Friday 5 August 2011

শিক্ষা প্রকৌশল অধিদফতরের দুর্নীতিবাজরা বেপরোয়া : ঘুষ নিতে গিয়ে হাতেনাতে ধরা : গণধোলাই

রিয়াজ চৌধুরী
শিক্ষা প্রকৌশল অধিদফতরের (ইইডি) দুর্নীতিবাজরা বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। সম্প্রতি সংস্থার প্রধান প্রকৌশলী ঘুষের ৫ লাখ টাকা ফেরত দিয়ে রক্ষা পেলেও সংস্থার সহকারী পরিচালক (প্রশাসন) বিজয় কুমার ঘোষ গণধোলাই থেকে রেহাই পাননি। বেদম মার খেয়ে সোজা হয়ে হাঁটাই এখন কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে। লজ্জায় কাউকে কিছু বলতে না পেরে লোকচক্ষুর অন্তরালে থাকতেই তিনিই সুখবোধ করছেন বলে জানা গেছে।
ইইডি সূত্রে জানা যায়, বৃহস্পতিবার বেলা ১টায় নিজ দফতরে ঘুষ নিতে গিয়ে সংস্থার কয়েকজন কর্মকর্তার হাতে ধরা পড়েন বিজয় কুমার ঘোষ। এসময় গণধোলাইয়ের শিকার হন তিনি। পরে সংস্থার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা পরিস্থিতি সামাল দেন। জানা যায়, সম্প্রতি ৩৬ সাব-অ্যাসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ারকে ঢাকার বাইরে বদলি করা হয়। তাদের আবার ঢাকায় আনতে জনপ্রতি ৩০ হাজার টাকা (অগ্রিম ১৫ হাজার ছাড়াও কাজ শেষে ১৫ হাজার) ঘুষ দাবি করেন বিজয় কুমার ঘোষ। এদের একজনের কাছ থেকে অগ্রিম ১৫ হাজার টাকা নিতে গিয়ে অন্য কর্মকর্তাদের হাতে ধরা পড়েন তিনি। এর পরই শুরু হয় গণধোলাই। ধোলাই থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য তিনি পালানোর চেষ্টা করেন, কিন্তু তাতে কোনো ফায়দা হয়নি।
এর আগে গত জুন মাসে সংস্থার প্রধান প্রকৌশলী মিজানুল করিম এক ব্যক্তির কাছ থেকে নেয়া ঘুষ ৫ লাখ টাকা ফেরত দেন। শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, মিজানুল করিম এক ব্যক্তির কাছ থেকে ৫ লাখ টাকা ঘুষ নেন। পাবনা বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন কাজ পাইয়ে দেয়ার নাম করে তিনি এ টাকা নিয়েছিলেন। কিন্তু লোকটি কাজ না পাওয়ায় শিক্ষামন্ত্রীর কাছে নালিশ করেন। পরে শিক্ষামন্ত্রীর নির্দেশে ওই ব্যক্তিকে ঘুষের ৫ লাখ টাকা ফেরত দেন তিনি।
শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, ইইডি’র এ দুই কর্মকর্তাসহ আরও কয়েকজনের বিরুদ্ধে অনিয়ম-দুর্নীতি, স্বেচ্ছাচারিতা, টেন্ডারবাজদের সঙ্গে সখ্য এবং দায়িত্ব পালনে গাফিলতির অসংখ্য অভিযোগ থাকা সত্ত্বেও তারা বহাল তবিয়বে রয়েছেন। শিক্ষা প্রশাসনের প্রভাবশালী দুই সিন্ডিকেটের সদস্য হওয়ায় সংস্থায় তাদের দাপটের অন্ত নেই। তারা ইইডিকে দুর্নীতির আখড়ায় পরিণত করেছে। যারা বেশি দুর্নীতি করতে পারে তাদেরই যোগ্য বলে ধরা হয়। শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, সংস্থার প্রধান প্রকৌশলীর পদটি আগামী ২২ আগস্ট শূন্য হচ্ছে। সংস্থার বর্তমান প্রধান প্রকৌশলী মিজানুল করিমের বিরুদ্ধে অসংখ্য অভিযোগ থাকা সত্ত্বেও তিনি তৃতীয় বারের মতো চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পেতে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ে দৌড়ঝাঁপ করছেন। এরই মধ্যে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) বিতর্কিত চেয়ারম্যান প্রকৌশলী নুরুল হুদা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছে মিজানুল করিমকে তৃতীয় বারের মতো চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দিতে অনুরোধ জানিয়েছেন। জানা যায়, মিজানুল করিম ২০০৭ সালে সরকারি চাকরি থেকে অবসর নেন। পরে প্রভাবশালীদের সহযোগিতায় ২০০৯ সালের ৫ আগস্ট তিনি প্রধান প্রকৌশলীর পদে এক বছরের জন্য চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পান। ২০১০ সালের ৫ আগস্ট তার চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ শেষ হলে কিছুদিন ওই পদ শূন্য থাকে। কিন্তু তিনি ওই পদে কাউকে বসতে দেননি। পরে প্রভাবশালীদের সহায়তায় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মাধ্যমে ২২ আগস্ট আরও একজন বছরের চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ আনেন।
সংস্থার সহকারী পরিচালক (প্রশাসন) বিজয় কুমার ঘোষের কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি গণধোলাইয়ের কথা অস্বীকার করেন। তিনি বলেন, দু’মাস আগে ৩৬ জনকে বদলি করা হয়েছে। তারা বৃহস্পতিবার আমার কাছে এসে দাবি করে, তাদের ঢাকায় আনতে হবে। আমি তাদের বলেছি, প্রধান প্রকৌশলীর সঙ্গে এ বিষয়ে কথা বলতে। তাদের মধ্যে কয়েকজন আচরণবিধি লঙ্ঘন করেছে। তিনি বলেন, আমি কারও কাছ থেকে ঘুষ নেইনি। এটা আমার বিরুদ্ধে গভীর ষড়যন্ত্র।
সংস্থার প্রধান প্রকৌশলী মিজানুল করিমের কাছে জানতে চাইলে তিনি আমার দেশকে বলেন, বৃহস্পতিবার আমি অফিসে ছিলাম না। প্রধানমন্ত্রীর দফতরে মিটিং ছিল। সেখানে গিয়েছিলাম। বিজয় কুমারের বিষয়টি নিয়ে আমি এখনও ক্লিয়ার নই। তাছাড়া শুক্রবার ও শনিবার অফিস বন্ধ। রোববারে অফিসে গেলে বিষয়টি ক্লিয়ার হওয়া যাবে।

No comments:

Post a Comment