Saturday, 27 March 2010
তেজগাঁওয়ে রেলওয়ের জমি দখল করে মার্কেট : দোকান ভাগ করে নিল ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মী
শামসুস সালেহীন
রাজধানীর তেজগাঁওয়ে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী, সন্ত্রাসী ও ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীদের যোগসাজশে রেলওয়ের তিন বিঘা জমি দখল করে বিশাল মার্কেট করা হয়েছে। ওয়ার্ড কাউন্সিলর, শীর্ষ সন্ত্রাসী, পুলিশ, ছাত্রলীগ ও যুবলীগ নেতা, শ্রমিক নেতা এবং রেলওয়ের কর্মকর্তারা ভাগবাটোয়ারা করে নিয়েছেন মার্কেটের ১৬০টি দোকান। ওই মার্কেট এখন উদ্বোধনের অপেক্ষায় রয়েছে।
রেলওয়ে ঢাকা জোনের সূত্র জানিয়েছে, তেজগাঁও কভার্ডভ্যান মালিক সমিতির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক আবুল কাশেম ওরফে হাতকাটা কাশেম, শ্রমিক লীগের সাবেক নেতা শামসু ওরফে বাঘ শামসু এবং মকবুল রেলওয়েকে খাজনা দিয়ে ৬৫/১৫০ বর্গফুট জমির বরাদ্দ নিয়ে প্রায় তিন বিঘা জমিতে ১৬০টি আধাপাকা দোকানঘর তুলেছেন। দোকানগুলো ভাগবাটোয়ারা করা হয়েছে ওয়ার্ড কাউন্সিলর শীর্ষ সন্ত্রাসী ও তার সহযোগী পুলিশ, এলাকার ছাত্রলীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, শ্রমিক নেতা এবং রেলওয়ের কর্মকর্তাদের মধ্যে।
ঢাকার বিভাগীয় রেলওয়ের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে আমার দেশকে জানিয়েছেন, রেলওয়ের জমিতে অবৈধভাবে গড়ে ওঠা মার্কেটের ১৬০টি দোকানের মধ্যে যারা দোকানঘর পেয়েছেন তাদের মধ্যে অন্যতম ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের ৩৯ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর শামীম হাসান ৩টি, তার পিএস আলমগীর ২টি, শীর্ষ সন্ত্রাসী আশিক ৪টি, তার সহযোগী পিচ্চি বাবুল ১টি, মোজাম্মেল ১টি, তালুকদার মনির ১টি, আবুল কালাম ২টি, স্টেশনের কামরুল ১টি, করিম ১টি, অপু ১টি, ছাত্রলীগের ওয়ার্ড সভাপতি জিল্লুর রহমান ওরফে জিল্লু ২টি, কভার্ডভ্যান মালিক সমিতির সাবেক সহ-সভাপতি মকবুল ৬টি, কভার্ডভ্যান মালিক সমিতির নেতা ফজলুর রহমান ১৫টি, কভার্ডভ্যান মালিক সমিতির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক হাতকাটা কাশেম ৬টি, ঢাকা মহানগর উত্তর যুবলীগ সহ-সভাপতি বশির আহম্মেদ ওরফে বশির ২টি, স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি আনোয়ার এবং সাধারণ সম্পাদক মোট ২টি, শ্রমিক লীগের সাবেক নেতা বাঘ শামসু ২টি, সফিউল্লাহ শফি ৩টি, বাস স্টেশনের সলু ২টি, রেলওয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নামে ১৫টি, শিল্পাঞ্চল থানার ওসি ওমর ফারুক ২টি এবং কিনে নিয়েছেন আরও ১টি, রেলওয়ে পুলিশের এসআই নজরুল নিজে এবং বিভিন্ন অফিসারকে দেয়ার নামে ১৫টি, আন্ডারগ্রাউন্ড একটি সাপ্তাহিক পত্রিকার সম্পাদক হাবিবুর রহমান হাবিবসহ তথাকথিত সাংবাদিক নামে তিনজন ৩টি এবং ঢাকা মহানগর (উত্তর) স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক ইরান পেয়েছেন ১টি দোকান। এছাড়াও মহাখালী বাস টার্মিনালের নেতা, স্থানীয় সন্ত্রাসী, তেজগাঁও ট্রাক স্ট্যান্ডের নেতা, ট্রাক স্ট্যান্ডের মালিক সমিতির নেতা ও কয়েকটি ট্রান্সপোর্টের মালিক-নেতাও দোকান বরাদ্দ পেয়েছেন বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়। তারা আরও জানিয়েছে, এই তালিকা রেলওয়ের সংশ্লিষ্ট বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কাছে রয়েছে।
রেলওয়ে ঢাকা জোনের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, তেজগাঁও এক নম্বর রেলগেটের পাশে রেলওয়ে মার্কেট ব্যবসায়ী সমিতি জমির খাজনা দিয়ে বরাদ্দ নেয়। তারা ওই জমিতে কাঁচা দোকানঘর নির্মাণ করে ব্যবসা করেন। রেলওয়ের প্রয়োজনে রেলওয়ের জমি থেকে দোকান উচ্ছেদ করার নির্দেশ দেয়া হয়। এরই নির্দেশের প্রেক্ষিতে ওই জমিতে অবস্থানকারী তেজগাঁও এক নম্বর রেলগেট সংলগ্ন রেলওয়ে মার্কেট ব্যবসায়ী সমিতির সব দোকান ১৯৯৯ সালে গুঁড়িয়ে দেয়া হয়। এরপর থেকে রেলওয়ের ওই জমি অব্যবহৃত অবস্থায় পড়ে থাকে।
সুত্র আরও জানায়, উচ্ছেদের পর যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের সচিবের কাছে তেজগাঁও এক নম্বর রেলগেট সংলগ্ন রেলওয়ে মার্কেট ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মাহমুদুল আলম মন্টু তাদের পুনর্বহালের আবেদন করেন। আবেদনে বলা হয়, তারা পাকিস্তান আমল থেকে তেজগাঁও ট্রাক স্ট্যান্ড ও সিএডি সাইডিং সংলগ্ন এলাকায় আইনানুযায়ী খাজনা দিয়ে ব্যবসা করছিলেন। রেলওয়ের প্রয়োজন দেখিয়ে ১৯৯৯ সালে ওই জমি থেকে সব দোকানপাট উচ্ছেদ করা হয়। ফলে ব্যবসায়ীরা পথে বসেন। উচ্ছেদকৃত জমি রেলওয়ের ব্যবহারে না লাগলে তা রেলওয়ে মার্কেট ব্যবসায়ী সমিতিকে আইনানুযায়ী আবার বরাদ্দ দেয়ার অনুরোধ জানানো হয়। কিন্তু রেলওয়ের ল্যান্ড ইউজ প্ল্যান চূড়ান্ত না হওয়ায় রেলওয়ে মার্কেট ব্যবসায়ী সমিতির আবেদন রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের উচ্চপর্যায়ে বিবেচনার জন্য রাখা হয়।
তেজগাঁও এক নম্বর রেলগেটের রেলওয়ে মার্কেট ব্যবসায়ী সমিতির আবেদনের প্রেক্ষিতে রেলওয়ের উপসচিব (রেল উন্নয়ন) শাহ মোঃ ইমদাদুল হক লিখিত নির্দেশ দিয়ে বলেছেন, তেজগাঁও ট্রাকস্ট্যান্ড ও সিএডি সাইডিং সংলগ্ন এলাকায় সম্প্রতি রেলওয়ে নিরাপত্তা দেয়ালের অভ্যন্তরে উচ্ছেদকৃত খালি ভূমি ক্ষতিপূরণ খাজনা দেয়ার ব্যবস্থা চলছে। রেলওয়ের সব নিয়ম-কানুন উপেক্ষা করে বিভাগীয় ভূসম্পত্তি কর্মকর্তা (ডিও) মোহাম্মদ আমিন বদলি হওয়ার পর আগের তারিখে (ব্যাক ডেটে) স্বাক্ষর করে কিছু ব্যক্তির কাছে ক্ষতিপূরণ খাজনা আদায় করে তাদের বরাদ্দ কাগজপত্র দিয়েছেন। ২০০৯ সালের ৮ নভেম্বর সিইও (পূর্ব) ক্ষতিপুরণ ফি আদায় বন্ধ ও সেখানে অবৈধভাবে গড়ে ওঠা অবকাঠামো অপসারণ ও উচ্ছেদের জন্য ঢাকার বিভাগীয় ভূসম্পত্তি কর্মকর্তাকে নির্দেশ দেন। ওই কর্মকর্তা রেলওয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার নির্দেশ পালন না করে উেকাচ নিয়ে ক্ষতিপূরণ ফি আদায় করে লাইসেন্স দিয়েছেন বলে রেলওয়ের উপসচিব (রেল উন্নয়ন) শাহ মোঃ ইমদাদুল হকের চিঠিতে উল্লেখ করা হয়। তিনি চিঠিতে বিষয়টি তদন্ত করে প্রকৃত দোষীদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ ও সরকারি সম্পত্তির দখল রক্ষার্থে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়ার নির্দেশ দেন।
এ ব্যাপারে ঢাকা সিটি করপোরেশনের ৩৯ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর শামীম হাসান দোকান বরাদ্দ পাওয়ার কথা স্বীকার করে আমার দেশকে জানান, তার কাছ থেকে এলাকার বিএনপি নেতারাও এখন দোকান চাইছেন। তার পিএস দোকান পেয়েছেন কিনা তা তিনি জানেন না বলে জানান। ফতুল্লা শিল্পাঞ্চল থানার ওসি ওমর ফারুক তার নামে দোকান বরাদ্দের কথা অস্বীকার করে আমার দেশকে বলেন, তিনি ব্যবসা করতে নয়, এখানে আছেন চাকরি করতে। কে ওই মার্কেট করছে, কারা এর সঙ্গে জড়িত—তা তিনি জানেন না বলে জানান। কমলাপুর রেল পুলিশের এসআই নজরুলকে গতকাল বারবার চেষ্টা করেও ফোনে পাওয়া যায়নি।
http://www.amardeshonline.com/pages/details/2010/03/28/24777
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
No comments:
Post a Comment