মাহমুদা ডলি
বিনা টেন্ডারে ছয় কোটি টাকার কাজ বাগিয়ে নিয়েছে যুবলীগ নেতা নুরন্নবী চৌধুরী শাওনের গ্রুপ। টেন্ডারকে কেন্দ্র করে গত ৩১ মার্চ সন্ধ্যায় যুবলীগের শাওন গ্রুপ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের দেবাশীষ গ্রুপের মধ্যে ঘটেছে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা। এ নিয়ে চলছে ডিসিসিতে তোলপাড়।
গতকাল প্রধান প্রকৌশলী ব্রিগেডিয়ার জেনারেল কাদিরের দফতরে কয়েক দফা রুদ্ধদ্বার বৈঠক হয়েছে। এমনকি সারাদিন নিজ অফিস কক্ষে যাননি বিদ্যুত্ সার্কেল কর্মকর্তা জাফর আহমেদ। বিদ্যুত্ সার্কেলের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা জানান, সার্কেল প্রধান জাফর আহমেদকে ভয় দেখিয়ে রাস্তায় লাইটিংয়ের ছয় কোটি টাকার টেন্ডার বাগিয়ে নিয়েছে শাওন গ্রুপ। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, টেন্ডার বিজ্ঞপ্তি পত্রিকায় যাতে প্রকাশ না করা হয় এবং এসব সংবাদ মিডিয়ায় প্রকাশ না করার জন্য পিস্তলের ভয় দেখিয়েছে গ্রুপটি। মেয়র সাদেক হোসেন খোকা এসব ব্যাপারে রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত কিছু জানেন না বলে দৈনিক আমার দেশকে জানিয়েছেন। তবে এ নিয়ে ডিসিসির প্রধান প্রকৌশলীর সঙ্গে কথা বলতে চাইলে সংবাদ কর্মীদের সঙ্গে কথা বলবেন না বলে জানান তিনি।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, মহানগরীর রাস্তার লাইটিংয়ের জন্য বিদ্যুত্ সার্কেলের ২টি বিভাগ ১ ও ২-এর ছয় কোটি টাকার প্রকল্প হাতে নেয় ডিসিসি। কিন্তু প্রকল্প বাস্তবায়নে পত্রিকায় বিজ্ঞাপন না দিয়েই কাজটির টেন্ডার প্রক্রিয়া শুরু করে ডিসিসি। টেন্ডারের নিয়ম অনুযায়ী এক লাখ টাকার কাজ বরাদ্দের ক্ষেত্রেও বহুল প্রচারিত তিনটি পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দেয়ার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। এ বিজ্ঞপ্তি দিতে হবে দুটি বাংলা ও একটি ইংরেজি পত্রিকায়। ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের ঠিকাদার অ্যাসোসিয়েশনের কার্যালয়, ডিসিসির প্রধান প্রকৌশলী, সব আঞ্চলিক নির্বাহী প্রকৌশলী, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনারের কার্যালয়ের নোটিশ বোর্ড ছাড়াও ডিসিসির ওয়েবসাইটে প্রকাশ করতে হবে ওই বিজ্ঞপ্তি। কিন্তু এ কাজটির টেন্ডার প্রক্রিয়ায় কোনোটিই করা হয়নি। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সংশ্লিষ্ট বিভাগের প্রকৌশলী পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিতে গেলে তাকে বাধা দেয় যুবলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগ। পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দিলে জাফর আহমেদের শরীরের নিচের অংশ পিস্তল দিয়ে থেঁতলে দেয়ার হুমকি দেয়া হয়। বাধ্য হয়ে শাওন গ্রুপের লোকজনকে আগেই কাজ দিয়ে দেয়া হয়। বিষয়টি ফাঁস হয়ে যাওয়ায় শুধু লোক দেখানোর জন্য টেন্ডার ওপেন করলে বিদ্যুত্ বিভাগ ১০-এ ২৯৪টি এবং বিদ্যুত্ বিভাগ ২-এ ১১৩টি দরপত্র জমা পড়েছে। শাওন গ্রুপ যেসব ঠিকাদারদের জন্য কাজ আগেই বাগিয়ে নিয়েছে, তাদের কাছ থেকে এরই মধ্যে ১৬ শতাংশ করে নিয়ে নিয়েছে বলে সূত্রটি জানায়।
সাধারণ ঠিকাদাররা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, তারা শোনামাত্রই টেন্ডার ড্রপ করেছেন। কিন্তু পরে কারা কাজ নিয়েছে জেনে তাদের কোনো উত্কণ্ঠা নেই বলে জানান। এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট বিভাগের কর্মচারীরা জানান, সাধারণত টেন্ডার হলে সব প্রক্রিয়াই তারা জানেন। কিন্তু এ কাজটির টেন্ডার কীভাবে হলো তা তাদের অনেকের জানার কথা বা নিয়ম থাকলেও তারা জানেন না। বাকি যেসব দরপত্র জমা পড়েছে সেগুলো এ ঘটনা ফাঁস হয়ে যাওয়ায় কোনোভাবে খবর শুনেই দরপত্র জমা দিয়েছে কাজ পাওয়ার আশায়। ডিসিসির অধিকাংশ কর্মকর্তা-কর্মচারী জানান, এ সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে সব টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজি নিয়ন্ত্রণ করছে নুরন্নবী চৌধুরী শাওন। এ গ্রুপের জন্য সাধারণ ঠিকাদাররা কোনো কাজই পান না বলে জানান।
http://www.amardeshonline.com/pages/details/2010/04/02/25485
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
No comments:
Post a Comment