Wednesday, 23 February 2011

৭০ কোটি টাকার জমির অবৈধ লিজ পেলেন আ’লীগ নেতা : আইনের তোয়াক্কা করেনি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়


মাহমুদা ডলি

আইনের তোয়াক্কা না করে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের প্রায় এক একর জমি নামমাত্র মূল্যে লিজ দেয়া হয়েছে আওয়ামী লীগের এক নেতাকে। প্রায় ৭০ কোটি টাকা মূল্যের এ সম্পত্তি মন্ত্রণালয়ের উপসচিব লিজ দিয়েছেন। মোটা অঙ্কের উেকাচের বিনিময়ে স্থানীয় এমপির সহযোগিতায় বাণিজ্যিক প্লটকে দোকানের স্কয়ারফিট হিসেবে লিজ দেয়া হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
অন্যদিকে ডিসি অফিস জানিয়েছে, ওই জায়গা অবৈধ দখলদারদের কাছ থেকে উদ্ধারের জন্য বর্তমানে মামলা চলমান রয়েছে। এ অবস্থায় কোনোভাবেই জমি লিজ দেয়া যায় না। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের উপসচিব মো. আতাউর রহমান ফোনে আমার দেশকে জানান, ঊর্ধ্বতন মহলের নির্দেশে জমি লিজ দেয়া হয়েছে। মামলা চলমান অবস্থায় ডিসি অফিস লিজ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করবে কিনা তা তাদের ব্যাপার। মামলা চলমান অবস্থায় বাণিজ্যিক প্লট কীভাবে বন্দোবস্ত পেলেন সে ব্যাপারে জানতে চাইলে লিজগ্রহীতা ‘একতা ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি লৌহজং থানা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি মো. মহসিন গাজী জানান, সম্পত্তি ডিসি অফিসের নয়, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের। আর বাণিজ্য মন্ত্রণালয় যেহেতু সরাসরি লিজ দিয়েছে সুতরাং জমি ডিসি অফিসকে দিতেই হবে বলে জানান আওয়ামী লীগের ওই নেতা। সরেজমিন পরিদর্শনের সময় ব্যবসায়ী ও এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বর্তমানে ওই এলাকায় শতাংশ জমির মূল্য প্রায় ১ কোটি টাকা। তাতে উপসচিবের স্বাক্ষরে লিজ দেয়া ওই জমির বর্তমান মূল্য প্রায় ৭০ কোটি টাকা। ওই জমি বাণিজ্যিক প্লট ভিত্তিতে লিজ না দিয়ে দোকানের স্কয়ারফিট হিসেবে লিজ দেয়া হয়েছে। লিজ দেয়ার অর্থও ডিসি অফিস গ্রহণ করেনি বলে জানিয়েছে সূত্রটি। বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, নগরীর সদরঘাটের ২৫ চিত্তরঞ্জন এভিনিউ এলাকায় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের নিয়ন্ত্রণাধীন পরিত্যক্ত বাণিজ্যিক প্লটের ৭৮ শতাংশ ৩১ অজুতাংশ জমি রয়েছে। তার মধ্যে জনতা হকার্স মার্কেটকে ডিসি অফিস ২৬ দশমিক ৯২ শতাংশ জমি লিজ দিয়েছে। যার হালনাগাদ ভাড়া জনতা হকার্স মার্কেট সমিতি ডিসি অফিসকে পরিশোধ করে আসছে। কিন্তু বাকি প্রায় ৫২ শতাংশ জমি রয়েছে অবৈধ দখলদারদের কাছে। এ জমি অবৈধ দখলদারদের কাছ থেকে উদ্ধারের জন্য ৩৬/২০১০নং দেওয়ানি মামলা আদালতে বিচারাধীন। ২০১০ সালের ২ ফেব্রুয়ারি তৃতীয় যুগ্ম জেলা জজ আদালতে জেলা প্রশাসক বাদী হয়ে মামলা করেন। কিন্তু সম্পত্তি উদ্ধারের জন্য আদালতে মামলা বিচারাধীন থাকা অবস্থায় একতা ব্যবসায়ী সমিতির নামে স্থানীয় এমপি মিজানুর রহমান খান দিপুর সুপারিশে উপসচিব নিজে সরাসরি এ জমি লিজ দিয়েছেন একতা ব্যবসায়ী সমিতিকে।
ডিসি অফিস জানায়, এর আগে মন্ত্রণালয় ওই জায়গার অবস্থা জানতে চাইলে ‘মামলা চলমান অবস্থায় রয়েছে লিজ দেয়া যাবে না’ মর্মে প্রতিবেদন পাঠানো হয়েছিল। গত ৬ নভেম্বর ২০১০ সালে জেলা প্রশাসকের স্বাক্ষরে ডেপুটি কালেক্টর (রাজস্ব) আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামানের সরেজমিন প্রতিবেদনসহ আদালতে মামলার কথা মন্ত্রণালয়ে জানানো হয়েছে। তদন্ত প্রবিবেদনে বলা হয়েছে, একতা ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মহসিন গাজী ৭৮ দশমিক ৩১ শতাংশ ভূমির মধ্যে ৮ শতাংশ বাদে অবশিষ্ট ৭০ দশমিক ৩১ শতাংশ ভূসম্পত্তি বরাদ্দ চেয়েছেন। কিন্তু ওই সম্পত্তির মধ্যে আরএস ও মহানগর জরিপে ২৬ দশমিক ৯২ শতাংশ ভূসম্পত্তি সরকারের অনুকূলে রেকর্ডভূক্ত এবং তা ডিসি অফিসের ভোগ দখলেই রয়েছে। অবশিষ্ট সম্পত্তি উদ্ধারের জন্য দেওয়ানি ৩৬/২০১০নং মামলা আদালতে বিচারাধীন। কিন্তু জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের এ তদন্ত প্রতিবেদন মূল্যায়ন না করে উপসচিব মো. আতাউর রহমান ২০১০ সালের ২৩ ডিসেম্বর একতা ব্যবসায়ী সমিতিকে লিজ দিয়েছেন।
ডিসি অফিস ও সচিবালয়ের একাধিক সূত্র জানায়, যে নিয়মে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে তা সম্পূর্ণ নিয়মনীতিবহির্ভূত। বাণিজ্যিক প্লটের জমি দোকানের স্কোয়ারফিট অনুযায়ী লিজ দেয়া যায় না। মার্কেট হিসেবে লিজ দিতে হলে আগে আদালতের রায় নিয়ে মার্কেট নির্মাণ করে পরে স্কোয়ারফিট হিসাবে লিজ দেয়ার নিয়ম রয়েছে। কিন্তু বাণিজ্যিক প্লট এভাবে বরাদ্দ দেয়ারও নিয়ম নেই বলে জানিয়েছে একাধিক সূত্র।
ডিসি অফিস সূত্র জানায়, ভূমি মন্ত্রণালয়, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়সহ অধিকাংশ মন্ত্রণালয়ের জায়গা আইন ও নিয়মানুযায়ী বন্দোবস্ত কিংবা বরাদ্দ দেবে শুধু ডিসি অফিস। সরাসরি বন্দোবস্ত দেয়ার এখতিয়ার বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের নেই, তবে সুপারিশ করতে পারে।
সদরঘাট এলাকায় সরেজমিন ঘুরে মায়াকাটরার বিভিন্ন ব্যবসায়ী সংগঠনসহ অন্য মার্কেটের ব্যবসায়ীরা জানান, একতা ব্যবসায়ী সমিতির কোনো ব্যবসা প্রতিষ্ঠান নেই। জনতা হকার্স মার্কেটের একটি দোকান ভাড়া নিয়ে একতা ব্যবসায়ী সমিতির অফিস খুলে বসেছে। এমনকি ঢাকা মহানগরীর কোনো মার্কেটে তাদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান না থাকলেও মন্ত্রী-এমপিদের প্রভাব দেখিয়ে বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির সহ-সভাপতির পদ দখল করে রেখেছে সমিতি। ১৫-১৬ বছর আগে পুরনো কাপড় ব্যবসায়ীর ট্রেড লাইসেন্স দেখিয়ে তারা দখল-বাণিজ্য করে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে সমিতির বিভিন্ন সদস্যের কাছ থেকে। এ নিয়ে অনেকে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
এসব ব্যাপারে ঢাকার জেলা প্রশাসক মো. মহিবুল হক আমার দেশকে জানান, ওই জায়গা থেকে অবৈধ দখলদার উচ্ছেদের জন্য আদালতে মামলা রয়েছে। কাউকে লিজ দেয়ার ব্যাপারে তিনি কিছু জানেন না

No comments:

Post a Comment