প্রণব বল, চট্টগ্রাম | তারিখ: ১৯-০৭-২০১০
একদিকে চলছে অবৈধ দখল ও ভরাটের কাজ, অন্যদিকে শিল্প-কারখানার বর্জ্য ও বিষাক্ত কালো পানি এসে মিশছে কর্ণফুলী নদীতে। গতকাল চট্টগ্রামের চাক্তাই এলাকা থেকে
কর্ণফুলী নদীর তীর ও জেগে ওঠা চরে দখল চলছে। সরকারি-বেসরকারি কারখানার পাশাপাশি আওয়ামী লীগের অঙ্গসংগঠনের নাম ভাঙিয়ে চলছে এই দখল। পাশাপাশি কিছু কারখানা নদীর পানি দূষণ করছে বলে অভিযোগ রয়েছে। পরিবেশ অধিদপ্তর গত জানুয়ারিতে কর্ণফুলী দূষণ ও দখলের সঙ্গে জড়িত ৩৯টি সরকারি-বেসরকারি কারখানা ও স্থাপনার তালিকা প্রকাশ করেছিল।
সরেজমিনে দেখা গেছে, কর্ণফুলী নদীর উত্তর তীরে শাহ আমানত ও তৃতীয় কর্ণফুলী সেতুর পশ্চিম ও পূর্ব পাশে নদীর জেগে ওঠা চর ও তীর দখল করে প্রায় এক হাজার ছোট ছোট ঘর ও দোকানপাট গড়ে উঠেছে। এ স্থাপনাগুলো অবৈধ উল্লেখ করে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মো. জাকের হোসাইন প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা সেতুর দুই পাশে গজিয়ে ওঠা ঘরবাড়ি চিহ্নিত করে একটি মানচিত্র করেছি। এগুলো সরকারি জায়গায় অবৈধভাবে তোলা হয়েছে। শিগগিরই এসব অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ শুরু হবে।’
হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশের পক্ষে করা এক রিটের পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্ট গতকাল রোববার কর্ণফুলী দূষণ, দখল ও ভরাট বন্ধ রাখার নির্দেশ দেন।
সেতুর পশ্চিম পাশে নদীর চর ও তীরে বাস্তুহারা লীগ, পাথরঘাটা শাখা ও হকার্স লীগ কোতোয়ালি শাখা নামে দুটি সাইনবোর্ড ঝোলানো হয়। এখানে ইতিমধ্যে ১০টি ঝুপড়ি দোকান চালু করা হয়েছে। দোকানি মো. হেলাল উদ্দিন বলেন, ‘আমরা ভাড়ায় দোকান নিয়েছি। একেকজন ২০০ থেকে ৪০০ টাকা ভাড়া দিই।’
দোকানিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মো. আবদুল কুদ্দুছ ওরফে কুদ্দুছ বেপারী নামে একজন ভাড়া তোলেন। কুদ্দুছ নিজেকে বাস্তুহারা লীগের সদস্য পরিচয় দিয়ে বলেন, ‘ভূমি উন্নয়নসহ বিভিন্ন খরচ মেটানোর জন্য আমরা প্রতিটি দোকান থেকে দিনে ৫-১০ টাকা চাঁদা নিই।’
একই জায়গায় সিটি করপোরেশন ইতিমধ্যে প্রায় ৩০টি পাকা দোকান নির্মাণ করে। আন্দোলনের মুখে সাবেক মেয়র এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরী তা বাতিল করলেও স্থাপনাগুলো ভাঙা হয়নি। এর পাশে চাক্তাই খালের মুখের পূর্ব পাশে নদীর জেগে ওঠা চরে ‘সি বিচ কলোনি’ নামে প্রায় ২০০ দোকান ও ঘর গড়ে উঠেছে। মো. মহিউদ্দিন নামে একজন এগুলো তদারক করেন। কলোনিতে গিয়ে তাঁকে পাওয়া যায়নি। তিনি বাস্তুহারা লীগের নেতা বলে জানা গেছে। কলোনির বাসিন্দা নূর মোহাম্মদ দাবি করেন, জায়গাগুলো ব্যক্তিমালিকানাধীন।
সেতুর পূর্ব পাশে জেগে ওঠা চর বালি দিয়ে ভরাট করে দখল করেছে বাকলিয়া বাস্তুহারা সমিতি। এখানে ১২ একর জায়গায় প্রায় সাড়ে ৫০০ প্লট রয়েছে। এর মধ্যে ঘর নির্মিত হয়েছে প্রায় ৩০০। কিছুদিন আগে বাকলিয়া ভূমি কার্যালয়ের উপসহকারী কর্মকর্তা নুরুল আফসার এসব দখলদারের বিরুদ্ধে বাকলিয়া থানায় একটি মামলা করেন। মামলায় জসিম উদ্দিন, শামসুল আলম তালুকদার, মো. মঈনুদ্দিনসহ বেশ কয়েকজন বাস্তুহারা সমিতির নেতাকে বিবাদী করা হয়। তাঁরা যখন যে সরকার আসে তখন সেই সরকারের ব্যানারে দখল চালান।
কর্ণফুলী দূষণ: পরিবেশ অধিদপ্তরের সাম্প্রতিক জরিপে দেখা যায়, সরকারি-বেসরকারি ৩৯টি কারখানা ও স্থাপনা কর্ণফুলীর গতিপ্রবাহ বিঘ্নিত করার পাশাপাশি প্রতিনিয়ত দূষণ করছে। এ ছাড়া প্রতিদিন আটটি খালের মাধ্যমে নগরের ৩০০ টন তরল ও কঠিন অপরিশোধিত বর্জ্য সরাসরি নদীতে পড়ছে।
পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালক (প্রয়োগ ও তদারকি) মোহাম্মদ মুনীর চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, ‘জরিপে উল্লিখিত প্রতিষ্ঠানের বাইরেও কিছু প্রতিষ্ঠান দখল ও দূষণের সঙ্গে জড়িত বলে আমরা শনাক্ত করেছি। এসব প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অভিযান চালানো হবে।
পরিবেশ অধিদপ্তরের হিসাবে সিটি করপোরেশনের পাশাপাশি দূষণ ও দখলের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের তালিকায় কালুরঘাটে চট্টগ্রাম দক্ষিণ বন বিভাগের একটি ডিপোও রয়েছে। তালিকায় ছয়টি বরফকল, চারটি লবণ কারখানা ও গুদাম, তিনটি সিমেন্ট কারখানা, নদীর তীরঘেঁষা দুটি বালু মহাল, দুটি ডকইয়ার্ড ও তিনটি আবাসিক ভবন রয়েছে।
http://www.prothom-alo.com/detail/date/2010-07-19/news/79905
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
No comments:
Post a Comment