কাদের গনি চৌধুরী
রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ-রাজউকের প্লট বরাদ্দ পরিবর্তন করে এক প্রকল্প থেকে অন্য প্রকল্পে নেয়ার কোনো বিধান বা নজির নেই। এরপরও নিকুঞ্জের (দক্ষিণ) লেক ড্রাইভ রাস্তার সাত নম্বর প্লটটি বদল করে বারিধারা আবাসিক এলাকার কে-ব্লকের ১১নং রাস্তার ২৪নং খালি প্লটটি বরাদ্দ পেতে প্রশাসনের ওপর চাপ সৃষ্টি করছেন যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক ও জাতীয় সংসদের হুইপ মির্জা আজম এমপি। এ নিয়ে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ে ফাইল চালাচালি চলছে। সিদ্ধান্ত দিতে গড়িমসি করায় চেয়ার হারাতে হয়েছে গৃহায়ন ও গণপূর্ত সচিব মোহাম্মদ মহবুব উর রহমানকে। হুইপের চাপে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছেন রাজউক এবং গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, প্লট পরিবর্তনের ব্যাপারে মির্জা আজম এমপির আবেদনের প্রেক্ষিতে রাজউকের বোর্ড সভায় এ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। সভায় সিদ্ধান্ত হয়, যেহেতু রাজউকের অন্য প্রকল্প থেকে পরিবর্তনের মাধ্যমে গুলশান-বনানী-বারিধারা আবাসিক প্রকল্পে প্লট বরাদ্দ দেয়ার বিধি-বিধান বা নজির নেই, তাই সরকারদলীয় হুইপকে বারিধারায় প্লট দেয়া ঠিক হবে না। এতে রাজউককে বিতর্কে জড়িয়ে পড়তে হতে পারে। তাই মির্জা আজমের নামে নিকুঞ্জের তিনকাঠা আয়তনের প্লটের বদলে উত্তরা আবাসিক এলাকায় এখনই বাড়ি করার উপযোগী পাঁচকাঠা আয়তনের একটি প্লট পরিবর্তনের মাধ্যমে বরাদ্দ দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয় বোর্ড সভায়। এ প্লটটি নিতে প্রথমে তিনি রাজি হন। তার সম্মতির কারণে প্লট বরাদ্দ দেয়া হলেও পরবর্তীতে তা স্থগিত রাখতে বলেছেন তিনি। এখন যে কোনো উপায়ে বারিধারার প্লটটি বরাদ্দ পেতে চান তিনি। তবে এ বিষয়ে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্তের অপেক্ষার আছে রাজউক।
জানা যায়, ২০০০ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর নিকুঞ্জ (দক্ষিণ) আবাসিক এলাকার লেক ড্রাইভ রাস্তায় তিনকাঠা আয়তনের সাত নম্বর প্লটটি হুইপ মির্জা আজমের নামে বরাদ্দ দেয়া হয়। এরপর ২০০১ সালের ৫ এপ্রিল লিজ দলিল হওয়ার পর ২৮ জুন প্লটের দখল বুঝে নেন তিনি। তবে ২০০৮ সালের ৩ মার্চ ওই নথিটি জব্দ করা হয়। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর পরই প্লটের জব্দ হওয়া নথিটি ফেরত পেয়েছে রাজউক। এদিকে গত বছরের ১১ জুন বারিধারা কে-ব্লকের একটি বিশেষ প্লট চেয়ে আবেদন করেন মির্জা আজম। ওই আবেদনে তিনি উল্লেখ করেন, আমার প্লটে দুই তলার বেশি বাড়ি নির্মাণ করা যাবে না বলে জানতে পেরেছি। তাই এখনও পর্যন্ত প্লটটির নকশা দাখিল করিনি। তাই আমার নিকুঞ্জের ৭নং প্লটটি বাতিল করে বারিধারা আবাসিক এলাকার কে-ব্লকের ১১নং রাস্তার ২৪নং খালি প্লটটি বরাদ্দ নিতে চাচ্ছি। আগে বরাদ্দ করা জমির চেয়ে বেশি জমি বরাদ্দ দেয়া হলে রাজউকের নির্ধারিত মূল্য পরিশোধ করতে রাজি আছি। রাজউকের ০৬/২০০৯ তম বোর্ড সভায় বিষয়টি উপস্থাপন করা হয়। ওই বোর্ড সভার ২৩.৩নং সিদ্ধান্তে উল্লেখ করা হয়েছে, রাজউকের প্রচলিত নিয়মে নিকুঞ্জ থেকে বারিধারা আবাসিক এলাকায় প্লট পরিবর্তনের কোনো সুযোগ নেই। আবেদনকারী হুইপ ও এমপি হওয়ায় নিকুঞ্জ-১-এর বরাদ্দ করা প্লটের বদলে বারিধারা কে-ব্লকে প্লট বদলের আবেদনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া প্লট বরাদ্দ বিধিমালা ১৩(এ) এর আলোকে সরকারের এখতিয়ারভুক্ত। তাই এ বিষয়ে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনের জন্য চিঠি পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এ সিদ্ধান্তের পর ৮ জুলাই স্মারক নং রাজউক/এস্টেট-১/০৯-০৬ স্থাঃ এর মাধ্যমে মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠানো হয়। ওই চিঠি পেয়ে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় ৮ সেপ্টেম্বর সাধারণ সভার কার্যবিবরণী পাঠানোর জন্য রাজউককে চিঠি দেয়। এরই ফাঁকে ১২ জুলাই নিকুঞ্জ-১ এলাকার ৭নং প্লটটি স্থানান্তর করে উত্তরা ৬ নম্বর সেক্টরে শাহজালাল এভিনিউ-এর ১৩/এ নং রাস্তার ৫ নম্বর প্লটটির জন্য আবেদন করেন হুইপ মির্জা আজম। কর্তৃপক্ষের ০৭/ ২০০৯ তম সভায় ৯৩.৩নং সিদ্ধান্তে বলা হয়েছে, মির্জা আজম এমপি’র নামে বরাদ্দ করা নিকুঞ্জের তিনকাঠা আয়তনের প্লটের বদলে উত্তরা আবাসিক এলাকায় এখনই বাড়ি করার উপযোগী পাঁচকাঠা আয়তনের একটি প্লট পরিবর্তনের মাধ্যমে বরাদ্দ দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হলো।
তবে ২৪ ডিসেম্বর আরেক চিঠিতে হুইপ মির্জা আজম বারিধারা এলাকার প্লটের বিষয়ে সিদ্ধান্ত পাওয়ার আগ পর্যন্ত বরাদ্দের প্রক্রিয়া স্থগিত রাখার অনুরোধ করেন। ওদিকে গত ২১ জানুয়ারি বারিধারার প্লটটি নিয়ে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় তাদের সিদ্ধান্তে জানায়, মির্জা আজমের আবেদনটি রাজউকের বোর্ড সভায় উপস্থাপন করে এক প্রকল্প থেকে অন্য প্রকল্পে স্থানান্তর সংক্রান্ত বিধি-বিধান/ পূর্ব নজিরের আওতায় নিকুঞ্জ (দক্ষিণ) আবাসিক এলাকার প্লটের বদলে বারিধারা আবাসিক এলাকায় বিকল্প প্লট বরাদ্দের বিষয়টি বিবেচনার জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হলো। রাজউকের সর্বশেষ ০২/২০১০ তম বোর্ড সভায় এ বিষয়ে সিদ্ধান্তে বলা হয়েছে, আবেদনকারী জাতীয় সংসদের হুইপ, সংসদ সদস্য, মুক্তিযোদ্ধা এবং জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ অবদানসম্পন্ন ব্যক্তিত্ব বিধায় ১৩ (এ) বিধি অনুযায়ী বারিধারা আবাসিক এলাকার কে-ব্লকের ১১নং রাস্তার কম বেশি ৫ কাঠা আয়তনের ২৪ নম্বর প্লট বরাদ্দের বিষয়ে সরকার বিবেচনা করতে পারে। তাই বিষয়টি রাজউকের (ভূমি বরাদ্দ) বিধিমালার ১৩ (এ) বিধির আলোকে নিষমত্তির জন্য গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়কে পুনঃঅনুরোধ জানানোর সিদ্ধান্ত নেয়া হলো।
রাজউক সূত্রে জানা গেছে, নিকুঞ্জ আবাসিক এলাকার বরাদ্দ মূল্যের চেয়ে বারিধারা আবাসিক এলাকার প্লটের দাম বেশি। বর্তমানে গুলশান-বনানী-বারিধারা আবাসিক এলাকার প্লটগুলোর দাম কাঠাপ্রতি ১০ লাখ টাকা।
http://www.amardeshonline.com/pages/details/2010/04/20/28274
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
No comments:
Post a Comment