Thursday 3 June 2010

ডিসিসি’র ৭৬ প্রকল্পের কাজ ভাগাভাগি করে নিয়েছে আ’লীগ নেতাকর্মীরা : ঠিকাদারদের অভিযোগ রিটেন্ডার সরকারের আইওয়াশ মাত্র



30/04/2010

মাহমুদা ডলি
ডিসিসি’র প্রায় ৮ কোটি টাকার ৭৬টি প্রকল্পের কাজ ভাগবাটোয়ারা করে নিয়েছেন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। রিটেন্ডারের ওই কাজের ভাগাভাগিতে আবারও ঢাকা মহানগর দক্ষিণের যুবলীগের সভাপতি মোঃ মহিউদ্দিন মহী নেতৃত্ব দিয়েছেন বলে জানা গেছে। ডিসিসি’র একাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারী জানান, অঞ্চল-১/র ওই ৭৬টি প্রকল্পের কাজ আগে যে প্রক্রিয়ায় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের মধ্যে ভাগাভাগি করে দেয়া হয়েছিল ঠিক সেভাবেই কাজ বিতরণ করা হয়েছে। সরকার স্বচ্ছতা প্রকাশের জন্য রিটেন্ডার পুলিশ পাহারা ও নির্বাহী প্রকৌশলীর দফতরে টেন্ডার বাক্স রাখা এগুলো সবই শুধু আইওয়াশ। আগে যেভাবে ওয়ার্ডের এসব কাজ যুবলীগ, তরুণ লীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগের মধ্যে দু-একটি করে ভাগ করা হয়েছিল সেভাবেই রয়েছে বলে অভিযোগ করেন নগর ভবন ও অঞ্চল-১-এর নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন কর্মকর্তা-কর্মচারী।
গতকাল সকালে ডিসিসি’র অঞ্চল-১-এর সায়েদাবাদ অফিসে সরেজমিন পরিদর্শন করে দেখা যায়, এবার গোপনে নয় প্রকাশ্যেই টেন্ডার বাক্স পাহারা দিচ্ছেন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। টেন্ডার বাক্সে শিডিউল জমা দেয়ার সময় বেলা ১২টা পর্যন্ত নির্ধারণ করা হয়েছে। কিন্তু ১১টা পর্যন্ত আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী ছাড়া অন্য কোনো সাধারণ ঠিকাদার শিডিউল জমা দেননি। বেলা সোয়া ১১টার দিকে সাধারণ ঠিকাদার পরিচয় দিয়ে ৬টি শিডিউল জমা দেয় ধলপুরের মেসার্স হায়দার আলী কোম্পানি এবং ডিস্ট্রিলারি রোডের তনিমা এন্টারপ্রাইজ জমা দেয় ৩টি শিডিউল। জমাদানকারী এসব কোম্পানি জানায়, আগেরবারে যখন টেন্ডার হয়েছিল তখন তাদের শিডিউল জমা দেয়ার সুযোগই ছিল না। এবার সাহস করে জমা দিয়েছেন যদি স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় হয় তাহলে তারা পাবেন বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
এসব ঠিকাদার শিডিউল জমা দেয়ার পরপরই ৮৪ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবুল কালাম অনু ও একই ওয়ার্ডের যুবলীগ নেতা রাজার নেতৃত্বে শতাধিক নেতাকর্মীরা নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ আসাদুজ্জামানের অফিস কক্ষের সামনে মহড়া দেয়। এ সময় তিনি অফিসেই ছিলেন। এসব নেতাকর্মীর উপস্থিতিতে গোলাপবাগ তরুণ লীগের ইউনাইটেড কমার্শিয়াল কোম্পানি ও অমিয় এন্টারপ্রাইজসহ যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগের কর্মীরা শিডিউল জমা দেন। এ সময় রাজা দৈনিক আমার দেশকে জানান, তিনি নিজে এবং তার পরিচিত ঠিকাদার ব্যবসায়ীরা শিডিউল জমা দিয়েছেন। কিন্তু এ সময়ে উপস্থিত অন্যান্য ডিসিসি’র কর্মকর্তা-কর্মচারীরা জানান, রাজা এবং আবুল কালাম অনু শিডিউল জমা দেননি শুধু টেন্ডার বাক্স নিজেদের নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য একটু পর পর মহড়া দিচ্ছেন। কতগুলো শিডিউল জমা করেছেন সে ব্যাপারে কোনোকিছুই জানাতে চাননি অঞ্চল-১-এর নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ আসাদুজ্জামান। তবে ডিসিসি’র নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন কর্মকর্তা জানান, আগের প্রক্রিয়া অনুযায়ী মহানগর যুবলীগের সভাপতি মহিউদ্দিন মহীর ফাতেমা এন্টারপ্রাইজ এবং আওয়ামী লীগের দলীয় চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেনের আনোয়ার এন্টারপ্রাইজ কাজগুলো পেয়েছে। তারা ১৬ পার্সেন্ট কমিশন গ্রহণ করে দলের পছন্দের লোকদের মধ্যে ভাগাভাগি করে দিয়েছেন বলে জানা গেছে এবং ডিসিসি’র কিছু দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তার মধ্যে বিষয়টি গোপন রাখায় সাধারণ ঠিকাদাররা প্রতারিত হয়েছেন বলেও জানান। এ ব্যাপারে জানার জন্য যুবলীগ নেতা মহীউদ্দিন মহীর ০১৯১৫৬০১৮০৬ নম্বরে ফোন করলে আমার দেশের সঙ্গে কোনো কথাই বলবেন না বলে জানান। বিষয়টি প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ আবুল কালাম আজাদের কাছে জানতে চাইলে তার হাতে সময় নেই বলে অফিস রুম থেকে চলে যান। ডিসিসি’র সূত্র জানায়, ২০০৯-১০ অর্থবছরের বাজেটের অঞ্চল-১-এর জন্য ৭৬টি প্রকল্পের কাজে ৭ কোটি ৩৫ লাখ টাকার টেন্ডার আহ্বান করা হয়। দুই মাস আগে প্রথমবারের টেন্ডারের ওই কাজ ভাগবাটোয়ারা করে নেন আওয়ামী লীগের কর্মীরা। এ ব্যাপারে আপত্তি জানিয়ে ঢাকা সিটি করপোরেশনের মেয়রের কাছে আবেদন করেন ওই অঞ্চলের কমিশনার ও অন্যান্য সাধারণ ঠিকাদার। এ ঘটনায় ডিসিসি মেয়র সাদেক হোসেন খোকা ওই টেন্ডার বাতিল করে দেন এবং রিটেন্ডারের জন্য রেখে দেন। পরবর্তী সময়ে চলতি মাসেই আবার টেন্ডার আহ্বান করলেও তা আইওয়াশ বলে জানান সাধারণ ঠিকাদার।
http://www.amardeshonline.com/pages/details/2010/04/30/29731

No comments:

Post a Comment