Wednesday, 23 November 2011

একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্পে জনবল নিয়োগে জালিয়াতি : লুটপাটের আখড়ায় পরিণত হয়েছে ১৪শ’ কোটি টাকার এ প্রকল্প

এম এ নোমান

স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগের অধীন ‘একটি বাড়ি একটি খামার’ প্রকল্পে জনবল নিয়োগে বড় ধরনের জালিয়াতির ঘটনা ঘটেছে। দলীয় বিবেচনায় লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষা ছাড়া, এমনকি কোনো ধরনের যোগ্যতা ও অযোগ্যতার বাছবিচার না করে পাইকারি হারে শত শত লোক নিয়োগের ঘটনায় তোলপাড় শুরু হয়েছে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিভাগে। গ্রামের হতদরিদ্র জনগোষ্ঠীর উন্নয়নের লক্ষ্যে গৃহীত ১৪শ’ কোটি টাকার এ প্রকল্পটি এখন লুটপাটের আখড়ায় পরিণত হয়েছে। মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, এ প্রকল্পে লোক নিয়োগের ক্ষেত্রে প্রচলিত নিয়োগবিধি অনুসরণ করা হয়নি। নিয়োগের জন্য আবেদন করেননি এমন ব্যক্তিকেও প্রকল্পের কর্মকর্তা হিসেবে শুধু দলীয় যোগ্যতার ভিত্তিতে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। এ ধরনের জালিয়াতির ঘটনা দেশের ইতিহাসে আগে কখনও হয়নি বলে জানান মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট বিভাগের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা। নিয়োগ জালিয়াতির ঘটনা অনুসন্ধানে এরই মধ্যে কমিটিও গঠন করা হয়েছে।
স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, দেশের সামগ্রিক উন্নয়নের লক্ষ্যে প্রতিটি বাড়িকে অর্থনৈতিক কার্যাবলির কেন্দ্রবিন্দু এবং প্রতিটি গ্রামকে একটি স্বতন্ত্র অর্থনৈতিক ইউনিট হিসেবে গড়ে তোলার কথা বলে ২০০১ সালের ২ জানুয়ারি ২৪৯ কোটি ৬৬ লাখ টাকা ব্যয়ে একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। প্রকল্পের কার্যক্রম শুরুর আগেই মাঠপর্যায়ে দলীয়করণ, দুর্নীতি ও লুটপাটের মাধ্যমে ব্যাপক অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ ওঠে। ফলে বিগত বিএনপি জোট সরকার ক্ষমতায় এসে দুর্নীতির অভিযোগে প্রকল্পটি বন্ধ করে দেয়। ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ সরকার আবার ক্ষমতায় এসে বন্ধ হওয়া এ প্রকল্পটি আবার চালু করে। চার বছর মেয়াদের এ প্রকল্পে মোট ব্যয় ধরা হয় ১ হাজার ১৯৭ কোটি টাকা। সম্পূর্ণ সরকারি অর্থে ৬৪ জেলার ৪৮২ উপজেলায় প্রকল্পটি বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত হয়। পরে প্রকল্পের জন্য ৫ হাজার ৯২৫ কোটি টাকা বরাদ্দ প্রস্তাব করে অনুমোদন চাওয়া হয়েছে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় থেকে। একইসঙ্গে এই প্রকল্পের জন্য ৭ হাজার ৩৫৫ জনের জনবল নিয়োগেরও প্রস্তাব করা হয়। অর্থ মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনের আগেই সারা দেশে গণহারে লোক নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু করে দেয়া হয়েছে।
জনবল নিয়োগে জালিয়াতি : প্রকল্প বাস্তবায়নের লক্ষ্যে সারা দেশে উপজেলা সমন্বয়কারী, মাঠসংগঠক ও কম্পিউটার অপারেটর কাম হিসাব সহকারী পদসহ অন্য পদগুলোতে কোনো ধরনের পরীক্ষা-নিরীক্ষা ছাড়াই লোকবল নিয়োগ সম্পন্ন করা হয়। নিয়োগ পাওয়ার জন্য আবেদন করেননি, আবেদন করলেও লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষায় অংশ নেননি এমন ব্যক্তিরাও শুধু দলীয় বিবেচনায় নিয়োগ পান। জেলা পর্যায় থেকে এ ধরনের অসংখ্য অভিযোগ আসে মন্ত্রণালয় ও বিভাগে। এসব নিয়োগের সঙ্গে সরকারের আর্থিক সংশ্লিষ্টতা থাকায় নিয়োগ অনুমোদনকারী পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। শেষ পর্যন্ত পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগের কর্মকর্তারা নিজ উদ্যোগে একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্পের নিয়োগ প্রক্রিয়া বিষয়ে তদন্ত করার জন্য একটি কমিটি গঠন করেন। গত ৩ অক্টোবর এ কমিটি প্রকল্পের নিয়োগ প্রক্রিয়া নিয়ে একটি প্রতিবেদন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ে পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য পাঠায়।
তদন্তে জালিয়াতি প্রমাণিত : তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, পূর্বনির্দেশনা অনুযায়ী একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্পের অধীনে নিয়োগপ্রাপ্ত উপজেলা সমন্বয়কারী, মাঠসংগঠক ও কম্পিউটার অপারেটর কাম হিসাব সহকারী পদে নিয়োগপ্রাপ্ত প্রার্থীদের সংরক্ষিত জীবনবৃত্তান্ত, নিয়োগের জন্য লিখিত পরীক্ষার খাতাপত্র, মৌখিক পরীক্ষার ফলাফলের সঙ্গে চূড়ান্ত নিয়োগ তালিকার তুলনা ইত্যাদি কাজ সম্পন্ন করা হয়েছে। এসব কাজ করতে গিয়ে নিয়োগের ক্ষেত্রে বড় ধরনের জালিয়াতির প্রমাণ পাওয়া গেছে। তদন্ত প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, নিয়োগপ্রাপ্ত কয়েকজনের বিষয়ে খতিয়ে দেখা গেছে যে, তাদের আবেদনপত্র সংশ্লিষ্ট জেলা থেকে ডকেট হয়ে আসেনি। প্রকল্পের প্রধান কার্যালয়ের রেকর্ডেও তাদের তালিকাভুক্তির কোনো তথ্য নেই। কারও কারও আবেদনের সঙ্গে ফর্ম ক্রয়ের রসিদ সংযুক্ত নেই। লিখিত পরীক্ষার হাজিরায় তাদের স্বাক্ষর নেই। নিয়োগপ্রাপ্তদের কয়েকজনের নাম লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের তালিকায় নেই। মৌখিক পরীক্ষার হাজিরায়ও তাদের নাম নেই। মৌখিক পরীক্ষার মূল রেজাল্ট শিটে তাদের নাম নেই। তদন্ত প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্পটি যেহেতু স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগের নিয়ন্ত্রণাধীন, সেহেতু প্রকল্পের জনবল নিয়োগের ক্ষেত্রে এত বড় জালিয়াতির বিষয়টি মন্ত্রণালয় থেকে ঊর্ধ্বতন কোনো কর্মকর্তা দ্বারা তদন্ত করার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগের সচিব মহোদয়কে অনুরোধ করা হলো।
স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা আমার দেশকে বলেন, শুরু থেকেই এ প্রকল্পটি নিয়ে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে। প্রকল্পের পুরো টাকায় সরকারের নিজস্ব ফান্ড থেকে বরাদ্দ করা হয়েছে। ফলে এতে দাতা গোষ্ঠী বা সংস্থাগুলোরও কোনো হস্তক্ষেপ বা তদারকি নেই। এ সুযোগেই পুরো প্রকল্পটি ঘিরে দুর্নীতির আখড়া তৈরি হয়েছে।

ডাক্তারদের পদোন্নতিতে নগ্ন দলীয়করণ : শত শত মেধাবী চিকিত্সক পদোন্নতিবঞ্চিত হওয়ায় ক্ষোভ

স্টাফ রিপোর্টার

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে ডাক্তারদের পদোন্নতির ক্ষেত্রে এবার নগ্ন দলীয়করণ হয়েছে। সোমবার রাত দুইটায় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় প্রায় দু’হাজার ডাক্তারের পদোন্নতির তালিকা ওয়েবসাইটে প্রকাশ করে। পদোন্নতির সঙ্গে সঙ্গে তাদের একদিনের সময় দিয়ে গতকালের মধ্যেই মন্ত্রণালয়ে যোগদানের কথা বলা হয়। সে মোতাবেক পদোন্নতিপ্রাপ্ত দলীয় ক্যাডার চিকিত্সকরা গতকালই মন্ত্রণালয়ে যোগদান করেন। বঞ্চিত চিকিত্সকের কেউ যাতে আদালতে যাওয়ার সুযোগ না পান সেজন্য তড়িঘড়ি যোগদানের কথা বলা হয়।
এ পদোন্নতি নিয়ে চিকিত্সকদের মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। সংশ্লিষ্টরা জানান, আগে পিএসসি’র মাধ্যমে সরকারি ডাক্তারদের পদোন্নতি হতো। কিন্তু বর্তমানে আওয়ামী লীগ সমর্থক ডাক্তারদের সংগঠন স্বাচিপের সভাপতি মন্ত্রী হওয়ার পর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়, পিএসসি নয়, ডিপার্টমেন্টাল প্রমোশন কমিটির (ডিপিসি) মাধ্যমে পদোন্নতি হবে। সে অনুযায়ী এ পদোন্নতি হয়েছে। চিকিত্সকদের মধ্যে যারা শিক্ষকতার জন্য উপযুক্ত তাদের আলাদা পরীক্ষা নেয়া হতো। এছাড়া পাবলিকেশন, জ্যেষ্ঠতা, অভিজ্ঞতা দেখে পদোন্নতি দেয়া হতো। এবার এগুলো লঙ্ঘন করে শুধু দলীয় এবং রাজনৈতিক বিবেচনায় পদোন্নতি দেয়া হয়েছে। ফলে শত শত মেধাবী চিকিত্সক পদোন্নতি থেকে বাদ পড়েছেন। রাজনৈতিক বিবেচনায় পদোন্নতির এ নগ্ন দলীয়করণের তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে ড্যাব। ড্যাব বলেছে, ডিপিসি’র মাধ্যমে যে প্রহসনের পদোন্নতি হয়েছে তা বাতিল করতে হবে।
স্বাস্থ্য বিভাগকে দলীয়করণের উদ্দেশে স্বাচিপ নেতা বা সমর্থকদের প্রাধান্য রয়েছে পদোন্নতির তালিকায়। দেড় বছরের শিক্ষকতার অভিজ্ঞতাসম্পন্ন স্বাচিপ নেতারা পদোন্নতি পেলেও ১৫ বছরের অভিজ্ঞতাসম্পন্ন চিকিত্সক পদোন্নতি পাননি। নিয়মবহির্ভূত এ পদোন্নতিতে দেশজুড়ে বিভিন্ন মেডিকেল কলেজ ও স্বাস্থ্য বিভাগের নিয়মশৃঙ্খলায় অবনতি দেখা দিতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন অনেকে। পাবলিক সার্ভিস কমিশনের কাছ থেকে ক্ষমতা নিয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সিলেকশন কমিটির এ পদোন্নতি সংক্রান্ত আদেশের বিরুদ্ধে আইনের আশ্রয় নেয়ার কথাও উল্লেখ করেন কেউ কেউ। একই সঙ্গে পদোন্নতি সংক্রান্ত আদেশে চাকরি ছেড়ে দেয়া বরিশালের এক গাইনি চিকিত্সকের নাম থাকায় তোলপাড় শুরু হয়েছে।
ওয়েবসাইটে প্রদত্ত স্বাস্থ্য বিভাগের এ আদেশ এবং বিভিন্ন সূত্র থেকে জানা যায়, সোমবার দেশজুড়ে স্বাস্থ্য বিভাগের প্রায় দু’হাজার পদোন্নতিপ্রাপ্ত চিকিত্সকের মধ্যে বরিশাল বিভাগের ৫ জন রয়েছেন। এর মধ্যে নাজিরপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. যোগেশ চন্দ্র রায়কে বরিশাল বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদফতরের সহকারী পরিচালক পদে, ভোলার চলতি দায়িত্বপ্রাপ্ত সিভিল সার্জন ডা. আতোয়ার রহমান এবং বরগুনার চলতি দায়িত্বপ্রাপ্ত সিভিল সার্জন এএইচএম জহিরুল ইসলামকে একই পদে নিয়মিত করা হয়েছে। ভান্ডারিয়া থানা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. আবদুল করিম শেখকে ঢাকার স্বাস্থ্য অধিদফতরে সহকারী পরিচালক (অর্থ) এবং বরিশাল স্বাস্থ্য বিভাগে সহকারী পরিচালক চলতি দায়িত্বে থাকা ডা. খান মোস্তাক আল মেহেদীকে সহকারী পরিচালক পদে নিয়মিত করে পদোন্নতি দেয়া হয়েছে। গতকাল স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব মো. হুমায়ুন কবির স্বাক্ষরিত এ আদেশে পদোন্নতিপ্রাপ্ত ৫ চিকিত্সকই স্বাচিপ নেতা ও সমর্থক। অভিযোগ উঠেছে, বিভাগজুড়ে পদোন্নতিপ্রাপ্ত হতে অনেক যোগ্য এবং সিনিয়র চিকিত্সককে বঞ্চিত করা হয়েছে।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অপর এক আদেশে দেশজুড়ে বিভিন্ন মেডিকেল কলেজে ৪৮৩ জন শিক্ষককে পদোন্নতি দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজের ১৫ জন চিকিত্সক রয়েছেন, যার ১১ জনই স্বাচিপ নেতা ও সমর্থক। বরিশালে গাইনি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক (চলতি দায়িত্ব) চিকিত্সক ডা. সেলিনা পারভিনকে সহযোগী অধ্যাপক হিসেবে পদোন্নতি দেয়া হয়েছে। এছাড়া বাকি ১৪ জনকে সহকারী অধ্যাপক চলতি দায়িত্ব থেকে পূর্ণাঙ্গ সহকারী অধ্যাপক পদে পদোন্নতি দেয়া হয়েছে।
সহকারী অধ্যাপক চলতি দায়িত্ব থেকে সহকারী অধ্যাপক পদে পদোন্নতিপ্রাপ্ত চিকিত্সকরা হলেন কার্ডিওলজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. হুমায়ুন কবির, ডা. রনজিত্ খান, মেডিসিন বিভাগের ডা. ভাস্কর সাহা, ডা. আনোয়ার হোসেন, ফার্মাকোলজির ডা. অধীর কুমার সাহা, অ্যানেসথেশিয়া বিভাগের ডা. কামরুজ্জামান খান, ফরেনসিক বিভাগের ডা. আখতারুজ্জামান তালুকদার, গ্যাস্ট্রোলজির ডা. স্বপন কুমার সরকার, শিশু বিভাগের অসীম কুমার সাহা, এনাটমির ডা. গোলাম রহমান, প্যাথলজির ডা. ফায়জুল বাসার, নিউনেটোলজির ডা. তাহাসুনুল আমিন, হেপাটোলজির ডা. মো. জমসেদ আলম এবং মাইক্রো বায়লোজি বিভাগের ডা. শহিদুল ইসলাম।
এ আদেশে সহকারী অধ্যাপকের চলতি দায়িত্ব থেকে পূর্ণ সহকারী অধ্যাপক হিসেবে পদোন্নতি পেয়েছেন নগরীর প্রতিষ্ঠিত গাইনি বিশেষজ্ঞ ডা. জি কে চক্রবর্তী। অথচ অনেক আগেই তিনি সরকারি চাকরি ছেড়ে দিয়েছেন। এ অবস্থায় তার পদোন্নতি নিয়ে হাস্যরসসহ নানা আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়েছে নগরজুড়ে। আর আদেশের তালিকায় তার নাম থাকায় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও সিলেকশন কমিটির দায়িত্ব পালনের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে বিভিন্ন মহলে।
এদিকে পদোন্নতির তালিকা প্রকাশের পর পর সারাদেশে চিকিত্সক অঙ্গনে শুরু হয়েছে ক্ষোভ ও বিরূপ প্রতিক্রিয়া। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক চিকিত্সক ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, এ পদোন্নতির ক্ষেত্রে যথেষ্ট অনিয়ম করা হয়েছে। অনেক যোগ্য ও সিনিয়র চিকিত্সককে বঞ্চিত করে অযোগ্য ও জুনিয়র চিকিত্সককে পদোন্নতি দেয়া হয়েছে। পদোন্নতির ক্ষেত্রে স্বাচিপ নেতাদের লম্বা তালিকা দলীয়করণের প্রমাণ দেয়। এমনকি মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের শক্তি দাবি করা সরকারের অধীনে পদোন্নতির তালিকায় মুক্তিযুদ্ধের কোটাও রাখা হয়নি বলে দাবি করেন অনেকেই। উদাহরণ হিসেবে দেখা যায়, পদোন্নতির তালিকায় শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজ থেকে দেড় বছরের শিক্ষকতার অভিজ্ঞতাসম্পন্ন ৬ চিকিত্সক পদোন্নতি পেয়েছেন। অথচ ৫ বছর, ৮ বছর, ৯ বছর, ১০ বছর, ১২ বছর এবং সর্বোচ্চ ১৪-১৫ বছর পর্যন্ত শিক্ষকতার অভিজ্ঞতা থাকার পরও পদোন্নতি হয়নি প্রায় ৩০ শিক্ষকের। অভিযোগকারীদের মতে, যোগ্যতা এবং সিনিয়র-জুনিয়রের বিষয়টি না মেনে নিয়মবহির্ভূত এ পদোন্নতির ফলে স্বাস্থ্য বিভাগে নিয়মশৃঙ্খলায় অস্থিরতা দেখা দেবে। পদোন্নতির এ আদেশের বিরুদ্ধে অনেকেই আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়ার চিন্তা করছেন বলেও জানান। শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজের এক সাবেক অধ্যক্ষ পদোন্নতির ক্ষেত্রে একই অভিযোগ করে বলেন, এর আগে পাবলিক সার্ভিস কমিশনে পরীক্ষার মাধ্যমে এবং অন্যান্য বিষয় বিবেচনা করে পদোন্নতি দেয়া হতো। কিন্তু এ সরকারের আমলে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনে একটি সিলেকশন কমিটির মাধ্যমে এ পদোন্নতি দেয়া হয়েছে। তিনি অভিযোগ করে বলেন, পদোন্নতির ক্ষেত্রে এ কমিটি প্রণীত নীতিমালাও মানা হয়নি।
পদোন্নতিতে নগ্ন দলীয়করণে ড্যাবের তীব্র প্রতিবাদ : ডিপিসির মাধ্যমে পদোন্নতির প্রকাশিত ফলাফলে ড্যাব কেন্দ্রীয় কার্যকরী পরিষদের সভাপতি অধ্যাপক ডা. একেএম আজিজুল হক ও মহাসচিব অধ্যাপক ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন এক যুক্ত বিবৃতিতে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ ও নগ্ন দলীয়করণের তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছেন।
বিবৃতিতে তারা বলেন, বর্তমান সরকার ক্ষমতাসীন হওয়ার পর থেকে স্বাচিপের সভাপতি মন্ত্রী হওয়ার সুবাদে স্বাস্থ্য খাতে দলীয়করণের মহোত্সব শুরু হয়। স্বাচিপ প্রভাবিত প্রশাসন শুধু বিরোধীদের শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন, বদলি এবং নানাভাবে হয়রানি করেই ক্ষান্ত হয়নি; সর্বশেষ ডিপিসি’র মাধ্যমে শুধু দলীয় আনুগত্যকেই বিবেচনায় নিয়ে যে পদোন্নতির ফল প্রকাশিত হয়েছে তাতে ভবিষ্যতে মেডিকেল শিক্ষা ও চিকিত্সা ব্যবস্থায় ধ্বংসের আলামত দেখা যাচ্ছে। এই ডিপিসি’তে শুধু জ্যেষ্ঠতাই লঙ্ঘন করা হয়নি, পদোন্নতির জন্য যে যোগ্যতা, অভিজ্ঞতা, প্রকাশনার প্রয়োজন তা বিবেচনায় আনা হয়নি। যেভাবে যোগ্য, অভিজ্ঞ ও দলনিরপেক্ষ শিক্ষকদের বঞ্চিত করে অযোগ্য-অনভিজ্ঞদের এ ডিপিসি’র মাধ্যমে দলীয় আনুগত্যের পুরস্কারে পুরস্কৃত করা হলো তার নিন্দা জানানোর ভাষা আমাদের নেই।
ড্যাব নেতারা এই অবৈধ ডিপিসি’র মাধ্যমে পদোন্নতির নামে যে প্রহসনের ফলাফল প্রকাশ করা হয়েছে, তা অবিলম্বে বাতিল এবং তদন্ত কমিটি গঠন করে দায়ীদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানান। পাশাপাশি মেডিকেল শিক্ষা ও চিকিত্সা ব্যবস্থার উন্নয়নের লক্ষ্যে দলনিরপেক্ষ প্রশাসনের মাধ্যমে জ্যেষ্ঠতা, মেধা ও যোগ্যতার নিরিখে পদোন্নতির ব্যবস্থা নেয়ারও দাবি জানাচ্ছি।