Saturday 24 September 2011

সাড়ে ৩ কোটি টাকার টেন্ডার ভাগ করে নিয়েছেন যুবলীগ নেতারা

সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি
সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ড (বিআরই) শাখার রাস্তা মেরামত ও সংস্কার কাজের ৩ কোটি ৫৬ লাখ টাকার টেন্ডার নিজেদের মধ্যে সমঝোতার মাধ্যমে ভাগ করে নিয়েছে স্থানীয় যুবলীগ নেতারা। টেন্ডার দাখিলের আগেই সরকারদলীয় নেতাকর্মীরা গোপনে বৈঠক করে এ কাজ হাতিয়ে নেয়। সিরাজগঞ্জ শহররক্ষা বাঁধের বিএল স্কুল থেকে রানীগ্রাম গ্রোয়েন পর্যন্ত নিচের অংশের রাস্তা মেরামত ও সংস্কার কাজের জন্য দরপত্র (কাজের নাম-আরএসএইচপি, প্যাকেজ নং-১) আহ্বান করে সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ড।
বুধবার দরপত্র জমা দেয়ার শেষ দিন এবং ওই দিন বিকাল ৩টায় দরপত্র বাক্স খোলা হলেও এর আগে স্থানীয় যুবলীগের একটি গ্রুপ সিন্ডিকেট করে এসব সিডিউল হাতিয়ে নেয়ার পরিকল্পনা করে। তারা বৈঠক করে যুবলীগ নেতাদের কাজ দেয়ার বিষয়টি ঠিকাদারদের জানিয়ে দেয়। এ বৈঠক আহ্বানকারী যুবলীগ নেতাদের ওই গ্রুপ। যে কারণে শুধু সিরাজগঞ্জে ৩৮ এবং বগুড়ায় ৩টি সিডিউলসহ ৪১টি বিক্রি হলেও দাখিল হয়েছে মাত্র ৬টি। বৈঠকে সমঝোতা অনুযায়ী পিয়াস কনস্ট্রাকশনকে কাজ দেয়ার সিদ্ধান্ত হয় বলে সূত্রে জানা গেছে। টেন্ডার কমিটির চেয়ারম্যান এ বিষয়ে এখনও কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি বলে জানান। সিরাজগঞ্জ জনতা ব্যাংক মাছুমপুর শাখা ও বগুড়া জনতা ব্যাংকে এসব সিডিউল বিক্রি করা হয়। সিরাজগঞ্জ জনতা ব্যাংক মাছুমপুর শাখার
সহকারী ম্যানেজার জয়নাল আবেদীন জানান, গত ২১ আগস্ট টেন্ডারের বিজ্ঞপ্তি পত্রিকায় প্রকাশের পর গত ১৩, ১৯ ও ২০ সেপ্টেম্বর আমাদের কাছে ৩৮টি সিডিউল বিক্রির জন্য পাঠানো হয়। সবগুলো সিডিউল নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে বিক্রি হয়ে যায়। বুধবার দরপত্র দাখিলের জন্য সিরাজগঞ্জ পুলিশ সুপার কার্যালয় এবং পানি উন্নয়ন বোর্ড (বিআরই) শাখায় টেন্ডার বাক্স দেয়া হয়। পুলিশ সুপার কার্যালয়ে জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি আসাদুজ্জামান সোহেল ১টি এবং বিআরই শাখায় ৬টি দরপত্র দাখিল করা হয়। সমঝোতার কারণে জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি তার দাখিল করা দরপত্র প্রত্যাহার করে নেয় বলে ঠিকাদার সূত্রে জানা গেছে। বুধবার সকাল থেকে ছাত্রলীগ ও যুবলীগের নেতাকর্মীরা পানি উন্নয়ন বোর্ড এলাকায় অবস্থান নেয়। তারা অফিসের ভেতরে না গেলেও বাইরে অবস্থান করতে থাকে। ঠিকাদারদের দরপত্র দাখিল না করার জন্য অনুরোধ করা হয় এবং বিক্রি হওয়া ৪১টি সিডিউল রাতে ঠিকাদারদের কাছ থেকে নিয়ে নেয়া হয় বলে সূত্রে জানা গেছে। এ কাজের একটি অংশ সিডিউল ক্রয়কারী ঠিকাদারদের মধ্যে বিতরণ করার কথা রয়েছে। গত ৯ দিনের ব্যবধানে একই প্রতিষ্ঠানের আরেকটি টেন্ডার হাতিয়ে নিল যুবলীগ নেতারা। তবে এ যুবলীগ নেতাদের নিজস্ব কোনো ঠিকাদারি লাইসেন্স নেই। অন্য ঠিকাদারের লাইসেন্সে তারা রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে কাজগুলো হাতিয়ে নিচ্ছে। গত ১১ সেপ্টেম্বর সিরাজগঞ্জ শহররক্ষা বাঁধ শক্তিশালী প্রকল্পের ৫ কোটি টাকার টেন্ডার সমঝোতা হয়। সেই টেন্ডারে মাত্র ৩টি সিডিউল দাখিল করা হয়। এ সংক্রান্ত একটি রিপোর্ট গত ১৩ সেপ্টেম্বর আমার দেশ-এ প্রকাশিত হওয়ার পর জেলাজুড়ে তোলপাড় সৃষ্টি হয়। যে কারণে এবার লোক দেখানোর জন্য ৬টি সিডিউল দাখিল করা হয়। এটি সমঝোতার বৈঠকে সিদ্ধান্ত বলে জানা গেছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের (বিআরই শাখার) উচ্চমান সহকারী আবদুস সাত্তার জানান, সিরাজগঞ্জ শহররক্ষা বাঁধের নিচের অংশের সড়কে সরকারি বিএল স্কুল থেকে রানীগ্রাম গ্রোয়েন পর্যন্ত এ সড়কে সংস্কার কাজের জন্য সাড়ে ৩ কোটি টাকার দরপত্র আহ্বান করা হয়। কাজে সমঝোতা হয়েছে তা আমরা জানি না। এ ব্যাপারে কোনো ঠিকাদার আমাদের কাছে অভিযোগও করেনি।
টেন্ডার কমিটির চেয়ারম্যান ও পানি উন্নয়ন বোর্ড (বিআরই) শাখার এসডি আনোয়ার সাদাদ বলেন, টেন্ডার বাক্স থেকে দরপত্র খোলা হয়েছে। এখনও পর্যন্ত কাজের বিষয়টি ঠিক হয়নি। কোন প্রতিষ্ঠান কাজ পেয়েছে জানতে আরও এক সপ্তাহ সময় লাগবে। কাগজপত্র পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হচ্ছে।

No comments:

Post a Comment