Saturday 29 January 2011

শেয়ারবাজার কেলেঙ্কারি ১৯৯৬ বনাম ২০১১ : এবার ৮ দিনে মূলধন হারিয়েছে ৮৬ হাজার কোটি টাকা


অর্থনৈতিক রিপোর্টার

বাংলাদেশের শেয়ারবাজারে কেলেঙ্কারি হিসেবে এতদিন ১৯৯৬ সাল উদাহরণ হয়ে থাকলেও এবার নতুন করে ইতিহাসে ঢুকে গেল ২০১১। তবে এবারের কেলেঙ্কারি আরও ভয়াবহ ও আধুনিক বলে মনে করছেন বাজার বিশেষজ্ঞরা। তবে ১৯৯৬-র কেলেঙ্কারির সঙ্গে অনেক অমিল থাকলেও মিল হলো—দুটি ঘটনাই হয়েছে আওয়ামী লীগ সরকারের সময়। আর সন্দেহভাজন খেলোয়াড়রাও রাঘব বোয়াল। ১৯৯৬ সালে কারসাজির মাধ্যমে বাজার থেকে তখন প্রায় ১ হাজার কোটি টাকা নিয়ে গিয়েছিল সিন্ডিকেট চক্র। তবে এবার হাতিয়ে নেয়া টাকার পরিমাণ প্রায় ৮৬ হাজার কোটিরও বেশি। আর ১৯৯৬ সালের কেলেঙ্কারির ঘটনায় মামলা হলেও কারো বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। আশঙ্কা করা হচ্ছে, এবারও একই ঘটনায় পুনরাবৃত্তি হবে।
এবারে শেয়ারবাজারের অস্বাভাবিক উত্থান শুরু হয় সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়। বাজারের ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা বর্তমান সরকারের ক্ষমতা গ্রহণের পর জোরালো হতে থাকে। বলা হয়, তখন বাজারে প্রচুর কালোটাকা ঢুকতে থাকে। বাজার চাঙ্গা হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে নতুন বিনিয়োগকারীরা দলে দলে আসতে থাকে। তখন সরকার ও বাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিনিয়োগকারীদের সচেতন বা তাদের স্বার্থ রক্ষায় কোনো উদ্যোগ নেয়ার পরিবর্তে বাজার বৃদ্ধির বাহবা নিতে থাকে। উপরন্তু ব্যাপক কারসাজির কারণে ভয়াবহ ঝুঁকির মুখে বলে অর্থনীতিবিদ বা বাজার অভিজ্ঞরা সতর্ক করলেও সরকার ও নিয়ন্ত্রক সংস্থা বলে আসছে, বাজার ১৯৯৬ হওয়ার কোনো সুযোগ নেই।
১৯৯৬ সালের জুনের নির্বাচনে ক্ষমতায় আসে আওয়ামী লীগ। ২৩ জুন সরকার গঠনের দিন ঢাকা শেয়ার মার্কেটে বাজার মূলধন ছিল ৬ হাজার ৬০০ কোটি টাকা। শেয়ারের সার্বিক মূল্যসূচক ছিল ৯৭৬ পয়েন্ট। সাড়ে চার মাসের মাথায় ৪ নভেম্বর বাজার মূলধন বৃদ্ধি পেয়ে হয় ২৬ হাজার কোটি টাকা। আর শেয়ারের সার্বিক মূল্যসূচক বেড়ে দাঁড়ায় ৩ হাজার ৬ পয়েন্টে। তখন আওয়ামী লীগ সরকার বলতে থাকে, তাদের প্রতি আস্থা এবং অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার কারণেই শেয়ারের মূল্য বাড়ছে। একদিকে সরকারের আশ্বাস, অপরদিকে লাফিয়ে লাফিয়ে বাজার চাঙ্গা হওয়ায় সাধারণ বিনিয়োগকারীরা প্রলুব্ধ হন। তারা জমানো অর্থ, স্বর্ণালঙ্কার, এমনকি জায়গা-জমি বিক্রি-বন্ধক রেখে ও ঋণ করে এনে শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করে। ঢাকা এবং চট্টগ্রাম দুই শেয়ারবাজার সংলগ্ন আশপাশের রাস্তায়ও ছিল শেয়ার ক্রেতাদের উপচেপড়া ভিড়। মূলত সাধারণ মানুষকে আগ্রহী করে বাজার থেকে টাকা তুলে নেয়াই ছিল এর পেছনের উদ্দেশ্য। সাধারণ মানুষ সেই পাতা ফাঁদেই পা দেয়।
২০০৯-এর জানুয়ারিতে আওয়ামী লীগ ক্ষমতা গ্রহণের পর ৬ জানুয়ারি ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের বাজার মূলধন ছিল ১ লাখ ৪ হাজার ২৯৬ কোটি টাকা। সাধারণ মূল্যসূচক ছিল ২ হাজার ৭৫৬ পয়েন্ট। তখন বিনিয়োগকারীর সংখ্যা ছিল মাত্র পাঁচ লাখের মতো। সেদিন লেনদেন হয় ৩৭৮ কোটি ৭৭ লাখ টাকা। কিন্তু বাজার বাড়তে বাড়তে গত বছর ২৫ আগস্ট হয় ৩ লাখ ২ হাজার কোটি টাকা। ২০১০ সালের প্রথমদিন বাজার মূলধন ছিল ১ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকা। আর ২০১১ সালের প্রথম কার্যদিবস রোবরারে সাধারণ মূল্যসূচক হয় ৮ হাজার ৩০৪ দশমিক ৫৮ পয়েন্ট। ওইদিন ডিএসইতে এক হাজার ৬১২ কোটি টাকার শেয়ার লেনদেন হয়।
কিন্তু ৬ জানুয়ারি সপ্তাহের শেষ কর্মদিবসে মূল্যসূচক ২১৩ দশমিক ২১ পয়েন্ট কমে দাঁড়ায় সাত হাজার ৭৩৫ দশমিক ২২ পয়েন্টে। এদিন লেনদেনের পরিমাণ ছিল মাত্র ৯৬৯ কোটি ৮৭ লাখ টাকা। আর ৯ জানুয়ারি সপ্তাহের শুরুর দিন সূচকের পতন হয় ৬০০ পয়েন্ট। সেদিন লেনদেন হয় ১ হাজার ৩৩১ কোটি টাকা। ১০ জানুয়ারি বাজার মূলধন মাত্র ৫০ মিনিটে ৬৩৫ পয়েন্ট কমে যায়। নতুন বছরের সাতদিনের অব্যাহত দরপতনে সব মিলিয়ে বাজার মূলধন হারায় ৬৩ হাজার ৫৫৪ কোটি টাকা। আর গত সোমবার বাজার মূলধন কমেছে ২৩ হাজার কোটি টাকা।
শেয়ারবাজার চাঙ্গা থাকায় তখনকার অর্থমন্ত্রী শাহ এএমএস কিবরিয়া দেশের রাজনীতি-অর্থনীতি স্থিতিশীলতার কথা বলে বাহবা নিলেও বাজার পড়তে শুরু করলে এর কোনো দায়িত্ব তিনি নেননি। এনিয়ে সংসদে আলোচনা হলে অর্থমন্ত্রী নিজেই বলেন, শেয়ার মার্কেট কি, আমি বুঝি না। সূচক ৩ হাজার ৬৪৮ থেকে ১৫০০তে নেমে এলে অর্থমন্ত্রী বলেছিলেন, ‘সূচক ১৫০০ হলে বাজার পড়া বলে না।’ আর এবারও শেয়ারবাজার চাঙ্গা হওয়ায় অর্থমন্ত্রী থেকে সরকারের শীর্ষব্যক্তিরা একে সরকারের সাফল্য বলে দাবি করেন। কিন্তু গত দেড় মাস ধরে শেয়ারবাজারে ক্রমাগত দরপতন হচ্ছে। গত ৯ জানুয়ারি শেয়ারবাজারের ইতিহাসে একদিনে রেকর্ড ৬০০ পয়েন্ট সূচকের পতন হলে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘শেয়ারবাজারে দরপতন হলে বিনিয়োগকারীরা বিক্ষোভ মিছিল করে কিন্তু দাম বাড়লে তারা তো মিষ্টি খাওয়ায় না।’
অভিযোগ রয়েছে, শেয়ার কেলেঙ্কারি উদ্ঘাটনে যে তদন্ত এবং মামলা করা হয়েছে তা অনেকটা দায়সারা গোছেই করা হয়েছে। এজন্য এতদিনেও অভিযুক্তরা রয়ে গেছেন ধরা-ছোঁয়ার বাইরে। তখনকার মামলায় বিবাদী পক্ষের আইনজীবী সাবেক এটর্নি জেনারেল ব্যারিস্টার রফিকুল-হক বলেছিলেন, শেয়ারবাজারে ধস নামার দায়িত্ব অন্য কারো ওপর বর্তায় না। এ দায়িত্ব পুরোপুরি সরকার এবং অর্থমন্ত্রীর ওপর বর্তায়।
প্রসঙ্গত, ১৯৯৬ সালে ওই সময় ম্যানিপুলেশনের মাধ্যমে দেশের শেয়ারবাজারগুলোকে প্রভাবিত করার ব্যাপক ঘটনা ঘটেছিল। স্বল্পসময়ের ব্যবধানে বাজার প্রচণ্ড বেগে ঊর্ধ্বগতি পেয়ে আবার নিম্নমুখী হয়। হাজার হাজার সাধারণ বিনিয়োগকারী এই ম্যানিপুলেশনে সর্বস্বান্ত হয়। পরে বাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (এসইসি) এ ঘটনা তদন্তে কমিটি গঠন করে। কমিটির প্রতিবেদনের ভিত্তিতে ১৯৯৭ সালের ২ এপ্রিল এসইসি মোট ১৫টি কোম্পানির ৩২ পরিচালকের বিরুদ্ধে ঢাকা মুখ্য মহানগর হাকিমের আদালতে মামলা দায়ের করে। এসব মামলা খারিজের জন্য অভিযুক্তদের নানা আইনি তত্পরতা শেষ পর্যন্ত সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগ পর্যন্ত গড়ায়। পরে আপিল বিভাগে মূল মামলার বিচারকার্য শুরু হলেও তা এখনও নিষ্পন্ন হয়নি।
১৯৯৬ সালের কেলেঙ্কারির তদন্ত প্রতিবেদন : শেয়ারবাজার কেলেঙ্কারি উদ্ঘাটনে গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে বলা হয়, এটি ছিল একটি সংঘবদ্ধ গোষ্ঠীর কারসাজি। এই গোষ্ঠীর মধ্যে রয়েছে স্টক এক্সচেঞ্জের সদস্য, ব্রোকার, ডিলার এবং তালিকাভুক্ত বিভিন্ন কোম্পানির পরিচালকরা। নিজেদের মধ্যে ভুয়া লেনদেনের মাধ্যমে এই গোষ্ঠী বাজারে শেয়ারের কৃত্রিম সঙ্কট তৈরি করে এবং শেয়ারের মূল্য অস্বাভাবিকভাবে বাড়িয়ে ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, শেয়ারের মূল্য বাড়ানোর ক্ষেত্রে বাজারে পরিকল্পিতভাবে গুজব ছড়িয়ে দেয়াসহ এই গোষ্ঠী সম্ভাব্য সব ধরনের অনিয়মের আশ্রয় নিয়েছে। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক আমিরুল ইসলামের নেতৃত্বাধীন ৪ সদস্যের তদন্ত কমিটি ১৯৯৭ সালের ২৭ মার্চ পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা সিকিউরিটিজ এন্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (এসইসি) কাছে এই প্রতিবেদন পেশ করেন। তদন্ত কমিটি বলেছে, স্টক এক্সচেঞ্জে শেয়ার লেনদেনের ক্ষেত্রে প্রচলিত নিয়ম পদ্ধতির ত্রুটি-বিচ্যুতির সুযোগ নিয়ে এই গোষ্ঠী একরকম অবাধে বাজারের তেজীভাবে আকৃষ্ট হয়ে হাজার হাজার নিরীহ ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীকে প্রতারিত করেছে। কমিটি এক্ষেত্রে বিশেষভাবে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) নাম উল্লেখ করে বলে, বাজারে অস্বাভাবিক তেজীভাবে ডিএসইর উচিত ছিল বাজার সংশোধনের জন্য কার্যকরী পদক্ষেপ নেয়া। কিন্তু ডিএসইর পক্ষ থেকে এমন কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করা দূরে থাক, উল্টো প্রতিষ্ঠানটির নেতৃস্থানীয় কর্মকর্তারা নিজেরাই ম্যানিপুলেশনের আশ্রয় নিয়ে বাজার থেকে কোটি কোটি টাকা মুনাফা তুলে নিয়েছে।
সংঘবদ্ধ গোষ্ঠীর মাধ্যমে বাজার ম্যানিপুলেশনের বিভিন্ন পদ্ধতির বিস্তারিত বর্ণনা দিয়ে তদন্ত কমিটি বলেছে, এক্ষেত্রে ডেলিভারি ভার্সাস পেমেন্ট (ভিভিপি) পদ্ধতিকে তারা বড় এবং মোক্ষম একটি অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করেছে। স্টক এক্সচেঞ্জের সদস্য বা ব্রোকাররা বড় অঙ্কের শেয়ারের লেনেদেনের ক্ষেত্রে এই ভিভিপি পদ্ধতি চালু করে। এর আশ্রয় নিয়ে বিভিন্ন তালিকাভুক্ত কোম্পানির বিরাট অঙ্কের শেয়ারের ভুয়া লেনদেন দেখানো হয় এবং এর মাধ্যমে বাজারে শেয়ারের সঙ্কট সৃষ্টি করে মূল্য বহুগুণ বাড়ানো হয়।
কমিটি বলেছে, স্টক এক্সচেঞ্জের সদস্য, ব্রোকার বা তালিকাভুক্ত কোম্পানির পরিচালকরা শেয়ারের দাম বাড়ার জন্য সংঘবদ্ধভাবে বাজারে গুজব তৈরি করে শেয়ারের দাম ম্যানিপুলেট করেছে। এই গোষ্ঠী নিজস্ব এজেন্টদের মাধ্যমে বিভিন্ন কোম্পানির নামে এমন সব তথ্য বাজারে ছেড়েছে, যাতে উল্লিখিত কোম্পানিগুলোর শেয়ার কেনার জন্য সাধারণ বিনিয়োগকারীদের মাঝে ব্যাপক আগ্রহ সৃষ্টি হয়। এক্ষেত্রে তারা বোনাস বা রাইট শেয়ার ইস্যু কিংবা কোম্পানির কথিত সম্প্রসারণ ইত্যাদির কথা সুপরিকল্পিতভাবে বাজারে ছাড়ে। একই সময়ে এই গোষ্ঠী স্টক এক্সচেঞ্জের ফ্লোরে কোম্পানিগুলোর শেয়ার উচ্চ দামে এবং বেশি সংখ্যায় নিজেদের মধ্যেই কেনাবেচা করে। বাজারে ছাড়া তথ্য গুজবকে বিশ্বাসযোগ্য করাই এমন লেনদেনের উদ্দেশ্য।
অনেক ক্ষেত্রে দেখা গেছে, স্টক এক্সচেঞ্জের সদস্যরা বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে শেয়ার কেনার জন্য টাকা নিয়ে তা দিয়ে নিজেদের নামে শেয়ার কিনেছে। বিনিয়োগকারীদের বলা হতো, শেয়ার পাওয়া যাচ্ছে না। পাওয়া গেলে তাদের সরবরাহ করা হবে। ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের টাকায় কেনা শেয়ার বাজারের উচ্চমূল্যের সময় বিক্রি করে দিয়ে সদস্যরা বিশাল অঙ্কের লাভ ঘরে তুলেছে। এরাই আবার পতনশীল বাজার থেকে কম দামে শেয়ার কিনে ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের সরবরাহ করেছে। সবকিছুই সম্পন্ন হতো বিনা বাধায়। কারণ স্টক এক্সচেঞ্জের কর্মকাণ্ডের জবাবদিহিতা বা স্বচ্ছতার কোনো বালাই ছিল না।
এ চক্রে এসে যোগ দিয়েছে বিভিন্ন তালিকাভুক্ত কোম্পানির উদ্যোক্তা পরিচালকরাও। পরিচালকরা উল্লিখিত উপায়ে বাজারে তেজীভাব তৈরি করে নিজেদের শেয়ার বিক্রি করে দিত। কিন্তু মধ্যস্থতাকারী আর্থিক প্রতিষ্ঠান এসব পরিচালকের পক্ষে কাজ করেছে বলে তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
তদন্ত কমিটি শেয়ারবাজার পরিস্থিতি সম্পর্কে তাদের সাধারণ মন্তব্যে বলে, ওই পাঁচ মাসে স্বল্পসময়ের মধ্যে বিশেষ কয়েকটি শেয়ারের মূল্য হু হু করে বেড়ে যায় মূলত দ্রুত লাভের আশায় শেয়ারবাজারে ছুটে যাওয়া সাধারণ বিনিয়োগকারীদের জন্য। এসময় কয়েকটি কোম্পানির শেয়ারের মূল্য কোনো মৌলভিত্তি ছাড়াই আকাশ ছুঁয়ে যায়। শেয়ারবাজারে ছুটে যাওয়া বিনিয়োগকারীরা বাজারের নিয়ম-কানুন সম্পর্কে ছিল একবারেই অজ্ঞ। কয়েকটি মহল থেকে এসব অজ্ঞ ও নবিস বিনিয়োগকারীদের নিরপরাধ নাম দেয়া হয়েছে।
তদন্ত কমিটির মন্তব্যে বলা হয়, এটা সবার কাছেই পরিষ্কার যে, ওই সময় যারা পর্দার আড়াল থেকে বাঁশি বাজিয়ে এসব নিরপরাধ বিনিয়োগকারীদের মোহগ্রস্ত করেছিল এবং নতুন প্রজন্মের বিনিয়োগকারীদের সর্বনাশ করে নিজেদের আখের গুছিয়েছিল, তারা নিজেরা ছিল খুবই পাকা খেলোয়াড়। কাজেই ওই পরিস্থিতির জন্য এ জাতীয় কারসাজির নায়করাই দায়ী, যারা বুঝে-শুনে এই সর্বনাশা খেলায় নিরপরাধ বিনিয়োগকারীদের টেনে আনে।
এদিকে ২০১০ সালের ৮ ডিসেম্বর মাত্র সোয়া এক ঘণ্টার ব্যবধানে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের সাধারণ মূল্যসূচক ৫৪৭ পয়েন্ট পড়ে যায়। তবে বিনিয়োগকারীদের বিক্ষোভের মুখে পরে বাজার পরিস্থিতি ঘুরে যায়। পুঁজিবাজারের এই ঘটনাকে নজিরবিহীন বলে মন্তব্য করেছিলেন এসইসির চেয়ারম্যান। ঘটনার তদন্তে পর দিন ৪ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করে এসইসি। একমাস সময় বেঁধে দিয়ে কমিটিকে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়ার জন্য বলা হয়েছিল। কিন্তু এখন পর্যন্ত তদন্তের বিষয়ে এসইসি কোনো কিছুই জানায়নি। আদৌ এ তদন্ত রিপোর্ট আলোর মুখ দেখবে কিনা তা নিয়ে রয়েছে নানা সন্দেহ। আশঙ্কা করা হচ্ছে, ’৯৬ সালের শেয়ার কেলেঙ্কারির সঙ্গে জড়িতরা যেভাবে ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়েছে এবারও তার ব্যতিক্রম হবে না

No comments:

Post a Comment