Saturday 10 April 2010

সংবাদ সম্মেলনে তেল-গ্যাস রক্ষা জাতীয় কমিটির দাবি : ড. তৌফিকসহ সরকারের উচ্চপর্যায়ের দুর্নীতির বিষয়ে তথ্য-প্রমাণ

রয়েছে
স্টাফ রিপোর্টার
প্রধানমন্ত্রীর বিদ্যুত্, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ বিষয়ক উপদেষ্টা ড. তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরীসহ সরকারের শীর্ষ পর্যায়ের ব্যক্তিরা দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত বলে অভিযোগ করেছে তেল-গ্যাস-খনিজসম্পদ ও বিদ্যুত্-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটি। এ সংক্রান্ত তথ্য-প্রমাণ তাদের কাছে রয়েছে বলেও দাবি করেছে তারা।
গতকাল রাজধানীর পুরানা পল্টনের মুক্তি ভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে তেল-গ্যাস রক্ষা জাতীয় কমিটি এ দাবি করেছে। এতে জাতীয় কমিটির সদস্য সচিব অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বিনা টেন্ডারে শেভরনের সঙ্গে সরকারের কম্প্রেসার স্থাপনের চুক্তিকে অনৈতিক অভিহিত করে বলেন, এর সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর জ্বালানি উপদেষ্টা তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরীসহ সরকারের উচ্চপর্যায়ের ব্যক্তিরা জড়িত।
অবিলম্বে কম্প্রেসার বসানোর চুক্তি বাতিলের দাবি করে তিনি বলেন, কম্প্রেসার স্থাপনের জন্য যে ব্যয় হচ্ছে, তার থেকে অনেক কম খরচে কমিটির দেয়া সুপারিশ অনুযায়ী স্বল্পমেয়াদে সঙ্কট উত্তরণ সম্ভব। আর এতে দেশে গ্যাস ও বিদ্যুতের কোনো সঙ্কট থাকবে না। তিনি জ্বালানি মন্ত্রণালয়কে দুর্নীতিবাজ ও বহুজাতিক কোম্পানির রাহুমুক্ত করে জাতীয় সক্ষমতা বিকাশে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণের জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান। বিদ্যুত্ সঙ্কট মেটাতে প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত রোডম্যাপকে ভাঁওতাবাজি উল্লেখ করে তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকে একই ধরনের কথা বলছেন। কিন্তু আগামী বছর (২০১১) সালে যে পরিমাণ বিদ্যুত্ জাতীয় গ্রিডে আসবে বলে দাবি করা হচ্ছে, এখনও তার কোনো প্রস্তুতি নেই।
কমিটির আহ্বায়ক প্রকৌশলী শেখ মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ বলেন, অপেক্ষাকৃত বেশি দামে এবং যেখানে প্রয়োজন নেই সেখানে কম্প্রেসার স্থাপনের চুক্তি প্রমাণ করে এখানে দুর্নীতি হয়েছে। জ্বালানি উপদেষ্টাসহ সরকারের উচ্চপর্যায় দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত—এমন তথ্য-প্রমাণ কমিটির কাছে রয়েছে বলে তিনি দাবি করেন। মুহম্মদ শহীদুলস্নাহ পিএসসি’র (প্রোডাকশন শেয়ারিং কন্ট্রাক্ট) অধীনে কোন চুক্তি না করার দাবি জানান।
সংবাদ সম্মেলনে বিডি রহমত উল্লাহ বিদ্যুত্ সাশ্রয়ে সরকারকে বিভিন্ন প্রকল্প গ্রহনের দাবি জানান। তিনি দাবি করেন সাশ্রয় করা গেলে জাতীয় গ্রীডের উপর চাপ কমবে। এতে বিদ্যুতের জন্য মানুষের দুর্ভোগ কমে আসবে। কয়লা এবং গ্যাস উত্তোলনে তিনি দেশি কোম্পানিকে প্রাধান্য দেয়ার দাবি করেন। এছাড়া পুরনো বিদ্যুত্ কেন্দ্র সংস্কার করে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ বিদ্যুত্ পাওয়া সম্ভব বলে জানান তিনি।
সংবাদ সম্মেলনে কমিটির পক্ষ থেকে বলা হয়, সরকারের শীর্ষ পর্যায়ের সঙ্গে বহুজাতিক কোম্পানির আঁতাত রয়েছে। সরকার ইচ্ছাকৃতভাবে সমস্যা জিইয়ে রেখে জ্বালানি সঙ্কট সৃষ্টি করছে। কমিটি স্বল্পমেয়াদে সঙ্কট উত্তরণের জন্য ৯ দফা এবং মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদে স্থায়ী সমাধানের জন্য আরও ৭ দফা সুপারিশ করেছে। সুপারিশ বাস্তবায়নের পথে অগ্রসর হওয়ার জন্য আগামী ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত সরকারকে সময় বেঁধে দিয়েছে জাতীয় কমিটি। এ সময়ের মধ্যে সুপারিশ বাস্তবায়নে অগ্রসর না হলে গণট্রাইব্যুনালসহ বিভিন্ন কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।
সংবাদ সম্মেলনে অন্যানের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন আবদুর রশিদ সরকার, বজলুর রশিদ ফিরোজ, বিমল বিশ্বাস, রুহিন হোসেন প্রিন্স, নূর মহম্মদ, নজরুল ইসলাম প্রমুখ।
স্বল্পমেয়াদি দাবি : সংবাদ সম্মেলনে জাতীয় কমিটি স্বল্পমেয়াদে সঙ্কট উত্তরণের জন্য সাতটি সুনির্দিষ্ট দাবি উত্থাপন করেছে। এগুলো হচ্ছে—তিতাস এবং হবিগঞ্জ গ্যাসক্ষেত্র থেকে উত্পাদন বৃদ্ধি, পেট্রোবাংলার অধীন বন্ধ ১২ গ্যাসকূপ চালু, বিদেশি কোম্পানিকে ইজারা দেয়া গ্যাস ক্লককে অনুসন্ধানে বাধ্য করা অথবা চুক্তি বাতিল করা, গ্যাস ও বিদ্যুত্ লাইন মেরামত এবং নবায়ন করা, বড়পুকুরিয়া বিদ্যুত্ প্লান্ট মেরামত করা, রাষ্ট্রীয় সব বিদ্যুত্ কেন্দ্র মেরামত এবং নবায়ন করা, কম দামে বিদ্যুত্ পাওয়ার জন্য দেশি বিদ্যুত্ কেন্দ্রে গ্যাস সরবরাহ বৃদ্ধি, ক্ষুদ্র বিদ্যুত্ প্লান্ট স্থাপনে দেশি উদ্যোক্তাদের সুযোগদান, নতুন গ্যাসক্ষেত্র অনুসন্ধান ও উত্তোলনের জন্য জাতীয় সংস্থাগুলোকে শক্তিশালী করা।
মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদে স্থায়ী সমাধানের দাবি : মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদে স্থায়ী সমাধানের জন্যও কমিটি ৭ দফা দাবি পেশ করে। এগুলো হচ্ছে—জাতীয় কমিটির ৭ দফা বাস্তবায়ন ও পিএসসিসহ জাতীয় স্বার্থবিরোধী সব চুক্তি বাতিল, খনিজসম্পদ রফতানি নিষিদ্ধকরণ আইন পাস, শতভাগ মালিকানা, রফতানি নিষিদ্ধকরণ, জাতীয় সক্ষমতা নিশ্চিত করে গ্যাস অনুসন্ধান ও উত্তোলন নিশ্চিত করা, কয়লা উত্তোলনের ক্ষেত্রে গ্যাসিফিকেশন পদ্ধতি অনুসরণ, নবায়নযোগ্য জ্বালানির ব্যবহার বৃদ্ধি, জাতীয় প্রতিষ্ঠানকে শক্তিশালী করা এবং জ্বালানি মন্ত্রণালয়কে দুর্নীতিমুক্ত করার পাশাপাশি বিদেশি কোম্পানির রাহুমুক্ত করা।

http://www.amardeshonline.com/pages/details/2010/04/10/26755

No comments:

Post a Comment