Monday 2 August 2010

যশোরে শাসকদলের সন্ত্রাসীদের তাণ্ডব ভাংচুর লুটপাট : কোটি টাকার সম্পত্তি দখল



যশোর অফিস ও অভয়নগর প্রতিনিধি
শাসক দলের এক প্রভাবশালী জনপ্রতিনিধির আশ্রিত সন্ত্রাসী বাহিনী গতকাল শিল্পশহর নওয়াপাড়ায় তিন ঘণ্টা ব্যাপক তাণ্ডব চালিয়েছে। এ সময় তারা বাড়িঘর, স্কুল, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে লুটপাট ও ভাংচুর করে। দখল করে নেয় প্রায় কোটি টাকা দামের বাণিজ্যিক সম্পত্তি। সন্ত্রাসীদের এ তাণ্ডবে সাধারণ মানুষের পাশাপাশি আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরাও ক্ষুব্ধ, বিরক্ত। তারা এ সন্ত্রাসের বিচার চেয়েছেন।
এলাকাবাসী ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, গতকাল ভোর ৫টার দিকে অভয়নগর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ডাক্তার আবদুল গফ্ফার ও ছাত্রলীগ উপজেলা কমিটির সহ-সভাপতি ফারাজী নাসিরের নেতৃত্বে ২০-২৫ জনের একদল সন্ত্রাসী নওয়াপাড়া শহরে অবস্থিত উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সামনে কোটা গ্রামের মমিনউদ্দিন সরদার ও সোহরাব হোসেন সরদারের মালিকানাধীন সাড়ে ১৫ শতক জমির ওপর থাকা আবদুল্লাহ আল মামুনের পলি ফার্মেসি, নাদিম হোসেনের নূর ইলেকট্রিক অ্যান্ড রেফ্রিজারেশন, প্রশান্ত কুমার কুণ্ডুর প্রণয় স্টোর, জামাল হোসেনের জামাল হোটেল, সানফ্লাওয়ার কিন্ডারগার্টেন এবং মমিন সরদার ও সোহরাব সরদারের বসতবাড়িতে হামলা চালিয়ে ব্যাপক ভাংচুর ও লুটপাট করে।
পলি ফার্মেসির মালিক আল মামুন বলেন, ভোর সাড়ে ৫টায় খবর পেয়ে আমার ওষুধের দোকানে গিয়ে দেখি সন্ত্রাসীরা ভাংচুর ও লুটপাট করছে। তারা আমার দোকানের ফ্রিজ, ওষুধসহ প্রায় সাড়ে ৪ লাখ টাকার মালামাল আমার সামনে দিয়ে নিয়ে গেলেও চেয়ে চেয়ে দেখা ছাড়া করার কিছু ছিল না।
প্রণয় স্টোরের মালিক প্রশান্ত কুমার কুণ্ডু বলেন, আওয়ামী লীগের লোকদের দ্বারা পুলিশের সামনে আমার এতবড় ক্ষতি হবে তা জীবনেও ভাবিনি। আমি এখন পথের ফকির হয়ে গেলাম।
মমিন সরদারের পুত্রবধূ স্কুলশিক্ষিকা জেসমিন আক্তার মিনি বলেন, আমি ভাত রান্না করছিলাম। হঠাত্ সন্ত্রাসীরা আমাকে মারধর শুরু করে টেনেহিঁচড়ে বের করে নিয়ে যায়। তারা ভাতের হাঁড়ি লাথি মেরে ফেলে দেয়।
সানফ্লাওয়ার কিন্ডারগার্টেনের প্রধান শিক্ষিকা রোজিয়াত সুলতানা জানান, তিনি স্কুলে এসে দেখতে পান সন্ত্রাসীরা স্কুলের কম্পিউটার, চেয়ার, বেঞ্চ ও পরীক্ষার খাতাপত্র সবকিছু নিয়ে গেছে। স্কুলটি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় সন্তানদের ভবিষ্যত্ নিয়ে শঙ্কিত হয়ে পড়েছেন বলে জানান অভিভাবকরা।
জমির মালিক মমিন সরদার বলেন, ক্রয়সূত্রে আমরা ওই জমির মালিক। দীর্ঘ ৩০ বছর ওই জমি ভোগদখল করে আসছি। কুচক্রী মহলের ষড়যন্ত্রের শিকার হওয়ার পর আদালতে মামলা করি। বিরোধীয় জমি নিয়ে আদালতে মামলা চলছে। আদালতের নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। তারপরও ডা. গফ্ফার ও নাসিরের নেতৃত্বে যেভাবে হামলা চালিয়ে উচ্ছেদ করা হলো তা অবিশ্বাস্য। হামলার সময় পুলিশ ছিল নির্বিকার।
অভয়নগর থানার ওসি আহসান হাবিব জানান, বিষয়টি আমি শুনেছি। শান্তি রক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিয়েছি।
অভয়নগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. জাহিদ হোসেন বলেন, আমি ঘটনাস্থলে গিয়ে চারটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, দুটি বাড়ি ও একটি স্কুলের কোনো মালামাল দেখতে পাইনি।
ক্ষতিগ্রস্ত ও হামলার শিকার ব্যক্তিরা বলছেন, সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা সবাই শাসক দল আশ্রিত। হামলা-ভাংচুরের সময় সন্ত্রাসীরা ওই নেতার নির্দেশেই তাণ্ডব চালানো হচ্ছে বলে দম্ভভরে জানায়। পুলিশের সামনে সন্ত্রাসীদের এই তাণ্ডবে হতবাক হয়ে গেছেন সাধারণ মানুষ। খবর পেয়ে দুপুরে যশোর থেকে একদল সাংবাদিক ঘটনাস্থলে পৌঁছলে নারী-পুরুষ নির্বিশেষে তাদের ওপর সন্ত্রাসীদের অত্যাচারের কাহিনী বর্ণনা করেন।
সন্ত্রাসী তাণ্ডবের প্রত্যক্ষদর্শী অভয়নগর উপজেলা আওয়ামী যুবলীগের সভাপতি আবদুর রউফ সাংবাদিকদের জানান, স্থানীয় এমপি ও জাতীয় সংসদের হুইপের প্রশ্রয়ে সন্ত্রাসীদের এই বেপরোয়া অবস্থা। শুধু এই সম্পত্তি নয়, মহাজোট ক্ষমতায় আসার পর অভয়নগরের বিভিন্ন স্থানে হুইপের নাম ভাঙিয়ে দলীয় সন্ত্রাসীরা মানুষের ভূসম্পত্তি দখল করে নিয়েছে।
উপজেলা আওয়ামী লীগের স্বাস্থ্য ও জনসংখ্যা বিষয়ক সম্পাদক কাউসার আলী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, মুক্তিযুদ্ধকালে রাজাকাররাও এভাবে লুটপাট করেনি। আজ (সোমবার) আওয়ামী লীগ আশ্রিত সন্ত্রাসীরা যেভাবে সাধারণ মানুষের সম্পত্তির ওপর চড়াও হলো তা এক কথায় ভয়াবহ। স্থানীয় নেতাদের জানিয়ে লাভ নেই, আমি প্রধানমন্ত্রীর কাছে এ ঘটনার বিচার চাই।

http://www.amardeshonline.com/pages/details/2010/08/03/37224

No comments:

Post a Comment