Tuesday 26 April 2011

সখীপুরে বঙ্গবন্ধু ক্যাডেট কলেজের নামে জমি দখল
















আনোয়ার কবির, সখীপুর (টাঙ্গাইল)

সখীপুর উপজেলা সদর থেকে ২০ কিলোমিটার দূরে উপজেলার সীমান্তবর্তী গ্রাম কালমেঘা। ওই গ্রামের ভেতর দিয়ে বাঁশবাড়ি পাকা রাস্তা ধরে যেতেই চোখে পড়ে ‘বঙ্গবন্ধু ইন্টারন্যাশনাল রেসিডেন্সিয়াল ক্যাডেট কলেজ অ্যান্ড ইউনিভার্সিটি’ লেখা একটি সাইনবোর্ড। সাইনবোর্ডের উপরের অংশে রাষ্ট্রীয় সম্পত্তি শব্দটিও জুড়ে দেয়া আছে। সাইনবোর্ড থেকে ১শ’ গজ উত্তর দিকে যেতেই দেখা হয় মন্টুর সঙ্গে। পরিচয় জিজ্ঞেস করতেই তিনি নিজেকে ওই প্রতিষ্ঠানের রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে রয়েছেন বলে জানান। তিনি জানান, প্রজেক্টের ইনচার্জ হচ্ছেন জাহাঙ্গীর আলম। প্রতিষ্ঠানটি কে করছেন এর জবাবে তিনি এটি রাষ্ট্রীয় সম্পদ বলে দাবি করেন। তিনি আরও বলেন, এর সঙ্গে বর্তমান সরকারের ১০ জন মন্ত্রী জড়িত। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের কর্মকর্তা সুব্রত রায় এর দেখাশোনা করছেন। তবে খান মোহাম্মদ হোসেন প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান বলে জানান। সাংবাদিক পরিচয় জানতে পেরে তিনি এ বিষয়ে আর কথা বলতে চাননি। চেয়ারম্যানের ফোন নম্বর চাইলে তিনি নম্বর দেয়া নিষেধ বলে জানান। তবে তিনি প্রজেক্টটি বৈধ দাবি করে চেয়ারম্যানের অনুমতি নিয়ে তার ফোন নম্বরসহ এর সব কাগজপত্র পরে পৌঁছে দেয়া হবে বলে জানান।
প্রজেক্টের ভেতর গিয়ে দেখা যায়, ১১ জন কর্মচারী রয়েছেন। তারা কেউ এ এলাকার নন। প্রকল্পটির ভেতরে অর্ধনির্মিত ৪টি টিনসেড বিল্ডিং, ১টি পুকুর, নামহীন একটি ভিত্তিপ্রস্তর রয়েছে। একটি ভবনের একাংশে মন্টু মিয়াসহ কর্মচারীরা থাকেন। ওই ভবনের ওপরে জাতীয় পতাকা উড়ছিল। একটু পরেই পতাকাটি নামিয়ে ফেলা হয়।
জমির মালিক ও থানা পুলিশের একটি প্রতিবেদন এবং স্থানীয় লোকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, টাঙ্গাইল জেলার মির্জাপুর উপজেলার ওয়াসিকহেলা গ্রামের খান মোহাম্মদ হোসেন বিগত জোট সরকারের আমলে ইন্টারন্যাশনাল কলেজ অ্যান্ড ইউনির্ভাসিটি প্রতিষ্ঠার জন্য সখীপুর উপজেলার কালমেঘা গ্রামের আবু আহাম্মদ এবং তার দুই ছেলে আবদুল বারেক ও আবদুল মান্নানের ১৭ একর জমি কেনার সিদ্ধান্ত নেন। ২০০৫ সালের ২১ ডিসেম্বর কেএম হোসেন একর প্রতি ৭ লাখ টাকা হারে ওই তিন জমির মালিকের ১৭ একর জমি কিনবে এই মর্মে ১৫০ টাকার ননজুডিশিয়াল স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর নেন। শর্ত ছিল, তিন মাসের মধ্যে টাকা পরিশোধ করে প্রতিষ্ঠানের নামে জমি দলিল করে নেবেন এবং জমির মালিকরা ওই প্রতিষ্ঠানের পরিচালক থাকবেন। কিছুদিন পর কেএম হোসেন জমির মালিকদের জানান, আমেরিকা, ইরান, আবুধাবি, সৌদিআরবসহ বিশ্বের কয়েকটি দেশ থেকে ৫/৭শ’ কোটি টাকা অনুদান পাওয়া যাবে। তবে এর জন্য প্রতিষ্ঠানের ৩০% নির্মাণ কাজ দেখাতে হবে। তার কথামত ওই জমিতে ৪টি টিনসেড বিল্ডিংয়ের নির্মাণ কাজ ৪০% সম্পন্ন করা হয়। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের বিল পরিশোধ না করায় প্রতিষ্ঠানটির কাজ বন্ধ হয়ে যায়। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান বিল পরিশোধের চাপ দিলে তাদের চেক প্রদান করা হয়। চেকটি ডিজওনার হলে তারা মামলা করেন। ঢাকা জজকোর্টে এ সংক্রান্ত দুটি মামলা রয়েছে।
এক পর্যায়ে কেএম হোসেন নিজেকে বিএনপির প্রথম সারির নেতা দাবি করে জমির মালিকদের স্বাক্ষর করা স্ট্যাম্পে জমির টাকা পরিশোধ করার কথা লিখে নিয়ে প্রতিষ্ঠানের নামে জমি দলিল করে দেয়ার হুমকি দেন। এলাকাবাসীর প্রতিরোধের মুখে কেএম হোসেন পিছু হটেন। পরবর্তীতে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় প্রতিষ্ঠানটির নাম বদল করে ইন্টারন্যাশনাল রেসিডেন্সিয়াল কলেজ অ্যান্ড ইউনিভার্সিটি নাম দেয়া হয়। বিচারপ্রতি হাবিবুর রহমান খানকে দিয়ে প্রতিষ্ঠানটি উদ্বোধন করানো হয়। জমি নিয়ে বিরোধের কারণে কেএম হোসেন পুনরায় প্রতিষ্ঠানটি করতে ব্যর্থ হন। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পরই কেএম হোসেন তৃতীয়বারের মতো প্রতিষ্ঠানটির নাম পরিবর্তন করে বঙ্গবন্ধু ইন্টারন্যাশনাল রেসিডেন্সিয়াল ক্যাডেট কলেজ অ্যান্ড ইউনিভার্সিটির নামে সাইনবোর্ড টানিয়ে জমি দখলের চেষ্টা করছেন। তিনি নিজেকে আওয়ামী লীগের প্রথম সারির নেতা পরিচয় দিয়ে এই বলে হুমকি দিচ্ছেন যে, সাইনবোর্ড ভাঙলে জমির মালিক ও এলাকাবাসীকে জেল খাটানো হবে।
পুলিশের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, কেএম হোসেন প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সরকারের বিভিন্ন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা, এমনকি প্রধানমন্ত্রীর আত্মীয়স্বজন জড়িত রয়েছেন বলে এলাকার লোকজনকে ভয়ভীতি দেখাচ্ছেন।
জমিটি নিয়ে মহামান্য হাইকোর্টে একটি মামলা চলছে। হাইকোর্টের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে কেএম হোসেন দলীয় প্রভাব খাটিয়ে জমি দখলের চেষ্টা করছেন। প্রতিনিয়ত হুমকি দিচ্ছেন জমির মালিক আ. মান্নান ও আ. বারেককে। নিজের জমি বেহাত হওয়ার পরও এখন তারা প্রাণভয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন।
আ. মান্নান জানান, তাকে মেরে ফেলার জন্য কয়েকবার সন্ত্রাসী ভাড়া করে আনা হয় কিন্তু তিনি বুঝতে পেরে সরে পড়াতে বেঁচে গেছেন। বিভিন্ন সময় তাকে র্যাব দিয়ে ক্রসফায়ার করানোর ভয় দেখানো হচ্ছে। এই প্রতিষ্ঠানে চাকরি দেয়ার নাম করে শিক্ষক নিয়োগ দিয়ে তাদের কাছ থেকে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন কেএম হোসেন এমন অভিযোগ পাওয়া গেছে। স্থানীয় ইউপি সদস্য মো. আবু হানিফ মিয়া বলেন, বিভিন্ন সময় প্রতিষ্ঠানটির বিভিন্ন নাম দেয়ায় মনে হচ্ছে প্রতিষ্ঠান নয়, জমি দখলই মূল উদ্দেশ্য। কালমেঘা গ্রামের বাসিন্দা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি কুতুব উদ্দিন আহমেদ বলেন, প্রথম দিকে মনে হয়েছিল মহত্ উদ্দেশ্য নিয়েই প্রতিষ্ঠানটি করা হচ্ছে। আসলে কেএম হোসেনের উদ্দেশ্য ভালো নয়। মূলত বঙ্গবন্ধুর নাম ব্যবহার করে জমি দখলের চেষ্টা করা হচ্ছে।
জমির মালিক আবদুল মান্নান বলেন, প্রতিষ্ঠান করার নামে আমাদের সঙ্গে প্রতারণা করা হচ্ছে। দলীয় প্রভাব খাটিয়ে বিভিন্ন সময় আমাদের জমি ছেড়ে দেয়ার জন্য বাড়িতে র্যাব-পুলিশ পাঠানো হচ্ছে। কেএম হোসেনসহ ৫ জনের বিরুদ্ধে তিনি থানায় ডায়েরি করেছেন বলেও জানান।
ওসি মোজাম্মেল হক মামুন বলেন, কেএম হোসেন একজন ভণ্ড, প্রতারক। তিনি অবৈধভাবে জমি দখলের চেষ্টা করছেন। মূলত বঙ্গবন্ধুর নামে কোনো প্রতিষ্ঠান নেই।
স্থানীয় সংসদ সদস্য কৃষিবিদ শওকত মোমেন শাহজাহান বলেন, বিএনপি সরকারের সময় প্রতিষ্ঠানটি প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেয়া হলেও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় কর্তৃপক্ষ যোগাযোগ করলে আমি পাশে থাকার চেষ্টা করেছি। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর প্রতিষ্ঠানটির নাম পরিবর্তন করে বঙ্গবন্ধু ইন্টারন্যাশনাল রেসিডেন্সিয়াল ক্যাডেট কলেজ অ্যান্ড ইউনিভার্সিটি করায় বিষয়টি আমার কাছে গোলমেলে মনে হয়। এজন্য নিজেকে সরিয়ে নিয়েছি। আপনি ওই প্রতিষ্ঠানের উপদেষ্টা কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, প্রস্তাব এসেছিল কিন্তু আমি সম্মতি দেইনি।
ওই প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান কেএম হোসেন বলেন, জমির টাকা পরিশোধ করা হলেও মিউটিশন জটিলতায় দলিল করা হয়নি। তিনি বলেন, এই প্রতিষ্ঠানটি আমি সরকারকে উপহার দিয়েছি। তিনি আরও জানান, বিচারপতি হাবিবুর রহমান খান, নৌপরিবহন মন্ত্রী শাজাহান খান, স্থানীয় এমপি কৃষিবিদ শওকত মোমেন শাহজাহান, প্রাইভেটাইজেশন কমিশনের চেয়ারম্যান ড. মির্জা আবদুল জলিল, বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সাংবাদিক কল্যাণ পরিষদের মহাসচিব বিদ্যুত্ চৌধুরী ও অ্যাডভোকেট সজল আহমেদ এ প্রতিষ্ঠানের উপদেষ্টা।

শ্রমিকের তালিকায় আ’লীগ নেতাদের নাম : কর্মসৃজন প্রকল্পের হাজার কোটি টাকা লুটপাট

ইলিয়াস খান

অতি দরিদ্রদের ‘কর্মসৃজন প্রকল্প’র এক হাজার কোটি টাকা লুটপাট করছে ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীরা। শ্রমিকদের স্থলে নিজেদের নাম ঢুকিয়ে, বেশি সংখ্যক শ্রমিকের জায়গায় হাতেগোনা কয়েকজন দিয়ে কাজ করিয়ে পকেটস্থ করা হচ্ছে এ অর্থ। কাজ না পেয়ে দরিদ্রদের অবস্থা আরও সঙ্গিন হয়ে পড়ছে।
আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন বর্তমান সরকার ক্ষমতায় এসে অতিদরিদ্রদের জন্য কর্মসৃজন প্রকল্প গ্রহণ করে। এজন্য প্রতি বছর এক হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়। ২০১০ সালের বরাদ্দকৃত টাকা লুটপাটের রেশ কাটতে না কাটতেই চলতি বছরের বরাদ্দ এক হাজার কোটি টাকার কাজ শুরু হয়েছে। চলতি মাসের ১০ তারিখ থেকে বিভিন্ন জায়গায় শুরু হয় এ প্রকল্পের কাজ। শুধু দলীয় লোকজন নয়, পকেট ভারী হচ্ছে সরকারি ও ব্যাংক কর্মকর্তা-কর্মচারীদেরও ।
দেশের ৬৪ জেলার ১৩৩ উপজেলায় এ প্রকল্পের কাজ চলছে। প্রকল্পের মোট উপকারভোগীর সংখ্যা ৮ লাখ ৫৫ হাজার। চলতি বছর বরিশাল বিভাগের ৬ জেলায় বরাদ্দ দেয়া হয়েছে প্রায় ৫০ কোটি টাকা। ২০১০ সালে এ বিভাগে বরাদ্দ ছিল ১০০ কোটি টাকা। বরিশাল জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা অফিস সূত্র জানায়, ২০১১ সালে এ জেলায় সর্বোচ্চ বরাদ্দ ১৮ কোটি ৪৯ লাখ ৪৪ হাজার টাকা। ভোল জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্র জানায়, ভোলা জেলায় বরাদ্দ ৮ কোটি ৮৯ লাখ ৯৬ হাজার টাকা। এছাড়া বরগুনা জেলায় ৪ কোটি ৫০ লাখ, ঝালকাঠি জেলায় ৩ কোটি, পটুয়াখালী জেলায় ৩ কোটি ৬০ লাখ ৯০ হাজার এবং পিরোজপুর জেলায় ২ কোটি ৬২ লাখ ৫৬ হাজার টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়। এভাবে প্রকল্পভুক্ত সব জেলায়ই নির্দিষ্ট পরিমাণ বরাদ্দ রয়েছে। সব মিলিয়ে সারাদেশে বরাদ্দের পরিমাণ হাজার কোটি টাকা।
তালিকায় আছে মাঠে নেই : নিয়ম অনুযায়ী প্রত্যেক শ্রমিক সকাল ৮টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত কাজ করে মজুরি পাবেন দৈনিক ১৫০ টাকা। কাজ করবেন ৪০ দিন। নিজের নামে ব্যাংকে একাউন্ট থাকবে। ওই একাউন্ট থেকে টাকা তুলতে পারবেন শ্রমিকরা। তবে সরেজমিন মাঠ পর্যায়ে যে চিত্র পাওয়া গেছে তাতে শ্রমিক নেই বললেই চলে। যদিও হাজিরা
খাতায় শ্রমিকের কোনো অভাব নেই। বরিশাল জেলার সদর উপজেলার ১০ ইউনিয়নে কাজ শুরু হয়েছে ১০ এপ্রিল থেকে। সম্প্রতি কাজ দেখার জন্য সদর উপজেলার জাগুয়া ইউনিয়নে গেলে দেখা যায় ভয়াবহ চিত্র। সকাল সাড়ে ৯টায় ৩নং ওয়ার্ডে গিয়ে ২৮ শ্রমিকের মধ্যে পাওয়া যায় ৯ জনকে। বাকিরা প্যান্ট পরে ঘুরছেন। কেউ নেতা কেউবা আবার আওয়ামী পরিবারের সদস্য হওয়ার সুবাদে কার্ডধারী। ওয়ার্ডের জালাল সরদারের তিন ছেলে যথাক্রমে আলামিন সরদার, জাহিদ সরদার, জামাল সরদার, মুজাহার খানের ছেলে শামিম খান, ইউনিয়নের যুবলীগের সদস্য তারিকুল ইসলাম, গনি হাওলাদারের ছেলে আমিনুল ইসলাম, ইদ্রিস আলী ও তার স্ত্রী মরিয়ম, হোসেন গাজী, আ. হক, হোসেন চাপরাশি, সোহরাব চাপরাশির ছেলে কাশেম চাপরাশি, আমির আলী—এদের সবার নাম তালিকায় আছে অথচ তারা মাঠে নেই। ২৮ জনের মধ্যে অর্ধেকেরও বেশি কার্ডধারী ভুয়া। হাজিরা খাতায় সবার উপস্থিতি দেখানো হয়েছে। গত বছরে এ ইউনিয়নে মোট বরাদ্দ ছিল ২১৮টি কার্ড। এ বছর আরও ৭৬টি কার্ড বাড়ানো হয়েছে।
কড়াপুর ইউনিয়নে মোট বরাদ্দ ৬৬৫টি কার্ড। সকাল ৯টা থেকে সাড়ে ১২টা পর্যন্ত ৯টি ওয়ার্ড ঘুরে পাওয়া গেছে মোট ১১৯ শ্রমিক। সকাল ৯.১০ মিনিটের সময় যাওয়া হয় ২নং ওয়ার্ডে। এ ওয়ার্ডে শ্রমিক থাকার কথা ৮৬ জন। বাস্তবে পাওয়া যায় ২৪ জন। সেখানে উপস্থিত ওয়ার্ড যুবলীগের সহসভাপতি কায়কোবাদ রাসেল স্বীকার করলেন তাদের দুর্বলতার বিষয়টিও। তিনি জানান, তালিকায় আমাদের কিছু লোকের নাম আছে সেটা তো দোষের কিছু নয়। এরপর যাওয়া হয় ১নং ওয়ার্ডে। কাজের তদারকিতে আছেন আ’লীগ নেতা আ. গনি। এখানে ৭৬ শ্রমিকের মধ্যে পাওয়া গেল মাত্র ১৪ জনকে। হাজিরা খাতা দেখতে চাইলে অপারগতা প্রকাশ করেন আ. গনি। ৮নং ওয়ার্ডে গিয়ে চোখে পরে ভয়াবহ চিত্র। সেখানে শ্রমিকদের তালিকায় যারা আছেন তারা সবাই আওয়ামী লীগের নেতা। ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি খোকন, সম্পাদক ফজলুল হক, যুবলীগের সভাপতি কামাল সরদার, সম্পাদক মো. রফিক, যুবলীগ নেতা মন্নান খাঁ, মনিরের নাম শ্রমিকের তালিকায়। এ ওয়ার্ডে মাঠে কাজ করছেন ১২ জন। অন্যান্য ওয়ার্ডে গিয়েও দেখা গেছে একই চিত্র। ২নং ওয়ার্ডে সর্বোচ্চ ২৪ জন ছাড়া কোনো ওয়ার্ডেই ১৪ জনের বেশি শ্রমিক পাওয়া যায়নি। কাশীপুর ইউনিয়নের চিত্রও এর ব্যতিক্রম নয়। ৩নং ওয়ার্ডে গিয়ে পাওয়া যায় মাত্র ১১ শ্রমিক। ৬নং ওয়ার্ডে ২৪ জন, ৫নং ওয়ার্ডে ১৯ জন। অথচ এই ইউনিয়নে বরাদ্দ রয়েছে প্রায় ৫০০ কার্ড।
গণ্যমান্যরা সবাই আওয়ামী লীগের : কর্মসৃজন প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটিতে এবারও গণ্যমান্য ব্যক্তিদের নাম অন্তর্ভুক্ত হয়েছে দলীয় বিবেচনায়। কোথাও আওয়ামী লীগের বাইরে গণ্যমান্য ব্যক্তি খুঁজে পাওয়া যায়নি। বরিশালসহ সব জায়গার পরিস্থিতি একই রকম। সদর উপজেলার রায়পাশা কড়াপুর ইউনিয়নের গণ্যমান্য ব্যক্তি মো. আমিনুল ইসলাম টিপু ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সম্পাদক। অপর গণ্যমান্য মো. আনসার আলী হাওলাদার জেলা কৃষক লীগ নেতা, সমাজসেবী হিসেবে আছেন তাছলিমা বেগম। তিনি ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি মিজানুর রহমানের স্ত্রী। ইমাম মাওলানা মো. মাহফুজ ওলামা লীগ নেতা। জাগুয়া ইউনিয়নে গণ্যমান্য ব্যক্তিদের তালিকায় যারা আছেন তারা হলেন স্কুল শিক্ষক রুস্তম আলী ফরাজী ইউয়িন আওয়ামী লীগের সভাপতি, মো. মনিরুজ্জামান শ্রমিক লীগের সহসভাপতি, মো. নাজমুল হোসেন মনি যুবলীগ সভাপতি। সমাজসেবী মোসা. রেহেনা ইয়াসমিন মহিলা লীগ নেত্রী, ইমাম মাওলানা আ. করিম তালুকদার ওলামা লীগ নেতা। চাঁদপুরা ইউনিয়নে স্কুল শিক্ষক জিএম ফারুক আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক, গণ্যমান্য মীর বাহাদুর হোসেন কামাল যুবলীগ সভাপতি, মো. সানোয়ার পারভেজ আওয়ামী লীগের সদস্য, সমাজসেবী মাহামুদা বেগম আওয়ামী লীগ নেতা মনিরুল ইসলামের স্ত্রী এবং ইমাম মাওলানা আনিসুর রহমান ওলামা লীগ সভাপতি। চন্দ্রমোহন ইউনিয়নের স্কুল শিক্ষক মো. মকবুল আহম্মেদ ইউনিয়ন আ’লীগের সভাপতি, সমাজসেবী মোসা. সালমা আক্তার আওয়ামী লীগ সম্পাদক আসাদুজ্জামান লিটনের স্ত্রী, ইমাম সামসুল হক ওলামা লীগ নেতা এবং আওয়ামী লীগ নেতা আবদুর রহমান, ইউনুচ সেরনিয়াবাত গণ্যমান্য ব্যক্তির তালিকায় আছেন। কাশীপুর ইউনিয়নে স্কুল শিক্ষক আবু আহমেদ আল মামুন ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক, গণ্যমান্য মো. আনিসুল ইসলাম তোতা আওয়ামী লীগের সম্পাদক, আবুল হোসেন নেতা, সমাজসেবী জেসমিন আক্তার মনি মহিলা লীগ নেত্রী। এভাবে প্রত্যেক ইউনিয়নে যে ৯ সদস্যবিশিষ্ট কমিটি হয়েছে তাতে স্থান পেয়েছেন দলীয় নেতাকর্মী কিংবা তাদের স্ত্রীরা। উল্লেখ্য, প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটিতে স্কুল শিক্ষক, মসজিদের ইমামসহ গণ্যমান্য ব্যক্তিদের থাকার কথা।
চেয়ারম্যান মেম্বাররা ঠুঁটোজগন্নাথ : এবারে কর্মসৃজন কর্মসূচি বাস্তবায়ন কমিটিতে চেয়ারম্যান মেম্বারদের কোথাও সদস্য পর্যন্ত রাখা হয়নি। ৯ সদস্যের কমিটি হওয়ার কথা থাকলেও তালিকায় চেয়ারম্যান ও মেম্বারদের ঘর ফাঁকা। ইউনিয়নের উন্নয়নমূলক কাজ অথচ তাতে কোনো ভূমিকা রাখতে পারছেন না চেয়ারম্যান, মেম্বাররা। এ বিষয় জানতে চাইলে ইউনিয়ন পরিষদ ফোরাম বরিশাল বিভাগের সভাপতি মো. হোসেন সিকদার বলেন, দুর্নীতি লুটপাট পাকাপোক্তভাবে করার জন্যই আমাদের দূরে রাখা হয়েছে। নির্বাচিত চেয়ারম্যান হয়েও এলাকার কাজে আমাদের কোনো ভূমিকা নেই— এমনটা শুধু দুঃখজনকই নয় লজ্জারও বটে।
ব্যাংক একাউন্টও আ’লীগ নেতাদের নামে : সরকারের নতুন নীতিমালা অনুযায়ী প্রত্যেক শ্রমিকের নামে ১০ টাকার বিনিময়ে ব্যাংক হিসাব খুলতে হবে। শ্রমিকরা ইচ্ছা করলে প্রতি মাসে কিংবা সপ্তাহ পরপর তাদের টাকা তুলতে পারবেন। কিন্তু দলীয়করণ এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, সেই একাউন্টও খোলা হয়েছে আ’লীগ নেতাদের নামে। সত্যতা যাচাইয়ে গতকাল ফোন দেয়া হয় সোনালী ব্যাংক রায়পাশা কড়াপুর শাখায়। ওই ইউনিয়নে অতি দরিদ্রদের জন্য যে হিসাব খোলা হয়েছে (নং-২০০০১০২৭) তা কর্মসূচি বাস্তবায়ন কমিটির নেতাদের নামে। এমনটা স্বীকার করে ওই ব্যাংকের ম্যানেজার মোতালেব হোসেন বলেন, বিষয়টি আমরা নেতাদের বুঝিয়ে বলেছি। তারা যদি প্রত্যেক শ্রমিকের নামে একাউন্ট না করেন তাহলে টাকা দিয়ে আমরা বিপদে পড়তে রাজি নই। কারণ নিয়ম রয়েছে কেবল শ্রমিকরাই টাকা উঠাতে পারবেন। এখন যদি নেতারা একাউন্ট খোলেন তাহলে তো বিষয়টি প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে যাবে।
সরকারি ও ব্যাংক কর্মকর্তাদের লুটপাট : প্রত্যেক শ্রমিকের নামে ব্যাংকে একাউন্ট করার কথা থাকলেও তা নেই। একাউন্ট খোলা হয়েছে প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তাদের নামে। বরাদ্দকৃত অর্থ এরাই তুলে থাকেন। এ টাকা তুলতে ব্যাংক কর্মকর্তাদের সহযোগিতা নিতে হয়। এজন্য তাদের ঘুষ দিতে হয়। একইভাবে প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির প্রধান একজন সরকারি কর্মকর্তা। কম শ্রমিক দিয়ে কাজ করিয়ে বেশি শ্রমিকের বরাদ্দ পাস করতে এসব কর্মকর্তার সহযোগিতা নিতে হয়। এজন্য তাদের দিতে হয় বড় অংকের টাকা। একটি সূত্র জানায়, উপজেলা প্রশাসনের অধিকাংশ কর্মকর্তা এ টাকার ভাগ পেয়ে থাকেন। এভাবেই দরিদ্র মানুষের জন্য বরাদ্দকৃত অর্থের সিংহভাগ আওয়ামী লীগ নেতা, সরকারি ও ব্যাংক কর্মকর্তারা লুটপাট করছেন।

দুদক এখন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এক্সটেনশন










এম এ নোমান
দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) তার স্বাধীনসত্তা হারিয়ে এখন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এক্সটেনশনে পরিণত হয়েছে। এ প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান ও অপর দুই সদস্য এক সময় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়েই কর্মরত ছিলেন। এই কর্মকর্তারা সে সময় বিভিন্ন দায়িত্বে নিয়োজিত ছিলেন। মামলা দায়ের, অভিযোগ অনুসন্ধান ও সম্পদের হিসাব চেয়ে চিঠি পাঠানোর ক্ষেত্রে দুদক নিজস্ব এখতিয়ার প্রয়োগের পরিবর্তে এখন সরকারের শীর্ষমহলের আজ্ঞাবহ প্রতিষ্ঠান হিসেবেই কাজ করছে। দুদকের যে আইনটি সম্প্রতি সংশোধন করে সংসদে পেশ করা হয়েছে তা পাস হলে প্রতিষ্ঠানটি একেবারেই একটি তল্পিবাহক প্রতিষ্ঠানে পরিণত হবে। দুদক সম্পর্কে ব্যাপক অনুসন্ধান চালাতে গিয়ে এ চিত্রই পাওয়া গেছে। প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান গোলাম রহমান স্বয়ং দুদক সম্পর্কে বলেছিলেন, এটি একটি দন্তহীন বাঘ, এখন এর নখগুলোও কেটে নেয়ার চেষ্টা হচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দুদক তার নিজস্ব এখতিয়ার প্রয়োগ করে কোনো সময়েই স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারেনি। তারা বলেন, সেনাসমর্থিত ওয়ান ইলেভেন সরকারের সময় সাবেক সেনাপ্রধান লে. জেনারেল (অব.) হাসান মশহুদের নেতৃত্বে দুদক রাজনীতিবিদ ও ব্যবসায়ীদের হয়রানির জন্য ব্যবহৃত হয়েছে। বর্তমানেও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে দায়িত্ব পালনকারী কর্মকর্তারাই সরকারের শীর্ষমহলের নির্দেশনার আলোকেই দুদকের কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছেন। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিরোধীদলীয় নেতাদের হয়রানি এবং ক্ষেত্রবিশেষ চমক সৃষ্টি ছাড়া সত্যিকার অর্থে দুর্নীতি দমনে দুদক কোনো কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারেনি। বিনা টেন্ডারে শত শত কোটি টাকার সরকারি কাজ দলীয় লোকদের দেয়া এবং জালিয়াতি ও দুর্নীতির মাধ্যমে শেয়ারবাজার থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা লুটপাটের ঘটনায় দুদকের নীরবতায় বিস্ময় প্রকাশ করেছেন আইন বিশেষজ্ঞরা। আইন যাই হোক দুদকের বর্তমান আজ্ঞাবাহী জনবল দিয়ে দুর্নীতি দমন হবে না বলেও মনে করেন তারা।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এক্সটেনশন : দুদকের বর্তমান চেয়ারম্যান গোলাম রহমান ২০০১ সালে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব হিসেবে নিযুক্ত হন। আওয়ামী লীগ সরকারের শেষদিকে তাকে ওই পদে নিযুক্ত করা হয়। লে. জেনারেল (অব.) হাসান মশহুদের বিদায়ের পর বর্তমান সরকার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সাবেক সচিব গোলাম রহমানকে দুর্নীতি দমন কমিশনের চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ দেয়। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়ে নিয়োগ পাওয়া দুদকের দুই সদস্য বিদায় নেয়ার পর গত মাসে মো. বদিউজ্জামান ও মো. শাহাবুদ্দিনকে তাদের স্থলাভিষিক্ত করা হয়। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের পর মো. বদিউজ্জামানকে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মহাপরিচালক হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়। ১৯৯৯ সাল পর্যন্ত তিনি টানা এ দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৯৯ সালে তাকে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অধীন বিলুপ্ত দুর্নীতি দমন ব্যুরোর মহাপরিচালক হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়। ২০০১ সাল পর্যন্ত তিনি এ দায়িত্ব পালন শেষে সরকারের অতিরিক্ত সচিব হিসেবে অবসর গ্রহণ করেন। সদ্যনিযুক্ত দুদকের অপর সদস্য মো. শাহাবুদ্দিনকে বর্তমান সরকার ‘আওয়ামী লীগ ও সংখ্যালঘুদের ওপর বিএনপিসহ চারদলীয় জোট কর্তৃক পরিচালিত জুলুম-নির্যাতনের ঘটনা’ তদন্তে গঠিত কমিটির প্রধান হিসেবে নিয়োগ দেয়। বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের বিশেষ নির্দেশে ২০০১ সালে বিএনপিসহ চারদলীয় জোট সরকার সারাদেশে আওয়ামী লীগ এবং হিন্দু সম্প্রদায়সহ সংখ্যালঘুদের ওপর জুলুম-নির্যাতন চালিয়েছে বলে অভিযোগ এনে ওই ঘটনা তদন্তে তাকে দিয়ে এক সদস্যের একটি কমিটি গঠন করে। এ কমিটি বিএনপির দশ হাজার নেতাকর্মীকে দায়ী করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে প্রতিবেদন পেশ করেছে।
চেয়ারম্যানসহ তিন সদস্যবিশিষ্ট দুদকের সবাই প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ত ছিলেন বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে।
সরকারের তল্পিবাহক প্রতিষ্ঠান : আইনে দুদক একটি স্বাধীন সংস্থা হলেও স্বাধীনভাবে কাজ করার ক্ষমতা দুদকের কোনো সময়েই ছিল না বলে মনে করেন প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা। দুদক বরাবরই ক্ষমতাসীনদের আজ্ঞাবহ প্রতিষ্ঠান হিসেবেই এর যাবতীয় কার্যক্রম পরিচালনা করতে বাধ্য। বর্তমান দুদক আইন সংশোধন করে এটিকে সরকারের একটি তল্পিবাহক প্রতিষ্ঠানে পরিণত করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। সরকার আগে প্রত্যক্ষভাবে দুদককে নিয়ন্ত্রণ করলেও এখন প্রত্যক্ষভাবেই এর নিয়ন্ত্রণ সরকার গ্রহণ করতে যাচ্ছে। বর্তমানে সংসদীয় কমিটিতে যাচাই-বাছাইয়ের অবস্থায় থাকা দুদক (সংশোধনী) আইনের কয়েকটি ধারা সংশোধন ও সংযোজন করে বিচারক, বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তা ও সরকারি কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের ক্ষেত্রে সরকারের পূর্বানুমতি গ্রহণ আবশ্যক করা হয়েছে। একই সঙ্গে দুদকের দায়ের করা যে কোনো মামলা তদন্তের জন্য দুদকের একচ্ছত্র ক্ষমতা খর্ব করে পুলিশ ও সরকারের অন্যান্য সংস্থার হাতে দেয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে। এছাড়াও দুদকের সাচিবিক দায়িত্ব পালনকারী কর্মকর্তা নিয়োগ দেবে সরকার। দুদকের সব ধরনের কার্যক্রম পরিচালনায় সচিবই মুখ্য ভূমিকা পালন করে থাকেন। সচিব যদি সরকার নিয়োগ দেয়, তাহলে এর কার্যক্রমও সরকারই নিয়ন্ত্রণ করবে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা। তাছাড়া দুদকের ২০০৪ সালের আইনের ২০ (১) ধারায় বলা হয়েছিল, ফৌজদারি কার্যবিধিতে যা কিছুই থাকুক না কেন, এই আইনের অধীন ও এর তফসিলে বর্ণিত অপরাধসমূহ কেবলমাত্র কমিশন কর্তৃক তদন্তযোগ্য হবে। একই ধারার ২ উপধারায় বলা হয়েছে যে, অপরাধসমূহ তদন্তের জন্য কমিশন, সরকারি গেজেটে প্রজ্ঞাপন দ্বারা, এর অধস্তন কোনো কর্মকর্তাকে ক্ষমতা প্রদান করতে পারবে। এ ধারাটি সংশোধন করে প্রস্তাবিত সংশোধনীতে তদন্তের বিষয়ে একই ধারার (২) উপ-ধারায় বলা হয়েছে যে, উপধারা (১)-এ যা কিছুই থাকুক না কেন, উক্ত উপ-ধারায় উল্লিখিত অপরাধসমূহ তদন্তের জন্য কমিশন, সরকারি গেজেটে প্রজ্ঞাপন দ্বারা, এর অধস্তন কোনো কর্মকর্তা, পুলিশ বা অন্য কোনো সংস্থাকে ক্ষমতা অর্পণ করতে পারবে। (৩) উপ-ধারায় বলা হয়েছে যে, উপ-ধারা (১) ও (২)-এ যা কিছুই থাকুক না কেন, কমিশনের কোনো কর্মকর্তা বা কর্মচারীর বিরুদ্ধে এ আইন ও তফসিলে উল্লিখিত কোনো অপরাধের অভিযোগ উত্থাপিত হলে তার তদন্তের জন্য কমিশন, সরকারি গেজেটে প্রজ্ঞাপন দ্বারা কেবল পুলিশ বা অন্য কোনো সংস্থাকে ক্ষমতা অর্পণ করবে। ২০০৪ সালের আইনে দুদককে অপরাধ কর্মকাণ্ডের জন্য দেশের সব নাগরিকের বিরুদ্ধে একই পদ্ধতিতে মামলা করার এখতিয়ার দেয়া হয়েছিল। ‘আইন সবার জন্য সমান’ বলা হলেও দুদকের প্রস্তাবিত সংশোধনীতে ৩২ ধারার পর ৩২ক নামে একটি পৃথক ধারা সংযোজন করা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, এ আইনের অধীন জজ, ম্যাজিস্ট্রেট বা সরকারি কর্মচারীদের বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের ক্ষেত্রে ফৌজদারি কার্যবিধির ধারা ১৯৭-এর বিধান আবশ্যিকভাবে প্রতিপালন করতে হবে। ফৌজদারি কার্যবিধির ১৯৭ ধারায় বলা হয়েছে—যখন দণ্ডবিধির ১৯ ধারার অর্থানুসারে কোনো জজ অথবা কোনো ম্যাজিস্ট্রেট অথবা সরকার কর্তৃক সরকারের অনুমোদন ব্যতীত অপসারণযোগ্য নয়—এ ধরনের কোনো সরকারি কর্মচারী তার দায়িত্ব পালনকালে অথবা দায়িত্ব পালনে আসীন বলে বিবেচিত হওয়াকালে কোনো অপরাধ সংঘটিত করেছেন বলে অভিযুক্ত হয়ে থাকেন, তখন সরকারের পূর্বানুমতি ব্যতীত কোনো আদালত ওইরূপ অপরাধ আমলে আনবেন না। একই ধারার ২ নং উপধারায় বলা হয়েছে—ওই জজ, ম্যাজিস্ট্রেট বা সরকারি কর্মচারী অপরাধ বা অপরাধসমূহের অভিযোগ কার দ্বারা বা কীভাবে করা হবে, সরকার তা নির্ধারণ করতে পারবে এবং কোন আদালতে বিচার হবে, তাও নির্দিষ্ট করে দিতে পারবে। দুদক আইন সংশোধনের ব্যাপারে প্রবল আপত্তি জানিয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ও ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল (টিআইবি) চেয়ারম্যান এম হাফিজউদ্দিন খান আমার দেশকে বলেন, এটা হলে দুদকের স্বাধীন সত্তা বলে যা ছিল, সেটা সম্পূর্ণরূপে বিলুপ্ত হবে। বর্তমান সরকারের সময় দলীয় লোকদের কোটি টাকার কাজ দেয়া, রেন্টাল পাওয়ার প্লান্টের নামে শত শত কোটি টাকার কাজ পছন্দের প্রতিষ্ঠানকে দেয়া এবং শেয়ার জালিয়াতির সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের ক্ষেত্রে দুদকের নীরবতার বিষয়ে টিআইবি চেয়ারম্যান বলেন, সদিচ্ছা থাকলে দুদক এসব বিষয়ে ভূমিকা রাখতে পারত। মূলত আইন, অবকাঠামোগত অসুবিধা ও জনবল সঙ্কট, সর্বোপরি স্বাধীন সত্তা না থাকায় দুদক স্বাধীনভাবে কার্যকর ভূমিকা পালনে ব্যর্থ হচ্ছে। তিনি বলেন, দুর্নীতি দমনের ক্ষেত্রে দুদকের মাধ্যমে কাঙ্ক্ষিত ফল পেতে হলে বিদ্যমান আইন শক্তিশালী করার সঙ্গে সঙ্গে স্বাধীন মানসিকতাসম্পন্ন লোকবলেরও প্রয়োজন হবে।
বিরোধী রাজনীতিকদের হয়রানির হাতিয়ার : দুদক মূলত বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের নির্যাতনের হাতিয়ারে পরিণত হয়েছে। সেনা সমর্থিত বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের গোটা দু’বছরই দুর্নীতি দমন কমিশন সরকারের দেয়া তালিকা অনুযায়ী দেশের ব্যবসায়ী ও রাজনীতিকদের বিরুদ্ধে মামলা করেছে। দুদক স্বাধীন হলেও এর সচিব, মহাপরিচালক ও পরিচালক পর্যায়ের সব কর্মকর্তাই সরকার কর্তৃক নিযুক্ত। কাজেই সরকারের আজ্ঞাবহ হয়েই মামলা দায়ের এবং এর তদন্ত প্রক্রিয়া সম্পন্ন করছে দুদক। বর্তমান সরকারের সময় এসেও দুদক স্বাধীনভাবে কাজ করার ক্ষেত্রে সফল হতে পারেনি। দুদক চেয়ারম্যানের পদ থেকে লে. জেনারেল হাসান মশহুদের পদত্যাগের পর চেয়ারম্যান হিসেবে নিযুক্ত হন সাবেক সচিব গোলাম রহমান। এর পরপরই সরকার দুদক আইনও সংশোধনের উদ্যোগ নেয়।
বর্তমান সরকারের দু’বছরেও দুদক স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারেনি বলে জানান দুদকেরই একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা। তিনি বলেন, বর্তমান সরকারের সময়ে যে ক’টি মামলা হয়েছে, তার সবগুলোই বিরোধী দল ও মতের ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে। অথচ বর্তমান সরকারের সময়ে টেন্ডার নীতিমালা পরিবর্তন করে সর্বোচ্চ ৮ কোটি টাকা পর্যন্ত মূল্যমানের সরকারি কাজগুলো কোনো অভিজ্ঞতা ও জামানত ছাড়াই সরকারি দলের নেতাকর্মীদের দেয়া হচ্ছে। পিপিআর পরিবর্তন করা হয়েছে এবং কোনো টেন্ডার ছাড়াই রেন্টাল পাওয়ার প্লান্ট স্থাপন করার কাজ দেয়া হচ্ছে। এগুলো সবই সরকারের মন্ত্রী ও সরকারি দলের নেতারা পেয়েছেন। এতে করে দেশব্যাপী দুর্নীতির বিষবৃক্ষ ছড়িয়ে পড়লেও দুদক মামলা করা তো দূরের কথা, অনুসন্ধান করারও সাহস দেখাতে পারছে না। অপরদিকে বিরোধী দল ও মতের লোকদের নামে এ সরকারের সময়ই দুদক শতাধিক মামলা দায়ের করেছে।
ভূমিকা নিয়ে আইন বিশেষজ্ঞরা বিস্মিত : দুদকের ভূমিকার বিষয়ে সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি বিশিষ্ট ফৌজদারি আইন বিশেষজ্ঞ অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন আমার দেশকে বলেন, বিরোধী রাজনৈতিক নেতাদের দমনের ক্ষেত্রে দুদক সরকারের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। গত দু’বছরে দেখা গেছে, এ পর্যন্ত যে ক’টি মামলা হয়েছে, তার সবগুলোই বিরোধী রাজনৈতিক নেতাদের নামে। অথচ ওয়ান-ইলেভেন সরকারের হর্তাকর্তাদের বিষয়ে দুদক একবারেই নীরব। এছাড়াও গত দু’বছরেই দেশে দুর্নীতি হয়েছে সবচেয়ে বেশি। দু’লাখ টাকার স্থলে আট কোটি টাকার সরকারি কাজ বিনা টেন্ডারে দলীয় লোকদের দেয়া হচ্ছে। এছাড়াও শত শত কোটি টাকার পাওয়ার প্লান্টের কাজ বিনা টেন্ডারে দেয়া হচ্ছে। ইতিহাসের সবচেয়ে বড় জালিয়াতি হয়েছে এবার শেয়ারবাজারে। হাজার হাজার কোটি টাকা লুটপাট হয়েছে। অথচ এসব বিষয়ে দুদক নীরব থেকে তাদের ভূমিকা সম্পর্কে জাতিকে জানিয়ে দিয়েছে। বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের দমন এবং ক্ষেত্রবিশেষে চমক সৃষ্টি ছাড়া দুদক দুর্নীতি দমনে কোনো কাজই করেনি বলে জানান তিনি। তিনি বলেন, বর্তমানে দুদকে যেসব লোক নিয়োগ পেয়েছেন, তাদের দ্বারা আর যাই হোক, দুর্নীতি দমন হবে না।
দুদকের বক্তব্য : দুদক প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের আজ্ঞাবহ হয়ে কাজ করছে—এ অভিযোগ সম্পর্কে প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান গোলাম রহমান আমার দেশকে বলেন, আইনে আমাদেরকে যতটুকু ক্ষমতা দেয়া হয়েছে, ততটুকুই প্রয়োগ করে আমরা সম্পূর্ণ স্বাধীনভাবে কাজ করার চেষ্টা করছি। সরকারের কোনো ধরনের বিধিনিষেধ আমরা এখনও পর্যন্ত আমলে নেইনি। আইন সংশোধনের বিষয়ে তিনি বলেন, মূল আইনে বলা হয়েছে দুদক একটি স্বাধীন প্রতিষ্ঠান হবে। কাজেই আমরা আশা করছি সরকার এমন কিছু করবে না যাতে এ প্রতিষ্ঠানটির স্বাধীনতা খর্ব হয়। এটা হলে দেশে ও বিদেশে সরকারেরই ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হবে। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের দায়িত্ব পালন সম্পর্কে তিনি বলেন, আমি শুধু আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ই নয়, এর পরের সরকারের সময়ও আমি একই দায়িত্ব পালন করেছি। গত দু’বছরে শুধু বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের নামেই মামলা ও তদন্ত হচ্ছে। ক্ষমতাসীনদের দুর্নীতি নিয়ে কোনো মামলা না হওয়ার কারণ সম্পর্কে তিনি বলেন, দুদকে জমা হওয়া অভিযোগগুলোই তদন্ত ও অনুসন্ধান করে যৌথভাবে মামলা দায়েরের সিদ্ধান্ত হয়। এখানে সরকারি দল কিংবা বিরোধী দল দেখা হয় না। দুদক সদস্য মো. বদিউজ্জামান বলেন, ২০০১ সালের পর থেকে আমি সরকারের কোনো কার্যক্রমের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলাম না। দুদক সদস্য হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের পর প্রায় এক মাস অতিবাহিত হয়েছে। এখনও পর্যন্ত সরকারের পক্ষ থেকে কোনো ধরনের বাধানিষেধ পাইনি। আশা করছি আইন অনুযায়ী স্বাধীনভাবেই কাজ করতে পারব। অপর সদস্য মো. সাহাবুদ্দিন বলেন, ২০০১ সালের নির্বাচন-পরবর্তী সহিংসতা অনুসন্ধানের জন্য হাইকোর্ট একটি নির্দেশনা দিয়েছিলেন। সে নির্দেশনা মেনেই আমি দায়িত্ব পালন করেছি। দুদক আইন সংশোধনীর বিষয়ে তিনি বলেন, দেশের মানুষ চায় দুদক একটি স্বাধীন প্রতিষ্ঠান হিসেবে কাজ করুক। কাজেই সরকারের এমন কোনো সিদ্ধান্ত নেয়া ঠিক হবে না, যাতে দুদকের স্বাধীনতা খর্ব হয়।

ওএমএসে’র চাল কালোবাজারে : ক্ষমতাসীনরা হাতিয়ে নিচ্ছে ভর্তুকির কোটি কোটি টাকা












কাজী জেবেল
নেত্রকোনার মদন উপজেলায় স্থানীয় যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক সাইদুর রহমানের গুদাম থেকে খোলাবাজারে বিক্রির (ওএমএস) প্রায় দুই হাজার বস্তা চাল উদ্ধার করা হয়। এসব চাল কালোবাজারে বিক্রির উদ্দেশ্যে রাখা হয় বলে র্যাব জানায়। তিনি ওই এলাকার ওএমএসের ডিলার। এ ঘটনায় সাইদুর রহমানকে গ্রেফতার করা হয়। কিশোরগঞ্জের হাওর উপজেলার নিকলীতে ওএমএসের চাল কালোবাজারে বিক্রির দায়ে পূর্বগ্রাম বাজারহাটি গ্রামের ডিলার ও স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা আল আমিনকে গত ৮ এপ্রিল জরিমানা করা হয়েছে। চট্টগ্রামের বোয়ালমাখালী উপজেলা আওয়ামী লীগ নেতা মোহাম্মদ সেলিমকে চাল কালোবাজারের বিক্রির দায়ে গত ৭ এপ্রিল জরিমানা করেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। এভাবে প্রায় প্রতিদিন দেশের বিভিন্ন জায়গায় খোলাবাজারে বিক্রির জন্য বরাদ্দকৃত চাল কালোবাজারে বিক্রির সময় ধরা পড়ছে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীদের জড়িত থাকার প্রমাণ মিলছে। তারা প্রভাবশালী হওয়াতে স্থানীয় প্রশাসন কঠোর পদক্ষেপ নিতে পারছে না। খাদ্য মন্ত্রণালয় ও অধিদফতরের একাধিক কর্মকর্তাদের মতে, প্রতিদিন কম হলেও শতকরা ১০ ভাগ চাল কালোবাজারে চলে যাচ্ছে। অর্থাত্ দৈনিক এক লাখ থেকে এক লাখ ২০ হাজার কেজি চাল কালোবাজারে যাচ্ছে। এর সিংহভাগ ধরা পড়ে না। যা ধরা পড়ছে তা প্রকৃত পরিমাণের অনেক কম। এসব চাল স্থানীয় বাজারে বেশি দামে বিক্রি হয়। এতে দরিদ্র মানুষের জন্য ওএমএস চালে সরকারের শত শত কোটি টাকা ভর্তুকির অনেকটাই আওয়ামী লীগ নেতাদের পকেটে যাচ্ছে। এসব কাজে খাদ্য অধিদফতর ও স্থানীয় প্রশাসনের একশ্রেণীর অসাধু কর্মকর্তারা জড়িত বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ঊর্দ্ধতন কর্মকর্তা বলেন, অবস্থা এমন হয়েছে যে লাভের গুড় পিঁপড়া খাচ্ছে।
খাদ্যমন্ত্রী ড. আবদুর রাজ্জাক কালোবাজারে চাল বিক্রির কথা স্বীকার করে গতকাল আমার দেশকে বলেন, ওএমএস ও ফেয়ার প্রাইসের জন্য বরাদ্দকৃত চাল কালোবাজারে বিক্রি করা ব্যবসায়ীদের এক ধরনের খারাপ প্রবণতা। বাজারে চালের দাম কমে যাওয়ায় ডিলাররা নির্ধারিত চাল প্রতিদিন বিক্রি করতে পারছেন না। উদ্ধৃত চাল অনেকে কালোবাজারে বিক্রি করছেন। এসব রোধ করতে আমরা বিভিন্ন ধরনের পদক্ষেপ নিয়েছি। জেলা ও উপজেলা কর্মকর্তাদের নিয়ে গঠিত কমিটি তদারকি করছে। এসব কমিটিতে উপজেলা চেয়ারম্যান ও দলীয় নেতাকর্মীদের অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। এর পরও কালোবাজারি পুরোপুরি বন্ধ করা কঠিন। আমরা সাধ্যমত কালোবাজারি ঠেকানোর চেষ্টা চালাচ্ছি। এ বিষয়ে লোকাল কর্মকর্তাদের সতর্ক থাকার নির্দেশ দেয়া হয়েছে বলেও জানান তিনি। তিনি আরও বলেন, ওএমএস ও ফেয়ার প্রাইস কার্ডের মাধ্যমে আগামীতেও কম দামে চাল দেয়া হবে। এখন যারা সরকারি নিয়ম ভেঙে চাল বিক্রি করছে তাদের বাদ দিয়ে তখন নতুন ডিলার নিয়োগ দেয়া হবে।
খাদ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক আহমেদ হোসেন খান গতকাল আমার দেশকে বলেন, খোলাবাজারে চাল বিক্রির পরিমাণ কমে যাওয়ায় কালোবাজারে চাল বিক্রির প্রবণতা বাড়ছে। আমরা কালোবাজারি বন্ধে কঠোরভাবে মনিটরিং করছি।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, চালের দামের ক্রমাগত ঊর্ধ্বগতি ঠেকাতে খাদ্য মন্ত্রণালয় গত বছরের ২৫ ডিসেম্বর থেকে ঢাকা মহানগরী এবং চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে সারাদেশে খোলাবাজারে কম দামে চাল বিক্রি শুরু করে। জনপ্রতি ৫ কেজি হারে এ চাল দেয়া হয়। প্রতি কেজি চাল ২৪ টাকা। একই দামে ফেয়ার প্রাইস কার্ডের মাধ্যমে সারাদেশে প্রায় ৬৭ লাখ পরিবারকে চাল দেয়া হচ্ছে। ওএমএস কর্মসূচির আওতায় প্রতিদিন গড়ে ১২ হাজার টন চাল বিক্রির জন্য ডিলারদের দেয়া হয়। গত ৯ এপ্রিল পর্যন্ত ওএমএসের মাধ্যমে ৪ লাখ ৮৮ হাজার টন এবং ফেয়ার প্রাইস কার্ডের মাধ্যমে ২৩ হাজার টন চাল বিক্রি হয়েছে। এছাড়াও ২২ হাজার ৭০০ টন গম বিক্রি হয়েছে। ৬৬২টি খোলা ট্রাক ও ৭ হাজার ৬০০ জন ডিলার ওএমএসের চাল বিক্রি করেন। এক হিসাবে দেখা গেছে, আগে সংগ্রহ করা এসব চালের অর্থনৈতিক মূল্য প্রতি কেজি ২৭ দশমিক ৮০ টাকা। ডিলারদের দেয়া হচ্ছে ২২ দশমিক ৫০ টাকায়। ডিলাররা ১ দশমিক ৫০ টাকা লাভে তা ২৪ টাকায় বিক্রি করছেন, অর্থাত্ প্রতি কেজিতে সরকার ভর্তুকি দিয়েছে ৫ দশমিক ৩০ টাকা। তবে সম্প্রতি সংগৃহীত প্রতি টন চালের দাম পড়েছে ৫০৮ দশমিক ৪০ ডলার। অর্থাত্ প্রতি কেজির দাম কম-বেশি ৩৬ টাকা। এসব চাল বাজারে ছাড়া হলে প্রতি কেজিতে ভর্তুকির পরিমাণ দাঁড়াবে ১৩ দশমিক ৫০ টাকা।
তৃণমূল পর্যায়ে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ওএমএস চাল বিক্রির জন্য নিয়োগকৃত ডিলারদের বেশিরভাগই ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে সম্পৃক্ত। ক্ষমতাসীন দলে থাকার সুবাদে অনেক অসাধু ডিলার দরিদ্র জনগোষ্ঠীর মধ্যে চাল ন্যায্যমূল্যে বিক্রি না করে কালোবাজারে বেশি দামে বিক্রি করছেন। ২৪ টাকা দরের চাল এলাকাভেদে ৩০-৩২ টাকা দরে বিক্রি করেন তারা। এতে স্বল্পআয়ের মানুষ ন্যায্যমূল্যের চাল থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। তাদের বেশি দামে বাজার থেকে চাল কিনতে হচ্ছে। অপরদিকে ক্ষমতাবান এসব ব্যক্তি দলীয় পরিচয় কাজে লাগিয়ে লাভবান হচ্ছেন। এক্ষেত্রে খাদ্য অধিদফতরের অনেক কর্মকর্তা তাদের সহযোগিতা করেন বলে অভিযোগ উঠেছে। অনেক ডিলার স্থানীয়ভাবে এত প্রভাবশালী যে স্থানীয় কর্মকর্তারা তাদের বিরুদ্ধে অভিযান চালাতে সাহস পান না। নাম গোপন রাখার শর্তে একাধিক কর্মকর্তা জানান, তারা প্রশাসনের ওপর বিভিন্নভাবে চাপ সৃষ্টি করে রাখেন। এ কারণে বাড়তি ঝামেলার আশঙ্কায় সুনির্দিষ্ট তথ্য থাকার পরও কর্মকর্তারা অভিযানে অংশ নিতে অনাগ্রহ দেখান। এছাড়া কালোবাজারের চাল বিক্রির সময় যাতে ধরা না পড়ে সেজন্য বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করের ডিলাররা। তারা খাদ্য অধিদফতরের সিলসংবলিত বস্তা পাল্টিয়ে সাধারণ বস্তায় চাল পরিবহন করে। অনেকে সরকারি গুদাম থেকে চাল নিয়ে দালালদের মাধ্যমে সরাসরি বাজারজাত করে। সম্প্রতি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে ধরা পরা কয়েকটি ঘটনায় এসব চিত্র দেখা গেছে। কিশোরগঞ্জের নিকলী উপজেলার আওয়ামী লীগ নেতা আল আমিন এলএসডি খাদ্যগুদাম থেকে ৬ মেট্রিক টন চাল উত্তোলন করার পরই এক মেট্রিক টন চাল দালালদের মাধ্যমে বিক্রি করে দেন। খবর পেয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মজুত পরীক্ষা করে এক মেট্রিক টন চল কম পান। খুলনার খালিশপুরে হাউজিং বাজারের একটি দোকান থেকে ৯২ বস্তা চাল জব্দ করা হয়েছে। দেশের অনেক জায়গা থেকে বিভিন্ন অবস্থায় শত শত বস্তা চাল কালোবাজারের সময় উদ্ধার করা হয়েছে। এসব ঘটনায় ঢাকা মহানগরীর ৫৬ ডিলারের অনুমোদন বাতিল করা হয়েছে। সারা দেশে কতটি ডিলার বাতিল এবং কতজনকে জরিমানা বা আটক করা হয়েছে তার সুনির্দিষ্ট তথ্য জানাতে পারেননি খাদ্য অধিদফতরের কর্মকর্তারা

লোহাগড়ায় আ’লীগ নেতার গুদাম থেকে ১০২ বস্তা গম আটক

ডেস্ক রিপোর্ট

নড়াইলের লোহাগড়ায় আওয়ামী লীগ নেতার গুদাম থেকে ১০২ বস্তা খাদ্য অধিদফতরের গম আটক করেছে উপজেলা প্রশাসন। চট্টগ্রামে ওএমএসের চাল কালোবাজারে বিক্রির দায়ে স্থানীয় এক আওয়ামী লীগ নেতার ডিলারশিপ বাতিল করেছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা। এদিকে মানিকগঞ্জের শিবালয়ে পুলিশের বিরুদ্ধে আটক করা ওএমএসের চাল জিআর’র চাল বলে চালিয়ে দেয়ার অভিযোগ উঠেছে। গতকাল এসব ঘটনা ঘটে। বিস্তারিত প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর :
নড়াইল : লোহাগড়া উপজেলার নলদী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ নেতা মিঠু মোল্যার গুদাম থেকে খাদ্য অধিদফতরের ১০২ বস্তা গম আটক করেছে উপজেলা প্রশাসন। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে গতকাল দুপুরে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অরুণ কুমার মণ্ডলের নেতৃত্বে মিঠাপুর বাজারে অভিযান চালিয়ে এ গম আটক করা হয়।
জব্দ করা গম স্থানীয় ব্যবসায়ী সফিয়ারের জিম্মায় নিয়ে গমসহ গুদামটি সিল করে দেয়া হয়েছে। লোহাগড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অরুণ কুমার মণ্ডল জানান, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে মিঠু মোল্যার ভাড়া করা গুদাম থেকে কালোবাজারের জন্য মজুত করা খাদ্য অধিদফতরের ১০২ বস্তা গম আটক করা হয়েছে। এর প্রতি বস্তায় ৫০ কেজি করে গম আছে। এ বিষয়ে বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা নেয়া হবে।
চট্টগ্রাম : সরকারি ওএমএসের চাল গোপনে অন্যত্র বিক্রির অপরাধে এক আওয়ামী লীগ নেতার ডিলারশিপ বাতিল ও ৩৬ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। বুধবার বোয়ালখালী উপজেলায় এ ঘটনা ঘটে।
স্থানীয় সূত্র জানিয়েছে, বোয়ালখালী উপজেলার পশ্চিম গোমদণ্ডী বানুরটেক এলাকার ওএমএস ডিলার স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা মো. সেলিম বিভিন্ন সময় সরকারি বরাদ্দ ওএমএস চাল গোপনে অন্যত্র বিক্রি করে আসছিল। বিভিন্ন সময় এ ব্যাপারে তাকে হুশিয়ার করা সত্ত্বেও সে দলীয় প্রভাব খাটিয়ে স্থানীয় লোকজনকে ভয়ভীতি দেখিয়ে আসছিল। ফলে এলাকার লোকজন ভয়ে বিষয়টি কাউকে জানায়নি।
এদিকে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে গতকাল সকালে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা দিলশাদ বেগম বানুরটেক এলাকায় গিয়ে ওএমএস ডিলার মো. সেলিমের দোকানে চালের গরমিল পান। এ ঘটনায় তাত্ক্ষণিকভাবে তার ডিলারশিপ বাতিল করে ৩৬ হাজার টাকা জরিমানা করেন। ইউএনও জানান, স্টক মতে তার কাছে গতকাল সকাল পর্যন্ত ৪০ বস্তা চাল থাকার কথা। কিন্তু স্টক মিলিয়ে মাত্র ২৪ বস্তা পাওয়া গেছে। এতে প্রায় ৮০০ কেজি চাল কম পাওয়া যায়।
শিবালয় (মানিকগঞ্জ) : শিবালয় থানা পুলিশ উপজেলার জাফরগঞ্জ বাজারের একটি দোকান থেকে বুধবার সন্ধ্যায় ৩০ বস্তা ওএমএসের সিজ করা চাল গোপন সমঝোতার মাধ্যমে জিআরের চাল বানানোর চেষ্টা করছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এ চাল নিয়ে শিবালয় থানা পুলিশ ও সরকারি খাদ্য গুদাম কর্মকর্তার পরস্পরবিরোধী বক্তব্য পাওয়া গেছে।
শিবালয় থানার এএসআই মনিরুজ্জামান জানান, চাল ব্যবসায়ী মো. আবদুল আওয়াল ওএমএসের চাল বিক্রি করছে এমন সংবাদের ভিত্তিতে তার দোকানে তল্লাশি চালালে ৩০ বস্তা সিদ্ধ চাল পাওয়া যায়। তখন ওই ব্যবসায়ী চালের কোনো কাগজপত্র দেখাতে পারেননি। তাই ওই চাল সিজ করে পুলিশের জিম্মায় রাখা হয়। পরদিন সকাল ১০টার মধ্যে চালের যাবতীয় কাগজপত্র দেখানোর সময় বেঁধে দেয় হয়।
চাল ব্যবসায়ী মো. আবদুল আওয়াল জানান, উথুলী গ্রামের জনৈক ফারুক দৌলতপুর উপজেলার কোলা গ্রামের পূর্বপাড়া জামে মসজিদের সভাপতি লুত্ফর রহমানের কাছ থেকে ২ টন জিআরের চাল কিনেন। তারা গত বছরের ১৪ ডিসেম্বর গোডাউন থেকে চালের চালান বের করেন।
এদিকে দৌলতপুর খাদ্য গুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সৈয়দ আহমেদ জানান, গত ৩ মাসের মধ্যে ওই গোডাউন থেকে কোনো জিআরের চালের চালান বের হয়নি, শুধু ওএমএসের চালের চালান বের হয়েছে। আর যে তারিখে ওই সিজ করা চালের চালানের কাগজ দেখানো হয়েছে, সে সময় জিআরের জন্য আতপ চাল বরাদ্দ ছিল, কোনো সিদ্ধ চাল বরাদ্দ ছিল না বলে জানান তিনি।

ছাত্রলীগারদের দৌরাত্ম্যে ৭০ কলেজের উন্নয়নে অনিশ্চয়তা

রিয়াজ চৌধুরী

সারাদেশের ৭০টি সরকারি কলেজের উন্নয়ন প্রকল্প আলোর মুখ দেখবে কিনা তা নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে। সরকারের এ মহাপরিকল্পনা বাধাগ্রস্ত হচ্ছে খোদ ছাত্রলীগ ক্যাডারদের কারণে। ৬৫৫ কোটি ১২ লাখ টাকার এ উন্নয়ন প্রকল্প একনেকে অনুমোদনের পর শুরু হয়েছে টেন্ডার প্রক্রিয়া। আর টেন্ডার বাগিয়ে নিতে ছাত্রলীগ ক্যাডাররা সংশ্লিষ্ট দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তাদের হুমকি-ধামকি দিচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
শিক্ষা প্রকৌশল অধিদফতর (ইইডি) সূত্রে জানা যায়, টেন্ডার পেতে ছাত্রলীগ ক্যাডাররা বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। তারা হুমকি-ধামকি দিয়ে কাজ বাগিয়ে নেয়ার চেষ্টা করছে। টেন্ডার না পেলে মাঠপর্যায়ে কাজ করতে দেবে না বলে তারা ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের হুমকি দিয়েছে। এ অবস্থায় জীবনের নিরাপত্তা নিয়েও শঙ্কা প্রকাশ করেছেন সংশ্লিষ্টরা। নাম প্রকাশ না করার শর্তে শিক্ষা প্রকৌশল অধিদফতরের এক কর্মকর্তা বলেন, সারাদেশের স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ের কলেজ শিক্ষার বহু বছরের অব্যবস্থাপনা আর সঙ্কট অবসানের জন্য সরকার এ প্রকল্প অনুমোদন দিয়েছে। সরকারের এই উদ্যোগ দেশের উচ্চশিক্ষার মানোন্নয়নে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে। অথচ সরকারের এ উদ্যোগকে বাধাগ্রস্ত করতে মাঠে নেমেছে সরকারদলীয় অঙ্গসংগঠন ছাত্রলীগ ক্যাডাররা। তারা ব্যক্তিস্বার্থ চরিতার্থ করার জন্য টেন্ডার প্রক্রিয়ায় বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করছে।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের তথ্যানুযায়ী, ৭০টি কলেজের উন্নয়নে ব্যয় ধরা হয়েছে ৬৫৫ কোটি ১২ লাখ টাকা। এর মধ্যে আসবাবপত্র, পরীক্ষার হল ও আনুষঙ্গিক নির্মাণ কাজে ২১৮ কোটি ৬২ লাখ টাকা ব্যয় করা হবে, হোস্টেল নির্মাণে ২১৬ কোটি ১২ লাখ, একাডেমিক ভবন নির্মাণে ৩৩ কোটি ১৩ লাখ, বিজ্ঞান ভবন নির্মাণে ৩১ কোটি ২২ লাখ, বাণিজ্য ভবনে ১০ কোটি ৬৫ লাখ, কলেজ বাউন্ডারি এবং ভেতরের রাস্তা নির্মাণে ২ কোটি ১০ লাখ, কম্পিউটারের
জন্য ২০ কোটি ৩০ লাখ, অফিস সামগ্রীর জন্য ৩০ কোটি ৫০ লাখ, বিজ্ঞান সামগ্রীর জন্য ৪ কোটি ৯০ লাখ, বইয়ের জন্য ৪ কোটি ৯০ লাখ এবং ৩ কোটি ৭৬ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করা হবে গ্রন্থাগার।
মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতর (মাউশি) সূত্রে জানা যায়, প্রকল্প বাস্তবায়নের লক্ষ্যে চিহ্নিত করা হয়েছে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন সব জেলা সদরে অবস্থিত স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ের ৭০টি সরকারি কলেজকে। এর মধ্যে ৬৪ জেলায় ৬৪টি কলেজ ছাড়াও ঢাকায় চারটি এবং চট্টগ্রামে আছে অতিরিক্ত দুটি কলেজ। দেশের বিপুল জনগোষ্ঠীর উচ্চশিক্ষার সুযোগ এবং এই শিক্ষার মানোন্নয়নে এ ধরনের উন্নয়ন কর্মসূচির দাবি দীর্ঘদিনের। উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষার্থীসহ সারাদেশের লাখ লাখ শিক্ষার্থী এই কলেজগুলোতে পড়ালেখা করলেও বছরের পর বছর ভুগছে চরম আবাসন সমস্যায়। আবার এসব কলেজে আছে অনার্স ও মাস্টার্সের হাজার হাজার শিক্ষার্থী। পৃথক পরীক্ষার হল না থাকায় যে কোনো বর্ষের পরীক্ষা, এমনকি উচ্চ মাধ্যমিকের শিক্ষার্থীদের যে কোনো পরীক্ষার স্থান করে দিতে পুরোপুরি বন্ধ রাখতে হয় কলেজের শিক্ষা কার্যক্রম। ফলে নিয়মিত ছুটির বাইরেও এসব প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা ক্লাস থেকে বঞ্চিত হয় মাসের পর মাস। আবার প্রয়োজনীয় শিক্ষা উপকরণের চরম সঙ্কটও আছে প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে।
মাউশি’র মহাপরিচালক অধ্যাপক নোমান উর রশিদ প্রকল্পের কথা উল্লেখ করে আমার দেশকে বলেন, সরকারের এ উদ্যোগ উচ্চশিক্ষার জন্য এক যুগান্তকারী পদক্ষেপ। যেসব সঙ্কটের কারণে সারাদেশের এসব কলেজের শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে এর মধ্য দিয়ে তার অবসান হবে। উচ্চশিক্ষায় এর সুদূরপ্রসারী প্রভাব পড়বে। টেন্ডার প্রক্রিয়ায় ছাত্রলীগের প্রভাব সম্পর্কে মাউশি ডিজি বলেন, এ বিষয়টি শিক্ষা প্রকৌশল অধিদফতর (ইইডি) জানে। তবে যা শোনা যাচ্ছে তা অবশ্যই খতিয়ে দেখা হবে। আমরা স্বচ্ছ ও নিয়মের মধ্যেই এ কাজটি সম্পন্ন করার চেষ্টা করব।
জানা গেছে, পরিকল্পনা বাস্তবায়নের প্রথম পর্যায়ে টেন্ডার প্রক্রিয়া শুরু করা হয়েছে। এর মধ্যে ১০টি টেন্ডার ছাড়া হয়েছে। কলেজের অবকাঠামোসহ সার্বিক অবস্থা বিবেচনা করে তালিকা তৈরি করা হয়েছে। যে ৭০টি কলেজকে উন্নয়ন পরিকল্পনার আওতায় আনা হয়েছে সেগুলোর মধ্যে রয়েছে—ঢাকা কলেজ, ইডেন কলেজ, সরকারি বদরুন্নেসা কলেজ, সরকারি বাংলা কলেজ, তিতুমীর কলেজ, রাজশাহী সরকারি কলেজ, নাটোরের নবাব সিরাজ-উদ-দৌলাহ সরকারি কলেজ, সিরাজগঞ্জ সরকারি কলেজ, পাবনার সরকারি এডওয়ার্ড কলেজ, কুষ্টিয়া সরকারি কলেজ, চুয়াডাঙ্গা সরকারি কলেজ, ঝিনাইদহের সরকারি কেসি কলেজ, মাগুরার হোসের শহীদ সোহরাওয়ার্দী সরকারি কলেজ, নড়াইল ভিক্টোরিয়া কলেজ, যশোরের সরকারি এমএম কলেজ. সাতক্ষীরা সরকারি কলেজ, খুলনা সরকারি বিএল কলেজ, বাগেরহাটের সরকারি পিসি কলেজ, পিরোজপুরের সরকারি সোহরাওয়ার্দী কলেজ, পটুয়াখালী সরকারি কলেজ, ভোলা সরকারি কলেজ, বরিশালের বিএম কলেজ, গোপালগঞ্জের বঙ্গবন্ধু সরকারি কলেজ, ফরিদপুরের সরকারি রাজেন্দ্র কলেজ, রাজবাড়ী সরকারি কলেজ, মানিকগঞ্জের সরকারি দেবেন্দ্র কলেজ, মুন্সীগঞ্জ সরকারি হরগঙ্গা কলেজ, নারায়ণগঞ্জের সরকারি তোলারাম কলেজ, ঠাকুরগাঁও সরকারি কলেজ, দিনাজপুর সরকারি কলেজ, নিলফামারী সরকারি কলেজ, রংপুরের সরকারি কমার্শিয়াল কলেজ, কুড়িগ্রাম সরকারি কলেজ, গাইবান্ধা সরকারি কলেজ, বগুড়ার সরকারি আযীযুল হক কলেজ, জয়পুরহাট সরকারি কলেজ, নওগাঁ সরকারি কলেজ, চাঁপাইনবাবগঞ্জের নবাবগঞ্জ সরকারি কলেজ, নরসিংদী সরকারি কলেজ, ভাওয়াল বদরে আলম সরকারি কলেজ, টাঙ্গাইলের সরকারি সাদত কলেজ, রাঙ্গামাটি সরকারি কলেজ, খাগড়াছড়ি সরকারি কলেজ, বান্দরবান সরকারি কলেজ, শরীয়তপুর সরকারি কলেজ, সুনামগঞ্জ সরকারি কলেজ, লালমনিরহাট সরকারি কলেজ, মেহেরপুর সরকারি কলেজ, ঝালকাঠি সরকারি কলেজ, বরগুনা সরকারি কলেজ এবং পঞ্চগড়ের সরকারি মকবুলার রহমান কলেজ, জামালপুরের সরকারি আশেক মাহমুদ কলেজ, শেরপুর সরকারি কলেজ, ময়মনসিংহের সরকারি আনন্দমোহন কলেজ, নেত্রকোনা সরকারি কলেজ, কিশোরগঞ্জের গুরুদয়াল সরকারি কলেজ, মাদারীপুরের নাজিমউদ্দিন কলেজ, সিলেটের এমসি কলেজ, মৌলভীবাজার সরকারি কলেজ, হবিগঞ্জের বৃন্দাবন সরকারি কলেজ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া সরকারি কলেজ, কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজ, চাঁদপুর সরকারি কলেজ, লক্ষ্মীপুর সরকারি কলেজ, নোয়াখালী সরকারি কলেজ, ফেনী সরকারি কলেজ, চট্টগ্রাম সরকারি কলেজ, চট্টগ্রাম সিটি কলেজ, চট্টগ্রাম সরকারি কমার্স কলেজ, কক্সবাজার সরকারি কলেজ।

Tuesday 12 April 2011

গণপূর্ত ভবনে টেন্ডার নিয়ে ছাত্র-যুবলীগের হাতাহাতি

স্টাফ রিপোর্টার

টেন্ডার ভাগাভাগি নিয়ে গণপূর্ত ভবনে ছাত্রলীগ ও যুবলীগ কর্মীদের মধ্যে হাতাহাতির ঘটনা ঘটেছে। টেন্ডারটি ছিল প্রায় ২৩ কোটি টাকার। গতকাল সকালে এই হাতাহাতির ঘটনা ঘটলে গণপূর্ত ভবনে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। পরে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে এবং সিডিউল ড্রপিংয়ের কাজ শেষ করে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, গণপূর্ত বিভাগের অধীনে বাংলাদেশ টেলিভিশনের বিভিন্ন ভবন নির্মাণ ও সংস্কারের টেন্ডার সিডিউল জমা দেয়ার দিন ছিল গতকাল। সকাল ১০টা থেকে সিডিউল জমা দেয়া শুরু হয়। এর মধ্যে মহানগর ছাত্রলীগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগ ও যুবলীগের প্রায় অর্ধশত সদস্য গণপূর্ত ভবনের সামনে অবস্থান নেয়। তারা বিভিন্ন গ্রুপে ভাগ হয়ে এ সময় টেন্ডার জমা দিতে আসা ঠিকাদারদের বাধা দিতে থাকে। একপর্যায়ে সকাল ১১টার দিকে গণপূর্ত ভবনের সামনে খোলা জায়গায় ছাত্রলীগ ও যুবলীগের কর্মীদের মধ্যে হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। এতে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়লে সিডিউল জমার প্রক্রিয়া বন্ধ হয়ে যায়। খবর পেয়ে র্যাব ও পুলিশের সদস্য ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
গণপূর্ত ভবনে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা এ ব্যাপারে কথা বলতে অস্বীকার করেন।
রমনা থানায় যোগাযোগ করা হলে ডিউটি অফিসার এসআই রোজিনা বেগম বলেন, এ ব্যাপারে থানায় কোনো মামলা হয়নি। কেউ অভিযোগ নিয়েও আসেনি।