কালীগঞ্জ (ঝিনাইদহ) প্রতিনিধি
দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের রেলওয়ের তেল চোর সিন্ডিকেট আবারও বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। কোনোভাবেই থামানো যাচ্ছে না তাদের। সম্প্রতি ট্রেন থামিয়ে ইঞ্জিন থেকে তেল নামানোর সময় ঝিনাইদহ-৬-এর র্যাব সদস্যরা সুন্দরপুর রেলস্টেশন এলাকা থেকে পিন্টু নামের এক তেল চোরসহ ৮শ’ লিটার ডিজেল আটক করে। আটক পিন্টু একই এলাকার কাঁঠালিয়া সুন্দরপুর গ্রামের মৃত ইউছুপ আলীর ছেলে। এভাবে পুলিশ ও র্যাবের অভিযানে বিভিন্ন সময় রেলের চোরাই তেল আটক ও একাধিক মামলা হলেও খোদ রেলের নিরাপত্তা বিভাগের সদস্যরা কিছুই জানে না বলে দাবি করেন। প্রতিদিন হাজার হাজার লিটার তেল ট্রেন ইঞ্জিন থেকে নামিয়ে চোরাইপথে বিক্রি করছে এই সিন্ডিকেট। ফলে রেলওয়েকে প্রতি বছর লোকসান দিতে হচ্ছে কোটি কোটি টাকা। সংঘবদ্ধ তেল চোর সিন্ডিকেট ঝিনাইদহ জেলার ঝিনাইদহের সুন্দরপুর, চুয়াডাঙ্গা জেলার হালসা, পোড়াদহ, রাজবাড়ীর পাংশা, দৌলতদিয়াঘাট, চাঁপাইনবাবগঞ্জের আমনুরা ও খুলনার বেজেরডাঙ্গা, চেঙ্গুটিয়া এবং যশোরের সিংড়া ও সিঙ্গিয়া রেলস্টেশনসহ দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের প্রায় ১৫টি স্পটে তেল নামিয়ে বিক্রি করছে।
বিশেষ ধরনের পলিব্যাগ ব্যবহার করে প্রতিদিন হাজার হাজার লিটার ডিজেল তেল যাত্রাবাহী চলন্ত ট্রেন থেকে বের করে নিচ্ছে তারা। বিশেষ ধরনের মজবুত এই পলিথিন ব্যাগে ৩০ থেকে ৩৫ লিটার তেল ভরে নির্দিষ্ট স্থানে ট্রেন থেকে ফেলে দেয় দুর্নীতিবাজ চালকরা।
এছাড়া মালবাহী ট্রেনগুলো ফাঁকা মাঠে থামিয়ে তেল নামানো হয়। গত বছরের ১ মার্চ রাতে সুন্দরপুর স্টেশন এলাকায় একটি মালবাহী ট্রেন থামিয়ে চোরেরা সব তেল নামিয়ে নেয়ার পর ওই ইঞ্জিন বিকল হয়ে
যায়। পরে মোবারকগঞ্জ স্টেশনে দাঁড়িয়ে থাকা ঢাকাগামী সুন্দরবন এক্সপ্রেস-৭২৫ আপ ট্রেনের ইঞ্জিন খুলে মালগাড়ি সরিয়ে নিলে আড়াই ঘণ্টা পর ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক হয়। একইভাবে গত বছরের ২৯ ডিসেম্বর ট্রেনচালক আইনুল হোসেন ৬৩০৫ নম্বরের ইঞ্জিনসহ একটি মালবাহী ট্রেন মোবারকগঞ্জ রেলস্টেশন থেকে কোটচাঁদপুর স্টেশনে পৌঁছার পথে তেল সরিয়েছিল। একইভাবে ২০০৯ সালের ৫ মার্চ ভোরে সুন্দরপুর এলাকায় একটি মালবাহী ট্রেন থামিয়ে তেল নামানোর সময় ট্রেনে থাকা প্রায় দুইশ’ বস্তা চালও লুট হয়। এ ঘটনায় কালীগঞ্জ থানার পুলিশ অভিযান চালিয়ে ৯০ লিটার তেল ও বেশ কয়েক বস্তা চাল উদ্ধার করে।
২০০৮ সালের সেপ্টেম্বর মাসে সুন্দরপুর বাজারে র্যাব-৬-এর একটি দল অভিযান চালিয়ে ৬টি তেল রাখার কন্টেইনারসহ প্রায় ৩শ’ লিটার ডিজেল উদ্ধার করে। একই অভিযোগে ২০০৭ সালে নাটোরের লালপুর থানায় ঈশ্বরদীর মালবাহী ট্রেনের চালক ইউছুপ আলী, ফায়ারম্যান রফিকুল ইসলাম, রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনীর হাবিলদার আবদুর রাজ্জাক, একজন প্রহরী ও গার্ড জিয়াউর রহমানসহ ৫ জনের নামে পুলিশ মামলা করে।
এদিকে ৬ মাস আগে যশোরের সিংয়া রেলস্টেশন এলাকার তেল চোর সিন্ডিকেট প্রধান মুকুলকে র্যাব ট্রেনের তেলসহ আটক করে। এ ঘটনায় খুলনার অভয়নগর থানায় একটি মামলা দায়ের করে র্যাব। এরপর জামিনে এসে মুকুল ও রবিউলের নেতৃত্বে একটি সিন্ডিকেট আবারও বেপরোয়াভাবে শুরু করেছে তেল চুরি। রেলওয়ের কিছু কর্মকর্তা, কর্মচারী, চালকসহ স্থানীয় পুলিশের দুর্নীতিবাজ সদস্যের সমন্বয়ে গঠিত সংঘবদ্ধ দলটি দীর্ঘদিন ধরে তেল চুরি ও বিক্রি করছে। যে কারণে প্রশাসন কখনও এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করে না বলে অভিযোগ রয়েছে।
রেলওয়ের একটি সূত্র জানায়, দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে চলাচলকারী রেল ইঞ্জিনে খুলনা, ঈশ্বরদী ও পার্বতীপুর তেল ডিপো থেকে প্রতিদিন তেল দেয়া হয়। চলাচলকারী এসব রেল ইঞ্জিনে ৩৫শ’ লিটার তেল ধরে। নিয়ম রয়েছে প্রয়োজন ছাড়া এক লিটার তেল বেশি খরচ হলে তা চালকদের বেতন থেকে কেটে নেয়ার। সূত্রটি আরও জানায়, এতকিছুর পরও সবার চোখে ধুলা দিয়ে কিছু দুর্নীতিবাজ ডিপো ইনচার্জ চালকদের সঙ্গে আঁতাত করে প্রতিদিন সিন্ডিকেটের মাধ্যমে তেল চুরির সুযোগ করে দিচ্ছে।
ঝিনাইদহের কোটচাঁদপুর থানার ওসি মামুনুর রশিদ জানান, আমার এলাকায় কোথাও তেল চুরি হয় না। যদি হয়ে থাকে তাহলে সেটা রেলওয়ে পুলিশের ব্যাপার। আমাদের করার কিছু নেই। রেলওয়ে নিরাপত্তা পুলিশের চিফ ইন্সপেক্টর (খুলনা অঞ্চল) শহীদ জানান, ট্রেন ইঞ্জিন থেকে তেল নামানো হয় এটা আমার জানা নেই। তাছাড়া যেসব জায়গায় তেল নামানোর কথা শোনা যাচ্ছে সেখানে আমার কোনো স্থায়ী স্টাফও নেই। আমি খোঁজ নিয়ে দেখি। প্রয়োজনে লোকজন পাঠিয়ে তেল চুরি বন্ধের ব্যবস্থা নেয়া হবে।
No comments:
Post a Comment