স্টাফ রিপোর্টার
দেশে বর্তমানে প্রায় ৫০ লাখ একর সরকারি খাসজমি রয়েছে। এর একটি বড় অংশ রয়েছে দখলদার বা ভূমিদস্যুদের নিয়ন্ত্রণে। সরকারি দলের প্রভাবশালীদের ছত্রছায়ায় ভূমিদস্যুরা এ জমি দখল করে রেখেছে। এসব উদ্ধারে প্রশাসন কোনো ভূমিকা রাখছে না।
রাজধানীর বিয়াম মিলনায়তনে গতকাল এক গোলটেবিল আলোচনায় এ তথ্য দেয়া হয়। বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা অ্যাকশন এইড ও সাপ্তাহিক পত্রিকা ‘সাপ্তাহিক’ যৌথভাবে ‘খাসজমি, ভূমি ব্যবস্থাপনা ও জনস্বার্থ’ শীর্ষক এই গোলটেবিল আলোচনার আয়োজন করে।
শিক্ষাবিদ অধ্যাপক অজয় রায় বলেন, দেশের মোট খাসজমির প্রায় ২৫ শতাংশই জলাভূমি। আর ৩২ শতাংশ জমি হচ্ছে কৃষি। বাকি জমিগুলো দরিদ্র জনগোষ্ঠীর বসবাসের উপযোগী হলেও তা বর্তমানে কারও না কারও দখলে রয়েছে। স্থানীয় প্রভাবশালী ও ভূমিদস্যুদের জন্য এসবের ওপর দরিদ্র মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব হচ্ছে না। তিনি খাসজমির ব্যবস্থাপনা দ্রুত ডিজিটালাইজ করার তাগিদ দিয়ে বলেন, এটা যত দ্রুত হবে, ততই লাভ।
অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি গোলাম রব্বানী এই গোলটেবিল আলোচনায় বলেন, ‘শহরনির্ভর সমাজব্যবস্থার জন্য আমাদের সামাজিক ব্যবস্থা নষ্ট হয়ে গেছে। স্থানীয় সরকারগুলো কার্যকর না হওয়ায় ভূমি দখল এবং দুর্বলদের ওপর নির্যাতন বাড়ছে। অন্যায় ও দারিদ্র্য থেকে মুক্তি পেতে আমাদের অবশ্যই সামাজিক ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করতে হবে ও মূল্যবোধ গড়ে তুলতে হবে।
তিনি বলেন, বিচারব্যবস্থা দিয়ে দেশের সামাজিক অন্যায় ও অনাচারগুলো দূর করা সম্ভব হবে না। কারণ বিচারকদের হাতে অনেক মামলা। তারা এসব সময়মতো শেষ করতে পারছেন না। আর জনসংখ্যা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে দেশে জমির চাহিদাও বাড়ছে। জনসংখ্যা বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণ করা না গেলে দুর্নীতি ও অনিয়ম দূর করা যাবে না।
বেসরকারি সংস্থা এএলআরডির শামসুল হুদা বলেন, দেশে মোট জমির ১০ শতাংশ দখলদারদের হাতে রয়েছে। এর মধ্যে বেসরকারি বা ব্যক্তিমালিকানার জমিও রয়েছে। রাজনৈতিক প্রভাবশালীদের ছত্রছায়ায় ভূমিদস্যুরা এসব দখল করে নিচ্ছে। প্রশাসন জনগণের পরিবর্তে দস্যুদের সহায়তা করছে। এ জন্য খাসজমি নীতিমালার বদলে পূর্ণাঙ্গ আইন প্রয়োজন।
‘নিজেরা করি’র খুশী কবির বলেন, খাসজমি ব্যবস্থাপনায় পূর্ণাঙ্গ নতুন আইন, নীতিমালা ও এর বাস্তবায়ন প্রয়োজন।
পরিবেশ আইনজীবী সমিতির (বেলা) নির্বাহী পরিচালক সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, খাসজমির তালিকা করার পাশাপাশি আমাদের ভূমিহীনের তালিকাও তৈরি করতে হবে। খাসজমি ব্যবস্থাপনা প্রক্রিয়ায় দরিদ্র মত্স্যজীবী ও ভূমিহীনদের রাখতে হবে।
সাপ্তাহিক-এর সম্পাদক গোলাম মোর্তুজার সঞ্চালনায় এতে আরও বক্তব্য রাখেন অ্যাকশন এইডের আবাসিক প্রতিনিধি ফারাহ কবির। এতে গবেষণাধর্মী নিবন্ধ উপস্থাপন করেন শুভ কিবরিয়া ও শমসের আলী।
No comments:
Post a Comment