সালেহ আহমেদ, ধরমপাশা (সুনামগঞ্জ) | তারিখ: ২৪-০৭-২০১০
সুনামগঞ্জের ধরমপাশায় গ্রামীণ অবকাঠামো রক্ষণাবেক্ষণের (টিআর) বিশেষ বরাদ্দের প্রকল্প কাজে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতি হয়েছে। স্থানীয় সাংসদ মোয়াজ্জেম হোসেন তাঁর পছন্দের নেতা-কর্মীদের নামে গম বরাদ্দ দিয়েছেন। কিন্তু কোনো কাজ না করে এই গম আত্মসাৎ করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার (পিআইও) কার্যালয় ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, খাদ্য ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয় থেকে ২০০৯-১০ অর্থবছরে টিআর কর্মসূচির আওতায় ধরমপাশার ১০ ইউনিয়নে ৭৬টি প্রকল্পের বিপরীতে ১৩২ টন বিশেষ গম বরাদ্দের অনুমোদন দেওয়া হয়।
নীতিমালা অনুযায়ী জনকল্যাণমূলক কাজে এ বরাদ্দ ব্যবহারের কথা। কিন্তু গত জুন মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে প্রথম দফায় আওয়ামী লীগের ২৪ জন নেতা-কর্মীর বাড়িতে শৌচাগার নির্মাণের জন্য স্থানীয় সাংসদ মোয়াজ্জেম হোসেন ৩২ টন গম বরাদ্দ দেওয়াসহ ৭৬টি প্রকল্পের তালিকা পিআইও কার্যালয়ে পাঠান। মসজিদ, মন্দির ও গোরস্তানের উন্নয়ন, রাস্তা সংস্কার, মেরামত ও সাঁকো নির্মাণ প্রকল্পগুলোর মধ্যে ছিল। তবে পরবর্তী সময়ে শৌচাগার নির্মাণ প্রকল্পের নাম পরিবর্তন করে গ্রামভিত্তিক পাড়ায়-পাড়ায় শৌচাগার নির্মাণের প্রকল্প করা হয়। বরাদ্দের অধিকাংশ গম ইতিমধ্যে তুলে নেন নেতা-কর্মীরা। গত ৩০ জুনের মধ্যে প্রকল্প বাস্তবায়নের নির্দেশ থাকলেও নেতা-কর্মীদের দেওয়া প্রকল্পের কাজ এখনো শুরুই হয়নি।
ধরমপাশা সদর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. আবদুস ছাত্তারের বাড়িতে শৌচাগার নির্মাণের জন্য বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিল দুই টন গম। মো. আবদুস ছাত্তারকে করা হয় প্রকল্পের বাস্তবায়ন কমিটির সভাপতি। কাজের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘ব্যস্ত থাকায় এখনো কাজ শুরু করতে পারিনি, তবে খুব তাড়াতাড়ি তা করে নেব।’ সুখাইড় রাজাপুর দক্ষিণ ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রাসেল মিয়ার বাড়িতে শৌচাগার নির্মাণের জন্য বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিল এক টন গম। তিনি ওই গ্রামের বাসিন্দা এবং প্রকল্প কমিটির চেয়ারম্যান। কাজ করেছেন কি না, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘কী আর কাজ করব? ডানে-বাঁয়ে দিতে গিয়ে বেশকিছু টাকা খরচ হয়ে গেছে। তাই ভাবছি, আগামী শুষ্ক মৌসুমে কাজ করব।’
একইভাবে শৌচাগার নির্মাণের কোনো প্রকল্পের কাজ সংশ্লিষ্ট চেয়ারম্যান তথা আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা করেননি। এমনকি অনেকের নামে বরাদ্দ হলেও তিনি নন, গম তুলে নিয়েছেন অন্য কেউ। চামরদানী ইউনিয়নের আমজুড়া গ্রামের বাসিন্দা ছাত্রলীগ নেতা মান্নার বাড়িতে শৌচাগার নির্মাণের জন্য দুই টন গম বরাদ্দ দেখানো হলেও তিনি দাবি করেন, ‘প্রকল্প তালিকায় আমার নামে গম বরাদ্দ দেখে আমি অবাক হয়ে গেছি। আমি সাংসদের কাছে এ বাবদ বরাদ্দ চাইনি। আমি এ বরাদ্দের মাল উত্তোলন করিনি। কে বা কারা তা নিয়েছে, তা আমি জানি না।’
পাইকুরাটি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি গোলাম মোস্তফা জামালপুর গ্রামের রাস্তা মেরামতের জন্য বরাদ্দ পেয়েছেন পাঁচ টন গম। কিন্তু ওই সড়কে কোনো কাজই হয়নি। এর সত্যতা স্বীকার করে তিনি বলেন, ‘গত শুষ্ক মৌসুমে সড়কে সামান্য মাটি ভরাট করিয়েছিলাম। দলীয় কার্যালয়েও কিছু মাটির কাজ করিয়েছি। এ ছাড়া সংগঠন চালাতে আপ্যায়ন খরচও আমাকেই মেটাতে হয়। আমার ব্যয়ের আসল টাকাই এখনো উঠে আসেনি।’
উপজেলার পিআইও নূর আহমেদ বলেন, ‘আমাকে এ উপজেলার পাশাপাশি তাহিরপুরের অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করতে হচ্ছে। তাই সব প্রকল্পের কাজ দেখভাল করা সম্ভব হয়নি।’ উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা মো. বাবুল মিঞা বলেন, টিআর প্রকল্পের বিষয়ে এখনো কোনো অভিযোগ পাওয়া যায়নি। অভিযোগ এলে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বরাদ্দ, প্রকল্প অনুমোদন নিয়ম মোতাবেক হয়েছে দাবি করে সাংসদ মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, তদারকির দায়িত্ব প্রশাসনের। কাজ শুরু না করা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, নেতা-কর্মীরা অর্ধেক কাজ করে, অর্ধেক করে না—এটাই স্বাভাবিক।
http://www.prothom-alo.com/detail/date/2010-07-24/news/81173
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
No comments:
Post a Comment