অর্থনৈতিক রিপোর্টার
প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরে বাংলাদেশকে ৪৭টি পণ্যের শুল্কমুক্ত সুবিধা দেয়ার প্রতিশ্রুতি নিয়ে ধূম্রজাল তৈরি হয়েছে। কবে কিভাবে এ সুবিধা দেয়া হবে এবং আদৌ এ সুবিধা বাংলাদেশ পাবে কিনা তা এখন পর্যন্ত নিশ্চিত নয়।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, বাংলাদেশের ৪৭ পণ্য ভারতে শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকারে দিল্লির ঘোষণার ব্যাপারে এখন পর্যন্ত কোনো অগ্রগতি নেই। গত জানুয়ারি মাসেই বাণিজ্যমন্ত্রী ফারুক খান এক মাসের মধ্যে ৪৭টি পণ্যের তালিকা তৈরির ঘোষণা দিলেও এখনও তা চূড়ান্ত হয়নি। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা এই ৪৭টি পণ্যের ব্যাপারে অবগত নন বলে জানান। তবে ভারতকে একতরফা বাণিজ্য সুবিধা দিতে প্রস্তুতি নিচ্ছে সরকার। জানা গেছে, ভারত, নেপাল ও ভুটানের সঙ্গে ‘কানেকটিভিটি’র জন্য বড় বড় প্রকল্প হাতে নিচ্ছে সরকার। আগামী অর্থবছরের বাজেটে অর্থ বরাদ্দ করা হবে এসব প্রকল্পে। এজন্য যোগাযোগ, নৌসহ বিভিন্ন মন্ত্রণালয়কে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে প্রধানমন্ত্রীর দফতর থেকে।
সূত্র জানায়, ভারতের সঙ্গে কানেকটিভিটির জন্য সড়ক, রেল ও নৌপথ উপযোগী করে তোলা হবে। গত জানুয়ারি মাসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দিল্লি সফর করেন। তখন ভারতের প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের সঙ্গে শেখ হাসিনার বৈঠক হয়। ঘোষণা করা হয় যৌথ ইশতেহার। দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতার নানা বিষয় স্থান পায় ওই ঘোষণায়। ওই যৌথ ঘোষণার অংশ হিসেবে কানেকটিভিটির জন্য প্রয়োজনীয় অবকাঠামো তৈরি করা হচ্ছে। তবে এখন পর্যন্ত সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলো প্রকল্প তৈরি ও এজন্য বরাদ্দের পরিমাণ ঠিক করতে পারেনি। উপ-আঞ্চলিক সহযোগিতার বিষয়টি দেখভাল করছেন প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক উপদেষ্টা।
নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, ট্রানজিটের জন্য চট্টগ্রাম বন্দর প্রস্তুত। প্রতিবেশী দেশগুলো চাইলে এখন বন্দর ব্যবহার করতে পারে। বন্দরের বর্তমান ক্যাপাসিটি দিয়ে ২০২৫ সাল পর্যন্ত চালিয়ে নেয়া সম্ভব। এর পাশাপাশি মংলা বন্দরকেও ট্রানজিট সুবিধার উপযোগী করা হচ্ছে।
এদিকে আগামী ৬ মে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে বাণিজ্য সংক্রান্ত সচিব পর্যায়ের বৈঠক হতে যাচ্ছে। বৈঠকে ট্রানজিট, চট্টগ্রাম ও মংলা বন্দর ব্যবহার, রেল ও নৌরুটে কন্টেইনার ও কার্গো চলাচল এবং সীমান্ত হাট বসানোসহ একাধিক বিষয়ে নিষ্পত্তি চায় ভারত। উচ্চপর্যায়ের এ আলোচনাকে দু’দেশের মধ্যে বাণিজ্য সম্প্রসারণের বৈঠক বলা হলেও আসলে একতরফা ভারতের স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়গুলো নিষ্পত্তিই মূল লক্ষ্য বলে মনে করেন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। সম্প্রতি ভারত একটি আলোচনার খসড়া পাঠিয়েছে বলে জানা যায়। অপরদিকে বাংলাদেশ ভারতে পণ্য রফতানির ক্ষেত্রে শুল্ক-অশুল্ক বাধা দূর এবং ৪৭টি পণ্যের শুল্কমুক্ত সুবিধা নিশ্চিত করতে চাইবে।
বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে বাণিজ্য বিষয়ে ঢাকায় উচ্চপর্যায়ের এ গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে দু’দেশের বাণিজ্য সচিব নিজ নিজ দেশের নেতৃত্ব দেবেন। দু’দেশের মধ্যে সাত বছর পর এ ধরনের উচ্চপর্যায়ের গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক হতে যাচ্ছে। এ বিষয়ে বাংলাদেশ পক্ষ আশাবাদী হলেও এ থেকে আদতে বাংলাদেশের লাভবান হওয়ার সম্ভাবনা নেই বলে জানিয়েছেন মন্ত্রণালয়ের একাধিক কর্মকর্তা। তাদের মতে, উচ্চপর্যায়ের এ আলোচনাকে দু’দেশের মধ্যে বাণিজ্য সম্প্রসারণের কথা বলা হলেও আসলে একতরফা ভারতের স্বার্থরক্ষার বন্দোবস্ত হচ্ছে।
২০০৩ সালের মার্চে সর্বশেষ দু’দেশের মধ্যে সচিব পর্যায়ে এ ধরনের বৈঠক হয়েছিল। সূত্র জানায়, শুল্ক ও অশুল্ক বাধা দূর করা, রফতানি বৃদ্ধি, তৈরি পোশাকসহ ৪৭টি পণ্যের শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকার, রফতানি সংশ্লিষ্ট সড়ক অবকাঠামো উন্নয়ন, ভারতের স্বার্থে ফুলবাড়ি সীমান্তে বাংলাদেশের জিরো পয়েন্টের ২০০ মিটার অভ্যন্তরে নেপাল ও ভুটানের ট্রাক পরিবহনসহ বিভিন্ন বিষয় রয়েছে এজেন্ডায়। সম্প্রতি বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনার বলেছেন, পহেলা বৈশাখ থেকে তিনটি সীমান্ত হাট চালু হবে। উল্লেখ্য, এসব সীমান্ত হাটে ভারতীয় পণ্যের বেচাকেনা হয়ে থাকে। ১৯৭৩ সালে এই সীমান্ত হাট চালু হলেও পরে তা বন্ধ হয়ে যায়।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, বৈঠকে ভারতের স্বার্থে সীমান্তে হাট বসানো, ট্রানজিট, চট্টগ্রাম ও মংলা বন্দর ব্যবহার, রেল ও নৌরুটে কন্টেইনার ও কার্গো চলাচলসহ একাধিক বিষয় নিষ্পত্তি হতে পারে। তবে আলোচনার এজেন্ডা এখনও ঠিক করা হয়নি। এ নিয়ে আগে বেসরকারি উদ্যোক্তাদের সঙ্গে আলোচনা করবে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। এছাড়া সংশ্লিষ্ট অন্যান্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গেও কথা বলবে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। সূত্রমতে, দু’দেশের মধ্যে বাণিজ্যে শুরু থেকেই নানান আশ্বাস থাকলেও বিভিন্ন অশুল্ক বাধা দিয়ে তারা বাংলাদেশী পণ্য রফতানিতে দেয়াল দাঁড় করিয়ে রেখেছে। তাছাড়া বাংলাবন্দ স্থলবন্দর দিয়ে পণ্য নিয়ে নেপালের ট্রাক বাংলাদেশে প্রবেশে ভারত বাধা দিয়ে আসছে। ফলে নেপাল থেকে পণ্য আমদানি ও রফতানিতে বাংলাদেশী ব্যবসায়ীদের ব্যয় বেড়ে যাচ্ছে কয়েকগুণ। নেপালি পণ্যবাহী পরিবহনকে এ পয়েন্টে বাংলাদেশের জিরো পয়েন্টে প্রবেশে অনুমোদন দিয়েছে বাংলাদেশ।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা জানান, ভারতে ৪৭টি পণ্যের শুল্কমুক্ত প্রবেশের কথা বলা হলেও চূড়ান্ত হয়নি পণ্যের তালিকা। এছাড়াও ভারতে বাংলাদেশী পণ্য রফতানির সময় ৭ স্তরে শুল্ক আরোপ করে ভারত। নির্ধারিত শুল্কের পাশাপাশি রয়েছে সাপ্লিমেন্টারি ডিউটি, স্পেশাল সাপ্লিমেন্টারি ডিউটি, কাউন্টার ভেলিং ডিউটি, স্পেশাল কাউন্টার ভেলিং ডিউটি ও অবকাঠামো শুল্ক। এর বাইরে রয়েছে নানা অশুল্ক বাধা। জানা যায়, বাংলাদেশ এসব বিষয়ে নিষ্পত্তি চাইবে। এছাড়া বাংলাদেশ বিনাশুল্কে ৮০ লাখ পিস পোশাক রফতানির যে চুক্তি করেছিল তারও বাস্তবায়ন চাইবে।
http://www.amardeshonline.com/pages/details/2010/04/04/25832
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
No comments:
Post a Comment