Thursday 3 June 2010

বিমানবন্দর সম্প্রসারণ সম্ভব হবে না : ৪৩৪ বিঘা জমি বিদেশির হাতে তুলে দিতে মরিয়া প্রভাবশালীরা



04/05/2010
কাদের গনি চৌধুরী
ঢাকায় হযরত শাহ্জালাল (র.) আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর লাগোয়া ৪৩৪ বিঘা সরকারি জমি বিদেশি কোম্পানির হাতে তুলে দিতে মরিয়া হয়ে উঠেছে সরকারের প্রভাবশালী একটি মহল। বর্তমান বাজারে এ জমির মূল্য ১৩ হাজার কোটি টাকারও বেশি বলে বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটন মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে। এ জমি সরকারের হাতছাড়া হয়ে গেলে হযরত শাহ্জালাল (র.) আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর সম্প্রসারণের আর কোনো সুযোগ থাকবে না। সূত্র জানায়, প্রথমদিকে বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটি জাতীয় স্বার্থপরিপন্থী এ সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে অবস্থান নিলেও বর্তমানে তারা আর সে অবস্থানে নেই। একাধিক মন্ত্রীও তদবির করছেন জমিটি বিদেশি ওই কোম্পানির হাতে তুলে দিতে। শুধু তাই নয়, এরই মধ্যে সরকারের এক প্রভাবশালী মন্ত্রীর প্রতিষ্ঠান বিদেশি ওই কোম্পানির সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয়েছে এ জমিটি পাইয়ে দেয়ার জন্য। তবে বিমান ও পর্যটনমন্ত্রী জিএম কাদের এখনও বিমানবন্দরের জন্য অপরিহার্য এ জমি বিদেশি কোম্পানির হাতে তুলে না দেয়ার পক্ষে একাট্টা অবস্থানে অটুট আছেন।
বিমানবন্দরের জন্য অপরিহার্য এ জমি বিদেশি কোম্পানিকে দেয়া হবে কি হবে না এ নিয়ে বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটন মন্ত্রণালয় এবং সংসদীয় স্থায়ী কমিটির মধ্যে টানাপড়েন শুরু হয়েছে। এনিয়ে শুধু সংসদীয় কমিটির বৈঠকে ‘হটটকই’ হয়নি, একাধিকবার চিঠিও চালাচালি হয়েছে। সর্বশেষ উভয়পক্ষ একমত হয়েছে যে, প্রধানমন্ত্রীর সিদ্ধান্ত অনুযায়ী কাজ হবে। এরপর থেকে সরকারের উচ্চপর্যায়ে ব্যাপক লবিং শুরু করেছে মহলটি। শুরু হয়েছে টাকার ছড়াছড়ি। সূত্র জানায়, এরই মধ্যে সরকারের প্রভাবশালীদের ম্যানেজ করে ফেলেছে ওই বিদেশি কোম্পানির এ দেশীয় এজেন্টরা। খুব শিগগিরই তারা চুক্তি অনুযায়ী ৩৯০ বিঘা জমি বিদেশি কোম্পানির হাতে তুলে দেয়ার প্রস্তাব নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর কাছে যাবেন।
জানা যায়, ন্যাম সম্মেলনকে সামনে রেখে গত আওয়ামী লীগ সরকারের সময় ১৯৯৯ সালে জিয়া আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের প্রবেশপথের পূর্ব ও পশ্চিম পাশে ১৪৪ দশমিক ৮০ একর (৪৩৪ বিঘা) জমির ওপর একটি পাঁচতারা হোটেল, একটি তিনতারা হোটেল, একটি কান্ট্রি ক্লাব ও এশিয়ার সর্ববৃহত্ ১৮ হোলবিশিষ্ট গলফ কোর্ট নির্মাণের পরিকল্পনা করা হয়। ওই বছরের ডিসেম্বরে হোটেল, কান্ট্রি ক্লাব ও গলফ কোর্স নির্মাণের জন্য লিজ নিয়ে কাজের দরপত্র আহ্বান করা হয় কয়েকটি অখ্যাত পত্রিকায়। তখন সাতটি দেশ দরপত্রে অংশ নিলেও তত্কালীন বিমানমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনের ছেলে জড়িত থাকার সুবাধে সিঙ্গাপুরের নিবন্ধনকারী কোম্পানি ইপকো ইন্টারন্যাশনালকে কাজটি দেয়া হয়। এ সময় তত্কালীন বিমানমন্ত্রীর ছেলে জড়িত থাকায় ইপকো ইন্টারন্যাশনালের সঙ্গে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের একটি অস্বচ্ছ ও অসম চুক্তি স্বাক্ষর হয়। চুক্তির শর্ত অনুযায়ী ১৩ হাজার কোটি টাকার এ সরকারি জমি লিজ দিয়ে সরকার ৬০ বছরে পাবে মাত্র ১০৫ কোটি ৩০ লাখ টাকা। তবে জমিটি লিজ দিলে বিমানবন্দরটি সম্প্রসারণের কোনো সুযোগ থাকবে না। ফলে এ বিমানবন্দরটি একসময় অকার্যকর হয়ে পড়বে। এতে দেশের বড় ক্ষতি হবে।
সূত্র জানায়, চুক্তিতে বলা হয়, লিজ বাবদ বছরে ৩ লাখ ২৫ হাজার মার্কিন ডলার ভাড়া এবং মোট বিক্রির দেড় শতাংশ আয় বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষকে ৬০ বছরে পরিশোধ করা হবে। অর্থাত্ এতে সর্বমোট পাওয়া যাবে ১০৫ কোটি ৩০ লাখ টাকার মতো। অথচ ওই সময় মালেশিয়া, ফ্রান্স ও সিঙ্গাপুরের তিনটি কোম্পানি ৪০ বছরের জন্য লিজ নিয়ে সরকারকে প্রায় ২৫০ কোটি টাকা দেয়ার প্রস্তাব দিয়েছিল। কিন্তু তখন এসব প্রস্তাব গ্রহণ করা হয়নি।
আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতা ছাড়ার পর ২০০০ সালের শেষদিকে তত্কালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আইন ও বিমান মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত উপদেষ্টা ব্যারিস্টার সৈয়দ ইশতিয়াক আহমেদ এ চুক্তিটি বাতিলের উদ্যোগ নেন। তিনি আইনি মতামতের জন্য ফাইলটি অ্যাটর্নি জেনারেলের দফতরে পাঠান। তখন সিদ্ধান্ত নেয়া হয়, অসম চুক্তিটি বাতিল অথবা সরকারের স্বার্থ রক্ষা করে আবার চুক্তি করতে হবে। ফাইলটি মন্ত্রণালয়ে আসার কিছুদিন পর নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ওই নির্বাচনে বিএনপি ক্ষমতায় আসে। বিএনপি সরকারের বিমান প্রতিমন্ত্রীও ম্যানেজ হয়ে যান। আওয়ামী লীগ সরকারের সময় লিজ নেয়া জায়গায় কাজও শুরু করে দেন তারা। বিমানবন্দরের প্রবেশমুখের পশ্চিম পাশে বিশাল সাইনবোর্ড টানিয়ে দেয় ইপকো। বিশাল সাইনবোর্ডে লেখা ছিল ‘ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেল অ্যান্ড রিসোর্ট,’ ‘হলিডে ইন হোটেল অ্যান্ড শপিং অর্কিং।’ তখন এ চুক্তি নিয়ে কথা উঠলে বিএনপি সরকার চুক্তি বাতিলের উদ্যোগ নেয়। ইপকোর পক্ষে-বিপক্ষে দুটি গ্রুপ হয়ে যায়। ফলে বেকায়দায় পড়ে যায় ইপকো।
সূত্র জানায়, ইপকোর সঙ্গে চুক্তি অনুযায়ী ২০০১ সাল থেকে ২০০৫ সালের মধ্যে সব কাজ শেষ করার কথা। কিন্তু তারা তিনটি ভবনের কিছু অংশ নির্মাণের পর কাজ বন্ধ করে দেয়া হয়।
১/১১-এর পর তত্ত্বাবধায়ক সরকার দায়িত্ব নিয়ে এ চুক্তি যথাযথ হয়েছে কিনা একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে। বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব ফখরুল ইসলামের নেতৃত্বে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি ২০০৮ সালের আগস্টে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করে। তদন্ত প্রতিবেদনে সিঙ্গাপুরের ইপকো ইন্টারন্যাশনালের সঙ্গে লিজে অস্বচ্ছতা, দু’বছর ধরে কাজ বন্ধ থাকা, প্রায় ১১ হাজার কোটি টাকার সম্পত্তি মাত্র ১০৫ কোটি টাকায় ৬০ বছরের জন্য দেয়া লিজ চুক্তির বিভিন্ন ত্রুটি ও অসামঞ্জস্যতা তুলে ধরা হয়। এরপর তত্ত্বাবধায়ক সরকার চুক্তি অনুসারে সময় মতো কাজ সম্পন্ন করতে না পারায় চুক্তি বাতিলের সিদ্ধান্ত নেয়।
এরপর আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর তাদের সময় সম্পাদিত অস্বচ্ছ চুক্তি অনুযায়ী ৪৩৪ বিঘা জমি ইপকোর হাতে তুলে দিতে মরিয়া হয়ে উঠেছে। উল্লেখ্য, গত আওয়ামী লীগ সরকারের বিমানমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন এমপি (যার সময় এ চুক্তি হয়েছিল) বর্তমানে তিনি বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি। কমিটির সভাপতি হিসেবে তিনি ৩১ আগস্ট বিমানমন্ত্রীকে লেখা এক চিঠিতে বলেন, ‘বিগত ২৫/০৮/২০০৯ তারিখে বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সপ্তম বৈঠকের পর আমার গোচরীভূত হয়েছে যে, ইপকো একটি একক প্রতিষ্ঠান নয়। যেহেতু কমিটির সদস্যরা অসমাপ্ত হোটেল দুটির অসমাপ্ত কাজ দ্রুতগতিতে সমাপ্ত করার পক্ষে, যার সঙ্গে আপনিও একমত। এছাড়াও সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায়েও হোটেল দুটির অসমাপ্ত কাজ সম্পন্ন করার বিষয়ে একমত।’ ওই চিঠিতে তিনি ইপকোকে কাজ সমাপ্ত করার সুযোগ দেয়ার জন্য প্রকল্প সমাপ্তির প্রকৃত সময় ৩ বছর পর্যন্ত বাড়ানোরও সুপারিশ করেন। অথচ সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সপ্তম বৈঠকের সিদ্ধান্ত ছিল এরকম : ‘গলফ কোর্স ও কান্ট্রি ক্লাবের বরাদ্দকৃত জায়গা ভবিষ্যতে বিমানবন্দর সম্প্রসারণের জন্য অতীব প্রয়োজন বিধায় তা ফেরত আনার জন্য ডেভেলপার কোম্পানির সঙ্গে আইনগত দিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে আপাতত অন্য কোনো প্রদক্ষেপ না নিয়ে সমঝোতার লক্ষ্যে আলোচনার মাধ্যমে মীমাংসা করতে হবে।’
জানা যায়, ১৯৯৬ সালের এপ্রিলে সিএএবি হোটেল নির্মাণের বিষয়ে পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়। ১৯৯৮ সালে টেন্ডার আহ্বান করা হয়। ৭টি প্রতিষ্ঠান তাদের অফার পেশ করে। পরবর্তী সময়ে বিওটি অফার চাওয়া হয়। ১০টি প্রতিষ্ঠানকে (আগের ৭টিসহ) পত্র দেয়া হলে ৮টি প্রতিষ্ঠান বিওটি পদ্ধতিতে অফার পেশ করে।
এ বিষয়ে আইন মন্ত্রণালয়ের মতামত চাওয়া হলে ১৯৯৯ সালের ১১ মে আইন মন্ত্রণালয় জানায়, বাস্তবতার নিরিখে আইনগত জটিলতার প্রশ্ন আছে বলে মনে হয় না। আইন মন্ত্রণালয়ের ক্লিয়ারেন্স পাওয়ার পর ইপকো’র সঙ্গে একটি ফলপ্রসূ বৈঠক হয়। ইপকো তাদের একটি ড্রাফট চুক্তি পেশ করলে প্রাথমিক পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর প্যানেল আইনজীবী ব্যারিস্টার রফিকুল হককে আইনগত দিক পরীক্ষার জন্য দায়িত্ব দেয়া হয়। তিনি আরবিট্রেশন ক্লসসহ কয়েকটি ক্লস-এর সংশোধনী আনেন এবং আরও আলোচনার মাধ্যমে বিষয়টি নিষ্পত্তি করা আবশ্যক বলে জানান। আইনজ্ঞ কর্তৃক প্রদত্ত মতামতসহ খসড়া চুক্তিপত্র ইপকো সিঙ্গাপুরে পাঠালে তারা নতুন করে একটি হেড অব এগ্রিম্যান্ট-এর খসড়া কপি প্রেরণ করেন এবং ইপকোর প্রতিনিধি ৪-৩-২০০০ তারিখে ঢাকায় আসেন। ৫-৩-২০০০ তারিখে সিএএবি’র চেয়ারম্যানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় উভয় পক্ষের সম্মতি অনুযায়ী হোটেল নির্মাণের বিষয়ে প্রাথমিক পদক্ষেপ হিসেবে হেড অব এগ্রিম্যান্ট স্বাক্ষরিত হয়। এ সংক্রান্ত সারসংক্ষেপ ৪ এপ্রিল ২০০০ তারিখে তত্কালীন প্রধানমন্ত্রী অনুমোদন করেন।
চুক্তির প্রধান প্রধান শর্তগুলো নিম্নরূপ :
বিওটি পিরিয়ড ৬০ বছর। দুটি হোটেলের জন্য ১০ একর এবং গলফ কোর্স ও কান্ট্রি ক্লাবের জন্য ১৩৬ একর জমি ইপকো’কে লিজ দেয়া হবে। ন্যাম সম্মেলনের আগে পাঁচতারকা হোটেলের ২৫০টি কক্ষ সব সুবিধাসহ ইপকো’কে সম্পন্ন করতে হবে, অন্যথায় ১৫,০০০ ইউএস ডলার ইপকো’কে প্রতি মাসে বিলম্বের জন্য Compensation দিতে হবে।
হোটেলের ১০ একর জমির বিপরীতে ইপকো বার্ষিক ২,২৫,০০০.০০ (দুই লাখ পঁচিশ হাজার ইউএস ডলার) সিএএবি’কে প্রদান করবে এবং প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নের নিশ্চয়তাস্বরূপ Performance Guarantee-এর পরিবর্তে জামানত হিসেবে এক বছরের লিজ রেন্টের সমপরিমাণ অর্থ অগ্রিম প্রদান করবে। গল্ফ কোর্স এরিয়া এয়ারপোর্ট সমপ্রসারণের জন্য ভবিষ্যতে প্রয়োজন হতে পারে বিধায় বিওটি পিরিয়ড ৬০ বছর থাকলেও ২৫ বছর ব্যবহারের পর সিএএবি ১০ বছরের অগ্রিম নোটিশে গলফ কোর্স এরিয়া থেকে ইপকো কর্তৃক ব্যবহারের অনুমতি প্রত্যাহার করতে পারবে। ইপকো সমগ্র প্রকল্পটি ৭ (সাত) বছরের মধ্যে সম্পন্ন করবে এবং সমগ্র প্রকল্পের Gross Revenue-এর ১.৫% সিএএবি’কে বার্ষিক ভিত্তিতে প্রদান করবে। চুক্তির শর্ত ইপকো কর্তৃক প্রতিপালিত হচ্ছে কিনা এ বিষয়ে প্রতিবেদন দেয়ার জন্য মন্ত্রণালয় থেকে গত ১০ জুলাই ২০০১ তারিখে পত্র দেয়া হয়।
ইপকো কর্তৃক হোটেল নির্মাণ শুরু না করা, নিরাপত্তা জামানত জমা না দেয়া এবং ভাড়ার টাকা পরিশোধ না করার কারণে ইপকো’র সঙ্গে বাস্তবায়নাধীন তিনটি চুক্তির আওতাধীন নির্মাণ কাজের Land Lease চুক্তি বাতিল করে। সিএএবি’র ২৩-৮-২০০১ তারিখের Land Lease চুক্তি বাতিলের প্রেক্ষিতে ইপকো জানায়, সিএএবি ইপকো’র তিনটি আলাদা কোম্পানির সঙ্গে আলাদা আলাদা রেজিস্টার্ড চুক্তি করলেও শুধু একটি চিঠিতে তিনটি আলাদা চুক্তি বাতিল করেছে, যা আইনের দৃষ্টিতে গ্রহণযোগ্য হতে পারে না।
http://www.amardeshonline.com/pages/details/2010/05/04/30225

No comments:

Post a Comment