Wednesday, 29 December 2010

১৯ কোটি ৪৭ লাখ টাকা আত্মসাতের প্রমাণ মিলেছে : বিআইডব্লিউটিএ’র কর্মচারীদের আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণা

কাজী জেবেল

বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দলীয় বীমা ট্রাস্ট (সিপিএফ) ও প্রভিডেন্ট ফান্ডের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থেকে জালিয়াতির মাধ্যমে ১৯ কোটি ৪৭ লাখ টাকা আত্মসাতের প্রমাণ পেয়েছে তদন্ত কমিটি। টাকা আত্মসাতের দায়ে প্রধান অভিযুক্ত আবদুস সালাম খান এখনও ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়েছেন। এ ঘটনায় ৫ কর্মকর্তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হলে তাদের মধ্যে চারজন আদালতের রায় নিয়ে কর্মস্থলে পুনর্বহাল হয়েছেন। এ অবস্থায় টাকা উদ্ধার ও দোষীদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়ার দাবিতে আন্দোলনে নেমেছেন কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। এ ব্যাপারে তারা ৭ দিনের আলটিমেটাম দিয়েছেন। পাশাপাশি কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণাও দিয়েছেন। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ খবর পাওয়া গেছে।
সূত্র জানায়, টাকা আত্মসাতের ঘটনা গত ২৯ নভেম্বর ফাঁস হয়। এরপর আত্মসাত্কৃত টাকা উদ্ধার ও দোষীদের গ্রেফতার না করায় কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। তারা একাধিকবার সংস্থার চেয়ারম্যান আবদুল মালেক মিয়ার সঙ্গে বৈঠক করে ত্বরিত পদক্ষেপ নেয়ার দাবি জানিয়ে আসছেন। ঘটনা ফাঁস হওয়ার প্রায় এক মাস হতে চললেও যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না—এমন অভিযোগ করছেন সংস্থাটির একাধিক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা। এরই মধ্যে বিআইডব্লিউটিএ অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশন, বিআইডব্লিউটিএ এমপ্লয়িজ ইউনিয়ন, ফ্লোটিং ওয়ার্কার্স ইউনিয়ন, মাস্টার পাইলট ও স্টাফ ইউনিয়ন নেতারা বৈঠক করে দাবি আদায়ের লক্ষ্যে সংগ্রাম পরিষদ গঠন করেছেন। এ কমিটি গতকাল প্রতিবাদ সমাবেশ ও নৌমন্ত্রী শাজাহান খানের কাছে স্মারকলিপি পেশ করেছে। একইসঙ্গে ৭ দিনের আলটিমেটাম দিয়েছে। পাশাপাশি কালো ব্যাজ ধারণ, অবস্থান ধর্মঘট, মানববন্ধন কর্মসূচি পালন এবং সংবাদ সম্মেলনের মতো কর্মসূচি পালনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
সংগ্রাম পরিষদ আহ্বায়ক ও বিআইডব্লিউটিএ অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশন সভাপতি মো. মাহবুবুল আলম আমার দেশকে বলেন, কোটি কোটি টাকা আত্মসাতের ঘটনায় ঊর্ধ্বতন প্রশাসন যথাযথ পদক্ষেপ না নেয়ায় কর্মকর্তা-কর্মচারীরা আন্দোলনে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তছরুপকৃত টাকা উদ্ধার, তহবিল পুনর্ভরণ ও দায়ী ব্যক্তিদের চিহ্নিত করে শাস্তি না দেয়া পর্যন্ত কর্মসূচি চলবে। বিআইডব্লিউটিএ এমপ্লয়িজ ইউনিয়ন সভাপতি ও সংগ্রাম পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক আবদুর রাজ্জাক বলেন, টাকা আত্মসাতের ঘটনায় আমাদেরকে অন্ধকারে রাখা হয়েছে। কর্তৃপক্ষ আমাদের কিছুই জানাচ্ছে না। সংস্থার চেয়ারম্যানের কাছে বীমা ট্রাস্টি বোর্ডে জমাকৃত কর্মচারীদের টাকা যে কোনো ফান্ড থেকে জমা দেয়ার কথা জানিয়েছি। তিনি দাবি না মানা পর্যন্ত আন্দোলন চলবে।
সূত্র আরও জানায়, এ ঘটনায় কর্মকর্তা-কর্মচারীদের তোপের মুখে রয়েছেন চেয়ারম্যান আবদুল মালেক মিয়া। ঘটনার সুষ্ঠু বিচার ও টাকা ফেরত চেয়ে ১৩ ডিসেম্বর দুপুরে বিআইডব্লিউটিএ এমপ্লয়িজ ইউনিয়ন বিক্ষোভ করেছে। এসময় কয়েকশ’ কর্মচারী চতুর্থ তলায় অবস্থিত চেয়ারম্যানের দফতরে হামলা চালায় এবং চেয়ারম্যানকে কিছু সময় অবরুদ্ধ করে রাখা হয়। অবস্থা বেগতিক দেখে চেয়ারম্যান আবদুল মালেক মিয়া পুলিশ ডাকেন। ওইদিন বিকালে তিনি কর্মচারীদের সঙ্গে বৈঠকে বসলে আবারও তোপের মুখে পড়েন তিনি। বৈঠকে কর্মচারীরা যে কোনো উপায়ে তাদের বীমা তহবিলের টাকা ফান্ডে গচ্ছিত করার দাবি জানান।
বিআইডব্লিউটিএ’র কর্মকর্তা-কর্মচারীরা জানান, অন্যান্য মন্ত্রণালয় ও অধিদফতরের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মতো চাকরি শেষ হওয়ার পর তারা অবসর ভাতা পান না। চাকরি থাকাকালে তাদের বেতন থেকে ১০ ভাগ এবং বেতনের বাইরে বিআইডব্লিউটিএ থেকে ১০ ভাগসহ মোট ২০ ভাগ সিপিএফে জমা হবে। কর্মকর্তা-কর্মচারী অবসরে যাওয়ার সময় গ্রুপ বীমা ট্রাস্টি ফান্ড থেকে যত বছর চাকরি করেছেন, তত বছরের প্রতি মাসের বেসিকের দ্বিগুণ হিসেবে টাকা পেয়ে থাকেন। এছাড়া অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা-কর্মচারীরা গ্র্যাচুইটি পান। প্রভিডেন্ট ফান্ডের টাকা কর্মকর্তা-কর্মচারীদের শেষ জীবনে বেঁচে থাকার একমাত্র সম্বল। কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ফান্ডের টাকা আত্মসাত্ করা হলেও কর্তৃপক্ষ যথাযথ পদক্ষেপ নিচ্ছে না।
এদিকে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দলীয় বীমা ট্রাস্ট (সিপিএফ) ও প্রভিডেন্ট ফান্ডের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থেকে জালিয়াতির মাধ্যমে ১৯ কোটি ৪৭ লাখ টাকা আত্মসাতের প্রমাণ পেয়েছে তদন্ত কমিটি। বিআইডব্লিউটিএ পরিচালক (নিরীক্ষা) মো. ছিদ্দিকুর রহমানকে আহ্বায়ক করে ৪ সদস্যের তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে এ টাকা আত্মসাত্ করা হয় বলে উল্লেখ করা হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চেক জালিয়াতির মাধ্যমে বিভিন্ন সময়ে বীমা ট্রাস্টি বোর্ডের টাকা আত্মসাত্ করা হয়েছে। বেশিরভাগ অর্থ উত্তোলন এবং স্থানান্তর হয় গত ২ সেপ্টেম্বর থেকে ২৮ নভেম্বরের মধ্যে। এসময় প্রায় ৯ কোটি টাকা তোলা হয় ব্যাংক থেকে। ট্রাস্টি বোর্ড সভাপতি গোপাল চন্দ্র সাহা এবং কোষাধ্যক্ষ মমিনুল হায়দার খানের স্বাক্ষর জাল করে এসব টাকা তোলা হয়। টাকা আত্মসাতের জন্য তদন্তে সহকারী হিসাব কর্মকর্তা আবদুস সালাম খান ও ব্যাংক ম্যানেজার জাহাঙ্গীর হোসেনসহ কয়েকজনকে দায়ী করা হয়েছে।
এ বিষয়ে কথা বলতে সংস্থার চেয়ারম্যান আবদুল মালেক মিয়ার মোবাইল ফোনে গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত কয়েকবার চেষ্টা করা হলে তিনি কল রিসিভ করেননি।

No comments:

Post a Comment