Thursday, 18 March 2010

একটি সইয়ের দাম ৩৫ হাজার টাকা!



Shamokal | শুত্রুবার | ১৯ মার্চ ২০১০ | ৫ চৈত্র ১৪১৬ | ২ রবিউস সানি ১৪৩১
মোহন আখন্দ, বগুড়া ব্যুরো
'স্লিপের এই স্বাক্ষরটি কার তা জানি না। শুধু জানি, বিশেষ স্বাক্ষরযুক্ত স্লিপটি বিআরটিএ অফিসে জমা না দিলে অটোরিকশার রেজিস্ট্রেশন পাওয়া যাবে না। অনেক ঘুরে ছাত্রলীগের এক নেতার কাছ থেকে ৩৫ হাজার টাকায় স্লিপটি কিনতে হয়েছে'_ বললেন, জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের বগুড়ার এক নেতা।
রেজিস্ট্রেশন হাতছাড়া হওয়ার আশঙ্কায় নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ছাত্রদলের ওই নেতা জানান, ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীরা পাঁচ থেকে ১০ হাজার টাকা ছাড় পেলেও সাধারণ মানুষ এবং ভিন্ন দলের নেতাকর্মীদের জন্য স্লিপের রেট নির্দিষ্ট। গত ২৯ ডিসেম্বর জেলা আঞ্চলিক সড়ক পরিবহন কমিটির (আরটিসি)
সভায় বগুড়ায় নতুন করে ৩০০ সিএনজিচালিত অটোরিকশার রেজিস্ট্রেশন দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এর মধ্যে ২২০টিই বগুড়ায় আওয়ামী লীগের এক শীর্ষ নেতা নিজের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নিয়েছেন। এ বাণিজ্য নির্বিঘ্ন করতে তিনি আরটিসিতে রেজিস্ট্রেশন প্রদান সংক্রান্ত উপ-কমিটিতে অনুগত চারজনকে সদস্য হিসেবে অন্তর্ভুর্ক্ত করেন। তাদের তিনজনই আওয়ামী লীগের জেলা পর্যায়ের নেতা। রেজিস্ট্রেশন বাণিজ্য নিয়ন্ত্রণের জন্য প্রভাবশালী ওই নেতা স্লিপ পদ্ধতি চালু করেন। নিজের এক আত্মীয়ের সই এবং তার দেওয়া ক্রমিক নম্বরযুক্ত ছোট্ট সাদা কাগজের ওই স্লিপ ছাড়া কাউকে রেজিস্ট্রেশন না দেওয়ার জন্য তার পক্ষ থেকে বিআরটিএ কর্মকর্তাদের জানিয়ে দেওয়া হয়েছে।
বিআরটিএ সূত্র জানায়, বিশেষ সই ও ক্রমিক নম্বরযুক্ত ওই স্লিপটি কেউ যাতে নকল করে রেজিস্ট্রেশন করে নিতে না পারে সেজন্য একটি কপি সংশিল্গষ্ট কর্মকর্তার কার্যালয়ে রাখা হয়েছে। অনুগত দলীয় নেতাকর্মীদের মাধ্যমে বিক্রি করা স্লিপ কেউ নিয়ে গেলে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা আগে সেটি মূল স্লিপের সঙ্গে মিলিয়ে তারপরই অনুমোদনের জন্য ছাড় করেন।
বিআরটিএ কর্মকর্তারা জানান, গত জানুয়ারি থেকে ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি পর্যন্ত ১৩০টি রেজিস্ট্রেশন বাবদ অর্ধ কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়া হয়েছে। তবে গত ১৭ ফেব্রুয়ারি রেজিস্ট্রেশন প্রদানকারী কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগে মামলার পর থেকে রেজিস্ট্রেশন প্রদান বন্ধ রয়েছে।
নির্ধারিত সময়ে আবেদনকারীদের বাদ রেখে দিনকয়েক আগে আবেদন জমা নিয়ে রেজিস্ট্রেশন প্রদানের অভিযোগে জেলার শাজাহানপুর উপজেলার জাহাঙ্গীর আলম লিটন ও সদর উপজেলার পালশা এলাকার আবু সাঈদ জেলার প্রথম যুগ্ম জজ আদালতে আটজনের বিরুদ্ধে মামলা করেন। মামলায় অভিযোগ করা হয়, নির্ধারিত সময়ে আবেদন করে সরকারি খাতে নির্ধারিত টাকা জমা দেওয়ার পরও তাদের রেজিস্ট্রেশন দেওয়া হচ্ছে না। মামলায় আরটিসির সভাপতি হিসেবে ডিসিসহ আট বিবাদির মধ্যে আছেন কমিটির সদস্য আওয়ামী লীগ নেতা আকতারুজ্জামান ডিউক, একই দলের নেতা প্রদীপ কুমার রায়, রুহুল আমিন ও বগুড়া মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ কবির আহম্মেদ মিঠু।
গত বছরের অক্টোবর পর্যন্ত ছয় মাসে রেজিস্ট্রেশনের জন্য চার হাজার ২০০ আবেদন জমা হয়। পুরনো ওইসব আবেদনের মধ্য থেকে রেজিস্ট্রেশন প্রদানের দাবি উঠলেও ২০০৯ সালের ২৯ অক্টোবর পুনর্গঠিত আরটিসির সভায় আকস্মিকভাবে আগের সব আবেদন বাতিল করে মাত্র সাত দিনের নোটিশে আবার আবেদন গ্রহণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। গত ২ থেকে ৮ নভেম্বর নির্ধারিত সময়ের মধ্যে দুই হাজার ১৬০টি আবেদন জমা পড়ে। যাচাই-বাছাই শেষে রেজিস্ট্রেশনের জন্য মনোনীত আবেদনকারীদের নামের তালিকা প্রকাশের নিয়ম থাকলেও তা মানা হয়নি। রেজিস্ট্রেশন নেওয়ার ক্ষেত্রে স্লিপ বাণিজ্য সম্পর্কে বিআরটিএ বগুড়ার সহকারী পরিচালক গিয়াস উদ্দিন সমকালকে বলেন, 'আপনাদের মতো স্লিপের বিষয়টি আমিও শুনেছি, তবে দেখিনি।' তার কার্যালয়ে সংরক্ষিত একটি স্লিপ দেখে রেজিস্ট্রেশন দেওয়া হচ্ছে এমন অভিযোগ এড়িয়ে গিয়ে তিনি বলেন, স্লিপ নিয়ে তিনি কাউকে কোনো রেজিস্ট্রেশন দেননি।

No comments:

Post a Comment