়ে দলীয় শিক্ষক নিয়োগের মহাযজ্ঞ শুরু হয়। চার শতাধিক দলীয় শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়ার চার ধাপে এ পর্যন্ত ২৯টি বিভাগের বিজ্ঞাপিত ১০০ পদের বিপরীতে ১৮৫ শিক্ষককে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) ২০১০ সাল নাগাদ রাবিতে সব শ্রেণীর নিয়োগের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করলেও ওই নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে এ নিয়োগ দেয়া হয়। এসব নিয়োগের বেলায় বিভাগীয় প্ল্যানিং কমিটি ও সভাপতির সিদ্ধান্ত উপেক্ষা এবং অনেক ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয়ের ’৭৩-এর অ্যাক্ট লঙ্ঘনেরও গুরুতর অভিযোগ ওঠে। মেধাবীদের বাদ দিয়ে তুলনামূলক কম যোগ্য প্রার্থীদের নিয়োগ দেয়া এবং বিজ্ঞাপিত পদের বিপরীতে দ্বিগুণ কোনো কোনো ক্ষেত্রে তিনগুণ দলীয় শিক্ষক নিয়োগ দেয়ায় বিশ্ববিদ্যালয় দীর্ঘমেয়াদি একাডেমিক ঝুঁকিতে পড়ারও আশঙ্কা রয়েছে। ইউজিসির অনুমোদনহীন এসব নিয়োগের ফলে প্রায় ২০ কোটি টাকা ঘাটতিতে পড়ে প্রশাসন। তাছাড়া বর্তমানে আরও সহস্রাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগের প্রক্রিয়া চলছে।

Tuesday 28 December 2010

টিআইবির রিপোর্টে সরকারে তোলপাড় : জনমনে নানা প্রশ্ন

এম এ নোমান

দেশে বিচার বিভাগ শীর্ষ দুর্নীতিগ্রস্ত সেবাখাত হিসেবে টিআইবির (ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ) প্রকাশিত হওয়ার পর সর্বত্র তোলপাড় শুরু হয়েছে। অনেকেই বলছেন বিচার বিভাগ নিয়ে মানুষের মনে এতদিন যে প্রশ্ন তৈরি হয়ে আসছিল টিআইবির রিপোর্টে তা ফুটে উঠেছে। অনেকেই প্রশ্ন তুলছেন বিচার বিভাগ নিয়ে সত্য রিপোর্ট প্রকাশ করায় আমার দেশ সম্পাদক মাহমুদুর রহমানের দণ্ড হয়েছে। আমার দেশ প্রতিবেদক জেল খেটে এসেছেন। এখন দেশের সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত খাত হিসেবে বিচার বিভাগ টিআইবির স্বীকৃতি পেয়েছে। অবশ্য প্রধান বিচারপতি নিজেও সম্প্রতি বলেছেন জেলাজজ আদালতের বিচারকদের বিরুদ্ধে পেশকারের মাধ্যমে ঘুষ লেনদেন করার অভিযোগ রয়েছে। এদিকে টিআইবির প্রকাশিত রিপোর্ট প্রসঙ্গে সরকারের মন্ত্রী ও সরকারদলীয় নেতারা নানা বিরূপ মন্তব্য করছেন। সরকারের মন্ত্রী ও শাসক দলের নেতারা এখন শাক দিয়ে মাছ ঢাকার চেষ্টা করছেন বলেও মন্তব্য করেন অনেকে।
টিআইবির রিপোর্টকে যথাযথ ও বাস্তবভিত্তিক বলে মনে করেন এ সংস্থাটির শীর্ষ কর্মকর্তারা। তাদের মতে, বিচার বিভাগ নিয়ে এর আগে প্রধান বিচারপতি ও জাতীয় মানবাধিকার কমিশন চেয়ারম্যানসহ বিভিন্ন মহল যে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন টিআইবির রিপোর্ট তারই বাস্তব প্রতিফলন মাত্র। বিশিষ্ট নাগরিকরা বলেছেন, টিআইবির প্রতিবেদন বরাবরই সরকারি দল ‘ষড়যন্ত্রের অংশ’ মনে করে প্রত্যাখ্যান করে। আর বিরোধী দল তা গ্রহণ করে। এতেই প্রমাণ হয় টিআইবির রিপোর্ট হচ্ছে বাস্তবভিত্তিক।
টিআইবি গত বৃহস্পতিবার ‘সেবা খাতে দুর্নীতি : জাতীয় খানা জরিপ ২০১০’ শীর্ষক প্রতিবেদন প্রকাশ করে। টিআইবির এ জরিপ অনুযায়ী দেশের বিচার বিভাগ হচ্ছে সর্বাধিক দুর্নীতিগ্রস্ত খাত। এর পরে রয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থা ও ভূমি প্রশাসন। সেবাপ্রার্থী শতকরা ৮৪ ভাগ মানুষই দুর্নীতির শিকার। সেবাপ্রার্থীদের বছরে সাড়ে ৯ হাজার কোটি টাকা ঘুষ দিতে হয়। দেশে দুর্নীতি বেড়েছে ৮৫ শতাংশ। টিআইবির এ জরিপ সম্পর্কে তাত্ক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় দুর্নীতি দমন কমিশন চেয়ারম্যান গোলাম রহমান বলেছেন, দুর্নীতির এ চিত্র সার্বিক নয়। দুর্নীতির ব্যাপকতা এর চেয়ে অনেক বেশি।
বিশিষ্ট নাগরিকদের প্রতিক্রিয়া : সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল ও সুপ্রিমকোর্টের সিনিয়র আইনজীবী ব্যারিস্টার রফিক-উল হক টিআইবির রিপোর্ট সম্পর্কে বলেন, রিপোর্টের যতটুকু অংশ আমি পড়েছি তাতে বিচার বিভাগের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অনুষঙ্গগুলো সম্পর্কে বলা হয়েছে, বিচারপ্রার্থীদের বিভিন্ন স্থানে ঘুষ দিতে হয়। জুডিশিয়াল সার্ভিস সম্পর্কেও বলা হয়েছে। বিচার বিভাগের অনিময় সম্পর্কে টিআইবির রিপোর্টেই শুধু বলা হয়নি, এর আগে বর্তমান প্রধান বিচারপতি, সাবেক প্রধান বিচারপতিসহ অনেকেই বলেছেন। তবে আমি যা বলতে চাই তা হচ্ছে—দেশের মানুষ এখনও বিচার বিভাগকে তাদের শেষ আশ্রয়স্থল হিসেবে মনে করে থাকে। এটাই হচ্ছে বিচার বিভাগের সবচেয়ে বড় ভরসা। বিচার বিভাগের মর্যাদা রক্ষার দায়িত্ব বিচার বিভাগেরই। বিচার বিভাগের মর্যাদা যাতে আর ক্ষুণ্ন না হয়, সেদিকে সংশ্লিষ্ট সবারই নজর দেয়া উচিত।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুল বলেন, টিআইবির রিপোর্টে যে তথ্য দেয়া হয়েছে, বর্তমান প্রধান বিচারপতিসহ দেশের বিশিষ্ট নাগরিকদের অনেকেই এর আগে বিচার বিভাগ নিয়ে তাদের আশঙ্কা ব্যক্ত করে প্রায় একই বক্তব্য দিয়েছেন। টিআইবির রিপোর্ট প্রকাশের দিন দুর্নীতি দমন কমিশনের চেয়ারম্যান গোলাম রহমান রিপোর্ট সম্পর্কে বলেছেন, এ রিপোর্টে যা প্রকাশ হয়েছে, বাস্তবচিত্র আরও ভয়াবহ। দুর্নীতি আরও বেশি ও ব্যাপক। টিআইবির এ রিপোর্ট সম্পর্কে শাসক দলের মন্ত্রী ও নেতারা যেভাবে কথা বলছেন তা দুর্ভাগ্যজনক ও অনভিপ্রেত। তিনি বলেন, টিআইবি এ ধরনের রিপোর্ট এর আগেও দিয়েছে। বরাবরই ক্ষমতাসীনরা এ রিপোর্ট তীব্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে প্রত্যাখ্যান করছে। আর বিরোধী দল তা গ্রহণ করছে। বাস্তব কথা হলো—দুর্নীতি বাড়ছে। দুর্নীতি ও অনিয়ম রোধে কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে না। টিআইবিকে জরিপ চালানো ও রিপোর্ট প্রকাশের ক্ষেত্রে আরও বিজ্ঞানসম্মত পদ্ধতি অনুসরণ করা উচিত।
টিআইবির প্রতিক্রিয়া : টিআইবি ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য অধ্যাপক মোজাফ–র আহমদ ‘সেবাখাতে দুর্নীতি : জাতীয় খানা জরিপ ২০১০’ সম্পর্কে আমার দেশকে বলেন, এটি কোনো মতামত কিংবা মন্তব্য নয়। এটি একটি জরিপের ফলাফল। এ ফলাফলের ভিত্তি নিয়ে যারা প্রশ্ন তুলছেন তাদের উচিত এটি সম্পূর্ণ পড়ে নেয়া। এ জরিপের ফলাফল প্রকাশের সঙ্গে জরিপের পদ্ধতিও উল্লেখ করা হয়েছে। যারা এটি নিয়ে প্রশ্ন উত্থাপন করছেন তারা হয়তো প্রতিবেদনটি এখনও পড়েননি। জরিপ কাজে দক্ষ, অভিজ্ঞ ও বাস্তবভিত্তিক জ্ঞানসম্পন্ন বিশেষজ্ঞ ব্যক্তিরাই জরিপ করেছেন। বিচারপ্রার্থী জনগণের বাস্তব উপলব্ধি প্রকাশ পেয়েছে এ জরিপে। বিচারপ্রার্থীরা বিচারাঙ্গনে গিয়ে যে বাস্তবতার মুখোমুখি হয়েছেন তারই প্রতিফলন ঘটেছে এ জরিপ রিপোর্টে। এটি কোনো টেবিল মেকিং কিংবা কাল্পনিক জরিপ নয়। অধ্যাপক মোজাফ–র বলেন, দেশের বিচার বিভাগ নিয়ে বর্তমান প্রধান বিচারপতি এবিএম খায়রুল হক বিচারকদের এক অনুষ্ঠানে তাদের উদ্দেশে বলেছেন, ‘আপনারা পেশকারদের কাছ থেকে তোলা নেবেন না।’ বিচারকদের সংশোধনের জন্যও তিনি আহ্বান জানিয়েছেন। সাবেক প্রধান বিচারপতি মাহমুদুল আমিন চৌধুরী বিচার বিভাগ সম্পর্কে বলেছেন, বিচার বিভাগ এখন কাচের ঘরে অবস্থান করছে। যে কোনো সময় তা ভেঙে পড়তে পারে। মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান বিচার বিভাগ সম্পর্কে বলেছেন, গরিবদের জন্য ন্যায়বিচার দুরাশা ছাড়া কিছুই নয়। বিচার এখন ধনীদের জন্য। বিচার বিভাগ নিয়ে তাদের এ উদ্বেগ ও উত্কণ্ঠা টিআইবির রিপোর্টের সঙ্গে মিলে গেছে। তাই বলে এটা বলা যাবে না যে, তাদের বক্তব্যে অনুপ্রাণিত হয়ে এ জরিপ হয়েছে। তাদের বক্তব্যের অনেক আগে থেকেই টিআইবি জরিপ কাজ শুরু করেছে। টিআইবির এ জরিপ বাস্তবভিত্তিক। এক প্রশ্নের জবাবে অধ্যাপক মোজাফ–র বলেন, বিচার বিভাগের মর্যাদা ক্ষুণ্ন করা কিংবা অন্য কোনো উদ্দেশে টিআইবি এ জরিপ করেনি। বিচার বিভাগের মর্যাদা রক্ষার দায়িত্ব হচ্ছে বিচার বিভাগের। বিচার বিভাগের সঙ্গে সম্পর্কিতরা যদি তাদের মর্যাদা রক্ষা করতে না চান, সেক্ষেত্রে দেশের সব মানুষ একত্র হয়েও বিচার বিভাগের মর্যাদা রক্ষা করা যাবে না। কাজেই টিআইবির রিপোর্টে বিচার বিভাগের মর্যাদা ক্ষুণ্ন হয়েছে বলে যে অভিযোগ করা হচ্ছে তা সঠিক নয়।
মন্ত্রী ও নেতাদের প্রতিক্রিয়া : গত বৃহস্পতিবার টিআইবির এ রিপোর্ট প্রকাশের পর সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রী ও শাসক দলের নেতারা এর তীব্র সমালোচনা করেন। আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ওবায়দুল কাদের এমপি বলেছেন, বিচার বিভাগ সম্পর্কে টিআইবির রিপোর্ট আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ভূলুণ্ঠিত করেছে। তিনি গতকাল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসিতে বঙ্গবন্ধু সমাজকল্যাণ পরিষদ আয়োজিত আলোচনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে টিআইবির রিপোর্ট সম্পর্কে বলেন, দুর্নীতির বিকাশ ও অস্তিত্ব নিয়ে কোনো প্রশ্ন নেই। কিন্তু টিআইবি যে জরিপ চালিয়েছে তা বাস্তবভিত্তিক নাও হতে পারে। কেননা দেশের ১৬ কোটি লোকের মধ্যে ১৬ হাজার লোকের মতামত গ্রহণ করলে সেখানে সমগ্র জাতির মতামতের সঠিক প্রতিফলন নাও হতে পারে।
আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ বলেছেন, বিচার বিভাগ সম্পর্কে টিআইবি প্রকাশিত রিপোর্ট বিভ্রান্তিকর। এতে বিচার বিভাগের মর্যাদা ক্ষুণ্ন হয়েছে। তিনি গতকাল ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে নবনির্বাচিত কার্যনির্বাহী কমিটির অভিষেক ও শ্রেষ্ঠ রিপোর্ট পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে টিআইবির রিপোর্ট সম্পর্কে এ মন্তব্য করেন। টিআইবি রিপোর্ট সম্পর্কে তিনি আরও বলেন, এ ধরনের রিপোর্ট দেশের জন্য ক্ষতিকর। বিচার বিভাগের দুই-একজনের অসাধুতার জন্য সবার ওপর ঢালাওভাবে দোষ চাপানো ঠিক নয়। এতে গণতান্ত্রিক চর্চা নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
আইন প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম বলেছেন, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রশ্নবিদ্ধ করতেই টিআইবি দুর্নীতিবিষয়ক রিপোর্ট প্রকাশ করেছে। তারা দেশের বিচার বিভাগকে বিতর্কিত, কলঙ্কিত ও প্রশ্নবিদ্ধ করতেই এই মুহূর্তে এ ধরনের প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। এ রিপোর্টের কোনো গ্রহণযোগ্যতা নেই। তিনি গত শুক্রবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত এক আলোচনা সভায় টিআইবির রিপোর্ট সম্পর্কে আরও বলেন, দুর্নীতির রিপোর্ট পেশ করে রাজনীতিবিদদের হেয় করা এখন টিআইবিসহ সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের ফ্যাশন হয়ে দাঁড়িয়েছে। একই অনুষ্ঠানে শিল্পমন্ত্রী দীলিপ বড়ুয়া বলেছেন, টিআইবির প্রতিবেদনে ব্যক্তিবিশেষের দায় পুরো বিচার ব্যবস্থার ওপর যেভাবে চাপানো হয়েছে তা যুক্তিযুক্ত হয়নি। এতে স্বৈরাচার ও সাম্প্রদায়িক শক্তি দেশের জনগণ ও গণতন্ত্রের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করতে উত্সাহিত হবে। টিআইবির রিপোর্টের ভিত্তি সম্পর্কে ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার বেনজির আহমদ সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে বলেছেন, এ রিপোর্ট প্রতিনিধিত্বমূলক কিনা তা খতিয়ে দেখতে হবে। যারা এ রিপোর্ট তৈরির আগে জরিপ করেছেন তাদের পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণ ও দক্ষতা রয়েছে কিনা তাও দেখার বিষয়।
টিআইবির রিপোর্ট প্রত্যাখ্যান করে সুপ্রিমকোর্টের আওয়ামী লীগ সমর্থিত আইনজীবীরা এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, ২৩ ডিসেম্বর টিআইবি বিচার বিভাগ সম্পর্কে যে রিপোর্ট প্রকাশ করেছে তা সঠিক নয়। এ রিপোর্ট যথাযথ হয়নি। বিচার বিভাগ সম্পর্কে ঢালাওভাবে রিপোর্ট প্রকাশ করা হয়েছে। কিন্তু এ রিপোর্টে বিচারক ও বিচার বিভাগের সমস্যা সম্পর্কে কোনো সুপারিশ করা হয়নি। ফলে এ রিপোর্ট গ্রহণযোগ্য নয়। সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতির সহ-সভাপতি অ্যাডভোকেট একেএম ফজলুল হক খান ফরিদ, অ্যাডভোকেট নুরুজ্জামান খান হিরু, আফরোজা মুন, আবুল কালাম খান দাউদ, সুপ্রিকোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট শ.ম. রেজাউল করিম প্রমুখ।

৫০ লাখ একর খাসজমির বেশির ভাগই ভূমিদস্যুদের দখলে

স্টাফ রিপোর্টার

দেশে বর্তমানে প্রায় ৫০ লাখ একর সরকারি খাসজমি রয়েছে। এর একটি বড় অংশ রয়েছে দখলদার বা ভূমিদস্যুদের নিয়ন্ত্রণে। সরকারি দলের প্রভাবশালীদের ছত্রছায়ায় ভূমিদস্যুরা এ জমি দখল করে রেখেছে। এসব উদ্ধারে প্রশাসন কোনো ভূমিকা রাখছে না।
রাজধানীর বিয়াম মিলনায়তনে গতকাল এক গোলটেবিল আলোচনায় এ তথ্য দেয়া হয়। বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা অ্যাকশন এইড ও সাপ্তাহিক পত্রিকা ‘সাপ্তাহিক’ যৌথভাবে ‘খাসজমি, ভূমি ব্যবস্থাপনা ও জনস্বার্থ’ শীর্ষক এই গোলটেবিল আলোচনার আয়োজন করে।
শিক্ষাবিদ অধ্যাপক অজয় রায় বলেন, দেশের মোট খাসজমির প্রায় ২৫ শতাংশই জলাভূমি। আর ৩২ শতাংশ জমি হচ্ছে কৃষি। বাকি জমিগুলো দরিদ্র জনগোষ্ঠীর বসবাসের উপযোগী হলেও তা বর্তমানে কারও না কারও দখলে রয়েছে। স্থানীয় প্রভাবশালী ও ভূমিদস্যুদের জন্য এসবের ওপর দরিদ্র মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব হচ্ছে না। তিনি খাসজমির ব্যবস্থাপনা দ্রুত ডিজিটালাইজ করার তাগিদ দিয়ে বলেন, এটা যত দ্রুত হবে, ততই লাভ।
অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি গোলাম রব্বানী এই গোলটেবিল আলোচনায় বলেন, ‘শহরনির্ভর সমাজব্যবস্থার জন্য আমাদের সামাজিক ব্যবস্থা নষ্ট হয়ে গেছে। স্থানীয় সরকারগুলো কার্যকর না হওয়ায় ভূমি দখল এবং দুর্বলদের ওপর নির্যাতন বাড়ছে। অন্যায় ও দারিদ্র্য থেকে মুক্তি পেতে আমাদের অবশ্যই সামাজিক ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করতে হবে ও মূল্যবোধ গড়ে তুলতে হবে।
তিনি বলেন, বিচারব্যবস্থা দিয়ে দেশের সামাজিক অন্যায় ও অনাচারগুলো দূর করা সম্ভব হবে না। কারণ বিচারকদের হাতে অনেক মামলা। তারা এসব সময়মতো শেষ করতে পারছেন না। আর জনসংখ্যা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে দেশে জমির চাহিদাও বাড়ছে। জনসংখ্যা বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণ করা না গেলে দুর্নীতি ও অনিয়ম দূর করা যাবে না।
বেসরকারি সংস্থা এএলআরডির শামসুল হুদা বলেন, দেশে মোট জমির ১০ শতাংশ দখলদারদের হাতে রয়েছে। এর মধ্যে বেসরকারি বা ব্যক্তিমালিকানার জমিও রয়েছে। রাজনৈতিক প্রভাবশালীদের ছত্রছায়ায় ভূমিদস্যুরা এসব দখল করে নিচ্ছে। প্রশাসন জনগণের পরিবর্তে দস্যুদের সহায়তা করছে। এ জন্য খাসজমি নীতিমালার বদলে পূর্ণাঙ্গ আইন প্রয়োজন।
‘নিজেরা করি’র খুশী কবির বলেন, খাসজমি ব্যবস্থাপনায় পূর্ণাঙ্গ নতুন আইন, নীতিমালা ও এর বাস্তবায়ন প্রয়োজন।
পরিবেশ আইনজীবী সমিতির (বেলা) নির্বাহী পরিচালক সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, খাসজমির তালিকা করার পাশাপাশি আমাদের ভূমিহীনের তালিকাও তৈরি করতে হবে। খাসজমি ব্যবস্থাপনা প্রক্রিয়ায় দরিদ্র মত্স্যজীবী ও ভূমিহীনদের রাখতে হবে।
সাপ্তাহিক-এর সম্পাদক গোলাম মোর্তুজার সঞ্চালনায় এতে আরও বক্তব্য রাখেন অ্যাকশন এইডের আবাসিক প্রতিনিধি ফারাহ কবির। এতে গবেষণাধর্মী নিবন্ধ উপস্থাপন করেন শুভ কিবরিয়া ও শমসের আলী।

Tuesday 21 December 2010

শেয়ারবাজারে ধসের নেপথ্যে সিন্ডিকেটের কারসাজি : ২৫ হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ

কাওসার আলম

সরকারের অদূরদর্শী সিদ্ধান্ত এবং সিন্ডিকেট চক্রের কারসাজিতে দেশের শেয়ারবাজারের ইতিহাসে সর্বোচ্চ দরপতন হয়েছে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা। রোববার দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের সাধারণ সূচকের পতন হয়েছিল ৫৫১ পয়েন্ট। রেকর্ড দরপতনে হাজার হাজার বিনিয়োগকারী তাদের পুঁজি হারিয়ে সর্বস্বান্ত হয়েছেন। সুযোগ কাজে লাগিয়ে কয়েকটি সিন্ডিকেট চক্র বাজার থেকে হাতিয়ে নিয়েছে কয়েক হাজার কোটি টাকা। বিনিয়োগকারীরা অভিযোগ করেছেন, পরিকল্পিতভাবে দরপতন ঘটিয়ে চিহ্নিত কয়েকটি সিন্ডেকেট চক্র বাজার থেকে ২০-২৫ হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। সরকারের শীর্ষ মহলের সঙ্গে এসব সিন্ডিকেট চক্রের গভীর সম্পর্ক থাকায় নিয়ন্ত্রক সংস্থা সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (এসইসি) সিন্ডিকেট চক্রের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নিতে পারছে না। উপরন্তু এসইসির বেশ কয়েকজন শীর্ষ কর্মকর্তার সঙ্গে এসব সিন্ডিকেট চক্রের যোগসাজশ রয়েছে। তাদের সুযোগ করে দিতেই এসইসি ঘন ঘন সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করছে বলে ব্যাপক অভিযোগ রয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, ১৯৯৬ সালে বিপর্যয় ঘটলে স্থবির হয়ে পড়ে দেশের শেয়ারবাজার। হাতেগোনা কয়েকটি প্রতিষ্ঠান এবং মাত্র কয়েক হাজার ব্যক্তি বিনিয়োগকারীর মধ্যে সীমিত হয়ে পড়ে লেনদেন। ধীরে ধীরে শেয়ারবাজারে গতি সঞ্চারিত হয়। ২০০৪ সালে শেয়ারবাজারে বিনিয়োগের মাধ্যমে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ দেয়ায় বিনিয়োগের পরিমাণ বাড়তে শুরু করে। তবে শেয়ারবাজারের স্বাভাবিক গতি ফিরে আসার সূচনা হয়েছে গত জরুরি সরকারের আমলে। ওই সরকারের নানামুখী অভিযানে দেশের শিল্প ও বাণিজ্য খাতে বিনিয়োগের সুযোগ প্রায় বন্ধ হয়ে যায়। সাধারণ মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগও সংকুচিত হয়ে পড়ে। ওই অবস্থায় অনেকেই শেয়ারবাজারে বিনিয়োগকে লাভজনক মনে করতে শুরু করেন। তাছাড়া দুর্নীতির বিরুদ্ধে অভিযান চালালেও জরুরি সরকারও শেয়ারবাজারে কালো টাকার প্রশ্নহীন বিনিয়োগের সুযোগ করে দেয়। ফলে চাঙ্গা হয়ে ওঠে শেয়ারবাজার।
২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর নির্বাচনের পর আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর শেয়ারবাজারে লেনদেন ব্যাপক হারে বাড়তে থাকে। বিপুলসংখ্যক নতুন বিনিয়োগকারী যুক্ত হওয়ায় বেড়ে যায় লেনদেনের পরিমাণ। ২০০৯-১০ অর্থবছরে আবারও শেয়ারবাজারে কালো টাকা বিনিয়োগের সুযোগ দেয়ায় শেয়ারবাজারে লেনদেনের পালে আরও জোরে হাওয়া লাগে। ২ জুলাই দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের লেনদেন ১ হাজার কোটি টাকার মাইলফলক স্পর্শ করে। লেনদেন যতই বাড়ছিল ততই সক্রিয় হয়ে ওঠে সিন্ডিকেট চক্র। বাজার থেকে ফায়দা লুটতে তারা কারসাজির মাধ্যমে কোম্পানিগুলোর শেয়ারের দর বাড়াতে শুরু করে। দরবৃদ্ধির কারণে শেয়ারবাজারে প্রতিদিনই যোগ হতে থাকে নতুন নতুন মুখ। শেয়ারবাজার সম্পর্কে এদের অধিকাংশেরই কোনো ধারণা না থাকলেও শুধু মুনাফা লাভের আশায় বিনিয়োগ শুরু করে। বিদ্যুত্, গ্যাস ও অবকাঠামো সমস্যার সমাধান করতে না পারার কারণে দেশে বিনিয়োগ পরিবেশ সৃষ্টি না হওয়ায় শিল্প উদ্যোক্তারাও ধীরে ধীরে শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ শুরু করেন। একই সঙ্গে ব্যাংকগুলো আমানত ও সঞ্চয়পত্রে সুদের হার কমিয়ে দেয়ায় সাধারণ মানুষ শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ শুরু করেন। পেনশনভোগী, অবসরপ্রাপ্ত সরকারি-বেসরকারি কর্মকর্তা, ছাত্র-যুবকসহ সব শ্রেণী-পেশার মানুষ শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ শুরু করেন। অফিসের কাজকর্ম ফেলে রেখে শেয়ারবাজার নিয়ে মেতে ওঠেন অনেকে। নতুন বিনিয়োগ না থাকায় কর্মসংস্থান সৃষ্টির পথও রুদ্ধ হয়ে পড়ে। বেকার যুবকরাও শামিল হয় শেয়ারবাজারে। ব্যাংক ও বিভিন্ন উত্স থেকে ঋণ নিয়ে তারা শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করে। নতুন নতুন বিনিয়োগকারী যুক্ত হওয়ায় বাজারে তারল্য প্রবাহ বেড়ে যায়। শেয়ারবাজারে একদিনে সাড়ে ৩ হাজার কোটি টাকা লেনদেনের ঘটনাও ঘটে। লেনদেনের পরিমাণ যতই বাড়তে থাকে ততই বাড়তে থাকে শেয়ারের চাহিদা। দুই বছর আগেও শেয়ারবাজারে বিও অ্যাকাউন্টধারীর সংখ্যা ছিল ৫ লাখের নিচে। বর্তমানে সে সংখ্যা গিয়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় ৩৩ লাখে। বিপুলসংখ্যক বিনিয়োগকারী শেয়ারবাজারে যুক্ত হলেও সে অনুপাতে শেয়ারের জোগান বাড়েনি। বাজার বিশ্লেষকরা সব সময়ই বলে আসছিলেন, সরবরাহ না বাড়ানোর কারণে বাজার ক্রমেই ঝুঁকির দিকে চলে যাচ্ছে। অল্প কয়েকটি কোম্পানির শেয়ার বার বার হাতবদলের কারণে অতিমূল্যায়িত হয়ে পড়েছে বেশিরভাগ শেয়ার। তবে কয়েকটি কোম্পানি শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হলেও তা ছিল চাহিদার তুলনায় যথেষ্ট কম। একই সময় মিউচুয়াল ফান্ডের একের পর এক অনুমোদন দেয়ার কারণে বাজারে শেয়ারের চাহিদা আরও বেড়ে যায়। এতে শেয়ারের মূল্যস্তর আরও বেড়ে যায়। এ অবস্থায় বাড়তি মুনাফা করতে ব্যাংকগুলোও আইনি সীমা লঙ্ঘন করে শেয়ারবাজারে অতিরিক্ত বিনিয়োগ শুরু করে। ব্যাংকের ভল্টের টাকাও শেয়ারবাজারে চলে আসে। শিল্প গড়তে ব্যাংক ঋণ নিয়েও কোনো কোনো উদ্যোক্তা শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করেছেন। ফলে সামগ্রিকভাবে শেয়ারবাজারে তারল্য প্রবাহের ঢেউ আছড়ে পড়ে। তারল্য প্রবাহ বাড়তে থাকায় শেয়ারবাজার থেকে মুনাফা তুলে নেয়ার জন্য সক্রিয় হয়ে ওঠে সিন্ডিকেট। নানা কারসাজি করে শেয়ারবাজার থেকে টাকা তুলে নিতে কৌশলের আশ্রয় নেয়। একেক সময় একেক কৌশলের আশ্রয় নিয়ে বাজার থেকে টাকা হাতিয়ে নিতে শুরু করে ওইসব চক্র।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে আরও জানা যায়, নিয়ন্ত্রক সংস্থা সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনকে (এসইসি) চাপে ফেলে সিন্ডিকেট চক্র বিভিন্ন সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য করে। বাজার নিয়ন্ত্রণে এসব সিদ্ধান্ত নেয়া হলেও কয়েকদিনের মধ্যেই সে সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে সংস্থাটি। নিয়ন্ত্রক সংস্থার সিদ্ধান্তের কারণে বাজারে কোম্পানির শেয়ারের দাম কমতে শুরু করলে সে সুযোগে স্বল্পমূল্যে শেয়ার কিনে নিত তারা। পরে আবার দাম বাড়তে শুরু করলে চড়া দামে সেসব শেয়ার বিক্রি করে বাজার থেকে টাকা হাতিয়ে নেয় তারা। নিয়ন্ত্রক সংস্থার সিদ্ধান্তের কারণে বড় ধরনের পতন হলে বিনিয়োগকারীরা রাস্তায় বিক্ষোভ বা আন্দোলন করলে এসইসি দু্রত সে সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করে নেয়। ফলে এসইসির কোনো সিদ্ধান্তই কার্যকর হয়নি বরং তা বারবার বাজারকে অস্থির করে তোলে। অভিযোগ রয়েছে, নিয়ন্ত্রক সংস্থা কয়েকটি সিন্ডিকেট চক্রের কাছে নিয়ন্ত্রিত হয়ে পড়ায় বাজারের জন্য দীর্ঘমেয়াদি কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারছে না। এসইসির দুর্বল নেতৃত্বকেও এ জন্য দায়ী করছেন সংশ্লিষ্টরা। উপরন্তু বিভিন্ন ক্ষেত্রে কমিশনে রয়েছে নানা ধরনের দ্বন্দ্ব। বিভিন্ন চক্রের স্বার্থ রক্ষা করতে গিয়েই এসইসি কর্মকর্তাদের মধ্যে বড় ধরনের বিরোধ তৈরি হয়েছে। তবে কমিশনের কয়েকজন কর্মকর্তা সিন্ডিকেট চক্রের সঙ্গে হাত না মেলানোর কারণে তাদের বিরুদ্ধে মাঝে মধ্যে নানা ধরনের অপপ্রচার চালানো হচ্ছে। আর এসব অপপ্রচারের পেছনে কমিশনের কয়েকজন কর্মকর্তা সক্রিয় ভূমিকা পালন করছেন বলে জানা গেছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, গত ৬ ডিসেম্বর চেক ক্লিয়ারিং ছাড়া শেয়ার কেনার বিষয়ে বিধিনিষেধ আরোপ করার বিষয়ে ডিএসইর এক পরিচালক এসইসির ওপর চাপ সৃষ্টি করেন। বাজারের অতিমূল্যায়ন ঠেকাতে তিনি তা কার্যকরের পক্ষে জোরালো অবস্থান গ্রহণ করেন। তার পীড়াপীড়িতে এ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে ব্রোকারেজ হাউসগুলোকে নির্দেশ দিয়েছিল এসইসি। কমিশনের চেয়ারম্যানকে না জানিয়ে এ নির্দেশনা জারি করা হয়েছিল। নির্দেশনার কারণে গত ৮ ডিসেম্বর পুঁজিবাজারের ইতিহাসে নজিরবিহীন ঘটনা ঘটে। ওইদিন মাত্র সোয়া ঘণ্টার ব্যবধানেই ডিএসইর সাধারণ সূচকের পতন ঘটে ৫৪৭ পয়েন্ট। দরপতন ঘটে প্রায় সবকয়টি কোম্পানির। পুঁজি হারিয়ে রাস্তায় নেমে আসেন সাধারণ বিনিয়োগকারীরা। ফলে এসইসি এ নির্দেশনাটির কার্যকারিতা স্থগিত করে। চেয়ারম্যানকে না জানিয়ে নির্দেশনা জারি করার কারণে কমিশনের সিনিয়র সদস্য মনসুর আলমকে কারণ দর্শানো নোটিশ দেয়া হয় এবং পরবর্তী সময়ে অফিস আদেশের মাধ্যমে তাকে গুরুত্বপূর্ণ দুটি পদ থেকে সরিয়ে দেয়া হয়। অবশ্য কমিশন বাজারের স্বার্থে স্বাধীনভাবে সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি মূলত সিন্ডিকেট চক্রের কারণে। সরকারের শীর্ষ মহলের সঙ্গে সরাসরি সম্পর্ক রয়েছে বলে দাবি করা ডিএসইর এক পরিচালক সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষেত্রে প্রভাব বিস্তার করে আসছেন বলে ব্যাপক আলোচনা রয়েছে। তার সঙ্গে সরকারের ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত আরও কয়েকজন প্রভাবশালী ব্যক্তি রয়েছেন বলে জানা গেছে। এছাড়া আরও কয়েকটি সক্রিয় সিন্ডিকেট চক্র বাজার নিয়ন্ত্রণ করছে বলে অভিযোগ রয়েছে। এমনকি কমিশনকে সরকারের আজ্ঞাবাহী প্রতিষ্ঠানে পরিণত করার পেছনে রয়েছে ওইসব সিন্ডিকেট চক্রের হাত। আর সিন্ডিকেট চক্রটির কাছে অনেক সময়ই অসহায় আত্মসমর্থন করতে হচ্ছে কমিশনকে। এমনকি ডিএসই পরিচালনা পরিষদের নির্বাচনে প্রার্থীর প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার মতো বিষয়েও কমিশনের ছাড়পত্র নেয়ার বিষয়ে বাধ্যবাধকতা আরোপ করা হয়েছিল মূলত প্রভাবশালী মহলের চাপে। আর এসব চক্র নানাভাবেই কারসাজি করে বাজার থেকে হাতিয়ে নিচ্ছে কোটি কোটি টাকা। গত ৮, ১২ ও ১৯ ডিসেম্বরের দরপতনে সিন্ডিকেট চক্রটি বাজার থেকে ২০-২৫ হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে বলে বাজারে ব্যাপক গুজব রয়েছে।
অপরদিকে তারল্য প্রবাহ বৃদ্ধি এবং চাহিদা বাড়লেও সরকারের বেশ কিছু অদূরদর্শী সিদ্ধান্তের কারণে বাজার অতিমূল্যায়িত হয়ে পড়ে। আর অতিমূল্যায়িত বাজারে দরপতন ঘটিয়ে সে সুযোগকে কাজে লাগিয়েছে সিন্ডিকেট চক্রটি। ঝুঁকিপূর্ণ শেয়ারবাজার নিয়ন্ত্রণে শেয়ার সরবরাহ বাড়ানোর কোনো বিকল্প নেই— বাজার বিশ্লেষকদের এমন অভিমতের বিপরীতে সিদ্ধান্ত নেয় অর্থ মন্ত্রণালয়। অর্থ মন্ত্রণালয় গত বছরের মার্চে এসইসির কাছে একটি সুপারিশ করে। সুপারিশে ৪০ কোটি টাকার কম পরিশোধিত মূল্যের কোম্পানির শেয়ার বাজারে তালিকাভুক্তির ক্ষেত্রে বিধিনিষেধ আরোপ করে। এর ফলে বেসরকারি খাতের কোম্পানিগুলো পরিশোধিত মূলধন জটিলতায় শেয়ারবাজারে আসতে পারেনি। একদিকে চাহিদা বৃদ্ধি অন্যদিকে অর্থ মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্তে সরবরাহের ক্ষেত্রে বড় ধরনের প্রতিবন্ধকতা তৈরি হয়। অবশেষে সম্প্রতি তালিকাভুক্তির ক্ষেত্রে পরিশোধিত মূলধনের পরিমাণ ৩০ কোটি টাকায় নামিয়ে আনা হয়েছে। আবার বেসরকারি খাতের কোম্পানির সরাসরি তালিকাভুক্তি নিষিদ্ধ করার মাধ্যমেও শেয়ার সরবরাহের পথে বাধা তৈরি করা হয়।

Wednesday 25 August 2010

সিলেটে জমি দখল করলেন আওয়ামী লীগ নেতা

সিলেট অফিস | Kaler Kantho | ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১১ ভাদ্র ১৪১৭, ১৫ রমজান ১৪৩১, ২৬ আগস্ট ২০১০

রাস্তা না দেওয়ায় পুলিশের উপস্থিতিতেই সিলেটে এক আওয়ামী লীগ নেতা একটি পরিবারের অর্ধ কোটি টাকার জমি দখল করে নিয়েছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগ, দখলকারীকে নিবৃত্ত না করে তারা উল্টো সহযোগিতা করছে। এ ঘটনায় পুলিশ উভয় পক্ষকে থানায় ডেকে নিলেও দখলকারীর সামনে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের সদস্যদের গালাগাল করে এবং এ নিয়ে 'বেশি বাড়াবাড়ি' না করতে শাসিয়ে দেয়।
গতকাল বুধবার বিকেলে সিলেটের দক্ষিণ সুরমা উপজেলার সিলাম ইউনিয়নের চরমোহাম্মদপুর গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। ঘটনার পর থেকে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের লোকজনকে বাড়ি থেকে বের হতে দিচ্ছেন না দখলদাররা।
গ্রামের মরহুম এম এ গফ্ফার চৌধুরীর মেয়ে সুজিকা আক্তার চৌধুরী ও নুসরাত চৌধুরী অভিযোগে বলেন, তাঁদের বাবা ছিলেন একজন প্রথম শ্রেণীর ঠিকাদার। সাতটি ইটখোলাসহ প্রায় কয়েক কোটি টাকার সম্পত্তি ছিল তাঁদের। ১৯৯৬ সালে বাবা মারা যাওয়ার পর এক সৎবোনের সঙ্গে তাঁদের সম্পত্তি নিয়ে বিরোধ দেখা দেয়। এ নিয়ে আদালতে মামলা রয়েছে।
সুজিকা ও নুসরাত কালের কণ্ঠের কাছে অভিযোগ করে বলেন, সৎবোনের সঙ্গে বিরোধের জের ধরে গ্রামের আওয়ামী লীগ নেতা কফিল আহমদ চৌধুরী হঠাৎ করেই তাদের সম্পত্তি দখলের পাঁয়তারা করতে থাকেন। তিনি তাঁদের নানাভাবে হয়রানি করতে থাকেন, হত্যার হুমকি দেন। ২০০৭ সালের ২১ আগস্ট তিনি তাঁর লোকজনকে দিয়ে তাদের পরিবারের সদস্যদের মারধর ও বাড়িতে লুটপাট করেন। দুই বোন বলেন, এ নিয়ে থানায় তাঁরা সাধারণ ডায়েরিও করেছেন।
বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, দুই বছর আগে কফিল চৌধুরী সুজিকাদের বাড়ির পাশের জমির ওপর দিয়ে জোরপূর্বক পাঁচ হাত রাস্তা করেন। গতকাল সুজিকাদের জমিতে বর্গাচাষি সুহেল ও তাঁর বাবা আবুল কালাম যখন কাজ করছিলেন। তখন কফিল আহমদ এবং তাঁর সহযোগী সাবি্বর আহমদ, জমসেদ, জুনাব আলী, তুহিন, কামাল, মিটু, শাহীন, কয়েস, সেলিম, সাদেক, জনি, জাহাঙ্গীরসহ অন্যরা বর্গাচাষিকে মারধর করে জমি থেকে তুলে দেয়। খবর পেয়ে দক্ষিণ সুরমা থানার এসআই হারুন মজুমদারের নেতৃত্বে একদল পুলিশ ঘটনাস্থলে গেলে তাদের সামনেই সুজিকাদের জমিতে বেড়া দেন কফিল। পুলিশ এ সময় তাঁকে অন্যায়ভাবে এই কাজ না করতে এবং উভয় পক্ষকে কাগজপত্র নিয়ে থানায় যেতে বলে।
খবর পেয়ে দক্ষিণ সুরমা উপজেলার চেয়ারম্যান লোকমান আহমদও ঘটনাস্থলে যান। তাঁর সামনেই কফিল আহমদ জমিতে বেড়া দেন বলে জানা যায়। এ প্রসঙ্গে লোকমান আহমদ বলেন, 'যতটুকু জেনেছি জমিটি সুজিকাদের। কফিল আহমদের এখানে কোনো জমি নেই।'
বিকেলে উভয়পক্ষ থানায় যান। কিন্তু দেরিতে যাওয়ায় কফিল আহমদের সামনে ওসি আবু শামা মো. ইকবাল হায়াত সুজিকা ও তাঁর বোনের সঙ্গে রূঢ় আচরণ করেন। তিনি তাঁদের গালাগাল করেন। এ নিয়ে বেশি বাড়াবাড়ি না করার জন্য শাসান।
ওসি এ অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, 'দেরিতে আসার কারণ জানতে চাইলে তাঁরা (সুজিকা ও নুসরাত) বলে প্রতিপক্ষ তাঁদের আসতে বাধা দিচ্ছিল। আমি বলেছি বাধা দিলে আমাকে বলতেন আমি আপনাদের নিয়ে আসতাম। এরপর তাঁরা আর বসেননি। আমি তাঁদের গালাগাল করিনি।' ওসি বলেন, 'বিরোধ রয়েছে তাঁদের বোনদের মধ্যে। এখানে কফিল আহমদ কিভাবে ঢুকলেন সেটাতো আমিও বুঝতে পারছি না। এ জন্য তাঁদের ডেকেছিলাম। তাঁরা বসলে এর একটা সমাধান বের হয়ে যেত।'
অভিযুক্ত কফিল আহমদ চৌধুরী অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, 'তাঁদের সঙ্গে তো আমাদের জমি-সংক্রান্ত কোনো ঝামেলা নেই। তাঁদের বাবা মারা যাওয়ার আগে তাঁদের বোন-জামাইয়ের কাছে জমি বিক্রি করে গেছেন। আমরা এমপি সাহেবের মাধ্যমে প্রাইমারি স্কুলের জন্য একটি রাস্তা নিতে চাচ্ছি। রাস্তাটা পাকা করতে হলে বড় জায়গার দরকার। অন্যরা জমি দিয়েছেন। সুজিকারা দিচ্ছেন না। তাই আজ এ নিয়ে একটু কথা হয়েছে।'

Monday 2 August 2010

যশোরে শাসকদলের সন্ত্রাসীদের তাণ্ডব ভাংচুর লুটপাট : কোটি টাকার সম্পত্তি দখল



যশোর অফিস ও অভয়নগর প্রতিনিধি
শাসক দলের এক প্রভাবশালী জনপ্রতিনিধির আশ্রিত সন্ত্রাসী বাহিনী গতকাল শিল্পশহর নওয়াপাড়ায় তিন ঘণ্টা ব্যাপক তাণ্ডব চালিয়েছে। এ সময় তারা বাড়িঘর, স্কুল, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে লুটপাট ও ভাংচুর করে। দখল করে নেয় প্রায় কোটি টাকা দামের বাণিজ্যিক সম্পত্তি। সন্ত্রাসীদের এ তাণ্ডবে সাধারণ মানুষের পাশাপাশি আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরাও ক্ষুব্ধ, বিরক্ত। তারা এ সন্ত্রাসের বিচার চেয়েছেন।
এলাকাবাসী ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, গতকাল ভোর ৫টার দিকে অভয়নগর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ডাক্তার আবদুল গফ্ফার ও ছাত্রলীগ উপজেলা কমিটির সহ-সভাপতি ফারাজী নাসিরের নেতৃত্বে ২০-২৫ জনের একদল সন্ত্রাসী নওয়াপাড়া শহরে অবস্থিত উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সামনে কোটা গ্রামের মমিনউদ্দিন সরদার ও সোহরাব হোসেন সরদারের মালিকানাধীন সাড়ে ১৫ শতক জমির ওপর থাকা আবদুল্লাহ আল মামুনের পলি ফার্মেসি, নাদিম হোসেনের নূর ইলেকট্রিক অ্যান্ড রেফ্রিজারেশন, প্রশান্ত কুমার কুণ্ডুর প্রণয় স্টোর, জামাল হোসেনের জামাল হোটেল, সানফ্লাওয়ার কিন্ডারগার্টেন এবং মমিন সরদার ও সোহরাব সরদারের বসতবাড়িতে হামলা চালিয়ে ব্যাপক ভাংচুর ও লুটপাট করে।
পলি ফার্মেসির মালিক আল মামুন বলেন, ভোর সাড়ে ৫টায় খবর পেয়ে আমার ওষুধের দোকানে গিয়ে দেখি সন্ত্রাসীরা ভাংচুর ও লুটপাট করছে। তারা আমার দোকানের ফ্রিজ, ওষুধসহ প্রায় সাড়ে ৪ লাখ টাকার মালামাল আমার সামনে দিয়ে নিয়ে গেলেও চেয়ে চেয়ে দেখা ছাড়া করার কিছু ছিল না।
প্রণয় স্টোরের মালিক প্রশান্ত কুমার কুণ্ডু বলেন, আওয়ামী লীগের লোকদের দ্বারা পুলিশের সামনে আমার এতবড় ক্ষতি হবে তা জীবনেও ভাবিনি। আমি এখন পথের ফকির হয়ে গেলাম।
মমিন সরদারের পুত্রবধূ স্কুলশিক্ষিকা জেসমিন আক্তার মিনি বলেন, আমি ভাত রান্না করছিলাম। হঠাত্ সন্ত্রাসীরা আমাকে মারধর শুরু করে টেনেহিঁচড়ে বের করে নিয়ে যায়। তারা ভাতের হাঁড়ি লাথি মেরে ফেলে দেয়।
সানফ্লাওয়ার কিন্ডারগার্টেনের প্রধান শিক্ষিকা রোজিয়াত সুলতানা জানান, তিনি স্কুলে এসে দেখতে পান সন্ত্রাসীরা স্কুলের কম্পিউটার, চেয়ার, বেঞ্চ ও পরীক্ষার খাতাপত্র সবকিছু নিয়ে গেছে। স্কুলটি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় সন্তানদের ভবিষ্যত্ নিয়ে শঙ্কিত হয়ে পড়েছেন বলে জানান অভিভাবকরা।
জমির মালিক মমিন সরদার বলেন, ক্রয়সূত্রে আমরা ওই জমির মালিক। দীর্ঘ ৩০ বছর ওই জমি ভোগদখল করে আসছি। কুচক্রী মহলের ষড়যন্ত্রের শিকার হওয়ার পর আদালতে মামলা করি। বিরোধীয় জমি নিয়ে আদালতে মামলা চলছে। আদালতের নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। তারপরও ডা. গফ্ফার ও নাসিরের নেতৃত্বে যেভাবে হামলা চালিয়ে উচ্ছেদ করা হলো তা অবিশ্বাস্য। হামলার সময় পুলিশ ছিল নির্বিকার।
অভয়নগর থানার ওসি আহসান হাবিব জানান, বিষয়টি আমি শুনেছি। শান্তি রক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিয়েছি।
অভয়নগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. জাহিদ হোসেন বলেন, আমি ঘটনাস্থলে গিয়ে চারটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, দুটি বাড়ি ও একটি স্কুলের কোনো মালামাল দেখতে পাইনি।
ক্ষতিগ্রস্ত ও হামলার শিকার ব্যক্তিরা বলছেন, সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা সবাই শাসক দল আশ্রিত। হামলা-ভাংচুরের সময় সন্ত্রাসীরা ওই নেতার নির্দেশেই তাণ্ডব চালানো হচ্ছে বলে দম্ভভরে জানায়। পুলিশের সামনে সন্ত্রাসীদের এই তাণ্ডবে হতবাক হয়ে গেছেন সাধারণ মানুষ। খবর পেয়ে দুপুরে যশোর থেকে একদল সাংবাদিক ঘটনাস্থলে পৌঁছলে নারী-পুরুষ নির্বিশেষে তাদের ওপর সন্ত্রাসীদের অত্যাচারের কাহিনী বর্ণনা করেন।
সন্ত্রাসী তাণ্ডবের প্রত্যক্ষদর্শী অভয়নগর উপজেলা আওয়ামী যুবলীগের সভাপতি আবদুর রউফ সাংবাদিকদের জানান, স্থানীয় এমপি ও জাতীয় সংসদের হুইপের প্রশ্রয়ে সন্ত্রাসীদের এই বেপরোয়া অবস্থা। শুধু এই সম্পত্তি নয়, মহাজোট ক্ষমতায় আসার পর অভয়নগরের বিভিন্ন স্থানে হুইপের নাম ভাঙিয়ে দলীয় সন্ত্রাসীরা মানুষের ভূসম্পত্তি দখল করে নিয়েছে।
উপজেলা আওয়ামী লীগের স্বাস্থ্য ও জনসংখ্যা বিষয়ক সম্পাদক কাউসার আলী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, মুক্তিযুদ্ধকালে রাজাকাররাও এভাবে লুটপাট করেনি। আজ (সোমবার) আওয়ামী লীগ আশ্রিত সন্ত্রাসীরা যেভাবে সাধারণ মানুষের সম্পত্তির ওপর চড়াও হলো তা এক কথায় ভয়াবহ। স্থানীয় নেতাদের জানিয়ে লাভ নেই, আমি প্রধানমন্ত্রীর কাছে এ ঘটনার বিচার চাই।

http://www.amardeshonline.com/pages/details/2010/08/03/37224

Friday 30 July 2010

শৌচাগার নির্মাণে টিআরের গম, তাও আত্মসাৎ

সালেহ আহমেদ, ধরমপাশা (সুনামগঞ্জ) | তারিখ: ২৪-০৭-২০১০

সুনামগঞ্জের ধরমপাশায় গ্রামীণ অবকাঠামো রক্ষণাবেক্ষণের (টিআর) বিশেষ বরাদ্দের প্রকল্প কাজে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতি হয়েছে। স্থানীয় সাংসদ মোয়াজ্জেম হোসেন তাঁর পছন্দের নেতা-কর্মীদের নামে গম বরাদ্দ দিয়েছেন। কিন্তু কোনো কাজ না করে এই গম আত্মসাৎ করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার (পিআইও) কার্যালয় ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, খাদ্য ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয় থেকে ২০০৯-১০ অর্থবছরে টিআর কর্মসূচির আওতায় ধরমপাশার ১০ ইউনিয়নে ৭৬টি প্রকল্পের বিপরীতে ১৩২ টন বিশেষ গম বরাদ্দের অনুমোদন দেওয়া হয়।
নীতিমালা অনুযায়ী জনকল্যাণমূলক কাজে এ বরাদ্দ ব্যবহারের কথা। কিন্তু গত জুন মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে প্রথম দফায় আওয়ামী লীগের ২৪ জন নেতা-কর্মীর বাড়িতে শৌচাগার নির্মাণের জন্য স্থানীয় সাংসদ মোয়াজ্জেম হোসেন ৩২ টন গম বরাদ্দ দেওয়াসহ ৭৬টি প্রকল্পের তালিকা পিআইও কার্যালয়ে পাঠান। মসজিদ, মন্দির ও গোরস্তানের উন্নয়ন, রাস্তা সংস্কার, মেরামত ও সাঁকো নির্মাণ প্রকল্পগুলোর মধ্যে ছিল। তবে পরবর্তী সময়ে শৌচাগার নির্মাণ প্রকল্পের নাম পরিবর্তন করে গ্রামভিত্তিক পাড়ায়-পাড়ায় শৌচাগার নির্মাণের প্রকল্প করা হয়। বরাদ্দের অধিকাংশ গম ইতিমধ্যে তুলে নেন নেতা-কর্মীরা। গত ৩০ জুনের মধ্যে প্রকল্প বাস্তবায়নের নির্দেশ থাকলেও নেতা-কর্মীদের দেওয়া প্রকল্পের কাজ এখনো শুরুই হয়নি।
ধরমপাশা সদর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. আবদুস ছাত্তারের বাড়িতে শৌচাগার নির্মাণের জন্য বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিল দুই টন গম। মো. আবদুস ছাত্তারকে করা হয় প্রকল্পের বাস্তবায়ন কমিটির সভাপতি। কাজের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘ব্যস্ত থাকায় এখনো কাজ শুরু করতে পারিনি, তবে খুব তাড়াতাড়ি তা করে নেব।’ সুখাইড় রাজাপুর দক্ষিণ ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রাসেল মিয়ার বাড়িতে শৌচাগার নির্মাণের জন্য বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিল এক টন গম। তিনি ওই গ্রামের বাসিন্দা এবং প্রকল্প কমিটির চেয়ারম্যান। কাজ করেছেন কি না, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘কী আর কাজ করব? ডানে-বাঁয়ে দিতে গিয়ে বেশকিছু টাকা খরচ হয়ে গেছে। তাই ভাবছি, আগামী শুষ্ক মৌসুমে কাজ করব।’
একইভাবে শৌচাগার নির্মাণের কোনো প্রকল্পের কাজ সংশ্লিষ্ট চেয়ারম্যান তথা আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা করেননি। এমনকি অনেকের নামে বরাদ্দ হলেও তিনি নন, গম তুলে নিয়েছেন অন্য কেউ। চামরদানী ইউনিয়নের আমজুড়া গ্রামের বাসিন্দা ছাত্রলীগ নেতা মান্নার বাড়িতে শৌচাগার নির্মাণের জন্য দুই টন গম বরাদ্দ দেখানো হলেও তিনি দাবি করেন, ‘প্রকল্প তালিকায় আমার নামে গম বরাদ্দ দেখে আমি অবাক হয়ে গেছি। আমি সাংসদের কাছে এ বাবদ বরাদ্দ চাইনি। আমি এ বরাদ্দের মাল উত্তোলন করিনি। কে বা কারা তা নিয়েছে, তা আমি জানি না।’
পাইকুরাটি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি গোলাম মোস্তফা জামালপুর গ্রামের রাস্তা মেরামতের জন্য বরাদ্দ পেয়েছেন পাঁচ টন গম। কিন্তু ওই সড়কে কোনো কাজই হয়নি। এর সত্যতা স্বীকার করে তিনি বলেন, ‘গত শুষ্ক মৌসুমে সড়কে সামান্য মাটি ভরাট করিয়েছিলাম। দলীয় কার্যালয়েও কিছু মাটির কাজ করিয়েছি। এ ছাড়া সংগঠন চালাতে আপ্যায়ন খরচও আমাকেই মেটাতে হয়। আমার ব্যয়ের আসল টাকাই এখনো উঠে আসেনি।’
উপজেলার পিআইও নূর আহমেদ বলেন, ‘আমাকে এ উপজেলার পাশাপাশি তাহিরপুরের অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করতে হচ্ছে। তাই সব প্রকল্পের কাজ দেখভাল করা সম্ভব হয়নি।’ উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা মো. বাবুল মিঞা বলেন, টিআর প্রকল্পের বিষয়ে এখনো কোনো অভিযোগ পাওয়া যায়নি। অভিযোগ এলে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বরাদ্দ, প্রকল্প অনুমোদন নিয়ম মোতাবেক হয়েছে দাবি করে সাংসদ মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, তদারকির দায়িত্ব প্রশাসনের। কাজ শুরু না করা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, নেতা-কর্মীরা অর্ধেক কাজ করে, অর্ধেক করে না—এটাই স্বাভাবিক।

http://www.prothom-alo.com/detail/date/2010-07-24/news/81173

Wednesday 28 July 2010

দলীয় বিবেচনায় পুলিশে ১ হাজার সার্জেন্ট ও এসআই নিয়োগ চূড়ান্ত

শামসুস সালেহীন
দলীয় বিবেচনায় পুলিশে প্রায় ১ হাজার সার্জেন্ট ও এসআই নিয়োগ চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। মন্ত্রী, এমপি ও দলীয় নেতাদের তদবিরেই এসব পদে নিয়োগ দেয়া হচ্ছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সূত্র জানিয়েছে, এই প্রক্রিয়ায় এরই মধ্যে প্রায় ৯০০ জন এসআই নিয়োগ দেয়া হয়েছে। আগামী সপ্তাহেই ১৩৩ জন সার্জেন্টকে নিয়োগ দেয়ার কথা রয়েছে। এসব নিয়োগ প্রার্থীর তালিকা মন্ত্রণালয়ের কম্পিউটারে সংরক্ষণ করা হয়েছে। প্রত্যেক নিয়োগ প্রার্থীর নামের পাশে তদবিরকারীর নাম উল্লেখ করা হয়েছে বলে মন্ত্রণালয়ের সূত্র জানায়।
জানা গেছে, সম্প্রতি পুলিশে ১৬৬ জন সার্জেন্ট নিয়োগ চূড়ান্ত করা হয়। পুলিশি তদন্তে বিভিন্ন ত্রুটির কারণে ৩৩ জনের নাম বাদ পড়ে। ফলে ১৩৩ জনকে সার্জেন্ট পদে নিয়োগ দেয়ার প্রক্রিয়া চূড়ান্ত করা হয়। অভিযোগ রয়েছে, সার্জেন্ট নিয়োগ প্রক্রিয়ায় জেলা কোটা মানা হয়নি। এ কারণে চট্টগ্রামের একজনকেও নেয়া হয়নি ১৩৩ জনের মধ্যে। এতে করে চট্টগ্রামে বিষয়টি নিয়ে বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে। সূত্রমতে, ১৩৩ জন পুলিশ সার্জেন্টের বেশিরভাগই চূড়ান্ত করা হয়েছে মন্ত্রী ও এমপিদের সুপারিশে। আগামী সপ্তাহেই এদের নিয়োগ দেয়ার কথা রয়েছে বলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়।
এছাড়া পুলিশে আরও ২০০ এসআই (সাব-ইন্সপেক্টর) নিয়োগের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এর আগে ৪৩৪ জন এসআই নিয়োগের বিষয়টি চূড়ান্ত হওয়ার পর তা বাড়িয়ে ৬৩৪ জন করা হয়। অভিযোগ রয়েছে, রাজনৈতিক চাপ ও তদবির রক্ষার জন্যই নিয়োগ সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে। এর আগে ৪৩৪ জন এসআই নিয়োগের জন্য বিজ্ঞপ্তি দেয়া হয়। লিখিত পরীক্ষা শেষে প্রায় ১ হাজার ৬০০ জনকে নির্বাচন করে মৌখিক পরীক্ষা নেয়া হয়। এ সময় আরও ২০০ জনকে এসআই পদে নিয়োগ দেয়ার উদ্যোগ নেয় সরকার।
মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, এসআই পদে নিয়োগের জন্য প্রতিমন্ত্রী, সংসদ সদস্য থেকে শুরু করে ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও আওয়ামী লীগ নেতাদের তদবির সামাল দিতে হচ্ছে প্রতিদিনই। এ জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রীকেও কিছুটা সময় ব্যয় করতে হচ্ছে। তবে যারা তদবির নিয়ে আসেন, তাদের নাম মন্ত্রণালয়ের কম্পিউটারে সংরক্ষণ করা হচ্ছে।
সূত্র জানায়, প্রথম দফায় যে ৪৩৪ এসআই নিয়োগের সিদ্ধান্ত হয়েছিল তার মধ্যে জেলা কোটা অনুযায়ী ঢাকার ৩০ জন, গাজীপুরে ৭ জন, মানিকগঞ্জে ৬ জন, মুন্সীগঞ্জে ৬ জন, নারায়ণগঞ্জে ৮ জন, নরসিংদীতে ৭ জন, ফরিদপুরে ৬ জন, গোপালগঞ্জে ৪ জন, মাদারীপুরে ৪ জন, রাজবাড়ীতে ৩ জন, শরিয়তপুরে ৪ জন, জামালপুরে ৭ জন, শেরপুরে ৪, কিশোরগঞ্জে ৯ জন, নেত্রকোনায় ৭ জন, ময়মনসিংহে ১৬ জন, টাঙ্গাইলে ১১ জন, চট্টগ্রামে ২৩ জন, কক্সবাজারে ৬ জন, খাগড়াছড়িতে ২ জন, বান্দরবানে ১ জন, রাঙামাটিতে ২ জন, কুমিল্লায় ১৬ জন, ব্রাক্ষণবাড়ীয়ায় ৮ জন, চাঁদপুরে ৮ জন, নোয়াখালীতে ৯ জন, ফেনীতে ৪ জন, লক্ষ্মীপুরে ৫ জন, বগুড়ায় ১১ জন, জয়পুরহাটে ৩ জন, দিনাজপুরে ৯ জন, পঞ্চগড়ে ৩ জন, ঠাকুরগাঁওয়ে ৪ জন, পাবনায় ৬ জন, সিরাজগঞ্জে ৯ জন, রাজশাহীতে ৮ জন, নওগাঁয় ৮ জন, নাটোরে ৫ জন, চাঁপাইনবাবগঞ্জে ৫ জন, রংপুরে ৯ জন, গাইবান্ধায় ৭ জন, লালমনিরহাটে ৪ জন, কুড়িগ্রামে ৬ জন, নীলফামারীতে ৫ জন, খুলনায় ৮ জন, বাগেরহাটে ৫ জন, সাতক্ষীরায় ৬ জন, যশোরে ৯ জন, ঝিনাইদহে ৬ জন, মাগুরায় ৩ জন, নড়াইলে ২ জন, কুষ্টিয়ায় ৬ জন, চুয়াডাঙ্গায় ৪ জন, মেহেরপুরে ২ জন, বরিশালে ৮ জন, ভোলায় ৬ জন, ঝালকাঠিতে ২ জন, পিরোজপুরে ৪ জন, বরগুনায় ৩ জন, পটুয়াখালীতে ৫ জন, সিলেটে ৯ জন, হবিগঞ্জে ৬ জন, মৌলভীবাজারে ৬ জন ও সুনামগঞ্জে ৭ জন সাব-ইন্সপেক্টর নিয়োগের সিদ্ধান্ত হয়েছিল বলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়। পরে রাজনৈতিক দলীয় চাপ ও তদবির রক্ষার জন্যই আরও ২০০ জন বাড়ানো হচ্ছে। এতে মনগড়াভাবে জেলাভিত্তিক সংখ্যায় পরিবর্তন আনা হবে।
সূত্র জানায়, এসআই নিয়োগের জন্য যে জেলা কোটা নির্ধারিত রয়েছে, তাকে অপ্রতুল আখ্যা দিয়ে কোটা বাড়ানোর দাবি করছেন মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও সংসদ সদস্যরা। পাশাপাশি নিজেদের পছন্দের প্রার্থীরা যাতে নিয়োগ পান সে ব্যাপারেও রয়েছে জোর তদবির। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র আরও জানায়, তদবিরের কোটা পূরণের জন্যই নিয়োগের সংখ্যা বাড়ানো হচ্ছে। তবে সূত্রমতে, সরকারের যুক্তি হলো তারা যা করছেন সরকারি কর্ম-কমিশনের (পিএসসি) নীতিমালা অনুযায়ী করছেন।

http://www.amardeshonline.com/pages/details/2010/07/29/36495

Monday 26 July 2010

ভারত থেকে ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুত্ আনতে ৩৫ বছরের সঞ্চালন চুক্তি : ভারতের অংশের সঞ্চালন লাইন নির্মাণের খরচও বহন করতে হবে বাংলাদেশকে

ভারত থেকে ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুত্ আনতে ৩৫ বছরের সঞ্চালন চুক্তি : ভারতের অংশের সঞ্চালন লাইন নির্মাণের খরচও বহন করতে হবে বাংলাদেশকে
বিশেষ প্রতিনিধি
ভারত থেকে বিদ্যুত্ আমদানি করতে গতকাল সঞ্চালন চুক্তি স্বাক্ষর করা হয়েছে। ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুত্ আমদানির লক্ষ্যে ৩৫ বছর মেয়াদি এ চুক্তি স্বাক্ষরিত হয় পাওয়ার গ্রিড কর্পোরেশন অব ইন্ডিয়া লি. (পিজিসিআইএল) ও বাংলাদেশ পাওয়ার ডেভেলপমেন্ট বোর্ডের (বিপিডিবি) মধ্যে। গতরাতে অনুষ্ঠিত চুক্তিস্বাক্ষর অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেন, এ চুক্তি দু’দেশের পারস্পরিক সহযোগিতার ক্ষেত্রে মাইলফলক। চুক্তি অনুযায়ী ভারতের অংশে বাহারামপুর পর্যন্ত প্রায় ৮০ কিলোমিটার এবং বাংলাদেশ অংশে ভেড়ামারা পর্যন্ত প্রায় ৪০ কিলোমিটার নতুন সঞ্চালন লাইন এবং বিশেষ ধরনের সাবস্টেশন ও সুইচিং স্টেশন নির্মাণ করা হবে। ভারতের অংশের সঞ্চালন লাইন, সুইচিং স্টেশন স্থাপনসহ পুরো খরচ বহন করবে বাংলাদেশ। দু’দেশে অবকাঠামো নির্মাণ খাতে বাংলাদেশের ১১শ’ কোটি টাকার বেশি খরচ হবে বলে অনুষ্ঠানে উপস্থিত পিডিবি’র এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন। ভারতের অংশে ৮০ কিলোমিটার বিদ্যুত্ সঞ্চালনের খরচ বা হুইলিং চার্জ নির্ধারণ করবে ভারতের কেন্দ্রীয় ইলিক্ট্রিসিটি রেগুলেটরি কমিশন। ২০১২ সাল নাগাদ ভারত থেকে বিদ্যুত্ পাওয়া যাবে বলে অনুষ্ঠানে জানান প্রধানমন্ত্রীর জ্বালানি উপদেষ্টা ড. তৌফিক-ই-এলাহী চৌধুরী।
চলতি বছরের জানুয়ারি মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে ভারত সফরকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারত থেকে বিদ্যুত্ আমদানির ব্যাপারে সেদেশের প্রধানমন্ত্রী ড. মনমোহন সিংয়ের সঙ্গে এমওইউ স্বাক্ষর করেন। তার ধারাবাহিকতায় গতকাল চূড়ান্ত সঞ্চালন চুক্তি স্বাক্ষরিত হলো। বাংলাদেশের পক্ষে চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন পিডিবি’র সচিব আজিজুল ইসলাম। ভারতের পক্ষে স্বাক্ষর করেন পিজিসিআইএলের নির্বাহী পরিচালক (বাণিজ্য) অরুণ কুমার। বিদ্যুত্ সচিব আবুল কালাম আজাদের সভাপতিত্বে চুক্তিস্বাক্ষর অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন জ্বালানি সচিব মেজবাহ উদ্দিন, ঢাকাস্থ ভারতীয় হাইকমিশনের ডেপুটি হাইকমিশনার। পিডিবি চেয়ারম্যান এসএম আলগীর কবির অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন।
চুক্তি অনুযায়ী ট্রান্সমিশন লাইন নির্মাণ সম্পন্ন হলে প্রথমে ২৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুত্ আমদানি করা হবে। পর্যায়ক্রমে তা ৫০০ মেগাওয়াটে উন্নীত হবে। তবে কখনও বাংলাদেশে বিদ্যুত্ উদ্বৃত্ত হলে এবং ভারতে চাহিদা থাকলে একই সঞ্চালন লাইনে বাংলাদেশ বিদ্যুত্ রফতানিও করতে পারবে। ভারতের অংশে নির্মিত সঞ্চালন লাইনের খরচ কে বহন করবে তা নিয়ে মতবিরোধ চলছিল। শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশ ওই খরচ বহনে সম্মত হওয়ায় চুক্তি স্বাক্ষরিত হলো। ভারতের অংশে ৮০ কিলোমিটার সঞ্চালন লাইন নির্মাণে ঠিক কত টাকা ব্যয় হবে তা পিডিবি কর্মকর্তারা জানাতে পারেননি। তবে তারা বলেন, সরকারের উচ্চপর্যায়ে এ বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। বাংলাদেশ অংশে ৪০০ কেভি ক্ষমতার সঞ্চালন লাইন, সাবস্টেশনসহ আনুষঙ্গিক অবকাঠামো নির্মাণ কাজে কমপক্ষে ১ হাজার ৫০ কোটি টাকা লাগবে বলে জানা গেছে।
চুক্তি অনুযায়ী ভারত থেকে বিদ্যুত্ আমদানি শুরু হলে পিডিবি মাসিক ভিত্তিতে বিল পরিশোধ করবে। বিল করার ৬০ দিনের মধ্যে পরিশোধ করতে ব্যর্থ হলে বিলম্বজনিত সুদসহ পরিশোধ করতে হবে।

http://www.amardeshonline.com/pages/details/2010/07/27/36383

Saturday 24 July 2010

উপজেলা চেয়ারম্যান থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলে কথা

নড়াইল প্রতিনিধি | কালের কণ্ঠ | ঢাকা, শনিবার, ৯ শ্রাবণ ১৪১৭, ১১ শাবান ১৪৩১, ২৪ জুলাই ২০১০

নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলার বড়দিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভবন ও জমি 'ইজারা' নিয়ে মার্কেট নির্মাণ করছেন কালিয়া উপজেলা চেয়ারম্যান ও নড়াগাতি থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক খান শামিমুর রহমান। স্কুল কর্তৃপক্ষ বলছে, 'ঊর্ধ্বতন মহলকে' জানিয়েই ২৫ বছরের জন্য ওই জমি ইজারা দেওয়া হয়েছে। তবে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বলছেন, স্কুল কমিটি কোনোভাবেই ইজারা দিতে পারে না। সরকারি জমিতে ব্যক্তিমালিকানার স্থাপনা নির্মাণও সম্পূর্ণ অবৈধ।


বড়দিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ওপর ও পাশে ভবন নির্মাণ করছেন উপজেলা চেয়ারম্যান শামীমুর রহমান খান। ছবি : কালের কণ্ঠ

বড়দিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, স্কুলভবনের দক্ষিণ পাশের জমিতে দুটি দোকান ঘর উঠেছে। স্কুলের একতলা ভবনের ওপর দ্বিতীয় তলার নির্মাণ কাজ চলছে। স্থানীয়রা জানান, সেখানে মার্কেট নির্মাণ করছেন কালিয়া উপজেলার চেয়ারম্যান খান শামিমুর রহমান। স্কুল কমিটির সভাপতি আবদুল মতিন খাঁ তাঁর আপন বড় ভাই।
স্কুলের জায়গায় মার্কেট নির্মাণ প্রসঙ্গে জানতে শামিমুর রহমান খান কালের কণ্ঠকে বলেন, 'নিয়ম অনুযায়ী স্কুল কমিটির সভাপতির সঙ্গে চুক্তি করেই জায়গাটি লিজ নিয়েছি। তারপরই নির্মাণ কাজ শুরু করেছি।'
আবদুল মতিন খাঁ জানান, স্কুলের পরিচালনা কমিটি ২৫ বছরের চুক্তিতে মাসিক ৫০০ টাকা ভাড়ায় শামিমুর রহমানকে মার্কেট নির্মাণের অনুমতি দিয়েছে।
স্কুলের প্রধান শিক্ষক দীপক কুমার বালা দাবি করেন, স্কুলের ওপর নির্মিতব্য স্থাপনাটি সম্পর্কে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। তারা সরেজমিন পরিদর্শন করে গেছেন।
তবে লোহাগড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অরুণ কুমার মণ্ডল বলছেন, সরকারি জমিতে এভাবে স্থাপনা নির্মাণ সম্পূর্ণ অবৈধ। তিনি কালের কণ্ঠকে বলেন, 'স্কুল কমিটি কোনোভাবেই ইজারা দিতে পারে না। আমরা তাদের নির্মাণ কাজ বন্ধ করার নির্দেশ দিয়েছি। তা না হলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।'

Friday 23 July 2010

তদবিরে বিলম্বিত শিক্ষক নিয়োগ

সাবি্বর নেওয়াজ | Shamokal শনিবার | ২৪ জুলাই ২০১০ | ৯ শ্রাবণ ১৪১৭ | ১১ শাবান ১৪৩১

সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রায় ৩৪ হাজার সহকারী শিক্ষক-শিক্ষিকা নিয়োগ প্রক্রিয়া দীর্ঘায়িত হতে যাচ্ছে। চলতি মাসেও এ পরীক্ষার ফল চূড়ান্ত হচ্ছে না। সরকারি চাকরিতে এটিই স্মরণকালের মধ্যে সবচেয়ে বড় নিয়োগ। নিয়োগ পরীক্ষায় অংশ নেওয়া সারাদেশের লাখো চাকরিপ্রার্থী এখন এ পরীক্ষার ফলের দিকে চেয়ে রয়েছেন। এ নিয়োগ নিয়ে রাজনৈতিক প্রভাবশালীদের সঙ্গে যোগ হয়েছে আমলাদের চাপ ও তদবির। নানামুখী তদবিরে এ পরীক্ষার ফল প্রকাশে বিলম্ব হচ্ছে। গত ১৫ জুন মৌখিক পরীক্ষা শেষ হয়ে গেলেও প্রায় ১৪টি জেলার পরীক্ষার ফল এখনও প্রাথমিক ও গণশিক্ষা অধিদফতরে এসে পেঁৗছেনি। লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের প্রাপ্ত নম্বর যোগ করে চূড়ান্ত তালিকা প্রণয়ন করতে পারছে না প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতর। সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো দাবি করেছে, মৌখিক পরীক্ষা গ্রহণের চেয়ারম্যান ছিলেন জেলা প্রশাসকরা। প্রচণ্ড তদবিরের কারণেই ১৪টি জেলার প্রশাসকরা এখনও তাদের জেলার প্রার্থীদের মৌখিক পরীক্ষার ফল চূড়ান্ত করে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরে পাঠাতে পারেননি। তবে আগস্টের
মাঝামাঝি উত্তীর্ণ প্রার্থীদের চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ করা হবে বলে জানিয়েছেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মোঃ মোতাহার হোসেন সমকালকে জানান, 'চলতি মাসে প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগের চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ হচ্ছে না। কারণ তিন-চার জেলার প্রার্থীদের মৌখিক পরীক্ষার ফল আমাদের কাছে এখনও আসেনি। প্রার্থীদের লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষার ফল একসঙ্গে যোগ করে আগামী মাসে চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ করা হবে।'



প্রার্থীদের মৌখিক পরীক্ষার নম্বর ঢাকায় পাঠাতে জেলা প্রশাসকদের দেরি হওয়ার কারণ সম্পর্কে প্রতিমন্ত্রী বলেন, 'স্থানীয় পর্যায়ের শিক্ষক নিয়োগের পরীক্ষা গ্রহণ কমিটির কর্মকর্তাদের কেউ কেউ অসুস্থ, কেউবা পারিবারিক এবং অন্যান্য সমস্যা থাকার কারণে চূড়ান্ত করা ফল ঢাকায় পাঠাতে পারছেন না।' প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের উপ-পরিচালক (প্রশাসন) মোঃ ফসিউল্লাহ অবশ্য বলেন, 'বেশিরভাগ জেলার প্রার্থীদের মৌখিক পরীক্ষার ফল আমাদের কাছে এসেছে। তবে কবে নাগাদ উত্তীর্ণ প্রার্থীদের চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ করা হবে তা এখনও বলা যাচ্ছে না।'
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, এখনও ১৪টি জেলার প্রার্থীদের মৌখিক পরীক্ষার ফল ঢাকায় প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরে আসেনি। স্থানীয় প্রভাবশালীরা নিজেদের পছন্দমতো প্রার্থীদের মৌখিক পরীক্ষায় নম্বর বাড়িয়ে দিতে চাপ প্রয়োগ করার কারণেই জেলা প্রশাসকদের ঢাকায় ফল পাঠাতে বিলম্ব হচ্ছে। অনেক জেলায় চাকরি দেওয়ার কথা বলে প্রার্থীদের কাছ থেকে প্রভাবশালীদের বিরুদ্ধে আর্থিক লেনদেনের অভিযোগও উঠেছে। সব মিলিয়ে চলতি মাসে এ নিয়োগ পরীক্ষার ফল প্রকাশ করার কথা থাকলেও শেষতক তা হচ্ছে না।
'প্রাথমিকের শিক্ষক-শিক্ষিকা নিয়োগের ক্ষেত্রে কোনো ঘুষ লেনদেন হচ্ছে না। এমনকি কোনো রাজনৈতিক তদবিরও কাজে আসছে না। লিখিত এবং মৌখিক পরীক্ষায় যারা বেশি নম্বর পাবেন, কেবল তারাই চূড়ান্ত ফলে অন্তর্ভুক্ত হয়ে চাকরি পাবেন।' গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী এ দাবি করলেও প্রকৃত চিত্র যে ভিন্ন তা তিনিও জানেন।
কয়েকজন জেলা প্রশাসকের সঙ্গে কথা বলে প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগে তদবির সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া গেছে। তবে সঙ্গত কারণেই তারা তাদের নাম প্রকাশে অপারগতা প্রকাশ করেন। এক জেলা প্রশাসক সমকালকে জানান, 'আমার ওপর চাপ থাকা সত্ত্বেও মোটামুটিভাবে চেষ্টা করেছি মেধাবী প্রার্থীদের ভালো নম্বর দিতে। নইলে ভালোমানের প্রাথমিক শিক্ষক এ জেলায় থাকবে না। ফল হিসেবে কোমলমতি শিশুরা মানসম্পন্ন শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হবে।' জানা গেছে, চাঁদপুরের এক সংসদ সদস্য তার প্যাডে তার নির্বাচনী উপজেলার সর্বমোট ১১৪ জন প্রার্থীর নাম-ঠিকানা উল্লেখ করে তাদের নিয়োগ দেওয়ার জন্য জেলা প্রশাসককে ডিও লেটার দেন। একইভাবে যশোরের এক সংসদ সদস্য ১৮ জনের নামের তালিকা দিয়ে জেলা প্রশাসকের কাছে পাঠান মৌখিক পরীক্ষার নম্বর বাড়িয়ে দিতে। ওই সংসদ সদস্য তালিকার ব্যক্তিদের বর্তমান সরকারের দলীয় আদর্শের কর্মী এবং তারা অতীতে নির্যাতিত হয়েছেন বলে উল্লেখ করেন। তিনি এ তালিকা প্রাথমিক ও গণশিক্ষামন্ত্রী ডা. আফছারুল আমিনের কাছেও দেন। জানা গেছে, প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগে সবচেয়ে বেশি চাপ রয়েছে ঢাকা, মানিকগঞ্জ, কুমিল্লা, চট্টগ্রাম, লালমনিরহাট, রংপুর, বগুড়া, খুলনা, সাতক্ষীরা, কুষ্টিয়া, যশোর, ফেনী, নোয়াখালী, রাজশাহী, সিলেট, ব্রাহ্মণবাড়িয়া. নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর, চাঁদপুর, মুন্সীগঞ্জ, সিরাজগঞ্জ, কক্সবাজার, বরিশাল, বাগেরহাট, দিনাজপুর, জামালপুর, ময়মনসিংহ এবং টাঙ্গাইলের জেলা প্রশাসকের ওপর।
গত ৮ জানুয়ারি সারাদেশে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক নিয়োগের লিখিত পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। পরীক্ষায় প্রায় সাড়ে ৭ লাখ প্রার্থী অংশগ্রহণ করেন। লিখিত পরীক্ষায় কোন প্রার্থী কত নম্বর পেয়েছেন, তা সম্পূর্ণ গোপন রাখা হয়েছে। লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের মধ্য থেকে প্রায় ১ লাখ ৩৪ হাজার প্রার্থী মৌখিক পরীক্ষায় অংশ নিয়েছেন। গত ১৫ জুন মৌখিক পরীক্ষা গ্রহণ শেষ হয়। এখন সবাই ফলের অপেক্ষায় দিন পার করছেন। মোট ১০০ নম্বরের শিক্ষক নিয়োগের লিখিত পরীক্ষার নম্বর ৮৫ এবং মৌখিক পরীক্ষার নম্বর ১৫।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় জানায়, সহকারী শিক্ষক নিয়োগের বিজ্ঞাপন দেওয়ার সময় সরকারের সিদ্ধান্ত ছিল ২৫ হাজার শিক্ষক-শিক্ষিকা নিয়োগ দেওয়া হবে। তবে পরে গত মে মাসে পদ বাড়িয়ে সর্বমোট ৩৪ হাজার শিক্ষক নিয়োগের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এবার প্রতি উপজেলায় গড়ে ৭০ থেকে ৭৫ জন শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হবে। বেশি শিক্ষক নিয়োগ দেওয়ার কারণ হিসেবে বলা হয়েছে, প্রতি বছর প্রায় দুই হাজার শিক্ষক অবসরে যান। তাদের স্থানে যোগ্য শিক্ষক হিসেবে গড়ে উঠতে অন্যদের বেশি সময় লাগে। তাই একসঙ্গে বেশি শিক্ষক নিয়োগ করা হবে।

Thursday 22 July 2010

দায়সারা তদন্ত | আওয়ামী লীগনেতা জড়িত

দায়সারা তদন্ত | বিজি প্রেসের প্রতিবেদন অনেকটা 'আইওয়াশ'
সাবি্বর নেওয়াজ | Shamokal শুক্রবার | ২৩ জুলাই ২০১০ | ৮ শ্রাবণ ১৪১৭ | ১০ শাবান ১৪৩১

সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁসের ঘটনায় বিজি প্রেসের গঠিত তদন্ত কমিটি গতকাল দায়সারা গোছের একটি তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। প্রতিবেদনে তারা বলছে_ যারা পুলিশের হাতে আটক আর যারা পলাতক তারা প্রশ্নপত্র ফাঁস করে থাকতে পারেন। প্রশ্ন ফাঁসে জড়িতদের কাউকে সুস্পষ্টভাবে চিহ্নিত করতে পারেনি এ কমিটি। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, 'বিজি প্রেসের গোপনীয় শাখার কম্পোজিটর শহিদুল ইসলাম ফকির আটক হলে সে বলতে পারবে কারা প্রশ্ন ফাঁসের সঙ্গে জড়িত।' প্রশ্ন ফাঁস রোধে এ কমিটি ১৩ দফা সুপারিশ পেশ করেছে। এদিকে পুলিশের রিমান্ডে গ্রেফতারকৃতদের কাছ থেকে বিভিন্ন তথ্য বেরিয়ে আসাসহ বিজি প্রেস এবং বিভিন্ন অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা উদ্ধারের পরও বিজি প্রেসের এ তদন্ত কমিটি কেন সুনির্দিষ্টভাবে কাউকে শনাক্ত করতে পারল না তা
নিয়ে নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। বিজি প্রেসের পাঁচ সদস্যের কমিটির এ তদন্ত 'আইওয়াশ' বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। অন্যদিকে যে মন্ত্রণালয়ের অধীন বিজি প্রেস সেই মন্ত্রণালয় তদন্ত কমিটি গঠনের কোনো উদ্যোগ না নেওয়ায়ও নানা প্রশ্নের সৃষ্টি হয়েছে।
প্রতিবেদনটি প্রণয়নের কাজ গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে শেষ করা হয়। রাত সাড়ে ৯টায় বিজি প্রেসের মহাপরিচালক আ ল ম আবদুর রহমানের কাছে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়া হয়। মহাপরিচালক রোববার এ প্রতিবেদন সংস্থাপন মন্ত্রণালয়ে জমা দিতে পারেন বলে জানা গেছে।
ভবিষ্যতে প্রশ্ন ফাঁসের ঘটনা যেন না ঘটে সেজন্য সরকারের কাছে পেশ করা ১৩ দফা সুপারিশে সাধারণ পুলিশের বদলে এখন থেকে আর্মড পুলিশ অথবা বিডিআর সদস্যদের দিয়ে বিজি প্রেসের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার ওপর গুরুত্ব আরোপ করা হয়। এছাড়া ভবিষ্যতে বিজি প্রেসের নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও সম্প্রসারণ, অ্যানালগ পদ্ধতির বদলে ডিজিটাল পদ্ধতির সিসি টিভি চালু, গোপনীয় শাখার জন্য নতুন ও স্বতন্ত্র প্রেস মেশিন কেনা, এ শাখায় প্রথম শ্রেণীর একজন সার্বক্ষণিক কর্মকর্তা রাখা এবং বহিরাগত মুদ্রণ ও বাঁধাই শ্রমিকদের দিয়ে ভবিষ্যতে কোনো কাজ না করানোর সুপারিশ করা হয়েছে।
প্রশ্ন ফাঁসের ঘটনায় আরও একটি তদন্ত কমিটি কাজ করছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয় এ কমিটি গঠন করেছে। মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (প্রশাসন) এস এম গোলাম ফারুকের নেতৃত্বে গঠিত ছয় সদস্যের এ তদন্ত কমিটি আগামী রোববার দুপুর আড়াইটায় আনুষ্ঠানিকভাবে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদের কাছে তাদের তদন্ত প্রতিবেদন পেশ করবে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এ কমিটির এক সদস্য সমকালকে জানান, তাদের কমিটির প্রতিবেদন প্রায় চূড়ান্ত। তাদের তদন্তে বিজি প্রেস কর্তৃপক্ষের গাফিলতিই অতি প্রকটভাবে ধরা পড়েছে। তাই প্রশ্ন ফাঁসের জন্য বিজি প্রেস কর্তৃপক্ষকেই দায়ী করা হতে পারে।
গত ৮ জুলাই রাতে সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের বিষয়টি রংপুরে ধরা পড়ে। এ ঘটনায় সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে এরই মধ্যে বিজি প্রেসের পাঁচ কর্মকর্তা-কর্মচারীকে বরখাস্ত করা হয়েছে। পরে ঘটনা তদন্তের জন্য পাঁচ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে বিজি প্রেস কর্তৃপক্ষ। এ তদন্ত কমিটির প্রধান বিজি প্রেসের পরিচালক (প্রশাসন) আবুল কাসেম। সদস্যরা হলেন, উপ-পরিচালক (যুগ্ম সচিব) মোঃ মুজিবুর রহমান, উপ-পরিচালক নিতাইপদ দাস, সিকিউরিটি প্রিন্টিং প্রেসের (জিপি প্রেস) উপ-পরিচালক মোঃ আবু ইউনুস এবং সদস্য সচিব বিজি প্রেসের সহকারী পরিচালক আতিকুল ইসলাম। এ কমিটির তদন্ত প্রতিবেদনে দোষীদের সঠিকভাবে চিহ্নিত করার বিষয়টি আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর তদন্তের ওপর নির্ভর করছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। বিজি প্রেসের নিরাপত্তা ব্যবস্থা ঢেলে সাজানোসহ নানা বিষয়ে মোট ১৩টি সুপারিশ করেছে এ কমিটি।
তবে বিজি প্রেস কর্তৃপক্ষ তাদের পাঁচজন কর্মচারীকে বরখাস্ত করা এবং গত ১২ জুলাই দুপুরে খোদ বিজি প্রেস থেকে নগদ ২৮ লাখ টাকাসহ ফর্মা প্রুফ প্রেসম্যান মোঃ আবদুল জলিল (৫০) নামে এক কর্মচারীকে পুলিশ গ্রেফতার করার পরও এ তদন্ত কমিটি সুনির্দিষ্টভাবে দোষীদের চিহ্নিত করতে না পারায় নানা প্রশ্ন উঠেছে। কমিটির সদস্যরা কোনোভাবে 'ম্যানেজ' হয়ে গেছেন কি-না তা নিয়ে বিজি প্রেসের সাধারণ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে শুরু হয়েছে গুঞ্জন।
'কেন প্রকৃত দোষীদের আপনারা চিহ্নিত করতে পারলেন না?' জানতে চাইলে এ কমিটির সদস্য উপ-পরিচালক মোঃ মুজিবুর রহমান গত রাতে সমকালকে বলেন, 'সিসি টিভি কাজ না করায় এবং কোনো প্রত্যক্ষদর্শী না থাকায় সন্দেহাতীতভাবে কাউকে দোষী বলে চিহ্নিত করা যায়নি। তবে এ ঘটনায় রংপুরে মামলা হয়েছে। মামলার পুলিশি তদন্ত চলছে এবং এতে প্রকৃত দায়ী ব্যক্তিরা বের হয়ে আসবে।'
তদন্ত কমিটির সদস্য-সচিব ও বিজি প্রেসের সহকারী পরিচালক আতিকুল ইসলাম গতরাতে সমকালকে বলেন, 'আমরা যে ৪৭ জনের সাক্ষ্য নিয়েছি (৩০ জনের মৌখিক, ১৭ জনের লিখিত) তাদের কেউ-ই বলেননি যে, তাদের জানামতে প্রশ্ন ফাঁসের সঙ্গে কে বা কারা দায়ী। তাই প্রকৃত অপরাধীকে খুঁজে বের করা খুব কঠিন ছিল। তবে আমরা মনে করি কম্পোজিটর শহিদুল ইসলাম ফকির গ্রেফতার হলে সব বেরিয়ে আসবে।'
চূড়ান্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিজি প্রেসের নিরাপত্তা ব্যবস্থা দুর্বল হওয়ার কারণেই প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনাটি ঘটেছে। গোপনীয় শাখায় বসানো ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরাগুলো এ শাখার পুরো চিত্র ধারণ করতে পারে না। আর সিসি টিভির ক্যাসেট সরবরাহ করে থাকে প্রশ্ন ছাপার জন্য দেওয়া পরীক্ষা গ্রহণকারী কর্তৃপক্ষ। সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ছাপার সময় বিজি প্রেসকে কোনো ক্যাসেট সরবরাহ করেনি 'মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদফতর' (মাউশি)। ফলে এ প্রশ্ন ফাঁসের কোনো রেকর্ড নেই কর্তৃপক্ষের কাছে। এছাড়া প্রশ্নপত্রের একাধিক সেট পাণ্ডুলিপি সরবরাহ করা হলে প্রশ্ন ফাঁসের ঝুঁকি তাতে কমে যায়। মাধ্যমিক শিক্ষক নিয়োগের জন্য প্রশ্নপত্রের একটি মাত্র পাণ্ডুলিপিই মাউশি থেকে বিজি প্রেসকে সরবরাহ করা হয়েছিল।
তদন্ত প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, বিজি প্রেসের সাবেক উপ-পরিচালক মাসুম খানের দায়িত্বে গুরুতর অবহেলা রয়েছে। মাধ্যমিক পরীক্ষার প্রশ্নপত্রের সঙ্গে একই দিন জাতীয় সংসদের জন্য চলতি বাজেটের 'অর্থবিল' ছাপানো হয়। অর্থবিলের কপির সঙ্গে প্রশ্নপত্র বাইরে চলে গেছে তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। বিজি প্রেসে ছাপার মেশিন স্বল্পতা রয়েছে। অভাব রয়েছে লোকবলেরও। ফলে কাজের চাপ বেশি হলে বা জরুরি কাজের সময় বাইরের মেশিন আর লোকবল নিয়ে কাজ চালাতে হয়। বাইরের জনবলের মাধ্যমেই গোপনীয় শাখার গোপনীয়তা ফাঁস হয়ে যায়। এছাড়া গোপনীয় শাখায় কর্মরতদের নিয়োগের সময় পুলিশ ভ্যারিফিকেশন সঠিকভাবে করা হয়নি। ফলে তাদের চরিত্র ও নৈতিকতা নিয়েও প্রশ্ন থেকে যায়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক তদন্ত কমিটির এক সদস্য বলেন, তদন্ত কমিটির রিপোর্টের বাইরে অনেক গুরুত্বপূর্ণ কারণ রয়েছে। বিভিন্ন কারণে এ তদন্ত কমিটি রিপোর্টে সেসব বিষয় উল্লেখ করতে পারেনি। বিজি প্রেস রাষ্ট্রের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান হলেও দীর্ঘদিন ধরে এটি চলছিল বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে।
সমকালের অনুসন্ধানে জানা যায়, বিজি প্রেসের কর্মচারী ইউনিয়ন (সিবিএ) অত্যন্ত শক্তিশালী একটি সংগঠন। কর্তৃপক্ষের ওপর তাদের প্রভাব অত্যন্ত বেশি। বিজি প্রেসে কর্মচারী নিয়োগ, গোপনীয় শাখায় পছন্দের ব্যক্তিকে বদলি, প্রেসের কাগজ-কালি কেনাসহ নানা প্রক্রিয়ায় কর্মচারী ইউনিয়নের নেতারা সরাসরি জড়িত। পুলিশের হাতে আটক বিজি প্রেসের কম্পোজিটর মোস্তফা, লাবণী ও ফর্মা প্রুফ প্রেসম্যান জলিল সিবিএর শীর্ষ নেতাদের অত্যন্ত কাছের। তাই তদন্ত প্রতিবেদনে তাদের নাম উল্লেখ করে বিজি প্রেসের কর্মকর্তারা সিবিএর হাতে 'অপমানিত ও লাঞ্ছিত' হতে চাননি। তাই গত দু'দিনে একাধিকবার তদন্ত প্রতিবেদন লেখা ও তা কাটাছেঁড়া করা হয়। শেষতক 'দায়ী কারা' শীর্ষক অনুচ্ছেদটিই বাদ দেওয়া হয়। বিজি প্রেসের একাধিক সূত্র জানায়, তদন্ত কমিটি বিজি প্রেসের মহাপরিচালকের কক্ষে বসে তার পরামর্শ মতেই তদন্ত প্রতিবেদন তৈরি করেছে। এরপর আবার তার কাছেই জমা দেওয়ার প্রস্তুতি নেয়।
সমকালের লালমনিরহাট প্রতিনিধি জানান, প্রশ্ন ফাঁসের ঘটনার সঙ্গে জড়িত সন্দেহে গ্রেফতারকৃত লালমনিরহাট সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মতিয়ার রহমান সাজুকে গতকাল চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। গ্রেফতারের পর বেরিয়ে আসছে অর্থ কেলেঙ্কারির নানা তথ্য।
জানা গেছে, জেলার কালিগঞ্জ উপজেলার গোড়ল ইউনিয়নের মোঃ ধন মামুদ মিয়ার ছোট ছেলে মতিয়ার রহমান সাজু ১০ বছর ধরে শিক্ষকতা করেন। ২০০৬ সালের ২৩ ডিসেম্বর লালমনিরহাট সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক পদে প্রথম চাকরিতে যোগদান করেন। অবৈধ উপায়ে নিজের চাকরি নিশ্চিত করতে বিভিন্ন জনের সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করেন সাজু। এক পর্যায়ে বিজি প্রেসের কয়েকজন কর্মচারীর সঙ্গে পরিচয় হলে তাদের এজেন্ট হিসেবে কাজ শুরু করেন তিনি। শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস চক্রের সঙ্গে জড়িয়ে সাজু পুরো জেলায় তার নিজস্ব এজেন্ট তৈরি করেন। বিগত ৩ বছরে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁস করে প্রচুর টাকা কামিয়ে নেন মতিয়ার। ২০০৯ সালে প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নপত্র একদিন আগেই চলে আসে তার কাছে। সাজু এক সেট প্রশ্ন বিক্রি করেন ১ লাখ টাকা করে। ২০০৯ সালে সাজু তার দুই বোন তানজিলা আক্তার শিউলি, সানজিনা আক্তার শেফালী ও তার বড় ভাই ফজলুল হকের পুত্রবধূ শাহিনা এক পরিবারেই ৩ জনকে সরকারি চাকরি পাইয়ে দেন। বিষয়টি সে সময় এলাকায় চাঞ্চল্য সৃষ্টি করে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গ্রেফতারকৃত শিক্ষক মতিয়ার রহমান সাজু গত বছর রংপুর শহরের হনুমানতলায় ১৬ লাখ টাকায় একটি পাকা বাড়ি কিনেছেন। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে কালিগঞ্জ উপজেলার শিয়াল খোওয়া সিনেমা হল এলাকায় ৮ লাখ টাকায় কিনেছেন আরও একটি বাড়ি। গোড়ল বিলে ১টি মাছের খামার কিনেছেন তিনি।
সমকালের রংপুর অফিস জানায়, সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র ফাঁস সিন্ডিকেটের সদস্য শিক্ষক মতিয়ার রহমান সাজুর অ্যাকাউন্টে ৮ লাখ টাকা ও বিজি প্রেসের কর্মচারী এটিএম মোস্তফার অ্যাকাউন্টে আরও ২৩ লাখ টাকার সন্ধান পেয়েছে পুলিশ। বুধবার গ্রেফতারকৃত সাজুকে দু'দিনের রিমান্ডে নিয়েছে পুলিশ। বিজি প্রেস ও পিএসসির ঊর্ধ্বতন ৬ কর্মকর্তা ছাড়াও রংপুর আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের দু'জন জড়িত থাকার প্রমাণ মিলেছে। তাদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।
রংপুর পুলিশ সুপার সালেহ মোহাম্মদ তানভীর গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে সাংবাদিকদের জানান, বুধবার সকালে লালমনিরহাট থেকে গ্রেফতারকৃত আমজাদ হোসেন ও তার ভাই শিক্ষক আনিছুর রহমানকে গ্রেফতার করে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে তারা জানায়, লালমনিরহাট সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের ইংরেজির সহকারী শিক্ষক মতিয়ার রহমান সাজু প্রশ্নপত্র ফাঁসের সঙ্গে জড়িত। এরই পরিপ্রেক্ষিতে বুধবার বিকেলে ডিবি পুলিশ সাজুকে লালমনিরহাট থেকে গ্রেফতার করে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে সাজু জানান, সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় তার ২১ প্রার্থী ছিল। এই ২১ প্রার্থীর কাছ থেকে তিনি প্রায় অর্ধকোটি টাকা নিয়েছেন। ওই টাকা থেকে তিনি শফিয়ার রহমানকে ২১ লাখ টাকা অগ্রিম দিয়েছেন। পুলিশি জিজ্ঞাসাবাদে তিনি আরও জানান, প্রাইম ব্যাংক রংপুর শাখায় তার অ্যাকাউন্টে ৮ লাখ টাকা রয়েছে। গতকাল আদালত তার দু'দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
পুলিশ সুপার আরও জানান, বিজি প্রেসের কর্মচারী মোস্তফার অ্যাকাউন্টে আরও ২৩ লাখ টাকার সন্ধান মিলেছে।
পুলিশ সুপার জানান, প্রশ্নপত্র ফাঁস সিন্ডিকেটের সঙ্গে বিজি প্রেস ও পিএসসির ৬ কর্মকর্তা এবং রংপুর জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য সাবেক ছাত্রলীগ নেতা তারিক হাসান তুহিন ও ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য মুরাদ হোসেনও জড়িত। তাদের গ্রেফতারে অভিযান চলছে।

Sunday 18 July 2010

ক্ষমতাসীন দলের নামে চলছে দখল

প্রণব বল, চট্টগ্রাম | তারিখ: ১৯-০৭-২০১০



একদিকে চলছে অবৈধ দখল ও ভরাটের কাজ, অন্যদিকে শিল্প-কারখানার বর্জ্য ও বিষাক্ত কালো পানি এসে মিশছে কর্ণফুলী নদীতে। গতকাল চট্টগ্রামের চাক্তাই এলাকা থেকে


কর্ণফুলী নদীর তীর ও জেগে ওঠা চরে দখল চলছে। সরকারি-বেসরকারি কারখানার পাশাপাশি আওয়ামী লীগের অঙ্গসংগঠনের নাম ভাঙিয়ে চলছে এই দখল। পাশাপাশি কিছু কারখানা নদীর পানি দূষণ করছে বলে অভিযোগ রয়েছে। পরিবেশ অধিদপ্তর গত জানুয়ারিতে কর্ণফুলী দূষণ ও দখলের সঙ্গে জড়িত ৩৯টি সরকারি-বেসরকারি কারখানা ও স্থাপনার তালিকা প্রকাশ করেছিল।
সরেজমিনে দেখা গেছে, কর্ণফুলী নদীর উত্তর তীরে শাহ আমানত ও তৃতীয় কর্ণফুলী সেতুর পশ্চিম ও পূর্ব পাশে নদীর জেগে ওঠা চর ও তীর দখল করে প্রায় এক হাজার ছোট ছোট ঘর ও দোকানপাট গড়ে উঠেছে। এ স্থাপনাগুলো অবৈধ উল্লেখ করে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মো. জাকের হোসাইন প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা সেতুর দুই পাশে গজিয়ে ওঠা ঘরবাড়ি চিহ্নিত করে একটি মানচিত্র করেছি। এগুলো সরকারি জায়গায় অবৈধভাবে তোলা হয়েছে। শিগগিরই এসব অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ শুরু হবে।’
হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশের পক্ষে করা এক রিটের পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্ট গতকাল রোববার কর্ণফুলী দূষণ, দখল ও ভরাট বন্ধ রাখার নির্দেশ দেন।
সেতুর পশ্চিম পাশে নদীর চর ও তীরে বাস্তুহারা লীগ, পাথরঘাটা শাখা ও হকার্স লীগ কোতোয়ালি শাখা নামে দুটি সাইনবোর্ড ঝোলানো হয়। এখানে ইতিমধ্যে ১০টি ঝুপড়ি দোকান চালু করা হয়েছে। দোকানি মো. হেলাল উদ্দিন বলেন, ‘আমরা ভাড়ায় দোকান নিয়েছি। একেকজন ২০০ থেকে ৪০০ টাকা ভাড়া দিই।’
দোকানিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মো. আবদুল কুদ্দুছ ওরফে কুদ্দুছ বেপারী নামে একজন ভাড়া তোলেন। কুদ্দুছ নিজেকে বাস্তুহারা লীগের সদস্য পরিচয় দিয়ে বলেন, ‘ভূমি উন্নয়নসহ বিভিন্ন খরচ মেটানোর জন্য আমরা প্রতিটি দোকান থেকে দিনে ৫-১০ টাকা চাঁদা নিই।’
একই জায়গায় সিটি করপোরেশন ইতিমধ্যে প্রায় ৩০টি পাকা দোকান নির্মাণ করে। আন্দোলনের মুখে সাবেক মেয়র এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরী তা বাতিল করলেও স্থাপনাগুলো ভাঙা হয়নি। এর পাশে চাক্তাই খালের মুখের পূর্ব পাশে নদীর জেগে ওঠা চরে ‘সি বিচ কলোনি’ নামে প্রায় ২০০ দোকান ও ঘর গড়ে উঠেছে। মো. মহিউদ্দিন নামে একজন এগুলো তদারক করেন। কলোনিতে গিয়ে তাঁকে পাওয়া যায়নি। তিনি বাস্তুহারা লীগের নেতা বলে জানা গেছে। কলোনির বাসিন্দা নূর মোহাম্মদ দাবি করেন, জায়গাগুলো ব্যক্তিমালিকানাধীন।
সেতুর পূর্ব পাশে জেগে ওঠা চর বালি দিয়ে ভরাট করে দখল করেছে বাকলিয়া বাস্তুহারা সমিতি। এখানে ১২ একর জায়গায় প্রায় সাড়ে ৫০০ প্লট রয়েছে। এর মধ্যে ঘর নির্মিত হয়েছে প্রায় ৩০০। কিছুদিন আগে বাকলিয়া ভূমি কার্যালয়ের উপসহকারী কর্মকর্তা নুরুল আফসার এসব দখলদারের বিরুদ্ধে বাকলিয়া থানায় একটি মামলা করেন। মামলায় জসিম উদ্দিন, শামসুল আলম তালুকদার, মো. মঈনুদ্দিনসহ বেশ কয়েকজন বাস্তুহারা সমিতির নেতাকে বিবাদী করা হয়। তাঁরা যখন যে সরকার আসে তখন সেই সরকারের ব্যানারে দখল চালান।
কর্ণফুলী দূষণ: পরিবেশ অধিদপ্তরের সাম্প্রতিক জরিপে দেখা যায়, সরকারি-বেসরকারি ৩৯টি কারখানা ও স্থাপনা কর্ণফুলীর গতিপ্রবাহ বিঘ্নিত করার পাশাপাশি প্রতিনিয়ত দূষণ করছে। এ ছাড়া প্রতিদিন আটটি খালের মাধ্যমে নগরের ৩০০ টন তরল ও কঠিন অপরিশোধিত বর্জ্য সরাসরি নদীতে পড়ছে।
পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালক (প্রয়োগ ও তদারকি) মোহাম্মদ মুনীর চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, ‘জরিপে উল্লিখিত প্রতিষ্ঠানের বাইরেও কিছু প্রতিষ্ঠান দখল ও দূষণের সঙ্গে জড়িত বলে আমরা শনাক্ত করেছি। এসব প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অভিযান চালানো হবে।
পরিবেশ অধিদপ্তরের হিসাবে সিটি করপোরেশনের পাশাপাশি দূষণ ও দখলের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের তালিকায় কালুরঘাটে চট্টগ্রাম দক্ষিণ বন বিভাগের একটি ডিপোও রয়েছে। তালিকায় ছয়টি বরফকল, চারটি লবণ কারখানা ও গুদাম, তিনটি সিমেন্ট কারখানা, নদীর তীরঘেঁষা দুটি বালু মহাল, দুটি ডকইয়ার্ড ও তিনটি আবাসিক ভবন রয়েছে।

http://www.prothom-alo.com/detail/date/2010-07-19/news/79905

Friday 16 July 2010

সরকারি জমিতে ছাত্রলীগের নেতাদের পাকা ঘর

গুরুদাসপুর (নাটোর) প্রতিনিধি | তারিখ: ১৭-০৭-২০১০

নাটোরের গুরুদাসপুর পৌর শহরের বিলচলন শহীদ শামসুজ্জোহা কলেজসংলগ্ন সরকারি জায়গা দখল করে পাকা ঘর নির্মাণ করছেন ছাত্রলীগের নেতারা। সেখানে তাঁরা শেখ রাসেল স্মৃতি সংসদের নামে একটি সাইনবোর্ডও ঝুলিয়ে রেখেছেন।
গত ১৫ জুলাই সরেজমিনে দেখা গেছে, কলেজের সামনের রাস্তার পাশে স্টেডিয়ামের জন্য বরাদ্দ করা জায়গা দখল করে বেশ কয়েকটি আধাপাকা ঘর তোলা হয়েছে। তার পূর্বপাশে ১০ ফুট দীর্ঘ ও সাড়ে আট ফুট প্রস্থের একটি পাকা ঘরের নির্মাণকাজ চলছে। সেখানে শেখ রাসেল স্মৃতি সংসদের সাইনবোর্ড ঝুলতে দেখা গেছে। স্থানীয় দোকানিরা জানান, ঘরটি ছাত্রলীগের বর্তমান ও সাবেক দুই সাধারণ সম্পাদক মিলে নির্মাণ করছেন।
গুরুদাসপুর পৌর ভূমি কার্যালয় সূত্র জানায়, জায়গাটি সরকারি। নিয়মনীতি উপেক্ষা করে ছাত্রলীগের নেতাসহ তাঁদের ছত্রছায়ায় থাকা অন্যরাও সরকারি জমি দখল করে ঘর তুলছেন। বিভিন্ন সময় পদক্ষেপ নিলেও নেতাদের দাপটের কারণে তা কার্যকর হয়নি।
গুরুদাসপুর উপজেলা সদরে গিয়ে কথা হয় ঘর নির্মাণকাজের সঙ্গে জড়িত আশরাফ শেখের সঙ্গে। তিনি নিজেকে ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও বর্তমানে যুবলীগের নেতা দাবি করে প্রথম আলোকে বলেন, ‘শেখ রাসেল স্মৃতি সংসদের জন্য ঘরটি নির্মাণ করা হচ্ছে। এ জন্য নাটোর-৪ আসনের (গুরুদাসপুর-বড়াইগ্রাম) সাংসদ আবদুল কুদ্দুস এক টন চাল বরাদ্দ দিয়েছেন। আর পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. জুমির মণ্ডল তাঁর ভাটা থেকে ইট দিয়ে সহায়তা করছেন।’ আশরাফ শেখ নিজেকে শেখ রাসেল স্মৃতি সংসদের সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা ছাত্রলীগের বর্তমান সাধারণ সম্পাদক রেজাউল করিমকে স্মৃতি সংসদের সভাপতি দাবি করেছেন।
আশরাফ শেখ আরও বলেন, ‘অনেকেই জায়গা দখল করে ঘর তুলে ব্যবসা করছে। সেখানে ছাত্রলীগের ছেলেরা শেখ রাসেলের স্মৃতি ধরে রাখতে (!) ঘর তুলছে। এতে ছাত্রলীগ আরও সংগঠিত হবে। তবে সরকার চাইলে যেকোনো সময় আমরা ঘর ভেঙে নিয়ে যেতে প্রস্তুত আছি।’
গুরুদাসপুর উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক রেজাউল করিম দাবি করেন, ‘এখন ছাত্রলীগের পদ থেকে অবসর নিতে হবে। বসার জায়গা করার জন্য একটি ঘর নির্মাণ করছি। সেখানে খেলাধুলা করে সময় কাটানো যাবে।’ এ ব্যাপারে লেখালেখি না করার জন্য তিনি এ প্রতিনিধিকে অনুরোধ জানান।
যোগাযোগ করা হলে গুরুদাসপুর পৌর ভূমি কার্যালয়ের এক তহশিলদার বলেন, ‘সরকারি জমি দখলের খবর পেয়ে গত ১৫ জুলাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) সহায়তায় সেখানে নির্মাণকাজ বন্ধ করে দিয়েছি।’

http://www.prothom-alo.com/detail/date/2010-07-17/news/79241