Thursday, 3 June 2010
দুর্নীতি দমন কমিশনের প্রয়োজন নেই : মখা আলমগীর : প্রথম আলো ও ট্রান্সকমের মালিককে দেয়া দুদকের নোটিশ কোথায়?
04/05/2010
স্টাফ রিপোর্টার
দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) প্রয়োজন নেই বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও সরকারি হিসাব সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ড. মহীউদ্দীন খান আলমগীর। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দুই বছরের কর্মকাণ্ডের জন্য দুদককে ক্ষমা চাওয়ার পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, ওই সময় দুদক সংবিধান লঙ্ঘন করে বিশেষ গোষ্ঠীর স্বার্থ রক্ষায় স্বৈরতন্ত্রের তল্পিবাহক হিসেবে কাজ করেছে। গণতান্ত্রিক দেশে এ ধরনের দুদকের কোনো প্রয়োজন নেই। দুদক আইনের সংশোধনকে ইতিবাচক আখ্যায়িত করে মহীউদ্দীন খান বলেন, সরকারের কোনো প্রতিষ্ঠানই পূর্ণ স্বাধীন হতে পারে না। দুদককে নিরঙ্কুুশ ক্ষমতা দেয়া হলে সেনাপ্রধানও নিরঙ্কুশ ক্ষমতা চাইবেন।
গতকাল সোমবার সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত সরকারি হিসাব সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির বৈঠক শেষে ব্রিফিংকালে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে ড. মহীউদ্দীন খান আলমগীর এসব কথা বলেন। ওয়ান ইলেভেনের পর দুদকের কর্মকাণ্ডের কঠোর সমালোচনা করে তিনি প্রশ্ন তোলেন, ওই সময় প্রথম আলো ও ট্রান্সকমের মালিক লতিফুর রহমানকে দুদক যে নোটিশ দিয়েছিল সেই নোটিশ এখন কোথায়? মিডিয়া সেন্টারে অনুষ্ঠিত প্রেস ব্রিফিংয়ে মহীউদ্দীন খান আলমগীর দুদক আইন সংশোধন প্রসঙ্গে বলেন, গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় নিযুক্তিয় কর্তৃপক্ষ নির্বাচিত কর্তৃপক্ষের ওপরে স্থান পেতে পারে না। দুর্নীতি দমন কমিশন, নির্বাচন কমিশন, পাবলিক সার্ভিস কমিশন—এসবই সরকারের নিযুক্তিয় কর্তৃপক্ষ। এগুলোর স্থান কখনোই সংসদের উপরে হতে পারে না। সেটা হলে স্বৈরতন্ত্রকে প্রশ্রয় দেয়া হবে।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি আরও বলেন, দুদককে অবশ্যই আইন অনুযায়ী কাজ করতে হবে। সংবিধান অনুযায়ী কোনো সরকারি সংস্থা সরাসরি বিদেশি সাহায্য নিতে পারে না। কিন্তু তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে দুদক সরাসরি বিদেশি সাহায্য নিয়েছে। এমনকি ওই সময়ের দুদক চেয়ারম্যান হাসান মশহুদ চৌধুরী বিনা টেন্ডারে দুদকের আসবাবপত্র বিক্রি করে দিয়েছেন। এর বিচার কে করবে? তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, যারা কোটি কোটি টাকা বিদেশে পাচার করল কেন তাদের কিছু হলো না?
তিনি বলেন, ফখরুদ্দীন-মইনউদ্দিনের আমলে দুদক বিনা দোষে রাজনীতিবিদদের হয়রানি করেছে। শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে বিবৃতি দেইনি বলে আমাকে গ্রেফতার করে সাজা দিয়েছে। কিন্তু কোনো অভিযোগ প্রমাণ করতে পারেনি। দাঁত-নখওয়ালা কোনো সংস্থাকে বিনা দোষে কাউকে কামড়ানোর ক্ষমতা আমরা দিতে চাই না।
দুদক আইনের সংশোধন সম্পর্কে অধ্যাপক মোজাফ্ফর আহমেদের বক্তব্যের জবাবে মহীউদ্দীন খান আলমগীর বলেন, আইনের ফাঁকফোকর নয়, আইনের মাধ্যমেই আমরা মুক্ত হয়ে জনগণের রায়ে নির্বাচিত হয়ে সংসদে এসেছি। অথচ মোজাফফর আহমেদ বিদেশি টাকার বিনিময়ে জনগণের সমর্থন ছাড়াই কথা বলছেন। আইনের ফাঁকফোকর গলিয়ে অনেক দুর্নীতিবাজ সংসদ সদস্য হয়ে গেছেন—এমন কথা বলে অধ্যাপক মোজাফ্ফর আদালত অবমাননা করেছেন।
সংবিধান লঙ্ঘনকারীদের বড় দুর্নীতিবাজ আখ্যায়িত করে তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, রাষ্ট্রের সংবিধানকে লঙ্ঘন করে গোষ্ঠীস্বার্থে প্রশাসনকে স্বৈরাচারী কায়দায় পরিচালনাকারী মইন উ আহমেদের বস্তাপচা বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করতে তিনি (অধ্যাপক মোজাফ্ফর আহমেদ) গলফ ক্লাবে গিয়েছিলেন কোন নীতি-আদর্শ নিয়ে? তিনি যখন ইনস্টিটিউট অব বিজনেস ম্যানেজমেন্টে চাকরি করতেন তখন ওই প্রতিষ্ঠানের টাকা কিভাবে তার ব্যক্তিগত একাউন্টে জমা হয়েছিল সেটা আজও জাতি জানতে পারল না। তার কোনো নীতি নেই, তিনিই সবচেয়ে বড় দুর্নীতিবাজ।
উল্লেখ্য, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে ম.খা. আলমগীরকে আটক করে যৌথবাহিনী। দুর্নীতির দায়ে ১৩ বছরের সাজাও হয় তার। পরে তিনি জামিনে বেরিয়ে এসে আওয়ামী লীগের মনোনয়নে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর তার দুর্নীতির মামলাটি বাতিল হয়ে যায়।
এদিকে গতকালের বৈঠক সম্পর্কে ম.খা. আলমগীর জানান, বৈঠকে স্থানীয় সরকার বিভাগের ১৯৯১ থেকে ’৯৬ সাল পর্যন্ত সময়ে ৫ জন নির্বাহী প্রকৌশলীর দুর্নীতি, সোনালী ব্যাংকের রফতানির বিপরীতে ঋণপত্রের (এলসি) বিদেশি মুদ্রা আত্মসাত্, একই ব্যাংকের ঋণ আদায়ে ব্যর্থতা এবং রূপালী ব্যাংকের আমানতকারীর টাকা আত্মসাতের বিষয়ে আলোচনা হয়। দুদকের অডিট রিপোর্ট নিয়েও আলোচনা হয়েছে বলে তিনি জানান।
তিনি বলেন, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগ ১৯৯১ সাল থেকে ’৯৬ সাল পর্যন্ত ৫ জন নির্বাহী প্রকৌশলী ৫২ কোটিরও বেশি টাকা নিয়ম অনুযায়ী জমা দেননি। কমিটির পক্ষ থেকে শুধু ওই ৫ জন নির্বাহী প্রকৌশলী নয়, ৬৪ জেলার নির্বাহী প্রকৌশলীর দফতর ওই সময় দরপত্র, জরিমানা এবং জামানতের টাকা জমা দেয়নি। এক্ষেত্রে দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় পদক্ষেপ নেয়ার সুপারিশ করা হয়েছে। তার মতে, মন্ত্রী এবং সচিবদের যথাযথ তদারকির অভাবেই ওই সময়ে দুর্নীতি হয়েছে।
তিনি বলেন, ২০০২ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত সোনালী ব্যাংকের রফতানি বিলের বিপরীতে যে পরিমাণ বিদেশি মুদ্রা আসার কথা ছিল তা আসেনি। আমরা তদন্ত করে দেখেছি, ব্যাংকের একশ্রেণীর কর্মকর্তা ওই টাকা বিদেশে রেখে নিজেদের ভোগ-বিলাসে ব্যয় করেছে। ওইসব কর্মকর্তার বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণের পাশাপাশি মামলা দায়ের করারও সুপারিশ করা হয়েছে।
সভাপতি ড. মহীউদ্দীন খান আলমগীরের সভাপতিত্বে বৈঠকে কমিটির সদস্য অধ্যাপক মোঃ আলী আশরাফ, এম কে আনোয়ার, মুহা. ইমাজউদ্দিন প্রাং, মোহাম্মদ ছায়েদুল হক, এ. কে. এম. রহমতউল্লাহ, খান টিপু সুলতান, মেজর জেনারেল (অব.) আবদুস সালাম, নারায়ণ চন্দ্র চন্দ এবং মোছা. ফরিদা আখতার বৈঠকে অংশগ্রহণ করেন।
http://www.amardeshonline.com/pages/details/2010/05/04/30226
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
No comments:
Post a Comment