Tuesday, 26 April 2011

ছাত্রলীগারদের দৌরাত্ম্যে ৭০ কলেজের উন্নয়নে অনিশ্চয়তা

রিয়াজ চৌধুরী

সারাদেশের ৭০টি সরকারি কলেজের উন্নয়ন প্রকল্প আলোর মুখ দেখবে কিনা তা নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে। সরকারের এ মহাপরিকল্পনা বাধাগ্রস্ত হচ্ছে খোদ ছাত্রলীগ ক্যাডারদের কারণে। ৬৫৫ কোটি ১২ লাখ টাকার এ উন্নয়ন প্রকল্প একনেকে অনুমোদনের পর শুরু হয়েছে টেন্ডার প্রক্রিয়া। আর টেন্ডার বাগিয়ে নিতে ছাত্রলীগ ক্যাডাররা সংশ্লিষ্ট দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তাদের হুমকি-ধামকি দিচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
শিক্ষা প্রকৌশল অধিদফতর (ইইডি) সূত্রে জানা যায়, টেন্ডার পেতে ছাত্রলীগ ক্যাডাররা বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। তারা হুমকি-ধামকি দিয়ে কাজ বাগিয়ে নেয়ার চেষ্টা করছে। টেন্ডার না পেলে মাঠপর্যায়ে কাজ করতে দেবে না বলে তারা ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের হুমকি দিয়েছে। এ অবস্থায় জীবনের নিরাপত্তা নিয়েও শঙ্কা প্রকাশ করেছেন সংশ্লিষ্টরা। নাম প্রকাশ না করার শর্তে শিক্ষা প্রকৌশল অধিদফতরের এক কর্মকর্তা বলেন, সারাদেশের স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ের কলেজ শিক্ষার বহু বছরের অব্যবস্থাপনা আর সঙ্কট অবসানের জন্য সরকার এ প্রকল্প অনুমোদন দিয়েছে। সরকারের এই উদ্যোগ দেশের উচ্চশিক্ষার মানোন্নয়নে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে। অথচ সরকারের এ উদ্যোগকে বাধাগ্রস্ত করতে মাঠে নেমেছে সরকারদলীয় অঙ্গসংগঠন ছাত্রলীগ ক্যাডাররা। তারা ব্যক্তিস্বার্থ চরিতার্থ করার জন্য টেন্ডার প্রক্রিয়ায় বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করছে।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের তথ্যানুযায়ী, ৭০টি কলেজের উন্নয়নে ব্যয় ধরা হয়েছে ৬৫৫ কোটি ১২ লাখ টাকা। এর মধ্যে আসবাবপত্র, পরীক্ষার হল ও আনুষঙ্গিক নির্মাণ কাজে ২১৮ কোটি ৬২ লাখ টাকা ব্যয় করা হবে, হোস্টেল নির্মাণে ২১৬ কোটি ১২ লাখ, একাডেমিক ভবন নির্মাণে ৩৩ কোটি ১৩ লাখ, বিজ্ঞান ভবন নির্মাণে ৩১ কোটি ২২ লাখ, বাণিজ্য ভবনে ১০ কোটি ৬৫ লাখ, কলেজ বাউন্ডারি এবং ভেতরের রাস্তা নির্মাণে ২ কোটি ১০ লাখ, কম্পিউটারের
জন্য ২০ কোটি ৩০ লাখ, অফিস সামগ্রীর জন্য ৩০ কোটি ৫০ লাখ, বিজ্ঞান সামগ্রীর জন্য ৪ কোটি ৯০ লাখ, বইয়ের জন্য ৪ কোটি ৯০ লাখ এবং ৩ কোটি ৭৬ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করা হবে গ্রন্থাগার।
মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতর (মাউশি) সূত্রে জানা যায়, প্রকল্প বাস্তবায়নের লক্ষ্যে চিহ্নিত করা হয়েছে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন সব জেলা সদরে অবস্থিত স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ের ৭০টি সরকারি কলেজকে। এর মধ্যে ৬৪ জেলায় ৬৪টি কলেজ ছাড়াও ঢাকায় চারটি এবং চট্টগ্রামে আছে অতিরিক্ত দুটি কলেজ। দেশের বিপুল জনগোষ্ঠীর উচ্চশিক্ষার সুযোগ এবং এই শিক্ষার মানোন্নয়নে এ ধরনের উন্নয়ন কর্মসূচির দাবি দীর্ঘদিনের। উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষার্থীসহ সারাদেশের লাখ লাখ শিক্ষার্থী এই কলেজগুলোতে পড়ালেখা করলেও বছরের পর বছর ভুগছে চরম আবাসন সমস্যায়। আবার এসব কলেজে আছে অনার্স ও মাস্টার্সের হাজার হাজার শিক্ষার্থী। পৃথক পরীক্ষার হল না থাকায় যে কোনো বর্ষের পরীক্ষা, এমনকি উচ্চ মাধ্যমিকের শিক্ষার্থীদের যে কোনো পরীক্ষার স্থান করে দিতে পুরোপুরি বন্ধ রাখতে হয় কলেজের শিক্ষা কার্যক্রম। ফলে নিয়মিত ছুটির বাইরেও এসব প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা ক্লাস থেকে বঞ্চিত হয় মাসের পর মাস। আবার প্রয়োজনীয় শিক্ষা উপকরণের চরম সঙ্কটও আছে প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে।
মাউশি’র মহাপরিচালক অধ্যাপক নোমান উর রশিদ প্রকল্পের কথা উল্লেখ করে আমার দেশকে বলেন, সরকারের এ উদ্যোগ উচ্চশিক্ষার জন্য এক যুগান্তকারী পদক্ষেপ। যেসব সঙ্কটের কারণে সারাদেশের এসব কলেজের শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে এর মধ্য দিয়ে তার অবসান হবে। উচ্চশিক্ষায় এর সুদূরপ্রসারী প্রভাব পড়বে। টেন্ডার প্রক্রিয়ায় ছাত্রলীগের প্রভাব সম্পর্কে মাউশি ডিজি বলেন, এ বিষয়টি শিক্ষা প্রকৌশল অধিদফতর (ইইডি) জানে। তবে যা শোনা যাচ্ছে তা অবশ্যই খতিয়ে দেখা হবে। আমরা স্বচ্ছ ও নিয়মের মধ্যেই এ কাজটি সম্পন্ন করার চেষ্টা করব।
জানা গেছে, পরিকল্পনা বাস্তবায়নের প্রথম পর্যায়ে টেন্ডার প্রক্রিয়া শুরু করা হয়েছে। এর মধ্যে ১০টি টেন্ডার ছাড়া হয়েছে। কলেজের অবকাঠামোসহ সার্বিক অবস্থা বিবেচনা করে তালিকা তৈরি করা হয়েছে। যে ৭০টি কলেজকে উন্নয়ন পরিকল্পনার আওতায় আনা হয়েছে সেগুলোর মধ্যে রয়েছে—ঢাকা কলেজ, ইডেন কলেজ, সরকারি বদরুন্নেসা কলেজ, সরকারি বাংলা কলেজ, তিতুমীর কলেজ, রাজশাহী সরকারি কলেজ, নাটোরের নবাব সিরাজ-উদ-দৌলাহ সরকারি কলেজ, সিরাজগঞ্জ সরকারি কলেজ, পাবনার সরকারি এডওয়ার্ড কলেজ, কুষ্টিয়া সরকারি কলেজ, চুয়াডাঙ্গা সরকারি কলেজ, ঝিনাইদহের সরকারি কেসি কলেজ, মাগুরার হোসের শহীদ সোহরাওয়ার্দী সরকারি কলেজ, নড়াইল ভিক্টোরিয়া কলেজ, যশোরের সরকারি এমএম কলেজ. সাতক্ষীরা সরকারি কলেজ, খুলনা সরকারি বিএল কলেজ, বাগেরহাটের সরকারি পিসি কলেজ, পিরোজপুরের সরকারি সোহরাওয়ার্দী কলেজ, পটুয়াখালী সরকারি কলেজ, ভোলা সরকারি কলেজ, বরিশালের বিএম কলেজ, গোপালগঞ্জের বঙ্গবন্ধু সরকারি কলেজ, ফরিদপুরের সরকারি রাজেন্দ্র কলেজ, রাজবাড়ী সরকারি কলেজ, মানিকগঞ্জের সরকারি দেবেন্দ্র কলেজ, মুন্সীগঞ্জ সরকারি হরগঙ্গা কলেজ, নারায়ণগঞ্জের সরকারি তোলারাম কলেজ, ঠাকুরগাঁও সরকারি কলেজ, দিনাজপুর সরকারি কলেজ, নিলফামারী সরকারি কলেজ, রংপুরের সরকারি কমার্শিয়াল কলেজ, কুড়িগ্রাম সরকারি কলেজ, গাইবান্ধা সরকারি কলেজ, বগুড়ার সরকারি আযীযুল হক কলেজ, জয়পুরহাট সরকারি কলেজ, নওগাঁ সরকারি কলেজ, চাঁপাইনবাবগঞ্জের নবাবগঞ্জ সরকারি কলেজ, নরসিংদী সরকারি কলেজ, ভাওয়াল বদরে আলম সরকারি কলেজ, টাঙ্গাইলের সরকারি সাদত কলেজ, রাঙ্গামাটি সরকারি কলেজ, খাগড়াছড়ি সরকারি কলেজ, বান্দরবান সরকারি কলেজ, শরীয়তপুর সরকারি কলেজ, সুনামগঞ্জ সরকারি কলেজ, লালমনিরহাট সরকারি কলেজ, মেহেরপুর সরকারি কলেজ, ঝালকাঠি সরকারি কলেজ, বরগুনা সরকারি কলেজ এবং পঞ্চগড়ের সরকারি মকবুলার রহমান কলেজ, জামালপুরের সরকারি আশেক মাহমুদ কলেজ, শেরপুর সরকারি কলেজ, ময়মনসিংহের সরকারি আনন্দমোহন কলেজ, নেত্রকোনা সরকারি কলেজ, কিশোরগঞ্জের গুরুদয়াল সরকারি কলেজ, মাদারীপুরের নাজিমউদ্দিন কলেজ, সিলেটের এমসি কলেজ, মৌলভীবাজার সরকারি কলেজ, হবিগঞ্জের বৃন্দাবন সরকারি কলেজ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া সরকারি কলেজ, কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজ, চাঁদপুর সরকারি কলেজ, লক্ষ্মীপুর সরকারি কলেজ, নোয়াখালী সরকারি কলেজ, ফেনী সরকারি কলেজ, চট্টগ্রাম সরকারি কলেজ, চট্টগ্রাম সিটি কলেজ, চট্টগ্রাম সরকারি কমার্স কলেজ, কক্সবাজার সরকারি কলেজ।

No comments:

Post a Comment