Thursday 22 April 2010

স্বাস্থ্য অধিদফতরের জমি আ’লীগ নেতাদের দখলে : পুলিশ ফাঁড়ি এখন দলীয় কার্যালয়



হাসান শান্তনু
স্বাস্থ্য অধিদফতরের জমিতে ঘর বানিয়ে ভাড়া দিচ্ছেন আওয়ামী লীগ নেতারা। মহাজোট সরকার গঠিত হওয়ার পর থেকে এ পর্যন্ত তারা প্রায় ২ হাজার ঘর বানিয়েছেন। অধিদফতরের ঢাকার মহাখালীর জমিতে বানানো কাঁচা ও আধাপাকা এসব ঘর থেকে তারা প্রতি মাসে ভাড়া পাচ্ছেন কয়েক লাখ টাকা। অধিদফতরের জমিতে অবৈধভাবে গড়ে ওঠা বাজার, দোকান, অন্য প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকেও স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতারা নিয়মিত চাঁদা আদায় করছেন। চাঁদা দিতে কেউ রাজি না হলে পুলিশের ভয় দেখানো, এমনকি হত্যার হুমকি দেয়া হচ্ছে। নেতাদের নির্মিত বস্তিঘর থেকে চলছে মাদকের রমরমা বাণিজ্য। পুরো এলাকা ভাসছে মাদকের ওপর। জায়গা সঙ্কটের কারণে স্বাস্থ্য অধিদফতর নিজস্ব কেন্দ্রীয় ভবনসহ অন্য গুরুত্বপূর্ণ ভবন নির্মাণ করতে না পারলেও এসব জমি উদ্ধারের কোনো তত্পরতা নেই। অধিদফতরের কর্মকর্তা ও পুলিশ প্রশাসনের সহযোগিতায় মাদক ব্যবসাকে চাঙ্গা করে তুলেছে। মহাখালীর ওই এলাকাজুড়ে সংক্রামক ব্যাধি, বক্ষব্যধি ও ক্যান্সার হাসপাতাল, আইসিডিডিআরবি, ইনস্টিটিউট অব পাবলিক হেলথ, জাতীয় পুষ্টি প্রতিষ্ঠানসহ সরকারের স্বাস্থ্য সংক্রান্ত বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান রয়েছে। প্রায় সব প্রতিষ্ঠানের আশপাশ রাস্তা দখল হয়ে গড়ে উঠছে দোকান ও বস্তিঘর। মাদকের ব্যবসা ও অবৈধ দখলের ফলে বিঘ্নিত হচ্ছে এলাকার স্বাভাবিক পরিবেশ। অন্যদিকে চাঁদাবাজদের দাপটে আতঙ্কিত স্থানীয় বাসিন্দারা।
পুলিশ ফাঁড়ি দখল করে দলীয় কার্যালয় : মহাখালীর সাততলা মোড়ে তিন বছর আগে সাবেক ওয়ার্ড কমিশনার হুমায়ুন কবির একটি একতলা ভবন নির্মাণ করেন। স্বাস্থ্য অধিদফতরের জমিতে এ ভবন পুলিশ ফাঁড়ির জন্য নির্মিত হয় বলে তখন তিনি দাবি করেন। বছর দুয়েক আগে ওই কমিশনার মারা গেছেন। এ ভবনটি এখন ২০ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের কার্যালয় হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। ভবনের সামনে টানানো হয়েছে দলীয় সাইনবোর্ড। আওয়ামী লীগ ক্ষমতাসীন হওয়ার পরই ভবনটি দখল করেন নেতারা। এ ভবন থেকে ভাড়া বাণিজ্য, মাদক ব্যবসা, চাঁদাবাজি পরিচালিত হয় বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, প্রকাশ্যে এলাকায় ফেনসিডিল, দেশি মদ, ইয়াবা ট্যাবলেটসহ নানাধরনের নেশার পণ্য বিক্রি, ছিনতাই, চাঁদাবাজির নিয়ন্ত্রণ এ কার্যালয় থেকেই হয়। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক বাসিন্দা আমার দেশ-এর কাছে অভিযোগ করেন, দিনে এ কার্যালয়ে যারা আড্ডা দেয়, সন্ধ্যার পর তারাই ছিনতাই করে। গতকাল দুপুরে সরেজমিন কার্যালয়ে গেলে সোহেল, রাকিব, তারেক, সুজনসহ ৮/১০ জনকে আড্ডা দিতে দেখা যায়। জানতে চাইলে তারা ‘ছাত্রলীগ কর্মী’ বলে নিজেদের পরিচয় দেন। কার্যালয়টি থেকে কোনো ধরনের ‘অসামাজিক কর্মকাণ্ড’ পরিচালিত হয় না বলেও তারা দাবি করেন।
ভাড়া নিচ্ছেন, চাঁদাবাজি করছেন যারা : মহাখালীর বিএমআরসি ভবনের পেছনে রয়েছে প্রায় এক হাজার কাঁচাঘর। বাসিন্দাদের সঙ্গে আলাপ করে জানা যায়, স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা পরিচয়ধারী কেরু প্রায় ৩শ’ ঘরের ভাড়া নেন। অনেক ঘরই বাসিন্দাদের নিজের টাকায় নির্মিত। তবে সরকারি জমিতে নির্মিত বলে চাঁদা দিতে হয় কবির, রিপু, আকরামসহ একাধিক গ্রুপকে। তারা এলাকায় ‘আওয়ামী লীগের ক্যাডার’ নামে পরিচিতি। স্বাস্থ্য অধিদফতরের জায়গা দখল করে গড়ে ওঠা মসজিদ, বাজার, নিকেতন বাজারের সব দোকান থেকে প্রতিদিন ছাত্রলীগ নেতারা চাঁদা আদায় করছেন বলে ব্যবসায়ীদের অভিযোগ। তারা বলেন, চাঁদা ওঠাবার কাজটা কর্মীরা করলেও এর পেছনে রয়েছেন দলের শীর্ষ নেতারা। ৭তলা বস্তি থেকে চাঁদা আদায়ের পাশাপাশি সেখানে মাদকের ব্যবসা করছেন সোহেল। এলাকায় তিনি ‘পুলিশের সোর্স’ ও সরকারি দলের নেতা হিসেবে পরিচিত। চাঁদা দিতে কেউ রাজি না হলে সোহেল মিথ্যা মামলার ভয় দেখান। বিএমআরসি ভবনের সামনের বস্তির বাসিন্দা সীমা বেগম অভিযোগ করেন, চাঁদা না দেয়ায় তার স্বামী পিংকু, ভাই তারেক, ভাগ্নে আমজাদকে চক্রান্ত করে মিথ্যা মামলায় জড়িয়েছেন সোহেল। আইপিএইচ স্কুল অ্যান্ড কলেজের সামনের দোকান থেকে চাঁদা তুলছেন মোতালেব, মোতাসের, কানাচি রিপনসহ কয়েক আওয়ামী লীগ নেতা। কয়েকজন বাসিন্দা জানান, ওই এলাকার সরকারি জমিতে কয়েক বছর ধরেই ঘর বানিয়ে এভাবে ভাড়া বাণিজ্য চলছে। ক্ষমতায় যারা থাকেন তারাই তা নিয়ন্ত্রণ করেন।
নিষ্ক্রিয় স্বাস্থ্য অধিদফতর : মহাখালীর যে ভবনে অধিদফতরের কার্যক্রম চলছে, সেটি আইইডিসিআর’র মালিকানাধীন বলে জানা যায়। অধিদফতরের নিজস্ব কোনো কেন্দ্রীয় ভবন নেই। জমি সঙ্কটের কারণে স্বাস্থ্যকর্মীদের প্রশিক্ষণ কেন্দ্র ‘হেলথ ম্যানেজমেন্ট ট্রেনিং ইনস্টিটিউট’ মহাখালীতে নির্মাণ করতে পারেনি অধিদফতর। জটিলতার ফলে শেষপর্যন্ত ঢাকার সাভারে এই কেন্দ্র নির্মিত হচ্ছে। অথচ মহাখালীতে অধিদফতরের বিশাল পরিমাণ জমি বেদখল হয়ে আছে। কি পরিমাণ জমি অন্যের দখলে এ তথ্য অধিদফতরের কাছে নেই। এসব জমি উদ্ধার করতেও প্রতিষ্ঠানটির গরজ নেই। প্রতিষ্ঠানটির প্রশাসন শাখার কর্মকর্তারা দখল বাণিজ্য থেকে ভাগ পাওয়ায় উদ্ধার অভিযান চালানো হচ্ছে না বলে একাধিক সূত্র জানিয়েছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক কর্মকর্তা বলেন, ‘জমিগুলো এখন আওয়ামী লীগ নেতাদেরই দখলে। তাই অভিযান চালালেও লাভ হবে না।’ সম্প্রতি উচ্ছেদ অভিযান চালানোর অনুমতি চেয়ে স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালকের কাছে তিনটি প্রতিষ্ঠান চিঠি দিয়েছে বলেও জানা যায়। এসব বিষয়ে অধিদফতরের মহাপরিচালক ডা. শাহ মনির হোসেনের বক্তব্য জানতে গতকাল দুপুরে কার্যালয়ে গেলেও তাকে পাওয়া যায়নি। অতিরিক্ত মহাপরিচালক ডা. একেএম মহিবুল্লাহর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘এ সম্পর্কে আমি কিছুই বলতে পারব না। প্রশাসন শাখার সঙ্গে যোগাযোগ করুন।’ জানতে চাইলে প্রশাসন শাখার উপ-পরিচালক ডা. নিজাম উদ্দিন হাওলাদার বলেন, ‘উচ্ছেদ শুধু স্বাস্থ্য অধিদফতর করবে কেন? যেসব প্রতিষ্ঠানের আশপাশ দখল হয়েছে, সেসব প্রতিষ্ঠানই তা করতে পারে। তারা ব্যর্থ হলে অধিদফতর থেকে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’ দলীয় চাপের কারণে অভিযান সম্ভব হচ্ছে না বলেও তিনি স্বীকার করেন। কি পরিমাণ জমি বেদখল তা জানতে চাইলে ডা. হাওলাদার বলেন, এ তথ্য আমাদের কাছে নেই, গণপূর্ত অধিদফতরে পাবেন।

http://www.amardeshonline.com/pages/details/2010/04/21/28358

সরকারদলীয় হুইপের একের পর এক প্লট বদল : নিকুঞ্জের পর উত্তরা, এখন চান বারিধারায়, অন্যায় আবদারে রাজি না হওয়ায় চেয়ার হারাতে হয়েছে সচিবকে

কাদের গনি চৌধুরী
রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ-রাজউকের প্লট বরাদ্দ পরিবর্তন করে এক প্রকল্প থেকে অন্য প্রকল্পে নেয়ার কোনো বিধান বা নজির নেই। এরপরও নিকুঞ্জের (দক্ষিণ) লেক ড্রাইভ রাস্তার সাত নম্বর প্লটটি বদল করে বারিধারা আবাসিক এলাকার কে-ব্লকের ১১নং রাস্তার ২৪নং খালি প্লটটি বরাদ্দ পেতে প্রশাসনের ওপর চাপ সৃষ্টি করছেন যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক ও জাতীয় সংসদের হুইপ মির্জা আজম এমপি। এ নিয়ে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ে ফাইল চালাচালি চলছে। সিদ্ধান্ত দিতে গড়িমসি করায় চেয়ার হারাতে হয়েছে গৃহায়ন ও গণপূর্ত সচিব মোহাম্মদ মহবুব উর রহমানকে। হুইপের চাপে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছেন রাজউক এবং গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, প্লট পরিবর্তনের ব্যাপারে মির্জা আজম এমপির আবেদনের প্রেক্ষিতে রাজউকের বোর্ড সভায় এ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। সভায় সিদ্ধান্ত হয়, যেহেতু রাজউকের অন্য প্রকল্প থেকে পরিবর্তনের মাধ্যমে গুলশান-বনানী-বারিধারা আবাসিক প্রকল্পে প্লট বরাদ্দ দেয়ার বিধি-বিধান বা নজির নেই, তাই সরকারদলীয় হুইপকে বারিধারায় প্লট দেয়া ঠিক হবে না। এতে রাজউককে বিতর্কে জড়িয়ে পড়তে হতে পারে। তাই মির্জা আজমের নামে নিকুঞ্জের তিনকাঠা আয়তনের প্লটের বদলে উত্তরা আবাসিক এলাকায় এখনই বাড়ি করার উপযোগী পাঁচকাঠা আয়তনের একটি প্লট পরিবর্তনের মাধ্যমে বরাদ্দ দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয় বোর্ড সভায়। এ প্লটটি নিতে প্রথমে তিনি রাজি হন। তার সম্মতির কারণে প্লট বরাদ্দ দেয়া হলেও পরবর্তীতে তা স্থগিত রাখতে বলেছেন তিনি। এখন যে কোনো উপায়ে বারিধারার প্লটটি বরাদ্দ পেতে চান তিনি। তবে এ বিষয়ে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্তের অপেক্ষার আছে রাজউক।
জানা যায়, ২০০০ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর নিকুঞ্জ (দক্ষিণ) আবাসিক এলাকার লেক ড্রাইভ রাস্তায় তিনকাঠা আয়তনের সাত নম্বর প্লটটি হুইপ মির্জা আজমের নামে বরাদ্দ দেয়া হয়। এরপর ২০০১ সালের ৫ এপ্রিল লিজ দলিল হওয়ার পর ২৮ জুন প্লটের দখল বুঝে নেন তিনি। তবে ২০০৮ সালের ৩ মার্চ ওই নথিটি জব্দ করা হয়। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর পরই প্লটের জব্দ হওয়া নথিটি ফেরত পেয়েছে রাজউক। এদিকে গত বছরের ১১ জুন বারিধারা কে-ব্লকের একটি বিশেষ প্লট চেয়ে আবেদন করেন মির্জা আজম। ওই আবেদনে তিনি উল্লেখ করেন, আমার প্লটে দুই তলার বেশি বাড়ি নির্মাণ করা যাবে না বলে জানতে পেরেছি। তাই এখনও পর্যন্ত প্লটটির নকশা দাখিল করিনি। তাই আমার নিকুঞ্জের ৭নং প্লটটি বাতিল করে বারিধারা আবাসিক এলাকার কে-ব্লকের ১১নং রাস্তার ২৪নং খালি প্লটটি বরাদ্দ নিতে চাচ্ছি। আগে বরাদ্দ করা জমির চেয়ে বেশি জমি বরাদ্দ দেয়া হলে রাজউকের নির্ধারিত মূল্য পরিশোধ করতে রাজি আছি। রাজউকের ০৬/২০০৯ তম বোর্ড সভায় বিষয়টি উপস্থাপন করা হয়। ওই বোর্ড সভার ২৩.৩নং সিদ্ধান্তে উল্লেখ করা হয়েছে, রাজউকের প্রচলিত নিয়মে নিকুঞ্জ থেকে বারিধারা আবাসিক এলাকায় প্লট পরিবর্তনের কোনো সুযোগ নেই। আবেদনকারী হুইপ ও এমপি হওয়ায় নিকুঞ্জ-১-এর বরাদ্দ করা প্লটের বদলে বারিধারা কে-ব্লকে প্লট বদলের আবেদনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া প্লট বরাদ্দ বিধিমালা ১৩(এ) এর আলোকে সরকারের এখতিয়ারভুক্ত। তাই এ বিষয়ে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনের জন্য চিঠি পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এ সিদ্ধান্তের পর ৮ জুলাই স্মারক নং রাজউক/এস্টেট-১/০৯-০৬ স্থাঃ এর মাধ্যমে মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠানো হয়। ওই চিঠি পেয়ে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় ৮ সেপ্টেম্বর সাধারণ সভার কার্যবিবরণী পাঠানোর জন্য রাজউককে চিঠি দেয়। এরই ফাঁকে ১২ জুলাই নিকুঞ্জ-১ এলাকার ৭নং প্লটটি স্থানান্তর করে উত্তরা ৬ নম্বর সেক্টরে শাহজালাল এভিনিউ-এর ১৩/এ নং রাস্তার ৫ নম্বর প্লটটির জন্য আবেদন করেন হুইপ মির্জা আজম। কর্তৃপক্ষের ০৭/ ২০০৯ তম সভায় ৯৩.৩নং সিদ্ধান্তে বলা হয়েছে, মির্জা আজম এমপি’র নামে বরাদ্দ করা নিকুঞ্জের তিনকাঠা আয়তনের প্লটের বদলে উত্তরা আবাসিক এলাকায় এখনই বাড়ি করার উপযোগী পাঁচকাঠা আয়তনের একটি প্লট পরিবর্তনের মাধ্যমে বরাদ্দ দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হলো।
তবে ২৪ ডিসেম্বর আরেক চিঠিতে হুইপ মির্জা আজম বারিধারা এলাকার প্লটের বিষয়ে সিদ্ধান্ত পাওয়ার আগ পর্যন্ত বরাদ্দের প্রক্রিয়া স্থগিত রাখার অনুরোধ করেন। ওদিকে গত ২১ জানুয়ারি বারিধারার প্লটটি নিয়ে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় তাদের সিদ্ধান্তে জানায়, মির্জা আজমের আবেদনটি রাজউকের বোর্ড সভায় উপস্থাপন করে এক প্রকল্প থেকে অন্য প্রকল্পে স্থানান্তর সংক্রান্ত বিধি-বিধান/ পূর্ব নজিরের আওতায় নিকুঞ্জ (দক্ষিণ) আবাসিক এলাকার প্লটের বদলে বারিধারা আবাসিক এলাকায় বিকল্প প্লট বরাদ্দের বিষয়টি বিবেচনার জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হলো। রাজউকের সর্বশেষ ০২/২০১০ তম বোর্ড সভায় এ বিষয়ে সিদ্ধান্তে বলা হয়েছে, আবেদনকারী জাতীয় সংসদের হুইপ, সংসদ সদস্য, মুক্তিযোদ্ধা এবং জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ অবদানসম্পন্ন ব্যক্তিত্ব বিধায় ১৩ (এ) বিধি অনুযায়ী বারিধারা আবাসিক এলাকার কে-ব্লকের ১১নং রাস্তার কম বেশি ৫ কাঠা আয়তনের ২৪ নম্বর প্লট বরাদ্দের বিষয়ে সরকার বিবেচনা করতে পারে। তাই বিষয়টি রাজউকের (ভূমি বরাদ্দ) বিধিমালার ১৩ (এ) বিধির আলোকে নিষমত্তির জন্য গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়কে পুনঃঅনুরোধ জানানোর সিদ্ধান্ত নেয়া হলো।
রাজউক সূত্রে জানা গেছে, নিকুঞ্জ আবাসিক এলাকার বরাদ্দ মূল্যের চেয়ে বারিধারা আবাসিক এলাকার প্লটের দাম বেশি। বর্তমানে গুলশান-বনানী-বারিধারা আবাসিক এলাকার প্লটগুলোর দাম কাঠাপ্রতি ১০ লাখ টাকা।

http://www.amardeshonline.com/pages/details/2010/04/20/28274

মেরামতের নামে সীমাহীন দুর্নীতি : কলাপাড়ায় উপকূলীয় বাঁধে অল্পতেই ভাঙন




মিলন কর্মকার রাজু, কলাপাড়া
২০০৭ সালে সিডরের আঘাতে কলাপাড়ার ভেঙেপড়া উপকূলীয় বাঁধগুলো মেরামতের নামে বিপুল পরিমাণ অর্থ আত্মসাত্ করা হয়। ফলে কিছুদিন যেতে না যেতেই অল্পদিনেই সেগুলোতে ভাঙন ধরে। পরে আইলার জলোচ্ছ্বাসে ব্যাপক ক্ষতি হয় সেগুলোর। বর্ষা আতঙ্ক নিয়ে আসে মানুষের মাঝে। আসন্ন বর্ষা মৌসুমেও সমুদ্র উপকূলীয় কলাপাড়ার লাখ লাখ মানুষের নিরাপত্তায় নেয়া হয়নি কোনো পদক্ষেপ। পর পর দুটি ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড় সিডর ও আইলার তাণ্ডবে উপকূলীয় বেড়িবাঁধ লণ্ডভণ্ড হয়ে গেলেও সেগুলো পুনর্নির্মাণ বা সংস্কারের কোনো উদ্যোগ এখনও নেয়া হয়নি। ফলে অরক্ষিত হয়ে পড়েছে বাঁধসংলগ্ন অর্ধশতাধিক গ্রামের ১০ হাজার পরিবারের নিরাপত্তা। হুমকির মুখে পড়েছে এসব এলাকার কৃষি ব্যবস্থা। গত সিডরের জলোচ্ছ্বাসে যে বাঁধগুলো ভেঙে প্রাণহানি ও সম্পদহানি হয়েছিল ঘূর্ণিঝড় আইলার জলোচ্ছ্বাসেও সেগুলো ভেঙে শতাধিক গ্রাম প্লাবিত হয়।
সরকারি হিসাব মতে, ঘূর্ণিঝড় আইলার জলোচ্ছ্বাসে সাড়ে চার কিলোমিটার বাঁধ ভেঙে যায়। আংশিক ক্ষতি হয় অন্তত ৪৫ কিলোমিটার এলাকার বাঁধ। ১৫০ কিলোমিটার কাঁচা রাস্তা ও সাড়ে ১২ কিলোমিটার পাকা রাস্তারও ক্ষতি হয়। শুধু জলোচ্ছ্বাসের কারণে ১০ হাজার ৫শ’ ঘরবাড়ি ভেসে যায়। ক্ষতি হয় ২২ হাজার ৫২০টি ঘরবাড়ির।
কলাপাড়ার বিভিন্ন ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা ঘুরে দেখা যায়, মাইলের পর মাইল এলাকার বেড়িবাঁধ ভাঙা। ভাঙন দিয়ে জোয়ারের পানি প্রবেশ করে গোটা এলাকা প্লাবিত হয় মাঝে মাঝেই। লবণপানি বাঁধের অভ্যন্তরে প্রবেশ করার কারণে ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়। অন্যদিকে ক্ষেতে লবণপানি জমে থাকায় কৃষকদের চাষবাদও বন্ধ হওয়ার পথে।
লতাচাপলী ইউপি চেয়ারম্যান আঃ বারেক মোল্লা আমার দেশকে জানান, এ ইউনিয়নে প্রায় ৮ কিলোমিটার বাঁধ এখনও ভাঙা অবস্থায় রয়েছে। এর ফলে ইউনিয়নের ৪৮টি পোল্ডার সংলগ্ন খাজুরা, কুয়াকাটা, পানজুপাড়া, হোসেনপাড়া, দক্ষিণ মুসুল্লিয়াবাদ, মম্বিপাড়া গ্রাম মারাত্মক ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। বর্ষা মৌসুমের আগে এ ভাঙা বাঁধ মেরামত করা না হলে এ এলাকায় ভয়াবহ বিপর্যয় নেমে আসবে। এরই মধ্যে সাগরে পানির উচ্চতা বেড়ে যাওয়ায় জোয়ারের সময় বাঁধের ভাঙা অংশ দিয়ে পানি প্রবেশ করছে। তিনি বলেন, খাজুরা পয়েন্টে ৪ কোটি টাকা ব্যয়ে সিসি ব্লক ফেলার কাজ চললেও এখানেও এরই মধ্যে ভাঙন শুরু হয়েছে। তিনি জানান, জরুরিভিত্তিতে ভাঙা বাঁধ মেরামত করা না হলে এ বর্ষা মৌসুমে গোটা এলাকা প্লাবিত হয়ে যাবে সাগরের পানিতে। বন্ধ হয়ে যাবে চাষাবাদ। ঘরছাড়া হবে ৮/৯ হাজার মানুষ।
ধানখালী ইউপি চেয়ারম্যান ফজলুর রহমান তালুকদার বলেন, তার ইউনিয়নে দেবপুর থেকে পাটুয়া পর্যন্ত প্রায় ৫ কিলোমিটার বাঁধ গত সিডর ও আইলার জলোচ্ছ্বাসে বিলীন হলেও বাঁধ মেরামতে কোনো পদক্ষেপ নেয়া হয়নি এ পর্যন্ত। ফলে ৫৪/এ পোল্ডার সংলগ্ন চালিতাবুনিয়া, গোলবুনিয়া, পাটুয়া, দেবপুর এলাকার ৫/৭শ’ পরিবার রয়েছে চরম আতঙ্কে।
এলাকাবাসী জানান, সিডরের পর কলাপাড়ার ক্ষতিগ্রস্ত বিভিন্ন বেড়িবাঁধ মেরামত করা হলেও ঠিকাদার ও পাউবোর কর্মকর্তাদের বড় রকমের দুর্নীতির কারণে সেগুলো কিছুদিন যেতে না যেতে ভাঙন ধরে। কলাপাড়া পৌর শহরের নাচনাপাড়া এলাকার বেড়িবাঁধ গত সিডরের জলোচ্ছ্বাসে ভেঙে যায়। ২০০৮-০৯ অর্থবছরে বাঁধটি নামমাত্র মেরামত করা হলেও আইলার জলোচ্ছ্বাসের প্রথম ফ্লতেই সেটি একই স্থানে ভেঙে বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়। এ বাঁধ প্রায় ৩০ ফুট ভেঙে গেছে। পরে আবার বাঁধটি মেরামত করা হয়। চরধুলাসার গ্রামের ৪৭/৩ পোল্ডারের চরধুলাসার বেড়িবাঁধও দায়সারাভাবে মেরামত করা হলেও অল্পতেই সেটি ভেঙে হাজার হাজার একর জমিসহ ঘরবাড়ি আইলার জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হয়। বন্ধ হয়ে যায় ধুলাসারের সঙ্গে কুয়াকাটার সড়ক যোগাযোগ। লালুয়া ইউনিয়নের ৪৭/৪ পোল্ডারের বাঁধটিও সিডরের পর মেরামত করা হলেও এটিরও প্রায় ২শ’ ফুট এলাকা ভেঙে গেছে। নষ্ট হয়ে যায় প্রায় ৩ হাজার একর জমির ফসল। ধানখালী ইউনিয়নের দেবপুর বেড়িবাঁধের তিনটি পয়েন্ট থেকে ভেঙে গেছে। এ বাঁধও সিডরে ভেঙে যাওয়ার পর মেরামত করা হলেও সীমাহীন দুর্নীতির কারণে অল্পতেই পানির তোড়ে ভেসে যায়। গৃহহারা হয় শত শত মানুষ। ৪৭/১ পোল্ডারের নিজামপুর এলাকার বাঁধ সিডরের জলোচ্ছ্বাসে ভেঙে গেলেও তা উঁচু করা হয়নি। এ কারণে বাঁধের সিসি ব্লক উপচে আইলার জলোচ্ছ্বাসের গোটা এলাকা তলিয়ে যায়। ৫৪নং পোল্ডারের প্রায় ৭০ ফুট বাঁধ ভেঙে গেছে।
এলাকাবাসী জানান, তাদের প্রতিটি রাত কাটে এখন চরম আতঙ্কে। ভাঙা বাঁধ দিয়ে জোয়ারের সময় শোঁ শোঁ করে পানি প্রবেশ করে গোটা এলাকা প্লাবিত হয়। এলাকার শত শত মানুষের আর্তি, আমাদের বাঁচান। এ ভাঙা বাঁধ মেরামত করা না হলে তাদের সর্বস্ব হারাতে হবে।
কলাপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ লিয়াকত আলী আমার দেশকে জানান, সিডরের পর কিছু বাঁধ মেরামত করা হয়েছে। এখনও যেসব বাঁধ ভাঙা রয়েছে তা মেরামতের কাজ কিছুদিনের মধ্যে শুরু হবে। তবে এ বর্ষা মৌসুমে শুরু হবে কিনা জানতে চাইলে তিনি কোনো আশ্বাস দিতে পারেননি।
এব্যাপারে পটুয়াখালী পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ সিদ্দিকুর রহমানের সঙ্গে মোবাইলে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি মোবাইল রিসিভ করেননি।

http://www.amardeshonline.com/pages/details/2010/04/20/28279

Saturday 10 April 2010

৩৮ হাজার পদে নিয়োগ প্রক্রিয়া নিয়ে প্রশ্ন*পাস নম্বর ছাড়াই নিয়োগ পাচ্ছেন ৪১৩৩ চিকিৎসক

স্বাস্থ্য, শিক্ষা, খাদ্য, ভূমি ও অর্থ খাতের ছয় প্রতিষ্ঠান | ৩৮ হাজার পদে নিয়োগ প্রক্রিয়া নিয়ে প্রশ্ন
*পাস নম্বর ছাড়াই নিয়োগ পাচ্ছেন ৪১৩৩ চিকিৎসক
*প্রাথমিক শিক্ষা ও স্বাস্থ্য সহকারী পদে টাকার লেনদেনের অভিযোগ
*অগ্রাধিকার পাচ্ছে ছয় লাখ দলীয় কর্মীর তালিকা

এহসানুল হক ও আশরাফুল হক রাজীব | Kalerkantho ঢাকা, রবিবার, ২৮ চৈত্র ১৪১৬, ২৫ রবিউস সানি ১৪৩১, ১১ এপ্রিল ২০১০

সরকারের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে দলীয় ও ঘনিষ্ঠজনদের নিয়োগ দিতে নানা ধরনের চাপ সৃষ্টি করছেন ক্ষমতাসীন দলের নেতা-কর্মীরা। দলীয়ভাবে তৈরি করা প্রায় ছয় লাখ শিক্ষিত বেকারের তালিকাকে অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে নিয়োগের ক্ষেত্রে। প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে উঠেছে সাত প্রতিষ্ঠানের প্রায় ৩৮ হাজার পদে নিয়োগ প্রক্রিয়া। এ পরিস্থিতিতে সৃষ্ট জটিলতায় ঝুলে গেছে কোনো কোনো প্রতিষ্ঠানের নিয়োগ কার্যক্রম। সরকারের সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে এসব তথ্য।
আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার ক্ষমতায় এসেই সরকারি দপ্তরগুলোর শূন্যপদ পূরণের সিদ্ধান্ত নেয়। এ সিদ্ধান্তের অংশ হিসেবে ছয় দপ্তরের ৩৭ হাজার ৯১৫টি শূন্যপদের বিপরীতে লোক নিয়োগের প্রক্রিয়া শুরু করা হয়। এগুলো হচ্ছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অধীনে চার হাজার ১৩৩ জন চিকিৎসক ও ছয় হাজার ৩০০ স্বাস্থ্য সহকারী, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের অধীনে ২৫ হাজার প্রাথমিক শিক্ষক, ভূমি রেকর্ড ও জরিপ অধিদপ্তরের ২২৩ এমএলএসএস, খাদ্য অধিদপ্তরের বিভিন্ন পদে এক হাজার ১০০, ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের (ডিএমসিএইচ) ১৭১ এবং কম্পট্রোলার অ্যান্ড অডিটর জেনারেল (সিএজি) কার্যালয়ের ৯৮৮ জন।
গত বছরের জুন মাসে উপজেলা ও থানা আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকদের মাধ্যমে সারা দেশের মেধাবী উচ্চ শিক্ষিত বেকারদের জীবন বৃত্তান্ত, ছবি ও দলীয় পরিচয়সহ প্রায় ছয় লাখ নামের তালিকা তৈরি করা হয়। এ তালিকায় স্থান পাওয়াদের চাকরিতে সুযোগ করে দিতে গিয়েই মূলত নিয়োগ সংক্রান্ত নানা জটিলতার সৃষ্টি হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন সরকারের সংশ্লিষ্টরা। তবে দলমত নির্বিশেষে সব মেধাবী শিক্ষিত বেকারের কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে এ তালিকা তৈরি করা হয়েছে বলে দাবি করেন সরকারের একজন নীতি-নির্ধারক।

চিকিৎসক
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের একাধিক সূত্র অভিযোগ করে বলেন, নিজেদের লোকজনকে চাকরি দিতে বিধিমালা পরিবর্তন করে প্রায় ১৬ বছর পর কার্যকর করা হয়েছে এডহকভিত্তিক নিয়োগ পদ্ধতি। আর এ পদ্ধতিতে কোনো ধরনের পাস নম্বর নির্ধারণ করা ছাড়াই ৮০ নম্বরের লিখিত এবং ২০ নম্বরের মৌখিক পরীক্ষার মাধ্যমে নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে চার হাজার ১৩৩ জন চিকিৎসক। পাস নম্বর না থাকায় লিখিত পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারী আট হাজার ৮৯৩ জনই মৌখিক পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ পেয়েছেন। আগামী ১৫ এপ্রিল শেষ হবে এ মৌখিক পরীক্ষা।

সংশ্লিষ্ট সূত্র আরো অভিযোগ করেন, সরকারের শীর্ষ পর্যায়ের নীতি-নির্ধারকদের পরামর্শে লিখিত পরীক্ষায় কোনো পাস নম্বর রাখা হয়নি। এতে দেখা গেছে ৮০ নম্বরের লিখিত পরীক্ষায় বিপুলসংখ্যক পরীক্ষার্থী ১১ থেকে শুরু করে ২০ নম্বর পেয়েছে। কিন্তু পাস নম্বর না থাকায় তারাও মৌখিক পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ পেয়েছেন। লিখিত পরীক্ষায় অপেক্ষাকৃত কম নম্বর পাওয়া পরীক্ষার্থীদের জন্য ক্ষমতাসীন দলের প্রভাবশালী ব্যক্তিদের তদবির অব্যাহত রয়েছে। এ তদবিরের চাপে প্রকৃত মেধাবীরা আদৌ চাকরি পাবেন কি না তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেন নিয়োগ সংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তা।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে স্বাস্থ্য সচিব শেখ আলতাফ আলী বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, 'নিয়োগ কমিটির সিদ্ধান্ত মোতাবেক পাস নম্বর রাখা হয়নি। লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষার নম্বর যোগ করে মেধা তালিকা অনুযায়ী নিয়োগ দেওয়া হবে।' এর বেশি আর কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি তিনি। তদবির অথবা লিখিত পরীক্ষায় একেবারেই কম নম্বর পাওয়া পরীক্ষার্থীদের বিষয়ে বিভিন্ন প্রশ্ন করা হলে উত্তর দেওয়া থেকে বিরত থাকেন স্বাস্থ্য সচিব।
বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর রাজস্ব খাতে নন-ক্যাডার প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণীর পদে অস্থায়ী ভিত্তিতে নিয়োগ দিতে 'এডহকভিত্তিক নিযুক্ত কর্মচারী নিয়মিতকরণ বিধিমালা ১৯৯৪'-এর ধারা ৮-এর প্রয়োজনীয় সংশোধন আনে। এ সংশোধনী আনার আগ পর্যন্ত ১৯৯৪ সালের ৩ ডিসেম্বর থেকে সরকারি চাকরিতে এডহক ভিত্তিতে সব নিয়োগ বন্ধ ছিল। তখন সরকারি কর্মকমিশনের (পিএসসি) প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার মাধ্যমে এসব নিয়োগ দেওয়া হতো।
সংস্থাপন মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, এডহকভিত্তিক নিয়োগে এত বেশি অনিয়ম হয়েছিল যে, ১৯৯৪ সালে তৎকালীন সরকার বিধিমালা জারি করে এ পদ্ধতি বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয়। সেই সময় ১৯৮২ সালের ৩১ ডিসেম্বর থেকে ১৯৯৪ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত এডহক ভিত্তিতে নিয়োগপ্রাপ্ত সবার চাকরি নিয়মিতকরণ করা হয়েছিল।
এডহক ভিত্তিতে চিকিৎসক নিয়োগের সিদ্ধান্তকে দুর্ভাগ্যজনক হিসেবে মন্তব্য করে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ও সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব ড. আকবর আলি খান বলেন, 'এ বিষয়ে সরকারের উৎসাহিত হওয়া উচিত নয়। এতে ভবিষ্যতে নিয়োগপ্রাপ্তদের নিয়মিতকরণের প্রশ্নে অসন্তোষ সৃষ্টি হয়। পাশাপাশি অনিয়ম হওয়ার আশঙ্কা থাকে। অযোগ্য লোকও ঢুকে পড়তে পারে। প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণী পদে নিয়োগ অবশ্যই পিএসসির মাধ্যমে হওয়া উচিত বলে আমি মনে করি।'
সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব আরো বলেন, চিকিৎসা খাতের বিষয়টি তো অত্যন্ত টেকনিক্যাল। চিকিৎসক নিয়োগের ক্ষেত্রে পেশাগত ও গুণগত মান অবশ্যই নিশ্চিত করতে হবে। এর কোনো বিকল্প নেই। দক্ষ ও প্রকৃত মেধাবীদের নিয়োগ দেওয়া না হলে চিকিৎসা ব্যবস্থা ভেঙে পড়বে। দ্রুততম সময়ে নিয়োগ দেওয়ার বিষয়টি বিবেচনা করতে গিয়ে যদি এডহক ব্যবস্থা অনুসরণ করা হয় তাহলে যত দ্রুত সম্ভব পিএসসির মাধ্যমে পরীক্ষার আয়োজন করে এসব চিকিৎসকের নিয়োগ স্থায়ী করা উচিত। এতে যোগ্যরা টিকে যাবে, আর অযোগ্যরা বাদ পড়বে।
প্রাথমিক শিক্ষক
গত জানুয়ারি মাসে ২৫ হাজার প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। লিখিত পরীক্ষা শেষে বর্তমানে সাড়ে সাত লাখ খাতা দেখার কাজ চলছে। জোট সরকারের মতো মহাজোট সরকারের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধেও প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগের জন্য প্রার্থীপিছু তিন থেকে পাঁচ লাখ টাকা বখরা নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। প্রাথমিক শিক্ষা অধিপ্তরের একটি ঘোষণাপত্রই এর ইঙ্গিত দেয়। ঘোষণাপত্রে চাকরি নিশ্চিত করার জন্য কারো সঙ্গে লেনদেন করতে নিষেধ করা হয়। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের এই সতর্কবার্তার পরও থেমে নেই নেতা-কর্মীদের নিয়োগ বাণিজ্য। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক রাজশাহীর রহনপুরের এক বেকার যুবক জানান, প্রাথমিক শিক্ষক পদে নিয়োগ পেতে ক্ষমতাসীন দলের এক প্রভাবশালী নেতাকে তিনি তিন লাখ টাকা দিয়েছেন।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রী ডা. আফসারুল আমিন জানান, প্রাথমিক শিক্ষকদের চাকরি নিয়ে লেনদেনের অভিযোগ ওঠার সঙ্গে সঙ্গেই পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিয়ে লেনদেন না করার জন্য সবাইকে অনুরোধ জানানো হয়। শিক্ষক নিয়োগে কোনো ধরনের অনিয়ম হবে না বলে নিশ্চিত করেন তিনি।
ডিএমসিএইচ
তদবিরের কারণে তালগোল পাকিয়ে ফেলেছে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের নিয়োগ কমিটি। মন্ত্রী, সচিব, সংসদীয় দলের নেতা, এমপি, আওয়ামী লীগ নেতা, চিকিৎসক নেতা, কর্মচারী নেতাসহ সব পর্যায়ের নেতার তদবির ছিল। শেষ পর্যন্ত কাকে রেখে কাকে বাদ দেওয়া হবে সেই হিসাব-নিকাশ চূড়ান্ত না হতেই নিয়োগপত্র ইস্যু করা শুরু হয়। কিন্তু একপর্যায়ে নিয়োগ কমিটি টের পান অর্থ ও সংস্থাপন মন্ত্রণালয় থেকে অনুমোদনপ্রাপ্ত পদের চেয়ে অনেক বেশি নিয়োগপত্র ইস্যু করা হয়ে গেছে। ১৭১টি পদে কর্মচারী নিয়োগের অনুমোদন পাওয়া গেলেও নিয়োগপত্র দেওয়া হয়েছে এর চেয়ে অনেক বেশি। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে টের পেয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিবের নেতৃত্বে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। কমিটি তদন্ত করে নানা অনিয়মের সন্ধান পায়।
গত বৃহস্পতিবার স্বাস্থ্যমন্ত্রী অধ্যাপক আ ফ ম রুহুল হক তদন্ত কমিটি ও নিয়োগ কমিটিকে মুখোমুখি করেন। জানা গেছে, সভার শুরুতেই স্বাস্থ্যমন্ত্রী ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের নিয়োগ নিয়ে সরকারের ভাবমূর্তি ব্যাপকভাবে ক্ষুণ্ন হয়েছে বলে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। কিন্তু অর্থ ও সংস্থাপন মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনের চেয়ে বেশি লোক নিয়োগ দিয়ে দেওয়ায় যে সমস্যা তৈরি হয়েছে, তার কোনো সমাধান তিনি বের করতে পারেননি। বিষয়টি ঝুলিয়ে রেখেই বৈঠক শেষ করা হয়।
এদিকে ডিএমসিএইচ সূত্র জানায়, আওয়ামী লীগ সমর্থিত চতুর্থ শ্রেণী কর্মচারী সমিতি ও স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ (স্বাচিপ) প্রায় প্রকাশ্যে ঘোষণা দেয় মোট নিয়োগের ৯০ ভাগ হবে দলীয়ভাবে। সেভাবেই নিয়োগ প্রক্রিয়া এগোচ্ছিল। কিন্তু ভাগ-বাটোয়ারা নিয়ে সমঝোতা না হওয়ায় বিরোধ প্রকাশ হয়ে পড়ে। ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে দুই গ্রুপের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ার ঘটনাও ঘটে। ২৪ ঘণ্টার আলটিমেটাম দিয়ে কর্মচারী সমিতির নেতাদের বহিষ্কার দাবি করেন চিকিৎসকরা। আর চতুর্থ শ্রেণীর নেতারা ১২ ঘণ্টার মধ্যে স্বাচিপের নেতাদের বহিষ্কার দাবি করেন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেলে স্বাস্থ্যমন্ত্রী গত ১৫ জানুয়ারি নিয়োগ প্রক্রিয়া স্থগিত করেন। অথচ ওই দিনই চূড়ান্তভাবে নিয়োগপ্রাপ্তদের কাজে যোগদানের কথা ছিল।
স্বাস্থ্য সহকারী
পাঁচ থেকে সাত লাখ টাকা হাঁকা হচ্ছে স্বাস্থ্য সহকারী পদের প্রার্থীদের কাছে। মোট ছয় হাজার ৩০০ স্বাস্থ্য সহকারী নিয়োগের বিষয়টি এখন আদালতে বিচারাধীন। মুক্তিযোদ্ধাসহ অন্যান্য কোটা মানা হয়নি এজন্য উচ্চ আদালত সরকারের কাছ ব্যাখ্যা চেয়েছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ইতিমধ্যে ব্যাখ্যা দিয়েছে। কিন্তু তার আগে লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষার সময় সরকারদলীয় নেতা-কর্মীরা প্রায় প্রত্যেক প্রার্থীর কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা নিয়ে গেছে বলে বিভিন্ন মহল থেকে অভিযোগ উঠছে। নিয়োগ চূড়ান্ত না হওয়ায় এ বাণিজ্য অব্যাহত রয়েছে। জামালপুরের একজন চাকরিপ্রার্থী কালের কণ্ঠকে অভিযোগ করে বলেন, 'ভালো পরীক্ষা দিয়েছি। চাকরি পাওয়ার বিষয়ে দৃঢ় মনোবল থাকার পরও সরকারদলীয় এক নেতার হাতে পাঁচ লাখ টাকা তুলে দিয়েছি। অবশ্য চাকরি না পেলে আমার টাকা ফিরিয়ে দিতে রাজি হয়েছেন ওই নেতা।'
খাদ্য অধিদপ্তর
খাদ্য অধিদপ্তরে প্রায় এক হাজার ১০০ পদে লোক নিয়োগের প্রক্রিয়া শুরু হয় ২০০৪ সালে। চাকরি দেওয়ার আগেই এ নিয়োগে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ ওঠায় তা বাতিল করা হয়। ২০০৮ সালে একই নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিটি আবার প্রচার করা হয়। কিন্তু সময় স্বল্পতার কারণে নিয়োগ প্রক্রিয়া শেষ করতে পারেনি তত্ত্বাবধায়ক সরকার। নিয়োগ নিয়ে বিতর্ক এড়ানোর জন্য খাদ্যমন্ত্রী ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক খাদ্য অধিদপ্তরের নিয়োগসংক্রান্ত পরীক্ষা বিভাগীয় কমিশনারের হাতে ছেড়ে দেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত বিতর্ক এড়াতে পারেননি তিনি। সরকারদলীয় এমপিদের তালিকা অনুযায়ী নিয়োগ দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে। সম্প্রতি খাদ্যমন্ত্রী ড. মোঃ আব্দুর রাজ্জাক যে প্রশ্নটি সবচেয়ে বেশি শুনেছেন সেটি হলো, কবে নাগাদ নিয়োগ শেষ হবে? মৃদু হেসে খাদ্যমন্ত্রীর মুখস্থ উত্তর, 'শিগগিরই শেষ হবে।'
গত বছরের ২৪ এপ্রিল লিখিত পরীক্ষার প্রায় ছয় মাস পর ২৩ অক্টোবর ফল ঘোষণা করা হয়। এরপর ১২ ডিসেম্বর থেকে ১৪ জানুয়ারি পর্যন্ত মৌখিক পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। সেই ফল এখনো ঘোষণা করা হয়নি। গত বৃহস্পতিবার পর্যন্ত পাঁচটি বিভাগের ফল খাদ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের হাতে এসেছে। ঢাকা বিভাগের ফল এখনো খাদ্য অধিদপ্তরে পেঁৗছেনি। সরকারিভাবে ফল প্রকাশ না হলেও ফলের কপি প্রার্থীদের কাছে পেঁৗছে যাচ্ছে, যা দেখিয়ে চাকরিপ্রার্থীদের কাছ থেকে টাকা নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। মুন্সিগঞ্জের এক প্রার্থী কালের কণ্ঠকে বলেন, 'চাকরি পাওয়ার জন্য পাঁচ লাখ টাকা দিয়েছি। আশা করছি চাকরি পাব। না পেলে যার কাছে টাকা দিয়েছি তার নাম-ঠিকানা প্রকাশ করে বিচার দাবি করব।'
সিএজি অফিস
কম্পট্রোলার অ্যান্ড অডিটর জেনারেল (সিএজি) কার্যালয়ের বিভিন্ন শ্রেণীর ৯৮৮টি পদের লিখিত পরীক্ষা ছিল গত ২৩ অক্টোবর। লিখিত পরীক্ষার সব আয়োজন যথানিয়মে শেষ করা হয়। কিন্তু অডিটর জেনারেল অফিসকে কিছু না জানিয়ে পরীক্ষার আগের দিন অর্থাৎ গত ২২ অক্টোবর গভীর রাতে এ পরীক্ষা বাতিল করে দেয় সরকার। চাকরি দেওয়ার বিষয়ে ক্ষমতাসীন দলের নেতাদের তদবিরে সিএজি অফিস ইতিবাচক সাড়া না দেওয়াতেই মূলত পরীক্ষা বাতিল করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেন সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র।

চান্দিনায় ওএমএসের চালসহ আ. লীগ নেতা আটক

নিজস্ব প্রতিবেদক, Kalerkantho ঢাকা, শনিবার, ২৭ চৈত্র ১৪১৬, ২৪ রবিউস সানি ১৪৩১, ১০ এপ্রিল ২০১০

কুমিল্লাকুমিল্লার চান্দিনায় পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি কাজী গোলাম মোস্তফাকে অবৈধভাবে ওএমএসের চাল বিক্রির অভিযোগে আটক করা হয়েছে। উদ্ধার করা হয়েছে ৩৯ বস্তা চাল। গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যায় তাঁকে আটক করা হয়। তাঁর বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের প্রক্রিয়া চলছে।
স্থানীয় সূত্র জানায়, কাজী গোলাম মোস্তফা খোলাবাজারে (ওএমএস) চাল বিক্রির একজন ডিলার। ২২ টাকা কেজি দরে এ চাল দুস্থ ও গরিব মানুষের মাঝে বিক্রি করার কথা। কিন্তু তিনি তা না করে খোলাবাজারের এ চাল ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করে দেন।
চান্দিনার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) হাজেরা খাতুন জানান, আটক গোলাম মোস্তফা সরকারি ওএমএসের চালের বস্তা পরিবর্তন করে অন্য বস্তায় চাল ঢুকিয়ে তা ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করে দেন। গোলাম মোস্তফার কথা অনুযায়ী বিকেল সাড়ে ৪টা থেকে ৫টা পর্যন্ত অভিযান চালিয়ে পৌর এলাকার ব্যবসায়ী আবদুল ওয়াদুদের গুদাম ঘর থেকে ৩৯ বস্তা চাল উদ্ধার করা হয়েছে। তিনি জানান, সরেজমিনে পরিদর্শনে গোলাম মোস্তফার গুদামে গেলে বিক্রি করা চালের সঙ্গে গুদামে মজুদ চালের হিসাবে গরমিল পাওয়ায় সন্দেহবশত তাঁকে জেরা করার পর এ ঘটনা উদ্ঘাটিত হয়।
চান্দিনা থানার ওসি গতকাল রাত ১০টায় কালের কণ্ঠকে বলেন, কাজী গোলাম মোস্তফাকে থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে। তবে এখনো তাঁকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়নি। এজাহার হাতে পেলেই গ্রেপ্তার দেখানো হবে।
পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি কাজী গোলাম মোস্তফার বিরুদ্ধে যাতে মামলা করা না হয়, সে জন্য প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টির জন্য রাতে বিপুলসংখ্যক আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মী রাস্তায় অবস্থান নেয়।

এবার ভারতকে দেয়া হচ্ছে টেলিকরিডোর : দেশের টেলিযোগাযোগের নিয়ন্ত্রণ চলে যাবে প্রতিবেশীর হাতে

ইলিয়াস খান
ভারতকে এবার টেলিকরিডোর দেয়া হচ্ছে। ভারতী এয়ারটেল ও রিলায়েন্স কমিউনিকেশন্স যৌথভাবে বিটিআরসির কাছে বাংলাদেশের মধ্য দিয়ে উত্তর-পূর্ব ভারতে ফাইবার অপটিক নেটওয়ার্কের টেলিকরিডোর স্থাপন করার অনুমতি চাওয়ায় সরকার এ বিষয়ে ইতিবাচক সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এখন শুধু আনুষ্ঠানিকতা বাকি। তবে এ বিষয়ে কঠোর গোপনীয়তা রক্ষা করা হচ্ছে। খবর সংশ্লিষ্ট সূত্রের।
ভারতী এয়ারটেল সম্প্রতি বাংলাদেশের ওয়ারিদের ৭০ শতাংশ শেয়ার কিনে নিয়েছে। এই শেয়ার কেনার সিদ্ধান্ত নেয়ার পর এয়ারটেল গত বছরের শেষ দিকে টেলিকরিডোর দেয়ার আবেদন করে। জানা গেছে, এ করিডোর দিয়ে তারা ফাইবার অপটিক ক্যাবল স্থাপন করে উত্তর-পূর্ব ভারতের ৭ রাজ্যের সঙ্গে টেলিযোগাযোগ সহজ ও সস্তা করতে চায়। তারা আসামে টেলিকরিডোরের জন্য দুটি রুটের প্রস্তাব দিয়েছে। এর মধ্যে একটি হলো কলকাতা-মেহেরপুর-ঢাকা-জাফলং এবং অন্যটি কলকাতা-মেহেরপুর-ঢাকা-কুমিল্লা-আগরতলা রুট। বর্তমানে উত্তর-পূর্ব ভারতের রাজ্যগুলো ভিস্যাটের মাধ্যমে ভারতের কেন্দ্র ও বহির্বিশ্বের সঙ্গে যুক্ত, যা খুবই ব্যয়বহুল।
বাংলাদেশকে নিয়ন্ত্রণের সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনার অংশ হিসেবে এই করিডোর নেয়া হচ্ছে। এর মাধ্যমে উত্তর-পূর্ব ভারতে টেলিযোগাযোগ, ইন্টারনেট ইত্যাদি সস্তা হবে ও বিনিময়ে বাংলাদেশ কিছু চার্জ বা ভাড়া পাবে। কিন্তু এর মাধ্যমে আবার উত্তর-পূর্ব ভারতের বিদ্রোহীদের কথোপকথন মনিটরিং থেকে শুরু করে ফাইবার অপটিক কেবলের টেলিকরিডোরের নিরাপত্তার নামে বাংলাদেশের ওপর ভারতের সামরিক ও টেকনোলজিক্যাল নজরদারি এবং নিয়ন্ত্রণ আরোপিত হবে। অন্যদিকে দেশের যোগাযোগ খাতের ওপর রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণ খর্ব হবে এবং তা বিপজ্জনকভাবে প্রতিবেশীর হাতে চলে যাবে।
ভারতী এয়ারটেল ভারতের সর্ববৃহত্ টেলিকম কোম্পানি। এর গ্রাহকসংখ্যা ১১ কোটি ৬০ লাখেরও বেশি। কোম্পানিটি সাম্প্রতিক সময়ে ভারতের বাজারে তীব্র প্রতিযোগিতার মুখে পড়েছে। ফলে মুনাফা বাড়াতে দেশের বাইরে বিনিয়োগ করার উদ্যোগ নেয়। দক্ষিণ আফ্রিকার এমটিএন মোবাইল কোম্পানির সঙ্গে ২ হাজার ৪০০ কোটি ডলারের মার্জার বা একীভূত হওয়ার প্রস্তাবনা ব্যর্থ হওয়ার পর ওয়ারিদের ৭০ শতাংশ শেয়ার কিনে কার্যত বাংলাদেশে একটি মোবাইল কোম্পানির নিয়ন্ত্রণ গ্রহণ করতে সক্ষম হয়। প্রশ্ন উঠেছে, ১৫ কোটি জনসংখ্যার বাংলাদেশে এরই মধ্যে গ্রামীণফোনের গ্রাহকসংখ্যা ২ কোটি ২০ লাখ, বাংলালিংকের গ্রাহকসংখ্যা ১ কোটি ৩০ লাখ, একটেলের গ্রাহকসংখ্যা ৮৮ লাখ ছাড়িয়ে যাওয়ার পরও কেন কোম্পানিটি বাংলাদেশের বাজারে বিনিয়োগ করতে এলো?
সূত্র জানায়, এর পেছনে মূলত দুটি কারণ রয়েছে। প্রথমত, বাংলাদেশের মোবাইল কোম্পানিগুলোর গ্রাহকসংখ্যা অনেক হলেও এর ঘনত্ব বা টেলিডেনসিটি ভারতের তুলনায় এখনও অনেক কম। ভারতের টেলিডেনসিটি যেখানে শতকরা ৪৬ ভাগ, বাংলাদেশে সেখানে মাত্র ৩২ ভাগ। ফলে এয়ারটেলের পক্ষে সুযোগ রয়েছে এর গ্রাহকসংখ্যা আরও বাড়ানোর। দ্বিতীয়ত, বাংলাদেশের মধ্য দিয়ে ফাইবার অপটিক কেবল ভারতের কেন্দ্র থেকে উত্তর-পূর্ব ভারতে নিয়ে যাওয়া এবং সেখানকার বিশাল বাজার ধরা।
ওয়ারিদ সূত্র জানায়, ভারতী এয়ারটেল এরই মধ্যে বাংলাদেশে বিপুল সংখ্যক কর্মকর্তা-কর্মচারী পাঠিয়েছে। তারা কাজে যোগও দিয়েছে। ওয়ারিদের শেয়ার কেনার ক্ষেত্রেও এয়ারটেল কৌশলের আশ্রয় নেয়। ওয়ারিদের মোট মূল্য ১ কোটি টাকা দেখিয়ে মাত্র ৭০ লাখ টাকা বা ১ লাখ ডলারের বিনিময়ে ওয়ারিদ টেলিকমের ৭০ ভাগ শেয়ার কিনে নেয়। যুক্তি হিসেবে বলা হয়, ওয়ারিদ একটি লোকসানি কোম্পানিতে পরিণত হয়েছে, ফলে টোকেনমূল্য দিয়ে ওয়ারিদকে এয়ারটেল কিনে নিচ্ছে। পরে এয়ারটেল ওয়ারিদের নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণের জন্য আরও ৩০ কোটি ডলার বিনিয়োগ করবে বলে বিটিআরসিকে জানিয়েছে।
কিন্তু ২০০৫ সালে বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে ওয়ারিদের মালিক ধাবি গ্রুপের স্বাক্ষরিত সমঝোতা স্মারক অনুসারে ওয়ারিদের নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণে ধাবি গ্রুপের ৭৫ কোটি ডলার বিনিয়োগ করার কথা। প্রশ্ন উঠেছে এই ৭৫ কোটি ডলার গেল কোথায়? ওয়ারিদ কি এতই দেনাগ্রস্ত যে এর দাম এখন মাত্র ১ লাখ ডলার? অথচ নেটওয়ার্কের কাজে ওয়ারিদ এরিকসন বা মটোরোলার কাছ থেকে যেসব যন্ত্রপাতি কিনেছে সেগুলোর দাম হিসাব করলেও তো ৫০ থেকে ৬০ কোটি ডলারের কম হবে না! ওয়ারিদের ব্যবহৃত প্রায় তিন হাজার বিটিএসের এক একটির দামই ৫০ হাজার ডলার, সেই বিটিএসগুলোর কন্ট্রোলার হিসেবে ব্যবহৃত মোট ২৫টি বিএসসি’র এক-একটির দাম কমপক্ষে আড়াই লাখ ডলার, এর সঙ্গে যুক্ত হবে এমএসসি, আইএন, ভাস, ট্রান্সমিশন ইকুইপমেন্ট ইত্যাদির মতো আরও মূল্যবান যন্ত্রপাতির দাম। সঙ্গে রয়েছে ব্র্যান্ড ভ্যালু, লাইসেন্স ফি ইত্যাদির হিসাবও। এ বিষয়ে ২০০৯ সালের ৩১ ডিসেম্বর ভেঞ্চার ক্যাপিটাল বিষয়ক ওয়েবসাইট ভিসি সার্কেল একটি হিসাব প্রকাশ করে যেখানে বলা হয়, ‘ওয়ারিদের সম্পদের মূল্যায়ন করে বলা যায় এর পরিমাণ ৫০ থেকে ৫৫ কোটি ইউএস ডলার হবে, ফলে ভারতী এয়ারটেলকে ৩০ থেকে ৩৫ কোটি ডলারে ওয়ারিদের ৭০ ভাগ শেয়ার কিনতে হতে পারে।’
তাহলে এই ১ লাখ ডলার বা ৭০ লাখ টাকার মতো কম দাম দেখানোর রহস্য কী? এর আসল বিষয় হলো বিটিআরসি’র একটি নিয়ম—বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ আইন ২০০১-এর ধারা ৩৭(১) অনুসারে বিটিআরসি থেকে লাইসেন্স পাওয়া কোনো কোম্পানি অন্য কোনো কোম্পানিকে লাইসেন্স বিক্রি করতে পারবে না। কিন্তু ৩৭(৩)-এর ঝ উপধারা অনুসারে শেয়ার হস্তান্তর করতে পারবে। আর এই শেয়ার হস্তান্তরের সময় শেয়ারের মূল্যের ৫.৫ ভাগ বিটিআরসিকে দিতে হবে। এখন ওয়ারিদের ৭০ ভাগ শেয়ারের মূল্য ৩০ কোটি ডলার দেখালে এর ৫.৫ ভাগ অর্থাত্ ১ কোটি ৬৫ লাখ ডলার বা ১১৫.৫ কোটি টাকা বিটিআরসিকে দিতে হতো। কিন্তু শেয়ারের মূল্য নামমাত্র ৭০ লাখ টাকা দেখানোর কারণে এখন বিটিআরসিকে দিতে হবে ৭০ লাখ টাকার ৫.৫ ভাগ অর্থাত্ মাত্র ৩ লাখ ৮৫ হাজার টাকা।

http://www.amardeshonline.com/pages/details/2010/04/10/26856

রাজশাহীতে মাদ্রাসার নামে গোরস্তানের জায়গা দখল করল আ’লীগ সমর্থকরা




রাজশাহী অফিস
মাদ্রাসা তৈরির নামে আওয়ামী লীগ সমর্থকদের বিরুদ্ধে রাজশাহী মহানগরীর দড়িখরবোনা গোরস্থানের জায়গা দখলের অভিযোগ পাওয়া গেছে। তারা গোরস্থানের পশ্চিমপ্রান্তের প্রায় ১০ বছরের পুরনো প্রাচীর ভেঙে ২০ কাঠা জমিতে নতুন প্রাচীর তুলে দখলে নিয়েছে বলে এলাকাবাসী জানিয়েছেন।
১৫নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর আবদুস সোবহান আলী লিটন বলেন, এ ব্যাপারে আমি বেশি কিছু জানি না। তবে শুনেছি জমির মালিক মহসিন আলী মাদ্রাসা তৈরির জন্য এ জমি দান করেছেন। জমি দখলের অভিযোগ অস্বীকার করে মসজিদ ও মাদ্রাসা কমিটির সভাপতি আবদুল মমিন বলেন, আমরা অবৈধ দখলের জন্য প্রাচীর ভাঙিনি। মুসল্লিদের মসজিদে যাতায়াতের রাস্তা করে দেয়ার জন্য এ প্রাচীর ভাঙা হয়েছে।
তবে এলাকাবাসী জানান, দীর্ঘদিন থেকে ওই জমিতে গোরস্থান ছিল। হঠাত্ এলাকার কিছু আওয়ামী সমর্থক মাদ্রাসা নির্মাণের নামে ওই জমি দখলের উদ্যোগ নেয়। এরই অংশ হিসেবে ২ এপ্রিল গোরস্থানের পুরনো প্রাচীর ভেঙে নতুন প্রাচীর নির্মাণ করে তারা। এ সময় তারা বলে, এটি সিটি কর্পোরেশন তাদের মাদ্রাসা তৈরির জন্য দিয়েছে। তবে জমিটি হস্তান্তরের কাগজপত্র তারা দেখাতে পারেনি।
এদিকে গোরস্থানের জায়গা দখল করে মাদ্রাসা নির্মাণের বিরোধিতা করে এলাকার ৬৫ জনের স্বাক্ষরিত একটি অভিযোগ সিটি মেয়র, রাজশাহী জেলা প্রশাসক, পুলিশ কমিশনার, উপ-পুলিশ কমিশনার (পূর্ব-পশ্চিম) ও ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বোয়ালিয়া মডেল থানাকে দিয়েছেন।
রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের এস্টেট অফিসার গোলাম রাব্বানী রিপন কিছু জানেন না। দড়িখরবোনা মাদ্রাসার আবেদনটিও তিনি পাননি বলে জানান।
এ ব্যাপারে সিটি মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন জানান, দড়িখরবোনা গোরস্থানের সীমানাপ্রাচীর ভাঙার খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে একজন ম্যাজিস্ট্রেট এবং রাসিকের ১৫ ও ১৩নং ওয়ার্ড কাউন্সিলরকে পাঠানো হয়েছিল তদন্ত করতে। নির্মাণ কাজ থেকে বিরত থাকারও নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
তানোর : তানোরে জেলা পরিষদের টাকায় আ’লীগ নেতার ব্যক্তিগত গোরস্থানের প্রাচীর তৈরি করা হচ্ছে। ঘটনাটি ঘটেছে তানোর উপজেলার নারায়ণপুর গ্রামে। এলাকাবাসী ও সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, গত অর্থবছরে তানোর উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় সরকারি মসজিদ, মাদ্রাসা ও গোরস্থান উন্নয়নমূলক কাজের জন্য রাজশাহী জেলা পরিষদ অর্থ বরাদ্দ করে। এর মধ্যে তানোর উপজেলার নারায়ণপুর গ্রামের সরকারি গোরস্থান প্রাচীর তৈরির জন্য জেলা পরিষদ থেকে ৭০ হাজার টাকা বরাদ্দ দেয়া হলে আ’লীগ নেতা আলাউদ্দিন আলী গ্রামবাসীকে না জানিয়ে তার ভাই নজির উদ্দিনকে প্রকল্প সভাপতি আরেক ভাই সেলিম উদ্দিনকে প্রকল্প সেক্রেটারি করে রেজুলেশন তৈরি করে, কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক তানোর শাখায় হিসাব খোলে। এ ব্যাপারে আ’লীগ নেতা নারায়ণপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আলাউদ্দিন আলীর সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ হলে তিনি বলেন, আমার পারিবারিক গোরস্থানটির প্রাচীর তৈরির জন্য রাজশাহী জেলা পরিষদ থেকে ৭০ হাজার টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে ৩৫ হাজার টাকা পাওয়া গেছে। ২/১ দিনের মধ্যেই প্রাচীর তৈরির কাজ শুরু করব।

http://www.amardeshonline.com/pages/details/2010/04/10/26845

ঢাকা মেডিকেলে নিয়োগে ডিজিটাল দুর্নীতি : ১৭১টি পদে নিয়োগপত্র দেয়া হয়েছে সাড়ে তিন শতাধিক

নেসার উদ্দিন আহাম্মদ
বর্তমান সরকারের আমলে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়োগ প্রক্রিয়ায় ডিজিটাল দুর্নীতির অভিযোগ পাওয়া গেছে। ১৭১ পদে নিয়োগপত্র দেয়া হয়েছে ৩ গুণ লোককে। শুধু এমএলএসএস, সুইপার, সিকিউরিটি গার্ড ও কুক/মশালচি পদে ৩৫১ জনকে নিয়োগপত্র দেয়া হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়। সূত্র আরও জানায়, এই নিয়োগকে কেন্দ্র করে হাসপাতালের চতুর্থ শ্রেণী কর্মচারী সমিতির আওয়ামী লীগ সমর্থিত এক নেতা কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। ওই নেতাসহ সংশ্লিষ্টরা একটি সুইপার পদের নিয়োগ বিক্রি করেছে ৩ লাখ থেকে সাড়ে ৩ লাখ টাকা। শুধু তাই নয়, এবারের নিয়োগের জন্য তদবির ও সুপারিশ করতে বাদ পড়েননি মন্ত্রী, এমপি, সচিব, আমলা, রাজনৈতিক নেতা ও সাংবাদিকরাও।
এদিকে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ থাকা সত্ত্বেও এই নিয়োগ প্রক্রিয়ায় মানা হয়নি মুক্তিযোদ্ধা বা প্রতিবন্ধীদের জন্য সংরক্ষিত কোটার বিধান। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে এই নিয়োগ প্রক্রিয়া স্থগিত করা হলেও ঢাকা মেডিকেলের তত্কালীন সাবেক পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল বজলে কাদের মন্ত্রীর নির্দেশের তোয়াক্কা না করেই নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে গেছেন। হাসপাতালের কয়েকজন সাবেক কর্মচারী নেতা আশঙ্কা করছেন যাদের নিয়োগপত্র দেয়া হয়েছে তাদের সবাইকে কাজে যোগদান করতে না দেয়া হলে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হতে পারে। তা এড়ানোর একমাত্র উপায় নতুন করে ইন্টারভিউ নেয়া। হাসপাতাল সূত্র জানায়, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় গত ১৫ জানুয়ারি এক জরুরি সভায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণী পদে লোক নিয়োগ প্রক্রিয়া স্থগিত করে। নিয়োগ প্রক্রিয়ায় দুর্নীতি তদন্তের জন্য তদন্ত কমিটিও গঠন করা হয়। কিন্তু ঢাকা মেডিকেলের সাবেক পরিচালক তা উপেক্ষা করে তার বদলির আগেই গত ১৪ জানুয়ারি নিয়োগ প্রক্রিয়া চূড়ান্ত করে যান।
এ ব্যাপারে গত ১ ফেব্রুয়ারি সাবেক পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল বজলে কাদেরের সঙ্গে আমার দেশ থেকে তার মোবাইলে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘নিয়োগ প্রক্রিয়া চূড়ান্ত হয়ে গেছে। ছাপানোও হয়ে গেছে।’ এর বেশি কিছু না বলে তিনি ফোনটি রেখে দেন।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের অফিস আদেশ স্মারক নম্বর ঢামেকহা/প্রশা/যোগদান/২০১০/২৬১-এ দেখা যায় এমএলএসএস পদে নিয়োগ দেয়া হয়েছে ২৩৪ জনকে। অথচ নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেয়া হয় ৯৮ পদের জন্য। ২৬৪ নম্বর স্মারকে সিকিউরিটি গার্ড পদে নিয়োগ দেয়া হয়েছে ১৯ জনের। বিজ্ঞপ্তিতে এই পদের জন্য চাওয়া হয় ১৫ জন। ২৬৫ নম্বর স্মারকে সুইপার পদে নিয়োগ দেয়া হয়েছে ৮১ জনকে। এই পদে চাওয়া হয় ৩২ জন। প্রায় প্রতিটি পদেই দুর্নীতি করা হয়েছে বলে সূত্র জানায়। হাসপাতালের কর্মকর্তা কর্মচারীরা এটাকে বলছেন ডিজিটাল দুর্নীতি।
অভিযোগ পাওয়া গেছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশ থাকা সত্ত্বেও মুক্তিযোদ্ধার কোটা মানা হয়নি। এমনকি প্রতিবন্ধী কোটার বিধানও এক্ষেত্রে অগ্রাহ্য করা হয়েছে।
এদিকে হাসপাতালের অনেক কর্মকর্তা-কর্মচারী আশঙ্কা করছেন, নিয়োগপত্র পাওয়া সবাইকে যদি নিয়োগ দেয়া না হয় তাহলে হাসপাতালে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের আশঙ্কা রয়েছে। কারণ হিসেবে জানা যায়, প্রায় সবাই অর্থের বিনিময়ে নিয়োগপত্র নিয়েছে। ফলে যারা চাকরিতে যোগদান করতে পারবে না তারা মারমুখী হয়ে উঠবে। এ ব্যাপারে ঢাকা মেডিকেলের চতুর্থ শ্রেণী কর্মচারী সমিতির সাবেক সভাপতি এমএ হান্নান বলেন, এবারের নিয়োগে চরম দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে। যদি নিয়োগ প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা না এনে নিয়োগ দেয়া হয় তাহলে হাসপাতালে চরম বিশৃঙ্খলা ঘটবে। যারা টাকার বিনিময়ে নিয়োগপত্র পেয়েছে তারাও মারমুখী হয়ে উঠবে।
গত বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির অষ্টম বৈঠকে ঢাকা মেডিকেলের নিয়োগ প্রক্রিয়া সঠিক হয়নি বলে উল্লেখ করা হয়। বৈঠকে বলা হয়, এ নিয়োগ প্রক্রিয়ায় ত্রুটি-বিচ্যুতি থাকায় তা সঠিক হয়নি। এ বিষয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য সুপারিশ করা হয়। বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন কমিটির সভাপতি শেখ ফজলুল করিম সেলিম। কমিটির সদস্য স্বাস্থ্যমন্ত্রী, স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রীও বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ডা. মোঃ শহীদুল হক মল্লিক জানান, তিনি গত ৪ ফেব্রয়ারি হাসপাতালে পরিচালক হিসেবে যোগদান করেন। ১৫ জানুয়ারি নিয়োগ প্রক্রিয়া স্থগিত হয়। মন্ত্রণালয় এই স্থগিতাদেশ তুলে না নেয়া পর্যন্ত তার করার কিছুই নেই। তিনি নিয়মের বাইরে কোন কাজ করতে পারবেন না বলে জানান। তিনি বলেন, এই নিয়োগ নিয়ে নানা প্রশ্ন রয়েছে। যদি ১৭১ জনের বেশি নিয়োগপত্র পেয়ে থাকে তাহলে নিয়োগ নিয়ে জটিলতা আরও বাড়বে।
৬ এপ্রিল বিশ্বস্বাস্থ্য দিবস উপলক্ষে এক প্রেসব্রিফিং শেষে স্বাস্থ্যমন্ত্রী অধ্যাপক ডা. আ ফ ম রুহুল হক সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেন, ঢাকা মেডিকেলের নিয়োগের বিষয়ে খুব দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
সূত্র জানায়, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে লোক নিয়োগের ক্ষেত্রে যে সুপারিশ এসেছে তা অতীতের সব রেকর্ড ভঙ্গ করেছে। পদ মাত্র ১৭১টি। এর মধ্যে একজন মন্ত্রীই ২৫০টি সুপারিশ করেছেন। আবার একজন প্রার্থীর জন্য একাধিক মন্ত্রীর সুপারিশ এসেছে। এভাবে মন্ত্রীরই সুপারিশ এসেছে প্রায় ৫০০।
উল্লেখ্য, গত ২৬ নভেম্বর ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারীর ১৭১টি পদের জন্য নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেয়া হয়। আবেদনপত্র জমা দেয়ার শেষ তারিখ ছিল ১০ ডিসেম্বর। ২৩ ডিসেম্বর মৌখিক পরীক্ষা শুরু হয়। আর তড়িঘড়ি করেই তা শেষ করা হয় ৩১ ডিসেম্বর।

http://www.amardeshonline.com/pages/details/2010/04/10/26841

মৌলভীবাজারে ধলাই বাঁধ মেরামতে ভারতের বাধা

মৌলভীবাজার ও কমলগঞ্জ প্রতিনিধি
ভারত সরকারের রহস্যজনক নীরবতার কারণে দীর্ঘদিন ধরে মৌলভীবাজারের কুরমা সীমান্তের মখাবিল ধলাই নদীর বন্যা প্রতিরক্ষা বাঁধের কাজ ঝুলে আছে। বর্ষার আগে প্রতিরক্ষা বাঁধ মেরামত করতে না পারলে কমলগঞ্জ উপজেলার ৫টি ইউনিয়নের ঘরবাড়ি ও ব্যাপক ফসল বন্যায় তলিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। বাঁধ নির্মাণের দাবি জানিয়ে ভারত সরকারের কাছে আবেদন করেও কোনো সাড়া পাওয়া যাচ্ছে না। এতে করে মৌলভীবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ডের ৮৪ লাখ টাকার কাজ আটকে আছে।
জানা গেছে, ধলাই নদীর কুরমা সীমান্তে বন্যা প্রতিরক্ষা বাঁধের ৫০০ ফুট পরিমাণ ভাঙন দেখা দেয়। এই ভাঙন মেরামতের জন্য মৌলভীবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ড একটি প্যাকেজের আওতায় মোট ৮৪ লাখ টাকার প্রকল্প গ্রহণ করে। এ প্রকল্পের কাজ পায় শহীদ ব্রাদার্স নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। প্রতিষ্ঠানটি ২০০৮ সালের শেষের দিকে ধলাই নদীর বাঁধ মেরামতের উদ্যোগ গ্রহণ করে। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটি বাঁধ মেরামত কাজে হাত দিলে বিএসএফ এতে বাধা দেয়।
মৌলভীবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ড জানিয়েছে, সীমান্ত এলাকায় নদীর প্রতিরক্ষা বাঁধে উন্নয়নমূলক কাজ করতে হলে দু’দেশের যৌথ নদী কমিশনের সিদ্ধান্তমতে তা করতে হয়। পানি উন্নয়ন বোর্ড নিয়মমত ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্মকর্তার কাছে লিখিত আবেদন পাঠায়। কিন্তু দীর্ঘ দু’বছরেও ভারত সরকার এতে কোনো সাড়া দেয়নি।
এ অবস্থায় প্রায় দু’বছর ধরে ধলাই নদীর বন্যা প্রতিরক্ষা বাঁধের কাজ করা যাচ্ছে না। এলাকাবাসীর সহযোগিতায় ঠিকাদারি সংস্থাটি আবারও বাঁধ মেরামতের উদ্যোগ নিলে বিএসএফ এতে বাধা দেয়। পানি উন্নয়ন বোর্ড ও এলাকাবাসী জানিয়েছে, বর্ষার আগে ধলাই প্রতিরক্ষা বাঁধ মেরামত করতে না পারলে এবছর বন্যা দেখা দেবে। এ বন্যায় ইসলামপুর, আদমপুর, আলীনগর, কমলগঞ্জ এবং শমশেরনগর ইউনিয়নের ব্যাপক এলাকার ফসলি জমি ও বাড়িঘর ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। জানা যায়, ১৯০৯ ও ১৯১০ নং সীমান্ত খুঁটির মধ্যবর্তী ধলাই প্রতিরক্ষা বাঁধের ৫০০ ফুট পরিমাণ বাঁধ খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। প্রবল বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলের তোড়ে এ বাঁধটি পুরোটাই ভেঙে যেতে পারে।

http://www.amardeshonline.com/pages/details/2010/04/10/26700

সংবাদ সম্মেলনে তেল-গ্যাস রক্ষা জাতীয় কমিটির দাবি : ড. তৌফিকসহ সরকারের উচ্চপর্যায়ের দুর্নীতির বিষয়ে তথ্য-প্রমাণ

রয়েছে
স্টাফ রিপোর্টার
প্রধানমন্ত্রীর বিদ্যুত্, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ বিষয়ক উপদেষ্টা ড. তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরীসহ সরকারের শীর্ষ পর্যায়ের ব্যক্তিরা দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত বলে অভিযোগ করেছে তেল-গ্যাস-খনিজসম্পদ ও বিদ্যুত্-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটি। এ সংক্রান্ত তথ্য-প্রমাণ তাদের কাছে রয়েছে বলেও দাবি করেছে তারা।
গতকাল রাজধানীর পুরানা পল্টনের মুক্তি ভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে তেল-গ্যাস রক্ষা জাতীয় কমিটি এ দাবি করেছে। এতে জাতীয় কমিটির সদস্য সচিব অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বিনা টেন্ডারে শেভরনের সঙ্গে সরকারের কম্প্রেসার স্থাপনের চুক্তিকে অনৈতিক অভিহিত করে বলেন, এর সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর জ্বালানি উপদেষ্টা তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরীসহ সরকারের উচ্চপর্যায়ের ব্যক্তিরা জড়িত।
অবিলম্বে কম্প্রেসার বসানোর চুক্তি বাতিলের দাবি করে তিনি বলেন, কম্প্রেসার স্থাপনের জন্য যে ব্যয় হচ্ছে, তার থেকে অনেক কম খরচে কমিটির দেয়া সুপারিশ অনুযায়ী স্বল্পমেয়াদে সঙ্কট উত্তরণ সম্ভব। আর এতে দেশে গ্যাস ও বিদ্যুতের কোনো সঙ্কট থাকবে না। তিনি জ্বালানি মন্ত্রণালয়কে দুর্নীতিবাজ ও বহুজাতিক কোম্পানির রাহুমুক্ত করে জাতীয় সক্ষমতা বিকাশে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণের জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান। বিদ্যুত্ সঙ্কট মেটাতে প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত রোডম্যাপকে ভাঁওতাবাজি উল্লেখ করে তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকে একই ধরনের কথা বলছেন। কিন্তু আগামী বছর (২০১১) সালে যে পরিমাণ বিদ্যুত্ জাতীয় গ্রিডে আসবে বলে দাবি করা হচ্ছে, এখনও তার কোনো প্রস্তুতি নেই।
কমিটির আহ্বায়ক প্রকৌশলী শেখ মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ বলেন, অপেক্ষাকৃত বেশি দামে এবং যেখানে প্রয়োজন নেই সেখানে কম্প্রেসার স্থাপনের চুক্তি প্রমাণ করে এখানে দুর্নীতি হয়েছে। জ্বালানি উপদেষ্টাসহ সরকারের উচ্চপর্যায় দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত—এমন তথ্য-প্রমাণ কমিটির কাছে রয়েছে বলে তিনি দাবি করেন। মুহম্মদ শহীদুলস্নাহ পিএসসি’র (প্রোডাকশন শেয়ারিং কন্ট্রাক্ট) অধীনে কোন চুক্তি না করার দাবি জানান।
সংবাদ সম্মেলনে বিডি রহমত উল্লাহ বিদ্যুত্ সাশ্রয়ে সরকারকে বিভিন্ন প্রকল্প গ্রহনের দাবি জানান। তিনি দাবি করেন সাশ্রয় করা গেলে জাতীয় গ্রীডের উপর চাপ কমবে। এতে বিদ্যুতের জন্য মানুষের দুর্ভোগ কমে আসবে। কয়লা এবং গ্যাস উত্তোলনে তিনি দেশি কোম্পানিকে প্রাধান্য দেয়ার দাবি করেন। এছাড়া পুরনো বিদ্যুত্ কেন্দ্র সংস্কার করে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ বিদ্যুত্ পাওয়া সম্ভব বলে জানান তিনি।
সংবাদ সম্মেলনে কমিটির পক্ষ থেকে বলা হয়, সরকারের শীর্ষ পর্যায়ের সঙ্গে বহুজাতিক কোম্পানির আঁতাত রয়েছে। সরকার ইচ্ছাকৃতভাবে সমস্যা জিইয়ে রেখে জ্বালানি সঙ্কট সৃষ্টি করছে। কমিটি স্বল্পমেয়াদে সঙ্কট উত্তরণের জন্য ৯ দফা এবং মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদে স্থায়ী সমাধানের জন্য আরও ৭ দফা সুপারিশ করেছে। সুপারিশ বাস্তবায়নের পথে অগ্রসর হওয়ার জন্য আগামী ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত সরকারকে সময় বেঁধে দিয়েছে জাতীয় কমিটি। এ সময়ের মধ্যে সুপারিশ বাস্তবায়নে অগ্রসর না হলে গণট্রাইব্যুনালসহ বিভিন্ন কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।
সংবাদ সম্মেলনে অন্যানের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন আবদুর রশিদ সরকার, বজলুর রশিদ ফিরোজ, বিমল বিশ্বাস, রুহিন হোসেন প্রিন্স, নূর মহম্মদ, নজরুল ইসলাম প্রমুখ।
স্বল্পমেয়াদি দাবি : সংবাদ সম্মেলনে জাতীয় কমিটি স্বল্পমেয়াদে সঙ্কট উত্তরণের জন্য সাতটি সুনির্দিষ্ট দাবি উত্থাপন করেছে। এগুলো হচ্ছে—তিতাস এবং হবিগঞ্জ গ্যাসক্ষেত্র থেকে উত্পাদন বৃদ্ধি, পেট্রোবাংলার অধীন বন্ধ ১২ গ্যাসকূপ চালু, বিদেশি কোম্পানিকে ইজারা দেয়া গ্যাস ক্লককে অনুসন্ধানে বাধ্য করা অথবা চুক্তি বাতিল করা, গ্যাস ও বিদ্যুত্ লাইন মেরামত এবং নবায়ন করা, বড়পুকুরিয়া বিদ্যুত্ প্লান্ট মেরামত করা, রাষ্ট্রীয় সব বিদ্যুত্ কেন্দ্র মেরামত এবং নবায়ন করা, কম দামে বিদ্যুত্ পাওয়ার জন্য দেশি বিদ্যুত্ কেন্দ্রে গ্যাস সরবরাহ বৃদ্ধি, ক্ষুদ্র বিদ্যুত্ প্লান্ট স্থাপনে দেশি উদ্যোক্তাদের সুযোগদান, নতুন গ্যাসক্ষেত্র অনুসন্ধান ও উত্তোলনের জন্য জাতীয় সংস্থাগুলোকে শক্তিশালী করা।
মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদে স্থায়ী সমাধানের দাবি : মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদে স্থায়ী সমাধানের জন্যও কমিটি ৭ দফা দাবি পেশ করে। এগুলো হচ্ছে—জাতীয় কমিটির ৭ দফা বাস্তবায়ন ও পিএসসিসহ জাতীয় স্বার্থবিরোধী সব চুক্তি বাতিল, খনিজসম্পদ রফতানি নিষিদ্ধকরণ আইন পাস, শতভাগ মালিকানা, রফতানি নিষিদ্ধকরণ, জাতীয় সক্ষমতা নিশ্চিত করে গ্যাস অনুসন্ধান ও উত্তোলন নিশ্চিত করা, কয়লা উত্তোলনের ক্ষেত্রে গ্যাসিফিকেশন পদ্ধতি অনুসরণ, নবায়নযোগ্য জ্বালানির ব্যবহার বৃদ্ধি, জাতীয় প্রতিষ্ঠানকে শক্তিশালী করা এবং জ্বালানি মন্ত্রণালয়কে দুর্নীতিমুক্ত করার পাশাপাশি বিদেশি কোম্পানির রাহুমুক্ত করা।

http://www.amardeshonline.com/pages/details/2010/04/10/26755

সুতার বাজার তুলে দেয়া হচ্ছে ভারতের হাতে : হুমকির মুখে পড়বে ৩০ হাজার কোটি টাকার দেশীয় বিনিয়োগ

সৈয়দ মিজানুর রহমান
প্রায় ৩০ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগে গড়ে ওঠা স্পিনিং মিল ধ্বংস করতে এবার দেশের সুতার বাজার তুলে দেয়া হচ্ছে ভারতের হাতে। বস্ত্র মন্ত্রণালয় উদ্যোগ নিয়েছে বাণিজ্যিকভাবে সুতা আমদানি উন্মুক্ত করে দেয়ার। কয়েক দিনের মধ্যেই এ সিদ্ধান্ত কার্যকর হবে বলে একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র নিশ্চিত করেছে।
সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, সুতার মূল ব্যবহারকারী পোশাক খাতের উদ্যোক্তারা ভারত থেকে অবাধে সুতা আমদানির দাবি না তুললেও হঠাত্ করেই বস্ত্রমন্ত্রী নিজ উদ্যোগে বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে ভারত থেকে সুতা আমদানি উন্মুক্ত করার উদ্যোগ নিয়েছেন।
এরই মধ্যে বস্ত্র মন্ত্রণালয়ের পাঠানো প্রস্তাব জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে অনুমোদনের অপেক্ষায় আছে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) একটি সূত্র জানিয়েছে, চলতি সপ্তাহেই এ সংক্রান্ত একটি পরিপত্র জারি হবে।
জানা গেছে, বর্তমানে তৈরি ও নিট পোশাক খাতে শতভাগ রফতানিকারকরা বন্ডের আওতায় বেনাপোল দিয়ে সড়ক পথে সুতা আমদানির সুযোগ পাচ্ছেন। এক্ষেত্রে আমদানিকারকদের কোনো শুল্কও দিতে হয় না। এছাড়া বাণিজ্যিকভাবে ব্যবহারের জন্য চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দর দিয়ে আমদানি উন্মুক্ত আছে। তবে ভারত দীর্ঘদিন ধরে দাবি জানিয়ে আসছিল তাদের সুতা রফতানিকারকদের সুবিধার্থে সড়কপথে (বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে) সুতা আমদানি খুলে দেয়ার। কিন্তু বাংলাদেশের টেক্সটাইল মিলগুলো রাজি না হওয়ায় সেটি বন্ধ আছে।
ভারত থেকে অবাধে সুতা আমদানি হলে দেশের টেক্সটাইল মিলগুলো বন্ধ হয়ে যাবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। কারণ হিসেবে বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিএমএ) সাবেক সভাপতি মোঃ শাজাহান গতকাল আমার দেশকে বলেন, বাংলাদেশ কাঁচামাল আমদানি করেই সুতা বানায়। কিন্তু ভারতে কাঁচামালের (তুলা) কোনো ঘাটতি নেই। এছাড়া ভারত টেক্সটাইল মিলগুলোকে সুতা রফতানির ক্ষেত্রে ১৫ শতাংশ ভর্তুকি দিচ্ছে। এতে বাংলাদেশের তুলনায় ভারতে সুতা উত্পাদন খরচ প্রায় ৩০ ভাগ কম। এ অবস্থায় ভারত থেকে সুতা আমদানি উন্মুক্ত করে দেয়া হলে ৬ মাসে দেশের সব টেক্সটাইল মিল বন্ধ হয়ে যাবে।
দেশের টেক্সটাইল মিলগুলোর উত্পাদিত সুতার ৭০ ভাগ ব্যবহার করে স্থানীয় নিট কারখানাগুলো। আর ৩০ ভাগ সুতা আমদানি হয় ভারত থেকে। নিট পোশাক ও ওভেন গার্মেন্টস মালিকরা সুতা আমদানি করতে পারছেন সড়ক পথে। ফলে এক্ষেত্রে কোনো সমস্যা নেই। প্রশ্ন উঠেছে, তবে কার স্বার্থে সুতা আমদানি উন্মুক্ত হচ্ছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিটিএমএ সভাপতি আবদুল হাই সরকার বলেন, তাঁতিদের নামে সরকার ভারতের হাতে দেশের সুতার বাজার তুলে দিতে চাইছে। অথচ তাঁতিরা কখনোই সরাসরি সুতা আমদানি করেন না। তাদের এ ক্ষমতাও নেই। আর তাঁতিরা যে পরিমাণ সুতা ব্যবহার করেন তার কোনো ঘাটতি নেই।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী আবদুল লতিফ সিদ্দিকী সম্প্রতি বিটিএমএ নেতাদের তার বাসায় ডেকে পাঠান। সেখানে কয়েকজন তাঁতি নেতাও উপস্থিত ছিলেন। মন্ত্রী বিটিএমএ নেতাদের কাছে জানতে চান ভারত থেকে বাণিজ্যিকভাবে সড়ক পথে সুতা আমদানি উন্মুক্ত করে দেয়া হলে তাদের (টেক্সটাইল মিল মালিকদের) কোনো সমস্যা হবে কিনা। জবাবে বিটিএমএ নেতারা এর নেতিবাচক দিক তুলে ধরে মন্ত্রীকে এ সিদ্ধান্ত না নেয়ার অনুরোধ জানান। তবে মন্ত্রী টেক্সটাইল মিল মালিকদের সাফ জানিয়ে দেন, ভারত থেকে সুতা আমদানি সহজ করতে বেনাপোল স্থলবন্দর খুলে দেয়া হবে। শিগগিরই বাণিজ্যিকভাবে সুতা আমদানি উন্মুক্ত করে দেয়ার কথা জানান মন্ত্রী।
জানা গেছে, ভারত থেকে সুতা আমদানিতে সব বাধা তুলে নিতে সম্প্রতি বস্ত্র মন্ত্রণালয় এনবিআরকে অনুরোধ করেছে। মন্ত্রী নিজেও এনবিআরের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে টেলিফোনে এ সিদ্ধান্তের কথা জানিয়ে দেন। সরাসরি বস্ত্রমন্ত্রীর চাপেই এনবিআর স্থলপথে বেনাপোল দিয়ে সুতা আমদানি উন্মুক্ত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
ভারত থেকে স্থলপথে সুতা আমদানি উন্মুক্ত করে দেয়ার কারণ জানতে চাইলে বস্ত্র মন্ত্রণালয়ের সচিব গতকাল আমার দেশকে বলেন, স্থানীয় তাঁতিদের কথা চিন্তা করে এমন সিদ্ধান্ত নেয়া হচ্ছে।
ভারত থেকে সুতা আমদানি উন্মুক্ত করে দেয়া ঠিক হবে না বলে মনে করছেন স্বয়ং ব্যবহারকারীরাই। এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফেকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিকেএমইএ) সভাপতি মোঃ ফজলুল হক বলেন, গত কয়েক মাসে সুতার দাম অস্বাভাবিক বেড়ে গেছে। এটা হয়েছে গ্যাস-বিদ্যুত্ সঙ্কটের কারণে। তিনি মনে করেন, টেক্সটাইল মিলগুলোর উত্পাদন ক্ষমতা ৪০ থেকে ৫০ ভাগ পর্যন্ত কমে গেছে। তবে আরও কিছু কারণ থাকতে পারে সুতার দাম বাড়ার পেছনে। তবে এজন্য ভারত থেকে আমদানি উন্মুক্ত করে দেয়ার যৌক্তিকতা নেই। এতে স্থানীয় মিলগুলো বন্ধ হয়ে যাবে। ফলে দীর্ঘমেয়াদে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। বিকেএমইএ সভাপতি মনে করেন, সুতার বাজার পরিস্থিতি দেখভাল করার জন্য একটি কমিটি করে সব সমস্যার দ্রুত সমাধান সম্ভব।
জানা গেছে, গ্যাস ও বিদ্যুতের অভাবে গাজীপুর, আশুলিয়া, সাভার, টাঙ্গাইলসহ বেশ কিছু এলাকায় টেক্সটাইল মিলের উত্পাদনে বিপর্যয় নেমে এসেছে। দিনে এসব এলাকার কোনো কারখানাতেই চাহিদার এক-তৃতীয়াংশ গ্যাস-বিদ্যুত্ সরবরাহও হচ্ছে না। এতে মিলগুলোতে প্রতি মাসে ক্ষতি হচ্ছে কোটি কোটি টাকা। উত্পাদনে বিপর্যয় নেমে আসায় অনেকের রফতানি কার্যক্রমও বন্ধ হয়ে গেছে। সঙ্কট নিয়ে প্রধানমন্ত্রী থেকে শুরু করে সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও দফতরে অভিযোগ জানিয়েও কোনো ফল পাওয়া যাচ্ছে না। তবে সরকারের এসব বিষয়ে কোনো মাথাব্যথা নেই বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। মিলগুলোর সমস্যার সমাধান দিতে না পারলেও ভারতের জন্য নিজেদের বাজার খুলে দিতে বেশি আগ্রহী একটি মহল।
বর্তমানে দেশে বেসরকারি খাতে টেক্সটাইল মিল আছে ৩৪২টি এবং সরকারি খাতে ২৩টি। সরকারি খাতের অধিকাংশ মিলই সার্ভিস চার্জে পরিচালিত হচ্ছে এবং বাকি মিলের উত্পাদন বন্ধ রয়েছে। বেসরকারি খাতের স্পিনিং মিল স্থানীয় বাজারের সিংহভাগ চাহিদা পূরণের পাশাপাশি রফতানিমুখী নিট পোশাকের জন্য প্রয়োজনীয় বস্ত্র উত্পাদনে ব্যবহৃত সুতার ৮২ শতাংশ পূরণে সক্ষম হচ্ছে।

http://www.amardeshonline.com/pages/details/2010/04/10/26753

Tuesday 6 April 2010

রাজনীতি ও ব্যবসা পৃথক করা না গেলে দুর্নীতি দূর হবে না : দুদক চেয়ারম্যান

স্টাফ রিপোর্টার
দুর্নীতি দমন কমিশন চেয়ারম্যান গোলাম রহমান বলেছেন, প্রচলিত রাজনীতিতে ব্যবসায়ী এবং আমলাদের একটি যোগসাজশ রয়েছে। রাজনীতি ও ব্যবসাকে পৃথক করা সম্ভব না হলে দেশ থেকে দুর্নীতি দূর করা যাবে না। শক্তিশালী ও স্বাধীন দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) প্রতিষ্ঠার জন্য কার্যকর আইন ও বিচারপ্রক্রিয়ার দীর্ঘসূত্রতার অবসান সবচেয়ে জরুরি বলে মন্তব্য করেছেন দুদক চেয়ারম্যান গোলাম রহমান।
গতকাল রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) আয়োজিত গোলটেবিল বৈঠকে প্রধান অতিথির বক্তব্যে দুদক চেয়ারম্যান একথা বলেন। সুজন সভাপতি অধ্যাপক মোজাফফর আহমদের সভাপতিত্বে ‘দুর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশ, বর্তমান বাস্তবতা ও নাগরিক উদ্বেগ’ শীর্ষক বৈঠকে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বদিউল আলম মজুমদার।
দুর্নীতি দমনে সরকারের অঙ্গীকারের কথা উল্লেখ করে গোলাম রহমান বলেন, সরকারও চাচ্ছে দুর্নীতি দূর হোক। তাদের রাজনৈতিক সদিচ্ছাও রয়েছে; কিন্তু তারা পারছে না। এর জন্য তিনি দায়ী করেন রাজনীতি ও ব্যবসার সংমিশ্রণকে। তিনি বলেন, রাজনীতির সঙ্গে ব্যবসা এখন ওতপ্রোতভাবে জড়িত। ব্যবসা ও রাজনীতির এই আঁতাতের মধ্যেই রয়েছে দুর্নীতির বীজ। বিশেষ করে উচ্চপর্যায়ের দুর্নীতির কথা উল্লেখ করে ব্যবসা ও রাজনীতির আঁতাত ভাঙা দরকার বলে মন্তব্য করেন তিনি।
দুদক চেয়ারম্যান সংসদীয় কমিটি প্রসঙ্গে বলেন, ‘কমিটি তাদের অনুসন্ধানে প্রাপ্ত তথ্যগুলো দুদকে পাঠাচ্ছে এবং দুদক নিরপেক্ষ অবস্থান থেকে তদন্ত করে সেগুলোর ওপর কাজ করছে। ফলে সংসদীয় কমিটির কাজ লোক দেখানো—এটা আমি মনে করি না।’
প্রধানমন্ত্রীর মামলা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘দোষী কি নির্দোষ, তা প্রমাণের জন্য প্রধানমন্ত্রী বিচারিক আদালতে গেছেন। তিনি হাইকোর্টের প্রতি আস্থা রাখছেন; ফলে তিনি যে দুদককে প্রভাবিত করছেন না, দুর্নীতির বিরুদ্ধে তার যে অঙ্গীকার রয়েছে—এটা তারই প্রমাণ।’
সভাপতির বক্তব্যে অধ্যাপক মোজাফফর আহমদ বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতি সত্ত্বেও দেশবাসী দুর্নীতির রাহুগ্রাস থেকে মুক্ত হতে পারছে না বলে আমরা উদ্বিগ্ন।’
মোজাফফর আহমদ বলেন, কেবল আইন করে দুর্নীতি নির্মূল করা সম্ভব নয়। এজন্য সরকারের উদ্যোগের পাশাপাশি নাগরিক সহযোগিতারও প্রয়োজন রয়েছে। তিনি রাজনৈতিক প্রক্রিয়ার সংস্কার এবং ক্ষমতা বিকেন্দ্রীকরণের ওপর গুরুত্বারোপ করেন।

http://www.amardeshonline.com/pages/details/2010/04/07/26310

বিনা টেন্ডারে সামিটকে দেয়া হচ্ছে বিবিয়ানা বিদ্যুেকন্দ্রের কাজ


এম আবদুল্লাহ
এবার বিনা টেন্ডারে বিবিয়ানায় ৪৫০ মেগাওয়াট ক্ষমতার বিদ্যুত্ কেন্দ্র স্থাপনের কাজ দেয়া হচ্ছে বাণিজ্যমন্ত্রীর পারিবারিক প্রতিষ্ঠান সামিটকে। সরকারের উচ্চ পর্যায়ের আগ্রহে বিদ্যুত্ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) এ বিষয়ে সায় দিয়ে চিঠি পাঠিয়েছে মন্ত্রণালয়ে। প্রস্তাবটি যে কোনো দিন অনুমোদন পেতে পারে বলে মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে। প্রায় ৪ হাজার কোটি টাকার প্রকল্পটি বিনা টেন্ডারে দেয়া হলে এটাই হবে বাংলাদেশের ইতিহাসে এ ধরনের বড় অনিয়মের প্রথম দৃষ্টান্ত। পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপের (পিপিপি) মোড়কে এটা করার কথা বলা হলেও বস্তুত এর কোনো আইনি ভিত্তি নেই। কোনো নীতিমালাও অনুমোদিত হয়নি। দায়িত্ব গ্রহণের পর ১৫ মাসে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ না নিয়ে সরকার এখন ৮/৯ মাস সময় সাশ্রয়ের কথা বলে বিনা টেন্ডারে কাজ দেয়ার তোড়জোড় শুরু করেছে। প্রাক-যোগ্যতা যাচাইয়ের জন্য প্রস্তাব আহ্বানকৃত বিবিয়ানা-২ বিদ্যুত্ কেন্দ্রটির স্থলে একই ক্ষমতার কেন্দ্র স্থাপনের কাজ সামিটকে দেয়ার জন্যই সিরাজগঞ্জ ৪৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুত্ কেন্দ্র সংক্রান্ত প্রস্তাব নাকচ করা হয়েছে বলে সূত্র জানিয়েছে।
পিডিবি চেয়ারম্যান এএসএম আলমগীর কবির এ প্রসঙ্গে আমার দেশকে বলেন, বিদ্যমান বিধি-বিধান অনুযায়ী বিনা টেন্ডারে বিবিয়ানায় ৪৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুত্ কেন্দ্রের কাজ দেয়ার সুযোগ নেই তা আমরা জানি। তবে সরকার চাইলে পন্থা বের করতে পারে। চলমান বিদ্যুত্ সঙ্কটের প্রেক্ষিতে সামিটকে বিবিয়ানায় বিদ্যুত্ কেন্দ্র স্থাপন করতে দিতে চাইলে সরকারকেই পন্থা বের করতে হবে। ঘরে চাল না থাকলে এবং পরিবারের সদস্যরা না খেয়ে থাকার উপক্রম হলে যে কোনো উপায়ে চাল যোগাড় করা যায় বলেও মত প্রকাশ করেন পিডিবি চেয়ারম্যান।
সামিট ইন্ডাস্ট্রিয়াল এন্ড মার্কেন্টাইল কর্পোরেশন লি.-এর চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আজিজ খান এ প্রসঙ্গে আমার দেশকে বলেন, সিরাজগঞ্জ বিদ্যুত্ কেন্দ্র স্থানান্তর করে বিবিয়ানা বা অন্য যে কোথাও নেয়া হলে আমরা স্থাপন করতে প্রস্তুত আছি। বিদ্যমান আইনে তা বৈধ হবে কিনা জানতে চাইলে আজিজ খান বলেন, রিলোকেশন করতে চাইলে তা করা যাবে।
পিডিবি’র চিঠিতে যা বলা হয়েছে : পিডিবি সচিব মোঃ আজিজুল ইসলামের স্বাক্ষরে গত ১ এপ্রিল বিদ্যুত্ বিভাগের সচিব বরাবর পাঠানো পত্রে (সূত্র নং-৩৫৩ বিউবো (সচি)/উন্নয়ন-১৫৭/২০০২) বলা হয়, ‘সিরাজগঞ্জ এলাকায় বর্তমানে গ্যাসের অপ্রতুলতা রয়েছে। যে কারণে বাঘাবাড়িতে স্থাপিত বিদ্যুত্ কেন্দ্রগুলো পূর্ণ ক্ষমতায় চালানো সম্ভব হচ্ছে না। বিবিয়ানা ও সিলেটে গ্যাসের সহজলভ্যতার কারণে বিবিয়ানা-২ বিদ্যুত্ কেন্দ্র স্থাপনের জন্য এর মধ্যে প্রি-কোয়ালিফিকেশন (পিকিউ) আহ্বান করা হয়েছে এবং বিবিয়ানা-১ বিদ্যুত্ কেন্দ্রের রিকোয়েস্ট ফর প্রপোজাল (আরএফপি) ইস্যুর পর্যায়ে রয়েছে। গ্যাসের মজুদ অনুযায়ী ওই স্থানে দু’টির বেশি বিদ্যুত্ কেন্দ্র স্থাপন করা যাবে না। বিবিয়ানা-২ প্রকল্পের টেন্ডার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে প্রায় ৮/৯ মাস সময়ের প্রয়োজন হবে। সিরাজগঞ্জ এলাকার গ্যাসের স্বল্পতার কারণে বিবিয়ানা-২ প্রকল্পের পরিবর্তে সামিট কর্তৃক প্রস্তাবিত প্লান্টটি বিবিয়ানাতে স্থাপন করা হলে উল্লেখিত ৮ থেকে ৯ মাস সময় সাশ্রয় হবে’।
পিডিবি’র চিঠিতে আরও বলা হয় ‘বিদ্যমান আইন-নীতি ও বিধি-বিধান অনুসরণ করে বিওও ভিত্তিতে পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপে বিবিয়ানা-২-এর পরিবর্তে আলোচ্য কম্বাইন্ড সাইকেল প্লান্ট নির্মাণের সামিটের প্রস্তাব সরকারের উপযুক্ত কর্তৃপক্ষ কর্তৃক গৃহীত হলে বিবিয়ানা-২-এর জন্য আহ্বানকৃত প্রি-কোয়ালিফিকেশন বাতিল করতে হবে এবং একই সঙ্গে সিরাজগঞ্জ ডুয়েল ফুয়েলভিত্তিক বিদ্যুত্ কেন্দ্রের জন্য প্রি-কোয়ালিফিকেশন আহ্বান করা যেতে পারে’। পিডিবি’র পত্রের শুরুতে উল্লেখ করা হয়েছে, বিদ্যুত্ বিভাগের সচিবের মৌখিক নির্দেশে সামিটের পত্রের ব্যাপারে তারা বর্ণিত মতামত দিয়েছে।
সিরাজগঞ্জ থেকে বিবিয়ানা : বিগত চারদলীয় জোট সরকারের সময়ে ২০০২ সালের ১৫ আগস্ট একনেকের বৈঠকে সিরাজগঞ্জ ৪৫০ মেগাওয়াট কম্বাইন্ড সাইকেল বিদ্যুত্ প্রকল্প অনুমোদিত হয়। একই বছরের ১৪ অক্টোবর পিডিবি রিকোয়েস্ট ফর প্রপোজাল (আরএফপি) আহবান করে। ৬টি প্রতিষ্ঠান আরএফপি দলিল ক্রয় করলেও দাখিলের শেষ তারিখ ২০০৩ সালের ৩১ মে কেবলমাত্র সামিট ইন্ডাস্ট্রিয়াল এন্ড মার্কেন্টাইল কর্পোরেশন প্রস্তাব জমা দেয়। প্রস্তাবে বিদ্যুতের মূল্য প্রতি ইউনিট ২ দশমিক ৭৮৯৫ মার্কিন সেন্ট এবং গ্যাসের মূল্য ২ দশমিক ৪ গিগাজুল উল্লেখ করা হয়। একক প্রস্তাবটি পিডিবি ও মন্ত্রণালয় হয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে অনুমোদনের জন্য গেলে একক প্রস্তাবে কাজ দিতে অসম্মতি জানান তত্কালীন প্রধানমন্ত্রী ও বিদ্যুত্ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া। নির্দেশ দেয়া হয় পুনঃ দরপত্র আহ্বানের। পাওয়ার সেল পুনঃদরপত্র আহবান করলে ভারতের ইসার পাওয়ার লি. একক প্রস্তাব দাখিল করে। সেটাও বাতিল হয়। ২০০৭ সালের ১১ অক্টোবর পাওয়ার সেল তৃতীয় দফা দরপত্র আহ্বান করলে তাতেও একটি মাত্র প্রতিষ্ঠান অংশ নেয়। সময় বাড়িয়েও সাড়া না পাওয়ায় ২০০৮ সালের ৪ ডিসেম্বর পুরো প্রক্রিয়া বাতিল করা হয়।
বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর গত ৩১ অক্টোবর সিরাজগঞ্জ বিদ্যুত্ কেন্দ্রের কাজটি ৭ বছর আগে তাদের দাখিল করা প্রস্তাব অনুযায়ী দেয়ার জন্য সামিট প্রধানমন্ত্রীর কাছে আবেদন করে। এ আবেদনের প্রেক্ষিতে পিডিবি’র মতামত চাওয়া হয়। গত ১৫ ফেব্রুয়ারি পিডিবি’র বোর্ড সভায় সামিটের প্রস্তাব অনুমোদন দেয়া হয়। এর পর ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটিতে বিবেচনার জন্য পাঠানো হয় প্রস্তাব। গত রোববার ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটিতে সিরাজগঞ্জের প্রস্তাব উত্থাপন ও নাকচ হওয়ার আগেই গত ২৮ মার্চ সামিটের পক্ষ থেকে বিদ্যুত্ সচিব বরাবর আরেকটি চিঠি দেয়া হয়। এই চিঠিতে সামিট আগের প্রস্তাব থেকে সরে এসে সিরাজগঞ্জের পরিবর্তে গ্যাস সরবরাহের নিশ্চয়তা আছে এমন অন্য কোনো স্থানে সিরাজগঞ্জের সমান ক্ষমতার বিদ্যুত্ কেন্দ্র নির্মাণের প্রস্তাব করে। সিরাজগঞ্জের অনুরূপ শর্ত ও দরে কেন্দ্র স্থাপনে তারা রাজি আছে বলে চিঠিতে জানায়।
সামিটের উল্লেখিত পত্রের প্রেক্ষিতে বিদ্যুত্ সচিবের নির্দেশে পিডিবি ১ এপ্রিল মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠিয়েছে। পিডিবি’র প্রস্তাবে সিরাজগঞ্জের পরিবর্তে সামিটকে বিবিয়ানা-২ বিদ্যুত্ কেন্দ্রের স্থলে সমান ক্ষমতার কেন্দ্র স্থাপনের কাজ দেয়ার পক্ষে মত দেয়া হয়েছে।
এ ব্যাপারে বিদ্যুত্ সচিব আবুল কালাম আজাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি পিডিবিকে মতামত দেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন বলে স্বীকার করেন। তবে তিনি বলেন, ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটিতে সিরাজগঞ্জ ৪৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুত্ কেন্দ্র সামিটকে দেয়ার প্রস্তাব নাকচের আগে ওই নির্দেশ দেয়া হয় এবং পিডিবি’র চিঠিও তার আগে মন্ত্রণালয়ে আসে।

http://www.amardeshonline.com/pages/details/2010/04/07/26298

Saturday 3 April 2010

৪৭ পণ্যে শুল্কমুক্ত সুবিধা দেয়ার খবর নেই : ভারতকে একতরফা বাণিজ্যসুবিধা দেয়ার উদ্যোগ

অর্থনৈতিক রিপোর্টার
প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরে বাংলাদেশকে ৪৭টি পণ্যের শুল্কমুক্ত সুবিধা দেয়ার প্রতিশ্রুতি নিয়ে ধূম্রজাল তৈরি হয়েছে। কবে কিভাবে এ সুবিধা দেয়া হবে এবং আদৌ এ সুবিধা বাংলাদেশ পাবে কিনা তা এখন পর্যন্ত নিশ্চিত নয়।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, বাংলাদেশের ৪৭ পণ্য ভারতে শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকারে দিল্লির ঘোষণার ব্যাপারে এখন পর্যন্ত কোনো অগ্রগতি নেই। গত জানুয়ারি মাসেই বাণিজ্যমন্ত্রী ফারুক খান এক মাসের মধ্যে ৪৭টি পণ্যের তালিকা তৈরির ঘোষণা দিলেও এখনও তা চূড়ান্ত হয়নি। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা এই ৪৭টি পণ্যের ব্যাপারে অবগত নন বলে জানান। তবে ভারতকে একতরফা বাণিজ্য সুবিধা দিতে প্রস্তুতি নিচ্ছে সরকার। জানা গেছে, ভারত, নেপাল ও ভুটানের সঙ্গে ‘কানেকটিভিটি’র জন্য বড় বড় প্রকল্প হাতে নিচ্ছে সরকার। আগামী অর্থবছরের বাজেটে অর্থ বরাদ্দ করা হবে এসব প্রকল্পে। এজন্য যোগাযোগ, নৌসহ বিভিন্ন মন্ত্রণালয়কে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে প্রধানমন্ত্রীর দফতর থেকে।
সূত্র জানায়, ভারতের সঙ্গে কানেকটিভিটির জন্য সড়ক, রেল ও নৌপথ উপযোগী করে তোলা হবে। গত জানুয়ারি মাসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দিল্লি সফর করেন। তখন ভারতের প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের সঙ্গে শেখ হাসিনার বৈঠক হয়। ঘোষণা করা হয় যৌথ ইশতেহার। দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতার নানা বিষয় স্থান পায় ওই ঘোষণায়। ওই যৌথ ঘোষণার অংশ হিসেবে কানেকটিভিটির জন্য প্রয়োজনীয় অবকাঠামো তৈরি করা হচ্ছে। তবে এখন পর্যন্ত সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলো প্রকল্প তৈরি ও এজন্য বরাদ্দের পরিমাণ ঠিক করতে পারেনি। উপ-আঞ্চলিক সহযোগিতার বিষয়টি দেখভাল করছেন প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক উপদেষ্টা।
নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, ট্রানজিটের জন্য চট্টগ্রাম বন্দর প্রস্তুত। প্রতিবেশী দেশগুলো চাইলে এখন বন্দর ব্যবহার করতে পারে। বন্দরের বর্তমান ক্যাপাসিটি দিয়ে ২০২৫ সাল পর্যন্ত চালিয়ে নেয়া সম্ভব। এর পাশাপাশি মংলা বন্দরকেও ট্রানজিট সুবিধার উপযোগী করা হচ্ছে।
এদিকে আগামী ৬ মে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে বাণিজ্য সংক্রান্ত সচিব পর্যায়ের বৈঠক হতে যাচ্ছে। বৈঠকে ট্রানজিট, চট্টগ্রাম ও মংলা বন্দর ব্যবহার, রেল ও নৌরুটে কন্টেইনার ও কার্গো চলাচল এবং সীমান্ত হাট বসানোসহ একাধিক বিষয়ে নিষ্পত্তি চায় ভারত। উচ্চপর্যায়ের এ আলোচনাকে দু’দেশের মধ্যে বাণিজ্য সম্প্রসারণের বৈঠক বলা হলেও আসলে একতরফা ভারতের স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়গুলো নিষ্পত্তিই মূল লক্ষ্য বলে মনে করেন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। সম্প্রতি ভারত একটি আলোচনার খসড়া পাঠিয়েছে বলে জানা যায়। অপরদিকে বাংলাদেশ ভারতে পণ্য রফতানির ক্ষেত্রে শুল্ক-অশুল্ক বাধা দূর এবং ৪৭টি পণ্যের শুল্কমুক্ত সুবিধা নিশ্চিত করতে চাইবে।
বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে বাণিজ্য বিষয়ে ঢাকায় উচ্চপর্যায়ের এ গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে দু’দেশের বাণিজ্য সচিব নিজ নিজ দেশের নেতৃত্ব দেবেন। দু’দেশের মধ্যে সাত বছর পর এ ধরনের উচ্চপর্যায়ের গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক হতে যাচ্ছে। এ বিষয়ে বাংলাদেশ পক্ষ আশাবাদী হলেও এ থেকে আদতে বাংলাদেশের লাভবান হওয়ার সম্ভাবনা নেই বলে জানিয়েছেন মন্ত্রণালয়ের একাধিক কর্মকর্তা। তাদের মতে, উচ্চপর্যায়ের এ আলোচনাকে দু’দেশের মধ্যে বাণিজ্য সম্প্রসারণের কথা বলা হলেও আসলে একতরফা ভারতের স্বার্থরক্ষার বন্দোবস্ত হচ্ছে।
২০০৩ সালের মার্চে সর্বশেষ দু’দেশের মধ্যে সচিব পর্যায়ে এ ধরনের বৈঠক হয়েছিল। সূত্র জানায়, শুল্ক ও অশুল্ক বাধা দূর করা, রফতানি বৃদ্ধি, তৈরি পোশাকসহ ৪৭টি পণ্যের শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকার, রফতানি সংশ্লিষ্ট সড়ক অবকাঠামো উন্নয়ন, ভারতের স্বার্থে ফুলবাড়ি সীমান্তে বাংলাদেশের জিরো পয়েন্টের ২০০ মিটার অভ্যন্তরে নেপাল ও ভুটানের ট্রাক পরিবহনসহ বিভিন্ন বিষয় রয়েছে এজেন্ডায়। সম্প্রতি বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনার বলেছেন, পহেলা বৈশাখ থেকে তিনটি সীমান্ত হাট চালু হবে। উল্লেখ্য, এসব সীমান্ত হাটে ভারতীয় পণ্যের বেচাকেনা হয়ে থাকে। ১৯৭৩ সালে এই সীমান্ত হাট চালু হলেও পরে তা বন্ধ হয়ে যায়।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, বৈঠকে ভারতের স্বার্থে সীমান্তে হাট বসানো, ট্রানজিট, চট্টগ্রাম ও মংলা বন্দর ব্যবহার, রেল ও নৌরুটে কন্টেইনার ও কার্গো চলাচলসহ একাধিক বিষয় নিষ্পত্তি হতে পারে। তবে আলোচনার এজেন্ডা এখনও ঠিক করা হয়নি। এ নিয়ে আগে বেসরকারি উদ্যোক্তাদের সঙ্গে আলোচনা করবে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। এছাড়া সংশ্লিষ্ট অন্যান্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গেও কথা বলবে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। সূত্রমতে, দু’দেশের মধ্যে বাণিজ্যে শুরু থেকেই নানান আশ্বাস থাকলেও বিভিন্ন অশুল্ক বাধা দিয়ে তারা বাংলাদেশী পণ্য রফতানিতে দেয়াল দাঁড় করিয়ে রেখেছে। তাছাড়া বাংলাবন্দ স্থলবন্দর দিয়ে পণ্য নিয়ে নেপালের ট্রাক বাংলাদেশে প্রবেশে ভারত বাধা দিয়ে আসছে। ফলে নেপাল থেকে পণ্য আমদানি ও রফতানিতে বাংলাদেশী ব্যবসায়ীদের ব্যয় বেড়ে যাচ্ছে কয়েকগুণ। নেপালি পণ্যবাহী পরিবহনকে এ পয়েন্টে বাংলাদেশের জিরো পয়েন্টে প্রবেশে অনুমোদন দিয়েছে বাংলাদেশ।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা জানান, ভারতে ৪৭টি পণ্যের শুল্কমুক্ত প্রবেশের কথা বলা হলেও চূড়ান্ত হয়নি পণ্যের তালিকা। এছাড়াও ভারতে বাংলাদেশী পণ্য রফতানির সময় ৭ স্তরে শুল্ক আরোপ করে ভারত। নির্ধারিত শুল্কের পাশাপাশি রয়েছে সাপ্লিমেন্টারি ডিউটি, স্পেশাল সাপ্লিমেন্টারি ডিউটি, কাউন্টার ভেলিং ডিউটি, স্পেশাল কাউন্টার ভেলিং ডিউটি ও অবকাঠামো শুল্ক। এর বাইরে রয়েছে নানা অশুল্ক বাধা। জানা যায়, বাংলাদেশ এসব বিষয়ে নিষ্পত্তি চাইবে। এছাড়া বাংলাদেশ বিনাশুল্কে ৮০ লাখ পিস পোশাক রফতানির যে চুক্তি করেছিল তারও বাস্তবায়ন চাইবে।

http://www.amardeshonline.com/pages/details/2010/04/04/25832

Thursday 1 April 2010

বিনা টেন্ডারে ডিসিসির ৬ কোটি টাকার কাজ নেন যুবলীগ নেতা শাওন

মাহমুদা ডলি
বিনা টেন্ডারে ছয় কোটি টাকার কাজ বাগিয়ে নিয়েছে যুবলীগ নেতা নুরন্নবী চৌধুরী শাওনের গ্রুপ। টেন্ডারকে কেন্দ্র করে গত ৩১ মার্চ সন্ধ্যায় যুবলীগের শাওন গ্রুপ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের দেবাশীষ গ্রুপের মধ্যে ঘটেছে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা। এ নিয়ে চলছে ডিসিসিতে তোলপাড়।
গতকাল প্রধান প্রকৌশলী ব্রিগেডিয়ার জেনারেল কাদিরের দফতরে কয়েক দফা রুদ্ধদ্বার বৈঠক হয়েছে। এমনকি সারাদিন নিজ অফিস কক্ষে যাননি বিদ্যুত্ সার্কেল কর্মকর্তা জাফর আহমেদ। বিদ্যুত্ সার্কেলের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা জানান, সার্কেল প্রধান জাফর আহমেদকে ভয় দেখিয়ে রাস্তায় লাইটিংয়ের ছয় কোটি টাকার টেন্ডার বাগিয়ে নিয়েছে শাওন গ্রুপ। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, টেন্ডার বিজ্ঞপ্তি পত্রিকায় যাতে প্রকাশ না করা হয় এবং এসব সংবাদ মিডিয়ায় প্রকাশ না করার জন্য পিস্তলের ভয় দেখিয়েছে গ্রুপটি। মেয়র সাদেক হোসেন খোকা এসব ব্যাপারে রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত কিছু জানেন না বলে দৈনিক আমার দেশকে জানিয়েছেন। তবে এ নিয়ে ডিসিসির প্রধান প্রকৌশলীর সঙ্গে কথা বলতে চাইলে সংবাদ কর্মীদের সঙ্গে কথা বলবেন না বলে জানান তিনি।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, মহানগরীর রাস্তার লাইটিংয়ের জন্য বিদ্যুত্ সার্কেলের ২টি বিভাগ ১ ও ২-এর ছয় কোটি টাকার প্রকল্প হাতে নেয় ডিসিসি। কিন্তু প্রকল্প বাস্তবায়নে পত্রিকায় বিজ্ঞাপন না দিয়েই কাজটির টেন্ডার প্রক্রিয়া শুরু করে ডিসিসি। টেন্ডারের নিয়ম অনুযায়ী এক লাখ টাকার কাজ বরাদ্দের ক্ষেত্রেও বহুল প্রচারিত তিনটি পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দেয়ার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। এ বিজ্ঞপ্তি দিতে হবে দুটি বাংলা ও একটি ইংরেজি পত্রিকায়। ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের ঠিকাদার অ্যাসোসিয়েশনের কার্যালয়, ডিসিসির প্রধান প্রকৌশলী, সব আঞ্চলিক নির্বাহী প্রকৌশলী, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনারের কার্যালয়ের নোটিশ বোর্ড ছাড়াও ডিসিসির ওয়েবসাইটে প্রকাশ করতে হবে ওই বিজ্ঞপ্তি। কিন্তু এ কাজটির টেন্ডার প্রক্রিয়ায় কোনোটিই করা হয়নি। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সংশ্লিষ্ট বিভাগের প্রকৌশলী পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিতে গেলে তাকে বাধা দেয় যুবলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগ। পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দিলে জাফর আহমেদের শরীরের নিচের অংশ পিস্তল দিয়ে থেঁতলে দেয়ার হুমকি দেয়া হয়। বাধ্য হয়ে শাওন গ্রুপের লোকজনকে আগেই কাজ দিয়ে দেয়া হয়। বিষয়টি ফাঁস হয়ে যাওয়ায় শুধু লোক দেখানোর জন্য টেন্ডার ওপেন করলে বিদ্যুত্ বিভাগ ১০-এ ২৯৪টি এবং বিদ্যুত্ বিভাগ ২-এ ১১৩টি দরপত্র জমা পড়েছে। শাওন গ্রুপ যেসব ঠিকাদারদের জন্য কাজ আগেই বাগিয়ে নিয়েছে, তাদের কাছ থেকে এরই মধ্যে ১৬ শতাংশ করে নিয়ে নিয়েছে বলে সূত্রটি জানায়।
সাধারণ ঠিকাদাররা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, তারা শোনামাত্রই টেন্ডার ড্রপ করেছেন। কিন্তু পরে কারা কাজ নিয়েছে জেনে তাদের কোনো উত্কণ্ঠা নেই বলে জানান। এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট বিভাগের কর্মচারীরা জানান, সাধারণত টেন্ডার হলে সব প্রক্রিয়াই তারা জানেন। কিন্তু এ কাজটির টেন্ডার কীভাবে হলো তা তাদের অনেকের জানার কথা বা নিয়ম থাকলেও তারা জানেন না। বাকি যেসব দরপত্র জমা পড়েছে সেগুলো এ ঘটনা ফাঁস হয়ে যাওয়ায় কোনোভাবে খবর শুনেই দরপত্র জমা দিয়েছে কাজ পাওয়ার আশায়। ডিসিসির অধিকাংশ কর্মকর্তা-কর্মচারী জানান, এ সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে সব টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজি নিয়ন্ত্রণ করছে নুরন্নবী চৌধুরী শাওন। এ গ্রুপের জন্য সাধারণ ঠিকাদাররা কোনো কাজই পান না বলে জানান।

http://www.amardeshonline.com/pages/details/2010/04/02/25485

চবিতে শতাধিক বৃক্ষের মৃত্যুদণ্ড!



চবির আলাওল হলের সামনে থেকে কিছু অপরিপকস্ফ গাছ কাটা হচ্ছে। হল ভবনের পাশ থেকেও কাটা হয়েছে প্রচুর ফলদ বৃক্ষ ।

সমকাল | শুত্রুবার | ২ এপ্রিল ২০১০ | ১৯ চৈত্র ১৪১৬ | ১৬ রবিউস সানি ১৪৩১

মনিরুল সোহাগ, চবি
হলের আবাসিক ভবনে আলো-বাতাস প্রবেশে নাকি বাধা দিয়েছিল গাছগুলো! আর এতেই তাদের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর! চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ গত দুই দিনে নির্দয়ভাবে আম-কাঁঠালসহ বিভিন্ন প্রজাতির ২০০ গাছ কেটে ফেলে। বিশ্ববিদ্যালয়ের আলাওল হল ভবন এবং মাঠের পাশ থেকে এসব গাছ কাটা হয়।
প্রশাসন শতাধিক গাছ কাটার কথা স্বীকার করেছে। সরেজমিনে দেখা গেছে, হলের পাশের অন্তত ২০টি ফলদ বৃক্ষ আম-কাঁঠালের প্রাণ সংহার করা হয়েছে। অথচ আমগাছজুড়ে এসেছিল মুকুল। কাঁঠালও ধরতে শুরু করেছিল। হলের ছাত্রদের মৌসুমি ফলের চাহিদা মেটাতে এই গাছগুলোই ছিল সম্বল। এছাড়া হলের মাঠের পাশ থেকে কাটা হয়েছে অপরিপকস্ফ বেশ কিছু গাছ। তবে হলের পাশ থেকে আরও কিছু অপরিপকস্ফ গাছও কাটা হয়েছে। গাছ কাটায় নিয়োজিতদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত দুই দিনে প্রায় ২০০ গাছ কেটেছে তারা। আরও কয়েকদিন গাছ কাটার কথা রয়েছে বলে জানা গেছে।
তবে প্রশাসন অবশ্য বলছে, শতাধিক গাছ বিক্রি করেছে তারা। নিয়মতান্ত্রিকভাবে এসব গাছ ১ লাখ ১৩ হাজার টাকায় বিক্রি করা হয়েছে বলে দাবি তাদের।
হলের পাশ থেকে এভাবে ফলদসহ অন্যান্য অপরিপকস্ফ গাছ কেটে ফেলার ব্যাপারে জানতে চাওয়া হলে উত্তেজিত হন হলের প্রভোস্ট এবং চবির লোক প্রশাসন বিভাগের অধ্যাপক হোসাইন কবির। সমকাল প্রতিনিধিকে তিনি বলেন, 'গাছ কাটার দরকার ছিল, তাই কাটা হয়েছে। এর ভালো-মন্দ দেখার আপনি কে? বাংলাদেশের সব ভালো-মন্দ দেখার দায়িত্ব কি সাংবাদিকরা নিয়েছে? হলে আলো-বাতাস প্রবেশ করছে না, তাই এসব গাছ কেটে ফেলা হয়েছে। সব নিয়ম মেনেই বিশ্ববিদ্যালয় গাছগুলো কেটেছে।'
জানা গেছে, গাছ কাটতে একটি কমিটিও গঠন করে চবি কর্তৃপক্ষ। এই কমিটি মিলে
কোন কোন গাছ কাটা হবে, তা নির্দিষ্ট করে দেয়। আম, কাঁঠাল এবং ইউক্যালিপটাসসহ ৬ প্রজাতির গাছ কাটা হয়েছে। কমিটির সদস্য ড. মোহাম্মদ শফিউল আলম সমকালকে জানান, 'হলের পাশ থেকে আম ও কাঁঠালের গাছ কাটা হয়েছে। এসব গাছ হলের ভবনের পাশেই ছিল। আবার কিছু কিছু গাছ দিয়ে হলে চোর ঢুকতে পারত। বাকি গাছের অনেকই এমনিতেই জন্মেছিল। তবে কিছু ছোট গাছও কাটা হয়েছে। এগুলো বিদেশি প্রজাতির ছিল।' তিনি আরও জানান, আগামী সপ্তাহে গাছ কাটার এই কার্যক্রম শেষ হবে।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ইনস্টিটিউট অব ফরেস্ট্রি অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্সেসের পরিচালক প্রফেসর ড. মোহাম্মদ আল আমীন সমকালকে জানান, 'মারা না গেলে বা অধিক ঝুঁকিপূর্ণ না হলে সাধারণত কোনো গাছ কাটা ঠিক নয়। আলাওল হলের পাশের গাছগুলো ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ার কথা নয়। গাছগুলো কেন কাটা হয়েছে, তা আমি জানি না।
চবির প্রক্টর অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ জসীম উদ্দিন সমকালকে জানান, যেসব গাছ বেশি ছায়া দিত, সেগুলো কেটে ফেলা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ নিয়মতান্ত্রিকভাবে সেগুলো বিক্রি করেছে।