Tuesday 26 April 2011

দুদক এখন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এক্সটেনশন










এম এ নোমান
দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) তার স্বাধীনসত্তা হারিয়ে এখন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এক্সটেনশনে পরিণত হয়েছে। এ প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান ও অপর দুই সদস্য এক সময় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়েই কর্মরত ছিলেন। এই কর্মকর্তারা সে সময় বিভিন্ন দায়িত্বে নিয়োজিত ছিলেন। মামলা দায়ের, অভিযোগ অনুসন্ধান ও সম্পদের হিসাব চেয়ে চিঠি পাঠানোর ক্ষেত্রে দুদক নিজস্ব এখতিয়ার প্রয়োগের পরিবর্তে এখন সরকারের শীর্ষমহলের আজ্ঞাবহ প্রতিষ্ঠান হিসেবেই কাজ করছে। দুদকের যে আইনটি সম্প্রতি সংশোধন করে সংসদে পেশ করা হয়েছে তা পাস হলে প্রতিষ্ঠানটি একেবারেই একটি তল্পিবাহক প্রতিষ্ঠানে পরিণত হবে। দুদক সম্পর্কে ব্যাপক অনুসন্ধান চালাতে গিয়ে এ চিত্রই পাওয়া গেছে। প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান গোলাম রহমান স্বয়ং দুদক সম্পর্কে বলেছিলেন, এটি একটি দন্তহীন বাঘ, এখন এর নখগুলোও কেটে নেয়ার চেষ্টা হচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দুদক তার নিজস্ব এখতিয়ার প্রয়োগ করে কোনো সময়েই স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারেনি। তারা বলেন, সেনাসমর্থিত ওয়ান ইলেভেন সরকারের সময় সাবেক সেনাপ্রধান লে. জেনারেল (অব.) হাসান মশহুদের নেতৃত্বে দুদক রাজনীতিবিদ ও ব্যবসায়ীদের হয়রানির জন্য ব্যবহৃত হয়েছে। বর্তমানেও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে দায়িত্ব পালনকারী কর্মকর্তারাই সরকারের শীর্ষমহলের নির্দেশনার আলোকেই দুদকের কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছেন। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিরোধীদলীয় নেতাদের হয়রানি এবং ক্ষেত্রবিশেষ চমক সৃষ্টি ছাড়া সত্যিকার অর্থে দুর্নীতি দমনে দুদক কোনো কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারেনি। বিনা টেন্ডারে শত শত কোটি টাকার সরকারি কাজ দলীয় লোকদের দেয়া এবং জালিয়াতি ও দুর্নীতির মাধ্যমে শেয়ারবাজার থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা লুটপাটের ঘটনায় দুদকের নীরবতায় বিস্ময় প্রকাশ করেছেন আইন বিশেষজ্ঞরা। আইন যাই হোক দুদকের বর্তমান আজ্ঞাবাহী জনবল দিয়ে দুর্নীতি দমন হবে না বলেও মনে করেন তারা।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এক্সটেনশন : দুদকের বর্তমান চেয়ারম্যান গোলাম রহমান ২০০১ সালে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব হিসেবে নিযুক্ত হন। আওয়ামী লীগ সরকারের শেষদিকে তাকে ওই পদে নিযুক্ত করা হয়। লে. জেনারেল (অব.) হাসান মশহুদের বিদায়ের পর বর্তমান সরকার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সাবেক সচিব গোলাম রহমানকে দুর্নীতি দমন কমিশনের চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ দেয়। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়ে নিয়োগ পাওয়া দুদকের দুই সদস্য বিদায় নেয়ার পর গত মাসে মো. বদিউজ্জামান ও মো. শাহাবুদ্দিনকে তাদের স্থলাভিষিক্ত করা হয়। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের পর মো. বদিউজ্জামানকে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মহাপরিচালক হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়। ১৯৯৯ সাল পর্যন্ত তিনি টানা এ দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৯৯ সালে তাকে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অধীন বিলুপ্ত দুর্নীতি দমন ব্যুরোর মহাপরিচালক হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়। ২০০১ সাল পর্যন্ত তিনি এ দায়িত্ব পালন শেষে সরকারের অতিরিক্ত সচিব হিসেবে অবসর গ্রহণ করেন। সদ্যনিযুক্ত দুদকের অপর সদস্য মো. শাহাবুদ্দিনকে বর্তমান সরকার ‘আওয়ামী লীগ ও সংখ্যালঘুদের ওপর বিএনপিসহ চারদলীয় জোট কর্তৃক পরিচালিত জুলুম-নির্যাতনের ঘটনা’ তদন্তে গঠিত কমিটির প্রধান হিসেবে নিয়োগ দেয়। বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের বিশেষ নির্দেশে ২০০১ সালে বিএনপিসহ চারদলীয় জোট সরকার সারাদেশে আওয়ামী লীগ এবং হিন্দু সম্প্রদায়সহ সংখ্যালঘুদের ওপর জুলুম-নির্যাতন চালিয়েছে বলে অভিযোগ এনে ওই ঘটনা তদন্তে তাকে দিয়ে এক সদস্যের একটি কমিটি গঠন করে। এ কমিটি বিএনপির দশ হাজার নেতাকর্মীকে দায়ী করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে প্রতিবেদন পেশ করেছে।
চেয়ারম্যানসহ তিন সদস্যবিশিষ্ট দুদকের সবাই প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ত ছিলেন বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে।
সরকারের তল্পিবাহক প্রতিষ্ঠান : আইনে দুদক একটি স্বাধীন সংস্থা হলেও স্বাধীনভাবে কাজ করার ক্ষমতা দুদকের কোনো সময়েই ছিল না বলে মনে করেন প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা। দুদক বরাবরই ক্ষমতাসীনদের আজ্ঞাবহ প্রতিষ্ঠান হিসেবেই এর যাবতীয় কার্যক্রম পরিচালনা করতে বাধ্য। বর্তমান দুদক আইন সংশোধন করে এটিকে সরকারের একটি তল্পিবাহক প্রতিষ্ঠানে পরিণত করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। সরকার আগে প্রত্যক্ষভাবে দুদককে নিয়ন্ত্রণ করলেও এখন প্রত্যক্ষভাবেই এর নিয়ন্ত্রণ সরকার গ্রহণ করতে যাচ্ছে। বর্তমানে সংসদীয় কমিটিতে যাচাই-বাছাইয়ের অবস্থায় থাকা দুদক (সংশোধনী) আইনের কয়েকটি ধারা সংশোধন ও সংযোজন করে বিচারক, বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তা ও সরকারি কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের ক্ষেত্রে সরকারের পূর্বানুমতি গ্রহণ আবশ্যক করা হয়েছে। একই সঙ্গে দুদকের দায়ের করা যে কোনো মামলা তদন্তের জন্য দুদকের একচ্ছত্র ক্ষমতা খর্ব করে পুলিশ ও সরকারের অন্যান্য সংস্থার হাতে দেয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে। এছাড়াও দুদকের সাচিবিক দায়িত্ব পালনকারী কর্মকর্তা নিয়োগ দেবে সরকার। দুদকের সব ধরনের কার্যক্রম পরিচালনায় সচিবই মুখ্য ভূমিকা পালন করে থাকেন। সচিব যদি সরকার নিয়োগ দেয়, তাহলে এর কার্যক্রমও সরকারই নিয়ন্ত্রণ করবে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা। তাছাড়া দুদকের ২০০৪ সালের আইনের ২০ (১) ধারায় বলা হয়েছিল, ফৌজদারি কার্যবিধিতে যা কিছুই থাকুক না কেন, এই আইনের অধীন ও এর তফসিলে বর্ণিত অপরাধসমূহ কেবলমাত্র কমিশন কর্তৃক তদন্তযোগ্য হবে। একই ধারার ২ উপধারায় বলা হয়েছে যে, অপরাধসমূহ তদন্তের জন্য কমিশন, সরকারি গেজেটে প্রজ্ঞাপন দ্বারা, এর অধস্তন কোনো কর্মকর্তাকে ক্ষমতা প্রদান করতে পারবে। এ ধারাটি সংশোধন করে প্রস্তাবিত সংশোধনীতে তদন্তের বিষয়ে একই ধারার (২) উপ-ধারায় বলা হয়েছে যে, উপধারা (১)-এ যা কিছুই থাকুক না কেন, উক্ত উপ-ধারায় উল্লিখিত অপরাধসমূহ তদন্তের জন্য কমিশন, সরকারি গেজেটে প্রজ্ঞাপন দ্বারা, এর অধস্তন কোনো কর্মকর্তা, পুলিশ বা অন্য কোনো সংস্থাকে ক্ষমতা অর্পণ করতে পারবে। (৩) উপ-ধারায় বলা হয়েছে যে, উপ-ধারা (১) ও (২)-এ যা কিছুই থাকুক না কেন, কমিশনের কোনো কর্মকর্তা বা কর্মচারীর বিরুদ্ধে এ আইন ও তফসিলে উল্লিখিত কোনো অপরাধের অভিযোগ উত্থাপিত হলে তার তদন্তের জন্য কমিশন, সরকারি গেজেটে প্রজ্ঞাপন দ্বারা কেবল পুলিশ বা অন্য কোনো সংস্থাকে ক্ষমতা অর্পণ করবে। ২০০৪ সালের আইনে দুদককে অপরাধ কর্মকাণ্ডের জন্য দেশের সব নাগরিকের বিরুদ্ধে একই পদ্ধতিতে মামলা করার এখতিয়ার দেয়া হয়েছিল। ‘আইন সবার জন্য সমান’ বলা হলেও দুদকের প্রস্তাবিত সংশোধনীতে ৩২ ধারার পর ৩২ক নামে একটি পৃথক ধারা সংযোজন করা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, এ আইনের অধীন জজ, ম্যাজিস্ট্রেট বা সরকারি কর্মচারীদের বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের ক্ষেত্রে ফৌজদারি কার্যবিধির ধারা ১৯৭-এর বিধান আবশ্যিকভাবে প্রতিপালন করতে হবে। ফৌজদারি কার্যবিধির ১৯৭ ধারায় বলা হয়েছে—যখন দণ্ডবিধির ১৯ ধারার অর্থানুসারে কোনো জজ অথবা কোনো ম্যাজিস্ট্রেট অথবা সরকার কর্তৃক সরকারের অনুমোদন ব্যতীত অপসারণযোগ্য নয়—এ ধরনের কোনো সরকারি কর্মচারী তার দায়িত্ব পালনকালে অথবা দায়িত্ব পালনে আসীন বলে বিবেচিত হওয়াকালে কোনো অপরাধ সংঘটিত করেছেন বলে অভিযুক্ত হয়ে থাকেন, তখন সরকারের পূর্বানুমতি ব্যতীত কোনো আদালত ওইরূপ অপরাধ আমলে আনবেন না। একই ধারার ২ নং উপধারায় বলা হয়েছে—ওই জজ, ম্যাজিস্ট্রেট বা সরকারি কর্মচারী অপরাধ বা অপরাধসমূহের অভিযোগ কার দ্বারা বা কীভাবে করা হবে, সরকার তা নির্ধারণ করতে পারবে এবং কোন আদালতে বিচার হবে, তাও নির্দিষ্ট করে দিতে পারবে। দুদক আইন সংশোধনের ব্যাপারে প্রবল আপত্তি জানিয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ও ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল (টিআইবি) চেয়ারম্যান এম হাফিজউদ্দিন খান আমার দেশকে বলেন, এটা হলে দুদকের স্বাধীন সত্তা বলে যা ছিল, সেটা সম্পূর্ণরূপে বিলুপ্ত হবে। বর্তমান সরকারের সময় দলীয় লোকদের কোটি টাকার কাজ দেয়া, রেন্টাল পাওয়ার প্লান্টের নামে শত শত কোটি টাকার কাজ পছন্দের প্রতিষ্ঠানকে দেয়া এবং শেয়ার জালিয়াতির সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের ক্ষেত্রে দুদকের নীরবতার বিষয়ে টিআইবি চেয়ারম্যান বলেন, সদিচ্ছা থাকলে দুদক এসব বিষয়ে ভূমিকা রাখতে পারত। মূলত আইন, অবকাঠামোগত অসুবিধা ও জনবল সঙ্কট, সর্বোপরি স্বাধীন সত্তা না থাকায় দুদক স্বাধীনভাবে কার্যকর ভূমিকা পালনে ব্যর্থ হচ্ছে। তিনি বলেন, দুর্নীতি দমনের ক্ষেত্রে দুদকের মাধ্যমে কাঙ্ক্ষিত ফল পেতে হলে বিদ্যমান আইন শক্তিশালী করার সঙ্গে সঙ্গে স্বাধীন মানসিকতাসম্পন্ন লোকবলেরও প্রয়োজন হবে।
বিরোধী রাজনীতিকদের হয়রানির হাতিয়ার : দুদক মূলত বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের নির্যাতনের হাতিয়ারে পরিণত হয়েছে। সেনা সমর্থিত বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের গোটা দু’বছরই দুর্নীতি দমন কমিশন সরকারের দেয়া তালিকা অনুযায়ী দেশের ব্যবসায়ী ও রাজনীতিকদের বিরুদ্ধে মামলা করেছে। দুদক স্বাধীন হলেও এর সচিব, মহাপরিচালক ও পরিচালক পর্যায়ের সব কর্মকর্তাই সরকার কর্তৃক নিযুক্ত। কাজেই সরকারের আজ্ঞাবহ হয়েই মামলা দায়ের এবং এর তদন্ত প্রক্রিয়া সম্পন্ন করছে দুদক। বর্তমান সরকারের সময় এসেও দুদক স্বাধীনভাবে কাজ করার ক্ষেত্রে সফল হতে পারেনি। দুদক চেয়ারম্যানের পদ থেকে লে. জেনারেল হাসান মশহুদের পদত্যাগের পর চেয়ারম্যান হিসেবে নিযুক্ত হন সাবেক সচিব গোলাম রহমান। এর পরপরই সরকার দুদক আইনও সংশোধনের উদ্যোগ নেয়।
বর্তমান সরকারের দু’বছরেও দুদক স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারেনি বলে জানান দুদকেরই একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা। তিনি বলেন, বর্তমান সরকারের সময়ে যে ক’টি মামলা হয়েছে, তার সবগুলোই বিরোধী দল ও মতের ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে। অথচ বর্তমান সরকারের সময়ে টেন্ডার নীতিমালা পরিবর্তন করে সর্বোচ্চ ৮ কোটি টাকা পর্যন্ত মূল্যমানের সরকারি কাজগুলো কোনো অভিজ্ঞতা ও জামানত ছাড়াই সরকারি দলের নেতাকর্মীদের দেয়া হচ্ছে। পিপিআর পরিবর্তন করা হয়েছে এবং কোনো টেন্ডার ছাড়াই রেন্টাল পাওয়ার প্লান্ট স্থাপন করার কাজ দেয়া হচ্ছে। এগুলো সবই সরকারের মন্ত্রী ও সরকারি দলের নেতারা পেয়েছেন। এতে করে দেশব্যাপী দুর্নীতির বিষবৃক্ষ ছড়িয়ে পড়লেও দুদক মামলা করা তো দূরের কথা, অনুসন্ধান করারও সাহস দেখাতে পারছে না। অপরদিকে বিরোধী দল ও মতের লোকদের নামে এ সরকারের সময়ই দুদক শতাধিক মামলা দায়ের করেছে।
ভূমিকা নিয়ে আইন বিশেষজ্ঞরা বিস্মিত : দুদকের ভূমিকার বিষয়ে সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি বিশিষ্ট ফৌজদারি আইন বিশেষজ্ঞ অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন আমার দেশকে বলেন, বিরোধী রাজনৈতিক নেতাদের দমনের ক্ষেত্রে দুদক সরকারের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। গত দু’বছরে দেখা গেছে, এ পর্যন্ত যে ক’টি মামলা হয়েছে, তার সবগুলোই বিরোধী রাজনৈতিক নেতাদের নামে। অথচ ওয়ান-ইলেভেন সরকারের হর্তাকর্তাদের বিষয়ে দুদক একবারেই নীরব। এছাড়াও গত দু’বছরেই দেশে দুর্নীতি হয়েছে সবচেয়ে বেশি। দু’লাখ টাকার স্থলে আট কোটি টাকার সরকারি কাজ বিনা টেন্ডারে দলীয় লোকদের দেয়া হচ্ছে। এছাড়াও শত শত কোটি টাকার পাওয়ার প্লান্টের কাজ বিনা টেন্ডারে দেয়া হচ্ছে। ইতিহাসের সবচেয়ে বড় জালিয়াতি হয়েছে এবার শেয়ারবাজারে। হাজার হাজার কোটি টাকা লুটপাট হয়েছে। অথচ এসব বিষয়ে দুদক নীরব থেকে তাদের ভূমিকা সম্পর্কে জাতিকে জানিয়ে দিয়েছে। বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের দমন এবং ক্ষেত্রবিশেষে চমক সৃষ্টি ছাড়া দুদক দুর্নীতি দমনে কোনো কাজই করেনি বলে জানান তিনি। তিনি বলেন, বর্তমানে দুদকে যেসব লোক নিয়োগ পেয়েছেন, তাদের দ্বারা আর যাই হোক, দুর্নীতি দমন হবে না।
দুদকের বক্তব্য : দুদক প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের আজ্ঞাবহ হয়ে কাজ করছে—এ অভিযোগ সম্পর্কে প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান গোলাম রহমান আমার দেশকে বলেন, আইনে আমাদেরকে যতটুকু ক্ষমতা দেয়া হয়েছে, ততটুকুই প্রয়োগ করে আমরা সম্পূর্ণ স্বাধীনভাবে কাজ করার চেষ্টা করছি। সরকারের কোনো ধরনের বিধিনিষেধ আমরা এখনও পর্যন্ত আমলে নেইনি। আইন সংশোধনের বিষয়ে তিনি বলেন, মূল আইনে বলা হয়েছে দুদক একটি স্বাধীন প্রতিষ্ঠান হবে। কাজেই আমরা আশা করছি সরকার এমন কিছু করবে না যাতে এ প্রতিষ্ঠানটির স্বাধীনতা খর্ব হয়। এটা হলে দেশে ও বিদেশে সরকারেরই ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হবে। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের দায়িত্ব পালন সম্পর্কে তিনি বলেন, আমি শুধু আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ই নয়, এর পরের সরকারের সময়ও আমি একই দায়িত্ব পালন করেছি। গত দু’বছরে শুধু বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের নামেই মামলা ও তদন্ত হচ্ছে। ক্ষমতাসীনদের দুর্নীতি নিয়ে কোনো মামলা না হওয়ার কারণ সম্পর্কে তিনি বলেন, দুদকে জমা হওয়া অভিযোগগুলোই তদন্ত ও অনুসন্ধান করে যৌথভাবে মামলা দায়েরের সিদ্ধান্ত হয়। এখানে সরকারি দল কিংবা বিরোধী দল দেখা হয় না। দুদক সদস্য মো. বদিউজ্জামান বলেন, ২০০১ সালের পর থেকে আমি সরকারের কোনো কার্যক্রমের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলাম না। দুদক সদস্য হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের পর প্রায় এক মাস অতিবাহিত হয়েছে। এখনও পর্যন্ত সরকারের পক্ষ থেকে কোনো ধরনের বাধানিষেধ পাইনি। আশা করছি আইন অনুযায়ী স্বাধীনভাবেই কাজ করতে পারব। অপর সদস্য মো. সাহাবুদ্দিন বলেন, ২০০১ সালের নির্বাচন-পরবর্তী সহিংসতা অনুসন্ধানের জন্য হাইকোর্ট একটি নির্দেশনা দিয়েছিলেন। সে নির্দেশনা মেনেই আমি দায়িত্ব পালন করেছি। দুদক আইন সংশোধনীর বিষয়ে তিনি বলেন, দেশের মানুষ চায় দুদক একটি স্বাধীন প্রতিষ্ঠান হিসেবে কাজ করুক। কাজেই সরকারের এমন কোনো সিদ্ধান্ত নেয়া ঠিক হবে না, যাতে দুদকের স্বাধীনতা খর্ব হয়।

No comments:

Post a Comment