Saturday 10 April 2010

৩৮ হাজার পদে নিয়োগ প্রক্রিয়া নিয়ে প্রশ্ন*পাস নম্বর ছাড়াই নিয়োগ পাচ্ছেন ৪১৩৩ চিকিৎসক

স্বাস্থ্য, শিক্ষা, খাদ্য, ভূমি ও অর্থ খাতের ছয় প্রতিষ্ঠান | ৩৮ হাজার পদে নিয়োগ প্রক্রিয়া নিয়ে প্রশ্ন
*পাস নম্বর ছাড়াই নিয়োগ পাচ্ছেন ৪১৩৩ চিকিৎসক
*প্রাথমিক শিক্ষা ও স্বাস্থ্য সহকারী পদে টাকার লেনদেনের অভিযোগ
*অগ্রাধিকার পাচ্ছে ছয় লাখ দলীয় কর্মীর তালিকা

এহসানুল হক ও আশরাফুল হক রাজীব | Kalerkantho ঢাকা, রবিবার, ২৮ চৈত্র ১৪১৬, ২৫ রবিউস সানি ১৪৩১, ১১ এপ্রিল ২০১০

সরকারের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে দলীয় ও ঘনিষ্ঠজনদের নিয়োগ দিতে নানা ধরনের চাপ সৃষ্টি করছেন ক্ষমতাসীন দলের নেতা-কর্মীরা। দলীয়ভাবে তৈরি করা প্রায় ছয় লাখ শিক্ষিত বেকারের তালিকাকে অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে নিয়োগের ক্ষেত্রে। প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে উঠেছে সাত প্রতিষ্ঠানের প্রায় ৩৮ হাজার পদে নিয়োগ প্রক্রিয়া। এ পরিস্থিতিতে সৃষ্ট জটিলতায় ঝুলে গেছে কোনো কোনো প্রতিষ্ঠানের নিয়োগ কার্যক্রম। সরকারের সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে এসব তথ্য।
আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার ক্ষমতায় এসেই সরকারি দপ্তরগুলোর শূন্যপদ পূরণের সিদ্ধান্ত নেয়। এ সিদ্ধান্তের অংশ হিসেবে ছয় দপ্তরের ৩৭ হাজার ৯১৫টি শূন্যপদের বিপরীতে লোক নিয়োগের প্রক্রিয়া শুরু করা হয়। এগুলো হচ্ছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অধীনে চার হাজার ১৩৩ জন চিকিৎসক ও ছয় হাজার ৩০০ স্বাস্থ্য সহকারী, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের অধীনে ২৫ হাজার প্রাথমিক শিক্ষক, ভূমি রেকর্ড ও জরিপ অধিদপ্তরের ২২৩ এমএলএসএস, খাদ্য অধিদপ্তরের বিভিন্ন পদে এক হাজার ১০০, ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের (ডিএমসিএইচ) ১৭১ এবং কম্পট্রোলার অ্যান্ড অডিটর জেনারেল (সিএজি) কার্যালয়ের ৯৮৮ জন।
গত বছরের জুন মাসে উপজেলা ও থানা আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকদের মাধ্যমে সারা দেশের মেধাবী উচ্চ শিক্ষিত বেকারদের জীবন বৃত্তান্ত, ছবি ও দলীয় পরিচয়সহ প্রায় ছয় লাখ নামের তালিকা তৈরি করা হয়। এ তালিকায় স্থান পাওয়াদের চাকরিতে সুযোগ করে দিতে গিয়েই মূলত নিয়োগ সংক্রান্ত নানা জটিলতার সৃষ্টি হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন সরকারের সংশ্লিষ্টরা। তবে দলমত নির্বিশেষে সব মেধাবী শিক্ষিত বেকারের কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে এ তালিকা তৈরি করা হয়েছে বলে দাবি করেন সরকারের একজন নীতি-নির্ধারক।

চিকিৎসক
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের একাধিক সূত্র অভিযোগ করে বলেন, নিজেদের লোকজনকে চাকরি দিতে বিধিমালা পরিবর্তন করে প্রায় ১৬ বছর পর কার্যকর করা হয়েছে এডহকভিত্তিক নিয়োগ পদ্ধতি। আর এ পদ্ধতিতে কোনো ধরনের পাস নম্বর নির্ধারণ করা ছাড়াই ৮০ নম্বরের লিখিত এবং ২০ নম্বরের মৌখিক পরীক্ষার মাধ্যমে নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে চার হাজার ১৩৩ জন চিকিৎসক। পাস নম্বর না থাকায় লিখিত পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারী আট হাজার ৮৯৩ জনই মৌখিক পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ পেয়েছেন। আগামী ১৫ এপ্রিল শেষ হবে এ মৌখিক পরীক্ষা।

সংশ্লিষ্ট সূত্র আরো অভিযোগ করেন, সরকারের শীর্ষ পর্যায়ের নীতি-নির্ধারকদের পরামর্শে লিখিত পরীক্ষায় কোনো পাস নম্বর রাখা হয়নি। এতে দেখা গেছে ৮০ নম্বরের লিখিত পরীক্ষায় বিপুলসংখ্যক পরীক্ষার্থী ১১ থেকে শুরু করে ২০ নম্বর পেয়েছে। কিন্তু পাস নম্বর না থাকায় তারাও মৌখিক পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ পেয়েছেন। লিখিত পরীক্ষায় অপেক্ষাকৃত কম নম্বর পাওয়া পরীক্ষার্থীদের জন্য ক্ষমতাসীন দলের প্রভাবশালী ব্যক্তিদের তদবির অব্যাহত রয়েছে। এ তদবিরের চাপে প্রকৃত মেধাবীরা আদৌ চাকরি পাবেন কি না তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেন নিয়োগ সংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তা।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে স্বাস্থ্য সচিব শেখ আলতাফ আলী বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, 'নিয়োগ কমিটির সিদ্ধান্ত মোতাবেক পাস নম্বর রাখা হয়নি। লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষার নম্বর যোগ করে মেধা তালিকা অনুযায়ী নিয়োগ দেওয়া হবে।' এর বেশি আর কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি তিনি। তদবির অথবা লিখিত পরীক্ষায় একেবারেই কম নম্বর পাওয়া পরীক্ষার্থীদের বিষয়ে বিভিন্ন প্রশ্ন করা হলে উত্তর দেওয়া থেকে বিরত থাকেন স্বাস্থ্য সচিব।
বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর রাজস্ব খাতে নন-ক্যাডার প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণীর পদে অস্থায়ী ভিত্তিতে নিয়োগ দিতে 'এডহকভিত্তিক নিযুক্ত কর্মচারী নিয়মিতকরণ বিধিমালা ১৯৯৪'-এর ধারা ৮-এর প্রয়োজনীয় সংশোধন আনে। এ সংশোধনী আনার আগ পর্যন্ত ১৯৯৪ সালের ৩ ডিসেম্বর থেকে সরকারি চাকরিতে এডহক ভিত্তিতে সব নিয়োগ বন্ধ ছিল। তখন সরকারি কর্মকমিশনের (পিএসসি) প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার মাধ্যমে এসব নিয়োগ দেওয়া হতো।
সংস্থাপন মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, এডহকভিত্তিক নিয়োগে এত বেশি অনিয়ম হয়েছিল যে, ১৯৯৪ সালে তৎকালীন সরকার বিধিমালা জারি করে এ পদ্ধতি বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয়। সেই সময় ১৯৮২ সালের ৩১ ডিসেম্বর থেকে ১৯৯৪ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত এডহক ভিত্তিতে নিয়োগপ্রাপ্ত সবার চাকরি নিয়মিতকরণ করা হয়েছিল।
এডহক ভিত্তিতে চিকিৎসক নিয়োগের সিদ্ধান্তকে দুর্ভাগ্যজনক হিসেবে মন্তব্য করে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ও সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব ড. আকবর আলি খান বলেন, 'এ বিষয়ে সরকারের উৎসাহিত হওয়া উচিত নয়। এতে ভবিষ্যতে নিয়োগপ্রাপ্তদের নিয়মিতকরণের প্রশ্নে অসন্তোষ সৃষ্টি হয়। পাশাপাশি অনিয়ম হওয়ার আশঙ্কা থাকে। অযোগ্য লোকও ঢুকে পড়তে পারে। প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণী পদে নিয়োগ অবশ্যই পিএসসির মাধ্যমে হওয়া উচিত বলে আমি মনে করি।'
সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব আরো বলেন, চিকিৎসা খাতের বিষয়টি তো অত্যন্ত টেকনিক্যাল। চিকিৎসক নিয়োগের ক্ষেত্রে পেশাগত ও গুণগত মান অবশ্যই নিশ্চিত করতে হবে। এর কোনো বিকল্প নেই। দক্ষ ও প্রকৃত মেধাবীদের নিয়োগ দেওয়া না হলে চিকিৎসা ব্যবস্থা ভেঙে পড়বে। দ্রুততম সময়ে নিয়োগ দেওয়ার বিষয়টি বিবেচনা করতে গিয়ে যদি এডহক ব্যবস্থা অনুসরণ করা হয় তাহলে যত দ্রুত সম্ভব পিএসসির মাধ্যমে পরীক্ষার আয়োজন করে এসব চিকিৎসকের নিয়োগ স্থায়ী করা উচিত। এতে যোগ্যরা টিকে যাবে, আর অযোগ্যরা বাদ পড়বে।
প্রাথমিক শিক্ষক
গত জানুয়ারি মাসে ২৫ হাজার প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। লিখিত পরীক্ষা শেষে বর্তমানে সাড়ে সাত লাখ খাতা দেখার কাজ চলছে। জোট সরকারের মতো মহাজোট সরকারের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধেও প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগের জন্য প্রার্থীপিছু তিন থেকে পাঁচ লাখ টাকা বখরা নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। প্রাথমিক শিক্ষা অধিপ্তরের একটি ঘোষণাপত্রই এর ইঙ্গিত দেয়। ঘোষণাপত্রে চাকরি নিশ্চিত করার জন্য কারো সঙ্গে লেনদেন করতে নিষেধ করা হয়। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের এই সতর্কবার্তার পরও থেমে নেই নেতা-কর্মীদের নিয়োগ বাণিজ্য। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক রাজশাহীর রহনপুরের এক বেকার যুবক জানান, প্রাথমিক শিক্ষক পদে নিয়োগ পেতে ক্ষমতাসীন দলের এক প্রভাবশালী নেতাকে তিনি তিন লাখ টাকা দিয়েছেন।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রী ডা. আফসারুল আমিন জানান, প্রাথমিক শিক্ষকদের চাকরি নিয়ে লেনদেনের অভিযোগ ওঠার সঙ্গে সঙ্গেই পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিয়ে লেনদেন না করার জন্য সবাইকে অনুরোধ জানানো হয়। শিক্ষক নিয়োগে কোনো ধরনের অনিয়ম হবে না বলে নিশ্চিত করেন তিনি।
ডিএমসিএইচ
তদবিরের কারণে তালগোল পাকিয়ে ফেলেছে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের নিয়োগ কমিটি। মন্ত্রী, সচিব, সংসদীয় দলের নেতা, এমপি, আওয়ামী লীগ নেতা, চিকিৎসক নেতা, কর্মচারী নেতাসহ সব পর্যায়ের নেতার তদবির ছিল। শেষ পর্যন্ত কাকে রেখে কাকে বাদ দেওয়া হবে সেই হিসাব-নিকাশ চূড়ান্ত না হতেই নিয়োগপত্র ইস্যু করা শুরু হয়। কিন্তু একপর্যায়ে নিয়োগ কমিটি টের পান অর্থ ও সংস্থাপন মন্ত্রণালয় থেকে অনুমোদনপ্রাপ্ত পদের চেয়ে অনেক বেশি নিয়োগপত্র ইস্যু করা হয়ে গেছে। ১৭১টি পদে কর্মচারী নিয়োগের অনুমোদন পাওয়া গেলেও নিয়োগপত্র দেওয়া হয়েছে এর চেয়ে অনেক বেশি। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে টের পেয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিবের নেতৃত্বে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। কমিটি তদন্ত করে নানা অনিয়মের সন্ধান পায়।
গত বৃহস্পতিবার স্বাস্থ্যমন্ত্রী অধ্যাপক আ ফ ম রুহুল হক তদন্ত কমিটি ও নিয়োগ কমিটিকে মুখোমুখি করেন। জানা গেছে, সভার শুরুতেই স্বাস্থ্যমন্ত্রী ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের নিয়োগ নিয়ে সরকারের ভাবমূর্তি ব্যাপকভাবে ক্ষুণ্ন হয়েছে বলে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। কিন্তু অর্থ ও সংস্থাপন মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনের চেয়ে বেশি লোক নিয়োগ দিয়ে দেওয়ায় যে সমস্যা তৈরি হয়েছে, তার কোনো সমাধান তিনি বের করতে পারেননি। বিষয়টি ঝুলিয়ে রেখেই বৈঠক শেষ করা হয়।
এদিকে ডিএমসিএইচ সূত্র জানায়, আওয়ামী লীগ সমর্থিত চতুর্থ শ্রেণী কর্মচারী সমিতি ও স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ (স্বাচিপ) প্রায় প্রকাশ্যে ঘোষণা দেয় মোট নিয়োগের ৯০ ভাগ হবে দলীয়ভাবে। সেভাবেই নিয়োগ প্রক্রিয়া এগোচ্ছিল। কিন্তু ভাগ-বাটোয়ারা নিয়ে সমঝোতা না হওয়ায় বিরোধ প্রকাশ হয়ে পড়ে। ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে দুই গ্রুপের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ার ঘটনাও ঘটে। ২৪ ঘণ্টার আলটিমেটাম দিয়ে কর্মচারী সমিতির নেতাদের বহিষ্কার দাবি করেন চিকিৎসকরা। আর চতুর্থ শ্রেণীর নেতারা ১২ ঘণ্টার মধ্যে স্বাচিপের নেতাদের বহিষ্কার দাবি করেন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেলে স্বাস্থ্যমন্ত্রী গত ১৫ জানুয়ারি নিয়োগ প্রক্রিয়া স্থগিত করেন। অথচ ওই দিনই চূড়ান্তভাবে নিয়োগপ্রাপ্তদের কাজে যোগদানের কথা ছিল।
স্বাস্থ্য সহকারী
পাঁচ থেকে সাত লাখ টাকা হাঁকা হচ্ছে স্বাস্থ্য সহকারী পদের প্রার্থীদের কাছে। মোট ছয় হাজার ৩০০ স্বাস্থ্য সহকারী নিয়োগের বিষয়টি এখন আদালতে বিচারাধীন। মুক্তিযোদ্ধাসহ অন্যান্য কোটা মানা হয়নি এজন্য উচ্চ আদালত সরকারের কাছ ব্যাখ্যা চেয়েছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ইতিমধ্যে ব্যাখ্যা দিয়েছে। কিন্তু তার আগে লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষার সময় সরকারদলীয় নেতা-কর্মীরা প্রায় প্রত্যেক প্রার্থীর কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা নিয়ে গেছে বলে বিভিন্ন মহল থেকে অভিযোগ উঠছে। নিয়োগ চূড়ান্ত না হওয়ায় এ বাণিজ্য অব্যাহত রয়েছে। জামালপুরের একজন চাকরিপ্রার্থী কালের কণ্ঠকে অভিযোগ করে বলেন, 'ভালো পরীক্ষা দিয়েছি। চাকরি পাওয়ার বিষয়ে দৃঢ় মনোবল থাকার পরও সরকারদলীয় এক নেতার হাতে পাঁচ লাখ টাকা তুলে দিয়েছি। অবশ্য চাকরি না পেলে আমার টাকা ফিরিয়ে দিতে রাজি হয়েছেন ওই নেতা।'
খাদ্য অধিদপ্তর
খাদ্য অধিদপ্তরে প্রায় এক হাজার ১০০ পদে লোক নিয়োগের প্রক্রিয়া শুরু হয় ২০০৪ সালে। চাকরি দেওয়ার আগেই এ নিয়োগে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ ওঠায় তা বাতিল করা হয়। ২০০৮ সালে একই নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিটি আবার প্রচার করা হয়। কিন্তু সময় স্বল্পতার কারণে নিয়োগ প্রক্রিয়া শেষ করতে পারেনি তত্ত্বাবধায়ক সরকার। নিয়োগ নিয়ে বিতর্ক এড়ানোর জন্য খাদ্যমন্ত্রী ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক খাদ্য অধিদপ্তরের নিয়োগসংক্রান্ত পরীক্ষা বিভাগীয় কমিশনারের হাতে ছেড়ে দেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত বিতর্ক এড়াতে পারেননি তিনি। সরকারদলীয় এমপিদের তালিকা অনুযায়ী নিয়োগ দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে। সম্প্রতি খাদ্যমন্ত্রী ড. মোঃ আব্দুর রাজ্জাক যে প্রশ্নটি সবচেয়ে বেশি শুনেছেন সেটি হলো, কবে নাগাদ নিয়োগ শেষ হবে? মৃদু হেসে খাদ্যমন্ত্রীর মুখস্থ উত্তর, 'শিগগিরই শেষ হবে।'
গত বছরের ২৪ এপ্রিল লিখিত পরীক্ষার প্রায় ছয় মাস পর ২৩ অক্টোবর ফল ঘোষণা করা হয়। এরপর ১২ ডিসেম্বর থেকে ১৪ জানুয়ারি পর্যন্ত মৌখিক পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। সেই ফল এখনো ঘোষণা করা হয়নি। গত বৃহস্পতিবার পর্যন্ত পাঁচটি বিভাগের ফল খাদ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের হাতে এসেছে। ঢাকা বিভাগের ফল এখনো খাদ্য অধিদপ্তরে পেঁৗছেনি। সরকারিভাবে ফল প্রকাশ না হলেও ফলের কপি প্রার্থীদের কাছে পেঁৗছে যাচ্ছে, যা দেখিয়ে চাকরিপ্রার্থীদের কাছ থেকে টাকা নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। মুন্সিগঞ্জের এক প্রার্থী কালের কণ্ঠকে বলেন, 'চাকরি পাওয়ার জন্য পাঁচ লাখ টাকা দিয়েছি। আশা করছি চাকরি পাব। না পেলে যার কাছে টাকা দিয়েছি তার নাম-ঠিকানা প্রকাশ করে বিচার দাবি করব।'
সিএজি অফিস
কম্পট্রোলার অ্যান্ড অডিটর জেনারেল (সিএজি) কার্যালয়ের বিভিন্ন শ্রেণীর ৯৮৮টি পদের লিখিত পরীক্ষা ছিল গত ২৩ অক্টোবর। লিখিত পরীক্ষার সব আয়োজন যথানিয়মে শেষ করা হয়। কিন্তু অডিটর জেনারেল অফিসকে কিছু না জানিয়ে পরীক্ষার আগের দিন অর্থাৎ গত ২২ অক্টোবর গভীর রাতে এ পরীক্ষা বাতিল করে দেয় সরকার। চাকরি দেওয়ার বিষয়ে ক্ষমতাসীন দলের নেতাদের তদবিরে সিএজি অফিস ইতিবাচক সাড়া না দেওয়াতেই মূলত পরীক্ষা বাতিল করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেন সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র।

No comments:

Post a Comment