Wednesday 17 March 2010

সরিয়ে দেওয়া হচ্ছে ৬ ভিসিকে

সাবি্বর নেওয়াজ |Shamokal বৃহস্পতিবার | ১৮ মার্চ ২০১০ | ৪ চৈত্র ১৪১৬ | ১ রবিউস সানি ১৪৩১
দেশের সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শীর্ষ প্রশাসনে শিগগিরই বড় ধরনের পরিবর্তন আসছে। উপাচার্য, উপ-উপাচার্য ও কোষাধ্যক্ষ পদে রদবদল ও নতুন নিয়োগ দেওয়ার বিষয়টি গভীরভাবে চিন্তা করছে সরকার। ইতিমধ্যে ছয়টি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য পদে পরিবর্তন আনার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সঙ্গে পরামর্শ করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। পাশাপাশি কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য ও কোষাধ্যক্ষের শূন্য পদে নতুন মুখ আসতে পারে। মন্ত্রণালয় সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ও একাডেমিক কার্যক্রমে গতিশীলতা আনতে সরকার নতুন এ রদবদলের চিন্তা করছে। দেশে বর্তমানে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ৩৩টি। এর মধ্যে ৩১টি পূর্ণাঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়। বাকি দুটি এখনও নির্মাণ প্রকল্পাধীন। এ দুটি হলো_ বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় এবং গোপালগঞ্জের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়। ৩১টি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে বর্তমানে ৮টিতে কোনো ট্রেজারার নেই। আর ২০টি বিশ্ববিদ্যালয়
চলছে কোনো প্রোভিসি ছাড়াই। যে ৬টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য পদে পরিবর্তন আনার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে তারা হলেন_ বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) উপাচার্য প্রফেসর ড. এএমএম শফিউল্লাহ, ঢাকা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (ডুয়েট) উপাচার্য প্রফেসর ড. এম সবদার আলী, পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (পবিপ্রবি) উপাচার্য প্রফেসর সাখাওয়াত হোসেন, রাজধানীতে অবস্থিত শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শেকৃবি) উপাচার্য প্রফেসর ড. শাহ-ই-আলম, দিনাজপুরের হাজী দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (হাবিপ্রবি) উপাচার্য প্রফেসর ড. আফজাল হোসেন এবং চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি অ্যান্ড অ্যানিমাল সায়েন্সেস বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. নীতিশ চন্দ্র দেবনাথ। জানা গেছে, এ ছয়জনকেই বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে নিয়োগ করা হয়েছিল। ডুয়েটের ভিসি সবদার আলী বিশ্ববিদ্যালয়ে সরকার সমর্থিত শিক্ষক-কর্মচারী ও ছাত্রলীগের সমর্থন হারিয়েছেন।
শেকৃবিতে অভ্যন্তরীণ নানা সংকট সামাল দিয়ে উঠতে পারছেন না বর্তমান ভিসি। এছাড়া সম্প্রতি এ বিশ্ববিদ্যালয়ে সেকশন অফিসার নিয়োগ নিয়ে লাখ লাখ টাকা হাতবদলের অভিযোগ উঠেছে। এ নিয়োগ নিয়ে নয়ছয়ের পেছনে স্বেচ্ছাসেবক লীগের এক শীর্ষনেতার নাম ব্যাপকভাবে ছড়িয়েছে। সবচেয়ে জটিল পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি অ্যান্ড অ্যানিমাল সায়েন্সেস বিশ্ববিদ্যালয়ে। চট্টগ্রামের মেয়র এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর সঙ্গে তীব্র দ্বন্দ্বে জড়িয়েছেন উপাচার্য ড. নীতিশ চন্দ্র দেবনাথ। এ দ্বন্দ্বের জের ধরে সাড়ে তিন মাস ধরে বন্ধ রয়েছে সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়টি। স্থানীয় ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা সেখানে কোনো ক্লাস-পরীক্ষা হতে দিচ্ছেন না। চলতি শিক্ষাবর্ষে দেশের সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম বর্ষ অনার্সে ভর্তি পরীক্ষা শেষ হয়ে ইতিমধ্যে ক্লাস শুরু হয়ে গেছে। সেখানে এ বিশ্ববিদ্যালয়টি বন্ধ থাকায় এখনও সেখানে ভর্তি পরীক্ষাই অনুষ্ঠিত হতে পারেনি। বিগত চারদলীয় জোট সরকারের আমলে নিয়োগ পাওয়া এ ভিসি ওই বিশ্ববিদ্যালয়ে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমানের নামে একটি ছাত্রাবাসের নামকরণ করেছেন। মেয়র মহিউদ্দিন উপাচার্যকে সরানোর দাবি জানিয়ে রাষ্ট্রপতিকে চিঠি দিয়েছেন। পাশাপাশি বর্তমান সরকারের একজন কৃষিবিদ মন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের একজন সাংগঠনিক সম্পাদক ভিসিকে বহাল রাখার জন্য শক্ত অবস্থান নিয়েছেন। এ পরিস্থিতিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন বিব্রতকর অবস্থায় পড়ে সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছে।
প্রোভিসি নেই ২০ বিশ্ববিদ্যালয়ে : বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ নীতিনির্ধারণী পদ উপ-উপাচার্য ছাড়াই চলছে দেশের ২০টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়। এগুলো হলো সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, গাজীপুরের বঙ্গবন্ধু কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, দিনাজপুরের হাজী দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, টাঙ্গাইলের মওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, ময়মনসিংহের ত্রিশালে অবস্থিত জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়, নোয়াখালী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি অ্যান্ড অ্যানিমাল সায়েন্সেস বিশ্ববিদ্যালয়, সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, সেনাবাহিনী পরিচালিত বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালস (বিইউপি), রংপুরের বেগম রোকেয়া প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, পাবনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় এবং উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়। জানা গেছে, উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান ভিসি প্রফেসর আমিনুর রশীদ নিজেই প্রোভিসি নিয়োগ দেওয়ার ব্যাপারে বিরোধিতা করে আসছেন। আর প্রতিষ্ঠার পর থেকে এ পর্যন্ত শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনো প্রোভিসি নিয়োগ দেওয়া হয়নি।
ট্রেজারার ছাড়াই চলছে ৮ বিশ্ববিদ্যালয় : বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ পদ হলেও বর্তমানে ট্রেজারার নেই আটটি বিশ্ববিদ্যালয়ে। সেগুলো হলো_ হাজী দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, বেগম রোকেয়া প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় এবং পাবনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়। জানা গেছে, দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় এবং রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (রুয়েট) কোনো ট্রেজারার পদই নেই।

No comments:

Post a Comment