Wednesday 23 February 2011

হাইকোর্টের নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে রামপুরায় জমি-বাড়ি দখল করে নিয়েছে আ’লীগ সন্ত্রাসীরা


স্টাফ রিপোর্টার

হাইকোর্টের নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে রাজধানীর পশ্চিম রামপুরার বাগিচারটেক এলাকায় ৪০ কাঠা জমিসহ বাড়ি দখল করে নিয়েছে আওয়ামী লীগ সন্ত্রাসীরা। তারা সশস্ত্র মাস্তানদের উপস্থিতিতে ওই জায়গায় নতুন স্থাপনা নির্মাণ করছে। সন্ত্রাসীদের হামলার ভয়ে ৪৫ বছর ধরে ভোগদখলকৃত মালিকরা জমির কাছে যেতে পারছেন না। এমনকি প্রশাসনের কাছে অভিযোগ করেও কোনো প্রতিকার পাওয়া যায়নি বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
জানা গেছে, রামপুরা থানার পশ্চিম উলুনস্থিত মৌজার ১৯৮ ও ২০০ দাগের সিটি জরিপ ৫০৩৩ দাগের ৪০ কাঠা অর্থাত্ ৬৬ শতাংশ জমি দখল করে নিয়েছে সন্ত্রাসীরা। এ জমির ওপর হাইকোর্টের স্থগিতাদেশ থাকা সত্ত্বেও দখলদাররা স্থাপনা নির্মাণ করেই চলছে। এ বিষয়ে গত ৩ ফেব্রুয়ারি জমির অন্যতম মালিক মো. আনোয়ার হোসেন বাদী হয়ে রামপুরা থানায় ৭ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত আরও ২৫-৩০ জনের নামে একটি অভিযোগ দায়ের করেন। এরপরও সন্ত্রাসীরা বহাল তবিয়তে থেকে জমিতে টিনসেড ঘর ও ক্লাব নির্মাণ করছে। জমিতে দখলকৃতদের নামে একাধিক সাইনবোর্ড বসানো হয়েছে। এর মধ্যে ওই জমির বিদ্যুত্ ও পানির লাইন কেটে দিয়েছে তারা। স্থানীয় একাধিক ব্যক্তি জানিয়েছেন, ২০-৩০ জন অচেনা যুবক ওই জমির পাহারায় থাকে। তাদের ভয়ে এলাকাবাসী ও জমির মালিক তটস্থ।
এদিকে রামপুরা থানায় দায়েরকৃত অভিযোগে বলা হয়, গত ২ ফেব্রুয়ারি সকাল ৯টার দিকে শামসুল হক, সিরাজুল হক জুয়েল, মনিরুল হক, জামাল উদ্দিন খান, রশিদ উদ্দিন খানসহ ২০-৩০ যুবক জমি দখল করে এবং বাড়িতে ভাংচুর চালায়। এতে দুই লাখ টাকার সম্পদ ক্ষতিগ্রস্ত হয় বলে বাদী তার আর্জিতে উল্লেখ করেছেন। এতে আরও বলা হয়, সন্ত্রাসীরা জমি ও বাড়ির মালিকের কাছে ১০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে। অন্যথায় জমি দখল ছাড়া হবে না বলে জানিয়ে দেয়। জমির মালিক মো. হারুনুর রশিদ ও আবুল হাশেম অভিযোগ করে বলেন, ওয়ারিশ সূত্রে পাওয়া ৬৬ শতাংশ জমিতে গত ৪৫ বছর ধরে বসবাস ও বাড়ি ভাড়া দিয়ে আসছি। সম্প্রতি স্থানীয় আওয়ামী লীগ পরিচয়দানকারী কতিপয় সন্ত্রাসী জমি দখল করে স্থাপনা নির্মাণ করছে। আমরা প্রাণহানির ভয়ে জমির কাছে যেতে পারছি না। তারা আমাদের বিভিন্নভাবে হুমকি-ধমকি দিচ্ছে। পুলিশ জমি উদ্ধারে আমাদের সহযোগিতা করছে না, উল্টো দখলদারদের দায়ের করা মিথ্যা মামলায় রমনা থানা পুলিশ আমাদের হয়রানি করছে। তারা আরও বলেন, এ জমির বিষয়ে এক পিটিশনের পরিপ্রেক্ষিতে রামপুরা থানার এএসআই মো. রফিকুল ইসলাম তার প্রতিবেদনে এই জমির প্রকৃত মালিক আমরা বলে আদালতকে জানান। তারপরেও আমরা জমির কাছে যেতে পারছি না। এ বিষয়ে তারা প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
এদিকে জমির মালিক দাবিদার অপরপক্ষ মো. জামাল উদ্দিন খানকে ফোন করা হলে তিনি সাংবাদিক পরিচয় পাওয়ার পর নিজের পরিচয় গোপন করেন এবং কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। জমির অপর মালিক মো. সিরাজুল ইসলাম জানান, ক্রয় সূত্রে এই জমির মালিক আমরা। উচ্চ আদালতের কোনো রায় আমরা পাইনি। তবে স্থাপনা নির্মাণ কাজ বন্ধ রয়েছে বলে দাবি করেন তিনি

বগুড়ায় আওয়ামী লীগ নেতাদের রেলের জায়গা দখল অব্যাহত


আসাদুজ্জামান ফিরোজ, বগুড়া

দীর্ঘদিন থেকে বেদখলে রয়েছে পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের হাজার হাজার একর জমি। পাশাপাশি দখল প্রক্রিয়া অব্যাহত রয়েছে। দখলদারদের মধ্যে বেশিরভাগ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা। বর্তমানে বগুড়ায় আওয়ামী লীগ নেতারা একের পর এক রেলের জায়গা দখল করে চলেছে। সংশ্লিষ্ট বিভাগ বলছে, দখল হওয়া জমি উদ্ধারে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। তবে একটি সূত্র জানিয়েছে, এ জায়গা দখলে রাজনৈতিক দল জড়িত থাকায় অভিযোগ দিয়েও কোনো কাজ হচ্ছে না।
রেলের জমি দখলের বেশিরভাগ ঘটনা ঘটেছে পাবনার ঈশ্বরদী, বগুড়া সদর, সান্তাহার, গাইবান্ধার বোনারপাড়া, রংপুরের কাউনিয়া, লালমনিরহাট, দিনাজপুর সদর, পার্বতীপুর, জয়পুরহাট ও আবদুল্লাপুর এলাকায়। রেল বিভাগ এ জমিগুলো পুনরুদ্ধারে তদন্ত কমিটি গঠন করে উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনার পরও দখলে নিতে পারেনি। বর্তমানে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর রেল বিভাগের কিছু জমি নতুন করে দখল প্রক্রিয়া শুরু হয়। দখলকারীরা আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী বলে নিজেদের পরিচয় দিলেও দলীয় সূত্রে ঘটনাকে অস্বীকার করে বলা হয় দখলকারীরা দলের কেউ নয়। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর বগুড়া শহরের সেউজগাড়ী, স্টেশন রোড ও সরকারি আযিযুল হক কলেজের (নতুন ভবন) সামনের কামারগাড়ী রেলক্রসিংয়ে মূল্যবান জায়গা দখল করা হয়। সেউজগাড়ী এলাকায় রেল স্টেশনের পশ্চিম পাশে বগুড়া শহর স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতার ভাই পরিচয় দিয়ে জায়গা দখল করা হয়। সমপ্রতি সরকারি আযিযুল হক কলেজের সামনে শ্রমিকলীগের এক নেতা জায়গা দখল করে স্থাপনা নির্মাণ করছেন। এছাড়া স্টেশনের পূর্বে লাইনের দু’ধারে চেলোপাড়ার ব্রিজ পর্যন্ত দখল করে বিভিন্ন ব্যবসায়ীরা পশরা বসিয়েছে, যা ট্রেন চলাচলে অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। শহরের সেউজগাড়ী, বাদুরতলা ও চকসূত্রাপুর এলাকার চিহ্নিত কিছু যুবলীগ, ছাত্রলীগ ও শ্রমিকলীগ নেতা এ জমি দখল করছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ব্যাপারে বগুড়া জেলা আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা দাবি করছেন, দখলকারীরা দলের কেউ নয়। দলের কেউ এসব ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকলে তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হবে।
বগুড়া সরকারি আযিযুল হক বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের কয়েকজন শিক্ষার্থী জানান, কলেজের সামনের রেলের জায়গা আওয়ামী লীগের নেতারা দখল করে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান নির্মাণ করছে। ফলে কলেজবাস ও শিক্ষার্থীদের প্রবেশদ্বার ছোট হয়ে আসছে। শুধু তাই নয়, এ কারণে ইভটিজিং বেড়ে যাবে। বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হবে শিক্ষার্থীরা। অথচ রেলের সম্পত্তি অবৈধভাবে দখল করলেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ নীরব ভূমিকা পালন করছে।

খয়রাতি প্রকল্পেও ভাগ বসালো আওয়ামী লীগ!

ইলিয়াস খান

খয়রাতি প্রকল্পের ৭ লাখ ৮০ হাজার ভিজিডি কার্ডে ভাগ বসিয়েছেন ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। ভাগ্যের জোরে বিধবা আর স্বামী পরিত্যক্তদের স্থানে তালিকায় নাম উঠে আসছে আওয়ামী লীগ নেতার শালা, শালি, বেয়াই, বেয়াইন, শ্বশুর শাশুড়ি, ভাই, বোন, ভাগ্নেদের। প্রাপ্যদের ভিজিডি কার্ড না দেয়ায় বিষয়টি আদালত পর্যন্ত গড়িয়েছে। এদিকে ভিজিডি প্রকল্পের তালিকা ক্ষমতাসীন দলের নেতাদের দিয়ে তৈরি করায় সমালোচনার ঝড় উঠেছে। টাকার বিনিময়ে তালিকায় নাম অন্তর্ভুক্ত হচ্ছে সর্বত্র। কোথাও আবার তালিকা ও পাল্টা তালিকা জমা দেয়ার ঘটনাও ঘটেছে। অনিয়মের কথা স্বীকার করেছেন খোদ আওয়ামী লীগ নেতারাও। বরিশালের হিজলা উপজেলার গুয়াবাড়িয়া ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা রাশিদা বেগম। স্বামী (মন্টু কবিরাজ) মারা গেছেন অনেক দিন আগে। ৭ ছেলেমেয়ে নিয়ে রাস্তার পাশে ঝুপড়িঘরে বসবাস করেন রাশিদা। সংসার চলে অন্যের বাসায় কাজ করে। একই ওয়ার্ডের রহিমা বেগম (স্বামী মৃত দুলাল সরদার) থাকেন খড়ের ঘরে। জীবিকা নির্বাহ করেন ভিক্ষা করে। অথচ ইউনিয়নে যে ভিজিডির তালিকা হয়েছে সেখানে তাদের কারোরই নাম নেই। ওই ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য রহিম হাওলাদার বলেন, এবার তালিকা আমাদের করতে দেয়া হয়নি। যারা ক্ষমতায় আছেন তারা ইচ্ছামত তালিকা তৈরি করেছেন। আমরা তালিকা করলে রহিমাদের মতো অসহায়দের নাম বাদ পড়ত না। ভিজিডির নীতিমালায় উল্লেখ রয়েছে, স্বামী পরিত্যক্ত, বিধবা, যারা ভিক্ষা করে সংসার চালান, স্বামী পঙ্গু এমন মহিলারা ভিজিডির আওতায় আসবেন। এর আগে ভিজিডি প্রকল্পটি ত্রাণ ও পুনর্বাসন মন্ত্রণালয়ের অধীনে থাকলেও এবার সেটি এসেছে মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ে। খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির আওতায় এ প্রকল্পটি চলমান রয়েছে। কার্ডধারীরা দুই বছর পর্যন্ত প্রতি মাসে পাবেন ৩০ কেজি চাল। এতদিন তালিকা করার দায়িত্ব ইউপি চেয়ারম্যানদের কাছে থাকলেও নতুন পরিপত্র জারি করে নীতিমালা করা হয়েছে। নতুন নীতিমালা অনুযায়ী ইউনিয়ন কমিটির সভাপতি হবেন একজন সরকারি কর্মকর্তা। থাকবেন ২ জন গণ্যমান্য ব্যক্তি ও একজন এনজিও কর্মী। কিন্তু সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয় হলো গণ্যমান্য ব্যক্তিরা আওয়ামী লীগের সভাপতি-সম্পাদক। ওয়ার্ড কমিটিতে সংরক্ষিত মহিলা মেম্বর সভাপতি থাকলেও তালিকা ও টাকার ভাগবাটোয়ারা সবই করছেন ওয়ার্ড নেতারা। মহিলা অধিদফতর সূত্র জানায়, সারাদেশে এ বছর ভিজিডি প্রকল্পে বরাদ্দ করা হয়েছে ৭ লাখ ৮০ হাজার কার্ড। বরাদ্দ করা কার্ডের মধ্যে বরিশাল বিভাগে ৭৮ হাজার ৩৫৪টি, ঢাকা বিভাগে ১ লাখ ৭৭ হাজার ৮০৮টি, চট্টগ্রাম বিভাগে ১ লাখ ২ হাজার ৬৫৬টি, রাজশাহী ও রংপুর বিভাগে ২ লাখ ৫৮ হাজার ৯৯৮টি এবং খুলনা বিভাগে ৯৬ হাজার ৫৫২টি।
জানা গেছে, কার্ড করার ক্ষেত্রে কোথাও কোনো নিয়মনীতির তোয়াক্কা করা হয়নি। টাকা আছে তো কার্ড আছে এমন পরিস্থিতি সর্বত্রই। বিধবা এবং স্বামী পরিত্যক্ত কথাটি উল্লেখ থাকলেও যারা কার্ড পেয়েছেন তাদের কেউই স্বামী ছাড়া নন। গুয়াবাড়ী ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডে যাদের নাম রয়েছে তাদের বেশিরভাগই আওয়ামী লীগ সভাপতি নুরুল ইসলাম রাড়ীর আত্মীয়। এর মধ্যে আছেন সভাপতির শালা খোকন নলী, ছেলে কাওছার, মিজান, বেয়াই ও শালির নামে একটি করে কার্ড। অথচ ওই এলাকার ভ্যানচালক আবদুর রাজ্জাকের স্ত্রীর নামটি তালিকায় স্থান পায়নি। একই অবস্থার শিকার হয়েছেন দরিদ্র হাওয়ানুর বেগম। ১নং ওয়ার্ডের রাজ্জাক বেপারীর ২ ছেলে বিদেশে থাকেন, সোনাবালী করেন গাছের ব্যবসা, লুত্ফর রহমান নলীর আছে ২টি টেম্পো, শেকান মল্লিকের সারের ব্যবসা, হিরন সরদার ব্যবসায়ী, মোতালেব সরদার ব্যবসায়ী, ফজলু মল্লিকের আছে অনেক জমি। এতকিছুর পরও তাদের স্ত্রীর নাম আছে ভিজিডির তালিকায়। ওই ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য আবুল কালাম আজাদ ভুট্টো বলেন, স্থানীয় আওয়ামী লীগের লোকজন ২৭৫ জনের নাম এবং ওয়ার্ড কমিটি ২৭৩ জনের নাম পৃথকভাবে জমা দিয়েছেন। অনিয়ম হওয়ায় আমরা (ইউপি সদস্যরা) স্বাক্ষর করিনি। এমন খয়রাতি প্রকল্পে হস্তক্ষেপ থাকলে আমরা প্রয়োজনে আদালত পর্যন্ত যাব। বরিশাল সদর উপজেলার চরবাড়িয়া ইউনিয়নে পাল্টা তালিকা জমা পড়েছে। সংরক্ষিত আসনের মেম্বার পারুল বেগম বলেন, আমি তালিকা তৈরি করে ট্যাগ অফিসারের কাছে জমা দিয়েছি কিন্তু তিনি আওয়ামী লীগ নেতাদের সঙ্গে সমন্বয় করে তালিকা করতে বলেছেন। জানতে চাইলে ট্যাগ অফিসার হাফিজুর রহমান বলেন, আমার কাছে স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতারাও একটি তালিকা দিয়েছেন। ২টি তালিকাই মহিলাবিষয়ক কর্মকর্তার কার্যালয়ে জমা দিয়েছি। ওই ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ডে আ’লীগের নেতা মন্টু সরদারের মা, শালির নাম তালিকায় উঠেছে। রায়পাশা কড়াপুর ইউনিয়নে বিধবাদের নাম তালিকায় ওঠেনি। তালিকায় এসেছে আওয়ামী লীগ সভাপতির স্ত্রী আর পুত্রবধূর নাম। ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ডের মৃত সিরাজ হাওলাদারের স্ত্রী জেসমিন, মৃত শাহজাহানের স্ত্রী গোলভানু, মিনারা বেগমের সংসার চলে রীতিমত অন্যের বাসায় কাজ করে, সোনিয়া বেগমের স্বামী রিকশাচালক, হাসিনা বেগম বলতে গেলে ভিক্ষাই করেন। কিন্তু তাদের নাম তালিকায় নেই। অথচ ওই ওয়ার্ডের আওয়ামী লীগ সভাপতি আবদুর রব হাওলাদারের স্ত্রী নেহারু বেগম, পুত্রবধূ আসমা বেগমের নাম তালিকায় রয়েছে। একই এলাকার শামিম হাওলাদারের সোনামিয়ার পুল এলাকায় বড় ফার্মেসি, আমিরুল চলে মোটরসাইকেলে, মামুন খন্দকারের অনেক জমিজমা, তারপরও এদের স্ত্রীরা ভিজিডির তালিকায় নাম উঠিয়েছেন। এদিকে ভিজিডি প্রকল্প নিয়ে ২০১০ সালের ২ নভেম্বর হাইকোর্টে রিট করেছিলেন রংপুর বিভাগের পীরগঞ্জ জেলার মো. মফিজুর রহমান নামে এক ইউপি চেয়ারম্যান। রিট আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে গত ৪ জানুয়ারি হাইকোর্টের বিচারপতি মো. মিফতাহ উদ্দিন চৌধুরী ও মো. জাহাঙ্গীর হোসাইনের দ্বৈত বেঞ্চ আবেদনকারীর পক্ষে রায় দেন। ভিজিডি প্রকল্পের জন্য নতুন যে নীতিমালা হয়েছে সেটা কেন বাতিল করা হবে না এ মর্মে মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিবকে কারণ দর্শাতে বলা হয়েছে। আলাপকালে বাংলাদেশ ইউনিয়ন পরিষদ ফোরামের মহাসচিব বুলবুল আহম্মেদ বলেন, আমরা এরই মধ্যে প্রধানমন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপি, এমনকি বিশ্ব ব্যাংকেও আবেদন করেছি। তালিকা করার নামে সরকারি লোকজন যে হরিলুট করতে চাইছে সেটা চেয়ারম্যানরা কোনোমতেই মেনে নেবেন না। এরই মধ্যে আমাদের পক্ষ থেকে হাইকোর্টে রিটও করা হয়েছে। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের করা তালিকায় আমরা কেউ স্বাক্ষর করব না।

টাঙ্গাইলে আ’লীগ নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে দেড় কোটি টাকার টেন্ডার ভাগাভাগির অভিযোগ

টাঙ্গাইল প্রতিনিধি

টাঙ্গাইলের ভূয়াপুর উপজেলা প্রকৌশলী অফিসের ১ কোটি ৬৪ লাখ টাকার টেন্ডার ভাগবাটোয়ারা করে নিয়েছেন স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও যুবলীগের নেতাকর্মীরা। নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে উপজেলা প্রকৌশলীর সঙ্গে যোগসাজশে নিকরাইল ইউনিয়ন পরিষদের ভবন নির্মাণকাজসহ বিভিন্ন হাট-বাজার উন্নয়নের আটটি কাজ ভাগবাটোয়ারা করে নেয়া হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এদিকে বিভিন্ন সময়ে টেন্ডারে অনিয়মসহ নানা কারণে নাখোশ হয়ে উপজেলা প্রকৌশলীকে বদলি করে নতুন কর্মস্থলে যোগদানের জন্য সময়সীমা বেঁধে দিয়েছে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ। ভূয়াপুর প্রকৌশল অফিস সূত্রে জানা গেছে, ২০১০-১১ অর্থবছরে উপজেলা পরিষদের হাট-বাজার উন্নয়ন তহবিলের ৮৮ লাখ ৪৯ হাজার টাকার আটটি কাজের দরপত্র আহ্বান করা হয়। একই দিন পৃথক দরপত্রে ৭৬ লাখ টাকা ব্যয়ে ভূয়াপুর উপজেলার নিকরাইল ইউনিয়ন পরিষদের ভবন নির্মাণকাজের দরপত্র আহ্বান করেন উপজেলা প্রকৌশলী মাহমুদ আল ফারুক। গত ১৫ ডিসেম্বর দরপত্র বিক্রি ও দরপত্র খোলার শেষদিন ছিল।
দরপত্রের শর্তানুযায়ী সংশ্লিষ্ট ঠিকাদাররা ৫ শতাংশ কম দরে দরপত্র দাখিল করেন। সব ঠিকাদার সমদরে টেন্ডারে অংশগ্রহণ করলে লটারির মাধ্যমেই টেন্ডার প্রক্রিয়া নিষ্পত্তি করার নিয়ম। দরপত্র খোলার পরবর্তী ১৪ দিনের মধ্যে কার্যাদেশসহ নিষ্পত্তির বিধান রয়েছে বলে জানান টাঙ্গাইল এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী খন্দকার মাহবুব হোসেন। তিনি আরও বলেন, এ সময়ের মধ্যে নিষ্পত্তি না হলে টেন্ডার বাতিল বলে গণ্য হবে। এসবের কোনো তোয়াক্কা না করে গত দেড় মাসে লটারির উদ্যোগ নেয়নি কর্তৃপক্ষ। এ বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা প্রকৌশলী মাহমুদ আল ফারুক বলেন, উপজেলা চেয়ারম্যান পৌর নির্বাচন নিয়ে ব্যস্ত থাকার কারণে কাজের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেয়া যায়নি।

৭০ কোটি টাকার জমির অবৈধ লিজ পেলেন আ’লীগ নেতা : আইনের তোয়াক্কা করেনি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়


মাহমুদা ডলি

আইনের তোয়াক্কা না করে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের প্রায় এক একর জমি নামমাত্র মূল্যে লিজ দেয়া হয়েছে আওয়ামী লীগের এক নেতাকে। প্রায় ৭০ কোটি টাকা মূল্যের এ সম্পত্তি মন্ত্রণালয়ের উপসচিব লিজ দিয়েছেন। মোটা অঙ্কের উেকাচের বিনিময়ে স্থানীয় এমপির সহযোগিতায় বাণিজ্যিক প্লটকে দোকানের স্কয়ারফিট হিসেবে লিজ দেয়া হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
অন্যদিকে ডিসি অফিস জানিয়েছে, ওই জায়গা অবৈধ দখলদারদের কাছ থেকে উদ্ধারের জন্য বর্তমানে মামলা চলমান রয়েছে। এ অবস্থায় কোনোভাবেই জমি লিজ দেয়া যায় না। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের উপসচিব মো. আতাউর রহমান ফোনে আমার দেশকে জানান, ঊর্ধ্বতন মহলের নির্দেশে জমি লিজ দেয়া হয়েছে। মামলা চলমান অবস্থায় ডিসি অফিস লিজ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করবে কিনা তা তাদের ব্যাপার। মামলা চলমান অবস্থায় বাণিজ্যিক প্লট কীভাবে বন্দোবস্ত পেলেন সে ব্যাপারে জানতে চাইলে লিজগ্রহীতা ‘একতা ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি লৌহজং থানা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি মো. মহসিন গাজী জানান, সম্পত্তি ডিসি অফিসের নয়, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের। আর বাণিজ্য মন্ত্রণালয় যেহেতু সরাসরি লিজ দিয়েছে সুতরাং জমি ডিসি অফিসকে দিতেই হবে বলে জানান আওয়ামী লীগের ওই নেতা। সরেজমিন পরিদর্শনের সময় ব্যবসায়ী ও এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বর্তমানে ওই এলাকায় শতাংশ জমির মূল্য প্রায় ১ কোটি টাকা। তাতে উপসচিবের স্বাক্ষরে লিজ দেয়া ওই জমির বর্তমান মূল্য প্রায় ৭০ কোটি টাকা। ওই জমি বাণিজ্যিক প্লট ভিত্তিতে লিজ না দিয়ে দোকানের স্কয়ারফিট হিসেবে লিজ দেয়া হয়েছে। লিজ দেয়ার অর্থও ডিসি অফিস গ্রহণ করেনি বলে জানিয়েছে সূত্রটি। বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, নগরীর সদরঘাটের ২৫ চিত্তরঞ্জন এভিনিউ এলাকায় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের নিয়ন্ত্রণাধীন পরিত্যক্ত বাণিজ্যিক প্লটের ৭৮ শতাংশ ৩১ অজুতাংশ জমি রয়েছে। তার মধ্যে জনতা হকার্স মার্কেটকে ডিসি অফিস ২৬ দশমিক ৯২ শতাংশ জমি লিজ দিয়েছে। যার হালনাগাদ ভাড়া জনতা হকার্স মার্কেট সমিতি ডিসি অফিসকে পরিশোধ করে আসছে। কিন্তু বাকি প্রায় ৫২ শতাংশ জমি রয়েছে অবৈধ দখলদারদের কাছে। এ জমি অবৈধ দখলদারদের কাছ থেকে উদ্ধারের জন্য ৩৬/২০১০নং দেওয়ানি মামলা আদালতে বিচারাধীন। ২০১০ সালের ২ ফেব্রুয়ারি তৃতীয় যুগ্ম জেলা জজ আদালতে জেলা প্রশাসক বাদী হয়ে মামলা করেন। কিন্তু সম্পত্তি উদ্ধারের জন্য আদালতে মামলা বিচারাধীন থাকা অবস্থায় একতা ব্যবসায়ী সমিতির নামে স্থানীয় এমপি মিজানুর রহমান খান দিপুর সুপারিশে উপসচিব নিজে সরাসরি এ জমি লিজ দিয়েছেন একতা ব্যবসায়ী সমিতিকে।
ডিসি অফিস জানায়, এর আগে মন্ত্রণালয় ওই জায়গার অবস্থা জানতে চাইলে ‘মামলা চলমান অবস্থায় রয়েছে লিজ দেয়া যাবে না’ মর্মে প্রতিবেদন পাঠানো হয়েছিল। গত ৬ নভেম্বর ২০১০ সালে জেলা প্রশাসকের স্বাক্ষরে ডেপুটি কালেক্টর (রাজস্ব) আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামানের সরেজমিন প্রতিবেদনসহ আদালতে মামলার কথা মন্ত্রণালয়ে জানানো হয়েছে। তদন্ত প্রবিবেদনে বলা হয়েছে, একতা ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মহসিন গাজী ৭৮ দশমিক ৩১ শতাংশ ভূমির মধ্যে ৮ শতাংশ বাদে অবশিষ্ট ৭০ দশমিক ৩১ শতাংশ ভূসম্পত্তি বরাদ্দ চেয়েছেন। কিন্তু ওই সম্পত্তির মধ্যে আরএস ও মহানগর জরিপে ২৬ দশমিক ৯২ শতাংশ ভূসম্পত্তি সরকারের অনুকূলে রেকর্ডভূক্ত এবং তা ডিসি অফিসের ভোগ দখলেই রয়েছে। অবশিষ্ট সম্পত্তি উদ্ধারের জন্য দেওয়ানি ৩৬/২০১০নং মামলা আদালতে বিচারাধীন। কিন্তু জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের এ তদন্ত প্রতিবেদন মূল্যায়ন না করে উপসচিব মো. আতাউর রহমান ২০১০ সালের ২৩ ডিসেম্বর একতা ব্যবসায়ী সমিতিকে লিজ দিয়েছেন।
ডিসি অফিস ও সচিবালয়ের একাধিক সূত্র জানায়, যে নিয়মে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে তা সম্পূর্ণ নিয়মনীতিবহির্ভূত। বাণিজ্যিক প্লটের জমি দোকানের স্কোয়ারফিট অনুযায়ী লিজ দেয়া যায় না। মার্কেট হিসেবে লিজ দিতে হলে আগে আদালতের রায় নিয়ে মার্কেট নির্মাণ করে পরে স্কোয়ারফিট হিসাবে লিজ দেয়ার নিয়ম রয়েছে। কিন্তু বাণিজ্যিক প্লট এভাবে বরাদ্দ দেয়ারও নিয়ম নেই বলে জানিয়েছে একাধিক সূত্র।
ডিসি অফিস সূত্র জানায়, ভূমি মন্ত্রণালয়, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়সহ অধিকাংশ মন্ত্রণালয়ের জায়গা আইন ও নিয়মানুযায়ী বন্দোবস্ত কিংবা বরাদ্দ দেবে শুধু ডিসি অফিস। সরাসরি বন্দোবস্ত দেয়ার এখতিয়ার বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের নেই, তবে সুপারিশ করতে পারে।
সদরঘাট এলাকায় সরেজমিন ঘুরে মায়াকাটরার বিভিন্ন ব্যবসায়ী সংগঠনসহ অন্য মার্কেটের ব্যবসায়ীরা জানান, একতা ব্যবসায়ী সমিতির কোনো ব্যবসা প্রতিষ্ঠান নেই। জনতা হকার্স মার্কেটের একটি দোকান ভাড়া নিয়ে একতা ব্যবসায়ী সমিতির অফিস খুলে বসেছে। এমনকি ঢাকা মহানগরীর কোনো মার্কেটে তাদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান না থাকলেও মন্ত্রী-এমপিদের প্রভাব দেখিয়ে বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির সহ-সভাপতির পদ দখল করে রেখেছে সমিতি। ১৫-১৬ বছর আগে পুরনো কাপড় ব্যবসায়ীর ট্রেড লাইসেন্স দেখিয়ে তারা দখল-বাণিজ্য করে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে সমিতির বিভিন্ন সদস্যের কাছ থেকে। এ নিয়ে অনেকে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
এসব ব্যাপারে ঢাকার জেলা প্রশাসক মো. মহিবুল হক আমার দেশকে জানান, ওই জায়গা থেকে অবৈধ দখলদার উচ্ছেদের জন্য আদালতে মামলা রয়েছে। কাউকে লিজ দেয়ার ব্যাপারে তিনি কিছু জানেন না