Saturday, 8 January 2011

এমপি ছাত্রলীগ পুলিশের আচরণে ক্ষুব্ধ বরিশালবাসী : চাঁদাবাজি টেন্ডারবাজিতে উদ্বিগ্ন জাপা নেতাকর্মীরাও

জিএম বাবর আলী বরিশাল

বরিশালে সরকারদলীয় এমপি, ছাত্র সংগঠন এবং পুলিশের একাধিক বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের ঘটনায় ক্ষুব্ধ ও উদ্বিগ্ন নগরবাসী। পাশাপাশি ঠিকাদারি কাজের ভাগবাটোয়ারা নিয়ে রশি টানাটানি চলছে এমপি ও অন্য শীর্ষ নেতাদের মধ্যে। মহাজোটের অন্যতম শরিক দল জাপা নেতাকর্মীরাও ক্ষুব্ধ টেন্ডার ভাগবাটোয়ারা নিয়ে। দলীয় নেতাকর্মীদের মাঝে টেন্ডার নিয়ে সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটছে অহরহ।
ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালনকালে অভ্যন্তরীণ বিরোধের জের ধরে নগরীর সোহেল চত্বরে ছাত্রলীগের দু’গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এ সময় পুলিশের সামনে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা বিভিন্ন অস্ত্র নিয়ে প্রতিপক্ষের ওপর হামলা চালায়। পুলিশের সামনে ছাত্রলীগের সশস্ত্র মহড়া চললেও পুলিশ ছিল সম্পূর্ণ নীরব। দু’গ্রুপের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া চলাকালে পুলিশ তিন ছাত্রলীগ ক্যাডার আটক করলেও পরে তা অস্বীকার করে। এমনকি ঘটনাস্থল থেকে পুলিশ ধারালো অস্ত্র উদ্ধার করলেও সাংবাদিকরা ছবি তোলার সময় তা লুকানোর চেষ্টা করে পুলিশ।
অপরদিকে গত ২৮ নভেম্বর বিনা উস্কানিতে বরিশাল প্রেস ক্লাবের সামনে সাংবাদিকদের ওপর বেধড়ক লাঠিচার্জ করে কোতোয়ালি মডেল থানা পুলিশ। পুলিশের বেপরোয়া লাঠিচার্জে প্রেস ক্লাব সম্পাদক লিটন বাশার, এটিএন বাংলার স্টাফ রিপোর্টার হুমায়ুন কবির, বরিশাল সাংবাদিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক বেলায়েত বাবলু, আমার দেশের স্টাফ রিপোর্টার নিকুঞ্জ বালা পলাশ, সমকালের স্টাফ রিপোর্টার সুমন চৌধুরীসহ ২০ সাংবাদিক আহত হন। এ ঘটনার প্রতিবাদে সাংবাদিকরা নগরীতে বিভিন্ন আন্দোলন কর্মসূচি পালন করেন।
সাংবাদিকদের ওপর নির্বিচারে লাঠিচার্জ করলেও ছাত্রলীগের দু’গ্রুপের সশস্ত্র যুদ্ধের সময় কোতোয়ালি পুলিশ ছিল দর্শকের ভূমিকায়। এ নিয়ে নগরজুড়ে তীব্র সমালোচনা হলেও ব্যবস্থা নেয়া হয়নি কারও বিরুদ্ধে।
মহাজোট সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকে অধিকাংশ সরকাার, আধা সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের ঠিকাদারি কাজগুলো সরকারদলীয় নেতাকর্মী বা ঠিকাদারদের মাঝেই বিতরণ করার অভিযোগ রয়েছে ভুরিভুরি। টেন্ডার ভাগবাটোয়ারা নিয়ে দুই বছরে একাধিক সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীদের মাঝে। কোথাও কোথাও নিজ পছন্দের লোককে কাজ দেয়া নিয়ে রশি টানাটানি চলছে সরকারদলীয় এমপি থেকে শুরু করে অন্য নেতাদের সঙ্গে।
প্রায় পৌনে ২ কোটি টাকার একটি ঠিকাদারি কাজ নিজের লোকের প্রতিষ্ঠানকে না দেয়ায় বরিশাল-২ আসনের সরকারদলীয় সংসদ সদস্য মনিরুল ইসলাম মনি ও তার ছেলের হাতে প্রহৃত হয়েছেন বরিশাল পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) এক নির্বাহী প্রকৌশলী। সংশ্লিষ্ট দফতরের প্রায় পৌনে ২ কোটি টাকার ঠিকাদারি কাজ বাগিয়ে নেয়ার চেষ্টায় সোমবার বেলা ১১টায় নগরীর বান্দরোডের পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলীর কক্ষে এ ঘটনা ঘটে। এ সময় উপস্থিত ঠিকাদার ও একাধিক যুবলীগ নেতার সঙ্গেও এমপি মনিরের বাকবিতণ্ডা হয়। পুলিশ পাউবো কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং উপস্থিত ঠিকাদারদের রোষানল থেকে উদ্ধার করেন এমপি মনি ও তার ছেলেকে। যদিও এমপি মনিরুল ইসলাম মনি বলেন, তিনি তার এলাকার বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজ নিয়ে আলোচনা করতে নির্বাহী প্রকৌশলীর কক্ষে যান। সেখানে উপস্থিত যুবলীগ নেতা অরুন ও তার সহযোগীরা তাকে লাঞ্ছিত করে। তিনি আরও বলেন, উপজেলা পর্যায়ের সব ঠিকাদারি কাজও ভাগবাটোয়ারা করছেন একাধিক প্রভাবশালী নেতা। এ কারণে উপজেলা পর্যায়ের সাধারণ ঠিকাদাররা সব ধরনের কাজপ্রাপ্তি থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।
এদিকে পুলিশের সামনেই অস্ত্রের মহড়া, সংঘর্ষ এবং বিনা উস্কানিতে সাংবাদিকদের ওপর হামলার ঘটনায় ক্ষুব্ধ ও উদ্বিগ্ন নগরবাসী। সম্প্রতি ঘটে যাওয়া এসব অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার জন্য পুলিশের নীরব ভূমিকাকেই দায়ী করেছেন অনেকেই। পুলিশের অতিরিক্ত আওয়ামী লীগ সাজার কারণেই এসব ঘটনা ঘটছে বলে সাধারণ মানুষের মন্তব্য। অভিযোগ রয়েছে, বিএম কলেজ ছাত্র সংসদ বাকসুর কার্যকরী কমিটির সদস্য ও সাবেক ছাত্রলীগ নেতা বর্তমান ওসি মো. জাহাঙ্গীরের অতিরিক্ত দলীয়প্রীতির কারণেই নগরীতে এসব ঘটনা ঘটলেও তার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না।
এদিকে আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাদের কাজ ভাগাভাগি করে নেয়ার ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করে মহাজোটের অন্যতম শরিক দল জাপার কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক অধ্যাপক মহসিন-উল ইসলাম হাবুল আমার দেশকে বলেন, বরিশালের প্রভাবশালী নেতারা পার্সেন্টেজের মাধ্যমে দলীয় নেতাকর্মীদের মাঝে টেন্ডার ভাগবাটোয়ারা করে দিচ্ছেন। ফলে এসব উন্নয়নমূলক কাজের গুণগত মান খারাপ হচ্ছে। টেন্ডারবাজি ও বিভিন্ন চাঁদাবাজির ঘটনায় জাপা নেতাকর্মীরাও ক্ষুব্ধ বলে জানান তিনি।

No comments:

Post a Comment